১৪. শুক্লযজুর্বেদ – চতুর্দশ অধ্যায়

চতুর্দশ অধ্যায়

মন্ত্রঃ– ধ্রুবক্ষিতি যোনি ধ্রুবং যোনিমা সীদ সাধুয়া। উখ্যস্য কেতুং প্রথমং জুষাণাহঅশ্বিনাহ ধ্বষু সাদয়তামিহ ত্বা৷১৷কুলায়িনী ঘৃতবতী পুরুন্ধিঃ স্যানে সীদ সদনে পৃথিব্যাঃ। অভি ত্বা রুদ্রা বসবো গৃণৰ্ত্তিমা ব্রহ্ম পীপিহি সৌভগায়াশ্বিনাহধ্বর্য সাদয়তামিহ ত্বা ॥২॥ স্বৈর্দক্ষৈক্ষপিতেহ সীদ দেবানাং সুম্নে বৃহতে রণায়। পিতেবৈধি সূনব আ সূশেবা স্বাবেশা তন্ব সং বিশস্বাশ্বিনাহধ্বষু সাদয়তামিহ ত্ব৷৩৷৷ পৃথিব্যা পুরীষমস্যঙ্গো নাম তাং ত্বা বিশ্বে অভি গণন্তু দেবাঃ। স্তোমপৃষ্ঠা ঘৃতবতীহ সীদ প্রজাবদম্মে দ্রবিণা যজম্বাশ্বিনাহধ্বর্য সাদয়মিহ ত্ব৷৪৷ অদিত্যাস্থা পৃষ্ঠে সাদয়াম্যন্তরিক্ষস্য ধীং বিষ্টনীং দিশামধিপত্নীং ভুবননা। ঊর্মির্জন্সে অপামসি বিশ্বকর্মা ত ঋষিরশ্বিনাহধ্ব সাদয়তামিহ ত্বা।৫৷৷ শুক্রশ্চ শুচিশ্চ গ্রৈম্মাবৃত্ অগ্নেরন্তঃশ্লেষোহসি কল্পেং, দ্যাব-পৃথিবী কল্পামাপ ওষধয়ঃ কল্পন্তামগ্নয়ঃ পৃথম জ্যৈষ্ঠায় সব্রতাঃ। যে অগ্নয়ঃ সমনসোন্তরা দ্যাবাপৃথিবী ইমে। গ্রৈম্মাবৃতু অভিকল্পমানা ইন্দ্ৰমিব দেবা অভিসংবিশন্তু তয়া দেবতয়াহঙ্গিরস্ব ধ্রুবে সীদত৷৬৷৷ সজুঋতুভিঃ সজুবিধাভিঃ সজুৰ্দেবৈঃ সজুদৈবৈয়োনাধৈরগয়ে ত্বা বৈশ্বানরায়শ্বি নাহৰ্য সাদয়তামিহ ত্বা। সজুঋতুভিঃ সঙ্কুর্বিধাভিঃ সম্পূর্বসুভিঃ সজুদেবৈয়ো নাধৈরগয়ে ত্বা বৈশ্বানরায়শ্বিনাহধ্বর্য সাদয়তামিহ ত্বা। সম্পূঋতুভিঃ সজুর্বিধাভিঃ সজু রূদ্রৈঃ সজুদৈবৈয়োনাধৈরগয়ে ত্বা বৈশ্বানরায়শ্বিনাহধ্ব সাদয়তামিহ ত্বা। সজুঋতুভিঃ সজুবিধাভি সজুরাদিত্যৈঃ সজুদেবৈবয়োনাধৈরগয়ে ত্বা বৈশ্বানরায়শ্বি নাহৰ্য সাদয়তামিহ ত্বা। সজুঋতুভিঃ সজুর্বিধাভি সজুবিশ্বৈদেবৈঃ সজুৰ্দেবৈয়োনা ধৈরগয়ে ত্বা বৈশ্বানরায়শ্বিনাহধ্বষু সাদয়মিহ ত্বা॥৭॥ প্রাণম্মে পাহ্যপানম্মে পাহি ব্যানং মে পাহি চক্ষুর্ম উৰ্য্যা বিভাহি শ্রোত্রং মে শ্লোকয়। অপঃ পিন্বৌষধীর্জি দ্বিপাদব চতুষ্প পাহি দিবো বৃষ্টিমেয়।৮। মূর্ধা বয়ঃ প্রজাপতিচ্ছন্দঃ ক্ষত্রং বয়ো ময়ন্দং ছন্দো বিষ্টম্ভো বয়োহধিপতিচ্ছন্দো বিশ্বকর্মা বয়ঃ পরমেষ্ঠী ছন্দোবস্তো বয়ো বিবলং ছলো বৃষ্ণিবয়ো বিশালং ছন্দঃ পুরুষো বয়স্তন্দ্রং ছন্দো ব্যাম্রো বয়োহনাধৃষ্টং ছদঃ সিংহহ বয়দিচ্ছন্দো পষ্ঠবার্ড বয়ো বৃহতী ছন্দ উচ্চা বয়ঃ ককুপ ছন্দ ঋষভো বয়ঃ সততা বৃহতী ছদঃ৷৷৷৷ অনন্বয়ঃ পঙ্কিতচ্ছন্দো ধেনুর্বয়ো জগতী ছন্দ স্ত্যবিবয় খ্রিষ্টুপ ছন্দো দিত্যবায়ো বিরাটু ছন্দঃ পঞ্চাবিয়ো গায়ত্রী ছন্দ স্ত্রিবৎসোবয় উষ্ণি  ছন্দ র‍্যাড় বয়োহনুস্টপ ছদঃ ॥১০৷৷ ইন্দ্রাগ্নী অব্যথমানামিষ্টকাং দৃংহতং যুবহতং যুব৷ পৃষ্ঠেনদ্যাবাপৃথিবী অন্তরিক্ষং চবি বাধসে৷৷১১৷৷ বিশ্বকর্মা ত্বা সাদয়ত্বন্তরিক্ষস্য পৃষ্ঠে ব্যস্বতীং প্রথস্বতীমন্তরিক্ষং যচ্ছান্তরিক্ষং দৃংহান্তরিক্ষং মা হিংসীঃ। বিশ্বম্মৈ প্রাণায়াপনায় ব্যায়োদানায় প্রতিষ্ঠায়ৈ চরিত্রায়। বায়ুষ্কাহভি পাতু মহা স্বস্ত্যা ছর্দিষ শস্তমেন তয়া দেবতয়াহঙ্গিরস্বাদ ধ্রুব্রা সীদ৷৷১২।রাজ্ঞসি প্রাচী দিঘিরাডসি দক্ষিণা দিক্‌ সম্রাডসি প্রতীচী দিক স্বরাডসুদীচী দিগধিপত্নসি বৃহতী দি৷৷১৩৷ বিশ্বকর্মা ত্বা সাদয়ত্বন্তরিক্ষস্য পৃষ্ঠে জ্যোতিষ্মতী। বিশ্বস্মৈ প্রাণায়াপনায় ব্যানায় বিশ্বং জ্যোতির্যচ্ছ। বায়ু ষ্টেহধিপতিয়া দেবতয়াঙ্গিরস্বাদ বা সীদ।।১৪৷নভশ্চনভস্য বার্ষিকাবৃতু অগ্নেরন্তঃশ্লেষোহসি কল্পেং দ্যাবাপৃথিবী কল্পামাপ ওষধয়ঃ কল্পস্তামগ্নয়ঃ পৃথ মম জ্যৈষ্ঠ্যায় সব্রতাঃ। যে অগ্নয়ঃ সমনসোন্তরা দ্যাবাপৃথিবী ইমে। বার্ষিকাবৃত্ অভিকল্পমানা ইন্দ্ৰমিব দেবা অভিসং বিশন্তু তয়া দেবতয়াহঙ্গিরস্বাদ ধ্রুবে সীদত৷১৫৷ ইষশ্চোর্জশ্চ শারদাবৃতু অগ্নেরন্তঃশ্লেষোহসি কল্পেং দ্যাবাপৃথিবী কল্পামাপ ওষধয়ঃ কল্পন্তারগ্নয়ঃ পৃথম জ্যৈষ্ঠায় সব্রতাঃ। যে অগ্নয়ঃ সমনসোহরাদ্যাপৃথিবী ইমে।শারদাবৃতু অভিকল্পমানাইমিব দেবঅভিসংবিশ তয়া দেবতয়াহঙ্গির প্রবে সীদত৷৷১৬। আয়ুর্মে পাহি প্রাণং মে পাহ্যপানাং মে পাহি ব্যানং মে পাহি চক্ষুর্মে পাহি শ্রোত্রং মে পাহি বাচং মে পিন্থ মনো মে জিম্বা আনং মে পাহি জ্যোতির্মে যচ্ছ৷৷১৭৷৷ মা ছন্দঃ প্রমা ছন্দঃপ্রতিমা ছন্দো অশ্রীবয়চ্ছন্দ পংক্তিগুদ উষ্ণি ছন্দো বৃহতী ছন্দো অনুষ্টুপ ছন্দো বিরাট ছন্দো গায়ত্রী ছন্দ খ্রিষ্টপ ছন্দো জগতী ছন্দঃ ॥১৮। পৃথিবী ছন্দো হস্তরিক্ষং ছন্দো দ্যৌচ্ছন্দঃ সমাচ্ছন্দো নক্ষত্রাণি ছন্দো বা ছন্দো মন ছন্দঃ কৃষিচ্ছন্দো হিরণ্যং ছন্দো গৌচ্ছনন্দাহজাচ্ছন্দেহ। শচ্ছদঃ ॥১৯৷৷ অগ্নিদেবতা বাতো দেবতা সূর্যো দেবতা চন্দ্রমা দেবতা বসবো দেবতা রুদ্রা দেবতা হহদিত্য দেবতা মরুততা দেবতা বিশ্বে দেবা দেবতা বৃহস্পতিদেবতেন্দ্রো দেবতা বরুণো দেবতা৷২০মূর্ধাসি রাড় ধ্ৰুবাহসি ধরুণা ধসি ধরণী। আয়ুষে ত্বা বসে ত্বা কৃষ্যে ত্বা ক্ষেমায় ত্বা॥২১৷যন্ত্রী রাড় যসি রাড় যমনী ধ্রুবাহসি ধরিত্রী। ইষে ত্বোর্জে ত্বা রষ্যৈ ত্বা পোয় ত্বা নোকং তা ইন্দ্র৷৷২২৷আশুস্ত্রিবৃদ্ভান্তঃ পঞ্চদশশা ব্যোমা সপ্তদশো ধরুণ-একবিংশঃ প্রতূর্তিরষ্টাদশস্তপো নবদশোহভীবৰ্ত্তঃ সবিংশশা বর্চো দ্বাবিংশঃ সম্ভরণস্ত্রয়োবিংশো যোনিশ্চতুর্বিংশঃ গর্ভাঃ পঞ্চবিংশ ওজস্ক্রিণবঃ কুতুরেকত্রিংশঃ প্রতিষ্ঠা ত্রয়স্ত্রিংশো ব্ৰধস্য বিষ্টপং চতুস্ত্রিংশো নাকঃ ষট্‌ত্রিংশো বিবর্তোহাচত্বারিংশো ধং চতুষ্টোমঃ।২৩৷৷অগ্নের্ভাগগাহসি দীক্ষায় আধিপত্যং ব্ৰহ্ম স্পৃতং ত্রিবৃৎস্তোম। ইন্দ্রস্য ভাগোহসি বিষ্ণোরাধিপতাং ক্ষত্ৰং স্পৃতং পঞ্চদশ স্তোমঃ। নৃচক্ষসাং ভাগগাহসি ধাতুরাধিপত্যং জনিং স্পৃত সপ্তদশ স্তোমঃ। মিত্রস্য ভাগগাহসি বরুণস্যাধিপত্যং দিবো বৃষ্টিৰ্বাত স্মৃত একবিংশ স্তোমঃ।।২৪৷৷বসূনাং। ভাগগাহসি রূদ্রাণামাধিপত্যং চতুম্পাৎ স্পৃতং চতুর্বিংশ স্তোমঃ। আদিত্যানাং ভাগগাহসি মরুত্যমাধিপত্যং গর্ভা স্পতাঃ পঞ্চ বিংশ স্তোমঃ। অদিত্যৈ ভাগোহসি পুষ্ণ আধিপত্যমোজং স্পৃতং ত্রিণব স্তোমঃ। দেবস্য সবিতুর্ভাগোহসি বৃহস্পতেরাধি পত্যং সমীচীর্দিশ শৃশ্চতুষ্টোম স্তোমঃ ॥২৫৷ যবানাং ভাগোহস্যবানামধিপত্যং প্রজা স্পৃশ্চতুশ্চত্বারিংশ স্তোমঃ–ঋভূণাং ভাগোহসি বিশ্বেষাং দেবানামাধিপত্যং ভূতং স্পৃতং ত্রয়স্ত্রিংশ স্তোমঃ।।২৬৷৷ সহশ্চসহস্যশ্চ হৈমন্তিকাবৃতু অগ্নেরন্তঃ শ্লেযোহসি কম্লেত্যং দ্যাবাপৃথিবী কল্পশ্যামাপ ওষধয়ঃ কল্পন্তামগ্নয়ঃ পৃথম জ্যৈষ্ঠায় সব্রতাঃ। যেহঅগ্নয়ঃ সমনসোন্তরা দ্যাপৃথিবী ইমে। হৈমন্তিকাবৃত্ অভিকল্পমানা ইন্দ্ৰমিব দেবা অভিসংবিশন্তু তয়া দেবতয়াঙ্গিরস্ব বে সীদত৷২৭৷৷ একয়াস্তবত প্রজা অধীয় প্রজাপতিরধিপতিরাসীৎ। তিসৃভিবত ব্রহ্মাসৃজ্যত ব্ৰহ্মণম্পতিরধি পতিরাসীৎ। পঞ্চভিরস্তুত ভূন্যসৃজ্যন্ত ভূতানাং পতিরধিপতিরাসীৎ। সপ্তভিরস্তুত, সপ্ত ঋর্ষয়োহসৃজ্যন্ত ধাধিপতিরাসীৎ৷৷২৮৷৷ নবভিরম্ভবত পিতরোহসৃজ্যাদিতি রধিপত্নাসীৎ। একাদশভিরস্তুত ঋতবোহ সৃজন্তার্ত অধিপতয় আস সুয়োদশ ভিরস্তুত মাসা অসৃজ্যষ্ঠ সংবৎসরোহধিপতিরাসীৎ। পঞ্চদশভিরস্তুত ক্ষত্ৰমসৃজ তেন্দ্রোহধিপতিরাসীৎ। সপ্তদশভিরস্তুবত গ্রাম্যাঃ পশবোহসৃজ্যন্ত বৃহস্পতিরধি পতিরাসীৎ।২৯।নবদশভিরস্তুবত শূদ্ৰাৰ্যাবসৃজ্যেতামহোরাত্রে অধিপত্নী আস্তাম্। একবিংশত্যাস্তুবতৈকশফাঃ পশবোহসৃজ্যন্ত বরুণোহধিপতিরার্সীৎ। এয়োবিংশত্য বত ক্ষুদ্রাঃ পশবোহ সৃজ্যন্ত পুষাহধিপতিরাসীৎ। পঞ্চবিংশত্যা স্তুবতারণ্যাঃ পশবোহসৃজ্যন্ত বায়ুরধিপতিরাসীৎ। সপ্তবিংশত্যাহস্তুত দ্যাবাপৃথিবী ব্যৈতাং বসবো রুদ্ৰা আদিত্য অনুধ্যায় এবাধিপতয় আস৷৩০ নববিংশত্যাহম্ভবত বনস্পতয়োহসৃজ্যন্ত সোমোহধিপতিরাসীৎ। একত্রিংশতাহস্তুত প্রজা অসৃজ্যন্ত যবাশ্চায়বাশ্চাধিপতয় আস স্ত্রয়স্ত্রিংশতাহস্তুবত ভূতান্যাম্যন প্রজাপতিঃ পরমেষ্ঠ্যধিপতিরাসীৎ লোকং তা ইন্দ্র৷৷৩১।

 [কাণ্ড-৩১, মন্ত্র-১৬৫]

.

মন্ত্ৰার্থঃ– [এই চতুর্দশ অধ্যায়ে দ্বিতীয় চিতির মন্ত্র সংগৃহীত হয়েছে। এই দ্বিতীয় চিতি ভূমির উপরভাগে এবং অন্তরিক্ষলোকের নিম্নভাগে মান্য করা হয়। এর দেবতা,অশ্বিদেবতাদ্বয়। সর্বপ্রথম পাঁচটি অশ্বিনীসংজ্ঞক ইষ্টক চিতিতে রাখা হয়]।

১। হে ইষ্টকা! অচল নিবাস, অচল কারণশালিনী এবং উখাস্থ অগ্নির প্রথম স্থানকে সেবনকারিণী তুমি অচলা, অতএব রেতঃসিথেলা সংজ্ঞক শুভ ও অচলস্থানে প্রতিষ্ঠিত হও। দেবতাগণের যজ্ঞে অধ্বর্যুভাব-প্রাপ্ত দুই অশ্বিনই তোমাকে এই স্থানে প্রতিষ্ঠিত করুক৷

২। হে অশ্বিনী ইষ্টকা! রেতঃ সিগ্নক্ষণ স্থানে স্থিতিশালিনী, হোম-সাধনীয় ঘৃতে সঙ্গত এবং অনেক ইষ্টককে ধারণকারিণী তুমি দ্বিতীয় চিতির সুখদ স্থানে স্থিত হও। রুদ্র ও বসুগণ প্রভৃতি দেবতা তোমার এই চিতিতে স্থিত হওয়ার পর সতত স্তুতি করুক। হে ইষ্টকা! তুমি আমাদের এই মন্ত্রকে সফল করে অভিবর্ধিত করো এবং যজমানের সৌভাগ্যের নিমিত্ত এখানে স্থিত থাকো। দেবগণের অধ্বর্যু অশ্বিদ্বয় তোমাকে এই দ্বিতীয় চিতিতে স্থাপিত করুক৷৷

৩। বীর্যকে সুরক্ষিতশালিনী হে ইষ্টকা! আপন সমগ্র সামর্থ্যের সাথে দেবগণের সুখ ও অত্যধিক সৌন্দর্যের নিমিত্ত তুমি এই দ্বিতীয় চিতিতে স্থান গ্রহণ করো। সুখে সেবনীয়া তুমি, পুত্রের প্রতি পিতার সুখদ হওয়ার ন্যায় এইস্থানে চিতিতে স্থিত হয়ে অভিবৃদ্ধ হও। আপন সুখপ্রবেশ্য শরীরে তুমি এই স্থানে দ্বিতীয় চিতিতে প্রবেশ করো। হে ইষ্টকা! দেবগণের অধ্বর্যু অশ্বিদ্বয়ই তোমাকে এখানে স্থাপিত করুক৷৷

৪। হে ইষ্টকা! তুমি দ্বিতীয় চিতির পূরিকা; তুমি জলের কারণভূতা রস। সেই তুমি অশ্বিনী ইষ্টকাকে সকল দেবতা প্রশংসিত করে থাকে। ত্রিবৃদ ইত্যাদি স্তোম ও রথন্তর ইত্যাদি পৃষ্ঠবতী এবং অমৃতময় ঘৃতে সঙ্গত তুমি, হে ইষ্টকা! এই দ্বিতীয় চিতিতে স্থান গ্রহণ করো। হে ইষ্টকা! তুমি আমাদের সন্তানের সাথে সাথে ধন প্রদান করো। দেবগণের অধ্বর্যু অশ্বিনীকুমারদ্বয়ই তোমাকে, হে ইষ্টকা! এই স্থানে দ্বিতীয় চিতিতে স্থাপিত করুক৷

৫। অন্তরিক্ষলোকের ধারণকারিণী, পূর্ব প্রভৃতি দিকসমূহকে স্তম্ভিতকারিণী, ভূতমাত্রের স্বামিনী তুমি, হে অশ্বিনী ইষ্টকার ইষ্টকা! আমি তোমাকে এই প্রথম চিতির উপর স্থাপিত করছি। হে ইষ্টকা! তুমি জলের লহর (তরঙ্গ) এবং তার সারভূত রস। বিশ্বকর্মা প্রজাপতি তোমার দ্রষ্টা (সৃষ্টিকর্তা)। দেবতাগণের অধ্বর্যু অশ্বদ্বয় তোমাকে এই দ্বিতীয় চিতিতে স্থাপিত করুক।

৬। (ঋতব্যা সংজ্ঞক দুটি ইটকে চিতিতে ধারণীয়)-জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে গ্রীষ্ম ঋতু। হে ঋতব্য ইষ্টকা! তুমি এই দ্বিতীয় চিতির অন্দরে সংশ্লিষ্টশালিনী। তুমি দুই দ্যাবাপৃথিবীকে আমাদের অনুকূল করো। জল ও ওষধিগুলিকে আমাদের অনুকূল করো। তোমরা সকলে এক কর্মশালিনী হয়ে, হে ইষ্টকাসমূহ! আমার শ্রেষ্ঠত্বের নিমিত্ত নিয়োজিত হও। এই যে একমনা সকল অগ্নি (ইষ্টক) দ্যাবাপৃথিবীর মধ্যে স্থিত আছে– তারা এই দুই ঋতব্যা ইষ্টকাকে গ্রীষ্ম ঋতু কল্পনা করে (বুঝে) তাদের উভয়ে সঙ্গতা হোক; যেমন সকল দেবতা ইন্দ্রকে সম্প্রাপ্ত হয়ে থাকে। সেই দেবতার দ্বারা স্থাপিত হয়ে অঙ্গিরা ঋষির চয়নে ধ্রুবভাবে। যেমন স্থিত ছিলে, তেমনই আমাদের এই দ্বিতীয় চিতিতে, হে ঋতব্যা ইষ্টকা! তোমরা দুজনে অচল হয়ে স্থিত হও ৷

৭। (বৈশ্বদেবী সংজ্ঞক পাঁচটি হঁট চিতিতে ধারণীয়)–হে বৈশ্বদেবী ইষ্টকা! ঋতুগণের সাথে সমান প্রীতি, জলের সাথে সমান প্রীতি, দেবগণের সাথে সমান প্রীতি এবং বাল-যুবা-বৃদ্ধ ইত্যাদি অবস্থাকে সংযুক্তকারী প্রাণদেবতাগণের সাথে সমান প্রীতিযুক্ত তোমাদের–বৈশ্বদেবী ইষ্টকাগণের সকলের নেতা অগ্নির নিমিত্ত দেবগণের অধ্বর্যু অশ্বিদ্বয়ই এই দ্বিতীয় চিতিতে স্থাপন করুক। ঋতুসমূহের সাথে, জলের সাথে, বসুগণের সাথে এবং বাল্য ইত্যাদি অবস্থার সাথে বন্ধনকারী প্রাণদেবতার সাথে সমান প্রীতিযুক্তা তোমাকে–বৈশ্বদেবী ইষ্টকাকে বিশ্বের নেতা (বৈশ্বানর) অগ্নির নিমিত্ত দেবাধ্বর্য অশ্বিনদ্বয় এই দ্বিতীয় চিতিতে স্থাপিত করুক। হে ইষ্টকা! ঋতুসমূহ, জল, রুদ্রগণ এবং বাল্য ইত্যাদি অবস্থাগুলিকে বন্ধনকারী প্রাণদেবতার সাথে সমান প্রীতিযুক্তা তুমি বৈশ্বদেবী ইষ্টকাকে বিশ্বের নেতা অগ্নির নিমিত্ত দেবাধ্বর্য অশ্বিনীকুমারদ্বয়ই এই দ্বিতীয় চিতিতে স্থাপিত করুক। হে ইষ্টকা! ঋতুগণ, জল, আদিত্যবর্গ, এবং বাল্য ইত্যাদি অবস্থাগুলিকে সংযোগকারী প্রাণদেবতার সাথে সমান প্রীতিযুক্ত তোমাকে বৈশ্বাদেবী ইষ্টকাকে বিশ্বের নেতা অগ্নির নিমিত্ত দেবতাগণের অধ্বর্যু অশ্বিযুগলই এই দ্বিতীয় চিতিতে স্থাপিত করুক! ঋতুবর্গ, জলরাশি, বিশ্বদেবতাগণ ও বাল্য ইত্যাদি অবস্থা সমুদায়কে সংযুক্তকারী প্রাণদেবতাগণের সাথে সমান প্রীতিযুক্ত তুমি বৈশ্বদেবী ইষ্টকাকে বিশ্বের নেতা অগ্নির নিমিত্ত এই আমাদের দ্বিতীয় চিতিতে দেববর্গের অধ্বর্যু স্বয়ং অশ্বিনীকুমারদ্বয় স্থাপিত করুক৷৷

৮। (দ্বিতীয় চিতিতে প্রাণভৃৎ সংজ্ঞক পাঁচটি ইটকে ধারণীয়)–হে প্রাণভৃৎসংজ্ঞক ইষ্টকা! তুমি আমার প্রাণকে (অর্থাৎ প্রাণবায়ুকে) রক্ষা করো; তুমি আমার অপান বায়ুকে রক্ষা করো; তুমি আমার ব্যানবায়ুকে রক্ষা করো; আমার চক্ষুকে দূর পর্যন্ত দর্শনশালী করে দাও, আমার শ্রোত্রকে দূর পর্যন্ত শব্দ শ্রবণে সমর্থ করে দাও; জলকে বর্ধিত করো, ওষধিসমূহে প্রাণ বা বল ঢেলে দাও, দ্বিপদশালী মনুষ্য ইত্যাদিতে রক্ষা করো, চতুষ্পদশালী গো ইত্যাদি পশুগণকে রক্ষা করো, এবং দ্যুলোক হতে (সূর্য হতে) বৃষ্টি প্রবর্তন করো।

৯। (দক্ষিণ-উত্তর-পশ্চিম কোণে পাঁচটি-পাঁচটি করে এবং পূর্ব কোণে চারটি বয়স্যা সংজ্ঞক ইটকে ধারণীয়)-মূর্ধা প্রধান পশু-যেটি গায়ত্রী ছন্দের রূপ ধারণ করে তার নিকট হতে পালিয়ে গিয়েছিল, সেই পশুকে গায়ত্রী ছন্দ ও সেই পশুর বয়সের দ্বারা (বা তার বয়সী হয়ে) প্রজাপতি পুনরায় প্রাপ্ত হয়েছিলেন। হে বয়স্যা ইষ্টকা! সেই তোমাকে–গায়ত্রী ছন্দে সেই সেই অবস্থাধারী পশুরূপ প্রজাপতিস্বরূপিণীকে–আমি এই দ্বিতীয় চিতিতে ধারণ করছি। ময়ন্দছন্দের রূপে বল-প্রধান প্রজাপতি সেই বয়সকে ধারণ করে ময়ন্দ (অনিরুক্ত) পশুকে পুনরায় প্রাপ্ত হয়েছিলেন। সেই ময়ন্দপ্রজাপতিস্বরূপিণী তুমি বয়স্যা ইষ্টকাকে আমি এই দ্বিতীয় চিতিতে ধারণ করছি। অধিপতি ছন্দরূপ প্রজাপতি ধারক স্বভাব পশুকে তার অবস্থাসম্পন্ন হয়ে পুনরায় প্রাপ্ত হয়েছিলেন। হে অধিপতি ছন্দ রূপ প্রজাপতিস্বরূপিণী বয়স্যা ইষ্টকা! আমি তোমাকে এই দ্বিতীয় চিতিতে ধারণ করছি। পরমেষ্ঠীছন্দরূপ প্রজাপতি সর্বকর্মক্ষম পশুর বয়সী হয়ে, তাকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন। হে তৎস্বরূপিণী বয়স্যা ইষ্টকা! আমি তোমাকে দ্বিতীয় চিতিতে ধারণ করছি। (এই রকমে চার বয়স ও চার অবস্থাকে নিয়ে আট প্রকার স্বরূপশালী প্রজাপতি পনেরোটি পশুকে ধরেছিলেন। প্রজাপতির এই স্বরূপ অষ্টাক্ষরা গায়ত্রীই সংকেতিত করে। অর্থাৎ অষ্টাক্ষরা গায়ত্রীর জপে পনেরো প্রকার পশু (বা তাদের বল) প্রাপ্ত হওয়া যায়। একপদা নামে ছন্দের স্বরূপ ধারণ করে প্রজাপতি অজকে (ছাগকে) তার বয়সী হয়ে তাকে পুনরায় প্রাপ্ত হয়েছিলেন।) হে বয়স্যা ইষ্টকা! একপদাছরূপ প্রজাপতির স্বরূপশালিনী তুমি বয়স্যা ইষ্টকাকে আমি এই দ্বিতীয় চিতিতে ধারণ করছি। প্রজাপতি বিশাল (অর্থাৎ দ্বিপদা গায়ত্রী) ছন্দ রূপে সঞ্চনসমর্থ মেষকে তার আয়ুশালী হয়ে পুনঃপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। হে দ্বিপদাগায়ত্রীস্বরূপ প্রজাপতির স্বরূপশালিনী বয়স্যা ইষ্টকা! আমি তোমাকে এই চিতিতে ধারণ করছি। এইভাবে প্রজাপতি তন্দ্র (অর্থাৎ পংক্তি) ছন্দের স্বরূপ ধারণ করে তার আয়ুশালী হয়ে পুরুষকে, অনাধৃষ্ট (অর্থাৎ বিরাট) ছন্দের স্বরূপ ধারণ করে তার আয়ুশালী হয়ে ব্যাঘ্ৰকে, ছদি (বা অতিছন্দের) স্বরূপ ধারণ করে তার বয়সী হয়ে সিংহকে, বৃহতি ছন্দের স্বরূপ ধারণ করে পৃষ্ঠবাহ (পাঁচ বৎসরের কোনও) পশুকে পঞ্চবৎসর বয়সী হয়ে সেই পশুকে, ককুপ ছন্দের স্বরূপ ধারণ করে সেচনসমর্থ আয়ুশালী (অর্থাৎ বয়স্ক) পশুকে বয়স্ক হয়ে, সর্ব বৃহতী ছন্দের স্বরূপ ধারণ করে পূর্ণায়ু হয়ে পূর্ণ আয়ুশালী পশুকে বা বৃষভকে) পুনঃপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। অতএব আমিও, পংক্তিছন্দস্বরূপ প্রজাপতির স্বরূপশালিনী, বিরাটছন্দস্বরূপ প্রজাপতির স্বরূপশালিনী, অতিছন্দস্বরূপ প্রজাপতি স্বরূপশালিনী, বৃহতীছন্দস্বরূপ প্রজাপতির স্বরূপশালিনী, ককুপছন্দস্বরূপী প্রজাপতির স্বরূপরূপিণী, সর্ব বৃহতী ছন্দরূপী প্রজাপতির স্বরূপশালিনী, হে বয়স্যা ইষ্টকা! তোমাকে এই দ্বিতীয় চিতিতে ধারণ করছি৷৷

১০। পংক্তি ছন্দের স্বরূপ ধারণ করে প্রজাপতি অনাহ (অর্থাৎ বলীবর্দ)-কে তারই আয়ুসম্পন্ন হয়ে পুনরায় প্রাপ্ত করেছিলেন। এইভাবে প্রজাপতি জগতীছন্দের স্বরূপ ধারণ করে ধেনু (অর্থাৎ সদ্য প্রসবকারিণী সবৎসা গাভী)-কে তারই আয়ুসম্পন্ন হয়ে পুনরায় প্রাপ্ত করেছিলেন। এইভাবে প্রজাপতি জগতীছন্দের স্বরূপ ধারণ করে ধেনু (অর্থাৎ সদ্য প্রসবকারিণী সবৎসা গাভী)-কে তারই আয়ুসম্পন্ন হয়ে পুনরায় প্রাপ্ত হয়েছিলেন; ত্রিষ্টুপ ছন্দের স্বরূপ ধারণ করে বি (দেড় বৎসর বয়স্ক) পশুকে (বা অবিকে) ত্রিবর্ষীয় হয়ে পুনরায় প্রাপ্ত হয়েছিলেন; বিরাটু ছন্দের স্বরূপ ধারণ করে বহনসমর্থ দ্বিবর্ষীয় পশুকে দ্বিবর্ষীয় পুনঃপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। গায়ত্রী ছন্দের স্বরূপ ধারণ করে আড়াই বৎসরের পশুকে আড়াই বৎসর বয়সী হয়ে পুনঃপ্রাপ্ত হয়েছিলেন; উষ্ণীক ছন্দের স্বরূপ ধারণ করে তিন বৎসর বয়স্ক পশুকে ত্রিবর্ষীয় আয়ুশালী হয়ে পুনরায় প্রাপ্ত হয়েছিলেন; অনুষ্টুপ ছন্দের স্বরূপ ধারণ করে চার বৎসর বয়স্ক পশুকে চার বৎসরের আয়ুশালী হয়ে পুনঃপ্রাপ্তি হয়েছিলেন। অতএব পংক্তিছন্দস্বরূপী প্রজাপতির স্বরূপবতী, জগতীছন্দস্বরূপী প্রজাপতির স্বরূপধারিণী, ত্রিষ্টুপছন্দস্বরূপী প্রজাপতির স্বরূপশালিনী, বিরাটুছন্দস্বরূপী প্রজাপতির স্বরূপসম্পন্না, গায়ত্রীছন্দস্বরূপী প্রজাপতির স্বরূপভূতা, উষ্ণিকছন্দস্বরূপী প্রজাপতির স্বরূপবাহিতা, এবং অনুষ্টুপছন্দস্বরূপী প্রজাপতির স্বরূপবাহিকা, হে বয়স্যা ইষ্টকা! আমি তোমাকে এই দ্বিতীয় চিতিতে ধারণ করছি৷

১১। (এই স্থান হতে তৃতীয় চিতির চয়নমন্ত্র প্রারম্ভ হচ্ছে। সর্বপ্রথম স্বয়মাতৃগ্না ইষ্টকার নির্বাচন)–হে ইন্দ্র ও অগ্নি! তোমরা দুজন এই অচলা ইষ্টকাকে তৃতীয় চিতিতে দৃঢ় করো। হে স্বয়মাতৃগ্না ইষ্টকা! তোমার বেদির উপরস্থ চিতিতে চয়ন করে যাও এবং নিজের উপর অন্য ইষ্টকার ভার বহনশালিনীরূপে প্রস্তুত হয়ে দ্যাবাপৃথিবী তথা অন্তরিক্ষকে বহ্ন করো৷

১২৷ হে স্বয়মাতৃগ্না ইষ্টকা! অবকাশ ও বিস্তারের সাথে যুক্ত তুমি স্বয়মাতৃগ্না ইষ্টকাকে স্বয়ং প্রজাপতিই এই তৃতীয় তৃতীয় চিতির অন্দরে স্থাপিত করুক। হে ইষ্টকা! তুমি এই তৃতীয় চিতির নিয়মন করো। তুমি এই তৃতীয় চিতিকে দৃঢ় করো। হে ইষ্টকা! আমাদের এই তৃতীয় চিতিকে তুমি খণ্ডিত করো না। সমস্ত প্রাণ-আপন-ধ্যান-উদান-সমান (বায়ু); গৃহস্থিতি ও যজ্ঞ ইত্যাদি কর্মের নিমিত্ত (তুমি এই তৃতীয় চিতিতে) প্রতিষ্ঠিত হও। এই তৃতীয় চিতিতে স্থাপিত করে তোমাকে অন্তরিক্ষের দেবতা বায়ু সর্বদা সুরক্ষিত করে রাখুক। এই সমস্ত যোগক্ষেম এবং আপন অত্যন্ত শান্ত তেজের সাথে তোমাকে রক্ষা করুক। হে ইষ্টকা! সেই বায়ুদেবতার দ্বারা সুরক্ষিত তুমি এই আমাদের তৃতীয় চিতিতে উপবিষ্ট হয়েই স্থিরতার সাথে স্থির হও, যেমন তুমি অঙ্গিরা ঋষির তৃতীয় চিতিতে দৃঢ়তার সাথে স্থিত হয়ে ছিলে ৷

১৩।(দিশ্যা সংজ্ঞক পাঁচটি ইট ধরণীয়)–হে দিশ্যাসংজ্ঞক ইষ্টকা! তুমি রাজমানা পূর্বদিশাস্বরূপিণী। তৎস্বরূপা তোমাকে আমি এই তৃতীয় চিতিতে চয়ন করছি। তুমি গায়ত্রীরূপা। হে ইষ্টকা! বিশেষ রূপে রাজমানা তুমি দক্ষিণ দিকের (এবং ত্রিষ্টুপ ছন্দের) স্বরূপশালিনী। সেই তুমি হেন তৎস্বরূপিণীকে আমি এই তৃতীয় চিতিতে চয়ন করছি। সম্যক রাজমানা হে ইষ্টকা! তুমি পশ্চিম দিকের (এবং জগতী ছন্দের) স্বরূপা। তস্বরূপা তোমাকে আমি এই তৃতীয় চিতিতে নির্বাচন করছি। হে ইষ্টকা! স্বয়ং শোভমানা তুমি উত্তর দিকের (এবং অনুষ্টুপ ছন্দের) স্বরূপিণী। তৎস্বরূপা সেই তোমাকে আমি এই তৃতীয় চিতিতে চয়ন করছি। হেইষ্টকা! তুমি সকল প্রকারে পালনকারিণী হয়ে ঊর্ধ্ব দিকের (এবং বৃহতী, ছন্দের) স্বরূপধারিণী। তৎস্বরূপা তোমাকে আমি এই তৃতীয় চিতিতে নির্বাচিত (বা স্থাপিত) করছি৷৷

১৪। (দ্বিতীয় চিতিতে স্থাপিত বিশ্বজ্যোতিষ নামক হঁটের উপরেই একটি অন্য বিশ্বজ্যোতিষ ইটকে তৃতীয় চিতিতেও চয়ন করণীয়)-হে ইষ্টকা! তুমি জ্যোতিষ্মতী (অর্থাৎ বায়ুরূপা)-কে স্বয়ং প্রজাপতিই এই তৃতীয় চিতিতে বিশ্বজ্যোতিষ ইষ্টকার পৃষ্ঠে চয়ন করেন। হে বিশ্বজ্যোতিষ ইষ্টকা! সমস্ত প্রাণ-অপান ব্যান-উদান বায়ুর দৃঢ়তার নিমিত্ত তুমি এই তৃতীয় চিতিতে দৃঢ় থাকো, তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করো। বায়ু তোমার অধিদেবতা। সেই বায়ুদেবতার দ্বারা অনুজ্ঞাত হয়ে তুমি এই তৃতীয় চিতিতে, সেইভাবে স্থিত হও, যেভাবে অঙ্গিরা ঋষির তৃতীয় চিতিতে দৃঢ়তার সাথে স্থিত হয়ে ছিলে।

১৫। (দ্বিতীয় চিতিতে স্থাপিত ঋতব্যা ইটের উপর তৃতীয় চিতিতেও দুটি ঋতব্যা হঁট স্থাপনীয়)–শ্রাবণ-ভাদ্র বর্ষা সম্বন্ধী মাস। হে ঋতব্যা ইষ্টকা! তুমি এই চিতির অন্দরে যুক্ত হয়ে দৃঢ়তা-সম্পাদনকারিণী। তুমি এই চিতিকে দৃঢ়তা-সম্পন্ন করে এতে অনুষ্ঠিতব্য বিবিধ যজ্ঞকে সফল করণের দ্বারা দ্যাবাপৃথিবীকে আমাদের অনুকূল করো; জলকে–ওষধিসমূহকে অনুকূল করো এবং সকল ইষ্টকাকে একসাথে আমার যজমানের শুভশালিনী করে এই নির্বাচিত সকল ইষ্টকাকে আমার শ্রেষ্ঠতা লাভের অনুকূল করে দাও; (অর্থাৎ এই বেদিতে সম্পন্নকৃত যজ্ঞের পরিণামস্বরূপ আমি যেন সকলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হতে পারি–এমন করো)। এই দ্যাবাপৃথিবীর অন্দরে এই যে সমান প্রতিশালী অগ্নিসমূহ আছে–তারাও সকলের এই দুই ঋতব্যা ইষ্টকাকে বর্ষা ঋতু কল্পনা করে আমার (অর্থাৎ যজমানের উর্ষের) নিমিত্ত যুক্ত হোক, যেমন দেবগণ ইন্দ্রকে বড় (অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ) রূপে মান্য করে তার শরণ গ্রহণ পূর্বক পরিচর্যায় যুক্ত হয়। (অর্থাৎ এই ইষ্টকার প্রভাবে আমাতে প্রজাজন আশ্রয়ণ করুক)। সেই দেবতা হতে অনুজ্ঞাত, অঙ্গিরা ঋষি সদৃশ হে ইষ্টকাগণ! তোমরা দৃঢ়তার সাথে এই তৃতীয় চিতিতে স্থিত হও।

১৬। (অন্য ঋতব্য সংজ্ঞক হঁটকে ধারণীয়)–আশ্বিন ও কার্তিক শরৎ ঋতুর মাস। হে ঋতব্যা ইষ্টকা! তুমি এই চিতির সংশ্লেষিকা। হে ঋতব্যা ইষ্টকাগণ! তোমরা শরৎ ঋতুর অনুরূপ দ্যাবাপৃতিবীকে আমাদের অনুকূল করো, জল ও ওষধিগুলিকে অনুকূল করো ইষ্টকাসমূহের ন্যায় শুভকার্যশালিনী হয়ে আমার জ্যেষ্ঠতাকে সিদ্ধ করো। এক সমান বিচারশালিনী যত ইষ্টকাসমূহ এই দ্যাবাপৃথিবীর (অর্থাৎ দ্বিতীয় ও তৃতীয় চিতির) মধ্যে আছে–তারা সকলে এই দুই ঋতব্যা ইষ্টকাকে শ্রেষ্ঠ শরৎ ঋতু সম্বন্ধী আশ্বিন-কার্তিক কল্পনা করে এদের আশ্রয়ণ (আশ্রয় গ্রহণ) করুক; যেমন সকল দেবতা ইন্দ্রকে অধিশ্রিত করে। হে ঋতব্যা ইষ্টকা! সেই শরতের অধিষ্ঠাতৃ দেবতার দ্বারা অনুজ্ঞাত হয়ে, অঙ্গিরা ঋষির তৃতীয় চিতিতে স্থিরতার সাথে স্থিত হওয়ার ন্যায়, তুমি আমাদের এই তৃতীয় চিতিতে স্থিরতার সাথে স্থিত হও।

১৭। (দেশ প্রাণভৃৎ ইষ্টকাকে ধারণীয়)–হে প্রাণভৃৎ ইষ্টকা! তুমি আমার আয়ুকে রক্ষা করো; আমার প্রাণকে (প্রাণবায়ুকে) রক্ষা করো; আমার অপানকে (আপানবায়ুকে) রক্ষা করো; আমার ব্যান (ব্যানবায়ুকে) রক্ষা করো; আমার চক্ষু দুটিকে রক্ষা করো; আমার শ্রোত্রদ্বয়কে রক্ষা করো; আমার বাক্যকে ফলাচ্য কামনার দ্বারা পূর্ণ করো), আমার মনকে প্রসন্ন করো; আমার আত্মাকে রক্ষা করো এবং আমাকে প্রকাশ (বিস্তার বা প্রসিদ্ধি) প্রদান করো ৷৷

১৮। (বারোটি বারোটি করে ছন্দস্যা সংজ্ঞক ইষ্টকাকে বাছাই করণীয়)–হে ইষ্টকা এই পৃঙ্খীলোকই মাছন্দ; এই অন্তরিক্ষলোকই মাছন্দ; এই দ্যুলোকই প্রতিমাছন্দ; তিন লোক হতে প্রাপ্তিশীল এই অন্নই অস্ত্রীবয় ছন্দ তুমি পংক্তি ছন্দ; তুমি উষ্ণিক ছন্দ; তুমি বৃহতী ছন্দ; তুমি অনুষ্টুপ ছন্দ; তুমি বিরাট ছন্দ;তুমি গায়ত্রী ছন্দ;তুমি ত্রিষ্টুপ ছন্দ এবং তুমি জগতী ছন্দরূপে বর্তমান।তুমি মা-প্রমা-প্রতিমা-প্রভৃতি ছন্দ-স্বরূপ। আমি তোমাকে এই তৃতীয় চিতিতে ধারণ করছি৷

১৯।পৃথিবী ছন্দ, অন্তরিক্ষ ছন্দ, দ্যুলোক ছন্দ, বর্ষ ছন্দ, নক্ষত্র ছন্দ, মন ছন্দ, কৃষি ছন্দ, স্বর্ণ ছন্দ, গাভী ছন্দ, ছাগ ছন্দ, এবং অশ্ব ছন্দ। হে ইষ্টকা! তুমি পৃথিবী-অন্তরিক্ষ-দ্যৌ প্রভৃতি ছন্দস্বরূপা। আমি তোমাকে এই তৃতীয় চিতিতে ধারণ করছি৷৷

২০৷ অগ্নি দেবতা, বায়ু দেবতা, সূর্য দেবতা, চন্দ্রমা দেবতা, অষ্টবসু দেবতা, দ্বাদশ আদিত্য দেবতা, একাদশ রুদ্র দেবতা, মরুৎগণ দেবতা, বিশ্বদেব দেবতা, বৃহস্পতি দেবতা, ইন্দ্র দেবতা, এবং বরুণ দেবতা হন। হে ইষ্টকা! তুমি অগ্নি-বায়ু-সূর্য প্রভৃতি দেবগণের স্বরূপশালিনী। আমি তোমাকে এই তৃতীয় চিতিতে ধারণ করছি৷৷

২১৷ (বালখিল্যা–অর্থাৎ বাল্যব্যাপীও অন্তরে অভাবশালিনী সাতটি অপরা এবং সাতটি পরা হঁটকে নির্বাচন করণীয়)–দুই হস্ত, দুই ভুজ, গ্রীবা, সন্মুখ এবং নাভিসহ নাভির নিম্নভাগস্থ দুই জঙ্ঘা, দুই জানু, এবং দুই পাদে বিদ্যমান প্রাণই পরা সংজ্ঞক। এই অত্যন্ত সান্নিধ্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে বালখিল্য বলা হয়। হে বালখিল্যা ইষ্টকা! তুমি মূর্ধার ন্যায় শ্রেষ্ঠ, অতএব তুমি রাজমানা হও। হে ইষ্টকা! তুমি অত্যন্ত দৃঢ়; তুমি লোককে ধারণকারিণী। হে ইষ্টকা! তুমি ধারণশালিনী পৃথিবী। তোমাকে আয়ুর নিমিত্ত, ব্রহ্মতেজের নিমিত্ত, কৃষির নিমিত্ত এবং তোমাকে যোগক্ষেমের নিমিত্ত এই তৃতীয় চিতিতে স্থাপন করছি।

২২। হে ইষ্টকা! তুমি নিয়মে যুক্ত হয়ে রাজমানা। নিয়ন্ত্রিতা তুমি অন্যকেও নিয়ন্ত্রণশালিনী। স্থিরা হয়ে তুমি অচলা (অর্থাৎ ভূমিরূপা)। অন্নের নিমিত্ত তোমাকে, বলের নিমিত্ত তোমাকে, গো-অশ্বধনের নিমিত্ত তোমাকে তথা পোষণের নিমিত্ত তোমাকে এই তৃতীয় চিতিতে ধারণ করছি৷৷

২৩। (এরপর চতুর্থ চিতির চয়ন আরম্ভ হচ্ছে। এই কণ্ডিকায় আঠারোটি মন্ত্রে আঠারোটি ইট নির্বাচনীয়)–হে ইষ্টকা! তুমি ব্যাপনশীল ত্রিবৃৎস্তোম, তৎস্বরূপা তোমাকে এই চতুর্থ চিতিতে ধারণ করছি। অথবা, তুমি ত্রিলোককে আবর্তনকারী বায়ু; তৎস্বরূপা তোমাকে এই চিতিতে নির্বাচন করছি। বজ্ররূপ যে পঞ্চদশ স্তোম আছে, বা যা পনেরো দিন পর্যন্ত শরীর বৃদ্ধি করে দীপ্তিশালী চন্দ্র; হে ইষ্টকা! তস্বরূপা তোমাকে এই চতুর্থ চিতিতে ধারণ করছি। প্রজাপতি বা সম্বৎসরই সপ্তদশ স্তেম; হে ইষ্টকা! তৎস্বরূপা…। ধারক অর্থাৎ প্রতিষ্ঠাভূত বা আদিত্যই ধরুণ একবিংশস্তোম। হে ইষ্টকা! তস্বরূপা….। দ্বাদশ মাস, পঞ্চ ঋতু এবং এক স্বয়ং সম্বৎসরই অষ্টাদশ অবয়বশালী প্রকৃষ্ট ত্বরাযুক্ত অষ্টাদশস্তোম। হে ইষ্টকা! তৎস্বরূপা…. ঊনবিংশ অঙ্গশালী তপনশীল সম্বৎসরই নবদশস্তোম; হে ইষ্টকা! তস্বরূপা….। সকলকে আবর্তশীল বিংশ অবয়বী সম্বৎসরই সংবিংশস্তোম; হে ইষ্টকা! তৎস্বরূপা….। বলপ্রদ বা অত্যন্ত বলশালী এবং বাইশটি অঙ্গশালী সম্বৎসরই দ্বাবিংশস্তোম। হে ইষ্টকা! তস্বরূপা… সকলকে পালন পোর্ষণকরণশালী এবং তেইশ অঙ্গশালী সম্বৎসরই এয়োবিংশস্তোম; হে ইষ্টকা! তস্বরূপা…। সকলের উৎপত্তির কালরূপ আধার তথা চৌত্রিশ অঙ্গশালী সম্বৎসরই চতুর্বিংশস্তোম; হে ইষ্টকা!তস্বরূপা…।  সামের গর্ভশীল বা তেরো মাস হয়ে সকল ঋতুর গর্ভস্বরূপ-সম্পন্ন এই সম্বৎসরই পঞ্চবিংশস্তোম; হে! ইষ্টকা! তৎস্বরূপা….। অত্যন্ত তেজস্বী বজ্ররূপ ত্রিনবস্তোমই বা সাতাশ অঙ্গশালী বলবান্ এই সম্বৎসরই ত্রিনবস্তোম; হে ইষ্টকা! তৎস্বরূপা…! যজ্ঞে অত্যন্ত উপযোগী একবিংশস্তোম অথবা সকল প্রাণীর কর্তা সম্বৎসরই একবিংশস্তোম; হে ইষ্টকা! তস্বরূপা.। হে ইষ্টকা স্থিতির নিমিত্ত তুমি ক্রয়স্ত্রিংশস্তোম, বা সকলকে আপনাতে প্রতিষ্ঠিত করণশালী এবং তৃতীয় অঙ্গশালী এই সম্বৎসরই এয়োস্ত্রিংশস্তোম; হে ইষ্টকা! তৎস্বরূপা…। সূর্যকে স্বরাজ্য(ঈশ্বরত্ব) প্রদানকর্তা চতুস্ত্রিংশস্তোমের স্বরূপসম্পন্ন অথবা সূর্যকে স্বরাজ্য (অর্থাৎ ঈশ্বরত্ব) দানশীল এবং চৌত্রিশ অঙ্গযুক্ত এই সম্বৎসবের স্বরাজশালিনী তুমি; হে ইষ্টকা! তৎস্বরূপা…। স্বর্গপ্রদ ষট্‌ত্রিংশস্তোম বা ছত্রিশ অঙ্গশালী এবং সর্বথা দুঃখাভাবশালী (দুঃখহীন) সম্বসরের স্বরূপশালিনী তুমি; হে ইষ্টকা! তোমাকে….। সামের আবর্তন-বিবর্তনে যুক্ত অষ্টাচত্বারিংশস্তোম বা প্রাণীবর্গের আবর্তন-বিবর্তনের কর্তা এবং আটচল্লিশ অঙ্গশালী সম্বসরের স্বরূপশালিনী তুমি। হে ইষ্টকা! আমি তোমাকে ….। জগতের আধার চার দিকের দ্বারা স্থূয়মান হওয়ার কারণে বায়ুস্বরূপ অথবা ত্রিবৎ পঞ্চদশ-সপ্তদশ ও একবিংশস্তোমের সমূহে চতুষ্টোমের স্বরূপশালিনী তোমা হেন ইষ্টকাকে আমি এই চতুর্থ চিতিতে ধারণ করছি।

২৪। (এই দশ মন্ত্রে দশটি স্পৃৎ সংজ্ঞক ইটকে ধারণীয়। এদের মৃত্যুমোহিনী বলা হয়)–হে সৃৎ ইষ্টকা! তুমি অগ্নির ভাগ এবং তোমার উপর বাণীর আধিপত্য রয়েছে। সেই তুমি হেন এই ইষ্টককে আমি চতুর্থ চিতিতে নির্বাচন করছি। তোমার ত্রিবৃৎস্তোমের দ্বারা ব্রাহ্মণকে রক্ষা করো। হে ইষ্টকা! তুমি ইন্দ্রের ভাগ। তোমাতে বিষ্ণুর আধিপত্য রয়েছে। পঞ্চদশস্তোমে তুমি জাতিকে রক্ষা করো। তুমি হেন সেই ইষ্টককে আমি এই চতুর্থ চিতিতে ধারণ করছি। মনুষ্যগণের ভাল-মন্দ কর্মের দর্শনশালী দেবগণের, হে ইষ্টকা! তুমি ভাগ হও। তোমাতে ধাতার আধিপত্য আছে। সপ্তদশস্তোমের দ্বারা তুমি বৈশ্যজাতিকে রক্ষা করেছিলে। তোমাকে আমি…। হে ইষ্টকা! তুমি মিত্রের (বা প্রাণের) ভাগ হও। তোমার উপর বরুণের (বা অপানের) আধিপত্য রয়েছে। একবিংশস্তোমে তুমি দ্যুলোক হতে বৃষ্টিকে ও বায়ুকে সুরক্ষিত রেখেছিলে। তোমাকে আমি এই চতুর্থ চিতিতে নির্বাচিত করছি৷৷

২৫। হে ইষ্টকা! তুমি বসুগণের ভাগ। তোমার উপর রুদ্রের আধিপত্য রয়েছে। চতুর্বিংশস্তোমের দ্বারা তুমি চতুষ্পদবিশিষ্ট গো-ইত্যাদিকে রক্ষা করেছিলে। সেই তোমাকে আমি এই চতুর্থ চিতিতে নির্বাচন করছি। হে ইষ্টকা! তুমি আদিত্যের ভাগ। তোমার উপর মরুৎত্বর্গের আধিপত্য আছে। পঞ্চবিংশস্তোমে তুমি সকল প্রাণী গর্ভ-মৃত্যু হতে রক্ষা প্রাপ্ত হয়। তোমাকে আমি চয়ন করছি। হে ইষ্টকা! তুমি অদিতির (অর্থাৎ পৃথ্বীর) ভাগ; তোমার উপর পূষার আধিপত্য; ত্রিণবস্তোমে তুমি ওজ বলকে রক্ষা করে থাকো। তোমাকে আমি চয়ন করছি। হে ইষ্টকা! তুমি সবিতাদেবের ভাগ; তোমার উপর বৃহস্পতির আধিপত্য; তুমি চতুষ্টোমে সর্বসঞ্চারযোগ্যা দিক সমূহ রক্ষা পায়। তোমাকে আমি চয়ন করছি।

২৬। হে ইষ্টকা! তুমি পূর্ব পক্ষগণের ভাগ; তোমার উপর অপর পক্ষগণের আধিপত্য; চতুশ্চত্বারিংশস্তোমের দ্বারা তুমি প্রজাগণকে রক্ষিত করে থাকো। তোমাকে আমি চয়ন করছি। হে ইষ্টকা! তুমি ঋতুগণের ভাগ; তোমার উপর বিশ্বদেবগণের আধিপত্য; তুমি ত্রয়স্ত্রিংশস্তোমের দ্বারা প্রাণীমাত্রকেই রক্ষা করে থাকো। আমি তোমাকে চয়ন করছি৷৷

২৭। (দুটি ঋতব্যা ইষ্টকাকে ধারণীয়) মার্গশীর্ষ (অগ্রহায়ণ) ও পৌষ হেমন্ত ঋতুর অবয়ব মাস। হে ঋতব্যা ইষ্টকা! তুমি এই চিতির অন্দরে সংশ্লিষ্ট করণশালিনী। দ্যাবাপৃথিবীকে আমার অনুকূল করো। জল ও ঔষধিসমূহকে আমার অনুকূল করো। শেষ সকল ইষ্টকা একসঙ্গে আমার প্রিয়কারিণী হয়ে আমার জ্যেষ্ঠতাকে সিদ্ধ করুক। যে ইষ্টকাই এই তৃতীয় ও চতুর্থ চিতির মধ্যে বিদ্যমান–তারা সকলে এই দুই ঋতব্যা ইষ্টকাকে হেমন্তঋতুরূপে দুই সমজ্ঞাত হোক; যেমন–দেবতাগণ ইন্দ্রের আশ্রয়ণ করে থাকে; সেইভাবে এই দুই ইষ্টকাকে আশ্রয়ণ করুক। হে ইষ্টকা! সেই হেমন্তাভিমানী দেবতার দ্বারা অনুজ্ঞাত হয়ে তুমি আমাদেরও চতুর্থ চিতিতে স্থির হয়ে স্থিত হও, যেমন পূর্বকালে অঙ্গিরা ঋষির চিতিতে দৃঢ়তার সাথে স্থিত হয়ে ছিলে।

২৮। প্রজাপতি একটি বাণীতে (অর্থাৎ বাক্যে) পরমাত্মার স্তব করেছিলেন। তখন প্রজাগণ উৎপন্ন হয়েছিল। সেই সময় সেই প্রজাগণের একমাত্র স্বামী (অর্থাৎ অধিপতি) ছিলেন প্রজাপতিই। প্রজাপতি প্রাণ-উদান ব্যানের (বায়ুর) দ্বারা স্তুতি করেছিলেন। তখন ব্রাহ্মণগণের সৃষ্টি হয়েছিল। ব্রাহ্মণগণের অধিপতি ছিলেন ব্ৰহ্মণস্পতি। প্রজাপতি চারটি প্রাণ এবং পাঁচটি মনে স্তুতি করেছিলেন। তখন ভূত (অর্থাৎ অন্য প্রাণী) উৎপন্ন করা হয়েছিল। ঐ উৎপন্ন প্রাণিমাত্রের অধিপতি ছিলেন ভূতপতি। প্রজাপতি সাত শিরস্থ প্রাণে পরমাত্মার স্তুতি করেছিলেন। তখন সপ্তর্ষি উৎপন্ন হয়। তাদের অধিপতি ছিলেন ধাতা।

২৯।  প্রজাপতি সাত শিরস্থ এবং দুই নিম্নস্থ প্রাণের পরমাত্মার স্তুতি করেন। তখন পিতৃগণের (অগ্নিঘাত্ত ইত্যাদিগণের) সৃষ্টি হয়। আদিতি তাদের স্বামিনী (অর্থাৎ পালয়িত্রী) ছিলেন। প্রজাপতি একাদশটি প্রাণে স্তুতি করেছিলেন; তাতে ঋতুসমূহ উৎপন্ন হয়। তখন ঋতুগণের অধিপতি দেবতাই তাদের অধিপতি ছিলেন। প্রজাপতি তেরোটি প্রাণে স্তবন করলে ক্রমপ্রাপ্ত দ্বাদশ এবং মলমাস (দুই অমাবস্যা যুক্ত মাস) সহ ত্রয়োদশ মাস উৎপন্ন হয়। সম্বৎসর তাদের অধিপতি ছিলেন। প্রজাপতি পঞ্চদশটি প্রাণে ভবন করলে ক্ষত্রিয় জাতি উৎপন্ন হয়েছিল। ইন্দ্র তাদের অধিপতি ছিলেন। প্রজাপতি সপ্তদশ প্রাণে বন করার ফলে গ্রাম্য পশুর উৎপত্তি হয়। বৃহস্পতি তাদের অধিপতি ছিলেন৷৷

৩০। প্রজাপতি ঊনবিংশ প্রাণে স্তুতি করেছিলেন; তখন শূদ্র ও বৈশ্যের উৎপত্তি হয়; অহোরাত্র তাদের স্বামী (অর্থাৎ পালক) ছিলেন। প্রজাপতি একবিংশ প্রাণে বন করলে এক খুর বিশিষ্ট পশুগণ সৃষ্টি হয়; বরুণ তাদের অধিপতি ছিলেন। প্রজাপতি এয়োবিংশ প্রাণে স্তবন করলে ক্ষুদ্র পশু সৃষ্ট হয়; পূষা তাদের অধিপতি ছিলেন। প্রজাপতি পঞ্চবিংশ প্রাণে ঔবন করেছিলেন; তাতে জংলী (অর্থাৎ বন্য) পশু সৃষ্ট হয়। বায়ু তাদের অধিপতি ছিলেন। প্রজাপতি সপ্তবিংশ প্রাণে স্তন করেছিলেন; তখন দ্যাবাপৃথিবী (দ্যুলোক ও ভূলোক) পৃথক্ হয়েছিল এবং বসু রুদ্র-আদিত্যগণেরও পৃথকত্ব সম্ভব হয়েছিল। তারাই দ্যাবাপৃথিবীর অধিপতি হয়েছিলেন।

৩১। প্রজাপতি ঊনবিংশ প্রাণে স্তন করেছিলেন, তখন অশ্বত্থ বৃনস্পতিসমূহ সৃষ্ট হয়; সোম তাদের অধিপতি ছিলেন। প্রজাপতি একত্রিংশ প্রাণে বন করলে প্রজাবর্গ সৃষ্ট হয়; পূর্বপক্ষ ও অপরপক্ষই তাদের অধিপতি ছিলেন। প্রজাপতি ত্রয়স্ত্রিংশ প্রাণে (অর্থাৎ হস্ত ও পদের কুড়িটি অঙ্গুলী, দশটি প্রাণ, দুটি পদ ও আত্মা) স্তুতি করেছিলেন; তখন সর্বভূত (অর্থাৎ সকল প্রাণী) সুখী ও শান্ত হয়েছিল। পরম স্থানে স্থিত (পরমেষ্ঠী) প্রজাপতি তাদের অধিপতি হয়েছিলেন ৷৷

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *