৩৪. শুক্লযজুর্বেদ – চতুস্ত্রিংশ অধ্যায়

চতুস্ত্রিংশ অধ্যায়

মন্ত্রঃ– যজ্জাগ্রততা দূরমুদৈতি দৈবং তদু সুপ্তস্য তথৈবৈতি। দুরঙ্গমং জ্যোতিষাং জ্যোতিরেকং তন্ম মনঃ শিবসঙ্কল্পমুস্ত৷৷৷৷৷ যেন কমাণ্যপসো মনীষিণো যজ্ঞে কৃথন্তি বিদথেষু ধীরাঃ। যদপূর্বং যক্ষমন্তঃ প্রজানাং তন্মে মনঃ শিবসঙ্কল্পমস্তু৷৷২। যৎপ্রজ্ঞামুত চেত ধৃতিশ্চ যজ্জ্যোতিরন্তরমৃতং প্রজাসু। যস্মান্ন ঋতে কিঞ্চন কর্ম ক্রিয়তে তন্মে মনঃ শিবসঙ্কল্পমস্তু৷৩৷৷ যেনেদং ভূতং ভুবনং ভবিষ্যৎ পরিগৃহীতমমৃতেন সর্বম্। যেন যজ্ঞস্তায়তে সপ্তহোতা তন্মে মনঃ শিবসঙ্কল্পমতু৷৷৷৷ যস্মিন্থঃ সাম যজুংষি যস্মিন্ । প্রতিষ্ঠিতা রথনাভাবিবারাঃ। যস্মিংশ্চিত্তং সর্বমোতং প্রজানাং তন্মে মনঃ শিবসঙ্কল্পমস্তু৷৷৷৷ সুষারথিরশ্বানিব যন্মনুষ্যান্নেনীয়তে ইভীশুভির্বাজিন ইব। হৃপ্রতিষ্ঠং যদজিরং জবিষ্ঠং তন্মে মনঃ শিবসঙ্কল্পমস্তু।।৬। পিতুং নু স্তোষং মহো ধর্মাণং তবিষী। যস্য ত্রিতো বব্যাজসা বৃত্ৰং বিপর্বদয়ৎ৭৷৷ অন্বিদনুমতে ত্বং মন্যাসৈ শং চ নস্কৃধি। ক্ৰত্বে দক্ষায় নো হিনু প্র ণ আয়ুংষি তারিষঃ ৮৷৷ অনু নোহদ্যানুমতির্যজ্ঞং মন্যতা। অগ্নিশ্চহব্যবাহনোভবতং দাশুষে ময়ঃ৯৷৷ সিনীবালি পৃথুঠুকে যা দেবানামসি স্বসা। জুষস্ব হব্যমাহুতং প্রজাং দেবি দিদিঢ়িনঃ ১০। পঞ্চ নদ্যঃ সরস্বতীমপি যন্তি সস্রোতসঃ। সরস্বতী তু পঞ্চধা সো দেশেহভবৎ সরিৎ ॥১১৷ ত্বমগ্নে প্রথমে অঙ্গিরা ঋষিৰ্দেবো দেবানামভবঃ শিবঃ সখা। তব ব্রতে কবয়য়া বিদ্মনাপসোহজায়ন্ত মরু ভ্ৰাজদষ্টয়ঃ।।১২। ত্বং নো অগ্নে তব দেব পায়ুভিমোনো রক্ষ তন্বশ্চ বন্দ্য। ত্রাতা তোকস্য তনয়ে গবামস্যনিমেষং রক্ষমাণস্তব ব্রতে৷৷১৩৷ উত্তানায়ামব ভরা চিকিত্বাদ্যঃ প্রবীতা বৃষণং জজান অরুষস্তুপো রূশদস্য পাজ ইড়ায়াপুত্রো বয়ুনেহজনিষ্ট৷৷১৪৷ইড়ায়াত্ত্বা পদে বয়ং নাভা পৃথিব্যা অধি। জাতবেদো নিধীমহ্যগ্নে হব্যায় বোঢ়বে।১৫৷৷ প্র মন্মহে শবসানায় শুষমাঙ্গুষং গির্বণসে অঙ্গিরস্বৎ। সুবৃক্তিভিঃ স্তুবত ঋগমিযাযাৰ্চামার্কং নরে বিতায়৷৷১৬৷ প্ৰ বো মহে মহি নমো ভরধ্বমাঙ্গুষ্যং শবসনায় সাম। যেনা নঃ পূর্বে পিতরঃ পদজ্ঞা অর্চন্তো অঙ্গিরসোগা অবিন্দ৷১৭৷ ইচ্ছন্তি ত্বা সোম্যসঃ সখায়ঃ সুন্তি সোমংদবতি প্রয়াংসি। তিতিক্ষন্তে অভিশস্তিং জনানামিন্দ্র ত্বদা কশ্চন হি প্রকেতঃ ॥১৮৷ ন তে দূরে পরমা চদ্ৰজাংস্যা তু প্র যাহি হরিবো হরিভ্যাম্। স্থিরায় বৃষ্ণে সবনা কৃতেমা যুক্তা গ্রাবাণঃ সমিধানে অগ্নেী।১৯। আষাঢ়ং যুৎসু পৃতনাসু পপ্রিং স্বর্ষামঙ্গাং বৃজনস্য গোপা। ভরেষুজাং সুক্ষিতিং সুসং জয়ন্তং ত্বমনু মদেম. সোম৷৷২০৷ সোমমা ধেনুং সোমো অবন্তমাশুং সোমো বীরং কর্মণ্যং দদাতি। সাদন্যং বিদথ্যং সভেয়ং পিতৃশ্রবণং যো দদাশদস্মৈ৷৷২১৷ ত্বমিমা ওষধীঃ সোম বিশ্বামপো অজনয়ন্ত্বং গাঃ। মা ততন্থাবন্তরিক্ষং ত্বং জ্যোতিষা বি তমো ববৰ্থ৷৷২২৷৷ দেবেন নো মনসা দে, সোম রায়ো ভাগং সহসাবগ্নভি যুধ্য। মা ত্বা তনদীশিষে বীর্যসস্যাভয়েভ্যঃ প্রচিকিৎসা গবিষ্টো।।২৩৷৷ অষ্টেী ব্যখ্যৎ ককুভঃ পৃথিব্যাস্ত্রী ধম্ব যোজনা সপ্ত সিন্ধু। হিরণ্যক্ষঃ সবিতা দেব আগাদ্দধদ্রত্না দাশুষে বার্যাণি৷৷২৪৷৷ হিরণ্যপাণিঃ সবিতা বিচৰ্ষণিরুতে দ্যাবাপৃথিবী অন্তরীয়তে। অপামীবাং বাধতে বেতি সূর্যমভি কৃষ্ণেন রজসা দ্যামৃণোতি৷৷২৫৷৷ হিরণ্যহস্তো অসুরঃ সুনীথঃ সুমৃভীকঃ স্ববা আত্ববাঙ। অপসেধন রক্ষসো যতুধানানস্থাদ্দেবঃ প্রতিদোষং গৃণানঃ।।২৬৷৷ যে তে পন্থাঃ সবিতঃ পূৰ্যাসোহরেণবঃ সুকৃতা অন্তরিক্ষে। তেভিননা অদ্য পথিভিঃ সুগেভী রক্ষা চ নো অধি চ ব্রুহি দেব।২৭৷৷ উভা পিবতমশ্বিনোভা নঃ শৰ্ম যচ্ছত। অবিদ্রিযাভি রূতিভিঃ৷৷২৮৷ অল্পস্বতীমশ্বিনা বাচমস্মে কৃতং নো দম্রা বৃষণা মনীষা। অদ্যুতো হবসে নি হয়ে বাং বৃধে চ নো ভবতং বাজতৌ৷৷২৯৷৷ দ্যুভিরভিঃ পরি পাতমম্যানরিষ্টেভিরশ্বিনা সৌভগেভিঃ। তন্নো মিত্রো বরুণণা মামহন্তামদিতিঃ সিন্ধু পৃথিবী উত দ্যৌঃ ৩০৷ আ কৃষ্ণেন রজসা বর্তমানো নির্বেশয়নুমৃতং মত্যং চ।। হিরণ্যয়েন সবিতা রথেনা দেবো যাতি ভুবনানি পশ্য৷৷৩১৷ আ রাত্রি পার্থিবং রজঃ পিতুরপ্রায়ি ধামভিঃ। দিবঃ সদাংসি বৃহতী বি তিষ্ঠস আ ত্বেষং বর্ততে তমঃ ।।৩২৷৷ উষস্তচ্চিত্রমা ভরাস্মভ্যং বাজিনীতি। যেন তোকং চ তনয়ং চ ধামহে৷৷৩৩৷৷ প্রাত রগ্নিং প্রাতরিন্দ্রং হবামহে প্রাতর্মিত্রাবরুণা পাতরশ্বিনা। প্রাতর্ভং পূষণং ব্ৰহ্মণস্পতিং প্রাতঃ সোমমুত রুদ্রং হুবেম।।৩৪। প্রাতর্জিতং ভগমুগ্ৰং হুবেম বয়ং পুত্ৰমদিতের্যো বিধর্তা। আশ্চিদ্যং মন্যমানস্তুরশ্চিদ্ৰাজ্য চিদ্যং ভগং ভক্ষীত্যাহ।৩৫৷৷ ভগ প্রণেতর্ভগ সত্যরাধো ভগেমাং ধিয়মূদবা দন্নঃ। ভগ প্র নো জনয় গোভিরশ্বৈগ প্র নৃভিবন্তঃ স্যাম।।৩৬৷ উতেদানীং ভগবন্তঃ স্যামোত প্রপিত্ব উত মধ্যে অহ্নাম। উততদিতা মঘবন সূর্যস্য বয়ং দেবানাং সুমতৌ সাম৷৩৭৷৷ ভগ এব ভগবাঁ অস্তু দেবাস্তেন বয়ং ভগবন্তঃ স্যাম। তং ত্বা ভগ সর্ব ইজ্জোহবীতি স নো ভগ পুর এতা ভবেহ৷৷৩৮। সমধ্বরাঘোষসো নমন্ত দধিক্রাবেব শুয়ে পদায়। অর্বাচীনং বসুবিদং ভগঃ নো রথমিবাশ্বা বাজিন আ বহ।।৩৯৷৷ অশ্ববতী গোমতীর্ন উষাসো বীরবতীঃ সদমুচ্ছন্তু ভদ্রাঃ ঘৃতং দুহানা বিশ্বতঃ প্রপীতা যুয়ং পাত স্বস্তিভিঃ সদা নঃ॥৪০ পূষন্ তর ব্রতে বয়ং ন রিয্যেম কদাচন। স্তোতারস্ত ইহ স্মসি৷৷৪১৷ পথপথঃ পরিপতিং বচস্যা কামেন কৃতো অভ্যানডর্ক। স নো রাসছুরুধশ্চন্দ্রাগ্রা ধিযং ধিয়ং সীধাতি প্ৰ পূষা৷৪২৷ ত্রীণি পদা বি চক্ৰমে বিষ্ণুগোপা অদাভ্যঃ। অতো ধর্মাণি ধারয়৷৪৩৷ তদ্বিপ্রাসো বিপন্যবো জাগুবাংসঃ সমিন্ধতে। বিষ্ণো যৎপরমং পদ৷৷৪৪৷৷ ধৃতবর্তী ভুবনানামভিশ্রিয়োৰী পৃধ্বী মধুদুঘে সুপেশসা। দ্যাবাপৃথিবী বরুণস্য ধর্মা বিষ্কভিতে অজরে ভূরিরেতসা।৪৫৷৷ যে নঃ সপত্না অপ তে ভবন্দ্ৰিাগ্নিভ্যামব বাধামহে তান্। বসবো রুদ্রা আদিত্যা উপরিশৃশং মোগ্রং চেত্তারমধিরাজম৷৷৪৬ আ নাসত্যা ত্রিভিরেকাদশৈরিহ দেবেভির্যাতং মধুপেয়মশ্বিনা প্রায়ুস্তারিষ্টং নী রপাংসি মৃক্ষতং সেধতং দ্বেষো ভবতং সচাভুবা৷৪৭৷ এষ ব তোমো মরুত ইয়ং গীৰ্মান্দার্য্য মান্যস্য কারোঃ। এষা যাসীষ্ট তন্থে বয়াং বিদ্যামেষং বৃজনং জীরদানু৷৪৮৷ সহস্তোমাঃ সহচ্ছন্দস আবৃতঃ সহপ্রমা ঋষয়ঃ সপ্ত দৈব্যাঃ পূর্বেষাং পন্থমনুদৃশ্য ধীরা অন্যালেভিরে রথ্যো ন রশ্মী৷৷৪৯৷৷ আয়ুষাং বৰ্চস্যং রায়ম্পোষমৌক্তি। ইদং হিরণ্যং বৰ্চস্বজ্জৈায়াবিশদু মা৷৫০৷ ন তদ্রক্ষাংসি ন পিশাচাস্তরন্তি দেবানামোজঃ প্রথমজং হ্যেৎ। যো বিভৰ্তি দাক্ষায়ণং হিরণ্যং স দেবে কৃণুতে দীৰ্ঘমায়ুঃ স মনুষ্যেষু কৃণুতে দীর্ঘমায়ুঃ।৫১। যদাবধুন্ দাক্ষাণা হিরণ্যং শতানীকায় সুমনস্য মানাঃ। তন্ম আ বমি শতশারদায়ায়ুম্মাঞ্জরদষ্টিযথাসম্৷৷৫২৷৷ উত নোহহিবুধ্যঃ শৃগোত্বজ একপাৎপৃথিবী সমুদ্রঃ। বিশ্বে দেবা ঋতাবৃথো হুবানাঃ স্তু মন্ত্রাঃ কবিশস্তা অবন্তু।৫৩৷ ইমা গির আদিত্যেভ্যো ঘৃতঃ সনাদ্রাজভ্যো জুবা জুহোমি। শৃণোতু মিত্রো অর্যমা ভগোনস্তুবিজাতো বরুণেআ দক্ষো অংশঃ।৫৪। সপ্ত ঋষয়ঃ প্রতিহিতাঃ শরীরে সপ্ত রক্ষন্তি সদমপ্রমাদ। সপ্তাপঃ স্বপতে লোমীয়ুস্তত্র জাগৃতে অস্বপ্নজৌ সত্ৰসদৌ চ দেবো।৫৫৷ উত্তিষ্ঠ ব্ৰহ্মণম্পতে দেবয়ন্তমেহে। উপ প্র যন্তু মরুতঃ সুদানব ইন্দ্র প্রার্ভবা সচা৷৫৬৷ প্র নূনং ব্ৰহ্মণস্পতিমন্ত্রং বদত্যুথ্যম্। যস্মিন্নিন্দ্রো বরুণা মিত্রো অর্যমা দেবা ওকাংসি চক্রিরে।৫৭৷ ব্ৰহ্মণস্পতে ত্বমস্য যন্তা সুক্তস্য বোধি তনয়ং চ জিম্ব। বিশ্বং তদ্ভদ্রং যদবন্তি দেবা বৃহদ্বদেম বিদথে সুবীরাঃ। য ইমা বিশ্বা বিশ্বকর্মা যো নঃ পিতা অন্নপতেহন্নস্য নো দেহি।৫৮৷৷

[কাণ্ড-৫৮ : মন্ত্র-৫৮]

.

মন্ত্ৰার্থঃ— ১।দিব্য শক্তিসমূহের সাথে যুক্ত যে মন জাগ্রত মনুষ্যের নিকট হতে গমন করে দূরে ব্যক্ত হয়, সুষুপ্ত মনুষ্যেরও সেই মন সেই দূরে গমন করে। দূরে গমনকারী এবং শ্রোত্রা ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ের স্বরূপ জ্যোতিসমূহে একই জ্যোতি প্রকাশক যে আমার মন, তা শুভ সঙ্কল্প-সম্পন্ন হোক৷

২। কর্মা, মনীষী এবং ধীর ব্যক্তি যজ্ঞের এবং অন্য ধনলাভের ক্ষেত্রে যে মনের দ্বারাই কর্ম করে থাকে, যে মন প্রজাগণের অভ্যন্তরে অপূর্ব এবং প্রকাশমান্ জ্যোতি, আমার সেই মন শুভ সঙ্কল্পশালী হোক।

৩। যা প্রজ্ঞান, যা চিত্র (বা চেতনা), এবং যা ধৃতি; যা প্রজাগণের মধ্যে আন্তর ঋত (সত্য) সংজ্ঞক, যা ব্যতীত কেউই কর্ম করতে পারে না, আমার সেই মন সদা শুভ সঙ্কল্পশালীই তোক৷

৪। যে অমর মনের দ্বারা এই ভূত-ভবিষ্যৎ বর্তমান সর্ব জগৎ ধারিত হয়েছে, এবং যার দ্বারা সপ্ত হোতা-সংযুক্ত যজ্ঞ বিস্তৃত হয়, আমার সেই মন, হে পরমাত্মা! সদা শুভ সঙ্কল্প-সম্পন্ন হোক।

৫। যার মধ্যে ঋক্‌সমূহ, সামগান এবং যজুঃ–রথের নাভিতে যুক্ত অরের (কাষ্ঠখণ্ডবিশেষের) ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে, এবং যাতে প্রাণীগণের সকল মন্দ ও শুভ ভাব ওতপ্রোত হয়ে থাকে, আমার সেই মন, হে পরমাত্মা! সদা শুভ সঙ্কল্পশালীই হোক।

৬। কুশল সারথি কর্তৃক অশ্বকে অভীষ্ট স্থলে চালিত করার ন্যায় এবং লাগামের দ্বারা অশ্বকে নিয়ন্ত্রিত করার ন্যায়, যে মনুষ্যকে যত্রতত্র নিয়ে যায়; হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত যে অজর এবং অত্যন্ত বেগবা, আমার সেই মন, হে ভগবন্! সদা শুভ সঙ্কল্পশালী হোক৷

৭। আমি তেজ এবং শক্তির ধারক সেই অন্নের সংস্তুতি করছি, যে অন্নের বলে ইন্দ্রদেব বৃত্রকে খণ্ড খণ্ড করে কর্তন করেছিল।

৮। হে অনুমতি! তুমি আমাদের মনোরথের অনুমোদন করো এবং আমাদের কল্যাণ করো। কর্ম ও বলের নিমিত্ত তুমি আমাদের প্রেরিত করো এবং আয়ুকে বৃদ্ধি করো।

৯। আজ আমাদের যজ্ঞকে অনুমতি দেবী দেবগণের দ্বারা অনুমোদিত করুক। অনুমতি ও হব্যবাহক অগ্নি হবিদাতা যজমানের নিমিত্ত সুখস্বরূপ হোক৷

১০। হে মহাস্তুতা সিনীবালী (দেবপুত্রী)! যে তুমি দেবগণের ভগিনী, সেই তুমি, আহুত হবিঃ সেবন করো। হে দেবী! আমাদের সন্তান প্রদান করো।

১১। আপন সহায়িকা নদীসমূহের সাথে দৃষদ্বতীশতদ্র চন্দ্রভাগা-বিপাশা-রেবতী– এই পঞ্চ নদী সরস্বতী নদীতে সঙ্গমিতা হয়েছে। পাঁচটি ধারায় প্রবাহমানা সেই সরস্বতী আপন প্রবাহ প্রদেশে একই সরিৎ হয়ে গিয়েছে। (অর্থাৎ পাঁচটি নদী আপন নাম ত্যাগ করে সরস্বতীর নাম ধারণ করে নিয়েছে)।

১২। হে অগ্নি! তুমিই প্রথম অঙ্গিরা ঋষি। দ্যোতমান তুমি দেবগণের কল্যাণকারী ও মিত্র হয়েছ। ক্রান্তদ্রষ্টা, বিদিতকর্মা এবং দীপ্তিমান হয়ে ঋষি (বা বর্শা) সমন্বিত মরুৎ, হে অগ্নি! তোমার সেবায় রত হয়ে আছে।

১৩। হে দ্যোতমান-বন্দনীয় অগ্নি! তুমি আপন রক্ষাসমূহের দ্বারা এই ধনী যজমান এবং তার পুত্রদের রক্ষা করো। পুত্র-পৌত্র ও গাভীগণকে অনিমেষে রক্ষা করণশালী তুমিই রক্ষক। হে অগ্নি! আমরা তোমার কর্মে (অর্থাৎ যজ্ঞে) বিদ্যমান আছি৷

১৪। হে অধ্বর্যু! প্রজ্ঞানবান্ তুমি উত্তানিত হয়ে (চিৎ হয়ে) পড়ে থাকা কাষ্ঠে অগ্নিকে নিয়ে রাখো। কামনা করা মাত্র সেই অরণি তৎক্ষণাৎই অভিষেক্তা অগ্নিকে উৎপন্ন করে দিয়েছে। রক্তজ্বালাসঙ্ঘাত এবং পৃথিবীর পুত্র অগ্নি জ্ঞানের সাথে মন্থন করার পর উৎপন্ন হয়েছে। এর তেজ উজ্জ্বল।

১৫। হে জাতবেদা অগ্নি! যজ্ঞভূমির স্থান এবং পৃথিবীর নাভি উত্তর বেদিতে আমরা তোমাকে হবিঃ বহনের নিমিত্ত নিহিত (বা স্থাপিত) করছি।

১৬। বলের কামনা করণশালী, স্তুতির দ্বারা লভ্য, সৎ-স্তুতিসমূহের দ্বারা স্তুতিযোগ্য, ঋকসমূহের দ্বারা প্রতিপাদ্য, নররূপ লব্ধখ্যাতি ইন্দ্রদেবের নিমিত্ত আমরা, অঙ্গিরা ঋষির ন্যায় ত্রিবৃৎ ইত্যাদি বলপ্রাপক স্তোম স্মরণ করছি এবং মন্ত্র উচ্চারিত করছি।

১৭। হেঋত্বিকগণ! বলের কামনা করণশালী এবং মহান দেবতা ইন্দ্রের নিমিত্ত মহৎ সোমান্ন এবং স্তোমোপযোগী সাম আহৃত করো; যে সামের দ্বারা আমাদের পদজ্ঞ (পদমাত্মের স্বরূপ জ্ঞাতা) পূর্বজ অঙ্গিরাগণ (বা পূর্বপুরুষগণ) ইন্দ্রের অর্চনা করে গাভীসমূহ (বা সূর্যকিরণসমূহ) প্রাপ্তশালী হয়েছিলেন৷

১৮। হে ইন্দ্র! সোম সম্পাদন করণশালী মিত্র যজমান তোমাকে আকাঙ্ক্ষা করছেন। তারা সোমের অভিষব করছেন; হবিরান্নকে বেদির উপর স্থাপন করে এবং লোকের নিন্দা সহ্য করে–কেন? এইজন্য যে, তোমার নিকট হতে প্রজ্ঞান-বিশেষ অবশ্যই প্রাপ্ত হওয়া যায়।

১৯। সুদূরেও স্থিত লোক তোমা হতে দূরে নয়। অতএব হে হরী নামক অশ্বশালী ইন্দ্র! স্থির বলসেচক ইন্দ্রের উদ্দেশে এই প্রাতঃসবন ইত্যাদি করা হয়েছে। এবং অগ্নির সমিদ্ধ হওয়ার পর অভিষব প্রস্তর যুক্ত করা হয়েছে (অর্থাৎ সোমরস অভিযব করা হয়েছে)।

২০। যুদ্ধে অসহনীয়, সেনাগণে সর্বত্র ব্যাপ্তশীল, জলের বর্ষক, বলের রক্ষক; যুদ্ধে জয়ী, শুভ নিবাসভূত, সুকীর্তিবান্ এবং জয়শালী তুমি হেন সোমরসকে, হে সোম! আমরা আনন্দিত করছি।

২১। যে যজমান সোমের উদ্দেশ্যে হবিঃ প্রদান করেন, সোম তাঁকে নবপ্রসূতা গাভী প্রদান করে, ব্যাপনশীল অশ্ব প্রদান করে এবং কর্মঠ পুত্রও প্রদান করে। গৃহে সজ্জনতা, যজ্ঞে সৎ-সংযোগ, সভায় সৎ-সমাবেশে এবং পিতার অনুশাসনে বিদ্যমান (বিনীত) সন্তানদাতা এই সোমের নিমিত্ত আহুতি প্রদান করা হচ্ছে।

২২। হে সোম! তুমি এই সকল ওযধিসমূহকে জলকে এবং গাভীকে উৎপন্ন করেছ। তুমি বিস্তৃত অন্তরিক্ষকে বিস্তীর্ণ করেছ এবং তুমিই জ্যোতির দ্বারা অন্ধকারকে বিনষ্ট করেছ।

২৩। হে সোমদেব! আপন দিব্য মনের দ্বারা, হে বলবন্! তুমি তোমার আপন বনের এক ক্ষুদ্র অংশ আমাদের প্রদান করো। কেউই তোমাকে প্রতিবদ্ধ করে না। তুমি বলবীর্যের অধিষ্ঠাতা। যজ্ঞে তুমি আমাদের দুই লোকের যোগ্য নিরোগ করে দাও; (অর্থাৎ তোমার নিকট হতে দিব্য মন ও দিব্য ধন লাভ করে যজ্ঞ সুসম্পাদন পূর্বক আমরা যেন এই লোকে নিরোগ থাকতে পারি, এবং মরণের পরে স্বর্গলোকে গমন করতে পারি)।

২৪। হিরন্ময় কিরণশালী সূর্য পৃথিবীর সাথে সম্বন্ধিত অষ্ট দিককে, তিন অন্তরিক্ষকে (লোককে), যোজন দূর প্রদেশকে এবং সপ্ত বিশাল সাগরকে প্রকাশিত করছে। হবিদাতা যজমানের নিমিত্ত বরণীয় রত্ন ইত্যাদি প্রদান করে সবিতাদেব উদিত হচ্ছে৷

২৫। হিরন্ময় কিরণশালী এবং বিশিষ্ট রূপে প্রজাগণকে দর্শনশালী সবিতাদেব দ্যাবা ও পৃথিবী উভয়ের মধ্যেই গমন করে থাকে। উদয় হয়ে সে অন্ধকাররূপ ব্যাধিকে অপবাধিত (দূর) করে থাকে। যখন সূর্য অস্তমিত হয়, তখন আপন কৃষ্ণ প্রকাশের (অর্থাৎ অন্ধকারের) দ্বারা দ্যুলোককে রিক্ত সদৃশ করে দিয়ে থাকে৷

২৬। হিরন্ময় কিরণরূপ হস্তশালী, প্রাণবান্ কল্যাণস্তুতি, মিত্রগণের সুখয়িতা এবং তেজবা সূর্য আমাদের অভিমুখ হোক। যাতুধানদেব (অর্থাৎ রাক্ষসদের) অপসিদ্ধ (বা চূরীভূত করে প্রতিদিন স্কৃয়মান সূর্যদেব উধ্বস্থ হয়ে থাকে।

২৭। হে সবিতা! তোমার যে পূর্বকালীন, ধূলিরহিত এবং সাধু সম্পাদিত মার্গ বিধাতার দ্বারা অন্তরিক্ষে নির্মিত হয়েছে, সেই সুগম্য মার্গের দ্বারা, হে দেব! আজ তুমি যজ্ঞে আগমন করো এবং আমাদের রক্ষা করো। হে দেব! তুমি আমাদের স্থাপিত করো বা আপন করে লও।

২৮। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা দুজন সোমরস পান করো এবং আমাদের সুখ-শান্তি প্রদান করো। হে অশ্বিনদ্বয়! তোমরা দুজন আপন অখণ্ডিতা রক্ষাসমূহের দ্বারা আমাদের সুরক্ষিত করো।

২৯। হে যুবা অশ্বিনদ্বয়! আমাদের মধ্যে কর্মবতী বুদ্ধি পূর্ণ করো। হে দর্শনীয়গণ! হে সেচকগণ! আমাদের কামনাকেও যজ্ঞময়ী করে দাও। হে অশ্বিদ্বয়! দ্যুতক্রীড়া রহিত অর্থাৎ সৎপথে অর্জিত অন্নের নিমিত্ত, এই অন্নলাভক যজ্ঞে তোমরা দুজন আমাদের সহায়ক হও।

৩০। হে অশ্বিদ্বয়! অহিংসিত এবং সুগম যুক্তিসমূহ বা রক্ষাসমূহের দ্বারা তোমরা দুজন আমাদের দিবারাত্র রক্ষা করো। মিত্র, বরুণ, অদিতি, সিন্ধু, পৃথিবী এবং দ্যুলোক আমাদের সেই রক্ষা প্রতিশ্রুত করুক৷

৩১। রাত্রিকালে লোকে লোকে ভ্রমণকারী, দেব ও মনুষ্যকে তাদের আপন আপন স্থানে ও কর্মসমূহের অধিষ্ঠিত করে এবং লোকসমূহকে দর্শন করতে করতে সবিতাদেব আপন হিরন্ময় রথে গমন করছে।

৩২। হে রাত্রি! পালক বা উৎপাদক অন্তরিক্ষের স্থানসমূহের সাথে তুমি পার্থিব লোককে সর্বৰ্থা আপূরিত করে দিয়েছে, অথবা পোষক সূর্যের কৃষ্ণ তেজের দ্বরা হে রাত্রি! তুমি পৃথীলোককে পূর্ণ করে দিয়েছ। হে মহতি! তুমি দুলোকেরও স্থানসমূহকে অভিব্যাপ্ত করে রয়েছ। অন্ধকার আপন পূর্ণ প্রদীপ্তির সাথে সর্বত্র বর্তমান হয়ে রয়েছে৷

৩৩। হে অন্নদায়িনী উষা! তুমি আমাদের জন্য সেই বিচিত্র ধন আহৃত করো যে, যার দ্বারা আমরা নিজেদের, পুত্র এবং পৌত্রকে জীবিত রাখতে পারি।

৩৪। প্রাতঃকালে আমরা অগ্নিকে আহ্বান করছি। ইন্দ্রকেও আহ্বান করছি। প্রাতঃ মিত্র ও বরুণের। প্রাতঃকাল অশ্বিন্দ্বয়ের। প্রাতঃকাল মনের, পূষার এবং মন্ত্ৰাধিদেবতা ব্ৰহ্মণস্পতির। তাদের সকলকে আমরা আহ্বান করছি। প্রাতঃকালে আমরা সোম ও রুদ্রেকেও আহ্বান করছি।

৩৫। প্রাতঃকালে আমরা অদিতির পুত্র, জেতা, উগ্রস্বভাব এবং বিশেষ রূপ ধারণশীল ভগদেবকে আহ্বান করছি। বুভুক্ষিতও যাকে সম্মান প্রদান করে উদিত হও–এমন বলে থাকে, রোগীও এবং রাজাও যাকে উদয় হও এমন বলে থাকে।

৩৬। হে নেতা! হে সত্যধন ভগ! ধন ইত্যাদি প্রদান করার সময় আমাদের এই বুদ্ধিকেও উচ্চে উন্নীত করো (অর্থাৎ আমাদের ধন প্রদান করো এবং সেই সাথেই আমাদের উদার করে দাও)। হে ভগ! আমাদের গাভী, অশ্ব ইত্যাদির দ্বারা বৃদ্ধি প্রাপ্ত করো। হে ভগ! আমরা যেন সেবক ইত্যাদির দ্বারা বহু মনুষ্য-সম্পন্ন হতে পারি।

৩৭। হে ভগ! আমরা বর্তমানে যেন ধনবান হই। সূর্যের অস্তগমনের পর এবং দিনের মধ্যেও আমরা যেন ধনবান হই। হে মঘবন্! আমরা যেন সূর্যের উদয়কালেও ধনী হই। আমরা যেন সদা দেবতাগণের সুমতিতে বিদ্যমান থাকি।

৩৮। হে দেবগণ! ভগই ধনবান্ দেবাত হোক। তার দ্বারাই আমরা ধনবান্ দেবা হই। হে ভগ! তুমি হেন সেই ভগদেবকেই সর্ব জগৎ অত্যন্ত আহ্বান করছে। হে ভগ! সেই তুমি আমাদের অগ্রগামী হও; (অর্থাৎ আমরা যেন তোমাকে অনুসরণ করতে পারি)।

৩৯। অশ্বের ন্যায় যজ্ঞের নিমিত্ত এবং পবিত্র পদের নিমিত্ত উপায়সমূহ প্রহিত হচ্ছেন ধনপ্রাপক ভগকে সেই উপায়সমূহ আমাদের প্রাপ্ত করাক; যেমন বেগবান্ অশ্ব রথকে গৃহে আনয়ন করে।

৪০। অশ্ব, গাভী এবং পুত্রের দাত্রী কল্যাণকারিণী উপায়সমূহ আমাদের নিমিত্ত প্রকট হোক। শিশির-জলকে ক্ষরিত করে এবং সর্বথা প্রবৃদ্ধা হে উষাগণ! তোমরা আমাদের কল্যাণের সাথে সুরক্ষিত করো।

৪১। হে পূষা! তোমার যজনে নিরত আমরা কখনও যেন বিনষ্ট হই। যজ্ঞে যেন তোমারই স্তুতি করণশীল হই।

৪২। বেদবাণী এবং যজ্ঞ কর্মের দ্বারা অভিমুখীকৃত পূষা সকল পথের অধিপতি সূর্যকে প্রাপ্ত হয়ে থাকে। সেই পূষা আনন্দের মূল শোকনাশক উপায় ধন ইত্যাদি আমাদের প্রদান করুক। পূষাদেব আমাদের প্রতিটি যজ্ঞ ইত্যাদি কর্ম বা বিচারকে (অর্থাৎ সিদ্ধান্তকে) সিদ্ধ করুক।

৪৩। জগতের রক্ষক এবং অদমনীয় যজ্ঞদেবতা বিষ্ণুদেব অগ্নিবায়ু ও আদিত্যরূপ তিন পদে (তিন লোককে) রক্ষা করছেন বা বন্ধন করে রেখেছেন। তিনিই এই সত্য প্রভৃতি ধর্মসমূহকে ধারণ করেন।

৪৪। বিষ্ণুর যে পরম গুপ্ত স্থান আছে, তাকে জাগতিক প্রলোভন হতে মুক্ত অর্থাৎ নিষ্কাম ও সতত জাগরুক (চৈতন্যময়) বিদ্বান্ ব্রাহ্মণগণ দীপিত করে থাকে।

৪৫। উদকবতী, লোকগণের আশ্রয়ণীয়া, বিস্তীর্ণা (উর্ব), বিস্তৃতা, জলদাত্রী, শোভন রূপশালিনী, অজরা এবং প্রভূত রেতস্কা দ্যাবাপৃথিবী বরুণের ধর্মের দ্বারা দৃঢ়ীকৃত হয়।

৪৬। আমাদের যারা শত্রু, তারা অধোগামী হোক। আমরা তাদের ইন্দ্র ও অগ্নির দ্বারা দূরীভূত করি। বসুগণ, রুদ্রবর্গ এবং আদিত্যসমূহ আমাদের সকলের উচ্চস্থিত, উৎকৃষ্ট জ্ঞাতা ও অধিরাজ করুন।

৪৭। হে নাসত্য নামক অশ্বিদ্বয়! ত্রয়াস্ত্রিংশ সংখ্যক (ত্রিগুণৈরকাদশ অর্থাৎ তেত্রিশ) দেবগণের সাথে সোমরস পানের উদ্দেশে তোমরা দুজন এইস্থলে যজ্ঞে আগত হও। আমাদের আয়ুকে বর্ধিত করো, পাপসমূহকে শোধিত করো, দ্বেষী শত্রুগণকে প্রতিষিদ্ধ করো এবং আমাদের কল্যাণের নিমিত্ত সহপ্রাপ্ত (বা সহযোগী) হও।

৪৮। হে মরুৎবর্গ! এই তোমাদের স্তোম, এই তোমাদের স্তুতি–নিঃস্বার্থ ও মাননীয় যজ্ঞকর্তার। বর্ষার নিমিত্ত আহ্বয়মান হে মরুৎবর্গ! বাল্য-যুবা-বৃদ্ধাবস্থাকে দৃঢ় করার নিমিত্ত তোমরা এখানে আগত হও। হে মরুৎবর্গ। আমাদের বর্ষা বা অন্ন এবং ক্ষিপ্রপ্রদ বল প্রাপ্ত করো।

৪৯। স্তোম, ছন্দ, কর্ম এবং প্রমাণের সাথে সপ্ত দৈবী ঋষি, (ভরদ্বাজ, কশ্যপ, গৌতম, অত্রি, বিশ্বামিত্র, জমদগ্নি ও বশিষ্ঠ) সৃষ্টিযজ্ঞকে লাভ করেছিলেন। পূর্বকল্পের দৈবী ঋষিগণের পথকে অনুসরণ করে সেই ধীমানগণ এই সৃষ্টিকর্মের প্রারম্ভ করেছিলেন; যেভাবে সারথি অশ্বের লাগামকে গ্রহণ করে থাকে।

৫০। আয়ু, ব্রহ্মতেজঃ, ধন-সমৃদ্ধি, শত্রুভেদন, এই স্বর্ণ রৌপ্য এবং তেজ,জয়ের নিমিত্ত আমাতেই প্রবিষ্ট হোক।

৫১। রাক্ষস ও পিশাচগণ তাকে (অর্থাৎ হিরণ্যকে) সহ্য করতে পারে না; কারণ তা দেবগণের প্রথমোৎপন্ন তেজ। যে মনুষ্য দাক্ষায়ণ অর্থাৎ অলঙ্কারস্বরূপ হিরণ্য ধারণ করে, সে দেবলোকে এবং মনুষ্যলোকে দীর্ঘ আয়ু লাভ করে।

৫২। প্রসন্ন হয়ে দক্ষবংশোৎপন্ন সুমতিসম্পন্ন ব্রাহ্মণগণ শতানীক রাজাকে যে হিরণ্যাভরণ বন্ধন করে দিয়েছিল, আমি সেই আভরণই নিজেও শত শরৎ-ঋতু সম্পন্ন আয়ুর নিমিত্ত বন্ধন (বা ধারণ) করছি। যে রকমে আমিও আয়ুষ্মন এবং বৃদ্ধ শরীরশালী হতে পারি।

৫৩। অহিবুধ্য দেব, অজ একপাৎ, পৃথ্বী, সমুদ্র এবং বিশ্বদেবগণ আমাদের আহ্বান শ্রবণ করো। সত্য বা যজ্ঞের বর্ধক, আহ্বায়মান, মন্ত্রের দ্বারা সংস্তুত, কবিগণের (ক্রান্তদর্শীগণের) ও মেধাবী ঋষিবর্গের দ্বারা প্রশংসিত সেই দেবতাগণ আমাদের রক্ষা করুক।

৫৪। চিরকাল ব্যাপী শোভমান আদিত্যবর্গের নিমিত্ত আমি এই ঘৃতস্রাবিনী স্তুতিবাণীসমূহ বুদ্ধিরূপ জুহু (যজ্ঞপাত্র; সুক)-এর দ্বারা হোম করছি। আমাদের এই বাণীসকলকে মিত্র, অর্ঘমা, ভগ, বলোৎপন্ন বরুণ, দক্ষ এবং অংশ–এই সূর্যবিশেষগণ শ্রবণ করুক৷

৫৫। সপ্ত ঋষি (প্রাণ)–ত্ব-চক্ষু শ্রবণ-রসনা-ঘ্রাণ-বুদ্ধি, শরীরে নিহিত আছে। সেই সপ্ত প্রাণ অপ্রমাদ ভাবে এই শরীররূপ গৃহকে রক্ষা করে থাকে। শরীরিক বিষয়সমূহে ব্যাপনশীল সেই সপ্ত প্রাণ জীবের সুযুপ্ত হওয়ার পর আত্মায় লীন হয়ে যায়। সেইকালে চিরানিদ্র (অর্থাৎ কখনও নিদ্রাশীল নয়, এমন) এবং জীবনদাতা প্রাণ ও অপান সদা জাগ্রত থাকে।

৫৬। দেবগণকে কামনা করে, আমরা তোমাকে যাচিত করছি। হে ব্ৰহ্মণস্পতি! তুমি উত্থিত হও। সুদাতা মরুৎ-গণ নিকটে আগমন করুক। হে ইন্দ্র! তুমিও ক্ষিপ্র এবং যজ্ঞসঙ্গত হও।

৫৭। নিশ্চিয়ই মন্ত্ৰাধিপ ব্রাহ্মণস্পতি উথাহ্ মন্ত্র বলছেন, যাতে (অর্থাৎ যে মন্ত্রগুলিতে) ইন্দ্র, বরুণ, মিত্র, চিতস্বিক অর্যমা ও অন্যান্য দেবতাগণ আপন আপন বাস নির্মাণ করে; (অর্থাৎ সেই মন্ত্রসমূহের মধ্যে ঐ ঐ দেবতাগণ সংশ্লিষ্ট হয়ে যায়)।

৫৮। হে ব্রাহ্মণস্পতি দেব। তুমি এই লোকের নিয়ন্তা। তুমি আমাদের উচ্চারিত সূক্তসমূহ জ্ঞাত হও এবং আমাদের পুত্রগণকে প্রীণিত করো। দেবগণের যে কল্যাণময়তা আছে, তার সবই আমাদের হোক; (অর্থাৎ দেবগণ তাদের কল্যাণশক্তির দ্বারা আমাদের কল্যাণ সাধন করুক)। কল্যাণযুক্ত পুত্র প্রাপ্ত হয়ে যজ্ঞে আমরা মহৎ মন্ত্র উচ্চারণ করব। যে বিশ্বকর্মা প্রাণীবর্গকে সংহার করে, যে আমাদের পালন করে, হে অন্নপালক দেব! সেই তুমি আমাদের অন্ন প্রদান করো। য ইমা (১৭।১৭), বিশ্বকর্মা (১৭।২৬), যো নঃ পিতা (১৭।২৭) এবং অন্নপতে (১১।৮৩) মন্ত্রে কথিত হয়ে গিয়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *