নদীর ওপর দিয়ে ভেসে চলেছে জমিদারের বজরা। আষাঢ় মাসের আকাশে নবীন মেঘ লুকোচুরি খেলে দিনমণির সঙ্গে, কখনও হঠাৎ এক ঝাঁক পাখি উড়ে যাবার মতন এক পশলা বৃষ্টি, কখনও ঝলমলে রোদ। দু পাশের তটভূমি জলরঙে আঁকা। কোথাও জনবসতি, কোথাও নিবিড় গাছপালা, আবার মাঝে মাঝে শুন্য প্রান্তর। নিছক শুন্য প্রান্তর কোনও শিল্পীর তুলিতে ধরা পড়ে না, কিন্তু প্রকৃতির মধ্যে তা-ও ছবি হয়ে যায়। কখনও সূর্যালোক, কখনও মেঘের ছায়ায় ছবিগুলির রং বদলে যায়।
বজরাটি বিশেষ বড় নয়, দাঁড়ি-মাঝির সংখ্যা ছ’জন। ছাদের ওপর দুজন বন্দুকধারী প্রহরী বসে আছে ছাতা মাথায় দিয়ে। একই হুঁকো-কলকে পরম্পর বদলাবদলি করতে করতে তারা গল্প করছে নিচু গলায়। এ বজরাব মাল্লাদের অকারণে হল্লা করার নিষেধ আছে, খুব প্রয়োজন না হলে তারা কথাই বলে না, পথনির্দেশ হয় হাত তুলে কিংবা চোখের ইঙ্গিতে।
মূল বজরাটির সঙ্গে আর একটি ছোট নৌকোও বাঁধা আছে। সেখানে রান্নাবান্নার ব্যবস্থা। জেলে ডিঙি থামিয়ে কেনা হয় টাটকা মাছ। কখনও পাশ দিয়ে স্টিমার গেলে নদী উত্তাল হয়ে ওঠে, বজরা ও ছোট নৌকাটি প্রবলভাবে দোলে, ছোট নৌকোটিরই ছটফটানি বেশি, যেন বড় ভাইয়ের হাত ছাড়িয়ে ছুটে যেতে চায় এক দুরন্ত বালক।
বজরার ভেতরের কক্ষে একজনই যাত্রী, খাটের ওপর তাকিয়ায় ঠেস দিয়ে অর্ধ শয়ান রয়েছেন এক ভ্রাম্যমাণ জমিদার, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির কনিষ্ঠ সন্তান রবীন্দ্র। গোষ্ঠীপতি দেবেন্দ্রনাথের এতগুলি সন্তান, তবু বাংলার বিভিন্ন জেলা ও উড়িষ্যায় ছড়ানো তাঁর জমিদারি তালুক প্রত্যক্ষভাবে তদারকি করার জন্য আর কারুকে পাওয়া যায় না। জ্যেষ্ঠ পুত্র দ্বিজেন্দ্রনাথ বিদ্বান ও দার্শনিক, কিন্তু স্বভাবে একেবারে ভোলানাথ, বিষয়কর্মের দিকে তাঁর কোনও ঝোঁক নেই, দ্বিতীয় পুত্র সত্যেন্দ্রনাথ চাকুরি জীবিকা বেছে নিয়েছেন, হেমেন্দ্রনাথ অকাল মৃত। দুটি পুত্র বিকৃত মস্তিষ্ক। সবচেয়ে বেশি ভরসা করা গিয়েছিল যার ওপর, সেই হতাশ করেছে সবচেয়ে বেশি। জাহাজ ব্যবসায়ে ভরাডুবির পর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ যেন বর্তিকা শুন্য এক বাতিদান, কোনও কিছুতেই আর উদ্যম নেই, মেজ বউঠানের আঁচলের তলায় নিষ্প্রভ হয়ে রয়েছেন, ভয়ে পিতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান না। পিতাও আঁর এই পুত্রটির মুখদর্শনে আর আগ্রহী নন।
দ্বিজেন্দ্রনাথের ছেলে দ্বিপেন্দ্রনাথ সাবালক হবার পর থেকেই পারিবারিক অনেক দায়-দায়িত্ব নিয়েছেন, তাঁর যোগ্যতাও আছে, এই নাতিটিকে দেবেন্দ্রনাথেরও বিশেষ পছন্দ। কিন্তু দ্বিপু কলকাতার বিলাসীজীবনে অভ্যস্ত, খাজাঞ্চিখানায় হিসেবপত্র দেখতে তিনি রাজি আছেন, গ্রাম বাংলায় ঘোরাঘুরি করা তাঁর পছন্দ নয়। এ দিকে প্রত্যক্ষ পরিদর্শন না হওয়ায় জমিদারির আয় কমে আসছে। বিলাসব্যসন, পারিবারিক সংস্কৃতিচর্চা ও ব্রাহ্মধর্মের প্রসারের জন্য যুক্ত হতে ব্যয় করা হয়, কিন্তু সেই টাকা যে কোথা থেকে আসে তা যেন ছেলেরা বুঝতে চায় না। অগত্যা দেবেন্দ্রনাথ তাঁর এই কনিষ্ঠ পুত্রটিকেই সব কটি জমিদারি দেখাশুনোর ভার দিয়েছেন। সে কলকাতায় বসে অযথা সময় অতিবাহিত করছে কি না, সে দিকে তাঁর তীক্ষ্ণ নজর আছে। বছর খানেকের মধ্যেই এ কাজে রবীন্দ্র যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় দেওয়ায় দেবেন্দ্রনাথ আপাতত এই সন্তানটির প্রতি বেশ প্রসন্ন।
রবীন্দ্র এখন বত্রিশ বছর বয়স্ক এক পূর্ণ যুবা, তিনটি সন্তানের জনক। স্বাস্থ্য ও রূপে অত্যুজ্জ্বল। শিলাইদহের কুঠিবাড়ির কাজ সম্পন্ন করে সে এখন চলেছে সাজাদপুরে। শিলাইদহ কলকাতা থেকে খুব বেশি দূর নয়, সাজাদপুর বা শাহজাদপুর পাবনা জেলার ইউসুফশাহী পরগনায়। বজরাটি এখন চলেছে গোয়ালন্দ পার হয়ে সেই দিকে।
প্রত্যেকটি জমিদারিতেই পাকা কুঠিবাড়ি আছে বটে, রবীন্দ্র অনেক সময় বজরাতেই রাত্রিবাস করতে ভালবাসে। নদীপথে যাত্রার সময় কিংবা মধ্য নদীতে নোঙর করে রাত্রিবাসের ইচ্ছে হলে যাতে সুখস্বাচ্ছন্দ্যের কোনও ব্যাঘাত না ঘটে, সে জন্য সব ব্যবস্থা করা থাকে। প্রতিবার কলকাতা ত্যাগের সময় সঙ্গে দিয়ে দেওয়া হয় কাঁড়িকাড়ি কামিনীভোগ চাল, সোনা মুগ ডাল, বাদাম, কিশমিশ, কলা, কমলালেবু, পেয়ারা, আপেল, ওট মিল, কোয়েকার ওট, ঝুনা নারকোল, পান-সুপারি, সরষের তেল, আমসত্ত্ব, আমচুর, হাঁড়ি ভর্তি মিষ্টি, সুগন্ধ সাবান, হ্যাজলিন ক্রিম, টুথ পাউডার। এ ছাড়া কয়েক কেস ব্র্যান্ডি, শ্যাম্পেইন ও ওয়াইন। শেষোক্ত দ্রব্যগুলির প্রতি অবশ্য রবীন্দ্রের কোনও আসক্তি নেই, সে হিসেবে অনান্য জমিদারতনয়দের তুলনায় রবীন্দ্র এক মূর্তিমান বাতিক্রম! তবু ওগুলো রাখতে হয়, সাহেব সুবোরা কখনও আসে, দেশীয় উচ্চপদস্থ রাজ কর্মচারী কিংবা অন্য জমিদার বন্ধু, আপ্যায়ন করতে হয় তাদের।
মধ্যাহ্নের নদীতে বজরাটি চলেছে মন্থর গতিতে, ভেতরের কামরায় জমিদার নন্দনটির হাতে নেই সুরার পাত্র কিংবা আলবোলার নল, কোনও গায়িকা বা নর্তকী বা বাঈজী ব সঙ্গিনী হয় না কখনও, সে এখন হিসাবের খাতা খুলেও বসেনি কিংবা দিবানিদ্রাও দিচ্ছে না। সে এখন ব্যাপৃত এক সম্পূর্ণ অ-জমিদারসুলভ কাজে। তার পোশাকও জমিদারের মতন নয়, বহুমূল্য চোগা-চাপকান ঝোলানো রয়েছে দেওয়ালের হুকে, সে পরে আছে শুধু একটা ধুতি, খালি গা। জানলা দিয়ে রোদ এসে পড়েছে তার গৌরবর্ণ শরীরে, বুকে বিন্দু বিন্দু ঘাম, গরমে তার ভুক্ষেপ নেই, তার হাতে স্লেট ও পেন্সিল, সে কবিতা লিখছে। সে এখন জমিদার নয়, বঙ্গ ভাষার অগ্রগণ্য কবি। কবিতা রচনার সময় সে দু এক পঙক্তি লিখেই চোখ বন্ধ করে, সদ্য লিখিত পঙক্তিগুলি গুনগুন করে কয়েকবার, পছন্দ হলে ওষ্ঠ দুটিতে হাসি ফোটে, পরবর্তী পঙক্তি রচনায় মন দেয়। স্লেটে লেখা তার অনেক দিনের অভ্যেস, কাটাকুটি মুছে ফেলার সুবিধে হয়, এক স্লেট লেখা হয়ে গেলে সে একটি বাঁধানো খাতায় কপি করে। কখনও সঙ্গে সঙ্গে অন্য কাগজে দ্বিতীয় একটি কপি করে কোনও প্রিয়জনকে চিঠির সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়।
যারা বলে, কবিরা পাঠকদের মুখ চেয়ে বা মনোরঞ্জনের জন্য লেখে না, তারা ভুল বলে। কোনও কবিই শুধু নিজের জন্য লেখে না, লিখতে লিখতে কোনও একজন বিশেষ পাঠক কিংবা কয়েকজন অন্তরঙ্গ পাঠকের কথা মাঝে মাঝে তার মনে আসেই। সমগ্ৰ কৈশোর জুড়ে ও প্রথম যৌবনে রবীন্দ্রর মনে পড়ত নতুন বউঠানের মুখ। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রের ব রচনার প্রথম পাঠিকা। তাঁর পছন্দ হবে কি না সে বিষয়ে রবীন্দ্রকে সব সময় সচেতন থাকতে হত। কাদম্বরী চলে গেছেন, অভিমানভরে এ পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছেন, সে-ও প্রায় দশ বছর হয়ে গেল। তিনি চলে যাবার পরেও প্রথম প্রথম দু-এক বছর রবীন্দ্র যখন-তখন তাঁর ছায়ামূর্তি দেখতে পেত, টের পেত তাঁর শরীরহীন উপস্থিতি, প্রায় সব রচনাতেই তিনি কোথাও না কোথাও থাকতেন। ক্রমশ সে অনুভূতি ফিকে হয়ে এসেছে। তারপর কয়েকটি বছর লেখার সময় মনে পড়ত প্রিয়নাথ সেন কিংবা অক্ষয় চৌধুরীর মতন বন্ধুদের কথা, এঁদের মতামতের বিশেষ মূল্য আছে রবীন্দ্রের কাছে।
ইদানীং প্রায় সব সময় মনে পড়ে আর একজনের মুখ। সে এখন কিশোরী থেকে তরুণী হয়েছে। ভাইঝি ইন্দিরা আর রবীন্দ্রের স্ত্রী মৃণালিনী প্রায় একই তো বয়েসী, তবু দুজনের মধ্যে কত তফাত। মৃণালিনীকে শিক্ষিত, সুসংস্কৃত করে তোলার চেষ্টা তো কম হয়নি, তবু কাব্যরুচি জন্মালো না, গানবাজনার দিকেও মন গেল না। একটা কবিতা লিখে কিংবা একটা গান রচনা করে সঙ্গে সঙ্গে তাকে শোনাবার কোনও ইচ্ছেই জাগে না তার স্বামীর। কারণ প্রকৃত রসগ্রহণ করতে পারলে মুখে যে ভাববাল্লাস ফুটে ওঠে, তা যে কোনওদিন দেখতে পাননি রবীন্দ্র। একটু দীর্ঘ কিছু শোনাতে গেলে কখনও কখনও সে ঘুমিয়ে পড়েছে। গৃহিণী বা শয্যাসঙ্গিনী হিসেবে অবশ্য তার ত্রুটি নেই। এই ক’বছরে তিনটি ফুটফুটে ছেলেমেয়ের জন্ম দিয়েছে। মৃণালিনী রবীন্দ্রের সংসারের যোগ্য সঙ্গিনী, কিন্তু সে তার মর্ম কিংবা নর্মসঙ্গিনী হতে পারল না কিছুতেই। যখন বাড়িতে স্ত্রী পুত্রকন্যাদের সঙ্গে থকে রবীন্দ্র, তখন সেও কিছুক্ষণের জন্য সংসারী হয়ে যায়, ছেলেমেয়েদের চায়, আদর করে। যখন বাইরে আসে, একা থাকে, তখনও মাঝেমাঝে ওদের কথা মনে পড়ে ঠিকই, ইচ্ছে করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যেতে। কিন্তু যখন সে কবিতা রচনা করে, তখন সে তো কাকল স্বামী কিংবা পিতা নয়। সে যেন এক ব্যাকুল বিরহী, কবিতার ছত্রে ছত্রে বিচ্ছেদের বেদনা। কবিরা আসলে কোনও কিছুই পায় না, এমনকী সব কিছু দিলেও যযাতির মতন তাদের অতৃপ্তি থেকে যায়, শুধু ভোগের অতৃপ্তি নয়, কীসের যে অতৃপ্তি, কীসের যে বেদনাবোধ তা ব্যাখ্যা করে বোঝানোও যায় না, সেই বেদনা থেকেই তো উৎসারিত হয় কবিতা। সার্থক বা পরিতৃপ্ত কবি বলতে এ জগতে কিছু নেই।
এখন যে-কোনও কিছু লিখলেই ইচ্ছে করে ইন্দিরাকে দেখাতে কিংবা সে কথা জানাতে। রূপে সে ঠাকুরবাড়ির অন্য সব কন্যা বা বধূদেরও ছাড়িয়ে গেছে, এবং তার গুণেরও শেষ নেই। সদ্য সে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েব পরীক্ষার্থিনীদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে ‘পদ্মাবতী স্বর্ণপদক’ পেয়েছে। ইংবিজি, ফরাসি ও বাংলায় তার সমান জ্ঞান, পশ্চিমি ও দেশীয় সঙ্গীত দুটোই খুব ভাল জানে, রবীন্দ্রের গানের স্বরলিপি করে ফেলতে পারে অতি দ্রুত। এত রূপসী ও গুণবতী হলেও সে বিয়ে করতে চায় না। কুড়ি বছর বয়েস হয়ে গেল, এখনও বিবাহে সে অনিচ্ছুক, এ কেমন কথা! কীসের জন্য যে তার আপত্তি, তা সে স্পষ্ট বুঝিয়েও বলতে পারে না কারুকে। তবে কি সে রবিকাকাকে ছেড়ে থাকতে চায় না?
একেবারে শিশু বয়স থেকেই সে রবিকাকার ন্যাওটা। এখন তাদের সম্পর্কটা এমন একটা নিবিড় ঘনিষ্ঠতা পৌঁছেছে যেন কেউ কারুকে ছেড়ে সত্যিই আর থাকতে পারে না। রবীন্দ্রের মতন এমন পুরুষশ্রেষ্ঠ, এমন প্রতিভাবান, এমন সহৃদয় মানুষকে এত কাছাকাছি পেয়েছে ইন্দিরা, অন্য কোনও পুরুষকে তার পছন্দ হবে কেন? রবীন্দ্র যখন বাইরে কোথাও যায়, তখন ইন্দিরা প্রতিদিন একটি বা দুটি চিঠি লেখে, রবীন্দ্রও লম্বা লম্বা উত্তর দেয়, এমনকী অন্য সব কাজ ফেলেও ইন্দিরাকে আগে চিঠি লেখা চাই-ই। নিজের মনটাকে এমন সম্পূর্ণভাবে আর কারুর কাছে মেলে ধরতে পারে না রবীন্দ্র, তার সে রকম কোনও পুরুষ বন্ধু নেই, পুরুষদের সামনে সে খানিকটা আড়ষ্ট কিংবা কেতাদুরস্তু, মেয়েদের কাছেই সে স্বচ্ছন্দ হতে পারে।
এর মধ্যে দু-এক বছর আগে রবীন্দ্র আর একবার ইংলন্ডে গিয়েছিল। এবার আর পড়াশুনোর অজুহাতে নয়, নিছকই ভ্রমণের অভিলাষে। বাবামশাইয়ের কাছ থেকে টাকাপয়সা কিছু পাওয়া যায়নি, দেবেন্দ্রনাথ আগেই বলে দিয়েছিলেন, তাঁর কোনও ছেলেকে বিলেত যাবার ব্যাপারে তিনি আর এক পয়সাও দেবেন না। রবীন্দ্র তিন শো টাকা মাসোহারা পায়, তা ছাড়া অন্য উপার্জন নেই, সে টাকা থেকেও কিছু জমে না, বরং বেশি ব্যয় হয়ে যায়। বিলেত যাবার জন্য জাহাজ ভাড়ার টাকা তাকে ধার করত হয়েছিল। সত্যপ্রসাদের কাছ থেকে। সত্য বেশ হিসেবি মানুষ হয়ে উঠেছে, এখন সে মামাদের প্রায়ই টাকা ধার দেয়, সুদও নেয়।
রবীন্দ্র ভেবেছিল, নির্ভার চিত্তে সে ইংলন্ড ও ইওরোপের কয়েকটি দেশ ঘুরে আসবে, সেসব দেশের শিল্প-সঙ্গীত-নাটক উপভোগ করবে। ওসব দেশে একলা বেড়াতে ভাল লাগে না, সঙ্গে ছিল বন্ধু লোকেন পালিত, তার যেমন তীক্ষ্ণ মেধা, তেমনি রসজ্ঞান। সেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথও সেইসময় ছুটি কাটাতে বিলেত যাচ্ছিলেন, সুতরাং রবীন্দ্রকে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও নিতে হল না, কিন্তু লন্ডনে পৌঁছবার কয়েকদিন পর থেকেই রবীন্দ্রর মন কেমন করতে লাগল। একেবারে ছেলেমানুষের মতন। সেপ্টেম্বর মাসে লন্ডনের আবহাওয়া অতি চমৎকার, বেড়াবার পক্ষে আদর্শ, কিন্তু রবীন্দ্রর মন ছটফট করে। প্রতিদিন সকালে উঠেই ডাকবাক্সের কাছে ছুটে যায়, চিঠি না থাকলে মনটা বিশাদ হয়ে যায়। চিঠি পেলেও স্বস্তি নেই, ইন্দিরা প্রতি চিঠিতেই লেখে, তুমি আর কতদিন ওখানে থাকবে, আমার একটুও ভাল লাগছে না, আমার কিছুই ভাল লাগে না।
একটা চিঠিতে ইন্দিরা লিখল যে রবিকাকা যদি এক্ষুনি ফিরে না আসে, তা হলে সে আর চিঠিই লিখবে না। সত্যিই সে আর চিঠি লেখে না। আগে রবীন্দ্র এতটা বুঝতে পারেনি যে ইন্দিরার সঙ্গে তার হৃদয়ের তন্ত্রী, কতখানি জড়িয়ে আছে, সে অভিমান করে চিঠি লিখছে না, এটা যেন রবীন্দ্রের কাছে মৃত্যুযন্ত্রণার মতন। স্ত্রীর চিঠি আসে, তাতে সংসারের খবর থাকে, সে রকম চিঠি পেলে আশ্বস্ত হওয়া যায় কিন্তু মন ভরে না। একদিন সকালে সত্যেন্দ্রনাথ একটা খাম খোলা চিঠি দিলেন, রবীন্দ্রর বারবার অনুরোধপত্রের উত্তরে ইন্দিরা লিখেছে দায়সারা কয়েক লাইন, তাও দিয়েছে বাবাকে লেখা চিঠির খামে। অপমানে রবীন্দ্রর মুখখানা পাংশুবর্ণ হয়ে গেল। ইন্দিরা সব সময় তাকে আলাদা লেফাফায় চিঠি পাঠায়। তা হলে কি সত্যিই সে আর কোনও সম্পর্ক রাখতে চায় না? এ কথা ভাবতেই রবীন্দ্রর মনে হয় তা হলে তার জীবনটাই শুন্য ও নিষ্ফল হয়ে যাবে।
সেদিনই সে ঠিক করল ফিরে আসবে। সত্যেন্দ্রনাথ ও লোকেন পালিত দারুণ বিস্মিত। রবীন্দ্র তিন মাসের রিটার্ন টিকিট কেটে এসেছে, এক মাস যেতে না যেতেই সে ফেরার জন্য ব্যস্ত কেন? এখনও অনেক ভ্রমণের পরিকল্পনা রয়েছে। দেশ থেকে কোনও দুঃসংবাদ আসেনি, সবাই ভাল আছে, তবু রবীন্দ্র কেন এত উতলা হয়ে পড়েছে, তা কেউ বুঝবে না। ওরা ওকে ধরে রাখার অনেক চেষ্টা করলেন, সত্যেন্দ্রনাথ নিজেও ফিরবেন তিন মাস পর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে, সে রকম ঠিক করা আছে। কিন্তু ছোট ভাইটি এখন আর তা মানতে চাইছে না। প্রিয়জনদের জন্য উপহার কেনাকাটি শুরু করে দিল রবীন্দ্র, আর সকলের জন্য কিছু কিছু জিনিসপত্র কেনাও হল, কিন্তু ইন্দিরার জন্য কী নেবে মনস্থির করতে পাবে না। যদিবা একটা সুন্দর টেবল ল্যাম্প পছন্দ হল, সেটা আবার লোকেন নিয়ে নিতে চায়। লোকেন বলল, তোমার ঘরে তো অনেক সুন্দর সুন্দর ল্যাম্প দেখেছি রবি, তা হলে এটা কার জন্য নিচ্ছ? লোকেন যতই ঘনিষ্ঠ বন্ধু হোক, তবু এত ব্যক্তিগত প্রশ্ন পছন্দ করে না রবি।
থিয়েটার দেখতে গেলে কিংবা কোনও কনসার্ট শোনার সময়ও রবীন্দ্রর মাথায় ঘুরতে থাকে, বাবি আর চিঠি লিখবে না, বাবি আর চিঠি লিখবে না! তা হলে এই প্রবাসের দিনগুলো কী করে কাটবে?
শেষ পর্যন্ত জোরজার করে নিজেই জাহাজে বুকিং-এর ব্যবস্থা করে ফেলল রবীন্দ্র, দেড় মাসের মাথায় সে আবার সমুদ্রে ভেসে পড়ল। সেই প্রথম রবীন্দ্রর একলা জাহাজ যাত্রা, সহযাত্রীরা সবাই অচেনা। লন্ডনে থাকার সময় সে এক লাইনও কবিতা লিখতে পারেনি। ওখানে সব সময় কোট-প্যান্টালুন পরে থাকতে হয়, বাংলার কাব্যপ্রতিমা তাই বুঝি কাছ ঘেঁষতে চান না। জাহাজের ক্যাবিনের মধ্যে আঁট পোশাক ছেড়ে রাত্রিবাস পরে নেবার পর আবার রবীন্দ্রের কলমে কবিতা এসে গেল।
…আঁখি
দিয়ে যাহা বল সহসা আসিয়া কাছে
সেই ভাল, থাক তাই, তার বেশি কাঙ্গ নাই–
কথা দিয়ে বল যদি মোহ ভেঙে যায় পাছে
এত মৃদু এত আধো অশ্রুজলে বাধে বাধো
শরমে-সভয়ে-মান এমন কি ভাষা আছে?
কথায় বল না তাহা আঁখি যাহা বলিয়াছে…
অল্প বয়েসে প্রথমবার বিদেশে এসে প্রতিনিয়ত মনে পড়ত একজনের কথা। সে সময়কার কবিতার ছত্রে ছত্রে তাঁর মুখচ্ছবি। আর এ বারে মনে পড়ছে আর একজনের মুখ, সে অভিমান করে আছে চিঠি লেখা বন্ধ করে দিল, ফিরে গেলে কি কথাও বলবে না? না, না, তা হতে পারে না। বিলেতের সব প্রলোভন ত্যাগ করে রবি যে এত আগে আগে চলে আসছে, ও কি তার মূল্য দেবে না?
মুখখানি মনে পড়ে আর রবীন্দ্রের বুক কেঁপে ওঠে। ও যে এখন বড় হয়েছে, পূর্ণ যুবতী, সে কথা ওর মনে থাকে না, যেন আগের মতনই ছেলেমানুষটি রয়েছে। যখন-তখন রবীন্দ্রর কাছে চলে আসে, ঝপাস করে পাশে বসে পড়ে কিংবা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আদর করে গালে গাল ঠেকিয়ে। চুলে বিলি কেটে দেয়। এই নিয়ে কেউ কেউ বাঁকা ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে, অনেকেরই যে মন অপরিষ্কার। ইন্দিরা যে বিয়ে করব না বলে, তারও প্রতিক্রিয়া আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে ভাল নয়, কিন্তু ইন্দিরা তা গ্রাহ্য করে না। কিন্তু রবীন্দ্র একটু একটু ভয় পায়। ইন্দিরা তার খুবই প্রিয়, তবু এর পরিণতি কী? একদিন তো ওকে ছেড়ে দিতে হবেই।
তোমার সাহস আছে, আমার সাহস নাই।
এই যে শঙ্কিত আলো অন্ধকারে জ্বলে ভালো,
কে বলিতে পারে বলা যাহা চাও একি তাই!
তবে ইহা থাক দূরে কল্পনার স্বপ্নপুরে।
যার যাহা মনে লয় তাই মনে করে যাই–
এই চির আবরণ খুলে ফেলে কাজ নাই।…
বম্বে পৌঁছেই পরের দিন ট্রেনে চাপার কথা, টিকিটের ব্যবস্থা করা আছে আগে থেকেই, কিন্তু মাঝরাত্রে হোটেলে পোঁছবার পর রবীন্দ্রর খেয়াল হল টিকিট-টাকাপয়সা সুদ্ধ ব্যাগটি ফেলে এসেছে জাহাজে। দু মাস এগারো দিন কেটেছে জাহাজে, শেষের দিকে দিন যেন আর কাটছিল না, এখন ভারতেব মাটিতে পা দিয়েও বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যাবে? ভোরবেলা আবার জাহাজঘাটায় ছুটতে হল এবং সৌভাগ্যবশত ব্যাগটি পাওয়া গেল। এখন আবার ট্রেনে যেতে লেগে যাবে আরও তিন দিন।
রবীন্দ্র যে ফিরে আসছে তা তখনও কেউ জানে না। হঠাৎ উপস্থিত হয়ে সে সবাইকে চমকে দেবে। সেই সবাইয়ের তালিকায় প্রথম স্থানটি শুধু একজনই পেতে পারে। হাওড়া স্টেশনে পৌঁছর পর একটা ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করল রবীন্দ্র। তাতে লটবহর চাপিয়ে সে যাত্রা করল, জোড়াসাঁকোর বাড়িতে গেল না, বাবামশাই পার্ক স্ট্রিটের একটা ভাড়া বাড়িতে আছেন, আগে তাঁকে প্রণাম করে আসতে হবে, কিন্তু রবীন্দ্র গাড়িওয়ালাকে পার্ক স্ট্রিট ছাড়িয়ে আরও এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিল।
সেই ঘোড়ার গাড়ি এসে দাঁড়াল বির্জিতলাও-এর বাড়ির সামনে। আকাশে অপরাহ্নের ম্লান আলো। এ অঞ্চলে প্রচুর পাখি। সেন্ট পলের গির্জার মাথার ওপর দিয়ে ঝাঁক ঝাঁক পাখি উড়ে যাচ্ছে। এ বাড়ির সামনের বাগানে এক তরুণী আকাশের দিকে তাকিয়ে পাখি দেখছে। গাড়ির শব্দ শুনে সে মুখ ফেরাল।
গাড়ি থেকে নামছে এক দীর্ঘকায় পুরুষ। মুখে ভ্রমরকৃষ্ণ দাড়ি, মাথায় কুঞ্চিত ঘন চুলের বাবরি, স্মিত হাস্যময় মুখ। ট্রেনেই বিলেতি পোশাক ছেড়ে ধুতি ও পিরান পরে নিয়েছে রবীন্দ্র। ইন্দিরার চোখে ধন্দ লেগে গেল। এ কি সত্যিই তার রবিকা, না তার দৃষ্টিবিভ্রম! এত বেশি সে একজন মানুষের কথা ভাবছে যে সে তার একটা ছায়ামূর্তিও গড়ে ফেলেছে।
রবীন্দ্র ডাকল, বাবি–
কোথায় মিলিয়ে গেল রাগ আর অভিমান। তখনই ইন্দিরা একটি হরিণীর মতন রবীন্দ্রের প্রসারিত দুই বাহুর দিকে ছুটে গেল।
ইন্দিরা রবীন্দ্রর মন যতখানি অধিকার করে আছে, সরলা ততটা পারেনি। এরা দুজনে সমবয়েসী হলেও দুজনে অনেক তফাত। ইন্দিরা আগাগোড়া ইংরিজি স্কুলে পড়েছে, বাড়িতে পশ্চিমি আদরকায়দায় অভ্যস্ত হলেও রবিকাকার সান্নিধ্যের প্রভাবে সে বাংলা কাব্য-সাহিত্য-সঙ্গীত প্রাণ দিয়ে অনুভব করে। সরলা পড়েছে বাংলা স্কুলে, পড়াশুনোতও সে ভাল ছাত্রী, কিন্তু তার সাহিত্য-শিল্পবোধ তেমন উঁচু তারে বাঁধা নয়। সরলা ভারতী পত্রিকায় প্রায়ই এটা সেটা লেখে, কিন্তু তা এমন কিছু হয় না। ইন্দিরা যেমন তার মন-প্রাণ সবই রবিকাকে দিয়ে দিয়েছে, সরলা তা নয়। সরলা উচ্চাকাঙ্ক্ষিনী। ইন্দিরা নিজেকে আড়াল করে রবীন্দ্রের খ্যাতিতেই মুগ্ধ, সরলা নিজেও খ্যাতি চায়। রবীন্দ্র মুখের ওপর কিছু বলে না, ঢোঁক গিলে তার রচনার প্রশংসা করে। গানটা অবশ্য সে ভালই বোঝে। সরলাও বিয়ে করবে না প্রতিজ্ঞা করেছে, কিন্তু তার কারণটাও স্পষ্ট, সে কুমারী থেকে দেশের সেবা করতে চায়। সরলার জীবনে তার রবিমামা নয়, তার বাবার প্রভাবই বেশি। সরলার বাবা কংগ্রেসের একজন পাণ্ডা। ও বাড়িতে রবীন্দ্রর যাওয়া-আসা ক্রমশই কমে আসছে।
আর একটি তরুণীর সঙ্গে রবীন্দ্রের মানসিক ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। ব্যারিস্টার আশু চৌধুরীর সঙ্গে বন্ধুত্ব ও কুটুম্বিতার সুত্রে তার এক ভাগিনেয়ী প্রিয়ম্বদার সঙ্গে পরিচয় হয়। এই সুশ্রী, বিদুষী মেয়েটিও কবিতা লেখে এবং সে রবীন্দ্রর একজন মুগ্ধ ভক্ত। রবীন্দ্রর বহু কবিতা সে দাঁড়িকমা, ড্যাশ সমেত মুখস্থ বলতে পারে, আশু চৌধুরীর স্কট লেনের বাড়ির আড্ডায় সে রবীন্দ্রর কবিতা আবৃত্তি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে অনেকবার। রবীন্দ্রও স্বীকার করেছে যে তার কবিতা এমন পুরোপুরি মুখস্থ বলতে সে আর কারুকে দেখেনি।
প্রিয়ম্বদা নিজের কবিতা অনেকের সামনে পাঠ করতে লজ্জা পায়। সে রবীন্দ্রকে শুনিয়েছে নিরালা কোনও জায়গায় ডেকে নিয়ে গিয়ে, সসঙ্কোচে, মৃদু গলায়। চিঠিতেও কবিতা লিখে পাঠিয়েছে, রবীন্দ্র তাকে উত্তর দিয়েছে নিয়মিত। দুজনের বয়েসের ব্যবধান খুব বেশি নয়, মানসিক দূরত্বও যখন কমে আসছে অনেকখানি, এমন সময় আচম্বিতে প্রিয়ম্বদার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। বিয়ের পরই সে চলে গেল অনেক দূরে, মধ্যপ্রদেশের রায়পুরে, তার সঙ্গে আর দেখা হবারও সম্ভাবনা রইল না। জমিদারি পরিদর্শনের সময় বজরায় থাকতে থাকতে প্রিয়ম্বদার বিবাহের সংবাদের চিঠি পেয়ে রবীন্দ্র বিমনা হয়ে ছিল বেশ কিছুক্ষণ। সম্বন্ধ করা বিয়ে, স্বামীটি এক অচেনা পুরুষ, তার সঙ্গে অতদূরে এক সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে প্রিয়ম্বদার মতন একটি সূক্ষ্ম অনুভূতিসম্পন্ন মেয়ে নিজেকে কেমন করে মানিয়ে নেবে? সেখানে কেমনভাবে প্রথম প্রথম প্রিয়ম্বদার দিন ও রাত কাটবে, রবীন্দ্র ভেবে পায় না। পুরুষ মানুষের পক্ষে এ ব্যাপারটা বোঝা সম্ভবই নয়।
বজরার একটা সুবিধে, তা ঘোড়ার গাড়ির মতন লম্ফঝম্প করে না। কবিতা রচনা করা, বই পড়া ও চিঠি লেখা বেশ চলতে পারে, কখনও কখনও মৃদু দুলুনিতে তা আসে। সামান্য ঘুমেই বহু স্বপ্ন দেখে রবীন্দ্র, অনেক স্বপ্ন থেকেই সে তার লেখার উপাদান পেয়ে যায়। কোনও কোনও স্বপ্ন আসে গল্পের বেশে। কোনও কোনও স্বপ্নে থাকে কবিতার ইঙ্গিত। ইদানীং সে গল্পের বাঁধুনি দেওয়া কিছু কবিতাও লিখতে শুরু করেছে।
সন্ধে হয়ে এসেছে, একজন পরিচারক চা দিয়ে গেল। চা পান করতে করতে রবীন্দ্র শুনতে পেল মানুষের কলগুঞ্জন। মাঝি-মাল্লারাও কথাবার্তা শুরু করেছে। বজরা কোনও জনবসতির ধারে তীর ঘেঁষে চলেছে। এই সময় নদীর ঘাটে অনেক মানুষ আসে, নারীরা কাঁখে কলসি নিয়ে জল ভরতে এসে নিজেরাই উচ্ছ্বল হয়ে ওঠে, এই দৃশ্য দেখতে রবীন্দ্রর ভাল লাগে।
রবীন্দ্র তাড়াতাড়ি বাইরে এসে দাঁড়াল। আকাশে রক্তিম আলোর ছড়াছড়ি, তীরবর্তী গাছপালাগুলিও যেন সেই রং মেখেছে। বজরাটি একটা ঘাটে ভিড়তে চলেছে, ঝুপ করে নোঙর ফেলার শব্দ হল, হালের মাঝি সামাল সামাল হেঁকে উঠল। একটা ভাঙা মন্দিরের সামনে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছু কৌতূহলী মানুষ, জলে বুক পর্যন্ত ডুবিয়ে কয়েকটি রমণীও স্থির চিত্রের মতন চেয়ে আছে এ দিকে।
একজন কর্মচারী রবীন্দ্রকে বলল, হুজুর সাজাদপুর এসে গেছে–
তার কথায় আরও কিছু যেন অবাক্ত রইল। রবীন্দ্র দেখল, অন্য দাঁড়ি-মাঝিরাও সবাই তার দিকে তাকিয়ে নীরবে যেন কিছু বলতে চাইছে।
একটু পরেই সে বুঝতে পারল। তাড়াতাড়িতে সে খালি গায়েই ওপরে চলে এসেছে। কিন্তু সে তো এখন আর তরুণ কবি রবীন্দ্রবাবু নয়, সে যে এখানকার জমিদার, লোকে বলে রাজাবাবু, তার উপযুক্ত পোশাক গায়ে চড়াতে হবে।
রবীন্দ্র তাড়াতাড়ি কামরার মধ্যে ফিরে গেল।
কবির বৌঠান এবং প্রভাতকুমার চট্টোপাধ্যায় এর রবীন্দ্রজীবনী বই দুটি পোস্ট করার অনুরোধ রইলো।
রবীন্দ্রজীবনীতে প্রচুর ফুটনোট থাকাতে এগুলো করা অনেক সময়ের ব্যাপার। তবে আমরা চেষ্টা করব কিছুটা দিতে।