০২. শুক্লযজুর্বেদ – দ্বিতীয় অধ্যায়

দ্বিতীয় অধ্যায়

মন্ত্রঃ– কৃষ্ণোইস্যাখরেষ্ঠোইগয়ে ত্বা জুষ্টং পোক্ষামি। বেদিরসি বহিঁষে ত্বা জুষ্টাং পোক্ষামি। বহিরসি ভ্যস্তুা জুষ্টং প্রেক্ষামি৷৷৷৷৷ অদিত্যৈ ব্যুন্দনমসি। বিষ্ণোস্তুপোহসূর্ণদসং ত্বা স্তণামি স্বাসস্থাং দেবেভ্যো ভূবপতয়ে স্বাহাভূবনপতয়ে স্বাহা ভূতানাং পতয়ে স্বাহা।২৷৷ গন্ধর্বত্ত্বা বিশ্বাবসু পরিদধাতু বিশ্বস্যারিষ্ট্যৈ যজমানস্য পরিধিরসগ্লিরিড় ঈড়িতঃ। ইিস্য বাহুরসি দক্ষিণো বিশ্বস্যারিষ্ট্যৈ যজমানস্য পরিধিরস্যাগ্লিরিড় ঈড়িতঃ। মিত্রাবরুণেী দোত্তরতঃ পরিধত্তান্ত্রবেণ ধৰ্ম্মণা বিশ্বস্যারিষ্ট্যৈ যজমানস্য পরিধিস্যগ্নিরিড় ঈড়িতঃ।।৩। বীতিহোত্রং ত্বা কবে দ্যুমন্তং সমিধীমহি। অগ্নে বৃহত্তমধ্বরে।৪। সমিদসি সূর্যত্ত্বা পুরাত পাতু কস্যাশ্চিদ ভিশস্ত্যৈ। সবিতুর্বাহু স্থ ঊর্ণম্মদসং ত্বা স্কুণামি স্বাসস্থং দেবেভ্য আ ত্বা বসবো ৰুদ্ৰা আদিত্যাঃ সদস্তু।৫৷ ঘৃতাচ্যসি জুহুর্নাম্না সেদং প্রিয়েণ ধান্ধা প্রিয়ংসদ আসীদ ঘৃতাচ্যসুপভৃন্নান্না সেদং প্রিয়েণ ধান্না প্রিয়ংসদ আসীদ। ঘৃতাচ্যসি বা নাম্না সেদং প্রিয়েণ ধান্না প্রিয়ংসদ আসীদ প্রিয়েণ ধান্মা প্রিয়ং সদ আসীদ। ধ্রুবা অসদনুতস্য যোনৌ তা বিষ্ণো পাহি। পাহি যজ্ঞং পাহি যজ্ঞপতিং পাহি মাং যজ্ঞন্য৷৬৷ অগ্নে বাজজিদ্বাজং ত্বা সরিষ্যন্তং বাজজিতং সম্মার্জি। নমো দেবেভ্যঃ স্বধা পিতৃভ্যঃ সুয়মে ভূয়াস্ত৷৭৷৷ অস্কন্নমদ্য দেবেভ্য আজ্যং সংভিয়াসমণা বিষ্ণো মা ত্বাবক্ৰমিষং– বসুমতীমগ্নে তে ছায়ামুপষেং বিষ্ণো স্থানমসীত ইন্দ্রো বীর্যমকৃপো দূর্বোহধ্বর আস্থাৎ৷৷৷৷ অগ্নে বের্তোত্রং বেদূতমবতাং ত্বাং দ্যাবাপৃথিবী অব ত্বং দ্যাবাপৃথিবী স্বিষ্টকৃদ্দেবেভ্য ইন্দ্র আজ্যেন হবিষা ভূৎস্বাহা সং জ্যোতিষা জ্যোতিঃ ॥৯৷৷ ময়ীদমিন্দ্র ইন্দ্রিয়ং দধাত্বস্মন্ রায়ো মঘবানঃ সচন্তাম্। অস্মাকং সত্ত্বাশিষঃ সত্যা নঃ সত্ত্বাশিষ। উপহৃতা পৃথিবী মাতোপ মাং পৃথিবী মাতা হুয়তামগ্নিরাগ্নীপ্রাৎস্বাহা।।১০৷ উপহুতো দ্যোপিতোপ মাং দ্যৌষ্পিতা স্বয়তামগ্নিরাগ্নীঘ্রাৎ স্বাহা। দেবস্য ত্বা সবিতুঃ প্রসবেংশ্বিনোর্বাহুভ্যাং পূষ্ণো হস্তাভ্যাম্। প্রতিগৃহ্নাম্যগ্নেবাসেন প্রাশ্লামি৷৷১১৷ এতং তে দেব সবিতর্যজ্ঞং প্ৰাহুবৃহস্পতয়ে ব্ৰহ্মণে। তেন যজ্ঞমব তেন যজ্ঞপতিং তেন মামবা১২৷ মনো জুতিৰ্জুষতামাজ্যস্য বৃহম্পতির্যজ্ঞমিমং তনোত্বরিষ্টং সমিমং দধাতু। বিশ্বে দেবাস ইহ মায়ামমাম্প্রতিষ্ঠ৷৷১৩৷ এষা তে অগ্নে সমিওয়া বর্ধর্ষ চা চ প্যায়স্ব। বর্ধিষীমহি চ বয়মা চ প্যাসিষীমহি। অগ্নে বাজজিদ্বাজং বা সস্বাংসং বাজজিতং সম্মাৰ্ম্মি॥১৪৷৷ অগ্নীষোময়োরুজ্জিতিমনুজ্জেষং বাজস্য মা প্রসবেন তোহামি। অগ্নীমোমৌ তমপনুদতাং যোহশ্মদ্বেষ্টি যং চ বয়ং দ্বিম্মে বাজস্যৈনং প্রসবেনাপোহামি। ইন্দ্রাগ্ন্যোরুজ্জিতিমনুষেং বাজস্য মা প্রসবেন তোহমিইন্দ্রাগ্নী তমপনুদতাং যোহপ্যান্বেষ্টি যং চ বয়ং দ্বিগ্নে বাজস্যৈনং প্রসবেনাপোেহামি৷৷১৫৷৷ বসুভ্যস্তা রুদ্রেভ্যাদিত্যে ভ্যস্তা সংজানাথাং, দ্যাবাপৃথিবী মিত্রাবরুণী ত্বাবৃষ্ট্যাবতাম। ব্যন্তু বয়োক্তং রিহাণা মরুতাং পৃষতীর্গচ্ছ বশা পৃশিভূত্বা দিবং গচ্ছ ততো নো বৃষ্টিমাবহ। চক্ষুষ্প অগ্নেহসি চক্ষুমে পাহি।১৬৷৷ যং পরিধিং পৰ্য্যধত্থা অগ্নে দেব পণিভিগুহ্যমানঃ। তং ত এমনু জোষং ভরাম্যেষ নেদপচেতয়াতা। অগ্নেঃ প্রিয়ং পাথোহপীতম্।।১৭। সংস্রবভাগা ষো বৃহন্তঃ প্রস্তরেষ্ঠাঃ পরিধেয়াশ্চ দেবাঃ। ইমাং বাচমভি বিশ্বে গণন্ত আসদ্যস্মিন্ বহিষি মাদয়ং স্বাহা বাট।।১৮ঘৃতাচী হো ধুর্যে পাতং সুশ্নে স্তুঃ সুমে মা। ধত্তম। যজ্ঞ নমশ্চ ত উপ চ যজ্ঞস্য শিবে সংতিষ্ঠস্ব স্কিষ্টে মে সংতিষ্ঠস্ব৷৷১৯ অগ্নেহদায়োহশীতম পাহি মা দিদ্যোঃ পাহি প্রসিত্যৈ পাহি দুরিষ্ট্যৈ পাহি দুরদুন্যা অবিষং নঃ পিতুং কৃণু সুষদা যোনৌ স্বাহা বাডগ্নয়ে সংবেশপতয়ে স্বাহা। সরস্বত্যৈ যশোভগিন্যৈ স্বাহা৷৷২০ বেদোহসি যেন ত্বং দেব বেদ দেবেভ্যো বেদোহভবস্তেন মহং বেদো ভূয়াঃ। দেবা গাতুবিদো গাতুং বিত্ত্বা গাতুমিত। মনসম্পত ইমং দেব যজ্ঞং স্বাহা বাতে ধাঃ।।২১। সংবহিরংক্তাং হবিষা ঘৃতেন সমাদিত্যৈর্বসুভিঃ সম্মরুদ্ভিঃ। সমিন্দ্রো বিশ্বদেবেভিরক্তাং দিব্যং নভো গচ্ছতু যত্ স্বাহা।২২৷৷ কত্ত্বা বিমুঞ্চতি সত্বা বিমুঞ্চতি কস্মৈ ত্বা বিমুঞ্চতি তস্মৈ ত্বা বিমুঞ্চতি। পোয়, রক্ষসাং ভাগোহসি৷৷২৩৷৷ সং বৰ্চসা পয়সা সং তনুভিরগন্মহি মনসা সং শিবেন। ত্বষ্টা সুদত্রো বিদধাতু রায়োহনুমাঞ্জুতন্বে যদ্বিলিস্টম।।২৪৷৷ দিবি বিষ্ণুৰ্য্যক্রং জাগতেন ছন্দসা তততা নির্ভক্তে যোহম্মাৰ্ঘোষ্টি যং চ বয়ং দ্বিমোহন্তরিক্ষে বিষ্ণুংস্ত ত্রৈভেন ছন্দ তততা নির্ভক্তো যোহপ্যান্বেষ্টি যং চ বয়ং দ্বিষ্ম পৃথিব্যাং বিষ্ণুংস্ত গায়ত্রণ ছন্দসা ততো নির্ভক্কো যোইপ্যান্বেষ্টি যং চ বয়ং দ্বিন্মোহম্মাদন্না দস্যৈ প্রতিষ্ঠায় অগম্ম স্বঃ সং জ্যেতিষাভূম।২৫৷৷ স্বয়ম্ভুরসি শ্রেষ্ঠো রশ্মিৰ্বৰ্চোদা অসি বৰ্চো মে দেহি। সূর্যস্যাবৃত-মন্বাবর্তে৷৷২৬৷ অগ্নে গৃহপতে সুগৃহপতিয়াহগ্নেহহংগৃহপতিনা ভূয়াসং সুগৃহপতিত্ত্বং ময়াহগ্নে গৃহপতিনা ভূয়াঃ। অস্ফুরি ণৌ গার্হপত্যানি সন্তু শতং হিমাঃ সূর্যস্যাবৃতমন্ব বর্তে।।২৭৷৷ অগ্নে ব্রতপতে ব্ৰতমচারিষং তদশকং তন্মেহরাধীদমহং য এবাস্মি সোহস্মি৷৷২৮ অগ্নয়ে কব্যবাহনায় স্বাহা। সোমায় পিতৃমতে স্বাহা। অপহতা অসুরা রক্ষাংসি বেদিষদঃ ২৯৷৷ যে রূপাণি প্রতিমুঞ্চমানা অসুরাঃ সন্তঃস্বধয়া চরস্তি। পরাপুররা নিপুনরা যে ভরন্ত্যগ্নিষ্টান্নোকাঙ্ণু দাত্যম্মা৷৷৩০। অত্র পিতরো মাদয়ধ্বংযথাভাগমাবৃষায়ধ্বম্। অমীমদন্ত পিতরো যথাভাগমাবৃষায়িষত।৩১৷ নমো বঃ পিতরো রসায় নমো বঃ পিতরঃ শোষায় নমো ৰঃ পিতরো জীবায় নমো বঃ পিতরঃ সুধায়ৈ নমো বঃ পিতরো ঘোরায় নমো বঃ পিতরো মনবে নমো বঃ পিতরঃ পিতরো নমো বো গৃহান্নঃ পিতরো দত্ত সততা বঃ পিতরো দেষ্মৈতঃ পিতরো বাস আধ।।৩২। আধত্ত পিতো গর্ভং কুমারং পুষ্করজ। যথেই পুরুষোহসত্৷৷৩৩৷৷ ঊর্জং বহন্তীরমৃতং ঘৃতং পয়ঃ কীলালং পরিতম্। স্বধা স্থ তর্পয়ত মে পিতৃ৩৪৷৷

.

 মন্ত্ৰার্থঃ– ১। হে মন! তুমি কলঙ্ক কুলুষিত হয়ে আছ, সৎকর্ম-সহযুত হও। অগ্নিদেবের প্রীতির নিমিত্ত তোমাকে সুসংস্কৃত করছি। [কৃষ্ণ-কলঙ্ককুলুষিতঃ; আখরেষ্ঠঃসৎকর্মসহযুতঃ; অগ্নয়ে–অগ্নিদেবায়; জুষ্টং–প্রীত্যর্থং]। অথবা,-হে মন! তুমি অঙ্গারের মতো কলঙ্ক কলুষিত হয়ে আছ। ভগবানের প্রতি সাধনের জন্য অগ্নি-সযোগে (জ্ঞানাগ্নিতে দগ্ধ করে) তোমাকে পবিত্র ও সুসংস্কৃত করছি। [আখরেষ্ঠঃ– অঙ্গারসদৃশঃ কৃষ্ণঃ কলঙ্ককলুষিতঃ: জুষ্টং–ভগবৎপ্রীত্যর্থং; অগ্নয়ে–অগ্নিসংযোগায়, জ্ঞানাগ্নিনা] (১)। হে ধী। তুমি দেবীস্বরূপা, সৎকর্মাশ্রয়ভূতা হও। সকর্ম সাধনের জন্য (বৰ্হির মতো)। তোমাকে দেবপ্রিয় ও সুসংস্কৃত করছি। [বহিষে–সৎকর্মসাধনাঃ] (২)। হে মন! তুমি দৰ্ভরূপ যজ্ঞ ইত্যাদি সঙ্কর্মের সাধক হও। সৎকর্ম-সাধনের জন্য তোমাকে দেবপ্রিয় ও সুসংস্কৃত করছি। (তুমি। ভাগবৎ-কর্মে নিয়োজিত হও)। [বর্হিঃ–দৰ্ভরূপং, যজ্ঞাদিসৎকর্মসাধনং; সুগভ্যঃ– হবনীয়দানপাত্রেভ্যঃ, সৎকৰ্ম্মসাধনেভ্যঃ] (৩)।

২। হে মন! সেই অনন্ত-স্বরূপ ভগবানে কার্যসম্পাদনের জন্য ভক্তিরসার্স হও। [অদিতৈ-অনন্তস্বরূপায়, ভগবৎকর্মসাধনায়; বুন্দনং-ভক্তিরসাং ]।(১)। হে মন! তুমি বিশ্বব্যাপক পরমেশ্বরের ধারক হও; অথবা,তুমি যজ্ঞ ইত্যাদি সৎকর্মের অনুষ্ঠানের চূড়াস্বরূপ হও। [–বিষ্ণোঃব্যাপকস্য পরমেশ্বরস্য, যাগাদিসঙ্কর্মানুষ্ঠানস্য; স্তুপঃ-ধারক, শিখেব, চূড়া ইব] (২)। হে মন! তুমি স্নিগ্ধ সত্ত্বভাবযুত হও; সর্বদেবভাবের আবাসস্থান করবার উদ্দেশ্যে তোমাকে আসন-রূপে বিস্তৃত করছি।(৩)। হে মন! তোমাকে স্বাহামন্ত্রে পূত করে ভবপতির উদ্দেশ্যে সম্প্রদান করছি। [ভুবপতয়ে–অন্তরিক্ষস্বামিনে] (৪)। হে মন তোমাকে স্বাহা-মন্ত্রে পূত করে ভুবনপতির উদ্দেশ্যে সম্প্রদান করছি। [ভুবনপতয়ে–চতুর্দশভুবনস্বামিনে]।(৫)। হে মন! তোমাকে স্বাহা-মনে পূত করে সেই ভূতপতির–সেই বিশ্বস্রষ্টার উদ্দেশ্যে সম্প্রদান করছি। [ভূতানাং পতয়ে–সর্বসৃষ্টিস্বামিনে]।(৬)। [ভাষ্যানুসারে এই কণ্ডিকার মন্ত্র কটি এক কৌতুকপ্রদ উপাখ্যানের সাথে সম্বন্ধ-বিশিষ্ট। ব্যাখ্যাও কখনো প্রোক্ষণীকে, কখনো কুশসঙঘকে, কখনো যজ্ঞবেদীকে, কখনো বা উপাখ্যানকল্পিত তিন দেবতাকে সম্বোধন করে নির্বাহিত হয়ে থাকে। উপাখ্যানের কাহিনীটি এই দেব-উদ্দেশ্যে হবিঃ প্রক্ষেপকালে মৃত্তিকাতে হবিঃ অংশ পতিত হয়।অগ্নিদেবের তিনটি ভাই ছিল; তারা যজ্ঞভাগ পাবার জন্য বিবাদ উপস্থিত করেন। শেষে বষট্‌কারের ভয়ে মনের ক্ষোভে তারা ভূগর্ভে জলের মধ্যে লুকিয়ে থাকেন। কিছুকাল পরে অগ্নিদেবের হৃদয়ে ভ্রাতৃশোক উথলে ওঠে। তিনি তখন ভ্রাতৃগণের অনুসরণে জলের মধ্যে প্রবেশ করেন। তখন চার ভ্রাতার মধ্যে সম্ভব স্থাপিত হয় এবং ভ্রাতৃ তিনজনের ভয় দূরে যায়। তখন যজ্ঞের আর কোন ভাগ অবশিষ্ট না থাকায় অগ্নিদেব তাদের জন্য ভূপতিত হবিঃর অংশ (ঘৃত) প্রাপ্য বলে নির্দেশ করেন। কথিত হয়, সেই তিন ভাই ভুবপতি, ভুবনপতি ও ভূপতি নামে প্রখ্যাত হয়েছিলেন। কণ্ডিকার শেষ তিনটি মন্ত্র তাদেরই সম্বোধনে প্রযুক্ত]।

 ৩। হে মন! সর্বব্যাপী সৰ্বর্গ সেই ভগবান, সকল রকমের হিংসকগণের হিংসা হতে তোমাকে রক্ষা করেন। স্তবনীয় অগ্নির মতো (অর্থাৎ জ্ঞানাগ্নির সংশ্রবযুত হয়ে) তুমি বিশ্বের সকল রকম শত্রু হতে অর্চকের সংরক্ষক হও। [বিশ্বাবসুঃ–সর্বব্যাপী; অগ্নিঃ ইড–অগ্নিবুজ জ্ঞানাগ্নিসংশ্রবযুতং ভুত্ব] (১)। হে মন! তুমি ভগবানের দক্ষিণ বাহুস্বরূপ (শ্রেষ্ঠ অঙ্গ) হও। স্তবনীয় অগ্নির মতো (অর্থাৎ জ্ঞানাগ্নির সংশ্রবযুত হয়ে) তুমি বিশ্বের সকল রকম শত্রু হতে অর্চকের সংরক্ষক হও। [ইন্দ্রস্য–ভগবতঃ, ঈডিতঃ– স্তবনীয়] (২)। হে মন! তোমার সত্যধর্মপালন-ফলে, জ্ঞান-ভক্তিরূপ সেই মিত্রাবরুণ দেবতা দুজন তোমাকে সর্বতোভাবে শ্রেষ্ঠলোকে স্থাপন করুন। স্তবনীয় অগ্নির মতো (অর্থাৎ জ্ঞানাগ্নির সংশ্রবযুত হয়ে) তুমি বিশ্বের সর্বরকম শত্রু হতে অর্চকের সংরক্ষক হও। [ধ্রুবেণ ধৰ্ম্মণা–তব সত্যধর্মপালন ফলেন; মিত্রাবরুণৌ–জ্ঞানভক্তিরূপৌ দেবৌ, ভগবৎ-বিভূতিদ্বয়ৌ, উত্তরতঃ–শ্রেষ্ঠলোকে]।(৩)। [এই কণ্ডিকার মন্ত্রগুলি মনঃ সম্বোধন-মূলক]।

৪। হে ত্রিকালজ্ঞ জ্ঞানস্বরূপ অগ্নিদেব! মহান্ এবং দীপ্তিমান্ আপনাকে আমার ইষ্টলাভের জন্য, এবং হিংসারহিত যজ্ঞে (আমার সকর্মনিবহে–আমার হৃৎপ্রদেশে) প্রতিষ্ঠিত করছে। [ঋগ্বেদ ৫ মণ্ডল।২৬ সূক্ত।৩ঋক; প্রচলিত অর্থ,–হে অগ্নি! তুমি জ্ঞানসম্পন্ন, হব্যভোজী, দীপ্তিমান ও মহৎ; আমরা যজ্ঞস্থলে তোমাকে প্রজ্বলিত করি। কিন্তু এখানে। কবে ত্রিকালজ্ঞ, অগ্নে–জ্ঞানস্বরূপ হে অগ্নিদেব; বীতিহোত্রং–অভিলাষপরিপূরণার্থং। ভাবার্থ হে জ্ঞানস্বরূপ দেব! আপনি আমার হৃদয়ে প্রদীপ্ত হোন]।

৫। হে মন! তুমি সমিধ অর্থাৎ জ্ঞানাগ্নির দীপক হও(১)। হে মন! দেববিভূতির সম্যকরূপে অৰ্চনার জন্য (প্রতিষ্ঠার জন্য) সেই পূর্ণজ্যোতিঃস্বরূপ (জ্ঞানময়) সূর্যদেব, সর্বতোভাবে তোমাকে পালন করুন।(২)। হে মনঃসম্বন্ধী কর্মযোগ ও ভক্তিযোগ! তোমরা সেই সৎ-জ্ঞান-প্রেরক সবিতৃ-দেবতার দুই হস্তস্বরূপ হও (৩)। হে মন! তুমি স্নিগ্ধসত্ত্বভাবযুত হও। সকল দেবভাবের আবাসস্থান করবার জন্য, তোমাকে আস্তীর্ণ করছি।(৪)। হে মন! আশ্রয়স্থানভূত দেবগণ, শাসকস্থানীয় ঘোররূপ দেবগণ এবং জ্যোতিঃস্বরূপ (জ্ঞানস্বরূপ) দেবগণ তোমাকের প্রসারিত করুন।(৫)। [আধ্যাত্মিক পক্ষে মন্ত্রার্থের স্বরূপ দেওয়া হলো। সেই বিচারে মন্ত্রগুলির মধ্যে তৃতীয়টির সম্বোধ্য মনঃসম্বন্ধযুত কর্মযোগ ও ভক্তিযোগ। অবশিষ্টগুলি সাধারণভাবে মনঃ-সম্বোধন সূচক। তবে, ভাষ্যানুসারে এই কণ্ডিকার মন্ত্রগুলির যে প্রচলিত অর্থ হয়, জিজ্ঞাসু পাঠকের জন্য, তা নিবেদিত হলো। –যজ্ঞাগ্নিতে প্রজ্বলিত প্রথম সমিধ অর্পণ করবার পর, আর বেদী স্পর্শ না করে সেই সমিধূকে লক্ষ্য করে প্রথম মন্ত্র উচ্চারিত হয়–হে ইষ্মকাষ্ঠ! তুমি সমিধ হও, অগ্নিকে দীপ্তিমান্ করো। তারপর আহবনীয়ের প্রতি লক্ষ্য করে দ্বিতীয় মন্ত্র উচ্চারিত হয়–হে আহবনীয়! পুরোভাগের সকল রকম বিঘ্ন হতে সূর্যদেব তোমাকে রক্ষা করুন। তৃতীয় মন্ত্রের জন্য দুটি কুশ তির্যক ভাবে রাখতে হয়; তার উপর প্রস্তর স্থাপন উদ্দেশ্য থাকবে। সেই অনুসারে মন্ত্রে অর্থ হয়–হে তৃণদ্বয়! তোমরা সবিতৃদেবের বাহু হও। অর্থাৎ, প্রস্তরধারণের জন্য তোমরাই সূর্যের বাহুস্বরূপ। চতুর্থ মন্ত্রে সেই কুশদ্বয়ের উপর প্রস্তর মননে দর্ভমুষ্টি স্থাপন করে বলা হয়–হে প্রস্তর! দেবগণের উপবেশনের জন্য তোমাকে বিস্তৃত করলাম। তুমি উপাসনের মতো কোমল কোমল হও। পরিশেষে সেই আস্তরণে করস্পর্শ করে পঞ্চম মন্ত্র উচ্চারিত হয়–বসুগণ, রুদ্রগণ, আদিত্যগণ (সবনত্রয়াভিমানী দেবতা তিনজন) তোমাতে এসে উপবেশন করুন।কর্মকাণ্ড শিক্ষার জন্য এই প্রচলিত মন্ত্ৰার্থই উপযোগী। আধ্যাত্মিক পক্ষে নয়। আধ্যাত্মিক পক্ষে বসবঃ-(বসুগণ নয়) নিবাসভূতা দেবাঃ; রুদ্রাঃ-(রুদ্রগণ নয়) শাসক, ঘোররূপাঃ দেবতাঃ আদিত্যা–(আদিত্যগণ নয়) জ্যোতিস্বরূপাঃ জ্ঞানাধারাঃ দেবাশ্চ]

৬। হে ধি! তুমি সত্ত্বভাবান্বিতা হয়ে থাক; নামে তুমি জুহু (হবনপাত্র স্বরূপ, সুক) হও (অর্থাৎ তোমার নাম জুহু হোক); এমন হয়ে তুমি, প্রিয়বস্তুর আধার সত্ত্বভাবের সাথে আমার হৃদয়রূপ আসনে অধিষ্ঠিত হও।(১)। হে ধি! তুমি সত্ত্বভাবান্বিতা হয়ে থাক; নামে তুমি উপভৃৎ (দেবসমীপে আজ্য-ধারণকত্রী, সম্ভবপোষিকা সতী) হয়ে, আমার হৃদয়ে অধিষ্ঠিত হও।(২)। হে ধি! তুমি সত্ত্ববাবান্বিতা হয়ে থাক; নামে তুমি ধ্রুবা (স্থিরতাবিশিষ্টা, স্থৈর্যশালিনী, নিত্যস্বরূপা সতী) হয়ে আমার হৃদয়ে অধিষ্ঠিত হও (৩)। হে-ধি! তুমি এইভাবে প্রিয়বস্তুর আধারস্বরূপ সত্ত্বভাব ইত্যাদির সাথে আমার হৃদয়াসনে অধিষ্ঠিত হও।(৪)। হে বিশ্বব্যাপক দেবতা (বিষ্ণু)! সত্যের উৎপত্তিস্থান আমার হৃদয়ে নিত্যস্বরূপ যে সত্ত্বভাব ইত্যাদি বিদ্যামান আছে, সেই সকলকে আপনি রক্ষা করুন; আমার যজ্ঞকে (সত্ত্ব ইত্যাদি কার্যকে) রক্ষা করুন; আমার যজ্ঞ পালক সভাবকে রক্ষা করুন।(৫)। হে দেব! অর্চনাকারী আমাকে (এই সংসার-পারাবার থেকে) পরিত্রাণ করুন।(৬)। [এই কণ্ডিকার প্রথম চারটি মন্ত্র ধীকে সম্বোধন করে প্রযুক্ত এবং শেষোক্ত মন্ত্র দুটিতে বিশ্বব্যাপক দেবতাকে (বিষ্ণুকে) সম্বোধন করা হয়েছে]।

৭। সত্ত্বভাববিশিষ্ট (বাজজিৎ) হে। জ্ঞানস্বরূপ দেব (অগ্নে)! সত্ত্বভাব-সম্পাদনের উপযুক্ত সত্ত্বভাবের প্রতিবন্ধকতানাশক (বাজজিতং) আপনাকে আমি আমার হৃদয়-দেশে সম্যক্ প্রদীপ্ত করছি।(১)। দেবভবসমূহকে নমস্কার করছি (তারা আমাকে প্রাপ্ত হোক)।(২)।পিতৃগুণ সমূহকে উদ্দেশ্য করে স্বধা উচ্চারণ করছি। তদ্‌গুণাবলীকে আহ্বান করছি (সেই গুণসমূহ আমাতে সঞ্জাত হোক) (৩)। হে দেবভাব ও পিতৃগুণ, তোমরা উভয়ে আমার জন্য সুন্দররূপে সংযত হও।(৪)

 ৮। অদ্য (ইদানীং) আমি দেববিভূতিসমূহ লাভ করবার জন্য, হবিঃস্বরূপ শুদ্ধ-সত্ত্বভাবকে সম্যকরূপে ধারণ বা পোষণ করছি। [আজং-হবিঃস্বরূপং শুদ্ধসত্ত্বভাবং]।(১)। বিশ্বব্যাপক হে দেব! আমি আপনার শরণাগত হচ্ছি; আপনি, চরণাশ্রয়-দানে আমাকে রক্ষা করুন। অথবা, বিশ্বব্যাপক হে দেব! আমি পদের দ্বারা আপনাকে আক্রমণ করছি না (অর্থাৎ, আপনি বিশ্বব্যাপক বলে আমার পাদস্পর্শজনিত দোষ হবে না)। [প্রথম অন্বয় অবক্ৰমিষং অবক্ৰমণং করোমি, তব শরণাগতো ভবামি; অঙিঘণা–চরণাশ্রয়দানেন; মা-মাং। দ্বিতীয় অন্বয় অঙিঘ্ৰণা–পাদেন; মা অবক্ৰমিষং–অবক্ৰমণং মা করোমি] (২)। জ্ঞানস্বরূপ হে দেব! আপনি বিষ্ণুর (বিশ্বব্যাপক দেবতার) আধারস্বরূপ হয়ে থাকেন; আপনার ধনযুক্ত আশ্রয়রূপ ছায়াকে আমি আশ্রয় করছি।(৩)। হে পরমেশ্বর! আপনি, আমার এই হৃদয়ে শত্রুনাশক সামর্থ্য বিস্তার করুন; তাহলে, শক্রকৃত হিংসারহিত হয়ে আমার যজ্ঞ ঊর্ধ্বগতি লাভ করবে (অর্থাৎ, রিপুশ কর্তৃক প্রতিহত না হয়ে আপনার সান্নিধ্যলাভে সমর্থ হবে) (৪)

৯। হে জ্ঞানস্বরূপ দেব (অগ্নে)! আপনি হোতৃকর্ম ও হবনীয়বস্তু জানেন এবং দূতকর্মও জ্ঞাত আছেন।(১)। হে জ্ঞানাগ্নি! আপনাকে আকাশ ও পৃথিবীস্থ দেবগণ (আমার হৃদয়ে) পালন করুন।(২)। হে জ্ঞানাগ্নি! আপনি স্বর্গের ও মর্তের দেবভাবকে (আমার হৃদয়ে) পালন করুন; পরমেশ্বর, আমাদের দত্ত হবনীয় শুদ্ধসত্ত্বভাবে প্রীতি লাভ করে আমাদের দেবভাবপ্রাপ্তির পক্ষে অতিশয় হিতকারী হোন; আমাদের হুত বস্তু সুন্দরভাবে হুত হোক।(৩) জ্ঞানাগ্নির প্রভাবে আমরা পরম জ্যোতিঃকে (পরব্রহ্মকে) সম্যভাবে প্রাপ্ত হই।(৪)

১০৷ সেই ভগবান্ ইন্দ্রদেব আমার অন্তর্ভূত এই ইন্দ্রিয় ইত্যাদির কর্মকে (সমস্ত বীর্যকে) আমার অভ্যন্তরে স্থাপন করুন; অর্থাৎ, ভগবানের অনুগ্রহে আমার ইন্দ্রিয়ের স্থৈর্য সংসাধিত হোক; পরমসুখসাধক ধনসমূহ (মোক্ষ ইত্যাদি) আমার প্রতি বর্ষিত হোক; অর্থাৎ, ভগবানের অনুগ্রহে আমি যেন পরমসুখলাভে সমর্থ হই। প্রার্থনাকারী আমাদের অভীষ্ট পূর্ণ হোক; আমাদের মঙ্গল অবিচলিত হোক; অর্থাৎ, ভগবানের অনুকম্পায় আমাদের মঙ্গল অবিচ্ছিন্ন থাকুক।(১)। সকলের উপাস্যা দৃশ্যমানা পঞ্চভূতাত্মিকা এই পৃথিবী (সকল হবনীয় সামগ্রীর) জননীস্থানীয়া; অর্থাৎ, স্কুল-সূক্ষ্ম সকল আবহনীয় তাতেই উৎপন্ন। মাতা পৃথিবী (সকল ভাবের উৎপাদয়িত্রী দেবী) এই প্রার্থনাকারী আমাকে (সকলরকম) হবনীয়-সামগ্রী প্রদান করেন। কর্মাগ্নিপোষণকারী আমার হৃদয়োৎপন্ন জ্ঞান যথাপ্রযুক্ত হোক; অর্থাৎ, আমার কর্মের দ্বারা সজ্ঞিত জ্ঞান, যথাপ্রযুক্ত হয়ে ভগবানকে প্রাপ্ত হোক।(২)।

১১। সকলের উপাস্য তেজঃস্বরূপ (পুরুষ) সত্ত্বভাবের পোষক হন। সত্ত্বভাবপোষক জ্ঞানস্বরূপ ভগবান্ প্রার্থনাকারী আমাকে সত্ত্বভাব সমন্বিত করেন; (আমার সত্ত্বভাব সংরক্ষিত হোক। কর্মাগ্নিপোষণকারী আমাতে উৎপন্ন জ্ঞান, যথাপ্রযুক্ত হোক।(১)। [দেবস্য ত্ব এই মন্ত্রের অর্থ ১ম অধ্যায়ের ২৪শ কণ্ডিকায় প্রাপ্তব্য]।(২)। হে আমার শুদ্ধসত্ত্বভাব! তোমাকে হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত করছি।(৩)। হে আমার শুদ্ধসত্ত্বভাব! সেই জ্ঞানস্বরূপ অগ্নিদেবের মুখে তোমাকে ভক্ষণ করছি, অর্থাৎ, জ্ঞানসহযুত সৎ-ভাবনিবহকেই হৃদয়ে ধারণ করছি।(৪)।

১২। দ্যোতমান্ সৎ-ভাবপ্রেরক হে দেব! মহকর্মপালক পরমাত্মস্বরূপ আপনাকে পাবার জন্যই পরিদৃশ্যমান্ সৎ-অনুষ্ঠান। এটি সর্বাদিসম্মত।(১)। হে দেব! সেই জন্য এই সৎ-অনুষ্ঠানকে রক্ষা করুন; সেই জন্য সৎ অনুষ্ঠান পালক সৎ-ভাবকে রক্ষা করুন; সেই কারণ বশতঃ অর্চনাকারী আমাকে রক্ষা করুন (২)।

১৩। সর্বত্রগতিশীল হে মন! তুমি সত্ত্বভাবকে সেবা করো; মহৎকর্মের পালক দেবতা, পরিদৃশ্যমান্ তোমার সৎ-অনুষ্ঠানকে বিস্তারিত করুন; হেমন! এই সৎ-অনুষ্ঠানকে হিংসারহিত করে সম্যকরূপে পোষণ করো; সকল দেবতাই (তোমার) পরিদৃশ্যমান্ সঙ্কর্মে তৃপ্ত হোন; হে পরমাত্মারূপি পরব্রহ্ম! আপনি এস্থলে প্রতিষ্ঠিত হোন। (১)

১৪। হে জ্ঞানস্বরূপ দেব! আমার এই মন, তোমার ইন্ধনস্বরূপ: (জ্ঞানাগ্নিদীপক) হোক; সেই (আমার) মনের দ্বারা (আমার মনোরূপ আহুতি পেয়ে) আপনি বর্ধিত (প্রদীপ্ত) হোন; সঙ্গে সঙ্গে, আমাদের পরিবর্ধিত (দীপ্তিমন্ত) করুন; এমন হলে, আমার বর্ধিত (উচ্চস্তর প্রাপ্ত) হবে এবং সৎ-ভাব ইত্যাদিকেও বর্ধিত করতে পারব।(১)। সত্ত্বভাববিশিষ্ট হে জ্ঞানস্বরূপ দেব! সত্ত্বভাব-সম্পাদনের উপযুক্ত, সত্ত্বভাবের প্রতিবন্ধকতা-নাশক আপনাকে আমি আমার হৃদয়দেশে প্রদীপ্ত করছি।(২)

১৫। জ্ঞান ও ভক্তিস্বরূপ দেবদ্বয়ের প্রকৃষ্ট জয় অনুসরণ করে আমি উৎকৃষ্ট জয় প্রাপ্ত হই; সৎকর্মের প্রেরণার দ্বারা আমি আমাকে পোৎসাহিত করছি। [অগ্নিাময়োঃ–জ্ঞানভক্তিস্বরূপয়ের্দেৰ্বয়োঃ; বাজস্য সৎকর্মণঃ](২)। যে শত্রু আমাদের হিংসা করে, আমরা যে শত্রুর হিংসা করি, জ্ঞানভক্তিরূপ দেবদ্বয়, সেই উভয় রকম শত্রুকে দূর করুন। আমিও সঙ্কর্মের প্রেরণার দ্বারা সেই দুরকমের শত্রুকে বিদূরিত করি। [অগ্নীষোমৌজ্ঞানভক্তিরূপৌ দেবৌ]।(২)। শক্তি এবং জ্ঞানরূপ দেবদ্বয়ের উৎকৃষ্ট জয় অনুসরণ করে, আমি উৎকৃষ্ট জয় প্রাপ্ত হই; সৎকর্মের প্রেরণার দ্বারা আমি আমাকে প্রোৎসাহিত করছি। [ইন্দ্রগ্ন্যোঃ–শক্তিজ্ঞানরূপয়োদেয়োঃ] (৩)। যে শত্রু আমাদের হিংসা করে, আমরা যে শত্রুর হিংসা করি, শক্তি ও জ্ঞানস্বরূপ দেবদ্বয় সেই দুরকম শত্রুকে দূরীভূত করুন; আমিও সৎকর্মের প্রেরণার দ্বারা সেই দুরকম শত্রুকে বিদূরিত করি। [এইটি ও দ্বিতীয় মন্ত্রটি একই রকম। কেবল দ্বিতীয় মন্ত্রে জ্ঞানভক্তিরূপ দেবদ্বয়-এর কাছে এই এখানে শক্তি ও জ্ঞানস্বরূপ দেবদ্বয়-এর কাছে প্রার্থনা ধ্বনিত হয়েছে]।(৪)

১৬। হে মন! তোমাকে নিবাসস্থানীয় (সকলের আশ্রয় স্থানীয়) দেবতার তৃপ্তির জন্য নিয়োগ করছি। [বসুভ্যঃ–নিবাসভূতদেবতাভ্যঃ, তেষাং তৃপ্ত্যর্থং]।(১)। হে মন! তোমাকে ঘোররূপী, শাসক দেবগণের প্রীতির জন্য নিয়োগ করছি। [রুদ্রেভ্যঃ–ঘোররূপেভ্যঃ শাসকেভ্যঃ দেবেভ্যঃ তেষাং তৃপ্ত্যর্থং] (২)। হে মন! তোমাকে জ্যোতিঃস্বরূপ দেবগণের তৃপ্তি সাধনের জন্য নিয়োগ করছি। [আদিত্যেভ্যঃ জ্যোতিস্বরূপেভ্যঃ দেবেভ্যঃ, তেষাং তৃপ্তিসাধনার্থং]।(৩)। হে মন! তোমাকে আকাশ ও পৃথিবীর অভিমানিনী দেবতা সম্যক্ররূপে অবগত হোন (অর্থাৎ, তুমি তাদের জ্ঞানের উপযোগী হও; তোমার কর্মের দ্বারা তারা তোমাকে জ্ঞাত হোন।(৪)। হে মন! অভীষ্টবর্ষী মিত্রাবরুণদেব, অভীষ্ট বর্ষণের দ্বারা তোমাকে পালন করুন। [মিত্রাবরুণৌ-অভীষ্টবর্ষিণৌ দেবৌ; বৃষ্ট্যা অভীষ্টবর্ষণেন]।(৫)। হে মন! শুদ্ধসত্ত্বান্বিত তোমাকে আস্বাদন করে (তোমাতে মিলিত হয়ে) দেবভাবসমূহ কান্তিযুক্ত হোক; (অর্থাৎ, আমার হৃদয়ের সত্ত্বভাবে মিলিত হয়ে দেবভাবসমূহ অধিকতর প্রদীপ্ত হোক)।(৬)। হে জ্ঞানস্বরূপ অগ্নিদেব! আপনি সকলের চক্ষুঃ (দর্শনেন্দ্রিয়) রক্ষা করে থাকেন; (আমার আত্ম-উত্তৰ্যসাধনের জন্য) আমার চক্ষুঃকে (দূরদৃষ্টিকে) রক্ষা করুন।(৭)

১৭। হে জ্ঞানস্বরূপ দেব (অগ্নে)! আপনি রিপুশত্রুগণ কর্তৃক সংরুদ্ধমান হয়ে (আমার) হৃদয়ে যে শুদ্ধসত্ত্বভাবরূপ ব্যবধান স্থাপন করে থাকেন; আপনার প্রিয় সেই শুদ্ধসত্ত্বভাবকে আমি হৃদয়ে পোষণ করছি। এই শুদ্ধসত্ত্বভাবরূপ পরিধি, আপনার নিকট হতে অপগত হতে জানে না (অর্থাৎ আপনাতেই বিদ্যমান থাকে)।(১)। হে আমার কর্ম ও ভক্তি! তোমারা, জ্ঞানস্বরূপ দেবতার প্রিয় সেই শুদ্ধসত্ত্বভাবকে প্রাপ্ত হও। [হে মম কর্মর্ভক্তী যুবাং অগ্নে–জ্ঞানস্বরূপদেবস্য] (২)।

১৮। প্রস্তাবের ন্যায় স্থিরস্থাননিবাসী (রিপুশকৃত উপদ্রবশূন্য হৃদয়-নিবাসী) শুদ্ধসত্ত্বোৎপন্ন, হে দেবভাবসমূহ! আপনারা ভক্তিসুধাতে বর্ধিত হয়ে (সাধকদের) সংসর্গভাগী হন; হে দেবভাবসমূহ। (আপনারা) আমার এই স্তুতিরূপ বাক্যকে সর্বতোভাবে সমাদরে শ্রবণ করে পরিদৃশ্যমান্ যজ্ঞে (এই আমার হৃদয়-দেশে) উপবেশন করে তৃপ্তিলাভ করুন।(১)। ভগবৎ প্রাপ্তির জন্য আমার এই অনুষ্ঠান সুহুত হোক, এটি অবশ্যই সুহুত হবে। [ভগবৎপ্রাপ্তয়ে স্বাহাবার্ট–ইদং অনুষ্ঠানং সুহুতমন্তু, এতদবশ্যমেব সুহুতং ভবিতুমহতি। সুহুত ব্ৰহ্মত্ব]

১৯। হে আমার জ্ঞান ও ভক্তি! তোমরা সৎ-ভাবসহযুত হও। হে জ্ঞানস্বরূপ ভক্তিস্বরূপ দেবদ্বয়, আপনারা (আমার) সৎকর্মনিৰ্বাহক জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগকে রক্ষা করুন; আপনারা সুখ স্বরূপ হন, আমাকে সুখে রাখুন।(১)। হে যজ্ঞাধিষ্ঠাতৃদেব! আপনাকে নমস্কার, আপনার বৃদ্ধি হোক। হে ভগবন্! আপনি (আমার) যাগ ইত্যাদি সৎকর্মের কল্যাণসাধন করুন, এবং আমার নিঃশ্রেয়স্বরূপ পরম কল্যাণ সম্পাদিত করুন।(২)।

২০। অর্চনাকারিগণের মঙ্গলবিধাতা সর্বব্যাপক জ্ঞানস্বরূপ হে অগ্নিদেব! শত্রুপ্রযুক্ত বতুল্য আয়ুধ হতে আমাকে রক্ষা করুন; বন্ধনহেতুভূত মায়াপাশ হতে আমাকে রক্ষা করুন; অসৎ অর্চনা হতে আমাকে রক্ষা করুন; কুভোজন হতে আমাকে রক্ষা করুন; আমাদের পানীয় বিষশূন্য করুন; সম্যকরূপে স্থিতিযোগ্য বিশ্বের উৎপত্তিস্থানভৃত পরব্রহ্মে আমাকে স্থাপন করুন; (এটি ) সুন্দররূপে সুহুত (স্বাহা বাট) হোক,–এটি অবশ্যই সুন্দররূপে হুত হবে।(১)। কর্ম এবং ভক্তির মিলনপালক, জ্ঞানস্বরূপ দেবতার জন্য (এটি) সুন্দরভাবে হুত হোক।[অগ্নয়ে–জ্ঞানস্বরূপায় দেবায়] (২)। যশের সহজাতা স্বরূপা, বাক্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর জন্য (এটি) সুহুত হোক। [সরস্বত্যৈ বাঁচামধিষ্ঠাতৃদেব্যৈ] (৩)।

২১। হে দেব! আপনি সর্বজ্ঞ। সর্বজ্ঞ হে দেব! যেহেতু আপনি দেবভাবসমূহের জ্ঞাপক হন, (অর্থাৎ–অর্জনকারীকে দেবভাবসমূহ জ্ঞাত করে থাকেন), সেই জন্য (দেবভাবের নিকট) আমারও জ্ঞাপক হোক। [বেদঃ–সর্বজ্ঞঃ, জ্ঞাপক](১)। যজ্ঞ ইত্যাদি সৎকর্মাভিজ্ঞ হে দেবভাবনিবহ! আপনারা আমাদের সৎকর্মেচ্ছা বিজ্ঞাত হয়ে, সেই সকর্মকে প্রাপ্ত হেন। দ্যোতমান, মনের অধিষ্ঠাতা হে দেব! এই অনুষ্ঠিত সৎকর্ম (সৎকর্মের ফল) আপনাকে সমর্পণ করছি। আপনি সেই কর্মকে (কর্মফলকে) প্রাণ-ইত্যাদি পঞ্চবায়ুর অধিষ্ঠাতৃদেবতাতে নিহিত করুন (বায়ুর মতো অনন্ত করুন)। অর্থাৎ আমার সৎ অনুষ্ঠান যেন মন ও প্রাণের একতাতেই অনুষ্ঠিত হয়। [গাতুবিদঃ-যজ্ঞাদিসকর্মবেত্তারং; গাতুং– অস্মাকং সঙ্কর্মেচ্ছাং; গাতু–তৎ সৎকর্ম; যজ্ঞংসকর্ম; স্বাহা–তুভ্যং সমর্পয়ামি; ত্বচং বাতে প্রাণাদিবায়ু অধিষ্ঠাতরিং, ধাঃ–নিধেহি] (২)।

২২। পরমেশ্বর, জ্যোতিঃস্বরূপ দেবতার সাথে, নিবাসহেতুভূত দেবতার সাথে, সর্বগ দেবের সাথে এবং সকল দেবভাবের সাথে, হবনীয় শুদ্ধসত্ত্বভাবের দ্বারা সৎ-অনুষ্ঠানের আধারস্বরূপ এই হৃদয়কে সম্যভাবে সিঞ্চন করুন। এই অনুষ্ঠান দিব্যজ্যোতিকে প্রাপ্ত হোক। এটি সুহুত হোক। [ইন্দ্রঃ–পরশ্বেরঃ; আদিত্যৈঃ–জ্যোতিস্বরূপৈঃ দেবৈঃ; বসুভিঃ– নিবাসহেতুভূত দেবৈঃ; মরুদ্ভিঃ–সর্বত্রগামিদেবৈঃ; বিশ্বদেবেভিঃ–সর্বদেবভাবে; বহিঃ– সদনুষ্ঠানানাং আধারস্বরূপং হৃদয়মিদং]।

২৩। [প্রশ্ন] কোন্ পুরুষ, তোমাকে জন্মজরাব্যাধিমুক্ত করে থাকেন? [উত্তর] সেই পরমেশ্বরই তোমাকে জন্মজরাব্যাধিমুক্ত করে থাকেন। [প্রশ্ন] কোন্ মহৎ উদ্দেশ্য-সাধনের জন্য তোমাকে বিমুক্ত করেন? [উত্তর] সেই প্রসিদ্ধ ধর্মপোষণের জন্য তোমাকে বিমুক্ত করেন।(১)। সকর্মের বিরোধী হে শত্রু! তুমি দেবভাববিরোধী, রাক্ষসগণের অংশস্বরূপ হয়ে থাকো।(২)।

২৪। (ভগবানের অনুগ্রহেই) আমরা ব্রহ্মতেজের সাথে সংযুক্ত হবো; তেমনই, অমৃতের সাথে, সৎকর্মে অনুষ্ঠানক্ষম শরীরের অবয়বসমূহের সাথে এবং কল্যাণাস্পদ মনের সাথে সংযুক্ত হবো। শোভনদানশীল সেই ভগবান, আমাদের চতুর্বর্গরূপ পরমধন বিতরণ করুন এবং আমাদের শরীরের মধ্যে যে অঙ্গ সকর্মসাধনে অক্ষম, তাকে সৎকর্মের সাধনাকুল করে শোষণ করুন। [শিবেন মনসা– শান্তেন, কল্যাণাস্পদেন মনসা; সং–সমগন্মহি (সঙ্গতা ভবামঃ), সংযুক্তা ভবামঃ; যৎ বিলিষ্টং বিশ্লেষণ সৎকর্মক্ষমং ন্যূনং বা অঙ্গং; তৎ অনুমাষ্ট্র–সকর্ম-সাধনানুকুলং কৃত্বা শোধয়তু]।(১)।

২৫৷ বিশ্বব্যাপক দেব, দ্যুলোকে (সহস্রারে) জগতীচ্ছন্দোরূপ আপন পাদের দ্বারা বিশেষরূপে পরিভ্রমণ করেন (আপন সত্তা দেখিয়ে থাকে); সেই দ্যুলোক (সহস্রার) স্থান হতে–যে শত্রু আমাদের দ্বেষ করে, আমরা যে শত্রুর দ্বেষ করে থাকি এই দুরকমের (আধ্যাত্মিক) শত্রু ভাগরহিত হয়ে (বিষ্ণুক্রমণহেতু) পালিয়ে থাকে। [বিষ্ণু–বিশ্বব্যাপকে দেবঃ; তদুভয়বিধ আধ্যাত্মিকশত্রুঃ নির্ভক্তঃ–ভাগরহিতঃ সন্ বিষ্ণুক্ৰমণবশেন পলায়িতঃ]।১)। বিশ্বব্যাপক দেব, অন্তরীক্ষলোকে (হৃদয়-প্রদেশে) ত্রিষ্টুপছন্দোরূপ আপন পাদের দ্বারা বিশেষরূপে পরিভ্রমণ করেন (আপন সত্তা দেখিয়ে থাকেন); সেই অন্তরীক্ষ (হৃদয়) প্রদেশ হতে,যে শত্রু আমাদের দ্বেষ করে, আমরা যে শত্রুর দ্বেষ করে থাকি, এই দুরকমের (আধিদৈবিক) শত্রু, ভাগরহিত হয়ে (বিযুক্রমণ হেতু) পালিয়ে থাকে। [ব্যক্ৰংস্ত–বিশেষণ ক্রমণং কৃতবানং স্বীয়সত্তাং দর্শিতবা; যঞ্চযং শত্রুঞ্চ; তদুভয়াবিধ আধিদৈবিকশত্রুঃ নির্ভক্তঃ ভাগরহিতঃ সন বিষ্ণুক্ৰমণবশেন পলায়িতঃ]](২)। বিশ্বব্যাপক দেব, পৃথিবীলোকে (নাভিপ্রদেশে) গায়ত্রীচ্ছন্দোরূপ স্বীয় পাদের দ্বারা বিশেষরূপে পরিভ্রমণ করেন (নিজ সত্তা দেখিয়ে থাকেন); সেই পৃথিবী (নাভি) প্রদেশে হতে, যে শত্রু আমাদের দ্বেষ করে আমরা যে শত্রু দ্বেষ করে থাকি, এই দুরকমের (আধিভৌতিক) শত্রু, ভাগরহিত হয়ে (বিষ্ণুওক্রমণ-হেতু) পালিয়ে থাকে। [তদুভয়বিধ আধিভৌতিকশত্রু নির্ভক্তভাগরহিতঃ সন পলায়িতঃ] (৩)। উক্ত শত্ৰু এই শুদ্ধসত্ত্বরূপ হবনীয় অন্ন হতে ভাগরহিত হয়ে পলায়ন করে। [শত্রু অস্মাদন্নাৎ–অস্মাৎ শুদ্ধসত্ত্বরূপহবনীয়াৎ ভাগরহিতঃ সন্ পলায়িতঃ ইতি শেষঃ] (৪)। উক্ত শত্র, এই দেবযজনস্থান (হৃদয়) রূপ প্রতিষ্ঠা হতে ভাগরহিত হয়ে পলায়ন করে।(৫)। (এইভাবে আমরা শত্রুহীন হয়ে) স্বৰ্গকে প্রাপ্ত হই।(৬)। (এবং) জ্যোতিঃস্বরূপ পরব্রহ্মের সাথে সম্মিলিত হয়ে থাকি। [জ্যোতিষ–জ্যোতিঃস্বরূপেন পরব্রহ্মণা সহ; সং অভূম সম্মিলিতা ভবামো বয়মিতি শেষঃ] (৭)।

২৬। হে জ্ঞানস্বরূপ সূর্যদেব! আপনি স্বয়ংসিদ্ধা; আপনি শ্রেষ্ঠ কিরণস্বরূপ হন। আপনি কিরণদাতা, আমাকে কিরণ (জ্ঞান) দান করুন।(১)। আমি জ্ঞানস্বরূপ সূর্যদেবতার সর্বপ্রকাশক জ্যোতিঃ অনুসরণ করে সৎকর্মের সাধন করতে প্রবৃত্ত হই।[সূর্যস্য জ্ঞানস্বরূপদেবস্য; আবৃতং–আবর্তকং, সর্বপ্রকাশকং জ্যোতিঃ; অম্বাবর্তে–অনুসৃত্য আবর্তে, সৎকর্মাণি সাধয়িতুং প্রবৃত্তো ভবামি ইতি ভাবঃ] (২)।

২৭। আমার হৃদয়ের অধীশ্বর, জ্ঞানস্বরূপ হে অগ্নিদেব! আপনি সুগৃহপতি (সৎ-ভাবে পরিপূর্ণ হৃদয়ের পালক হন; হে জ্ঞানস্বরূপ অগ্নিদেব! হৃদয়াধীশ আপনার দ্বারা আমি যেন সুগৃহপতি (হৃদয়রূপ গৃহের সৎ-ভাব পোষক) হতে পরি; হে জ্ঞানস্বরূপ দেব! আমার গৃহপতিত্বে (সত্ত্বভাব ইত্যাদির প্রভাবে) আপনার আমার সুগৃহপতি (হৃদয়রূপ গৃহের সত্ত্বভাবপালক) হন; আপনার ও আমার গৃহপতি-সম্বন্ধীয় কর্মসমূহ (সত্ত্বভাবনিবহ) বহুদিন যাবৎ (চিরকাল) অব্যাহত (অচঞ্চল) হোক। [গৃহপতে–মম গৃহস্বামি; অগ্নে–হে জ্ঞানস্বরূপ দেব!; ত্বং সুগৃহপতিসুগৃহপতিঃ-শোভনহৃদয়পালকঃ ভবসীত্যর্থঃ; গৃহপতিনা–হৃদয়াধীশেন; সুগৃহপতিঃ–শোভনহৃদয়স্বামী; শতং হিমাঃ–শতবর্ষপর্যন্তং, বহুদিনং যাবৎ, চিরং ইতি ভাবঃ; অস্ফুরি–অব্যবহিতানি]।(১)। আমি যেন জ্ঞানস্বরূপ সূর্যদেবতার সর্বপ্রকাশক জ্যোতিঃ অনুসরণ করে সৎকর্ম-সমূহ সাধন করতে প্রবৃত্ত হই।(২)।

২৮। সৎকর্মের পালক হে জ্ঞানস্বরূপ দেব! আমি সৎকর্মের অনুষ্ঠান করেছি। আপনার অনুগ্রহেই আমি সেই সৎ-অনুষ্ঠানে সমর্থ হয়েছি। আমার সেই অনুষ্ঠান আপনিই সুসিদ্ধ করেছেন। [ব্রতপতে–সর্মপালক; অগ্নে–হে জ্ঞানস্বরূপ দেব; তৎ– অনুষ্ঠানং]।(১)। হে জ্ঞানাগ্নি! এই অনুষ্ঠানের ফলে (কর্মানুষ্ঠানের আগে) আমি যে ব্রহ্মাংশস্বরূপ (অবস্থিত ছিলাম, কর্মানুষ্ঠানের পরেও আমি) সেই শিবস্বরূপ রয়েছি (অর্থাৎ এই অনুষ্ঠানের ফলে সোহহমস্মি এইরকম জ্ঞানলাভে আমি সমর্থ হয়েছি)। [য এবাস্মি –যো ব্রহ্মস্বরূপঃ অস্মি; সোহস্মি–স এব পরব্রহ্মরূপঃ শিবোহস্মি] (২)।

২৯। পিতৃপূজার উপকরণ-বহনকারী জ্ঞানস্বরূপ দেবতার জন্য (এটি) সুহুত হোক। [কাব্যবাহনায়–পিতৃপূজোপকরণবহনকত্রে; স্বাহা– সুহুতমস্তু] (১)। পিতৃগুণবিশিষ্ট অর্থাৎ সাধককে তার পূর্বপুরুষগণের গুণপ্রদানকর্তা সত্ত্বভাবস্বরূপ। দেবের জন্য (এটি) সুহুত হোক (অর্থাৎ, আমি পিতৃগুণলাভের জন্য জ্ঞান ও সৎ-ভাবের আরাধনা করছি)। [পিতৃমতে–পিতৃগুণবিশিষ্টায় অচকায়, তৎপূর্বপুরুষগণ প্রদানকারিণে; সোমায়–সত্ত্বভাবস্বরূপায় দেবায়] (২)। আমার হৃদয়রূপ বেদীনিবাসী অসুরভাবাপন্ন রাক্ষসপ্রকৃতি কামক্রোধ ইত্যাদি (শসমূহ) আমার হৃদয়প্রদেশ হতে অপগত (অপসারিত) হোক। [বেদিষদঃ–মম হৃদয়রূপবেদিনিবাসিনঃ, অসুরাঃ–অসুরভাবাপন্নাঃ, রক্ষাংসিরক্ষস্বভাবাশ্চ সদ্ভাববিরোধিকামক্রোধাদয়ঃ] (৩)।

৩০। যে প্রসিদ্ধ অসুরভাবাপন্ন কাম ইত্যাদি শত্রুবর্গ আকারহীন হয়েও শুদ্ধসত্ত্বাবিনাশের জন্য হৃদয়-দেশে বিচরণ করে; যে কাম ইত্যাদি, স্থূল ও সূক্ষ্ম দুরকমের পাপকে ধারণ অথবা পোষণ করে; সেই সকলকে আমার হৃদয়-প্রদেশ হতে জ্ঞানদেবতা দূরে অপসৃত করুন। [রূপানি প্রতিমুঞ্চমানাঃ সন্তঃ–আকাববিহীনা অপি ভবন্তঃ, স্বধয়া–শুদ্ধসত্ত্বনিমিত্তেন, শুদ্ধসত্ত্ববিনাশহেতোঃ; চরন্তি–হৃদয়দেশে বিচরন্তি; যে কামাদয়ঃ; পরাপুরঃ-স্থূলপাপান; নিপুর–সূক্ষ্ম-পাপাংশ্চ; লোকাৎ–মম হৃদয়াৎ] (১)।

৩১। পিতৃগুণসমূহ, আমার হৃদয়দেশে যথোপযুক্ত ভক্তিসুধা প্রাপ্ত হয়ে ইর্ষযুক্ত হোক। তারপর, পুরুষার্থরূপ অভীষ্ট সম্যক্‌রকমে বর্ষণ করুন। [পিতরঃ-পিতৃগুণাঃ; অত্র–মম হৃদয়ে; মাদয়ধ্বং হৃষ্টা ভবত; অতঃ আবৃষায়ধ্বম্–পুরুষার্থরূপং অভীষ্টং সম্যক্ বর্ষয়ত] (১)। পিতৃগুণসমূহ যথোক্ত ভক্তিসুধা প্রাপ্ত হলে হর্ষান্বিত হয়, এবং সাধকের অভীষ্ট সম্যরূপে পূরণ করে। [অমীমদন্ত–হৃষ্টা অভব; আবৃষায়িষত–সাধকাভীষ্টঞ্চ সর্বতোভাবেন অপূরয়ত] (২)

৩২। হে পিতৃগুণসমূহ (পিতরঃ)! ভক্তিরস (রসায়) লাভ করবার জন্য আপনাদের প্রণাম করছি।(১)। হে পিতৃগুণসমূহ। অন্তঃশত্ৰু শোষণ করবার জন্য (শোষায়) আপনাদের প্রণাম করছি।(২)। হে পিতৃগুণসমূহ! সাধনক্ষম দীর্ঘজীবন লাভ করবার জন্য (জীবায়) আপনাদের প্রণাম করছি। (৩)। হে পিতৃগুণসমূহ! শুদ্ধসত্ত্ব ভাব লাভ করবার জন্য (স্বধায়ৈ) আপনাদের প্রণাম করছি। (৪)। হে পিতৃগুণসমূহ! কামনারূপ ঘোর শত্রু জয় করবার জন্য (ঘোরায়) আপনাদের প্রণাম করছি। (৫)।হে পিতৃগুণসমূহ! ক্রোধরূপ শত্রু জয় করবার জন্য (মন্যবে) আপনাদের প্রণাম করছি। হে পিতৃগুণসমূহ! আপনাদের প্রণাম করছি। হে পিতৃগুণসমূহ! আপনাদের প্রণাম করছি।(৬)। হে পিতৃগুণসমূহ! আমাদের দেবতার আশ্রয়স্থানভূত ভক্তিরস ইত্যাদি (গৃহা) প্রদান করুন। হে পিতৃগুণসমূহ! আমরা আপনাদের সৎ-ভবে (সঃ) প্রদান করি; অর্থাৎ, আপনারা আমাদের এমন ভক্তি প্রদান করুন, যার দ্বারা আমরা আপনাদের অর্চনা করতে সমর্থ হই। (৭) হে পিতৃগুণসমূহ! আপনাদের, পরিদৃশ্যমান্ (এতৎ) আচ্ছাদন-স্বরূপ আমার এই হৃদয়-প্রদেশ (বাসঃ) আপনারা স্বীকার করুন (আধৰ্ত) অর্থাৎ আমার হৃদয়ে আপনারা অনবচ্ছিন্নভাবে বাস করুন। (৮)।

৩৩। হে পিতৃগুণসমূহ! আমার হৃদয়-শে যাতে পরম পুরুষ সেই ভগবান্ অবস্থান করেন; আপনারা তেমনই, পদ্মমালার মতো ভগবানের প্রীতিপদ,নূতন ভক্তিজনক সৎ-ভাব আমার হৃদয়ে পোষণ করুন। (ভক্তিপ্রসু সৎ-ভাব হৃদয়ে পুষ্ট হলে, ভক্তিপ্রিয় ভগবান্ নিশ্চয়ই আমার হৃদয়ে অবস্থান করবেন, এটাই মর্মার্থ)। [যথা–যেন প্রকারেণ; ইহ–মম হৃদ্দেশে; পুরুষঃপরব্রহ্ম স ভগবা; পুষ্করজং–পদ্মমাল্যবৎ ভগবতঃ প্রীতিদায়কং; কুমারংনবং; গর্ভং–ভক্তিজনকং সৎ-ভাবং]।

৩৪। হে আমার চিত্তবৃত্তিসমূহ! তোমরা, অক্ষয় পিতৃগণের প্রীতিপ্রদ শুদ্ধসত্ত্বরূপ এবং সকল বিঘ্নবিনাশক ভক্তিরূপ বল পিতৃগণের নিকট বহন করে তাদের পুজোপকরণ স্বরূপ হও। পিতৃলোককে (পূর্ব-পিতৃগণের গুণসমূহকে) তৃপ্ত করো (আমার হৃদয়-দেশে সেই পিতৃগুণসমূহ প্রতিষ্ঠিত করো। [অমৃতং–অক্ষয়ং; ঘৃতং পিতৃপ্রীতিদায়কং; পয়ঃ–শুদ্ধসত্ত্বরূপং; পিতুনপিতৃলোকান্, পূর্বপিতৃগুণা; তপয়ত–প্রীণয়ত, মম হৃদ্দেশে তদ্‌গুণা প্রতিষ্ঠাপয়ত]। [ভাষ্যকার বলেন, উর্জং এই মন্ত্রের দ্বারা পিণ্ডে জলসেচন করবে। তার মতে মন্ত্রটির অর্থ হয়–হে জলসমূহ! তোমরা পিতৃসম্পর্কীয় হবিঃস্বরূপ। এইজন্য আমার পিতৃগণকে পরিতৃপ্ত করো। জলসমূহ কেমন?–না, পরিশ্রুত অর্থাৎ পুষ্প থেকে নিঃসৃত সার-বহনকারী। সেই সার তিনরকম; তা ঊর্জ শব্দের দ্বারা মৃত শব্দের দ্বারা এবং পয়ঃ শব্দের দ্বারা অভিহিত হয়। তার মধ্যে ঊর্জ শব্দে অনুগত স্বাদুত্ব বুঝিয়ে থাকে। ঘৃত এবং পয়ঃ শব্দের অর্থ লোকপ্রসিদ্ধ অর্থাৎ সর্বজনবিদিত। সেই সার তিনরকম হলেও কেমন?–না, অমৃত অর্থাৎ সর্বরোগ-বিনাশক এবং মৃত্যুনাশক। পুনরায় কেমন?–না, কীলাল অর্থাৎ সর্ববন্ধনিবারক। এমন তিনরকম সারকে বহন করেন বলে জলসমূহ পিতৃতর্পক নামে অভিহিত হন। ভাষ্যের প্রতি লক্ষ্য করলে এ মন্ত্রের প্রয়োগ ও অর্থ বিষয়ে এইরকমই অবগত হওয়া যায়]।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *