বম্বেতে বাড়ি বদল
বম্বেতে তখন বাড়িভাড়ায় এগ্রিমেন্ট শুরু হল। হয় ১১ মাস পর বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে কিংবা তখনকার দামে কিনে নিতে হবে। আনন্দনগরের যে ফ্ল্যাটে আমরা থাকতাম, তার মালকিন, মালকিনের মেয়ে দু’জনের সঙ্গেই ছিল আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক। হঠাৎ তারা বিরূপ আচরণ শুরু করল। ফ্ল্যাটে ছিল মোট চারটে ঘর। আমরা দুটোতে থাকতাম। বাকি দুটোই ফাঁকা পড়ে থাকতো। ততদিনে আমার ১১ মাসের মেয়াদ ফুরিয়েছে। অন্য ঘরদুটোয় মালকিন তার মেয়েকে নিয়ে থাকতে শুরু করল। ওঁরা সারাক্ষণ আমাকে অবজার্ভ করত। হয়তো রান্নাঘরে কিছু করছি, সামনে এসে বসে পড়লো। আর অনর্গল নোংরা মন্তব্য। আমি সব মুখ বুজে সহ্য করতাম। একদিন আর পারলাম না। তুমুল ঝগড়া হয়ে গেল। সেই মহিলা আমার দিকে তেড়ে এল। বললো- তেরে কো ম্যায় বিধবা করকে ছোড়ুঙ্গি। শুধু মারতে বাকি রেখেছিল সেদিন। থানায় এফ.আই.আর করা হল। পুলিশ এসে ওদের দাবড়ে দিয়ে গেল। কিছুদিন চুপচাপ। তারপর আবার যে কে সেই। বুঝলাম এখানে আর থাকা চলবে না!
ইতিমধ্যে আনন্দনগরে কমপ্লেক্সের প্রেসিডেন্ট গুলাটেজি একদিন আমাদের ডেকে পাঠালেন। নিজে থেকেই বললেন- ওরা লোক ভালো নয়। কখন কী হয়ে যায়! আপনাদের বোধহয় এখানে থাকা উচিৎ হবে না। আমি একটা ফ্ল্যাট দেখে দিচ্ছি। আপনারা বরং শিফট করে যান।
কিন্তু যাবো বললেই তো আর যাওয়া যায় না! সামনে দু-দুটো ছবির রিলিজ। সম্পূর্ণ বিষ্ণুপুরান আর আচানক। সবাই আনন্দনগরের ঠিকানাতেই যোগাযোগ করে। তখন আর মোবাইল কোথায়! তাছাড়া হঠাৎ নতুন ফ্ল্যাট কেনার মত সামর্থ্যও আমাদের ছিল না। কলকাতা থেকে তেমন টাকা পয়সাও আনিনি। কিন্তু ঐ ফ্ল্যাটটাও ক্রমশ দুর্বিসহ হয়ে উঠছিল। গুলাটেজির কথায় আনন্দনগরের কাছেই একটা বাড়ি দেখতে গেলাম। বেশ পছন্দও হল। দাম ৩৫ হাজার। তখনকার দিনে সেটাই অনেক। অতগুলো টাকা আমার পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব ছিল না। ভাবলাম একবার সিপ্পিজিকে বলে দেখি। বললাম- একটা ফ্ল্যাট কিনব, যদি কিছু ধার দেন। একগাল হেসে বললেন- ধার নিবি কেন? তুই না আমার বড় মেয়ে। পরের ছবিতে তো কাজ করবি। টাকাটা না হয় এখনই নিয়ে নে।
সিপ্পিজি সেদিনই আমাকে চেক লিখে দিলেন। পরের ছবির কাজ শুরু হল প্রায় বছরখানেক বাদে। উনি সেই সময়ে পাশে না থাকলে, আমাদের বোধহয় রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে হত। সেদিন সিপ্পিজির মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল- আমার ঈশ্বর দর্শন ঘটে গেল। এরপর অল্প কিছু যা বাকি ছিল সেটা নিজে থেকেই গুলাটেজি দিয়ে দিলেন। কিভাবে যে পুরো ব্যাপারটা ঘটে গেল আজও বুঝে উঠতে পারিনা। আমরা নতুন বাড়িতে এসে উঠলাম। আমাদের নিজের বাড়ি। অজিত শখ করে বেশ কিছু ফার্ণিচার কিনলো। নতুন করে সাজালাম ঘরটাকে। আনন্দনগরের ফ্ল্যাটে শেষদিকে দমবন্ধ হয়ে আসতো। এখানে এসে বহুদিন পর প্রাণ খুলে শ্বাস নিলাম।