২৫. শুক্লযজুর্বেদ – পঞ্চবিংশ অধ্যায়

পঞ্চবিংশ অধ্যায়

মন্ত্রঃ– শাদং দদ্ভিবকাং দন্তমূলৈমৃদং বর্ষৈস্তেগাং দংষ্ট্রাভ্যাং সরস্বত্যা অগ্রজিং জিহ্বায়া উৎসাদমবক্রনে তালু বাজং হেনুভ্যামপ আস্যেন বৃষণমাণ্ডাভ্যামাদিতা শ্মশ্রুভিঃ পন্থানং ভ্যাং দ্যাব্যাপৃথিবী বর্তোভ্যাং বিদ্যুতং কনীনকাভ্যাং শুক্লায় স্বাহা কৃষ্ণায় স্বাহা পার্যাণি পাণ্যবার‍্যা ইক্ষবোহর্ষাণি পক্ষ্মাণিপাষা ইক্ষবঃ৷১৷ বাতং প্রাণেনাপানেন নাসিকে উপয়ামমধরেণেীঠেন সদুত্তরেণ প্রকাশেনান্তরমনুকাশেন ব্যহং নিবেষ্যং মূর্ধা স্তনয়িং নির্বাধেনাশনিং মস্তিষ্কেণ বিদ্যুতং কনীনকাভ্যাং কর্ণাভ্যাং শ্রোত্রং শ্রোত্রাভ্যাং কর্ণেী তেদনীমধরকণ্ঠেনাপঃ শুষ্ককণ্ঠেন চিত্তং মন্যাভিরদিতিং শীষ্ণা নিঋতিং নির্জৰ্জল্যেন শীষ্ণা সংক্রোশৈঃ প্রাণান্ রেম্মাণং স্তূপেন৷৷২৷৷ মশকান্ কেশৈরিন্দ্রং স্বপসা বহেন বৃহস্পতিং শকুনিদেন কূর্মা ফৈরাক্রমণং সুরাভ্যাক্ষলাভিঃ কপিঞ্জলাঞ্জবং জভ্যামনং বাহুভ্যাং জাম্বীলে নারণ্যমগ্নিমতিরুভ্যাং পুষণং দোভামশিনাবংসাভ্যাং রুদ্রং বোরাভ্যাম্৷৷৩৷ অগ্নেঃ পক্ষতিায়োনিপক্ষতিরিন্দ্রস্য তৃতীয়া সোমস্য চতুর্থদিত্যৈ পঞ্চমীন্দ্রাণ্যৈ ষষ্ঠী মরুতাং সপ্তমী বৃহম্পতেরষ্টম্যমৃণো নবমী ধাতুর্দশমীন্দ্রস্যৈকাদশী বরুণস্য দ্বাদশী যমস্য এয়োদশী ॥৪৷৷ ইন্দ্রাগ্যেঃ পতিঃ সরস্বত্যৈ নিপক্ষতির্মিত্রস্য তৃতীয়ায়াং চতুর্থ নির্ধ্বত্যৈ পঞ্চম্যগ্নীষোময়োঃ ষষ্ঠী সর্পাণাং সপ্তমী বিষ্ণোষ্টমী পূষ্ণো নবমী ত্বষ্ঠুর্দশ মীন্দ্রস্যৈকাদশী বরুণস্য দ্বাদশী যম্যৈ ত্রয়োদশী দ্যাবাপৃথিব্যোর্দক্ষিণং পার্শ্বং বিশ্বেষাং দেবানামুত্তর৷৷৷৷ মরুতাং স্কন্ধা বিশেষাং দেবানাং প্রথমা কীকসা রুদ্রণাং দ্বিতীয়াহহদিত্যানাং তৃতীয়া বায়োঃ পুচ্ছমগ্নীবোময়োর্ভাসদৌ কুঞ্চেী শ্রোণিভ্যামিন্দ্রা বৃহস্পতী ঊরুভ্যাং মিত্রাবরুণাবল্পাভ্যামাক্রমণং স্থূরাভ্যাং বলং কুষ্ঠাভ্যাম্৷৷৬৷ পূষণং বনিষ্ঠুনাইন্ধাহীনংস্থুলগুদয়া সপা গুদাভির্বিত আন্ত্রৈরপো বস্তিনা বৃষণমাণ্ডাভ্যাং বাজিনং শেপেন প্রজাং রেতসা চাষান্ পিত্তেন প্রদরা পায়ুনা কুম্মাঞ্ছকপিণ্ডৈঃ৷৷৷৷ ইন্দ্রস্য ক্রোড়োহদত্যৈ পাজস্যং দিশাং জবোহদিত্যৈ ভসজ্জীমূতা হৃদয়ৌপশে নান্তরিক্ষং পুরীততা নভ উদর্যেন চক্রকৌ মতভ্যাং দিবং বৃক্কাভ্যাং গিরীন প্লাশিভিরুপলান্ প্লীহা বল্মীকান্ ক্লোমভিপ্লোভিন্মান্ হিরাভিঃ স্রবন্তীদা কুক্ষি ভ্যাং সমুদ্রমুদরেণ বৈশ্বানরং ভস্মনা।।৮৷৷ বিধৃতিং নাভ্যা ঘৃতং রসেনাপো যুক্লা মরীচীর্বিভিনীহারমূষ্মণা শীনং বসয়া পুম্বা অভিব্রাদুনী দূষীকাভির রক্ষাংসি চিত্ৰাণ্যনৈক্ষত্রাণি রূপেণ পৃথিবীং ত্বচা জুকায় স্বাহা।৯। হিরণ্যগর্ভঃ সমবর্ততাগ্রে ভূতস্য জাতঃ পতিরেক আসীৎ। স দাধার পৃথিবীং দ্যামুতেমাং কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম।১০ যঃ প্রাণততা নিমিষতে মহিত্বৈক ইদ্রাজা জগতত বভূব। য ঈশে অস্য দ্বিপদশ্চতুষ্পদঃ কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম৷১১৷৷ যশস্যমে হিমবন্তো মহিত্বা যস্য সমুদ্রং রসয়া সহাহুঃ। যস্যেমাঃ প্রদিশো যস্য বাহু কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম৷৷১২৷৷ য আত্মদা বলদা যস্য বিশ্ব উপিসতে প্রশিষং যস্য দেবাঃ। যস্যচ্ছায়ামৃতং যস্য মৃত্যু কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম৷৷১৩৷৷ আ নো ভদ্রাঃ ক্রতবো যন্তু বিশ্বতোহদাসো অপরীতাস উদ্ভিদঃ। দেবা নো যথা সদমিদ্‌ধে অসন্নপ্রায়ুবো রক্ষিতাররা দিবে দিবে৷৷১৭৷ দেবানাং ভদ্রা সুমতিঋজুয়তাং দেবানাং রাতিরভি নো নিবততা। দেবানাং সখ্যমুপসেদিমা বয়ং দেবা ন আয়ুং প্রতিরন্তু জীবসে৷৷১৫৷৷ তাপূর্বায়া নিবিদা হুমহে বয়ং ভগং মিত্রমদিতিং দক্ষমধি। অর্যমণং বরুণং সোমমশিনা সরস্বতী নঃ সুভগা ময়ঙ্করৎ ॥১৬৷ তন্নে বাতোময়োভু বাতু ভেষজং তন্মাতা পৃথিবী তৎপিতা দ্যৌঃ। তদ্ গ্রাবাণঃ সোমসুতো ময়োভুবস্তদখিনা শৃণুতং ধিষ্ণ্যা যুব৷১৭৷ তমীশানং জগতস্তম্ভষম্পতিং ধিয়ঞ্জিমবসে হুমহে বয়ম্। পুষা নো যথা বেদসামসদ বৃধে রক্ষিতা পাযুরদব্ধঃ স্বস্তয়ে।১৮।স্বস্তিনইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্তিনঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ স্বস্তি নস্তাক্ষ্যো অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতির্দধাতু।১৯৷৷ পৃষদশ্বা মরুতঃ পৃশ্নিমাতরঃ শুভংযাবানো বিদথেষু জগয়ঃ। অগ্নিজিহ্বা মনবঃ সূরচক্ষসসা বিশ্বে নো। দেবা অবসা গমহি৷৷২০৷ ভদ্রং কর্ণেভিঃ শৃণুয়াম দেবা ভদ্রং পশ্যেমাক্ষভির্যজত্রাঃ। স্থিরৈরঙ্গৈ ষ্টুযাংসস্তভিব্যশেমহি দেবহিতং যদায়ুঃ।।২১ শতমিনু শরদো অস্তি দেবা যত্রা নশ্চক্রা জরসং তনূনা পুত্ৰাসো যত্র পিতো ভবন্তি মা নো মধ্যা রীরিষতায়ুর্গন্তোঃ ॥২২৷৷ অদিতিদৌরদিতিরন্তরিক্ষমদিতির্মাতা স পিতা স পুত্রঃ। বিশ্বে দেবা অদিতিঃ পঞ্চ জনা অদিতি জামদিতির্জনি৷৷২৩৷৷ মা নো মিত্রো বরুণো অর্যময়ুরিন্দ্র ঋভুক্ষা মরুতঃ পরি খ্য। যদ্বাজিনো দেবজাতস্য সপ্তঃ প্রবক্ষ্যামো বিদথে বীর্যাণি৷২৪৷ যন্নির্ণিজা রেক্লসা প্রাবৃতস্য রাতিং গৃভীতাং মুখতো নয়ন্তি। সুপ্রাজো মেমদ্বিশ্বরূপ ইন্দ্রাপূষ্ণোঃ প্রিয়মপ্যেতি পাথঃ ॥২৫৷৷ এষ ছাগঃ পুরো অশ্বেন বাজিনা পূষ্ণো ভাগো নীয়তে বিশ্বদেবাঃ। অভিপ্রিয়ং যৎপুরোডাশমবতা ত্বষ্টেদেনং সৌশবসায় জিম্বতি।।২৬৷৷ যুদ্ধবিষ্যমৃতুশো দেবযানং ক্রিমানুষঃ পর্যশ্বং নয়ন্তি। অত্রা পূষ্ণঃ প্রথমে ভাগ এতি যজ্ঞং দেবেভ্যঃ প্রতিবেদষজঃ ২৭৷৷ হোতাহধ্বর্যরাবয়া অগ্নিমিন্ধো গ্রাবগ্রাভ উত শংস্তা সুবিপ্রঃ। তেন যজ্ঞেন স্বরংকৃতেন সিষ্টেন বক্ষণা আ পৃণধ্বম৷৷২৮৷৷ যুপব্ৰস্কা উত যে ঘূপবাহাষালং যে অশ্বপায় তক্ষতি। যে চার্বতে পচনং সম্ভর্যতো তেমভিৰ্ত্তিন ইন্বতু।।২৯৷৷ উপ প্রাগাৎ সুমন্মেহধায়ি মন্ম দেবানামাশা উপ বীতপৃষ্ঠঃ। অন্বেনং বিপ্ৰা ঋষয়ো মদন্তি দেবানাং পুষ্টে চক্‌মা সুবন্ধু৷৩০৷৷ যদ্বাজিনো দাম সানমতো যা শীর্ষণ্যা রশনা রঞ্জুরস্য। যদ্বা ঘাস্য প্রভৃতমাস্যে তৃণং সর্বা তা তে অপিব দেবেম্বস্তু৷৷৩১৷৷ যদস্য ক্রিবিযো মক্ষিকাশ যদ্বা স্বরৌ স্বধিতৌ রিমস্তি। যদ্বস্তয়োঃ শমিতুঃখে সর্বা তা তে অপি দেবেম্বস্তু।৩২৷৷ যদ্বধ্য মুদরস্যাপবাতি য আমস্য ক্রবিষো গন্ধো অস্তি। সুকৃতা তচ্ছমিতারঃ কৃথদ্ভুত মেঘং শৃতপাকং পশন্তু৷৩৩৷৷ যত্তে গাত্ৰাদগ্নিনা পচ্যমানাদভি শূলং নিহতস্যাবধাবতি। মা তম্যামাশ্ৰিষম্মা তৃণেষু দেবেভ্যস্তদূশদ্ভো রাত মস্তু৷৷৩৪৷৷ যে বাজিনং পরিপশ্যন্তি কৃং য ঈমাহুঃ সুরভি নিৰ্হিরেতি। যে চার্বতো মাংসভিক্ষামুপাসত উততা তেষামভিগুৰ্তিন ইতু৷৩৫৷ যন্নীক্ষণং মাস্পচন্যা উখায়া যা পাত্রাণি খৃষ্ণ আসেচনানি। উম্মণ্যাপিধানা চরূণামঙ্কাঃ সূনাঃ পরি ভূষন্ত্যম্ ৷৷৩৬৷৷ মা ত্বাইগ্নিৰ্ব্বনয়ীদ্রুমগন্ধিৰ্মোখা ভ্রাজাভি বিক্ত জখ্রিঃ। ইষ্টং বীতমভিগৃংবষকৃতং তং দেবাসঃ প্রতি গঅন্ত্য৷৷৩৭৷৷ নিক্রমণং নিযদনং বিবর্তনং যচ্চ পত্বীশমবতঃ। যচ্চ পপৌ যচ্চ ঘাসিং জঘাস সর্বা তা তে আপ দেবেম্বস্তু।।৩৮৷৷ যদায় বাস উপ স্কুণ্যধীবাসং যা হিরণ্যান্যস্মৈ সন্দানমন্তং পীশং প্রিয়া দেবেম্বা ময়ন্তি।।৩৯। যত্তে সাদে মহসা শূকৃতস্য পাঞ্চা বা কশয়া বা তুতোদ। সুচেব তা হবিষো অধ্বরেষু সর্বা তা তে ব্ৰহ্মণা সূদয়ামি৷৷৪০৷৷ চতুস্ত্রিংশদ্বাজিনো দেববন্ধোবীরশ্বস্য স্বধিতিঃ সমেতি। অচ্ছিদ্রা গাত্রা বয়ুনা কৃণোত পরুষ্পরুরনুঘুষ্যা বিশস্ত।৪১ একরশ্বস্যা বিশস্তা দ্বা যন্তারা ভবতস্তথ ঋতুঃ। যা তে গাত্ৰাণামৃতুথা কৃপোমি তা তা পিণ্ডানাং প্র জুহোম্যগ্নেী।৪২৷৷ মা ত্বা তপৎপ্রিয় আত্মহপিযন্তং মা স্বধিতিস্তম্ব আ তিষ্ঠিপত্তে। মা তে গৃধুরবিশস্তাতিহায় ছিদ্রা গাত্ৰাণ্যসিনা মিথু কঃ৪৩৷৷ ন বা উ এতম্বিয়সে ন রিষ্যসি দেবাঁ ইহেষি পথিভিঃ সুগেভিঃ। হরী তে যুঞ্জা পৃতী অভূতামুপাস্থাদ্বাজী ধুরি রাসভস্য।৪৪৷৷ সুগব্যং নো বাজী স্বখ্যং পুংসঃ পুত্ৰ উত বিশ্বাপুষংরয়ি। অনাগাং নো অদিতিঃ কৃণোতু ক্ষত্রং নো অশ্বে বনতাং হবিষ্মন্৪৫। ইমা নু কং ভুবনা । সীধামেন্দ্রস্ট বিশ্বে চ দেবাঃ। আদিতৈরিন্দ্রঃ সগণণা মরুদ্ভিরশ্মভ্যং ভেষজা করৎ। যক্ষং চ নম্বং চ প্রজাং চ প্রজাং চাদিতৈরিন্দ্রঃ সহ সীষধাতি৷৪৬৷ অগ্নে ত্বং নো অন্তম উত ত্রাতা শিবো ভবাবরূথ্যঃ। বসুরগ্নিসুবা অচ্ছা নক্ষি দুমত্তমং রয়িং দাঃ। তং ত্বা শশাচিষ্ঠ দীদিবঃ সুমায় নুনমীমহে সখিভ্যঃ ৪৭৷৷

[কণ্ডিকা-৪৭, মন্ত্র-৫০]

.

মন্ত্ৰার্থঃ— ১। অশ্বের দন্তের দ্বারা শাদ নামক দেবতাকে প্রীণিত (প্রীত) করছি। দণ্ডের মূলের দ্বারা ভবকা নামক, দেবতাকে প্রীণিত করছি। দণ্ডের পৃষ্ঠভাগের দ্বারা মদ নামক দেবতাকে প্রীণিত করছি। স্রংষ্ট্রাসমূহের দ্বারা বেগা নামক দেবতাকে এবং জিহ্বাগ্রের দ্বারা সরস্বতীকে প্রীণিত করছি। জিহ্বার দ্বারা উৎসাহ নামক দেবতাকে, তালুর দ্বারা অবক্ৰন্দ দেবতাকে, হনুর দ্বারা বাজ নামক দেবতাকে, মুখের দ্বারা আপঃ দেবতাকে প্রীণিত করছি। অশ্বের অশুকোষের দ্বারা বরুণদেবকে, চিবুকের রোমের দ্বারা আদিত্যদেবগণকে, হৃদ্বয়ের দ্বারা মার্গদেবকে, চক্ষের পক্ষ্মদ্বয়ের রোমের দ্বারা দ্যাবাপৃথিবীকে, কণীনিকা অর্থাৎ চক্ষুগোলকদ্বয়ের দ্বারা বিদ্যুৎদেবতাকে প্রীণিত করছি। শুক্লের (শুক্ল দেবতার) নিমিত্ত স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি; কৃষ্ণের (কৃষ্ণ দেবতার) নিমিত্তও স্বাহা। নেত্ররোম পারদেবতাক। ইক্ষবো অর্থাৎ নেত্রের নিম্নভাগস্থ রোম অবার নামক দেবতাক। এ থেকে ভিন্ন অবারদেবতাক। চক্ষের পলক পারদেবতাক। এই সকল দেবতাকে আমি প্রাণিত করছি।

২। অশ্বের প্রাণের (বা প্রাণবায়ুর) দ্বারা বায়ু। দেবতাকে প্রীণিত করছি। অপান বায়ুর দ্বারা নাসিকার অধিষ্ঠাতা দেবদ্বয়কে, অধরের (অর্থাৎ নিম্ন ওষ্ঠের) দ্বারা উপম দেবতাকে এবং ওষ্ঠের (অর্থাৎ উধ্ব ওষ্ঠের) দ্বারা সৎ নামক দেবতাকে প্রীণিত করছি। উপরের কান্তির দ্বারা অন্তর দেবতাকে, নীচের দেহকান্তির দ্বারা বাহ্যদেবতাকে, মূর্ধার দ্বারা নিবেষ্য দেবতাকে প্রীণিত করছি। অশ্বের শিরঃমধ্যস্থ মজ্জাভাগের দ্বারা স্তনয়িতু দেবতাকে, মস্তিষ্কের দ্বারা অশনিদেবকে, কনীনিকাদ্বয়ের দ্বারা বিদ্যুৎদেবতাকে, কর্ণদ্বয়ের দ্বারা শ্রোত্রদেবকে, স্রোত্র অর্থাৎ কর্ণস্থ ছিদ্রদ্বয়ের দ্বারা কর্ণের অধিষ্ঠাতা দেবকে, নিম্নকণ্ঠের দ্বারা তেদনী দেবতাকে, শুষ্ককণ্ঠের দ্বারা আপঃ দেবতাকে, এবং গ্রীবার পশ্চাদ্ভাগের নাড়ীসমূহের দ্বারা চিত্ত দেবতাকে প্রণিত করছি। অশ্বের শিরের দ্বারা দিতি দেবতাকে, নির্জল্পন মস্তকের দ্বারা অদিতি দেবীকে, জর্জর শিরোভাগের দ্বারা নিঋতি দেবীকে, চলনকালে ধ্বনিকারী অশ্বাঙ্গসমূহের প্রাণদেবতাগণকে এবং উদ্ভুত শিখাভাগের দ্বারা রেশ্ম দেবকে প্রীণিত করছি।

৩। অশ্বের স্কন্ধস্থরোমসমূহের দ্বারা মশক নামক দেবকে, সুকর্মা (অর্থাৎ শোভন কর্মশালী) স্কন্ধের দ্বারা ইন্দ্রকে, লম্ফ প্রদান পূর্বক ভূমিতে গমনশীল পক্ষীর ন্যায় পশুর দ্বারা বৃহস্পতি দেবতাকে, খুরশালী পশুর দ্বারা কূর্ম দেবতাকে, স্কুল গুলের দ্বারা আক্রমণ নামক দেবতাকে প্রীণিত করছি। গুলের নিম্নস্থিত নাড়ীসমূহের দ্বারা কপিল দেবকে, পশুর জঙ্ঘার দ্বারা জব নামক দেবতাকে অগ্রভাস্থ পাদদ্বয়ের অর্থাৎ বাহুযুগলের দ্বারা অধ্বীন দেবতাকে, জাম্বীর অর্থাৎ লেবুর ন্যায় আকারসম্পন্ন জানুর মধ্যভাগস্থ অস্থিসন্ধির (অর্থাৎ হাঁটুর) দ্বারা অরণ্যদেবকে, উরুদ্বয়ের দ্বারা অগ্নিদেবতাকে, পশুর ভুজদ্বয়ের দ্বারা পুষা দেবতাকে, স্কন্ধের দ্বারা অশ্বিনদ্বয়কে এবং স্কন্ধগ্রন্থিসমূহের দ্বারা রুদ্র দেবতাকে প্রীণিত করছি৷৷

৪। (অশ্বের বগলের অস্থিসমূহকে বঙ্কি বলে। এগুলি সংখ্যায় ছাব্বিশটি–তেরটি এক দিকে এবং তেরটি অপর দিকে। এই বঙ্কিগুলির দেবতা-বিভাগ এই রকম) দক্ষিণ বগলের প্রথম বঙ্কি দ্বারা অগ্নি দেবের, নিম্নস্থ দ্বিতীয় বক্তি দ্বারা বায়ুদেবকে, তৃতীয়টির দ্বারা ইন্দ্রের, চতুর্থটির দ্বারা সোমদেবকে, অদিতির নিমিত্ত পঞ্চমটি, ইন্দ্রানীর নিমিত্ত ষষ্ঠটি, সপ্তমটি মরুৎদেবতারগণকে, অষ্টমটির দ্বারা বৃহস্পতি দেবতাকে, অর্যমার উদ্দেশ্যে নবমটি, ধাতার নিমিত্ত দশমটি, ইন্দ্রের নিমিত্ত একাদশতমটি, বরুণ দেবতাকে দ্বাদশতমটি এবং ত্রয়োদশতম বঙ্কির দ্বারা যমকে প্রণিত করছি।

৫। বাম বগলের প্রথম বঙ্কি ইন্দ্র ও অগ্নি দেবতার। এর নিম্নস্থ দ্বিতীয়টি সরস্বতীর, মিত্রের তৃতীয়টি, চতুর্থ বঙ্কিটি অপাং অর্থাৎ জলের অধিষ্ঠাত্ দেবতার, নিঋতির নিমিত্ত পঞ্চমটি, ষষ্ঠটি অগ্নি ও সোমের নিমিত্ত, সপ্তমটি সর্পদেবতার, অষ্টমটি বিষ্ণু দেবতার, নবমটি পূষা দেবতার, দশমটি ত্বষ্টাদেবতার, একাদশটি ইন্দ্রদেবের, দ্বাদশতমটি বরুণ দেবতার, ত্রয়োদশতম বঙ্কির দ্বারা যমদেবতাকে প্রীণিত করছি। এইভাবে দক্ষিণ পার্শ্বস্থ সকল বঙ্কিটি দ্বারা দ্যাবাপৃথিবীর অভিমানী দেবতার এবং বাম পার্শ্বস্থ সকল বঙ্কির দ্বারা বিশ্বদেবগণের (অর্থাৎ সকল দেবগণের) প্রীতি সাধন করছি।

৬। (অশ্বের অন্য অঙ্গসমূহের দেবতা)–মরুবৃন্দের নিমিত্ত অশ্বের স্কন্ধপ্রদেশের দ্বারা, বিশ্বদেবগণের নিমিত্ত অপুচ্ছের উপরস্থ প্রথম অস্থিপংক্তির দ্বারা রুদ্রদেবতার নিমিত্ত দ্বিতীয় অস্থিপংক্তির দ্বারা, আদিত্যগণের নিমিত্ত তৃতীয় অস্থিপংক্তির দ্বারা, বায়ুদেবের নিমিত্ত পুচ্ছের দ্বারা, অগ্নি ও সোমের নিমিত্ত নিতম্বের দ্বারা, কুঞ্চ নামক দেবদ্বয়ের নিমিত্ত দক্ষিণ ও বাম কটিভাগের দ্বারা, ইন্দ্র ও বৃহস্পতির নিমিত্ত উরুদ্বয়ের দ্বারা, মিত্র ও বরুণ দেবতার নিমিত্ত উভয় উরুর সন্ধিভাগের দ্বারা, আক্রমণ নাম দেবতার নিমিত্ত নিতম্বের স্থূলভাগদ্বয়ের দ্বারা, এবং বলদেবতার নিমিত্ত নিতম্বের আবর্তন ভাগের দ্বারা প্রীতি সাধন করছি৷৷

৭। পূষা দেবতাকে অশ্বের বৃহৎ অন্ত্রের দ্বারা প্রীণিত করছি। অন্ধাহি (অর্থাৎ অন্ধসর্প) দেবতাকে স্থূল, পায়ুস্থানের দ্বারা প্রীণিত করছি। পায়ুভাগের মাংসের দ্বারা বিত নামক দেবতাকে প্রীণিত করছি। বস্তির (বা মূত্রস্থলীর) দ্বারা আপঃ দেবতাকে প্রীণিত করছি। অণ্ডকোষের দ্বারা বৃষণ দেবতাকে প্রীণিত করছি। অশ্বলিঙ্গের দ্বারা অশ্বদেবতাকে প্রণীতি করছি। প্রজা দেবতাকে অশ্ববীর্যের দ্বারা প্রীণিত করছি। চাষ নামক দেবতাকে পিত্তের দ্বারা প্রীণিত করছি। পায়ুস্থানের তৃতীয় ভাগের দ্বারা প্রদর দেবতাকে প্রীণিত করছি এবং বিষ্ঠাপিণ্ডের দ্বারা কুম্মান নামক দেবতাকে প্রীণিত করছি।

৮। ইন্দ্র দেবতাকে অশ্বের ক্রোড়দেশের দ্বারা, অদিতিকে অশ্বের পাজস্যের (অর্থাৎ বলকারক অঙ্গের) দ্বারা, দিকসমূহকে অশ্বের স্কন্ধ ও কুক্ষির সন্ধিস্থানের দ্বারা, অদিতির নিমিত্ত অশ্বের ভস (অর্থাৎ লিঙ্গাগ্র)-এর দ্বারা, জীমূত দেবতাকে অশ্বের হৃদয়স্থ মাংসের দ্বারা, হৃদয়কে আচ্ছাদিত করণশালী অন্ত্রের দ্বারা অন্তরিক্ষের অভিমানী দেবতার, নভ নামক দেবতাকে অশ্বের উদরস্থ মাংসের দ্বারা, চক্রবাক দেবদ্বয়কে অশ্বগ্রীবার অপোভাগস্থ হৃদয়ের উভয় পার্শ্বের অস্থির দ্বারা, দিব নামক দেবতাকে বৃক্ক অর্থাৎ কুক্ষিস্থিত মাংসের দ্বারা, শিশ্নের মূলাগ্রভাগে স্থিত প্লাশী নামক নাড়ীসমূহের দ্বারা গিরি নামক দেবতাকে, অশ্বের প্লীহার দ্বারা উপল নামক দেবতাকে, অশ্বের ক্লোম অর্থাৎ যকৃতের দ্বারা বল্মীক দেবগণকে, হৃদয়ের নাড়ীসমূহের দ্বারা গুল্ম দেবগণকে, শিরাসমূহের দ্বারা স্রবন্তী দেবতাকে, কুক্ষির দ্বারা হ্রদ দেবতাগণকে, জঠরের দ্বারা সমুদ্র দেবকে এবং অশ্বের অঙ্গস্থ ভস্মের দ্বারা বৈশ্বানর দেবকে প্রীণিত করছি।

৯। অশ্বের নাভির দ্বারা বিধৃতি দেবতাকে, অশ্বের রস অর্থাৎ বীর্যের দ্বারা ঘৃত দেবতাকে, পান্নরসের দ্বারা আপঃ দেবতাকে, শরীরগত উষ্ম বা তাপের দ্বারা নীহার দেবতাকে, বসা দ্বারা শীন দেবতাকে, অশ্রুর দ্বারা প্রম্বা দেবতাকে, চক্ষের মল বা পিচুটির দ্বারা হ্রাদুনী দেবতাকে, রুধিরের দ্বারা রাক্ষসকে, অনুক্ত অঙ্গের দ্বারা চিত্রদেবগণকে, রূপের দ্বারা নক্ষত্রসমূহের অধিষ্ঠাত্ দেবতাগণকে, এবং চর্মের দ্বারা পৃথিবী দেবতাকে প্রীণিত করছি। জুমুক (বেদোক্ত গায়ত্রীর অধিষ্ঠাতা) বরুণের উদ্দেশ্যে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি৷

১০। প্রাপঞ্চের (সৃষ্টির পূর্বে কেবল হিরণ্যগর্ভ দেবতাই বিদ্যমান ছিলেন। উৎপন্ন ভূতমাত্রের তিনিই একমাত্র স্বামী (বা পালক) ছিলেন। তিনি এই ভূলোককে ধারণ করেছিলেন। তিনি এই দুলোককেও ধারণ করেছিলেন। সেই হিরণ্যগর্ভ প্রজাপতি দেবের উদ্দেশ্যে আমরা সদা ভক্তি সহকারে হবিঃ প্রদান করছি।

১১৷ যে পরমাত্মা আপন মহিমায় এই জগতের সকল প্রাণ, অপান, নিমেষ ও উন্মেষকারী জীবসমূহের একমাত্র অধিপতি হয়েছেন, এবং যিনি এই জগতের সকল দ্বিপাদ ও চতুষ্পদ প্রাণীসমূহকে আপন ঐশ্বর্যের অন্তর্ভুক্ত করেন, সেই প্রজাপতি দেবের নিমিত্ত আমরা ধন-ধান্যে সদা পরিচর্যারত আছি৷

১২। যাঁর মহিমার প্রতীক স্বরূপ এই হিমালয় পর্বত দণ্ডায়মান এবং নদীসমূহের সাথে সমুদ্রকেও যাঁর মহিমা বলা হয় এবং এই প্রকৃষ্ট দিসমূহ যাঁর ভুজস্বরূপ, সেই প্রজাপতি কে বর নিমিত্ত আমরা সদা ভক্তি ও যোগের দ্বারা ধ্যানশীল হই।

১৩। যিনি আত্মা ও বলের দানকর্তা, বিশ্ব যাঁর অনুশাসনকে মান্য করে, দেবতাগণও যাঁর অনুজ্ঞায় বর্তমান থাকেন, যাঁর কৃপাসমূহ অমৃতস্বরূপ এবং যাঁর ক্রোধ সাক্ষাৎ মৃত্যুস্বরূপ, সেই প্রজাপতি দেবতাকে আমি হবিঃ দ্বারা পরিচর‍্যা করছি৷

১৪। চারি দিক হতে আমরা অহিংসিত, অনাক্রান্ত, শক্রভেদক যজ্ঞ প্রাপ্ত হই। যে প্রকারে দেবগণ সদা আমাদের অভিবৃদ্ধিতে লীন হয়ে থাকেন এবং দিনে দিনে তারা অপ্রমাদভাবে আমাদের রক্ষক হয়ে থাকুন।

১৫। দেবগণের কল্যাণী সুমতি আমাদের প্রতি আরও ঋজু (সরল বা সহজ) হোক। দেবগণের দান আমাদের সদাই প্রাপ্ত হোক। আমরা দেবগণের সাখ্যভাবকে সদাই প্রাপ্ত হওয়ার নিমিত্ত এবং.দেবগণ আমাদের দীর্ঘ জীবনের নিমিত্ত আমাদের আয়ুকে আরও আরও বর্ধিত করুক।

১৬। পূর্বকালীন স্ততির দ্বারা আমরা সেই ভগ, মিত্র, অদিতি ও অহিংসক দক্ষকে আহ্বান করছি। সেই সাথে অর্যমা, বরুণ, সোম এবং অশ্বিনদ্বয়কেও আহ্বান করছি। সুভগা সরস্বতী আমাদের কল্যাণ সাধন করুক।

১৭। বায়ু আমাদের সেই সুখকর, ভেষজ বহন করে আনয়ন করুক, সেই মাতা পৃথিবী ও সেই পিতা দুলোকও আমাদের মঙ্গল সাধন করুক। সোমের অভিষবকারী ও সুখের ভূমির উপরে স্থিত প্রস্তরগুলিও আমাদের সুখ ও কল্যাণ প্রদান করুক। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা দুজনও স্ববুদ্ধির দ্বারা সেই সুখ ও শান্তি প্রতিশ্রুত করো।

১৮। চরাচরের পালক, বুদ্ধির প্রেরক এবং সবৈশ্বর্যবান্ সেই রুদ্ররূপী পরমাত্মাকেই আমরা আহ্বান করছি। যেরূপে পৃষা দেবতা আমাদের ধনের বৃদ্ধির কারক হয়ে থাকে, সেইরূপেই সেই রক্ষক, পালক এবং অনুপহিংসিত পূষা দেবতা আমাদের কল্যাণের নিমিত্তভাগী হোক।

১৯। চিরন্তন কীর্তিশালী ইন্দ্রদেব আমাদের কল্যাণ করুক। সকল ধনের পালক পূষা আমাদের কল্যাণ করুক। অহিংসিতনেমি অর্থাৎ অপ্রতিহতগতি তাদেব (অর্থাৎ গরুড়) আমাদের কল্যাণ করুক এবং বৃহস্পতি দেবতাও আমাদের। কল্যাণ ধারণ করুক।

২০। পৃষদশ্ব (অর্থাৎ পৃষত নামক অশ্বযুক্ত), পৃশ্নিমাত (অর্থাৎ দ্যুলোক যার মাতা), শুভ গতিশীল (অর্থাৎ কল্যাণদানকারী), যজ্ঞে গমনশীল, অগ্নিজিহ্ (অর্থাৎ অগ্নিই যার জিহ্বা), এমনই বিচারবান্ (অর্থাৎ সর্বজ্ঞ), এবং সূর্যচক্ষু (অর্থাৎ সূর্যকে প্রকাশশীল) মরুৎ এবং বিশ্বদেবগণ আপন রক্ষণের সাথে এই স্থানে আমাদের যজ্ঞে আগত হোক।

২১। হে দেবগণ! আমরা কর্ণে যেন ভদ্রবচনই শ্রবণ করি। হে যজনীয় দেবগণ! আমরা চক্ষে যেন ভদ্র দৃশ্যই দর্শন করি। স্থির অঙ্গে সদা দেবগণের স্তুতি করে আমরা স্বশরীরে যেন সেই আয়ুকে প্রাপ্ত হই, যা দেবগণ আমাদের প্রদান কর।

২২। হে দেবগণ! এই শত শরৎকাল বিগত হয়ে যাচ্ছে, যার অন্দরে অন্দরে আপনারা আমাদের শর রের জরাবস্থা নির্ধারিত করছেন। সেই অবধির অন্দরে পুত্রও পিতায় পরিণত হয়ে যাচ্ছে। হে দেবগণ! জীবনযাত্রীর (জীবিত আমাদের) আয়ুকে মধ্যভাগে খণ্ডিত করো না; (অর্থাৎ আমাদের পূর্ণ আয়ু ভোগ করতে দাও)।

২৩৷ অদিতিই দ্যুলোক; অদিতিই অন্তরিক্ষলোক; অদিতিই মাতা; সে-ই পিতা এবং সেই পুত্র। অদিতি বিশ্বদেবা অর্থাৎ সকল দেবতা। অদিতি পঞ্চজনা (অর্থাৎ মানব), অদিতিই জাত বা অজাত সব কিছু এবং অদিতিই প্রজনন শক্তি ৷৷

২৪। মিত্র, বরুণ, অর্যমা, বায়ু, ইন্দ্র, ঋভুক্ষা (দেবের আধারভূত প্রজাপতি) এবং মরুবৃন্দ আমাদের যেন নিন্দা না করে যে, আমরা দেবগণের দ্বারা উৎপন্ন বা দেবভূত এবং সর্পণশীল অশ্বের বীর কার্যের বর্ণনা যজ্ঞে করছি।

২৫। বিপ্রগণ যখন স্নানের দ্বারা শুদ্ধীকৃত এবং ধনের (বা স্বর্ণমুদ্রার) দ্বারা আচ্ছাদিত যজ্ঞীয় অশ্বের সম্মুখে গৃহীত আজ্যসঙ্কু ধান ইত্যাদি খাদ্য আনয়ন করে–তখন পূর্বগামী তথা অনেক বর্ণশালী এবং ইন্দ্র ও পূষার প্রিয় ভক্ষ্য ছাগ দুটিও তা ভক্ষণের নিমিত্ত অগ্রে গমন করে।

২৬। পূষার (এস্থলে অগ্নির) ভাগ এবং বিশ্বদেবগণের হিতকর্তা এই ছাগ যখন বেগবান্ অশ্বের দ্বারা আপন সম্মুখে আনীত হয়, তখন স্বয়ং প্রজাপতি ত্বষ্টাই দেবগণের প্রীণক (অর্থাৎ প্রীতি সম্পাদক) এবং প্রথম দেয় ছাগকে সুকীর্তির কারণে অশ্বের সাথে সংযোজিত করে থাকে।

২৭। হবির্ভূত এবং প্রতি ঋতুতে দেবযান পথ প্রাপ্তশীল অশ্বকে তিনজন মানব হোতা যখন পর্যগ্নিরকণ (অর্থাৎ কুশের দ্বারা জল ছিটিয়ে পবিত্র) করে, তখন পূষার প্রথম যজ্ঞভাগ (ভক্ষ্য) এই ছাগ আপন বাক্যের দ্বারা দেবতাগণকে যজ্ঞের সূচনা প্রদান পূর্বক সম্মুখে আগত হয়।

২৮৷ হে হোতা, অধ্বর্যু, প্রতিস্থাতা, অগ্নিমিন্ধ (অর্থাৎ অগ্নির ইন্ধনদাতা), গ্রাবস্তোতা (সোমাভিষবের নিমিত্ত প্রস্তর গ্রহণকারী), ও ব্রহ্মা! (সকল ঋত্বিক)! সেই সু-অলঙ্কৃত এবং সম্যক্ হুত অশ্বমেধ যজ্ঞের দ্বারা ঘৃত, দুগ্ধ, দধি ইত্যাদিকে পূর্ণ করো (অর্থাৎ যজ্ঞ সাধন করে তার ফলের দ্বারা পরিপূর্ণতা প্রাপ্ত করো)।

২৯। যুপের নিমিত্ত বৃক্ষ। কর্তনশালী, কর্তিত যুপকে বহনশীল, যুপের অগ্রভাগে বন্ধনযোগ্য কাষ্ঠকে তক্ষণিত করে (চেঁচে-ছুলে) দিচ্ছে এবং যারা অশ্বের পাকের (রন্ধনের) নিমিত্ত কাষ্ঠ-ভাণ্ড ইত্যাদি একত্রিত করছে–সেই সকলের উদ্যম আমরা যেন প্রাপ্ত হই; (অর্থাৎ যজ্ঞকে সফল করি)।

৩০। সেই মননীয় ফল স্বয়ংই আমাদের প্রাপ্ত হয়েছে। এই কমনীয় পৃষ্ঠভাগ অশ্বদেবের মনোরথকে পূর্ণ করার নিমিত্ত আগত হোক। এই অশ্বকে হেতু করে বিদ্বান ঋষি বা ঋত্বিকগণও আনন্দিত হোক–যে, যে অশ্বকে আমরা দেবগণের পুষ্টির নিমিত্ত সুষ্ঠুভাবে বন্ধন করেছি৷৷

৩১। বেগবান্ অশ্বের যে রঞ্জু আছে, অশ্বের পশ্চাৎভাগ (অর্থাৎ পাদদ্বয়) বন্ধনের যে রঞ্জু আছে, শিরোভাগে বন্ধনের নিমিত্ত যে রঙ্কু আছে, এর মুখে দেবার জন্য যে লাগাম ও যে তৃণ ইত্যাদি আছে, হে অশ্ব! তোমার সেই সবই এক্ষণে দেবতাগণের প্রাপ্ত হোক ॥

৩২। অশ্বমাংসের যে অংশ মক্ষিকাগণ ভক্ষণ করেছে অথবা যে মাংস যুপের খড়েঙ্গ লিপ্ত হয়ে গিয়েছে, কিংবা যা অশ্বঘাতকের হস্তে বা নখে লিপ্ত হয়ে রয়ে গিয়েছে–হে অশ্ব! তোমার সেই সবই এক্ষণে দেবগণের প্রাপ্ত হোক।

৩৩। ক্ষুদ্র অন্ত্রে যে অর্ধপক্ক (আধ-হজম) তৃণ ইত্যাদি আছে এবং ছেদনের পর বাহির হয়ে আসা গন্ধপূর্ণ যে অপক (কাঁচা) মাংস ইত্যাদি সবগুলি ছেদনকারী পুণ্যজন সংগৃহীত করে এবং সেই সাথে রন্ধনকারী অশ্বমেধিয় অশ্বমাংসকে যথাযথ পক্ক করে–গলিত না করে কিংবা অপক (কাঁচা) না রেখে সুপ করুক৷

৩৪। হে অশ্ব! লৌহের শলার উপর রক্ষিত করে পচ্যমান তোমার মাংসের যে ভাগ নীচে পতিত হয়ে যাচ্ছে, সেগুলি ভূমিতেই থাকুক এবং যেগুলি তৃণ ইত্যাদিতেই লিপ্ত থাকুক। ঐ সবগুলিকে কামনাকারী দেবতাগণকে প্রদানিত হোক।

৩৫। যারা অশ্বের পরিপক্ক হওয়া (রন্ধন) দর্শন করছে এবং যারা এমন বলছে যে–আহা! কি সুগন্ধ নির্গত হচ্ছে; আচ্ছা, সবগুলি আনয়ন করো, আরও, যারা অশ্বমাংসকে ভিক্ষা করছে, তাদের সকলের প্রযত্ন আমাদের প্রোৎসাহিত করুক৷

৩৬। মাংস পনশালী লৌহনির্মিত বড় যে হণ্ডা (হাঁড়ি) পুনঃ পুনঃ দৃষ্ট হচ্ছে; পনের পর রসকে সেচনকারী যে পাত্র (বাসন) আছে, রস হতে তাপকে বাহিরে নির্গত হতে না দেওয়া যে ঢাকনা আছে, মাংসচরুর হৃদয় ইত্যাদি অঙ্গকে বোধিতশালী যে যষ্টি প্রভৃতি সাধন আছে এবং ছেদনের যে খড়গ প্রভৃতি আছে সে সবই অশ্বকে সুশোভিত করছে; (অর্থাৎ সেগুলি অশ্বকে দেবযোগ্য করছে)।

৩৭। ঈষৎ ধূম্রবান অগ্নি, হে অশ্ব! তোমার পক্ক হওয়ার কালে নিজ ধ্বনি না করে মাংসের দ্বারা টগবগ টগবগ ধ্বনি না উঠিয়ে, নিজের (অর্থাৎ অগ্নির) দ্বারা প্রদীপ্তা উখার স্থালী, যা তোমার গন্ধকে সতত আঘ্রাণিত করে, তা কম্পিত হয় না। যাজিত, ভক্ষিত, উদ্যমিত এবং বষট্‌কৃত সেই অশ্বমাংস দেবতাগণ গ্রহণ করছেন।

৩৮। অশ্বের নিষ্ক্রমণ, উপবেশন, শয়ন, এবং পাদবন্ধনের এই স্থান; অশ্ব যে জল পান করেছে, যে তৃণ ভক্ষণ করেছে; হে অশ্ব! তোমার সেই সব কিছুই দেবগণেরই প্রাপ্ত হোক।

৩৯। অশ্বের নিমিত্ত যে আচ্ছাদক বস্ত্র, যে বস্ত্র নিম্নে বিস্তৃত (বিছানো), যে স্বর্ণ ইত্যাদির অলঙ্কার একে সজ্জিত করেছে, অশ্বের যে শিরবন্ধন এবং যে পাদবন্ধন, এই সবই অশ্বের প্রিয় দেবতাগণকে প্রাপ্ত হওয়ার প্রযত্নকারী হয়ে থাকে।

৪০। হে অশ্ব! অশ্বারোহী আপন তেজের সাথে তোমার উপর আরোহণ করে যে কশাঘাতের শব্দ করে, পদের দ্বারা তাড়না করে যে পীড়া প্রদান করে, সে সবই সুবার দ্বারা হবিঃ ক্ষালনের ন্যায় আমি মন্ত্রের দ্বারা দূর করছি।

৪১। বেগবান এবং দেবপ্রিয় অশ্বের চতুস্ত্রিংশ (চৌত্রিশ) অঙ্গকে খড়গ পরিত্রাণ দান করে। হে ঋত্বিকগণ! জ্ঞানের সাথে একটি একটি অঙ্গকে ঘোষণা পূর্বক এক্ষণে তোমরা প্রতিটি অঙ্গকে অচ্ছিদ্র (দোষহীন) করো এবং ছিন্ন করো।

৪২। একমাত্র প্রজাপতিই অশ্বের ছেদনকর্তা এবং দ্যাবাপৃথিবী–এই দুই দেবতা এর নিয়ন্ত্রক। হে অশ্ব! আমি অধ্বর্যু তোমার যে সে অঙ্গকে ছেদন করে পৃথক করছি–সেই সেই মাংসপিণ্ডকে আমি অগ্নিতে আহুতি প্রদান করছি (আপনউপযোগে গ্রহণ করছিনা)।

৪৩। হে অশ্ব! স্বর্গে গমনজনিত কারণে তোমার প্রিয় শরীর যেন ব্যথাপ্রাপ্ত না হয় এবং এই খড়ঙ্গ তোমার শরীরকে খণ্ড খণ্ড করে দেবতাগণকে সমর্পণ করুক–যেন সেই এই কর্মে নিরস্ত না হয়। এই লোভী ও অকুশল ছেদনকারীও শাস্ত্রসম্মত বিধিক্রম পরিত্যাগ করে যেখানে সেখানে ছেদন করে যেন (এই যজ্ঞ) ব্যর্থ করে না দেয়।

৪৪। হে অশ্ব! যজ্ঞের নিমিত্ত ছেদিত হয়েই তো মৃত্যুপ্রাপ্ত হচ্ছো এবং বিনষ্ট হচ্ছে না। এই স্থান হতে এক্ষণে তুমি দেব্যান পথে সোজা দেবগণকেই প্রাপ্ত হবে। তোমার রথে ইন্দ্রের হরী এবং মরুবৃন্দের পৃষতী নামক অশ্ব সংযোজিত হবে। অশ্বিদ্বয়ের রাসভের অগ্রেও বেগবান্ অশ্ব আগত হবে।

৪৫। দেবত্ব প্রাপ্ত বেগবান্ অশ্ব আমাদের সুন্দর গাভী ও অশ্বশালী করুক, আমাদের সুন্দর পুরুষার্থসাধক পুত্রশালী করুক। সে আমাদের সকলকে পোষণযোগ্য ধন প্রদান করুক। অখণ্ড্য অশ্ব আমাদের নিষ্পাপ করুক। হবিযুক্ত অশ্ব আমাদের রাজ্য প্রদান করুক।

৪৬। এই অশ্বমেধ যজ্ঞের দ্বারা আমরা এই লোকসমুদায়কে সিদ্ধ করছি। বিশ্বদেবগণ এবং মরুবৃন্দের সাথে গণবা ইন্দ্র আদিত্যগণের মাধ্যমে আমাদের নিমিত্ত ভেষজ্য (ভেষজ প্রস্তুত) করুক। আদিত্যবর্গের সাথে ইন্দ্র যজ্ঞ, আমাদের শরীর এবং প্রজাগণের (অর্থাৎ পুত্র ইত্যাদির) হিত সাধন করছে।

৪৭। হে অগ্নি! তুমিই আমাদের অত্যন্ত নিকটস্থিত হয়ে থাক। তুমি আমাদের রক্ষক, শরণ্য, এবং কল্যাণকারী হও। অগ্নি বাসক (আশ্রয় প্রদায়ক) এবং ধনদানের দ্বারা কীর্তিশালী। হে অগ্নি! তুমি আমাদের যজ্ঞের দিকে আগত হও। তুমি আমাদের অত্যন্ত দীপ্তিযুক্ত ধন প্রদান করো। হে অত্যন্ত দীপ্তিবান্ এবং সকলের প্রকাশক অগ্নি! মিত্রগণের সুখের নিমিত্ত আমরা তোমার নিকট ধন যাচন (প্রার্থনা) করছি। (সেই তুমি আমাদের জ্ঞাত হও। তুমি আমাদের আহ্বান শ্রবণ করো)। হে অগ্নি! তুমি সকল হিংসেচ্ছুগণ হতে আমাদের রক্ষা করো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *