২৯. শুক্লযজুর্বেদ – ঊনত্রিংশ অধ্যায়

ঊনত্রিংশ অধ্যায়

মন্ত্রঃ– সমিদ্ধো অঞ্জ কৃদরং মতীনাং ঘৃতমগ্নে মধুমৎপিন্বমানঃ। বাজী বহন বাজিনং জাতবেদো দেবানাং বক্ষি প্রিয়মা সধস্থ।১৷ ধৃতেনাঞ্জনসং পথো দেবনা প্রজান বাজ্যপ্যেতু দেবা। অনু ত্বা সপ্তে প্রদিশঃ সচন্তাং স্বধামস্মৈ যজমানায় ধেহি।২। ঈড্যশ্চাসি বন্দ্যশ্চ বাজিন্নাশুশ্চাসি মধ্যশ্চ সপ্তে। অগ্নিষ্টা দেবৈর্বসুভিঃ সজোষাঃ প্রীতং বহ্নিং বহতু জাতবেদাঃ।৩৷৷ স্তীর্ণং বহিঃ সুষ্টরীমা জুষাণোরু পৃথু প্রথমানং পৃথিব্যা। দেবেভিযুক্তমদিতিঃ সজোষাঃ স্যোনং কৃথানা সুবিতে দধাতু।৪। এতা উ বঃ সুভগা বিশ্বরূপা বি পক্ষোভিঃ স্বয়মানা উদাতৈঃ। ঋঃ সতীঃ কবষঃ শুম্ভমানা দ্বাররা দেবীঃ সুপ্ৰায়ণা ভবন্তু।৫৷৷ অন্তরা মিত্রাবরুণা চরন্তী মুখং যজ্ঞানামভি সংবিদানে। উষাসা বাং সুহিরণ্যে সুশিল্পে ঋতস্য যোনাবিহ সাদয়ামি৷৬৷ প্রথমা বাং সরথিনা সুবর্ণা দেবৌ পশ্যন্তৌ ভুবনানি বিশ্বা। অপিয়ং চোদ্দনা বাং মিমানা হোতারা জ্যোতিঃ প্রদিশা দিশস্তা।৭৷৷ আদিত্যৈননা ভারতী বন্ধু যজ্ঞং সরস্বতী সহ রূদ্রৈন আবীৎ।ইডোপহুতাবসুভিঃ সজোষা যজ্ঞং নো দেবীরমূতেষু ধত্ত৷৷৷৷ ত্বষ্টা বীরং দেবকামং জজান তৃষ্ঠুরবা জায়ত আশুরশ্বঃ। ত্বষ্টদং বিশ্বং ভুবনং জজান বহোঃ কর্তারমিহ যক্ষি হোতঃ৯৷ অশ্বে ঘৃতেন অন্যা সমস্ত উপ দেবা ঋতুশঃ পাথ এতু। বনস্পতিদেলোকং প্রজানম্নগিনা হব্যা স্বদিতানি বক্ষৎ৷৷১০৷৷ প্রজাপতেস্তপসা বাবৃধানঃ সদ্যো জাতো দধিষে যজ্ঞমগ্নে। স্বাহাকৃতেন হবিষা পুরোগা যাহি সাধ্যা হবিরদন্তু দেবাঃ।১১৷ যদক্রঃ প্রথমং জায়মান উদ্যন্তসমুদ্ৰাদুত বা পুরীষাৎ। শ্যেনস্য পক্ষা হরিণস্য বাহু উপস্তুত্যাং মহি জাতং তে অর্ব।।১২।। যমেন দত্তং ত্রিত এনামায়ুনগিন্দ্র এবং প্রথমো অধ্যতিষ্ঠৎ। গন্ধর্বো অস্য রশনামগৃভ্রাৎ সূরদশ্বং বসো নিরতষ্ট৷৷১৩৷৷ অসি যম অস্যাদিত্যো অবসি ত্রিতো গুহেন ব্ৰতেন। অসি সোমেন সময় বিপৃক্ত আহুস্তে ত্ৰীণি দিবি বন্ধনানি৷৷১৪৷ ত্রীণি ত আহুদিবি বন্ধনানি ত্ৰীণ্য ত্ৰীণ্যন্তঃ সমুদ্রে। উতেব মে বরুণচ্ছন্তস্য যত্ৰা ত আহুঃ পরমং জনিমু৷১৫৷ ইমাতে বাজিন্নবর্জনানীমা শফানাং সনিতুর্নির্ধনা। অত্রা তে ভদ্রা রশনা অপশ্যমৃতস্য যা অভিরক্ষন্তি গোপাঃ ॥১৬ আত্মানং তে মনসারাদজানামবো দিবা পয়ন্তং পতঙ্গ। শিরো অপশ্যং পথিভিঃ সুগেভিররেণুভিজেঁহমানং পতত্রি৷৷১৭৷ অত্রা তে রূপমুত্তমমপশ্যং জিগীষমাণমিষ আ পদে গোঃ। যদা তে মর্তো অনু ভোগমাডাদি গ্রসিষ্ঠ ওষধীরজীগঃ ॥১৮ অনু ত্বা রথো অনু মৰ্যো অন্ননু গাবোহনু ভগঃ কনীনা। অনু ব্ৰাতাস স্তব সখ্যমীয়ুরনু দেবা মমিরে বীর্যং তে৷৷১৯৷৷ হিরণ্যশৃঙ্গোহয়ো অস্য পাদ্য মনোজবা অবর ইন্দ্র আসীৎ। দেবা ইদস্য হবিদ্যমায়ন যো অবস্তং প্রথমো অধ্যতিষ্ঠৎ৷৷২০৷৷ ঈর্মান্তাসঃ শিলিকমধ্যমাসঃ সং শুরণাস্যে দিব্যাসো অত্যাঃ। হংসা ইব শ্রেণিশো যতন্তে যদাক্ষিযুদিব্যমম্মমশ্বাঃ।২১৷ তব শরীরং পতয়িষ্ণবন্তব চিত্তং বাত ইব ধ্রুজীমান্। তব শৃঙ্গাণি বিষ্ঠিতা পুরুত্ৰারণ্যে জঙুরাণা চরন্তি৷৷২২৷৷ উপ প্রাগাচ্ছসনং বাজ্যবা দেবদ্রীচা মনসা দীধ্যানঃ। অজঃ পুরো নীয়তে নাভিরস্যানু পশ্চাৎকবয়ো যন্তি রেভাঃ ৷৷২৩৷ উপ প্রাগাৎপরমং যৎসধমব অচ্ছা পিতরং মাতরং চ। অদ্যা দেবাঞ্জুষ্টতমো হি গম্যা অথা শাস্তে দাশুষে বার্ষাণি।।২৪৷৷ সমিদ্ধো অদ্য মনুষো দুরোণে দেব দেবান্ বজসি জাতবেদঃ আ চ বহ মিত্ৰমহশ্চিকিত্বাং দূতঃ কবিরসি প্রচেতাঃ।।২৫৷৷ তন্নপাৎপথ ঋতস্য যানান্মধ্বা সমঞ্জস্বদয়া সুজি। মম্মানি ধীভিরুত যজ্ঞমৃন্ধ দেবত্ৰা চ কৃণুহ্যদ্বারং নঃ।।২৬নরাশংসস্য মহিমানমেষামুপ স্তোষাম যজতস্য ষজ্ঞৈঃ। সেসুক্ৰতবঃ শুয়ো ধিয়ন্ধঃ স্বদন্তি দেবা উভয়ানি হব্যা৷৷২৭৷ আজুন ঈড্যো বন্দ্যশ্চা যাহ্যগ্নে বসুভিঃ সজোষাঃ। ত্বং দেবানামসি যন্ত্র হোতা স এনান্যক্ষীষিত যজীয়া৷৷২৮। প্রাচীনং বহিঃ প্রদিশা পৃথিব্যা বস্তোরস্যা বৃজ্যতে অগ্ৰে অহাম্। ব্যু প্রথতে বিতরং বরীয়ো দেবেভ্যো অদিতয়ে স্যো৷৷২৯৷৷ ব্যচস্বতীরূর্বিয়া বি স্রয়ন্তাং পতিভ্যো ন জনয়ঃ শৃম্ভমানাঃ। দেবীদ্বারো বৃহতী বিশ্বমিম্বা দেবেভ্যো ভবত সুপ্ৰায়ণঃ৩০৷৷আ সুম্বয়ন্তী যজতে উপাকে উষানানক্তা সদং নি যোনৌ। দিব্যে যোষণে বৃহতী সুরুক্সে অধি শিয়ং শুক্রপিশং দধানে।।৩১। দৈব্যা হোতারা প্রথমা সূচা মিমানা যজ্ঞং মনুষো যজধ্যৈ। প্রচোদ্দয়ন্তা বিদথেষু কারু প্রাচীনং জ্যোতিঃ প্রদিশা দিশা)৩২৷ আ নো যজ্ঞং ভারতী তৃষমেত্বিডা মনুম্বদিহ চেতয়ন্তী। তিম্রো দেবীর্বৰ্হিরেদং স্যোনং সরস্বতী স্বপসঃ সন্তু।।৩৩৷৷ য ইমে দ্যাবা পৃথিবী জনিত্রী রূপৈরপিংশদ্ভবনানি বিশ্বা। তমদ্য হোতরিষিতে যজীয়া দেবং তৃষ্টারমিহ যক্ষি বিদ্বান্৷৷৩৪৷ উপিবসৃজ অন্যা সমঞ্জ দেবানাং পাথ ঋতুথা হবীংষি। বনস্পতিঃ শমিতা দেবো অগ্নিঃ স্বদন্তু হব্যং মধুনা ঘৃতেন৷৷৩৫৷ সদ্যোজাতত ব্যমিমীত যজ্ঞমগ্নিৰ্দোনামভবৎ পুরোগাঃ। অস্য হোতুঃ প্রদিশতস্য বাঁচি স্বাহাকৃতং হবিরদন্তু দেবাঃ।৩৬৷ কেতুং কৃন্বন্নকেতবে পেশো মর্ষা অপেশসে। সমুষভদ্ভিরজায়থাঃ ॥৩৭৷৷ জীমূতস্যেব ভবতি প্রতীকং যদ্ধর্মী যাতি সমদামুপস্থে। অনাবিদ্ধয়া তন্বা জয় ত্বং স ত্বা বর্মণণা মহিমা পিপর্তু।।৩৮৷ ধন্বনা গা ধন্বনাহইজিং জয়েম ধন্বনা তীব্রাঃ সমদো জয়েম। ধনুঃশজোরপকামং কৃপোতি ধন্বনা সর্বাঃ প্রদিশো জয়েম৷৩৯। বক্ষন্তীবেদা গনীগন্তি কর্ণং প্রিয়ং সখায়ং পরিষজানা। যোষেব শিঙক্তে বিততাধি ধৰ্জ্যা ইয়ং সমনে পারয়ন্তী৷৷৪০ তে আচরন্তী সমনেব যোষা মাতেব পুত্রং বিভৃতামুপস্থে। অপ শত্রু বিধ্যতাং সংবিদানে আত্নী ইমে বিচ্ছুরন্তী অমিত্রা৷৷৪১। বীনাং পিতা বহুরস্য পুত্ৰশ্চিশ্চা কৃপোতি সমনাবগত্য। ইষুধিঃ সঙ্কা পৃতনাশ্চ সর্বাঃ পৃষ্ঠে নিনদ্ধো জয়তি প্রসূতঃ।।৪২। রথে তিষ্ঠ নয়তি বাজিনঃ পুরো যত্র যত্ৰ কাময়তে সুষারথিঃ। অভীশূনাংমহীমানং পনায়তমনঃ পশ্চাদমু যচ্ছন্তি রশ্ময়৷৪৩৷৷ তীব্ৰান্ ঘোষান্ কৃতে বৃষপাণয়োহশ্বা রথেভিঃ সহ বাজয়ন্তঃ। অবক্ৰামন্তঃ প্রপদৈরমিত্র ক্ষিণন্তি শত্ৰুং রনপব্যয়ন্তঃ॥৪৪। রথবাহণং হবিরস্য নাম বায়ুধং নিহিতমস্য বর্ম। তত্রং রথমুপশগ্মং সদেম বিশ্বাহা বয়ং সুমনস্যমানাঃ।।৪৫৷৷ স্বাদুষং সদঃ পিতরা বয়োধাঃ কৃচ্ছেশ্ৰিতঃ শক্তীবন্তো গভীরাঃ। চিত্রসেনা ইযুবলা অমৃর্ধাঃ সততাবীরা উরবো ব্রাতসাহাঃ ॥৪৬। ব্রাহ্মণাসঃ পিতরঃ সোম্যাসঃ শিবে নো দ্যাবাপৃথিবী অনেহসা। পূষা নঃ পাতু দুরিতাদৃতাবৃধো রক্ষা মার্কিননা অঘশংস ঈশত।৪৭৷ সুপর্ণং বস্তে মৃগো অস্যা দন্তো গোভিঃ সন্নদ্ধা পততি প্রসূতা। যত্রা নরঃ সং চ বি চ দ্রবন্তি তত্ৰাস্মভ্যমিষবঃ শৰ্ম যংস৷৪৮। ঋজীতে পরি বৃধি নোহশ্ম ভভতুনস্তনূঃ। সোমো অধিব্রবীতু নোহদিতিঃ শৰ্ম যুচ্ছতু।৪৯৷ আ জঘন্তি সান্বেষাং জগনা উপ জিম্মতে। অশ্বাজনি প্রচেতসোহশ্বান্ সমসু চোদ্দয়।৫০৷৷ অহিরিব ভৌগৈঃ পর্যেতি বাহুং জ্যায়া হেতিং পরি ধমানঃ হস্তয়ো বিশ্বা বয়ুনানি বিদ্বান্ পুমান্ পুমাংসং পরি পাতু বিশ্বতঃ ॥৫১৷ বনস্পতে বীডুবঙ্গো হি ভূয়া অম্মৎসখা প্রতরণঃ সুবীরঃ। গোভিঃ সন্নদ্ধো অসি বীডয়স্বাস্থাতা তে জয়তু জোনি৷৷৫২৷৷ দিবঃ পৃথিব্যাঃ পর্যোজ উদ্ভূতং বনস্পতিভ্যঃ পর্যাতৃতং সহঃ৷ অপামোজমানং পরি গোভিরাবৃত মিন্দ্রস্য বজ্ৰংহবিষা রথং যজ।৫৩।ইন্দ্রস্য বজোমরুতামনীকংমিত্রস্য গর্ভোবরুণস্য নাভিঃ। সোমাং নো হব্যদাতিং জুষাণো দেব রথ প্রতি হব্যা গৃভায়৷৷৫৪৷ উপ শ্বাসয় পৃথিবীমুত দ্যাং পুরুত্ৰা তে মনুতাং বিষ্ঠিতং জগৎ। স দুন্দুভে সজুরিন্দ্রেণ দেবৈ দূরাদ্দবীয়ো অপ সেধ শ৷৫৫৷৷ আ ক্রয় বলমোজো না আধা নিষ্ঠনিহি দূরিতা বাধমানঃ। অপথ দুন্দুভে দুছুনা ইত ইন্দ্রস্য মুষ্টিরসি বীয়স্ব৷৫৬৷৷ আমূরজ প্রত্যাবর্তয়েমাঃ কেতুমদুন্দুর্ভিবাবদীতি। সমপর্ণাশ্চরন্তি নো নবরাহআঁকমিন্দ্র রথিনো জয়ন্তু।৫৭৷৷ আগ্নেয়ঃ কৃষ্ণগ্রীবঃ সরস্বতী মেষী বভ্রঃ সৌমাঃ পৌষ্ণঃ শ্যামঃ শিতিপৃষ্ঠো বাহঁম্পত্যঃ শিল্পো বৈশ্বদেব ঐদ্ৰোহরুণো মারুতঃ কল্মষ ঐন্দ্রাগ্নঃ সংহিতোহথোরামঃ সাবিত্রো বারুণঃ কৃষ্ণ একশিতিপাৎপেত্বঃ ॥৫৮৷৷ অগ্নগেয়হনী কবতে রোহিতাঞ্জিরনানথোরামৌ সাবিত্রৌ পোষ্ণৌ রজতাভী বৈশ্বদেবৌ পিশঙ্গৌ তৃপরৌ মারুতঃ কল্মষ আগ্নেয়ঃ কৃষ্ণোইজঃ সারস্বতী মেষী বারুণঃ পেত্বঃ ॥৫৯৷ অগ্নয়ে গায়ত্রায় ত্রিবৃতে রাথন্তরায়াষ্টাকপাল ইন্দ্রায় ত্ৰৈষ্ঠুভায় পঞ্চ দসায় বাহায়ৈকাদশকপালো বিশ্বেভ্যো দেবেভ্যো জাগতেভ্যঃ সপ্ত দশেভ্যো বৈরূপেভ্যো দ্বাদশকপালো মিত্রাবরুণাভ্যামানুষ্ঠুভাভ্যামেকবিংশ্যভ্যাং বৈরাজাভ্যাং পয়সা বৃহস্পতয়ে পাত্তায় ত্ৰিণবায় শারায় চরুঃ সবিত্র ঔষ্ণিহায় ত্রয়স্ত্রিংশায় রৈবতায় দ্বাদশকপালঃ প্রাজাপত্যশ্চরুদিত্যৈ বিষ্ণুপত্নে চরুরগয়ে বৈশ্বানরায় দ্বাদশকপালোহনুমত্যা অষ্টাকপালঃ ॥৬০৷৷

[কাণ্ড-৬০, মন্ত্র-৬০]

.

মন্ত্ৰার্থঃ— ১। হে জাতপ্রজ্ঞা অগ্নি! সমিদ্ধ বুদ্ধিসমূহের গর্ভ (রহস্য)-কে প্রকট করে, স্বাদিষ্ট ঘৃতকে দেবগণের মধ্যে পূর্ণ করে, বেগবান্ এবং দেবতাগণকে হবিঃ প্রাপনশীল তুমি দেবতাগণের প্রিয় যজ্ঞে দেবতাগণকে আনয়ন করো ৷

২। দেবযান পথকে জ্ঞাত হয়ে এবং ঘৃতের দ্বারা স্বকীয় অঙ্গকে আলিপ্ত করে অশ্ব, দেবগণকে প্রাপ্ত হোক। হে সূর্পণশীল অশ্ব! তোমাকে সকল কি সমূহের প্রাণীগণ সেবিত করুক। এই যজমানের নিমিত্ত তুমি অন্ন ধারিত করো।

৩। হে বেগবান্ অশ্ব! তুমি স্তুতিযোগ্য (স্তুত্য), তুমি বন্দনীয় (বা অশ্বেমেধের যোগ্য), তুমি মার্গে ব্যাপনশীল, তুমি পবিত্রও বটে। হে সৰ্পনশীল অশ্ব! বসুদেবগণের সাথে সপ্রীতি জাতপক্ষ, অগ্নিপ্রিয় ও বহনক্ষম তুমি হেন অশ্বকে জাতবেদা অগ্নি দেবগণের প্রাপ্ত করাক৷

৪। আমরা বিস্তৃত দৰ্ভাসনকে ঠিকমতো বিস্তৃত করছি। পৃথিবীর (অর্থাৎ বেদির) উপর বিস্তারের সাথে বিস্তৃত হয়ে থাকা, দেবগণের দ্বারা অধিষ্ঠিত দৰ্ভাসনকে সেবমানা ও সপ্রীতা অদিতি সুখময় করে। স্বর্গে ধারিত (স্থাপিত) করুক।

৫৷ সৌভাগ্যশালিনী, অনেক রূপ-সম্পন্ন, ঊর্ধ্বগমনশালী কপাট পক্ষের দ্বারা বিস্তাৰ্যমাণা, গমনশীলা, সমীচীনা, শব্দকারিণী এবং শোভায়মানা এই দ্বারদেবীগণ সুগমনা হোক।

৬। দ্যাবাপৃথিবীর মধ্যে সঞ্চারণকারিণী, যজ্ঞের মুখ অগ্নিহোত্রের কাল জ্ঞাপনশালিনী, স্বর্ণালঙ্কৃতা এবং একে অপরের বিলোম (প্রতিরূপ) স্বরূপ হে উষা ও রাত্রি বা পত্নী ও যজমান! আমি তোমাদের এই স্থানে যজ্ঞের বেদির উপর স্থাপন করছি।

৭। প্রথমভাবী, সমান রথশালী, শুভ্র বর্ণশালী, সর্ব ভুবনকে দর্শনশালী, (হে যজমান ও যজমানপত্নী!) তোমাদের দুজনের কর্মের নির্মাণকারী, উপদেশের দ্বারা আহবনীয় জ্যোতিকে উপদিষ্ট করণশালী তথা দৈবী হোতা অগ্নি ও বায়ুকে আমি প্রীণিত করছি৷

৮। আদিত্যবর্গের সাথে ভারতী দেবী আমাদের যজ্ঞকে কামনা করুক। রুদ্রবর্গের সাথে সরস্বতী দেবী আমাদের রক্ষা করুক এবং বসুগণের সাথে আহ্বান প্রাপ্তা ইড়াদেবী প্রীতির সাথে আমাদের রক্ষা করুক। ঐ তিন দেবী আমাদের যজ্ঞকে অমর দেবগণের মধ্যে স্থাপিত করুক।

৯। ত্বষ্টা দেরগণের কামনানুসারে যোগ্য বীর পুত্র ইন্দ্রকে উৎপন্ন করেছিলেন। ব্যাপনশীল ও মরণবান্ অশ্ব ত্বষ্টার দ্বারাই উৎপন্ন হয়ে থাকে। ত্বষ্টা এই সম্পূর্ণ ভূবনকে উৎপন্ন করেছেন। হে হোতা! এই রকম বহু কিছুর উৎপাদক ত্বদেবতাকে তুমি এই যজ্ঞে যজন করো।

১০। অশ্ব নিজেকে নিজেই ঘৃতে আলিপ্ত করুক। সে যথাকালে হবিঃ হয়ে দেবগণের প্রাপ্ত হোক। দেবলোকে দেবগণের জ্ঞাতা বনস্পতি-নূপ অগ্নির দ্বারা অস্বাদিত (ভস্মীকৃত বা পৰ্কিত হয়ে যাওয়া) হবিঃ সমূহকে দেবলোকে বহন (বা উপস্থাপিত) করুক।

১১। প্রজাপতির তপস্যায় অভিবৃদ্ধি প্রাপ্ত, এবং সেইকালেই অরণি হতে উৎপন্ন হয়ে, হে অগ্নি! তুমি যজ্ঞকে ধারিত করে আছ। স্বাহাকার কৃত হবিঃর সাথে, হে পুরোগামী অগ্নি! তুমি দেবলোকে গমন করো। ও সাধ্যদেবতা হবিঃ ভক্ষণ করুক৷

১২। হে অশ্ব! সমুদ্র (অন্তরিক্ষ বা সাগর) হতে প্রকট হয়ে অথবা লৌকিক অশ্ব হতে উৎপন্ন হয়ে তুমি যে ক্রন্দন করেছিলে, তখন তোমার মহিমা স্তুতিযোগ্য হয়েছিল। হে অর্বন! তখন তুমি শ্যেনের পক্ষদ্বয় (অর্থাৎ শ্যেনপক্ষীর ন্যায় শীঘ্রতা) এবং হরিণের পদ ইত্যাদি (অর্থাৎ হরিণের ন্যায় শীঘ্রগামিতা) জয় (অর্জন) করেছিলে।

১৩। যমের দ্বারা প্রদত্ত এই অশ্বকে সর্বপ্রথম ত্রিত (তিন লোকে স্থিত বায়ু) যুক্ত করেছিল। ইন্দ্র সর্বপ্রথম এতে অধিষ্ঠিত হয়েছিল (অর্থাৎ আরোহণ করেছিল); বিশ্বাবসু গন্ধর্ব সর্বপ্রথম এর রশনা (অর্থাৎ লাগাম) ধারণ করেছিল। বসুগণ সূর্য হতে এই অশ্বকে গঠন করেছিল৷

১৪। হে অশ্ব! তুমি যম (বা যমস্বরূপ), তুমি আদিত্য (বা আদিত্যস্বরূপ)। হে অর্ব! তুমি আপন গুহ্য (অর্থাৎ গোপন) কর্মের দ্বারা ত্ৰিত অর্থাৎ (তিন স্থানে স্থিত ইন্দ্র)-স্বরূপ। হে অশ্ব! তুমি প্রতিজ্ঞার দ্বারা সোমের সাথে একীভূত হয়েছ। জ্ঞানী ব্যক্তিগণ বলে থাকেন–দেবলোকে ঋক্‌-যজুঃ ও সামরূপ তোমার তিনটি বন্ধন আছে৷

১৫। হে অশ্ব! বিজ্ঞজন বলে থাকনে–দ্যুলোকে তোমার তিনটি বন্ধন আছে; জলে কৃষি বৃষ্টি বীজ এই তিন বন্ধন; এবং অন্তরিক্ষের অন্দরে মেঘ-বিদ্যুৎ-অশনি এই তিন বন্ধন। হে অশ্ব! আরও, বরুণ নাকি তোমাকে প্রশংসিত করে থাকে। তারা তোমার পরম জন্মকথা বলে থাকেন।

১৬। হে অশ্ব! এই তোমার শোধক বেতের চড়াই (চাবুক) প্রভৃতি রয়েছে। এবং এই তোমার খুরের দ্বারা খননীয় স্থান। এই স্থানে আমি তোমার সেই মধ্যভাগের বন্ধন রঞ্জুকে দর্শন করতে পারছি, যা এই যজ্ঞে কল্যাণরূপ তোমার রক্ষাকারক।

১৭। হে অশ্ব! অন্তরিক্ষ পথের দ্বারা নীচ হতে সূর্যকে প্রাপ্ত হওয়া তোমার আত্মাকে আমি মনে মনে বহু দূর হতে দর্শন করছি। সুগমন এবং অধূলি পথে গমনশীল তুমি, তোমার শিরকে আমি গমন করতে দর্শন করছি।

১৮। হে অশ্ব! এই সূর্যমণ্ডলে অন্ন বা বর্ষাকে জয়েছু তোমাকে আমি উত্তম দেবস্বরূপ দর্শন করছি। যখন মনুষ্য তোমাকে খাদ্য ও পানীয় সমর্পণ করে, তখন ভ্রমণশীল তুমি ঘাস ইত্যাদি ওষধিগুলিকে ভক্ষণ করে থাকো।

১৯। হে অশ্ব! রথ, সেবক মনুষ্য ইত্যাদি, গাভী এবং কন্যাগণের সৌভাগ্য সূব তোমারই পশ্চাতে অনুবর্তন করে; (অর্থাৎ তোমার হওয়ার পরই সম্ভব হয়)। মনুষ্যগণের সঙঘ তোমারই মিত্রতা আকাঙ্ক্ষা করে। দেবতাগণও তোমার বীর্য ও বলের অনুমান করে; (অর্থাৎ প্রশংসা করে)।

২০। যে ইন্দ্র সুবর্ণময় কিরণসম্পন্ন এবং যে এই অশ্বের উপর সর্বপ্রথম আরোহণ করেছিল, সেই ইন্দ্রও মহিমার ক্ষেত্রে এই অশ্বের পশ্চাতে ছিল। এর পদসমূহ মনের ন্যায় বেগশীলা হয়ে থাকে। দেবতাগণ এই অশ্বের ভক্ষণীয় হবিঃ লাভের নিমিত্ত আকাঙিক্ষত হয়ে আগমন করে।

২১। সূর্যরথে প্রেরক অশ্বারোহীর সাথে। যুক্ত, সংকুচিত মধ্যভাগ, তীক্ষ্ণ বীরভাবশীলা, দিব্য এবং গমনশীল সপ্ত অশ্ব, হংসের ন্যায় পংক্তিবদ্ধ হয়ে যুদ্ধেরত হয়ে থাকে–যখন এই অশ্ব সুন্দর সংগ্রামকে প্রাপ্ত করে।

২২। হে অশ্ব! তোমার শরীর স্বভাবতঃই গমনশীল এবং তোমার মন বায়ুর সমান গতিশীল। অনেক স্থানে অধিষ্ঠিত (অর্থাৎ বিদ্যুতে, চন্দ্রে, সূর্যে, অগ্নিতে ব্যাপ্ত) তোমার জ্যোতিঃসমূহ অরণ্যে বিকশিত হয়ে (দাবাগ্নিরূপে) সঞ্চরণ করছে৷

২৩৷ দেবগামী মনের দ্বারা ধ্যানকারী বেগবান্ অশ্ব বিশসন স্থানের উপর আগত হয়েছে। একটি ছাগ এর অগ্রভাবে ও একটি ছাগ এর পশ্চাতে পশ্চাতে বাধ্যভূমিতে আনীত হচ্ছে। তার পর এগুলির পশ্চাতে স্তুতিকর্তা ঋত্বিকগণ গমন করছে৷

২৪। আপন মাতা-পিতার অভিমুখে যে পরম স্থান স্বর্গ আছে–সেখানে অশ্ব উপস্থিত হয়েছে। অত্যন্ত রুচিকর হবিঃস্বরূপ অশ্ব আজ দেবতাগণের সন্নিকটে গমন করেছে। এক্ষণে সে হবিদাতা যজমানের নিমিত্ত বরণীয় ধন ইত্যাদির কামনা করছে৷

২৫। হে উৎপন্নজ্ঞান (জাবেদা) অগ্নি! যজমানের যজ্ঞগৃহে সমিদ্ধ আজ দেবগণের যজন করছ। হে মিত্রকে মান দানকারী অগ্নি! তুমি কবি (ক্রান্তদর্শী) ও প্রকৃষ্ট চিত্তশালী (উদার আশয়)। তুমি দেবগণকে যজ্ঞে আনীত করো ৷

২৬। হে জলের পৌত্র (অগ্নি)! হে শুভ জিহ্বাশালী অগ্নি! যজ্ঞের দেবযানরূপ গমনপথকে হবিঃর ঘৃতের দ্বারা আলিপ্ত করে, আপন প্রজাগণ বা কর্মসমূহের দ্বারা স্তোত্রগুলি তথা যজ্ঞকে সমৃদ্ধ করে তুমি আমাদের এই যজ্ঞকে দেবপ্রাপ্ত করো।

২৭। এই দেবগণের মধ্যে এই ঋত্বিকবৃন্দের দ্বারা প্রশংসনীয় তথা যজ্ঞের দ্বারা যজনীয় অগ্নির মহিমাকে আমরা সংস্তুত করছি। শুভ কর্ম, পবিত্র ও যজ্ঞকে ধারণকর্তা যে দেব সোম ও অগ্নি আছে–তারা দুজন হবিঃ সেবন করছে৷

২৮। স্ততিযোগ্য ও বন্দনীয় হে অগ্নি! হোমকৃত হয়ে তুমি বসুগণের সাথে সমান প্রীতির সাথে যজ্ঞে আগমন করো। মহান্ তুমি, তুমি দেবগণের আহ্বতা। অত্যন্ত যজনীয় বা যজনকারী তুমি প্রেরিত হয়ে এই দেবগণের যজন করো।

২৯। হে অগ্নি! দিবসের অগ্রভাগে শ্রুতি বাক্যানুসারে বেদিকে আচ্ছাদিত করার নিমিত্ত পূর্বগামী বৰ্হি (কুশ) বিস্তৃত করা হয়। পবিত্র হতে পবিত্র এবং সুখকরী বৰ্হি (কুশ) দেববর্গ অদিতির নিমিত্ত বিস্তৃত করে বিছিয়ে দেওয়া হয়।

৩০। সাবকাশা, বৃহৎ-দেহিনী এবং সুশোভিতা দ্বারদেবীগণ পূর্ণরূপে বিস্তৃত হয়ে প্রকাশিত হোক–যেমন জায়াসমূহ আপন পতিগণের নিমিত্ত নিজ নিজ জঙ্ঘা প্রকাশিত (বা উন্মুক্ত) করে। মহতী তথা সর্বগম বা দ্বারদেবীগণ দেবগণের নিমিত্ত আজ সুপ্রবেশা (শুভভাবে ভিতরে প্রবিষ্টা) হোক।

৩১। স্ময়মানা (পরস্পর হাস্যমানা), যজনীয়া, নিকটবর্তিনী, দিব্য স্ত্রীস্বরূপা, মহতী, সু-আভরণা, রূপশালিনী এবং শুভ ও কপিশ রূপ ধারণ করে উষা ও রাত্রির অধিষ্ঠাত্রী দেবীদ্বয় যজ্ঞবেদির উপর প্রতিষ্ঠিতা হোক।

৩২। দৈবী হোতৃত্বয় অগ্নি ও বায়ু এই যজ্ঞে আপন করুক। তারা প্রথম ভাবী, শুভ বাক্যবাদী, যজমানের যজনের নিমিত্ত যজ্ঞকে প্রজ্বলিত করণশালী, যজ্ঞের ঋত্বিকবৃন্দকে প্রেরণকারী, যজ্ঞে স্বয়ং কর্মচারী এবং শ্রুতির দ্বারা পূর্বস্থ আহবনীয় জ্যোতি (প্রাতঃ ও সায়ং হোম)-কে আদিষ্ট করণশীল।

৩৩। দেবী ভারতী শীঘ্র আমাদের যজ্ঞে আগমন করুক। মনুষ্যের ন্যায় চৈতন্যযুক্ত করে সরস্বতী ও ইড়া দেবীদ্বয়ও যজ্ঞে আগত হোন। সরস্বতী প্রভৃতি এই দেবীত্রয় এই দুর্ভাসনের উপর উপবেশন করুক।

৩৪। যিনি এই উৎপাদিকা দ্যাবাপৃথিবীকে এবং সমস্ত লোককে বিবিধ আকারে অবয়ববান্ করেছেন, হে হোতা! বিরাটাকারে যজনকারী এবং বিদ্বান্ তুমি আজ প্রেষিত হয়ে সেই দান ইত্যাদি গুণযুক্ত ত্বদেবকে যজ্ঞে পরিচরিত করো।

৩৫। হে হোতা! তুমি স্বয়ংই যথাকালে ত্বষ্টাদেবকে পথ্য বা মার্গর্ভূতা হবিঃ সমূহকে ঘৃতের দ্বারা আলিপ্ত করে প্রদান করো। শোধক ঘূপ, বিশসনকারী শমিতা (পশুঘাতক) এবং অগ্নিদেব মধুর ঘৃতের দ্বারা পশু-হবিঃকে স্বাদিষ্ট করুক৷

৩৬। যে অগ্নি তকালেই উৎপন্ন হয়ে যজ্ঞের নির্মাণ করে, যে অগ্নি দেবগণের পুরোগামী হয়ে থাকে, এই দৈবী হোত অগ্নির অনুশাসন এবং আহবনীয় রূপে স্থিত অগ্নির স্বাহাকৃত মন্ত্রে আহুত হবিঃ দেবগণ ভক্ষণ করুক৷

৩৭। অজ্ঞানী মনুষ্যের নিমিত্ত জ্ঞান তথা অরূপের নিমিত্ত রূপ উৎপন্ন করে, হে অগ্নি! তুমি আপন পার্শ্বে আবাস করণশীল ঋত্বিক-যজমানের সাথে ব্যক্ত হয়ে থাকো।

৩৮। যখন কবচধারী সেনানী যুদ্ধের মধ্যভাগ প্রাপ্ত হয় (অর্থাৎ যুদ্ধের মধ্যভাগে অবস্থান করে), তখন সেনাগণের অগ্রভাগ মেঘের বিদ্যুৎগর্জন ইত্যাদি সংকুল মুখের সমান ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। হে বীর! অনাবিদ্ধ শরীরের দ্বারা তুমি শত্রুকে বিজয় করো। কবচের (অর্থাৎ বর্মের) সেই মহিমা তোমাকে সদা রক্ষা করুক।

৩৯। ধনুষের দ্বারা আমরা গাভী জয় করব; ধনুষের দ্বারা আমরা মর্যাদা বা (পথের) সীমাকে জয় করব; ধনুষের দ্বারা আমরা ঘোর সংগ্রাম সমূহকে জয় করব। ধনুষ শত্রুর অপকার (মরণ) সম্ভবিত করে। ধনুষের দ্বারা আমরা সকল দিকসমূহকে জয় করব।

৪০। লোকে কানের কাছে কিছু বলার নিমিত্ত যেমন প্রিয় মিত্রকে আলিঙ্গন করতে পুনঃ পুনঃ গমন করে, তেমনই এই ধনুষের জ্যা ধনুর্ধারীর কানের নিকট গমন করছে এবং সংগ্রামে বিজয় প্রাপ্তি করানোর নিমিত্ত প্রেমিকা স্ত্রীর ন্যায় কিছু অস্ফুট ধ্বনি করছে; (ধনুকে তীর সংলগ্ন করতে জ্যা-টি ধনুর্ধারীর কর্ণ পর্যন্ত আকর্ষণ করতে হয়)।

৪১। সমনস্কা স্ত্রীগণের ন্যায় আচরণ করে, মাতা যেমন পুত্রকে ক্রোড়ে ধারণ করেন, সেই রকমে আপন মধ্যভাগে শর ধারণ করে ধনুষের দুই কোটি (প্রান্তভাগ), একে অপরের অভিপ্রায় জ্ঞাতশীলা এবং স্ফুরণশীলা দুই রমণীর সংকেত পূর্বক কাণ্ডের নিকট গমনের ন্যায়, অমিত্র-শত্রুগণকে অপাবিদ্ধ করুক।

৪২। অনেক শরের রক্ষক এবং অনেক বাণ এর পুত্রস্থানীয়; যুদ্ধপ্রাপ্ত হয়ে এই তূণীর চিঞ্চা (অর্থাৎ চি চি) ধ্বনি করছে। প্রেরিত এই তূণীর পৃষ্ঠভাগে ঠিক মতো বদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ গ্রথিত হওয়া (সমবেত) শত্রু সেনাকে বিজয় করে।

৪৩। সুসারথি রথে আরোহিত হয়ে যে যে স্থানে গমন করতে ইচ্ছা করে, সম্মুখস্থ অশ্বগুলিকে সেই সেই স্থানে প্রেরণ করে। হে মনুষ্য! লাগামের মহিমাকে স্তুতি করো, কারণ রঞ্জু গুলি অশ্বের পিছন হতে অগ্রে অগ্রে গমনকারী অশ্বের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে।

৪৪৷ অশ্বের উপর উপবিষ্ট আরোহীগণ তীব্র নিনাদ করছে। অশ্বগুলিও রথের সাথে আঘাত প্রাপ্ত হচ্ছে এবং পশ্চাতে আবর্তন করতে গিয়ে তারা তাদের পদের (বা খুরের) দ্বারা, আঘাত পূর্বক শত্রুগণকে বিনাশ করছে৷

৪৫। এই রথের নাম হবির্ধান শকট (কারণ এর উপর যজ্ঞের হবিঃ রক্ষিত হয়); এই শকটকে রথবাহনও বলা হয় (কারণ শকটের দ্বারা এই রথ স্তুত হয়)। যে শকটের উপর যোদ্ধার আয়ুধ তথা কবচ রক্ষিত হয়, সেই সুখকরী রথকে প্রসন্ন হয়ে আমরা সদাই অধিষ্ঠিত করি।

৪৬। আসনপট্টে সুখে অবস্থানকারী, রক্ষণ-কুশল, আয়ুষ্য-ধাতা (আয়ুর দাতা), কষ্টের ক্ষেত্রে সহায়ক, শক্তিশালী, গম্ভীর, বিচিত্র সৈন্যবান, বাণে ধনী (অর্থাৎ যার প্রচুর বাণ আছে), অহিংসক, নিজেও বীর, উদার এবং শূরবৃন্দকে অভিভূত করতে সমর্থ–এমন একজন কেউ আমাদের রথের সারথি হোক।

৪৭। ব্রাহ্মণ, সোমপায়ী পিতৃগণ এবং নিপাপা দ্যাবাপৃথিবী আমাদের নিমিত্ত কল্যাণরূপ হোক। পূষাদেব আমাদের বিনাশ হতে রক্ষা করুক। সত্যের বর্ধক হে দেবগণ। যুদ্ধে আমাদের রক্ষা করো। আমাদের উপর পাপী-নিন্দক শত্রুর সমর্থন হোক (অর্থাৎ আমরা যেন পাপ ইতাদির বশীভূত না হই)।

৪৮। উড্ডীয়মান পক্ষীর পুচ্ছ ধারণ (বা স্পর্শ) কারী এই বাণের দান্ত (ফলা বা সূক্ষ্ম অগ্রভাগ) শত্রুকে অনুসন্ধান করছে এবং চর্মের স্নায়ুর দ্বারা বন্ধনীকৃত ধনুষের দ্বারা প্রেরিত হয়ে শত্রুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। যেস্থানে সংগ্রামক্ষেত্রে মনুষ্যগণ ইতস্ততঃ পলায়ন করে, সেই সংগ্রামে এই বাণ আমাদের সুখ প্রদান করুক।

৪৯। হে ঋজুগতি বাণ! তুমি আমাদের বর্জন করো। আমাদের শরীর প্রস্তর (অর্থাৎ প্রস্তরের মতো কঠিন হয়ে যাক। সোম আমাদের আপন বলুকজীবন দান করুক। অদিতি দেবী আমাদের সুখ প্রদান করুক।

৫০। এই অশ্বের কশা (চাবুক) মাংসপূর্ণ স্থানকে তাড়িত করছে (অর্থাৎ অশ্বারোহী অশ্বের মাংসস্ফীত স্থানে আঘাত করে তাকে ধাবমান করছে); এর কটিভাগের তাড়না করছে। হে অশ্বপ্রেরিকা কশা! প্রকৃষ্টচিত্ত অশ্বকে যুদ্ধে প্রেরিত করো–চালিত করো। (পূর্ব মন্ত্রে বাণের ন্যায়, এই মন্ত্রে অশ্বের চালনকারী চাবুকের স্তুতি করা হয়েছে)।

৫১। সর্পের ন্যায় ফণার দ্বারা হস্তীকে বেষ্টন, (আচ্ছাদন) করণশীল, জ্যা-র আঘাতকে সহনশীল শূর তথ্য সকল রক্ষোপায়কে জ্ঞাতশীল হস্তত্রাণ যোদ্ধাপুরুষকে সর্বতঃ রক্ষা করুক। (এই স্থানে যোদ্ধার কফোণি বা কনুই অবধি মণিবন্ধ পর্যন্ত রাহুভাগকে যে কোনও আঘাত থেকে রক্ষাকারী প্রকোষ্ঠত্রাতা বা হস্তত্রাণের স্তুতি করা হয়েছে। এই হস্তত্রাণ যোদ্ধার বাহুকে তেমনভাবেই আচ্ছাদিত করে রাখে যেমনভাবে সর্প তার শরীর দিয়ে হস্তীকে বেষ্টন করে থাকে….ইত্যাদি)।

৫২। হে বনস্পতিময় রথ! তুমি আমাদের মিত্রভূত এবং স্বয়ংই বীর, তুমি দৃঢ়-অবয়বশালী হও। তুমি পশুচর্মের রঞ্জুর দ্বারা বন্ধন প্রাপ্ত হয়েছ। দৃঢ় হয়েছ। তোমার উপর আরোহণকারী জয়যোগ্য বীর শত্রুর ধন ইত্যাদিকে জয় করুক৷

৫৩। দ্যাবাপৃথিবী হতে সংগৃহীত তেজঃ সম্পন্ন, বনস্পতিসমূহ হতে সংগৃহীত অভিভাবকারী বলসম্পন্ন, জলের সার বা রস গ্রহণকারী এবং পশুচর্মের রজ্জুতে বন্ধনপ্রাপ্ত এই ইন্দ্রের বজ্রাংশস্বরূপ রথকে, হে অধ্বর্যু! তুমি হবির দ্বারা যজন করো। (এই স্থানে রথের স্তুতি করা হয়েছে)।

৫৪। ইন্দ্রে বজ্রাংশ, মরুতের মুখরূপ, মিত্রের গর্ভ (অর্থাৎ তেজ) এবং বরুণের নাভি–এই রথ। সেই তুমি হেন হে রথদেব! আমাদের এই হবিঃর আহুতিকে সেবন করে শত্রুর হবিযোগ্য ধন ইত্যাদি ছিনিয়ে লও।]

৫৫। হে দুন্দুভি। তুমি আপন নিনাদে দ্যাবাপৃথিরীকে ঝঙ্কত করো। সর্বত্র স্থিত সংসার তোমাকে সর্বত্র বাদ্যবান বলে জ্ঞাত হোক (তোমার নিনাদ সংসারে পূর্ণ হয়ে থাক)। হে দুন্দুভি! সেই তুমি ইন্দ্র এবং অন্য দেবগণের সাথে প্রীতিযুক্ত হয়ে দূর হতেও দূরে বিদ্যমান শত্রুকে অগ্রসর হতে বাধা প্রদান করো ৷

৫৬। হে দুন্দুভি! তুমুল ধ্বনি করো। আমাদের মধ্যে বল-ওজঃ ধারিত করো। শত্রুগণকে বাধমান করতে ধ্বনি করো। হে দুন্দুভি! তুমি দুঃখদায়ী শত্রুগণকে প্রতিষিদ্ধ করো। তুমি ইন্দ্রের মুষ্টিস্বরূপ। তুমি দৃঢ়া হয়ো।

৫৭। হে ইন্দ্র! এই শত্রুসৈন্যদের নানাস্থানে বিক্ষিপ্ত করে দাও। এই আগুয়ান শত্রুসেনাদের পশ্চাতে প্রত্যাবর্তিত করিয়ে দাও। বিজয়ের নিনাদকারী দুন্দুভি সমুদায় বাদন করছে। আমাদের অশ্ববেগ (অশ্বের ন্যায় বেগবা) যোদ্ধাগণ সর্বত্র সঞ্চরণ করছে। হে ইন্দ্র! এক্ষণে আমাদের রথীগণই বিজয় লাভ করুক।

৫৮। কৃষ্ণ গ্রীবাশালী ছাগ অগ্নির পশু। ভেড়ী (স্ত্রী মেষ) সরস্বতী সম্বন্ধিনী পশু। পীতাভ পশু সোমদেবতাক হয়ে থাকে। শ্যামবর্ণের পশু পূদেবতাক হয়ে থাকে। কৃষ্ণবর্ণ পৃষ্ঠভাগশালী যে পশু, তা বৃহস্পতিদেবতাক। হয়। বিশ্বদেবতাক পশু হলো বিচিত্রবর্ণসম্পন্ন।রক্তাভ পশু ইন্দ্রদেবতাক। ধূসরবর্ণের পশু মরুৎদেবতাক। দৃঢ়াঙ্গবিশিষ্ট পশু ইন্দ্র ও অগ্নি দেবতাক হয়ে থাকে। নিম্নভাগে শ্বেতবর্ণশালী পশু সবিতা দেবতাক। কৃষ্ণবর্ণের পশু বরুণদেবতাকে হয় অথবা এক পদ কৃষ্ণবর্ণবিশিষ্ট ও গতিশীল পশু বরুণদেবতার হয়ে থাকে৷

৫৯। রক্তবর্ণের তিলকবিশিষ্ট বৃষ-অনীক (মুখ বা সেনা)-বান্ অগ্নির নিমিত্ত আলম্ভন করা হয়। নিম্নভাগে শ্বেতবর্ণশালী দুটি পশু সবিতাদেবতার উদ্দেশ্যে আলম্ভন করা হয়। শ্বেতবর্ণের নাভি-সম্পন্ন দুটি পশু পুষা দেবতার উদ্দেশ্যে, পীতাভ ও শৃঙ্গহীন দুটি পশু বিশ্বদেবগণের নিমিত্ত, ধূসর বর্ণের পশু মরুৎ দেবতার উদ্দেশ্যে, কৃষ্ণ বর্ণের ছাগ অগ্নিদেবতার নিমিত্ত, মেষী সরস্বতী দেবীর উদ্দেশ্যে এবং বেগবান্ পশু বরুণদেবের নিমিত্ত আলম্ভন করা হয়।

৬০। গায়ত্রী ছন্দ, ত্রিবৃৎস্তোম এবং রথন্তর সামের দ্বারা স্তুত্য অগ্নির নিমিত্ত অষ্টকপালে (আটটি সরাপাত্রে) পনকৃত পুরোডাশ প্রস্তুত করা উচিত। ত্রিষ্ঠুভ ছন্দ, পঞ্চদশস্তোম ও বৃহৎ সামের দ্বারা সংস্তুত ইন্দ্রের নিমিত্ত একাদশ কপালে সংস্কৃত পুরোডাশ পরুন করা কর্তব্য। জগতী ছন্দ, সপ্তদশস্তোম এবং বৈরূপ সামের দ্বারা সংস্তুত বিশ্বদেবতাগণের নিমিত্ত দ্বাদশ কপালে পুরোডাশ পঙ্কন করণীয়। অনুষ্টুপ ছন্দ, একবিংশস্তোম এবং বৈরাজ সামের দ্বারা সংস্তুত মিত্র ও বরুণ দেবতার নিমিত্ত দুগ্ধে পনকৃত চরু প্রস্তুত করণীয়। পক্তি ছন্দ, ত্রিণব (সাতাশ) স্তোম এবং শাকর সামের দ্বারা সংস্তুত বৃহস্পতি দেবতার নিমিত্ত চরু পনীয়। উষ্ণি ছন্দ, ত্রয়স্ত্রিংশ (তেত্রিশ) স্তোম এবং রৈবতসামের দ্বারা সংস্তুত সবিতা দেবতার নিমিত্ত দ্বাদশ কপালে সংস্কৃত পুরোডাশ পঙ্কন করণীয়। প্রজাপতি দেবতাক চরু পঙ্কন করা উচিত। বিষ্ণুর পত্নী অদিতির নিমিত্তও চরুই পক্কন করণীয়। বৈশ্বানর অগ্নির নিমিত্ত দ্বাদশ কপাল পুরোডাশ এবং অনুমতি দেবতার উদ্দেশ্য অষ্ট কপালে সংস্কৃত পুরোডাশ পৰ্কন ও প্রদান করণীয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *