হিট জুটি লিলি-দিলীপ

হিট জুটি লিলি-দিলীপ

ছিলাম গ্ল্যামার দুনিয়ায়। প্রেম, প্রত্যাখ্যান, গসিপ স্বাভাবিক কারণেই আলো হাওয়ার মত ঘুরেছে। অথচ আমি অজিত ছাড়া কারো কাছেই নিজেকে প্রকাশ করতে পারলাম না। কখনো উত্তমকুমার ,কখনো শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, কখন বিশ্বজিৎ এমনকি মিঠুন- এদের নিয়ে আলোচনা তো কম হয়নি! আগেই বলেছি উত্তমকুমার কাছে টেনে নিয়েছিলেন পরম স্নেহে। এগিয়ে এসেছিলেন এক সঙ্গে কাজের ভাবনা নিয়ে। অমিতাভ বচ্চন তো সবার সামনে আলিঙ্গনে বেঁধে ছিলেন। কিন্তু সেখানে কোন ম্লানিমা ছিল না। দিলীপ রায়কে নিয়ে গুঞ্জন এদের তুলনায় একটু বেশি। মনে আছে দিলীপের সঙ্গে প্রথম আউটডোর ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’। লাভপুর। দিলীপের তখন বয়স অল্প। সুঠাম চেহারা। চোখেমুখে ভরপুর রোমান্টিকতা। তপনদার ছবির নায়ক দিলীপ। ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’য় একটা দৃশ্য ছিল। দিলীপের সঙ্গে রঞ্জনার বিয়ে। বর সাজিয়ে নিয়ে আসছি আমি। অস্বীকার করবোনা ওই মুহুর্তে রঞ্জনার প্রতি খাণিকটা হলেও ঈর্ষা হয়েছিল। পরে ভেবেছি কি নিতান্ত ছেলেমানুষ আমি!

নাটকে, চলচ্চিত্রে পাশাপাশি অভিনয় করতে করতে আমাদের বোঝাপড়ার একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই! এখনকার মতো এত ঘনঘন প্রেম আর প্রত্যাখ্যানের ঝোঁক ছিল না। কাজের ক্ষেত্রে কেউ কেউ খুব কাছের বন্ধু হয়ে ওঠে। দিলীপ ছিল আমার তেমনই কাছের বন্ধু। লোকে ভাবত বোধহয় আরও বেশি কিছু। তাই নাটক হোক বা সিনেমা— টাইটেল কার্ডে সবসময় আমাদের নাম থাকতো পাশাপাশি। তাছাড়া আমরা যে মঞ্চে, পর্দায় পরের পর হিট দিয়েছি সেটা কি কেউ অস্বীকার করতে পারবে? সাদা ফিনফিনে পাজামা পাঞ্জাবিতে দিলীপ যখন এসে হাজির হত- বুকের বাঁ দিকটা কেমন চিনচিন করে উঠত। বোধকরি ওরও একই অনুভব হত। অমন নিপাট ভদ্রলোক বাঙালি নায়ক তো ইন্ডাস্ট্রিতে দুটো ছিলনা! আজও পুরনো দিনের কথা ভাবতে গেলে এমন প্রচুর বন্ধুরা ভেসে ওঠে। আলাদা করে জড়িয়ে পড়ার কথা কোনোদিন ভাবিনি। প্রেম বন্ধুত্বের মাধুর্যে অজিত এমন করে আগলে রেখেছিল সেসব ভাবার ফুসরত পায়নি। তবু পেছন ফিরে তাকালে পরিচিত বলয় ভেঙে কোন কোন মুখ ভেসে ওঠে গভীর বন্ধুতার আকাশ নিয়ে।

অভিনয় আর অজিত ছাড়া কাউকে তো জীবন জুড়ে জড়াতে পারলাম না। যারা অপেক্ষায় ছিল দীর্ঘতর হতে হতে তাদের অপেক্ষা অতীত হয়ে গেল। শুরুতেই বলেছিলাম মধ্যপ্রদেশের সেই শিউ কুমারের কথা। আর জীবনের শেষ পর্বে বলি মিঠুনের গল্প। তাও বছর দশেক হবে। উত্তমকুমার ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের স্মরণ সভা। সম্ভবত দক্ষিণ কলকাতার কোন প্রেক্ষাগৃহে। আমার সময়ের একাধিক নায়ক সেদিন উপস্থিত। ছিলেন বিশ্বজিৎ, দিলীপ রায়, মিঠুন চক্রবর্তী আরো অনেকে। আমাকে দেখেই মিঠুন তার চিরাচরিত ঢঙে বিশ্বজিৎদের বলল ”উরিব্বাস! দেখো দেখো এখনো কী সুন্দরী! জেল্লা ঠিকরে বেরোচ্ছে। যখন কাজ করতো মাথা ঘুরে যেত না তোমাদের?” কথা কেড়ে নিয়ে বিশ্বজিৎ এর জবাব ”আমাদের মাথা আর ঘুরবে কি করে? ওর মাথা তো শক্ত করে ধরে রেখেছিল ওর বর অজিত। কোন দিকে এতোটুকু কাত হওয়ার উপায় নেই!”

হাসতে হাসতে ভাবছিলাম এ কথায় মিথ্যে নেই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *