১৬. শুক্লযজুর্বেদ – ষোড়শ অধ্যায়

ষোড়শ অধ্যায়

মন্ত্রঃ– নমস্তে রুদ্র মন্যব উতো ত ইষবে নমঃ। বাহুভ্যামুত তে নমঃ।১৷ যা তে রুদ্র শিবা তনুরঘোরাহপাপকাশিনী। তয়া নস্ত শন্তময়া গিরিশন্তাভি চাকশীহি৷৷২। মামিং গিরিশস্ত হস্তে বিভৰ্য্যস্তবে। শিবাং গিরিত্র তাং কুরু মা হিংসীঃ পুরুষং জগৎ৷৩৷৷ শিবেন বচসা ত্বা গিরিশাচ্ছা বদামসি। যথা নঃ সর্বমিজ্জগদষক্ষ্মং সুমনা অসৎ৷৷৷৷ অধ্যবোচদধিবক্তা প্রথমো দৈবব্যা ভিষ। অহীশ্চ সর্বাঞ্জম্ভয়সাশ্চ যাতুন্যো হধরাচীঃ পরা সুব।৫৷৷ অসৌ যস্তাম্রো অরুণ উত বঃ সুমঙ্গলঃ। যে চৈনং রুদ্রা অভিতো দিক্ষু শিতাঃ সহস্ৰশোহবৈষাং হেড ইমহে৷৷৬৷৷ অসৌ যোহবসর্পতি নীলগ্রীবোবিলোহিতঃ। উতৈনং গোপা অদৃশ্ৰনুদৃশ্ৰনুদহার্যঃ সদৃষ্টোমৃডয়াতিনঃ ॥৭৷৷ নমোহস্তু নীলগ্রীবায় সহস্রাক্ষায় মীচুষে। অথো যো অস্য সত্বানোহহং তেভভ্যাহ করং নমঃ।।৮। প্রমুঞ্চ ধন্বনমুভয়োরাত্মো জ্যাম্। যা তে হস্ত ইষবঃ পরা তা ভগবো বপ৷৯৷ বিজ্যং ধনুঃ কপর্দিনো বিশল্যো বাণবা উত। অনেশন্নস্য যা ইষব আভুরস্য নিষধিঃ ॥১০৷ যা তে হেতির্মীঢ়ষ্টম হস্তেবভূব তে ধনুঃ। তয়াহম্মান্বিশ্বতত্ত্বমযফ্লয়া পরি ভূজ৷১১৷ পরি তে ধন্বনো হেতিরস্মাণজু বিশ্বতঃ। অথো য ইষুধিস্তবারে অম্মন্নি ধেহি তম্॥১২৷ অবততা ধনুষ্টং সহস্রাক্ষ শতেষুধে। নিশীর্য শল্যানাং মুখা শিবো নঃ সুমনা ভব৷৷১৩ নমস্ত আয়ুধায়ানাততায় ধৃষ্ণবে। উভাভ্যামুত তে নামো বাহুভ্যাং তব ধন্বনে৷১৪৷ মা নো মহান্তমুত মা নো অর্ভকং মা ন উমুত মা ন উক্ষিত। মা নো বধীঃ পিতরং মোত মাতরং মা নঃ প্রিয়স্তম্বো রুদ্র রীরিষঃ ॥১৫৷ মা নস্তোকে তনয়ে মা ন আয়ুষি মা নো গোষু মা নো অশ্বেযু রীয়িষঃ। মা নো বীরা রুদ্র ভামিনো বধীহবিষ্মন্তঃ সদমিৎ ত্বা হবামহে৷১৬৷৷ নমো হিরণ্যবাহবে সেনান্যে। দিশাং চ পতয়ে নমো। নমো বৃক্ষেভ্যো হরিকেশেভ্যঃ। পশূনাং পতয়ে নমো। নমঃ শস্পিঞ্জরায় ত্বিষীমতে পথীনাং পতয়ে নমো। নমো হরিকেশায়োপবীতিনে। পুষ্টানাং পতয়ে নমঃ ॥১৭ নমো ভলুশায় ব্যাধিনে ইন্নানাং পতয়ে নমো। নমো ভবসা হেত্যৈ। জগতাং পতয়ে নমো। নমো রুদ্রায়াততায়িনে ক্ষেত্ৰাণাং পতয়ে নমো। নমঃ সূতায়াহস্ত্যৈ। বনানাং পতয়ে নমঃ ॥১৮ নমো রোহিতায় স্থপতয়ে। বৃক্ষাণাং পতয়ে নমো। ভুবন্তয়ে বারিবস্কৃতায়ৌষধীনাং পতয়ে নমো।নমো মন্ত্রিণে বাণিজায়।কক্ষাণাং পতয়ে নমো। নম উচ্চৈঘৈাষায়াক্ৰয়তে। পত্তীনাং পতয়ে নমঃ।১৯৷৷ নমঃ কৃতস্নায়তয়া ধাবতে। সত্বানাং পতয়ে নমো। নমঃ সহমানায় নিব্যাধিন আব্যাধিনীনাং : পতয়ে নমো নমো নিষঙ্গিণে ককুভায়। স্তেনানাং পতয়ে নমো। নমো নিচেরবে পরিচরায়ারণ্যানাং পতয়ে নমঃ।।২০ নমো বঞ্চতে পরিবঞ্চতে স্তায়ুনাং পতয়ে নমো। নমো নিষঙ্গিণ ইষুধিমতে তস্করাণাং পতয়ে নমো। নমঃ সূকায়িভ্যো জিঘাংসদ্ভো মুতাং পতয়ে নমো। নমোহসিমদভ্যো নক্তঞ্চরদ্ভো বিকৃন্তানাং পতয়ে নমঃ ॥২১ নম উষ্ণীষিণে গিরিচরায় কুলুঞ্চানাং পতয়ে নমো। নম ইমুমদ্ভ্যো ধন্বায়িভ্যশ্চ বো নমো। নম আতন্বোনেভ্যঃ প্রতিদধানেভ্যশ্ব বো নমো। নম আযচ্ছদ্ভো হস্যম্ভাশ্চ বো নম৷৷২২ নমো বিসৃজজ্ঞ্যো বিদ্ধ্যশ্চ বো নমো। নমঃস্বপভো, জাগ্রদ্ভাশ্চ বো নমো। নমঃ শয়ানেভ্য আসীনেভ্যশ্চ বো নমো। নমস্তিষ্ঠদ্ভো ধাবভ্যশ্চ বো নমঃ ॥২৩৷৷ নমঃ সভাভ্যঃ সভাপভিভ্যশ্চ বো নমো। নমোহশেভ্যো হশপতিভ্যশ্চ বো নমো। নম আব্যাধিনীভ্যো বিবিধ্যস্তীভ্যশ্চ বো নমো। নব উগণাভ্য স্থংহতীভ্যশ্চ বো নমঃ ॥২৪৷৷নমো গণেভ্যো গণপতিভ্যশ্চ বো নমো। নমো ব্রাতভ্যো ব্রাতপতিভাশ্চ বোনমো। নমো গৃৎসেভ্যো গৃৎস্পতিভ্যশ্চ বো নমো। নমো বিরূপেভ্যো বিশ্বরূপেভ্যশ্চ বো নমঃ ॥২৫৷ নমঃ সেনাভ্যঃ সেনানিভ্যশ্চ বো নমো। নমো রথিভ্যো অরথেভ্যশ্চ বো নমো নমঃ ক্ষতৃভাঃ সংগ্রহীতৃভ্যশ্চ বো নমো। নমো মহদ্ভো অৰ্ভকেভ্যশ্চ বো নমঃ ॥২৬। নমস্তক্ষভভ্যা থকারেভ্যশ্চ বো নমো। নমঃ কুলালেভ্যঃ কর্মরেভ্যশ্চ বো নমো নমো নিষাদেভ্যঃ পুঞ্জিষ্ঠেভ্যশ্চ বো নমো। নমঃ শনিভ্যো মৃগয়ুভ্যশ্চ বো নমঃ ৷৷২৭৷৷ নমঃ শ্বভ্যঃ শ্বপতিভ্যশ্চ বো নমো নমো ভবায় চ রুদ্রায় চ। নমঃ শৰ্বায় চ পশুপতয়ে চ। নমো নীলগ্রীবায় চ শিতিকণ্ঠায় চ৷২৮ নমঃ কপর্দিনে চ ঝুপ্তকেশায় চ। নমঃ সহস্রাক্ষায় চ শতধন্বনে চানমো গিরিশয়ায় শিপিবিষ্টায় চানমো মীদুষ্টমায় চেষুমতে চ৷৷২৯৷৷ নমো হ্রস্বায় চ বামনায় চ।.নমো বৃহতে চ বর্ষীয়সে চ। নমো বৃদ্ধায় চ সবৃধে চ। নমোহগ্নয় চ প্রথমায় চ।।৩০নম আশবে চাজিরায় চ নমঃ শীঘ্রায় চশীভ্যায় চানম উৰ্মায় চাবন্যায় চনমো নাদেয়ায় চ দ্বীপ্যায় চ৷৩১।নমো জ্যেষ্ঠায় চকনিষ্ঠায় চ নমঃ পূর্বজায় চাপরজায় চ। নমো মধ্যমায় চাপগণ্ডায় চ নমো জঘন্যায় চ বুধ্যায় চ৩২ নমঃ সোভ্যায় চ প্রতিস্যায় চনমো যাম্যায় চ ক্ষেম্যায় চ। নমঃ শ্লোক্যায় চা। বন্যায় চ নম উর্বর্যায় চ খল্যায় চ৷৷৩৩ নমো বন্যায় চ কক্ষ্যায় চ নমঃ শ্ৰবায় চ প্রতিশ্ৰবায় চ। নম আশুষেণায় চাশুরথায় চ নমঃ শূরায় চাবভেদিনে চ৷৩৪৷৷ নমো বিন্মিনে চকচিনে চ নমো বর্মিণে চবরূথিনে চা নমঃ শ্রুতায় চ ঞতসেনায় চনমো দভ্যায় চা হনন্যায় চ৷৷৩৫ নমো ধৃষ্ণবে চ প্রমৃশায় চ নমো নিষঙ্গিণে চেষুধিমতে নমস্তীষেবে চায়ুধিনে চ নমঃ স্বাষুধায় চ সুধম্বনে চ৷৷৩৬নমঃ সুত্যায় চপথ্যায় চ নমঃ কাট্যায় চ নীপ্যায় চ। নমঃ কুল্যায় চ সরস্যায় চ নমো নাদেয়ায় চ বৈশন্তায় চ৷৷৩৭৷নমঃকূপ্যায় চাবট্যায় চনমোবী্যায় চাতপ্যায় চানমো মেধ্যায় চবিদ্যুত্যায় চ নমো বর্ষায় চাবায় চ৷৷৩৮ নমো বাত্যায় চ রেষ্মায় চ নমো বাস্তৃব্যায় চ বাস্তূপায় চ। নমঃ সোমায় চ রুদ্রায় চ নমস্তাম্ৰায় চারুণায় চ৷৷৩৯৷ নমঃ শঙ্গবে চ পশুপতয়ে চ নমঃ উগ্ৰায় চ ভীমায় চ। নোহগ্রেবধায় চ দূরে বধায় চ নমো হন্ত্রে চ হনীয়সে চ। নমো বৃক্ষেভ্যে হরিকেশেভ্যো নমস্তারায়।৪০ নমঃ শম্ভবায় চ ময়োভবায় চ। নমঃ শঙ্খরায় চ ময়স্করায় চ। নমঃ শিবায়চ শিবতরায় চ৷৷৪১ নমঃ পার্যায় চাবার্যায় চ। নমঃ প্রতরণায় চোরণায় চনমস্তীৰ্থায় চকূল্যায় চ।নমঃশস্প্যায় চ ফেন্যায় চ৷৷৪২ নমঃ সিকত্যায় চ প্রবাহ্যায় চ। নমঃ কিংশিলায় চক্ষয়ণায় চ। নম কপর্দিনে চ পুলস্তয়ে চ হরিণ্যায় চ প্রপথ্যায় চা৪৩ নমো ব্রজ্যায় চ গোষ্ঠ্যায় চ। নমস্তল্লায় চ গেহ্যায় চ। নমো হৃদয্যায় চ নিবেম্প্যায় চ। নমঃ কাট্যায় চ গরেষ্ঠায় চ৷৷৪৪৷৷ নমঃ শুষ্ক্যায় চ হরিত্যায় চ। নমঃ পাংসব্যায় চ রজস্যায়। নো লোপ্যায় চোলপ্যায় চ। নম ঊৰ্য্যায় চ সুৰ্য্যায় চ৷৷৪৫৷৷ নমঃ পর্ণায় চ পর্ণশদায় চ। নম উদগুরমাণায় চাভিয়তে চ। নম আখিদতে চ প্ৰখিদতে চ। নম ইযুকৃদ্ভো ধনুষ্কৃভ্যশ্চ বো নমো। নমো বঃ কিরিকেভ্যো দেবানাং হৃদয়েভ্যো।নমো বিচিন্বৎকেভ্যো নমো বিক্ষিণৎতেকভ্যো, নম আনিহতেভ্যঃ ৪৬৷৷ দ্ৰাপে অন্ধসম্পতে দরিদ্র নীললোহিত। আসাং প্রজানামেং পশুনাং মা ভের্মা রোক্ষ্মী চনঃ কিঞ্চনামমৎ৪৭৷ ইমা রুদ্রায় তবসে কপর্দিনে ক্ষয়দ্বীরায় প্র ভরামহে মতীঃ। যথা শমস দ্বিপদে চতুষ্পদে বিশ্বং পুষ্টং গ্রামে অস্মিন্ননাতুর৷৪৮৷৷ যা তে রুদ্র শিবা তনুঃ শিবা বিশ্বাহা ভেষজী। শিবা রুতস্য ভেষজী তয়া নো মৃড জীবসে৷৪৯৷ পরি নো রুদ্রস্য হেতিৰ্বণঞ্জু পরি ত্বেষস্য দুর্মতিরঘায়োঃ । অব স্থিরা মঘবদ্ধস্তনু মীঢ়বস্তোকায় তনয়ায় মৃড৷৷৫০৷৷ মীদুষ্টম শিবতম শিববা নঃ সুমনা ভব। পরমে বৃক্ষ আয়ুধং নিধায় কৃত্তিং বসান আ চর পিনাকং বিভ্ৰদা গহি।৫১৷ বিকিরিদ বিলোহিত নমস্তে অস্তু ভগবঃ। যাস্তে সহস্রং হেতয়োহন্যমম্মুন্নি বপন্তু তাঃ।।৫২।। সহস্রাণি সহস্ৰশশা বাহোস্তব হেতয়ঃ। তাশামীশানো ভগবঃ পরাচীনা মুখা কৃধি॥৫৩ অসংখ্যা সহস্রাণি যে রুদ্ৰা অধি ভূম্যা। তেষাং সহস্রযোজনেহব ধন্বানি তন্মসি৷৫৪৷ অস্মিন্ মহত্যর্ণবেহস্তরিক্ষে ভবা অধি। তেষাং সহস্রযোজনেহব ধন্বানি তন্মসি৷৷৫৫৷ নীলগ্রীবাঃ শিতিকণ্ঠাঃ দিবং রুদ্রা উপশ্রিতাঃ। তেষাং সহস্রযোজনেব ধন্বানি তন্মসি৷৷৫৬। নীলগ্রীবাঃ শিতিকণ্ঠাঃ শর্বা অধঃ ক্ষমাচরাঃ। তেষাং সহস্ৰযোজনেহব ধন্বানি তন্মসি৷৫৭৷৷ যে বৃক্ষে শপিঞ্জরা নীলগ্রীবা বিলোহিতাঃ। তেষাং সহস্রযোজনেইব ধন্বানি তন্মসি৷৷৫৮। যে ভূতানামধিপতয়ো বিশিখাসঃ কপর্দিনঃ। তেষাং সহস্রযোজনেহব ধন্বানি তন্মসি৷৷৫৯৷ যে পথাং পথিরক্ষয় ঐলবৃদা আয়ুযুধঃ। তেষাং সহস্রযোজনেহব ধন্বানি তন্মসি৷৬০৷ যেতীর্থানি প্রচরন্তি সৃকাহস্তা নিষীণঃ। তেষাংসহস্রযোজনেহব ধন্বানি তন্মসি৷৬১। যেংগ্নেযু বিবিধ্যাস্তি পাত্রে পিবতো জনা। তেষাং সহস্রযোজনেহব ধন্বানি তন্মসি৷৬২৷৷ য এতাবন্তশ্চ ভূয়াংস দিশো রুদ্রা বিতস্থিরে। তেষাং সহস্রযোজনেহব ধানি তন্মসি৷৷৬৩নমোহস্তু রুদ্রেভ্যা যে দিবি যেষাংবর্ষমিষবঃ। তেভ্যো দশ প্রাচীর্দশ দক্ষিণা দশ প্রতীচীর্দশোদীচীর্দশোৰ্ব্বাঃ। তেভ্যো নমো অন্তু তে নোহবস্তু তে নো মৃডয়ন্তু তে যং দ্বিষ্মে যশ্চ নো দ্বেষ্টি তমেষাং জম্ভে দঃ ৩৪৷৷ নমোহস্ত রুদ্রেভ্যো যেহন্তরিক্ষে যেষাং বাত ইষবঃ। তেভ্যো দশ প্রাচী দশ দক্ষিণা দশ প্রতীচীর্দশোদীচীর্দশোর্বাঃ। তেভ্যো নমো অস্তু তে নোহবন্তু তে নো মৃডয়ন্তু তে যং দ্বিগ্নে যশ্চ নো দ্বেষ্টি তমেষাং জম্ভে দঃ ৬৫৷৷নমোহস্তু রুদ্রেভভ্যা যে পৃথিব্যাং যেষামন্নমিষবঃ। তেভ্যো দশ প্রাচীর্দশ দক্ষিণা দশ প্রতীচীর্দশোদীর্দশোৰ্ব্বাঃ। তেভ্যা নমো অস্তু তে নোহবস্তু তে নো মডয়ন্তু তে যং দ্বিষ্মে যশ্চ নো দ্বেষ্টি তমেষাং জম্ভে দঃ ৬৬৷৷

[কাণ্ড-৬৬, মন্ত্র সংখ্যা-২৮০]

.

মন্ত্ৰার্থঃ– (এই অধ্যায়ে শতরুদ্রিয় হোমের মন্ত্রসমূহের বিধান)

১। হে রুদ্র! তোমার মোর (অর্থাৎ ক্রোধের) নিমিত্ত নমস্কার এবং তোমার উধৃত ইষুব (বাণের) নিমিত্তও নমস্কার। তোমার দুই বাহুর নিমিত্তও নমস্কার। (রুদ্র অর্থে জ্ঞানপ্রদ, দুঃখের দ্রাবয়িতা বা বিতাড়ক)

২। হে রুদ্র! তোমার যে শরীর মঙ্গলকারী, অভয়ঙ্কর এবং কখনও পাপফল নয়, সেই আপন অত্যন্ত শান্ত শরীরের দ্বারাই, হে গিরিবাসী রুদ্র! তুমি আমাদের দেখ।

৩। হে গিরিশ! শত্রুর প্রতি নিক্ষেপ করার নিমিত্ত তুমি আপন হস্তে যে বাণ ধারণ করছ, হে গিরিত্রাত (কৈলাস স্থিত প্রাণীগণের ত্রাতা)! তুমি সেই বাণগুলিকে শান্ত করো। তুমি আপন সেই বাণে কোন মনুষ্য বা চর-প্রাণীকে (জঙ্গমস্ত গো-ইত্যাদিকে) প্রহার (বা হত্যা) করো না৷

৪। হে গিরীশায়িন্! আমরা শান্তিকর স্তোত্রের দ্বারা অভিমুখ্য হয়ে তোমাকে স্তবন করছি। (এক্ষণে তুমি প্রসন্ন হয়ে কিছু এমন করো) যে প্রকারে আমাদের সমগ্র জগৎ রোগহীন ও প্রসন্ন হয়।

৫। সর্বপ্রধান ও দেবলোকের একমাত্র বৈদ্য ঐ প্রধান বক্তা শিব অধিক করে বলুন; হে রুদ্র! সকল সর্পকে স্থম্ভিত করে এবং সকল রাক্ষসকেও জড়ে পরিণত করে তাদের অধোমুখে পাতিত করুন।

৬। এই যে সূর্যরূপ তাম্র, রক্ত, ব (পিঙ্গল) এবং মঙ্গলরূপ রুদ্র আছেন, এবং তার অংশরূপ এই যে সহস্র রুদ্র আরও চার দিকে আধিশ্রিত আছে, সেই সকলের ক্রোধ আমরা প্রার্থনার দ্বারা দূর করব ৷

৭। নীল কণ্ঠশালী এবং বিশিষ্ট রূপে রক্তাভ এই যে রুদ্র ধীরে ধীরে সর্পণ (গমন) করছেন, এঁকে তো সাধারণ পশুচারণকারীগণ। (গোপালকগণ) দেখে থাকে এবং এঁকে জল আহরণকারিণী দাসীগণও (বা অঙ্গনাগণও) দেখে থাকে। আমাদের দ্বারাও ভয়পূর্বক দৃষ্ট ইনি আমাদের সুখী করুন।

৮।। নীলগ্রীবাশালী, সহস্রচক্ষু ও সেচন-সমর্থ সেই রুদ্রেদেবের উদ্দেশ্যে নমস্কার। এক্ষণে যাঁরা সেই রুদ্রের গণ (অর্থাৎ অনুচর), আমি তাদেরও নমস্কার করছি।

৯। হে রুদ্র! আপনি আপনার ধনুর দুই কোটি হতে প্রত্যঞ্চাকে পৃথক্ করুন (অর্থাৎ আপনি আপনার ধনুষের উভয় কোটিতে স্থিত জ্যাকে দূরীকৃত করুন)। এবং আপনার হস্তে যে বাণ আগত (বা ধৃত) হয়েছে, হে ভগবান্ রুদ্র! আপনি সেটিকে অন্য কোনও স্থানে নিক্ষেপ করুন।

১০। সেই কপর্দীর (জটাজুটধারীর) ধনুষ জ্যা-বিহীন হয়ে যাক; তিনি বিনা শল্যবাণধারী হোন। এক্ষণে তার সকল বাণ নিষ্ফল হয়ে যাক। এবং তার তূণীরও এক্ষণে শূন্য হয়ে যাক।

১১। হে অত্যন্ত সেচন-সমর্থ! তোমার হস্তে যে বাণায়ুধ আছে এবং যে ধনু আছে, সেই সেই রোগহীনের দ্বারাই (অর্থাৎ রোগ নিবারণকারীর) তুমি আমাদের সর্বতঃ স্পর্শ করো বা পালন করো।

১২। হে রুদ্র! ধনুষধারী তোমার বাণ আমাদের সকলকে আরও রক্ষা করুক। এক্ষণে যে তোমার পূর্ণকৃত তূণীর আছে, তাদের (অর্থাৎ তুণীরে রক্ষিত বাণগুলিকে) তুমি আমাদের থেকে দূরে রেখে দাও।

১৩। হে সহস্রাক্ষ! হে শততূনীরবান্ রুদ্র! আপন সেই ধনুষকে শিথিল করে ও বাণের অগ্রশল্যকে (ফলাকে) দূর করে (বা ধারহীন করে) তুমি আমাদের প্রতি কৃপালু হও।

১৪। তোমার না-টানা (রোপিত না হওয়া) ধর্ষক (রিপুহত্যায় ধৃষ্ণ) আয়ুধের (বাণের) নিমিত্ত নমস্কার; তোমার বাহুদ্বয়ের নিমিত্ত নমস্কার এবং তোমার ধনুষের নিমিত্তও নমস্কার।

১৫। হে রুদ্র! তুমি আমাদের কোনও মহান্ ব্যক্তিকে হত্যা করো না; কোনও শিশুকে হত্যা করো না; গর্ভাধান করণশীল যুবাকে হত্যা করো না এবং পরিসিক্ত গর্ভকে (গর্ভস্থ ভ্রণকে) হত্যা করো না। তুমি আমাদের পিতাকে হত্যা করো না এবং আমাদের মাতাকে হত্যা করো না। হে রুদ্র! তুমি আমাদের প্রিয় শরীরকে নষ্ট করো না।

১৬। হে রুদ্র! তুমি আমাদের পৌত্রে, পুত্রে, আমাদের আয়ু অথবা গো-অশ্বের বিষয়ে পুনঃ পুনঃ ক্রোধ করো না। হে রুদ্র! তুমি আমাদের ক্ৰোধী বীরগণকেও বধ করো না। আমরা সদা হবিযুক্ত হয়ে তোমাকে আহ্বান করছি।

১৭। সুবর্ণের বাহুশালী (হিরণ্যবাহু) সোনানী (সৈন্যাধ্যক্ষ) রুদ্রে উদ্দেশ্যে নমস্কার। দিকসমূহের অধিপতি রুদ্রকে নমস্কার। হরে-হরে পত্নীরূপী কেশসমূহে যুক্ত বৃক্ষের উদ্দেশ্যে (অর্থাৎ বৃক্ষরূপী রুদ্রকে) নমস্কার। পশুগণের পালকের (রুদ্রের) উদ্দেশ্যে নমস্কার। বালতৃণ অপেক্ষা পীতবন তেজস্বী রুদ্রের উদ্দেশে নমস্কার। মার্গের (পথের) রক্ষক রুদ্রের উদ্দেশ্যে নমস্কার। নীল কেশশালী, জরাহীন, যজ্ঞোপধাতধারী এবং গুণপূর্ণ মনুষ্যগণের পালক রুদ্রের উদ্দেশ্যে নমস্কার৷

১৮। ববর্ণ রুদ্রের নিমিত্ত নমস্কার। শত্রুকে বিদ্ধকারী রুদ্রকে নমস্কার। অন্নের পালক রুদ্রকে নমস্কার। ভগবান্ ভবের (রুদ্রের) আয়ুধের নিমিত্ত নমস্কার। সকল লোক বা চর প্রাণীবর্গের অধিপতি রুদ্রের নিমিত্ত নমস্কার। আততায়ী (বা উদ্যতায়ুধ) রুদ্রের নিমিত্ত নমস্কার। খেতের (জগৎক্ষেত্রের বা দেহের) রক্ষক রুদ্রের নিমিত্ত নমস্কার। অহন্তা (সারথিরূপ) ও জীবনকে চালনাকারী রুদ্রের নিমিত্ত নমস্কার। বনের স্বামী (অর্থাৎ পালক) রুদ্রের নিমিত্ত নমস্কার।

১৯। লোহিতবর্ণ, স্থপতি (ছুতার বা সূত্রধর) এবং বৃক্ষের পালককে নমস্কার। ভূমণ্ডলের বিস্তারক ধনকর্তা এবং ওষধিসমূহের অধিপতি রুদ্রকে নমস্কার। মন্ত্রী, বাণিজ্য করণশীল তথা লতাগুল্ম ইত্যাদির পালক রুদ্রকে নমস্কার। তুমুল ধ্বনিকারী, আনন্দ (আহ্বান) করণশীল তথা পদাতিসেনার নায়ক রুদ্রের নিমিত্ত আমার এই নমস্কার।

২০। কর্ণ পর্যন্ত আকর্ষিত ধনুষ গ্রহণপূর্বক যুদ্ধে শীঘ্র গমনশীল রুদ্রের নিমিত্ত নমস্কার। সাত্ত্বিক ও শরণাপন্ন প্রাণিগণের পালক রুদ্রকে নমস্কার। শত্রুকে অভিভূত করণশীল, অত্যন্ত বেধনশীল তথা বিদারিণী সেনাগণের প্রভুর নিমিত্ত নমস্কার। নিষঙ্গধারী (অর্থাৎ তৃণধারী), মহান্ এবং চোরাগণের পালক রুদ্রের উদ্দেশ্যে নমস্কার। লুণ্ঠক ও ডাকাতগণের পালক এবং জঙ্গলের অধিপতি রুদ্রকে নমস্কার ৷৷

২১। বঞ্চক, পরিবঞ্চক এবং চোরগণের স্বামী রুদ্রকে নমস্কার। খঙ্গধারী, বাণবান্ এবং তস্করগণের প্রভু রুদ্রকে নমস্কার। আয়ুধধারী, হিংসেচ্ছুক ও চুরি করণশীল ডাকাতগণের পালক রুদ্রকে নমস্কার।। অসিধারী, রাত্রিতে ভ্রমণকারী ও শরীরচ্ছেদক লোকগণের পালক রুদ্রকে নমস্কার ৷৷

২২। উষ্ণিষ (পাগড়ী বা জটাজুট)-ধারী, পর্বতে-পর্বতে বিচারণশীল এবং ক্ষেত্র, গৃহ ইত্যাদির অপহর্তাগণের পালক রুদ্রকে নমস্কার। বাণধারী ও ধনুষধারী রুদ্রগণকে নমস্কার। ধনুষের দড়িতে (অর্থাৎ জ্যাতে) টান দিতে পরাগ তথা জ্যাতে বাণ যোজনা পূর্বক সন্ধানশীল রুদ্রগণকে নমস্কার। ধনুষকে আকর্ষণকারী এবং বাণসমূহকে ইতস্ততঃ নিক্ষেপকারী রুদ্রগণকে নমস্কার।

২৩। বাণ নিক্ষেপকারী এবং (বিদ্ধকারী) তোমাদের অর্থাৎ রুদ্রদের নমস্কার। নিদ্রাশীল এবং জাগরণশীল তোমাদের অর্থাৎ রুদ্রদের নমস্কার।শায়িত এবং উপবিষ্ট রুদ্রদের নমস্কার। স্থিত এবং ধাবনকারী রুদ্রদের নমস্কার।

২৪। (রুদ্রগণের) সভাকে নমস্কার, তাদের সভাপতিকে নমস্কার। (রুদ্রদের) অশ্বগুলিকে নমস্কার–তোমাদের অশ্বগুলির পালকগণকে নমস্কার। উৎকৃষ্টরূপে বিদ্ধশালী (রুদ্রদের) সেনাগণকে নমস্কার। বিবিধ রূপে বেধিত (ছেদন)-কারী (রুদ্রদের) সেনাগণকে নমস্কার। উৎকৃষ্ট সেবকগণের সাথে যুক্ত ব্রাহ্মী প্রভৃতি মাতৃকাগণকে নমস্কার এবং হিংসন সমর্থ দুর্গা প্রভৃতি মাতৃকাগণকে নমস্কার ৷৷

২৫। গণসমূহকে নমস্কার এবং তোমাদের অর্থাৎ গণপতিগণকেও নমস্কার। নানা জাতিসমূহের সঙ্ঘকে নমস্কার। এই সঙেঘর পালকগণকে নমস্কার। লম্পটগণকে নমস্কার। জটী-মুণ্ডী ইত্যাদি বিরূপগণকে নমস্কার। (নগ্নমুণ্ডজটিলাদয়স্তেভ্যো বো নমঃ)। এবং তুরঙ্গবদন তথা হয়গ্রীব প্রভৃতি বিশ্বরূপ গণসমূহকে নমস্কার।

২৬৷ সেনাগণ রূপী রুদ্রদের নমস্কার; সেনাপতিগণকে নমস্কার; রথারোহীগণকে নমস্কার এবং রথহীনগণকে নমস্কার। রথের অধিষ্ঠাতাবৃন্দ রূপী রুদ্রদের নমস্কার; রথের অশ্বকে চালিতকারী সারথিগণকে নমস্কার; মহান্ বীরগণরূপী রুদ্রগণকে নমস্কার; বীর শিশুসমূহরূপী রুদ্রগণকে নমস্কার।

২৭। তক্ষ (সূত্রধার) জনরূপী রুদ্রগণকে নমস্কার; রথনির্মাতারূপী রুদ্রগণকে নমস্কার; কুম্ভকারগণকে নমস্কার, কর্মকারগণকে নমস্কার, গিরিচর মাংসাসী ভিল (নিষাদ)-গণকে নমস্কার; শিকারী কুকুরসমূহকে নমস্কার; শিকারী কুকুরগণের শিকারী প্রভুবৃন্দরূপী রুদ্রগণকে নমস্কার।

২৮৷ কুকুররূপী রুদ্রদের নমস্কার; কুকুরগণের পালক কিরাত ইত্যাদি রূপী রুদ্রগণকে নমস্কার। ভবরূপী রুদ্রগণকে নমস্কার; রুদ্ররূপী রুদ্রগণকে নমস্কার; শর্বরূপী রুদ্রগণকে নমস্কার; পশুপতি রুদ্রকে নমস্কার; নীলগ্রীবা (বা কৃষ্ণগ্রীবা) ও শিতিকণ্ঠ (বা শ্বেতকণ্ঠ) রুদ্রকে নমস্কার।

২৯। কপর্দ (জটাজুট)-ধারী শিবরূপী রুদ্রকে নমস্কার; মুণ্ডিতকেশ রুদ্রকে নমস্কার; সহস্রাক্ষ রুদ্রকে নমস্কার। বহু ধনুর্ধারী শিবকে নমস্কার; গিরি বা পর্বতে শয়নকারী শিবকে নমস্কার। শিপিবিষ্ট (অর্থাৎ বিষ্ণু বা আদিত্যরূপী) রুদ্রকে নমস্কার। অত্যন্ত সেক্তা (মেঘরূপে নিষেককারী) এবং বাণযুক্ত রুদ্রকে নমস্কার।

৩০। হ্রস্ব (ক্ষুদ্র) রুদ্রকে নমস্কার। বামনকে নমস্কার। মহান্ রুদ্রকে নমস্কার। সকলের অধিক বর্ষশালী রুদ্রকে নমস্কার। বৃদ্ধকে নমস্কার। অনুভব প্রাপ্তকে নমস্কার। শ্রেষ্ঠ এবং ধনাভূত রুদ্রকে নমস্কার।

৩১। জগতে ব্যাপ্তিশীল রুদ্রকে নমস্কার, গতিশীল রুদ্রকে নমস্কার। ক্ষিপ্রকারী রুদ্রকে নমস্কার জলপ্রবাহী রুদ্রকে নমস্কার। লহরযুক্ত (তরঙ্গায়িত) রুদ্রকে নমস্কার। স্থির জলসম্পন্ন রুদ্রকে নমস্কার।

৩২। জ্যেষ্ঠ রুদ্রকে নমস্কার এবং কনিষ্ঠরূপী রুদ্রকে নমস্কার। পূর্বজরূপী রুদ্রকে নমস্কার এবং উত্তরজ (পরে উৎপন্ন) রুদ্রগণকে নমস্কার। মধ্যম (অর্থাৎ তির্যক যোনিজাত) রুদ্রকে নমস্কার এবং অপ্রগলভ (অনিয়মজাত) রুদ্রকে নমস্কার। জঘন্য (অর্থাৎ গো-ইত্যাদির পশ্চাতে) এবং নিম্নস্থ (অর্থাৎ বৃক্ষ ইত্যাদি মূলে জাত) রুদ্রকে নমস্কার।

৩৩। গন্ধর্বনগরে উৎপন্ন বা পাপপুণ্যজ মনুষ্য লোকে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। বিবাহোচিত হস্তসূত্রধারী অথবা অভিচারে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। পাপীগণকে নরকে আর্তি (পীড়া) প্রদানশীল রুদ্রকে নমস্কার তথা কুশলে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। শ্লোকের যোগ্য রুদ্রকে নমস্কার। সমাপ্তি বা বেদান্তের সাথে সম্বন্ধিত রুদ্রকে নমস্কার। উর্বর ভূমিতে ধান্য ইত্যাদি উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। প্রাঙ্গনে বা ফসল মাড়াইয়ের স্থানে (বা খামারে) উৎপন্ন (বা প্রাপ্ত) রুদ্রকে নমস্কার।

৩৪। বনে উৎপন্ন (বৃক্ষ ইত্যাদিরূপী) রুদ্রকে নমস্কার। কক্ষ অর্থাৎ তৃণ ও গুল্ম ইত্যাদিতে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। শব্দ-প্রতিশব্দরূপ রুদ্রকে নমস্কার। শীঘ্রগতি সেনাশালী রুদ্রকে নমস্কার। শীঘ্ররথী রুদ্রকে নমস্কার। যুদ্ধে শূর রুদ্রকে নমস্কার এবং শত্রুগণকে বিভেদিত করণশীল রুদ্রকে নমস্কার ৷

৩৫। শিরস্ত্রাণযুক্ত রুদ্রকে নমস্কার, তথা কবচধারী রুদ্রকে নমস্কার। শরীররক্ষক বর্মধারী রুদ্রকে নমস্কার; হস্তীর উপরে ধারণীয় শিবিকাধারীরুদ্রকে নমস্কার। প্রসিদ্ধ বীরকে নমস্কার, তথা প্রসিদ্ধ সেনাসম্পন্ন সেনাপতি রুদ্রকে নমস্কার। দুন্দভী শব্দরূপী এবং বাদনদণ্ডকেও, নমস্কার ৷৷

৩৬। ধর্ষকরূপী রুদ্রকে নমস্কার এবং বিমর্শকারী (তর্ককারী বা বিচারক) পণ্ডিতরূপী রুদ্রকে নমস্কার। খঙ্গধারী রুদ্রকে নমস্কার, তথা বাণধারী (তূণীরধারী) রুদ্রকেও নমস্কার। তীক্ষ্ণ বাণশালী রুদ্রকে নমস্কার এবং আয়ুধবান্ বীর রুদ্রকে নমস্কার। শোভন আয়ুধশালী (ত্রিশূলধারী) রুদ্রকে নমস্কার এবং শুভ ধনুষশালী (সুধন্থা বা পিনাকধারী) রুদ্রকে নমস্কার।

৩৭। ক্ষুদ্র মার্গশালী রুদ্রকে নমস্কার; বিস্তৃত মার্গশালী রুদ্রকে নমস্কার। বিষম মার্গে বা কুল্যায় (বড় খালে) উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। পর্বতের অপোভাগে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। কুল্যাতে (নালা ইত্যাদিতে) উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। সরোবরে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। নদীতে উৎপন্ন, তথা পুকুরে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার।

৩৮। কূপ তথা গর্তে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। ঘনাগমে (মেঘের দ্বারা ছায়াচ্ছন্ন স্থানে) উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার; তথা আতপে (সূর্যের দ্বারা উত্তপ্ত স্থানে) উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। মেঘে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার; বিদ্যুতে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার; বর্ষায় উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার; বৃষ্টি রহিত স্থানে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার।

৩৯। বায়ুচক্রে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার, তথা প্রলয়ে বিদ্যমানশালী রুদ্রকে নমস্কার। গৃহভূমিতে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার; গৃহভূমির পালকরূপী রুদ্রকে নমস্কার। উমার সাথে দুঃখনাশক সোমকে নমস্কার, তথা রুদ্রকে নমস্কার। তাম্রবর্ণ এবং অরুণবর্ণ শঙ্কররূপী রুদ্রকে নমস্কার।

৪০। সুখকারীকে নমস্কার; পশুগণের পালককে নমস্কার, উগ্রস্বভাব রুদ্রকে নমস্কার। ভীমস্বরূপকে নমস্কার, সম্মুখে বর্তমান হয়ে বধ করণশালীকে নমস্কার, দূরে বিদ্যমান থেকে বধ করণশালীকে নমস্কার। হন্তাকে নমস্কার এবং অত্যন্ত হন্তাকেও নমস্কার। হরিৎপর্ণশালী বৃক্ষ বা কল্পতরুরূপী রুদ্রকে নমস্কার; সংসার হতে তারণশালী (উদ্ধারকারী) রুদ্রকে নমস্কার।

৪১। সুখস্বরূপ রুদ্রকে নমস্কার; কল্যাণময়কে নমস্কার, সুখকারী রুদ্রকে নমস্কার। কল্যাণকারীকে নমস্কার; শিবস্বরূপকে নমস্কার; অত্যন্ত সুখস্বরূপ রুদ্রকে নমস্কার।

৪২। সংসারের পারে জীবন্মুক্ত রূপে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। সংসারের মধ্যে সাধারণ মানবরূপে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। মন্ত্রজপ ইত্যাদি দ্বারা উদ্ধারশীল রুদ্রকে নমস্কার। উৎকৃষ্ট তত্ত্বজ্ঞানের দ্বারা মুক্তি প্রাপ্তশালী রুদ্রকে নমস্কার। প্রয়াগ ইত্যাদি তীর্থে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। গঙ্গা ইত্যাদি নদীর কুলে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। কুশ ইত্যাদি রূপে উৎপন্ন রুদ্রকে এবং নদীর ফেনায় উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার।

৪৩। বালুতে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। স্রোতে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। ছোট ছোট প্রস্তাবে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। স্থির জলপ্রদেশরূপী রুদ্রকে নমস্কার। জটাজুটধারী শিবরূপী রুদ্রকে নমস্কার। সম্মুখে বর্তমান বা সর্বান্তর্যামী শিবরূপী রুদ্রকে নমস্কার। ঊষর প্রদেশে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। উৎকৃষ্ট মার্গসম্ভুত রুদ্রকে নমস্কার।

৪৪। গোসমূহে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার; গো ভূমিতে উৎপন্নরূপী রুদ্রকে নমস্কার। শয্যায় উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার; ঘরে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার; হৃদয়ে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার; আবর্ত বা নীহার জলে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। দুর্গম প্রদেশ বা কূপে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার; গিরি-গুহা ইত্যাদিতেও স্থিত রুদ্রকে নমস্কার।

৪৫। শুষ্ক কাষ্ঠ ইত্যাদিতে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। হরিৎ ও আর্দ্র পত্র ইত্যাদিতে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। ধূলিতে উৎপন্ন এবং রজঃকণায় (বা পরাগে) উৎপন্নরূপী রুদ্রকে নমস্কার। অগম্য প্রদেশে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। বজ (উলুখড়) ইত্যাদি তৃণবিশেষে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার। ভূমিতে উৎপন্ন রুদ্রকে নমস্কার; কল্পানল (বা বড়বাগ্নি)-তে উৎপন্নরূপী রুদ্রকে নমস্কার৷

৪৬। পর্ণ বা পত্ররূপে উৎপন্ন রুদ্রের নিমিত্ত তথা পত্রকে বিখণ্ডিত করণশালী রুদ্রকে নমস্কার। উদ্যমবানকে নমস্কার এবং অভিতঃ (সকল দিকে) (শত্রুদের) বধশালীরূপী রুদ্রকে নমস্কার। সকল প্রকার দুঃখ দানকারী রুদ্রকে নমস্কার ও প্রকৃষ্টতার সাথে দুঃখদাতা রুদ্রকে নমস্কার। বাণ নির্মাণকারী রুদ্র এবং ধনুষ নির্মাণকারী রুদ্র, তোমাদের নমস্কার। বৃষ্টি ইত্যাদির দ্বারা জগতের উৎপন্নকর্তা তথা দেবগণের হৃদয়বৎ প্রধানভূত অগ্নি-বায়ু-আদিত্য রূপ তিন রুদ্রকে নমস্কার। পাপী ও ধর্মাত্মাগণকে পৃথক করণশীল এই অগ্নি ইত্যাদিরূপী রুদ্রগণকে নমস্কার। পাপকে বিবিধরূপে বিনষ্টকারী অগ্নি ইত্যাদিরূপী রুদ্রগণকে নমস্কার। স্বগ ইত্যাদি লোকসমূহ হতে সৃষ্টি ইত্যাদি কর্মের নিমিত বহির্ভূত, এই অগ্নি বায়ু-সূর্যরূপী রুদ্রদের নমস্কার।

৪৭। হে পাপীবর্গকে কুৎসিত গতি প্রাপ্তকারক! হে সোমের পালক! হে মহা-অকিঞ্চন! হে নীরকণ্ঠ রুদ্র! এই প্রজাগণও এই পশুগণের কাহাকেও ভয়ভীত করো না; কাহাকেও রুগ্ন করো না এবং আমাদের কোনও পশু প্রভৃতি যেন বিচিকা ইত্যাদি রোগবান্ না হয়।

৪৮। বলবান, জটজুটধারী তথা শত্রুগণের বীরবর্গকে বিনাশকারী রুদ্রের নিমিত্ত এই এই স্তুতিগুলিকে সম্পাদিত করছি। যাতে আমাদের দ্বিপাদ মনুষ্য ইত্যাদি তথা চতুষ্পদ গো ইত্যাদির কল্যাণ হয় এবং আমাদের এই গ্রামে সব কিছু পুষ্ট এবং অনাতুর হতে পারে৷

৪৯। হে রুদ্র! তোমার যে শরীর অত্যন্ত শান্ত, যা সদাই শান্ত ও ওষধিস্বরূপ এবং শারীরিক ব্যাধির একমাত্র ওষধি আপন সেই শরীরের দ্বারা জীবনের নিমিত্ত প্রসন্ন করো।

৫০। রুদ্রের আয়ুধ আমাদের দূর হতে পরিত্যাগ করুক এবং সেই হিংসনেচ্ছু এবং প্রদীপ্ত রুদ্রের হিংসক বুদ্ধিও আমাদের দূর হতে পরিত্যাগ করুক, (অর্থাৎ সে যেন আমাদের আঘাত করতে না চিন্তা করে)। হে সেচনসমর্থ! ধনবান্ যজমানগণের নিমিত্ত তুমি নিজের ধনুষকে অবনত করে জ্যা-মুক্ত করো (বা শিথিল করো) হে রুদ্র! আমাদের পুত্র পৌত্রদের উপর দয়া করো।

৫১। হে অত্যন্ত সেচনসমর্থ! হে অত্যন্ত কল্যাণকারিন্! কল্যাণস্বরূপ তুমি আমাদের প্রতি প্রসন্নচিত্ত হও। তুমি আপন ধনুষ ইত্যাদিকে কোনও উচ্চ বৃক্ষের উপর ধারণ করে রাখো এবং চর্মকে ধারণ করে (কৃত্তিবাসরূপে) ভ্রমণ করো। আপন পিনাককে (ত্রিশূলকে) ধারণ করে আমাদের নিকট আগমন করো৷

৫২। হে বাণবর্ষণকারী! হে বিশিষ্ট রক্তাভ! হে ভগব (রুদ্র)! তোমাকে নমস্কার। তোমার যে সহস্র হাতিয়ার (অস্ত্র কিংবা ব্যাধিরূপ অস্ত্র) আছে, তারা আমাদের শত্রুগণকে আঘাত করুক।

৫৩। হে রুদ্র! তোমার বাহুতে সহস্র প্রকারের সহস্র অস্ত্র আছে। তাদের উপর তোমার প্রভুত্ব। আছে। তাদের তুমি অন্যত্রগামী মুখশালী করে দাও, (অর্থাৎ তাদের মুখগুলি আমাদের থেকে ভিন্ন দিকে আরও বাঁকিয়ে দাও)

৫৪। ভূমির উপর যে অসংখ্য রুদ্র আছে, তাদের সকল ধনুষকে আমরা মন্ত্রবলে সহস্র যোজন দূরে নিক্ষেপ করছি৷৷

৫৫৷ এই বিশাল এবং মেঘার অন্তরিক্ষে যে অসংখ্য রুদ্র আছে, আমরা তাদের ধনুষগুলিকে সহস্র যোজন দূরে নিক্ষেপ করে দিচ্ছি।

৫৬৷ নীলগ্রীব তথা শ্বেত কণ্ঠশালী যে সকল রুদ্র দ্যুলোকে স্থিত আছে। তাদের ধনুষগুলিকে আমরা সহস্র যোজন দূরে নিক্ষেপ করে, দিচ্ছি৷

৫৭। নীলগ্রীব ও শ্বেত কণ্ঠশালী যে রুদ্রগণ ভূমির নীচে (অর্থাৎ পাতাললোকে) সঞ্চরণ করছে, আমরা তাদের ধনুষগুলিকে সহস্র যোজন দূরে নিক্ষেপ করে দিচ্ছি।

৫৮। বৃক্ষসমূহে বালতৃণ অপেক্ষা হরিত্বর্ণশালী, নীলগ্রীবাশালী ও রক্তনেত্রধারী রুদ্রগণ স্থিত আছে, তাদের ধনুষগুলিকে আমরা সহস্র যোজন দূরে নিক্ষেপ করে দিচ্ছি।

৫৯। যে রুদ্রগণ ভূতসমূহের অধিপতি, বিবিধ বা বিগত শিখা অথবা জটজুটধারী হয়ে আছে, তাদের ধনুষগুলিকে আমরা সহস্র যোজন দূরে নিক্ষেপ করে দিচ্ছি।

৬০৷ যে রুদ্র মার্গসমূহের রক্ষক, অন্নের ধারক তথা যাবজ্জীবন যুদ্ধকর্তা আমরা তাদের ধনুষগুলিকে সহস্র যোজন দূরে নমিত করছি৷৷

৬১। সৃ (অর্থাৎ ফাঁসী দেওয়ার উপযুক্ত দড়ি) হস্তযুক্ত তথা তরবারি সহ যে রুদ্রগণ প্রয়াগ ইত্যাদি তীর্থে ভ্রমণ করে থাকে, আমরা তাদের ধনুষগুলিকে সহস্র যোজন দূরে নমিত করছি৷৷

৬২৷ যে রুদ্র অনুভক্ষণের নিমিত্ত মনুষ্যকে প্রহার করে এবং যে পাত্রে জল পান করে থাকে। আমরা সেই রুদ্রদের ধনুষগুলি দূরে দমিত করছি৷৷

৬৩। যে অনেক অথবা অধিক রুদ্র এই ভূমির উপর দিক্-বিদিকে ব্যাপ্ত হয়ে আছে (বা পড়ে আছে), আমি তাদের ধনুষগুলিকে সমস্র যোজন দূরে নমিত করছি৷৷

৬৪। যে রুদ্রগণ দ্যুলোকে স্থিত হয়ে আছে, এবং যাদের বাণগুলি বৃষ্টির ফোঁটারূপে পতিত হয়, সেই রুদ্রদের নমস্কার। পূর্ব দিকে আরও যে রুদ্রগণ আছে, তাদের উদ্দেশ্যে আমি আমার দশ অঙ্গুলিকে জুড়ে দিচ্ছি (অর্থাৎ হাত জোড় করে নমস্কার জ্ঞাপন করছি); পশ্চিম দিকেও দশ অঙ্গুলিকে জুড়ে দিচ্ছি। উত্তর দিকে দশ অঙ্গুলিকে জুড়ে দিচ্ছি এবং ঊধ্বদিকেও দশ অঙ্গুলীকে জুড়ে দিচ্ছি। তাদের উদ্দেশ্যে নমস্কার। তারা আমাদের রক্ষা করুক। তারা আমাদের সুখী করুক। আমার যাদের দ্বেষ করি এবং যারা আমাদের দ্বেষ করে, তাদের আমরা এই রুদ্রগণের দ্রংষ্ট্ৰাকরাল মুখে স্থাপন করছি।

৬৫। সেই রুদ্রগণকে নমস্কার, যারা অন্তরিক্ষে স্থিত, যাদের বাণই বায়ু (অর্থাৎ বায়ুই যাদের বাণতুল্য অস্ত্র); তাদের উদ্দেশ্যে পূর্ব দিকে, দক্ষিণ দিকে, পশ্চিম দিকে, উত্তর দিকে ও ঊর্ধ্ব দিকে আমি আরও আপন দশ অঙ্গুলীকে যুক্ত করে নমস্কার করছি। তারা নমস্কার প্রাপ্ত হোক। তারা আমাদের রক্ষা করুক। তারা আমাদের সুখী করুক। আমরা যাদের দ্বেষ করি এবং যারা, আমাদের দ্বেষ করছে, তাদের আমরা এই রুদ্রগণের মুখে ধারণ করছি।

৬৬। সেই রুদ্রদের নমস্কার, যারা পৃথিবীতে স্থিত, এবং অন্নই যাদের বাণতুল্য অস্ত্র (অর্থাৎ অন্ন সামান্য বস্তু হলেও অযথা অনুভক্ষণে, কদন্নভক্ষণে চৌর্য বা প্রবর্ত্য রোগ সমূহ উৎপাদিত হয়ে থাকে); তাদের উদ্দেশ্যে পূর্ব-দক্ষিণ-পশ্চিম-উত্তর-উর্ধ্বে দশ অঙ্গুলী যুক্ত করছি। তারা নমস্কার প্রাপ্ত হোক। তারা আমাদের রক্ষা করুক। তারা আমাদের সুখী করুক। আমরা যাদের দ্বেষ করি এবং যারা আমাদের দ্বেষ করে, আমরা তাদের এই রুদ্রদের চোয়ালের মধ্যে নিক্ষেপ করছি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *