১৩. শুক্লযজুর্বেদ – ত্রয়োদশ অধ্যায়

ত্রয়োদশ অধ্যায়

মন্ত্রঃ– ময়ি গৃহ্নাম্যগ্ৰে অগ্নিং বায়ম্পোষায় সুপ্রজাস্তায় সুবীর্যায়। মামু দেবতাঃ সচন্তা৷১। অপাং পৃষ্ঠমসি যোনিরশ্নেঃ সমুদ্রমভিতঃ। পিন্বমান। বর্ধমানো মহা আ চ পুষ্করে। দিবো মাত্রয়া বরিশা প্রথ৷৷২৷৷ ব্ৰহ্ম জজ্ঞানং প্রথমং পুরস্তাদি সীমতঃ সুরুচো বেন আবঃ। সবুধ্যা উপমা অস্য বিষ্ঠাঃ সতশ্চ যোনিমসতশ্চ বি বঃ৷৩৷ হিরণ্যগর্ভঃ সমবর্ততাগ্রে ভূতস্য জাতঃ পতিরেক আসীৎ। স দাধার পৃথিবীং দ্যামুতেমাং কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম৷৷৪। দ্রশ্চস্কন্দ পৃথিবীমনু দামিমং চ যোনিমনু যশ্চ পূর্বঃ। সমানঃ। সমানং যোনিমনু সঞ্চরন্তং দ্রং জুহোম্যনু সপ্ত ছোত্রাঃ।৫৷ নমোহস্তু সপেভ্যো যে কে চ পৃথিবীমনু। যে অন্তরিক্ষে যে দিবি তেভ্যঃ সপেভ্যো নমঃ।।৬। যা ইষবো যাতুধানানাং যে বা বনস্পতী বনু। যে বাবটেযু শেরতে তেভ্যঃ সর্পেভ্যা নমঃ।।৭৷৷ যে বামী রেচনে দিবো যে বা সূর্যস্য রশ্মি। যেষামন্দু সদস্কৃতং তেভ্যঃ। সর্পেভ্যো নমঃ।।৮।কৃণুত্ব পাজঃ প্রসিতিংনপৃথ্বীং যাহি রাজেৰামবাঁইভেন। তৃষীমনু প্রসিতিং দ্রুণানোহস্তাহসি বিধ্য রক্ষসস্তাপিষ্ঠেঃ ৯৷ তব ভ্ৰমাস আশুয়া পতন্ত্যনুস্পৃশ ধৃষতা শশাশুচান। তপূংষ্যগ্নে জুয়া পতঙ্গানসন্দিতো বি সৃজ বিগুল্কাঃ।।১০৷৷ প্রতি স্পশশা বি সৃজতৃর্ণিতমো ভবা পায়ুবিশশা অস্যা অদঃ। যো নো দূরে অঘশংসো যো  অন্ত্যয়ে মা কিষ্টে ব্যথিরা দধর্ষীৎ৷১১৷ উদয়ে তিষ্ঠ প্ৰত্যা তনু নমিত্রা ওষতাত্তিগুহেতে। যো নো অরাতিং সমিধান চক্রেনীচা তং ধক্ষতসংন শুষ্ক৷১২৷৷ উধ্বো ভব প্রতি বিধ্যাধ্যস্মদাবিষ্কৃণু দৈব্যানগ্নে। অব স্থিরা তনুহি ধাতুজুনাং জামিমজামিং প্র মৃণীহি শত্রু। অগ্নেষ্টা তেজসা সাদয়ামি৷১৩৷ অগ্নিমূর্ধা দিবঃ ককুৎপতিঃ পৃথিব্যা অয়ম্। অপাং রেংসি জিতি। ইন্দ্রস্য ভৌজসা সাদয়ামি৷১৪৷৷ ভূবদ যজ্ঞস্য রজসশ্চ নেতা যত্রা নিযুম্ভিঃ সচসে শিবাভিঃ। দিবি মূর্ধ্বানংদধিষে স্বর্ষাং। জিহ্বমগ্নে হব্যবাহ৷১৫৷ ধ্ৰুবাহসি ধরুণাহস্তৃতা বিশ্বকর্মা। মা ত্বা সমুদ্র উদ্বধীম্মা সুপর্ণোইব্যথমানা পৃথিবীং হং॥১৬৷৷ প্রজাপতিষ্টা সাদয়ত্বপাং পৃষ্ঠে সমুদ্রস্যেম। ব্যচস্বতীং প্রথস্বতীং প্রথস্ব পৃথিব্যসি৷৷১৭৷৷ ভূরসি ভূমিরস্যদিতিরসি বিশ্বধারা বিশ্বস্য ভুবনস্য ধর্তী। পৃথিবীং যচ্ছ পৃথিবীং দৃংহ পৃথিবীং মা হিংসীঃ ॥১৮ বিশ্বম্মৈ প্রাণায়াপনায় ব্যানায়োদানায় প্রতিষ্ঠায়ৈ চরিত্রায়। অগ্নিাহভি. পাতু মহ্যাঁ স্বস্ত্যা ছর্দিা শম্ভমেন তয়া দেবতয়াহঙ্গিরস্বদ বা সীদ।১৯৷৷ কাণ্ডাৎ কাণ্ডাৎ প্রবোহন্তী পরুষঃ পরুষম্পরি। এবা নো দূর্বে প্রতনু সহস্রেণশতেন চ॥২৷যাশতেন প্রতনোষি সহস্রেণ বিবোহসি। তস্যান্তে দেৰীষ্টকে বিধেম হবিষা বয়ম্৷৷২১৷ যাস্তে অপ্নে সূর্যে রুচো দিবমাতথন্তি রশ্মিভঃ। তাভিননা অদ্য সর্বাভী রুচে জনায় নস্কৃধি৷৷২২৷৷ যা বো দেবাঃ সূর্যে রূচো গোশ্বেযু যা রুচঃ। ইন্দ্রাগ্নী তাভিঃ সর্বাভী রুচং নো ধত্ত বৃহম্পতে৷৷২৩৷ বিরাড় জ্যোতিরধারয়ৎ স্বরাড় জ্যোতিরধারয়ৎ। প্রজাপতি সাদয়তদু পৃষ্ঠে পৃথিব্যা জ্যোতিষ্মতী। বিশ্বস্মৈ প্রাণায়াপনায় ব্যানায় বিশ্ব জ্যোতির্যচ্ছ। অগ্নিষ্টেহধিপতিয়া দেবতয়াহঙ্গিরস্ব ধ্ৰুবা সীদ।২৪৷৷মধুশ্চমাধবশ্য বাসন্তিকাবৃতু অগ্নেরন্তঃশ্লেষোহসি কল্পেং দ্যাবাপৃথিবী কল্পশ্যামাপ ওয়াধয়ঃ কল্পন্তামগ্নয়ঃ পৃথম জ্যৈষ্ঠায় ব্রতাঃ। যে অগ্নয়ঃ সমনসোন্তরা দ্যাবাপৃথিবী ইমে। বাসন্তিকাবৃতু অভিকল্পমানা ইন্দ্ৰমিব-দেবা অভিসংবিশন্তু তয়া দেবতয়াহঙ্গির প্রবে সীত৷৷২৫৷ অষাঢ়াহসি সহমানা সহস্বারাতীঃ সহস্ব পৃতনায়তঃ। সহস্রবীৰ্যাহসি সা মা জিন্ন।২৬৷৷ মধু বাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ। মাধ্বীনঃ সন্তোষধীঃ।।২৭৷৷ মধু নক্তমুতোষসো মধুম পার্থিবং রজঃ। মধু দৌরন্তু নঃ পিতা।।২৮। মধুমাগ্নে বনস্পৰ্তিধুম অস্তু সূর্যঃ। মাধ্বীৰ্গাবো ভবন্তু নঃ ২৯৷৷ অপাং গম্ভন্তুসীদ মা ত্বা সূর্যোহভি তাগীন্মাহগ্নিবৈশ্বানরঃ। অচ্ছিন্নপত্রাঃ প্রজা অনুবীক্ষনু ত্বা দিব্যা বৃষ্টিঃ সচতা৷৩০৷৷ ত্রীমুদ্রান্তসমসৃপৎস্বর্গানপাং পতিবৃষভ ইষ্টকানা। পুরীষং সানঃ সুরুতস্য লোকে তত্র গচ্ছ যত্র পূর্বে পরেতাঃ ॥৪১। মহী দৌঃ পৃথিবী চনইমং যজ্ঞ মিমিক্ষতা। পিতৃতাং নো ভরীমভিঃ।।৩২৷৷ বিষ্ণোঃ কর্মণি পশ্যত যত ব্ৰতানি পস্পশে। ইন্দ্রস্য যুজ্য সখা।।৩৩॥ধ্রুবাহসি ধরুণেতো যজ্ঞে প্রথমমোভ্যো যোনিভ্যো অধিজাতবেদঃ। স গায়া ত্রিষ্ঠুভানুষ্ঠুভা চ দেবেভ্যো হব্যং বহতু প্রজানন্৷৷৩৪৷৷ ইষে রায়ে রমস্ব সহসে দ্যুম্ন ঊর্জে অপত্যায়। সম্রাডসি স্বরাডসি সারস্বতৌ তত্বাৎসৌ প্রাবতাম্।।৩৫। অগ্নে যুক্ষ্মা হি যে তবাশ্বাসো দেব সাধবঃ। অরংবহন্তি মন্যবে৷৩৬৷৷ যুক্ষ্মা হি দেবহুতম অশ্ব অগ্নে রথীরিব। নি হোতা পূর্বাঃ সদঃ ৩৭৷ সম্যক্ বস্তি সরিতো ন ধেনা অন্তর্দা মনসা পূয়মানাঃ। ঘৃতস্য ধারা অভি চাকশীম হিরণ্যময়া রেবতো মধ্যে অগ্নেঃ ॥৩৮। ঋচে ত্বা রুচে বা ভাসে ত্বা জ্যোতিষে ত্ব। অভূদিদং বিশ্বস্য ভুবনস্য বাজিনমগ্নেবৈশ্বানরস্য চ৷৷৩৯৷ অগ্নিৰ্জোতিষা জ্যোতিষ্মন্ রুব্বো বচসা বৰ্চস্বান্। সহস্ৰদা অসি সহস্ৰায় ত্বা।৪০। আদিত্যং গর্ভং পয়সা সমধি সহস্রস্য প্রতিমাং বিশ্বরূপ। পরি বৃধি হরসা মাহভি মংস্থাঃশতায়ুষংকৃণুহি চীয়মানঃ ॥৪১৷৷ বাতস্য জুতিং বরুণস্য নাভিমশ্বং অজ্ঞানং সরিরস্য মধ্যে। শিশুং নদীনাং হরিমাদ্রিবুধমগ্নে মা হিংসীঃ পরমে ব্যোমন্৷৷৪২৷৷ অজস্রমিন্দুমরুষং ভুরণুমগ্নিমীডে পূর্বচিত্তিং নোভিঃ। সপর্বভিঋতুশঃ কল্পমানো গাং মা হিংসীরদিতিং বিরাজ৷৪৩ বরূত্ৰীং ত্বষ্ঠুর্বণস্য নাভিমবিং জজ্ঞানাং রজসঃ পরস্মাৎ। মহীং সাহশ্রীমসুরস্য মায়ামগ্নে মা হিংসীঃ পরমে ব্যোম৷৪৪৷৷ যো অগ্নিরগ্নেরধ্যায়ত শোকাৎ পৃথিব্যা উত বা দিবম্পরি। যেন প্রজা বিশ্বকর্মা জজান তমগ্নে হেডঃ পরি তে বৃণ।।৪৫৷৷ চিত্রং দেবানামুদগাদনীকং চক্ষুর্মিস্য বরুণস্যাগ্নে। আই প্রা দ্যাবাপৃথিবী অন্তরিক্ষং সূর্য আত্মা জাগতস্তষশ্চ৷৷৪৬৷৷ ইমং মা হিংসীর্ধিপাদং পশুং সহস্রাক্ষো মেধায় চীয়মানঃ। ময়ুং পশুং মেধমগ্নে জুষ তেন চিদান স্তন্বে নিষীদ। ময়ুং তে শুগৃচ্ছতু যং দ্বিম্মস্তং তে শুগৃচ্ছতু।৪৭৷ ইমং মা হিংসীরেকশফং পশুং কনিক্ৰদং বাজিনং বাজিনেষু। গৌরমারণ্যমনু তে দিশামি তেন চিন্বানস্তন্বো নি ধীদ। গৌরং তে শুগৃচ্ছতু যং দ্বিম্মস্তং তে শুগচ্ছতু।।৪৮৷৷ ইমং সাহং শতধারমুৎসং ব্যচ্যমানং সরিরস্য মধ্যে। ঘৃতং দুহানামদিতিং জনায়াগ্নে মা হিংসীঃ পরমে ব্যোম। গবয়মারণ্যমনু তে দিশামি তেন চিন্বাস্তুদো নি যীদ। গবয়ং তে শুগৃচ্ছতু যং দ্বিম্মস্তং তে শুগচ্ছতু।৪৯৷ ইমমূর্ণায়ুং বরুণস্য নাভিং ত্বং পশূনাং দ্বিপদাং চতুষ্পদাম্। ত্বষ্টুঃ প্রজানাং প্রথমং জনিমগ্নে মা হিংসীঃ পরমে ব্যোম। উষ্ট্রমারণ্যমনু তে দিশামি তেন চিন্বানস্তম্বো নিষীদ। উষ্ট্রং তে শুগচ্ছতু যং দ্বিম্মস্তং তে শুগৃচ্ছতু।৫০। অজো হ্যগ্নেরজনিষ্ট শোকাৎ সো অপশ্যজ্জনিতারমগ্নে। তেন দেবা দেবতামগ্রমায়স্তেন রোহমায়নুপ মেধ্যাসঃ। শরভমারণ্যমনু তে দিশামি তেন চিন্বানস্তন্বো নি মীদ। শরভং তে শুগৃচ্ছতু । যং দ্বিম্মস্তং তে শুগৃচ্ছতু।।৫১৷৷ ত্বং যবিষ্ঠ দাশুষ্যে নৃঃ পাহি শৃণুধী গিরঃ। রক্ষা তোকমুত অনা।৫২। অপাং ত্বেনন্তসাদয়াম্যপাং তত্বাক্ষ্মন্দয়াম্যপাং ত্বা ভস্মন্সাদয়াম্যপাং ত্বা জ্যোতিষি সাদয়াম্যপাং ত্বাহায়নে সাদয়াম্যর্ণবে দ্বা সদনে সাদয়ামি সমুদ্রে ত্বা সদনে সাদয়ামি। সরিরে ত্বা সদনে সাদয়াম্যপাং ত্ব ক্ষয়ে সাদয়াম্যপাং ত্বা সধিষি সাদয়াম্যপাং ত্বা সদনে সাদয়াম্যপাং বা সধস্থে সাদয়াম্যপাং ত্বা যোনৌ সাদয়াম্যপাং ত্বা সদনে সাদয়াম্যপাং ত্বা সধস্থে সাদয়াম্যপাং ত্বা যোনৌ সাদয়াম্যপাং ত্বা পুরীষে সাদয়াম্যপাং ত্বা পাথসি সাদয়ামি। গায়ত্রণ ত্বা ছদসা সাদয়ামি। ত্রৈভেন ত্ব ছন্দসা সাদয়ামি। জাগতেন ত্বা ছন্দসা সাদয়াম্যানুফ্টভেন ত্বা ছন্দসা সাদয়ামি। পাক্তেন ত্বা ছদা সাদয়ামি।।৫৩৷ অয়ং পুরো ভুব স্তস্য প্রাণে ভৌবায়নো। বসন্তঃ প্রাণায়নো। গায়ত্রী বাসন্তী। গায়ত্র্যৈ গায়ত্রং। গায়ত্রাদুপাংশুরুপাংশোস্ত্রিবৃৎ। ত্রিবৃত রথন্তরং। বসিষ্ঠ ঋষিঃ। প্রজাপতিগৃহীতয়া ত্বয়া প্রাণং গৃহ্নামি প্রজাভ্যঃ ॥৫৪৷৷ অয়ং দক্ষিণা বিশ্বকর্মা। তস্য মনো বৈশ্বকর্মণং। গ্রীষ্মে মানসঞ্জিব গ্রৈষ্মী ত্রিষ্টুভঃ স্বারং। স্বারাদন্তর্যামোহন্তর্যামাৎ পঞ্চদশঃ। পঞ্চদশাদ বৃহদ। ভরদ্বাজ ঋষিঃ। প্রজাপতিগৃহীতয়া ত্বয়া মনো গৃহ্নামি প্রজাভ্যঃ৫৫৷৷ অয়ং পশ্চাৰ্বিশ্বব্যচা স্তস্য চক্ষুর্বৈশ্বব্যচসং। বর্ষাশ্চাক্ষুষ্যো জগতী বার্ষী জগত্যা ঋক্সমমৃত্সমাচ্ছুক্রঃ শুক্ৰাৎ সপ্তদশঃ সপ্তদশাদ্বৈরূপং। জমদগ্নিঋষিঃ। প্রজাপতিগৃহীতয়া ত্বয়া চক্ষুহামি প্রজাভ্যঃ ৫৬৷৷ ইদমুত্তরাৎ স্ব-স্তস্য শ্রোত্রং সৌবং শরহ্ৰেীষ্টপ শারদ্যনুষ্ঠুভ ঐডমৈডান্মন্থী মনি একবিংশ একবিংশাদ্বৈরাজং বিশ্বামিত্র ঋষিঃ প্রজাপতিগৃহীতয়া ত্বয়া শ্রোত্রং গৃহ্নামি প্রজাভ্যঃ৫৭৷ ইয়মুপরি মতি স্তস্যৈ বাত্যা হেমন্তো বাচ্যঃ পংক্তিহৈমন্তী পক্তৈ নিধনবন্নিধনবত আগ্রয়ণ। আগ্রয়ণাৎ ব্রিণবয়স্ত্রিংশৌ ব্রিণবয়স্ত্রিংশাভ্যাংশাকৃররৈবতে বিশ্বকর্ম ঋষিঃ প্রজাপতিগৃহীতয়া ত্বয়া বাচংগৃহমি প্রজাভ্যঃ।৫৮।

[কণ্ডিকা-৫৮, মন্ত্র-১৩২]

.

মন্ত্ৰার্থঃ– ১।[এই ত্রয়োদশ অধ্যায়ে চিতিতে কমলপত্র ইত্যাদি ধারণের (উপধানের) বিশেষ মন্ত্র কথিত হয়েছে। সর্বপ্রথম উত্তরবেদির পশ্চাতে উপরিষ্ট হয়ে যজমান এই মন্ত্র জপ করেন] গো-অশ্ব-ধনের পুষ্টির নিমিত্ত, সু-সন্ততি প্রাপ্তির নিমিত্ত এবং শুভ বলবীর্য লাভ করার নিমিত্ত আমি যজমান স্বয়ং অগ্নিকে স্থাপন করছি (অর্থাৎ আহিতাগ্নি নির্মাণ করছি)। এক্ষণে সকল যজনীয় দেবতা আমার (অর্থাৎ যজমানের) নিবেদিত হবিঃ ইত্যাদি সেবন করুন এবং আমাতে যুক্ত হোন।

২। (কুশপুঞ্জের উপর অধ্বর্যু কমলপত্র ধারণ করে বলেন) হে কমলপত্র! তুমি জলের পৃষ্ঠ। তুমি অগ্নির নিমিত্তে গৃহীত মৃত্তিকা বা চিতির কারণভূত। হে কমলপত্র! সকলের অপেক্ষা আরও বৃদ্ধিশালী সমুদ্রকে তুমি আপন ব্যাপ্তিতে স্তম্ভিত করো। বর্ধন প্রাপ্ত হয়ে অত্যন্ত বিস্তার লাভ করো। তুমি জলে দ্যুলোকের বিস্তৃতি হতে বিস্তার প্রাপ্ত হও; (অর্থ মর্ত্যের অসীম সমুদ্র ও সীমাতীত ভদ্রলোকের মতো বিস্তৃত হও)।

৩। পূর্বদিকে সুন্দর কিরণশালী এবং কমনীয় মহৎ সূর্য সর্বপ্রথম প্রকট হচ্ছে। প্রকট হয়ে অন্তরিক্ষের পাশে পাশে বিদ্যমান পরন্তু অস্পষ্ট তথা তাতে সমাহিত সত্য (প্রত্যক্ষদ্রষ্ট) এবং অসৎ (অর্থাৎ অপ্রত্যক্ষ বায়ু-প্রভৃতি)-কেও আপন প্রকাশে অভিব্যক্ত করছে৷

৪। সৃষ্টির পূর্বে এবং প্রজাপতিই হৈমাণ্ডভাবে (হিরণ্যগর্ভ রূপে) সর্বত্র বিদ্যমান ছিলেন। উৎপন্ন সেই প্রজাপতিই এই উৎপন্ন ভূতমাত্রের একমাত্র অধিপতি ছিলেন। সেই পরমাত্মাই এই অন্তরিক্ষলোককে ধারণ করেছিলেন; উনিই এই দ্যুলোককে এবং উনিই আমাদের এই পৃথিবীকেও ধারণ করেছিলেন। আমরা সেই হন প্রজাপতিদেবের উদ্দেশ্যে হবিঃ ইত্যাদি নিবেদন পূর্বক হোম করছি৷

৫। সেই মহৎ প্রকাশবিন্দু সূর্য এই অন্তরিক্ষ, দ্যুলোক ও এই ভূমির উপর সর্বপ্রথম প্রকাশিত হন। এই প্রকারে সকলের নিমিত্ত সমান স্থানভূত এই ত্রিলোকে সঞ্চরণশীল সেই সূর্যকে আমি যজমান সপ্ত দিকে প্রতীকভূত সপ্ত ঋত্বিকের সাথে সভাস্থ হয়ে অনুক্রমে (ক্রমানুসারে) যজন করছি।

৬। (যজমান স্বর্ণনিমিত এক পুরুষকে দর্শন করে বলবেন) সেই সর্পগণকে নমস্কার, যারা এই পৃথিবীর উপরে যত্র-তত্র বিদ্যমান আছে। যে সর্পগণ অন্তরিক্ষে আছে এবং যারা দ্যুলোকে বিদ্যমান আছে, সেই সকল সর্প (লোকসমূহ)-কে নমস্কার করছি৷

৭। যে সর্প যাতুনগণের (অর্থাৎ রাক্ষগণের) বাণস্বরূপ, যারা বনস্পতির অন্দরে লুকিয়ে থাকে এবং যে সর্প গর্তের মধ্যে শয়ন করে থাকে, সেই সকল সৰ্পকে নমস্কার।

৮। যে সর্প এই প্ৰকাশযুক্ত দ্যুলোকে বিদ্যমান এবং যে সর্প সূর্যের রশ্মিসমূহে বিদ্যমান আছে; যে সর্পের স্থান জলে নির্মিত, সেই সকল সৰ্পকে নমস্কার।

৯। হে অগ্নি! তুমি আপন বল ব্যক্ত করো। দুষ্টকে সন্তাপিত করার নিমিত্ত তুমি এই পৃথিবীর উপর বিস্তারপ্রাপ্তব্য জালের ন্যায় জাল বিস্তার করো–যেমন, কোন রাজা আপন মন্ত্রীদের সাথে হস্তীতে ভ্রমণ করে। হে অগ্নি! ক্রোধে আগত রাক্ষস ইত্যাদির প্রতি তুমি তীব্র শরবর্ণকারী। হে অগ্নি! তুমি রাক্ষসগণকে আপন অত্যন্ত তপনশীল জ্বালাবাণের দ্বারা বিদ্ধ করে ফেলো।

১০। হে অগ্নি! ঘূর্ণনশীল তথা শীঘ্রসঞ্চারী তোমার যে বায়ুপ্রেরিত জ্বালা-সমূহ ইতস্ততঃ গমন করে, অত্যন্ত তীক্ষ্ণতা প্রাপ্ত হয়ে, হে অগ্নি! তুমি সেই ধর্ষক জ্বালা-সমূহের দ্বারা তাপদ রাক্ষসগণকে ভষ্ম করে ফেলো। আপন জ্বালায় তুমি পিশাচগণকে দগ্ধ করো। অখণ্ডিত হয়ে তুমি, হে অগ্নি! আপন উল্কাসমূহ (অর্থাৎ স্ফুলিঙ্গ সমূহ) চতুর্দিকে প্রকীর্ণ করে দাও।

১১। হে অগ্নি! আমাদের রক্ষার নিমিত্ত চতুর্দিকে আরও আপন অনুচরগণকে নিয়োগ করো। অত্যন্ত বেগবান্ ও অহিংস তুমি এই আমাদের প্রজাগণের পালক হও। যারা পাপলিপ্তকারী (বা নিন্দক) তারা আমাদের নিকট হতে দূর হোক, এবং যারা আমাদের নিকটে স্থিত আছে, তাদের কেউই যেন তোমাকে ব্যথা দিতে সমর্থ না হয়; (অর্থাৎ তুমি সকলকে দমন করতে সমর্থ হও)

১২। হে অগ্নি! তুমি আপন জ্বালা-সমূহ হতে উদ্গত হও; আপন সেই জ্বালাসমূহকে বিস্তারিত করো এবং আমাদের শত্রুগণকে সম্পূর্ণরূপে দগ্ধ করে ফেলো। হে তীক্ষ্ণ আয়ুধশালী (বা জ্বালাসম্পন্ন) অগ্নি! যারা কাউকে আমাদের নিমিত্ত অদাতা করে দিয়েছে (অর্থাৎ কাউকে আমাদের কিছু দান করতে নিষেধ করে বা আমাদের কিছু দান করতে দেয় না)–তাদের তুমি অত্যন্ত ভস্মসাৎ করে ফেলো; যেমন–তুমি সুখে তৃণপুঞ্জকে জ্বালিয়ে দাও।

১৩। হে অগ্নি! তুমি আপন জ্বালাসমূহকে ঊধ্বস্থ করো। আমাদের উপর যে শত্রু দাঁত লাগায়, তাদের তুমি আপন জ্বালাসমূহে বিদ্ধ করো এবং এক্ষণে তুমি আপন দিব্য গুণ-কর্মকে অভিব্যক্ত করো। হে অগ্নি! তুমি রাক্ষসগণের সামান্য বা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ধনুগুলি (বা ধনুগুলির ছিলা) শিথিল করে দাও। একাকী বা সঙঘবদ্ধ আমাদের শত্রুগণকে তুমি সর্বথা মোচড় দান করো। (এক কাষ্ঠ বিশিষ্ট ঘৃতপূর্ণ জুহু স্থাপিত করণীয়)। হে জুহু! আমি তোমাকে অগ্নির তেজের সাথে এই স্থানে স্থাপিত করছি৷

১৪। এই অগ্নি দিবাকালে আদিত্য রূপে বিদ্যমান হয়ে দ্যুলোকের মূর্ধা (মস্তক) হয়, আকাশের উন্নত স্কন্ধ হয় এবং এই পৃথিবীর পালক হয়। এই অগ্নি জলের বল বৃদ্ধি করে। (উদুম্বরের কাষ্ঠনির্মিত সুবায় দধিপূর্ণ করে ধারণীয়)। হে ঔদুম্বরী সুবা! আমি তোমাকে ইন্দ্রের ওজঃ (অর্থাৎ তেজের) সাথে এই স্থানে স্থাপিত করছি৷

১৫। হে অগ্নি! যখন তুমি আপন জ্বালাজিহ্বাকে হবির বাহিকা করো, এবং যখন তুমি কল্যানা বায়ুর অশ্বে (অশ্বের উপর আরোহিত বায়ুতে) সঙ্গত হয়ে থাকো, তখন তুমি যজ্ঞ ও বর্ষাজলের নেতা হয়ে থাকো। সেই সময়ে তুমি স্বর্গপ্রদা জ্বালামূর্ধাকে দ্যুলোকে বিধৃত করে থাকে।

১৬। হে পাষাণ (ইষ্টকা)! পৃথিবীকে ধারণকারিণী তুমি অত্যন্ত স্থিরা। তুমি বিশ্বকর্মার (প্রজাপতির) দ্বারা এই স্থানে ধৃতা হয়েছ। তুমি এই সমুদ্র যেন না বিনাশ করে, এবং এই সুপর্ণও (হিরণ্য পুরুষও (যেন না বিনাশ করে)। তুমি ব্যথাপ্রাপ্ত না হয়ে চিতিকে দৃঢ় করো।

১৭। জলের পৃষ্ঠভাগ ও সমুদ্রের মার্গে, হে স্বয়মাতৃগ্না! তুমি অবকাশ এবং বিস্তারযুক্তা, প্রজাপতি তোমাকে স্থাপিত করুন। তুমি বিস্তারকে প্রাপ্ত, যেহেতু তুমি পার্থিব বিস্তীর্ণ শিলাভূমি।

১৮। হে স্বয়মাতৃগ্না! তুমি ভূমি (অর্থাৎ সুখের ভাবয়িত্রী); তুমি পৃথিবী; অদিতিস্বরূপা ও সমস্ত বিশ্বের ধারিকা তুমি বিশ্বের ধাত্রী। তুমি পৃথিবীকে সংযমিত করো। তুমি এই চিতিকে দৃঢ় করো। তুমি এই চিতিকে হিংসিত করো না।

১৯। হে স্বয়মাতৃগ্না! সকলের প্রাণ-অপান-ব্যান-উদান, কীর্তি, এবং শাস্ত্রীয় আচরণের সিদ্ধির নিমিত্ত আমি তোমাকে এইস্থানে স্থাপিত করছি। মহতী যোগক্ষেম এবং অত্যন্ত সুখকারী গৃহের দ্বারা অগ্নি তোমাকে আরও সকলের থেকে রক্ষা করুক। সেই অগ্নির দ্বারা সুরক্ষিত হয়ে তুমি অঙ্গীরা ঋষিগণের মধ্যে যেমন স্থিরা হয়ে ছিলে, সেই রকম আমাদের যজ্ঞে স্থির হয়ে প্রতিষ্ঠত থাকো।

২০। (স্বয়মাতৃগ্না ইষ্টকের উপরে কিছু দূর্বা ধারণীয়) –হে দূর্বা! এই প্রস্তরনির্মিত পাত্রের (পাথরের বাটির) প্রত্যেক ভাগে ও পর্বে পর্বে বা স্বয়ং প্রত্যেক কাণ্ডে ও পর্বে পর্বে অঙ্কুরিত হয়ে যে রকম তুমি স্বয়ং বিস্তারকে সম্প্রপ্ত হয়ে থাকে, সেই রকম আমাদেরও হে দূর্বা! শত-সহস্র পুত্র-পৌত্রে অভিবৃদ্ধ করো ৷৷

২১। হে দেবী দূর্বা (ইষ্টকা)! যে তুমি স্বয়ং নিজেকে শত-শত কাণ্ডে বিস্তার করো এবং তার পর আপন সহস্র-সহস্র অঙ্কুরের সাথে পৃথিবী ভেদ করে বাহির হও; সেই তুমি সদূর্বা ইষ্টকাকে এই স্থানের হবিঃতে আমরা পরিচরিত করছি৷

২২। হে অগ্নি! যে তুমি আপন জ্যোতিঃ সমূহ সূর্যতে সমাহিত হয়ে আপন রশ্মিসমূহের দ্বারা এই দ্যুলোককে প্রকাশিত করছ, আজ সেই আপন আভাসকলেরক দ্বারা, হে অগ্নি! আমাদের ও এই ব্যক্তির (যজমানের) নিমিত্ত নিজেকে প্রকাশিত করো।

২৩। হে দেবগণ! তোমাদের যে কান্তি সূর্য, গো এবং অশ্বে বর্তমান, হে ইন্দ্র-অগ্নি-বৃহস্পতি! আমাদের নিমিত্ত তোমরা নিজেদের সেই সকল কান্তিসমূহে কান্তিমান করো৷

২৪৷ বিশেষ রূপে শোভায়মান এই পৃঙ্খীলোক এই অগ্নি রূপ জ্যাতিকে ধারণ করছে। স্বয়ংই প্রকাশমান এই দ্যুলোক এই আদিত্য রূপ জ্যোতিকে ধারণ করছে। সকলের প্রাণ-আপান-ব্যানের নিমিত্ত পৃথিবীকে পৃষ্টমান এই বিশ্বজ্যোতিকে (বিশ্বজ্যোতি নামে অভিহিত ইষ্টকাকে) প্রজাপতি স্বয়ং ধারণ করেন। হে ইষ্টকা! তুমি আমাদের জ্যোতি প্রদান করো বা সমস্ত অগ্নিকে মর্যাদিত রাখো। হে ইষ্টকা! অগ্নিই তোমার স্বামী। অঙ্গিরা ঋষির যজ্ঞে স্থিরভাবে উপবেশনের মতোই তুমি সেই স্বদেবতা অগ্নির দ্বারা স্থাপিত হয়ে চিতিতে যথাস্থানে দৃঢ়তার সাথে স্থিত হও। [পূর্ব মন্ত্রে দ্বিযজুঃ এবং এই মন্ত্রে বিরাড় জ্যোতি, স্বরাড় জ্যোতি, রেতঃসি এবং বিশ্বজ্যোতি সংজ্ঞক ইষ্টককে ধারণের বিষয় বলা হয়েছে]।

২৫। (ঋতবী সংজ্ঞক ইষ্টককে ধারণীয়)–চৈত্র-বৈশাখ মাসদ্বয় মিলে বসন্ত ঋতু হয়। হে বসন্ত ঋতু! তোমরা চিতিভাবকে প্রাপ্ত করাতে জ্ঞানশালী অগ্নির মধ্যে বিজাড়িতশালী হয়েছ। দ্যাবা পৃথিবীকে অনুকূল করো। জল ও ওষধিসমূহকে অনুকূল করো। আমাকে অর্থাৎ যজমানের জ্যেষ্ঠতার নিমিত্ত তার সমান (বা উপযুক্ত) কার্যশালী বিবিধ ইষ্টকা রূপ অগ্নিসমূহকে আমার অনুকূল করো। অন্য লোকেরও দ্বারা এই দ্যাবাপৃথিবীর মধ্যে সমান চিত্তে যে পৃথক্ বেদিসমূহ চয়ন করা হয়েছে। সেগুলিও এই বসন্ত ঋতুকে সম্পাদিত করতে আমাদের এই চয়ন কর্মে সমাহিত হয়ে যাক, যেমন, অন্য দেবসেবার নিমিত্ত ইন্দ্রকে সকলে আরও ঘিরে থাকে। হে ইষ্টকা! অগ্নি তোমার অধিপতি। সেই অগ্নিদেবের দ্বারা তুমি এই চিতিতে স্থাপিত হয়েছ; অঙ্গিরা ঋষির চয়নে যেভাবে স্থির হয়ে উপবেশন করেছিলে, আমাদেরও এই অগ্নিয়নে সেইভাবেই দৃঢ় হয়ে স্থিত হও।

২৬৷ (অষাঢ়া নামক ইষ্টকা ধারণীয়)–হে ইষ্টকা! তুমি অষাঢ়া (অহনশীলা) নাম-সম্পন্না। তুমি শত্রুকে অভিভূতকারিণী। হে ইষ্টকা! তুমি আমাদের অদাতা তথা যুদ্ধ করতে ইচ্ছুক শত্রুদের অভিভূত করো। তুমি সহস্র শক্তিশালিনী; অতএব তুমি আমাকে প্রসন্ন করো।

২৭। ঋত (অর্থাৎ যজ্ঞ) কামনাকারী যজমানের নিমিত্ত বায়ু মধুর হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং তার জন্য মধুর জল বাহিত হচ্ছে। আমাদের নির্মিত্ত ওষধিসমূহ মধুর হোক।

২৮। আমাদের নিমিত্ত রাত্রি মধুর হোক, দিবা মধুর হোক, এই পার্থিব লোক আমাদের নির্মিত মাধুর্যযুক্ত থোক এবং আমাদের সকলের পালক দ্যুলোকও আমাদের নিমিত্ত মধুর হোক৷৷

২৯। আমাদের নিমিত্ত পীপল প্রভৃতি বনস্পতি মধুর হোক। সূর্য আমাদের নিমিত্ত মধুর, হোক এবং আমাদের গাভীসমূহ আমাদের নিমিত্ত মধুর দুগ্ধ-ঘৃত প্রদানকারিণী হোক ৷৷

৩০। (ইষ্টকের নিকট একটি কচ্ছপ ধারণীয়)–হে কূর্ম! তুমি জলের গ্রন্থন (বা গভীরে) রবিমণ্ডলে প্রবেশ করো। সেখানে তোমাকে সূর্য সন্তপ্ত না করুক এবং বিশ্বের নেতা অগ্নিই তোমাকে রক্ষা করুক। অনখণ্ডিত অবয়বশালী এই ইষ্টক-প্রজাগণকে তুমি 1 দর্শন করে। এই দিব্য বৃষ্টি সদা তোমার প্রাপ্ত থাকুক।

৩১৷ এই কূর্ম জলের অধিপতি তথা ইষ্টকের অভিবর্ষক; এ তিন লোককে পার করে যাচ্ছে (অর্থাৎ উদ্ধার করছে)। আহুতি দিয়ে পশুগণকে সমাচ্ছাদিত করতে, হে কচ্ছপ! পুণ্যলোকে, যে স্থানে পূর্বকালের চিতিসমূহে দগ্ধ হয়ে কচ্ছপগণ মৃত্যুপ্রাপ্ত হয়ে সমুপস্থিত হয়ে গিয়েছে, সেই স্থানে তুমিও গমন করো ৷

৩২। হে মহতী দ্যৌ ও পৃথ্বী! এই আমাদের যজ্ঞকে আপন কৃপাজলে আসিঞ্চিত করো এবং আমাদের আপন ভরণ-পোষণের অন্ন-জল ইত্যাদি শক্তিতে আপূরিত করো

৩৩। বিষ্ণুর (যজ্ঞপুরুষ বা সূর্যের) মহান্ কর্মসমূহকে প্রত্যক্ষ করো, যাঁর দ্বারা এই যজ্ঞ ইত্যাদি ব্রত নিঃসৃত হয়েছে। সেই বিষ্ণু ইন্দ্রের অনুকূল মিত্র।

৩৪। (মুসলের উপর উদূখল ধারণীয়)–হে উদূখল! তুমি জগতের ধারণকারিণী এবং অত্যন্ত স্থিরশালিনী। এই অগ্নি সর্বপ্রথম এই উদূখল-মুসলেই উৎপন্ন হয়েছিল। এই উৎপন্ন-লভ্য অগ্নি পুনরায় এর কারণভূতা দুটি অরণির নিয়োগে পরে উৎপন্ন হয়েছিল। এই অগ্নি আপন অধিকার জ্ঞাত হয়ে গায়ত্রী, ত্রিষ্টুপ ও অনুষ্টুপ ছন্দের দ্বারা আমাদের আহুতিসমূহ দেবতাগণের সমীপে বহন করে নিয়ে যাক৷৷

৩৫। হে উখা! বর্ষা, গো অশ্বধন, বল, যশ, অন্ন ও সন্তানের নিমিত্ত তুমি এই স্থানে বিশ্রাম করো। তুমি সম্রাট ও স্বয়ংরাট। সরস্বতীর দুই স্রোত–মন এবং বাণী বা ঋগ্বেদ ও সামবেদ তোমাকে রক্ষা করুক।

৩৬। হে অগ্নিদেব! তোমার যে বিনীত অশ্ব আছে, যারা দেবতাগণকে যজ্ঞের প্রতি বহন পূর্বক আনয়ন করে, সেই অশ্বগণকে শীঘ্র আপন রথে সংযোজিত করো।

৩৭। কোন রথস্বামী জয় লাভের নিমিত্ত আপন রথে যেমন অশ্ব সংযুক্ত করে, তুমিও তেমনই শীঘ্র আপন দেবগণকে আহ্বান করার নিমিত্ত অত্যন্ত কুশল অশ্বকে আপন রথে সংযোজিত করো। হে অগ্নি! মনুষ্য হোতার প্রথমেই তুমি এই বেদির উপর প্রতিষ্ঠিত হও

৩৮। হৃদয়ের অন্দরে বর্তমান শ্রদ্ধাযুক্ত মনের দ্বারা পবিত্ৰীকৃত হবিরান্নের আহুতিগুলি, নদীর (প্রবাহের) ন্যায়, এই হিরণ্যময় পুরুষের উপর উচিত রূপে নিপতিত হচ্ছে। চিতির মধ্যে বিদ্যমান সেই স্বর্ণময় পুরুষের উপর ক্ষরিত ঘৃতের আহুতি-ধারাগুলি আমি দর্শন করছি।

৩৯। হে স্বর্ণখণ্ড! ঋচার (অর্থাৎ ঋগ্বেদের দ্বারা কথিত হোত্র ইত্যাদি কর্মের সিদ্ধির) নিমিত্ত আমি তোমাকে নাসিকায় গ্রহণ করছি, এবং রুচির (অর্থাৎ কান্তির প্রাপ্তির নিমিত্ত আমি তোমাকে দক্ষিণ নাসিকায় (বিভাগে) গ্রহণ করছি। হে স্বর্ণখণ্ড! প্রভার নিমিত্ত আমি তোমাকে পশুর বাম চক্ষুতে নিক্ষেপ করছি। তেজের প্রাপ্তির নিমিত্ত আমি তোমাকে দক্ষিণ চক্ষুতে নিক্ষেপ করছি। (কর্ণেও নিক্ষেপনীয়) এই নিক্ষিপ্ত হওয়া স্বর্ণখণ্ড এই সমস্ত জগৎ এবং অগ্নিকে বল প্রদানকারী হয়েছে। এই নিমিত্ত আমি একে দক্ষিণ বাম কর্ণে আরও নিক্ষেপ করছি।

৪০৷ এই অগ্নিদেব পশুর কর্ণে পতিত হয়ে স্বর্ণের তেজে তেজস্বী হচ্ছে। এই প্রভাব অগ্নি স্বর্ণের কান্তিতে কান্তিমান হোক। (সুবর্ণনির্মিত পুরুষমূর্তির মস্তক কর্তন করে উখায় ধারণীয়)–হে মনুষ্যের শির!তুমি সহস্রশঃ সম্পত্তির দাতা। সহস্র সহস্র সম্পত্তি লাভের নিমিত্তই আমি তোমাকে এই উখায় ধারণ করছি৷৷

৪১। হে মানব শির! তুমি এই গ্রহণশীল অগ্নিকে জলে সিঞ্চিত করো, যে অগ্নি সহস্রের দাতা এবং বিবিধ রূপের উৎপন্নকারী। অগ্নির তেজে এই যজমানকে জীবিত রাখো। তুমি এঁকে হিংসা করো না। চিতিতে গলিত (বা গৃহীত) হয়ে যাওয়া, হে শির! তুমি এই যজমানকে শত বর্ষ আয়ুশালী করো।

৪২। (ঈশান কোণে অশ্বের শির ধারণীয়)–হে অগ্নি! বায়ুর গতিসম্পন্ন, বরুণের নাভিসদৃশ (অর্থাৎ বরুণের রক্ষণীয়), জলের মধ্যে উৎপন্নশীল, সমুদ্রের পত্নী নদীসমূহের শিশুভূত, হরিবর্ণ তথা অদ্রি (মেঘ বা পর্বত) হতে উৎপন্ন জলের সন্তুতি এই অশকে, হে অগ্নি! পরমাকাশে তুমি একে হিংসিত করো না।

৪৩। (আগ্নেয়কোণে গাভীর শির ধারণীয়)–অনুপক্ষীণ (অক্ষয়), ঐশ্বর্যোপেত, ক্রোধরহিত বা রক্তাভ, পূর্ব মহর্ষিগণের দ্বারা চয়নকৃত তথা অন্নের দ্বারা সকলকে পোষণকারী বা স্বয়ং ভরণীয় অগ্নিকে আমি স্তুতি করছি। পর্ব ও ঋতুসমূহের অনুসারে বিধি-বিধানের সাথে প্রজ্বলিত করা হে অগ্নি! অখণ্ডনীয়া ও বিশেষ রূপে শাভিত হওয়ার যোগ্য (ঘৃত ইত্যাদি বীর্য প্ৰদাত্রী) এই গাভীকে তুমি হিংসিত করো না।

৪৪। (বায়ব্যকোণে মেষের শির ধারণীয়) –হে অগ্নি! স্বরূপে (বা কাঠামোর) নির্মাতা ত্বষ্টার (বা বায়ুর) অনুগ্রহে কম্বল ইত্যাদির দ্বারা জগৎকে আবরণকারী, বরুণের নাভিতুল্যা রক্ষণীয়া, পরম দিকসমূহ হতে উৎপন্নশালিনী, মহতী, সহস্র মূল্যবতী এবং প্রাণিগণকে প্রজ্ঞা প্রদানকারিণী এই মেঘকে পরমাকাশে হিংসিত করো না।

৪৫। যে আগ্নেয় ছাগ প্রজাপতির শোক হতে উৎপন্ন, এবং যে দুলোক ও পৃথিবীলোকেরও শোক হতে উৎপন্ন, বিশ্বকর্মা প্রজাপতি যে বাক্‌রূপ ছাগের দ্বারা পশুমাত্রকেই উৎপন্ন করেছেন, হে অগ্নি! সেই ছাগকে তোমার ক্রোধ (বা তেজ) হতে দূরে ত্যাগ করো, তাকে হিংসা করো না৷

৪৬৷ দীপ্তিমতী কিরণসমূহের এই বিচিত্র সমাহার তথা মিত্র-বরুণ-অগ্নির (অর্থাৎ সর্ব ত্রিলোকীর) চক্ষু এই সূর্যোদয়কে প্রাপ্ত হয়েছে। সে দ্যাবাপৃথিবী ও অন্তরিক্ষকে স্বপ্রকাশে পূর্ণ করেছে। এই আদিত্যমণ্ডলগত পরমাত্মা জড়-জঙ্গম জগতের আত্মা ॥

৪৭৷ (বেদির দক্ষিণে উত্তর দিকে মুখ করে ইমং মা হি ইত্যাদি উৎসর্গ সংজ্ঞক পাঁচটি মন্ত্রে অধ্বর্যু মানব ইত্যাদির শিরের উপস্থান করেন)–হে অগ্নি! হিরণ্যশকল রূপ সহস্রচক্ষু তুমি যজ্ঞের নিমিত্ত চয়নকৃত হয়ে এই দ্বিপদশালী পুরুষ পশুকে হিংসিত করো না। হে অগ্নি যজ্ঞীয় তুরঙ্গমুখ পশুকে তুমি প্রীতির সাথে ভক্ষণ করো। সেই কিম্পুরুষের ভক্ষণে আপন জ্বালা-শরীরকে পোষিত করে তুমি এইস্থানে স্থিত হও। তোমার তাপ কিন্নর মৃগের প্রাপ্ত হোক– আমরা যাদের বিদ্বেষ করি, তারা তোমার জ্বালা সপ্রাপ্ত হোক

৪৮। হে অগ্নি! এই এক শফা বা খুরবিশিষ্ট হ্রেষা শব্দকারী বেগবান্ এই অশ্ব পশুকে তুমি হিংসিত করো না। জঙ্গলের গৌরমৃগকে আমি তোমায় নির্দেশ করছি, তুমি তাদের ভক্ষণ করে আপন জ্বালা-শরীরকে পুষ্ট করে সুখে স্থিত হও। হে অগ্নি! গৌরমৃগ তোমার জ্বালা প্রাপ্ত হোক। আমরা যাদের দ্বেষ করি, তারা তোমার জ্বালা প্রাপ্ত হোক৷

৪৯। হে অগ্নি! সহস্ৰমূল্যক বা সহস্রশঃ উপকারক, ঘৃত-দুগ্ধের শতধার কূপের মতো, জগতের মধ্যে জীবনার্থ অনেক মনুষ্য ইত্যাদির দ্বারা আশ্রিতমাণা, যজমানের নিমিত্ত ঘৃত (বা দুগ্ধ) দোহনশালিনী তথা অদীনা এই গাভীরূপ পশুকে তুমি পরমাকাশে হিংসিত করো না। ভোজনের নিমিত্ত আমি তোমাকে আরণ্য গবয়কে নির্দেশ করছি। তাদের দ্বারা (অর্থাৎ তাদের ভক্ষণ করে) তুমি স্বশরীরকে পুষ্ট করে স্থিত হও। হে অগ্নি!গবয় (গলকম্বলহীন গোরুর) ন্যায় পশুবিশেষ) তোমার জ্বালা প্রাপ্ত হোক। আমরা যাদের দ্বেষ করি, তারা তোমার জ্বালা সপ্রাপ্ত হোক৷৷

৫০। এই পশম দানশালিনী, বরুণের নাভির ন্যায় রক্ষণীয়া, দ্বিপাদ চতুষ্পদ পশুগণক শীত হতে রক্ষাকারিণী; কম্বল ইত্যাদি রচনাকারিণী এবং প্রজাকে উৎপন্নকারিণী, ত্বষ্টার প্রথম সৃষ্টি এই মেষকে (বা ভেড়াকে) পরমাকাশে হিংসিত করো না। আরণ্য উটকে আমি তোমার ভক্ষণার্থে নির্দেশ করছি। তুমি তাদের ভক্ষণ করে আপন জ্বালা-শরীরকে পুষ্ট করো এবং এই স্থানে স্থিত হও। উটে তোমার জ্বালা ভক্ষণার্থ প্রাপ্ত হোক। আমরা যাদের দ্বেষ করি, তারা তোমার জ্বালা প্রাপ্ত হোক।

৫১। যে অজ প্রজাপতির সন্তাপ হতে উৎপন্ন হয়েছিল, সে সর্বপ্রথম আপন উৎপাদক প্রজাপতিকে দর্শন করেছিল। সেই অজের দ্বারা যজ্ঞ করে দেব-দেবতাগণ অগ্রণী হয়েছিল। সেই অজের দ্বারা দেবগণকে যজন করে যাগযোগ্য যজমান স্বর্গ ইত্যাদিতে আরোহণ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। হে অগ্নি! আরণ্য শরভকে আমি তোমায় নির্দেশ করছি। তাকে ভক্ষণ করে আপন শরীরকে পুষ্ট করে, হে অগ্নি! তুমি প্রতিষ্ঠিত হও। শরভ তোমার জ্বালা প্রাপ্ত হোক। আমরা যাদের দ্বেষ করি, তারা তোমার জ্বালা প্রাপ্ত হোক।

৫২। হে অত্যন্ত যুবা অগ্নি!তুমি আমাদের স্তুতিসমূহ শ্রবণ করো। হবিদাতা যজমানের মনুষ্য আমরা ঋত্বিকগণকে রক্ষা করো। তুমি যজমান ও তার পুত্র-পৌত্র ইত্যাদিকেও, রক্ষা করো।

৫৩। (অপাং ত্বে ইত্যাদি মন্ত্রবিশেষে অপস্যা সংজ্ঞক পাঁচটি ইষ্টক নির্বাচন করণীয়)–হে অপস্যা ইষ্টকা! আমি তোমাকে জলের মার্গ বায়ুতে স্থাপিত করছি; আমি তোমাকে জলের ওদ্ম ওষধিসমূহে ধারণ করছি; আমি তোমাকে ভস্মে (অভ্রে) ধারণ করছি; আমি তোমাকে জলের জ্যোতিতে (বা বিদ্যুতে) ধারণ করছি; আমি তোমাকে জলের অয়নে (পৃথ্বীতে) ধারণ করছি। আমি তোমাকে জলের অর্ণবে (প্রাণে) ধারণ করছি; আমি তোমাকে জলের সমুদ্রে (মনে) ধারণ করছি, আমি তোমাকে জলের সরিরে (বাণীতে) ধারণ করছি; আমি তোমাকে জলের ক্ষয়ে (চক্ষুতে) ধারণ করছি; আমি তোমাকে জলের সধিঃ-তে (শ্রোত্রে) ধারণ করছি; আমি তোমাকে জলের সদনে (দ্যৌ বা স্বর্গে) ধারণ করছি; আমি তোমাকে জলের সহস্থানে অন্তরিক্ষে ধারণ করছি; আমি তোমাকে জলের যোনিতে (সমুদ্রে) ধারণ করছি; আমি তোমাকে জলের পুরীষে (বালুতে) ধারণ করছি; আমি তোমাকে জলের পাথে (অন্নে) ধারণ করছি। (পাঁচটি মন্ত্রবিশেষে ছন্দস্যা সংজ্ঞক ইট ধারণীয়)–হে ছন্দস্যা ইষ্টকা! আমি তোমাদের গায়ত্রী ছন্দে চিতিতে ধারণ করছি; আমি তোমাদের ত্রিষ্ঠুভ ছন্দে চিতিতে ধারণ করছি; আমি তোমাদের জগতী ছন্দে চিতিতে ধারণ করছি। আমি তোমাদের অনুষ্ঠুভ ছন্দে চিতিতে ধারণ করছি। আমি তোমাদের পংক্তি ছন্দে চিতিতে ধারণ করছি৷৷

৫৪। (দুটি পংক্তিতে দশ-দশ করে, মোট কুড়িটি প্রাণভৃৎসংজ্ঞক হঁটকে ধারণীয়) — হে প্রাণভৃৎ ইষ্টকা! সম্মুখভুব সংজ্ঞক এই যে অগ্নি বিদ্যমান আছে, তুমি তারই স্বরূপভূতা। তুমি হেন এই অগ্নিস্বরূপাকে–আমি চিতিতে ধারণ করছি। ভুবসংজ্ঞক অগ্নির সন্তান ভৌবায়ন হলো এই প্রাণ। হে প্রাণভৃৎইষ্টকা! তুমি সেই প্রাণের স্বরূপশালিনী। সেই প্রাণস্বরূপিণীকে আমি চিতিতে স্থাপিত করছি। প্রাণের সন্তান প্রাণায়ন এই বসন্ত ঋতু। হে প্রাণভৃৎ ইষ্টকা! তুমি বসন্তঋতুরূপা। সেই বসন্ত ঋতু স্বরূপিণী তোমাকে আমি চিতিতে ধারণ করছি। বসন্তের সন্তান বাসন্তী এই গায়ত্রী। হে প্রাণভৃৎইষ্টকা! তুমি বাসন্তী গায়ত্ৰীস্বরূপা। সেই গায়ত্রীস্বরূপা তোমাকে চিতিতে স্থাপিত করছি। গায়ত্রীর সম্বন্ধ হতে গায়ত্ৰসাম উৎপন্ন হয়েছে। হে প্রাণভৃৎ ইষ্টকা! তুমি গায়ত্ৰসামস্বরূপা। সেই গায়ত্ৰসামস্বরূপিণী তোমাকে আমি চিতিতে ধারণ করছি। গায়ত্রসাম হতে উপাংশুগ্ৰহ সম্ভূত হয়েছে। হে প্রাণভৃৎ ইষ্টকা! তুমি উপাংশুগ্রহের স্বরূপশালিনী। সেই উপাংশুগ্ৰহস্বরূপা তোমাকে আমি চিতিতে ধারণ করছি। উপাংশুগ্ৰহ হতে ত্রিবৃৎস্তোম নির্মিত। হে প্রাণভৃৎ ইষ্টকা! তুমি ত্রিবৃৎস্তোমরূপা। সেই ত্রিবৃৎস্তোমরূপা তোমাকে চিতিতে স্থাপিত করছি। ত্রিবৃৎস্তোম হতে রথন্তরপৃষ্ঠসামের উৎপত্তি হয়। হে প্রাণভৃৎ ইষ্টকা! তুমি রথন্তরপৃষ্ঠসামের স্বরূপশালিনী। সেই রথম্ভরপৃষ্ঠ সামের স্বরূপশালিনী তোমাকে আমি চিতিতে ধারণ করছি। রথন্তরপৃষ্ঠসাম হতে সর্বাধারের প্রাণরূপ বিশিষ্ঠ ঋষির উৎপত্তি। হে প্রাণভৃৎ ইষ্টকা! তুমি বসিষ্ঠপ্রাণের স্বরূপিণী। সেই বসিষ্ঠপ্রাণস্বরূপিণী তোমাকে ইষ্টকাকে–….। প্রজাপতি কর্তৃক সৃষ্ট তুমি হেন ইষ্টকার দ্বারা সকল প্রজার প্রাণকে আমি গ্রহণ করছি। (অর্থাৎ প্রজাগণের প্রাণসমূহের সিদ্ধির নিমিত্ত, হে ইষ্টকা! আমি তোমাকে চিতিতে ধারণ করছি)।

৫৫। সর্বস্রষ্টা এই বায়ু দক্ষিণ দিক হতে অত্যন্ত বেগশালী হয়ে থাকে। হে ইষ্টকা! তুমি বিশ্বকর্মাই হও। সেই তুমি বিশ্বকর্মা ইষ্টকাকে আমি চিতিতে ধারণ করছি! সেই বিশ্বকর্মা বায়ুর অপত্য এই মন। হে ইষ্টকা! তুমি মনরূপিণী। সেই তুমি হেন মনস্বরূপিণী ইষ্টকাকে…!মনের সন্তান এই গ্রীষ্ম-ঋতু; হে ইষ্টকা! তুমি হেন গ্রীষ্ম-ঋতুরূপা ইষ্টকাকে….। গ্রীষ্ম-ঋতু হতে প্রজাপতি ত্রিষ্টুপ ছন্দ গঠিত করেন। হে ইষ্টকা! তুমি ত্রিষ্টুপ ছন্দের স্বরূপশালিনী। এই ত্রিষ্টুপছন্দশালিনী ইষ্টকাকে … ত্রিষ্টুপছন্দ হতে স্বার নামের সাম উৎপন্ন। হে ইষ্টকা! তুমি স্বারসামস্বরূপিণী। সেই স্বারসামস্বরূপিণী তুমি হেন ইষ্টকাকে…. স্বারসাম হতে অন্তর্যাম গ্রহ উৎপন্ন। হে ইষ্টকা! তুমি অন্তর্যাম গ্রহের স্বরূপশালিনী। সেই তোমাকে….! অন্তর্যামগ্ৰহ হতে প্রজাপতি পঞ্চদশস্তোম নির্মাণ করেন। হে ইষ্টকা! তুমি পঞ্চদশস্তোম-স্বরূপিণী। সেই হেন….। পঞ্চদশস্তোম হতে বৃহৎপৃষ্ঠসাম উৎপন্ন। হে ইষ্টকা! তুমি বৃহৎপৃষ্ঠসামের স্বরূপশালিনী। সেই হেন তোমাকে….। সেই বৃহৎপৃষ্ঠসাম হতে অন্নের ভরণশীল (পূর্ণকারী) মনরূপ ভরদ্বাজ ঋষি উৎপন্ন। হে ইষ্টকা! তুমি ভরদ্বাজ ঋষির (অর্থাৎ মনের) স্বরূপশালিনী। সেই তুমি হেন….! প্রজাপতির দ্বারা সৃষ্ট তুমি হেন এক ইষ্টকাকে চিতিতে স্থাপন করে আমি প্রজার নিমিত্ত মনকেই গ্রহণ করছি৷৷

৫৬৷ পশ্চিম দিকে আরও গমনশীল এই সূর্য বিশ্বের পদার্থসমূহকে আপন উদয়ের দ্বারা সাবকাশ সৃষ্টিকারী হয়ে থাকে। তুমি সেই বিশ্বব্যচ (বিশ্বের প্রকাশক) সূর্যের স্বরূপশালিনী। তুমি হেন সেই বিশ্বব্যচসূর্যস্বরূপা ইষ্টকাকে আমি চিতিতে ধারণ করছি। সেই বিশ্বব্যাচ সূর্যের অপত্য এই চক্ষু। হে ইষ্টকা! তুমি সেই চক্ষুর স্বরূপশালিনী। তোমা হেন সেই চক্ষুস্বরূপিণী ইষ্টকাকে….।চক্ষু হতে বর্ষা উৎপন্ন। হে ইষ্টকা! তুমি বর্ষণস্বরূপিণী। তুমি হেন বর্ষারূপিণী ইষ্টকাকে ….।বর্ষা হতে জগতী ছন্দ উৎপন্ন। হে ইষ্টকা!তুমি জগতীস্বরূপা। তুমি হেন সেই জগতীস্বরূপ ইষ্টকাকে…। সেই জগতী ছন্দ হতে ঋকসমসাম উৎপন্ন। হে ইষ্টকা! তুমি সেই ঋসমসামের স্বরূপশালিনী! সেই হেন….। ঋক্‌সমসাম হতে শুক্র গ্রহ উৎপন্ন। হে ইষ্টক তুমি সেই শুক্রগ্রহস্বরূপা। সেই হেন….। প্রজাপতি শুক্রগ্রহ হতে সপ্তদশ স্তোম সৃষ্টি করেন। হে ইষ্টকা! তুমি সপ্তদশস্তোমের স্বরূপশালিনী। সেই হেন….। সপ্তদশ স্তোম হতে বৈরূপপৃষ্ঠসাম উৎপন্ন। হে ইষ্টকা! তুমি বৈরূপপৃষ্ঠসামের স্বরূপশালিনী। সেই হেন….। বৈরূপপৃষ্ঠসাম হতে সংসারে গমনপূর্বক দর্শন ও মননকারী জমদগ্নি ঋষি (বা চক্ষু) উৎপন্ন। হে ইষ্টকা! তুমি জমদগ্নি ঋষির স্বরূপশালিনী। সেই হেন তুমি-জমদগ্নি ঋষির স্বরূপশালিনী ইষ্টকাকে আমি চিতিতে ধারণ করছি। প্রজাপতি কর্তৃক সৃষ্ট তোমারূপী এক ইষ্টকাকে চিতিতে ধারণ করে আমি প্রজাগণের নিমিত্ত চক্ষুকেও গ্রহণ করছি৷৷

৫৭। উত্তর দিকে অদ্যোপান্ত এই স্বর্গ বিদ্যমান। হে ইষ্টকা! তুমি সেই স্বর্গের স্বরূপশালিনী। সেই তুমি– স্বর্গের স্বরূপশালিনী ইষ্টকাকে আমি চিতিতে ধারণ করছি। সেই স্বর্গের অপত্য এই শ্রোত্র। হে ইষ্টকা! তুমি শ্রোত্রস্বরূপা। সেই তুমি শ্রোত্রস্বরূপিণী ইষ্টকাকে আমি চিতিতে ধারণ করছি। সেই শ্রোত্রের সন্ততি এই শরৎ ঋতু। হে ইষ্টকা! তুমি শরৎ ঋতুরূপা। সেই হেন….। শরৎ ঋতুর অপত্য অনুষ্টুপ ছন্দ। হে ইষ্টকা! তুমি অনুষ্ঠুছন্দস্বরূপা। সেই হেন….। অনুষ্টুপ ছন্দ হতে ঐড সংজ্ঞক সাম উৎপন্ন। তুমি ঐড সংজ্ঞক সামের স্বরূপিশালিনী। সেই হেন…। সেই ঐডসাম হতে মন্থি সংজ্ঞক গ্রহ উৎপন্ন। হে ইষ্টকা! তুমি সেই মন্থিগ্রহের স্বরূপশালিনী। সেই হেন…। মন্থিগ্রহ হতে একবিংশস্তোম উৎপন্ন। হে ইষ্টকা! তুমি একবিংশস্তোমের স্বরূপশালিনী। সেই হেন…। একবিংশস্তোম হতে বৈরাজসাম উৎপন্ন। হে ইষ্টকা! তুমি বৈরাজসামের স্বরূপশালিনী। সেই তুমি….। বৈরাজসাম হতে সর্বজগতের মিত্র বিশ্বামিত্র (বা শ্রোত্র) উৎপন্ন। হে ইষ্টকা! তুমি সেই বিশ্বমিত্র ঋষির স্বরূপশালিনী। সেই হেন তোমাকে বিশ্বামিত্র ঋষির স্বরূপশালিনী ইষ্টকাকে আমি চিতিতে ধারণ করছি। তুমি এই প্রকারে প্রজাপতির দ্বারা সৃষ্ট এক ইষ্টকাকে চিতিতে ধারণের দ্বারা আমি প্রজাগণের নিমিত্ত শ্রোত্রকেই গ্রহণ করছি৷৷ ৫৮। এর উপরে অর্থাৎ ঊর্ধ্বদেশে যে চন্দ্রস্বরূপা মতি (অর্থাৎ বা) স্থিত আছে, হে ইষ্টকা! তুমি সেই মতির (বা বাকের) স্বরূপশালিনী। সেই তুমি হেন বাস্বরূপাকে আমি চিতিতে ধারণ করছি। বাণী বা বাক্ হতে হেমন্ত ঋতু উৎপন্ন। হে ইষ্টকা! তুমি হেমন্তঋতুস্বরূপা। সেই তুমি….। হেমন্ত ঋতু হতে পংক্তিছন্দ উৎপন্ন। হে ইষ্টকা! তুমি পংক্তিছন্দস্বরূপা। সেই তুমি….। পংক্তিবৃন্দ হতে নিধনবৎসাম সৃষ্ট। হে ইষ্টকা! তুমি নিধনবৎসামের স্বরূপশালিনী। সেই তুমি….। নিধনবৎসাম হতে আগ্ৰয়ণগ্রহ উৎপন্ন। হে ইষ্টকা! তুমি আগ্রয়ণ গ্রহের স্বরূপশালিনী। সেই তুমি…। আগ্ৰয়ণগ্রহ হতে ব্রিণব এবং ত্রয়স্ত্রিংশ স্তোম উৎপন্ন। হে ইষ্টকা! তুমি ত্রিণব ও ত্রিয়স্ত্রিংশ সংজ্ঞক দুই স্তোমের স্বরূপশালিনী। সেই তুমি তৎস্বরূপাকে আমি চিতিতে ধারণ করছি। এই দুই স্তোম হতে শাকর ও রৈবত সাম উৎপন্ন। তুমি ঐ শাকর ঔ রৈবত সামের স্বরূপশালিনী। সেই দুই সামের স্বরূপশালিনী তোমাকে (ইষ্টকাকে)…। ঐ দুই সাম হতে বিশ্বকর্মা ঋষি (বা বা) উৎপন্ন। হে ইষ্টকা! তুমি বাকরূপা। তোমাকে আমি চিতিতে ধারণ করছি। সেই তুমি– প্রজাপতি কর্তৃক সৃষ্ট ইষ্টকাকে চিতিতে ধারণ করে আমি প্রজাগণের নিমিত্ত বাণী বা বাকে ধারণ (বা গ্রহণ) করছি। (লোকংচ্ছণা, তা অস্য তথা ইন্দ্ৰং বিশ্বা ইত্যাদি মন্ত্রের দ্বারা এই এই ইষ্টকাকে ধারণীয়)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *