সিপ্পিজির ভালোবাসা

সিপ্পিজির ভালোবাসা

ইতিমধ্যে ‘আচানক’ এর শুটিং, ডাবিং সবই প্রায় শেষ। তখনও পর্যন্ত একটি টাকাও হাতে পাইনি। সাধারণত শুটিং-এর দিন পেমেন্ট বাকি থাকলে ডাবিং এর দিন ক্লিয়ার হয়ে যায়। ডাবিং এর পরও বেশ কিছুদিন কেটে গেছে, টাকা পয়সার কোন নাম গন্ধ নেই। চুপচাপ পরের ছবিতে মন দিলাম। ছবিটার নামটা ঠিক মনে নেই। শুটিং চলছিল দাদারে। ছবিটা করার যে তেমন আগ্রহ ছিল তা নয়। ছবিটার প্রোডিউসার ছিলেন কিশোর কুমারের সেক্রেটারি এস.সাগর। উনি খুব করে চেয়েছিলেন আমি যেন অভিনয় করি। ওঁর কথাতেই সায় দিতে হল। সেই ছবির অভিনয় চলাকালীন হঠাৎ ‘আচানক’ এর প্রোডাকশন ম্যানেজার এসে আমাকে বললেন-

-সাব আপকো বুলা রেহি হে।

-কোন সাব? গুলজারজি?

-নেহি নেহি, সিপ্পিজি।

কে সিপ্পিজি? আমি ভালো করে চিনতাম না। কখনও শুটিং-এ আসতেন না। সে দিনের আগে ওনাকে কখনও চোখেও দেখিনি। প্রোডাকশন ম্যানেজার আমাকে ওঁর অফিসে নিয়ে গেলেন। দেখি একটা রোগা প্যাঁকাটির মত লোক চেয়ারে বসে আছে। চোখে মুখে বয়সের ছাপ। আমাকে দেখেই বললেন- কেয়া রে, তেরেকো প্যায়সা-ব্যায়সা নেহি চাহিয়ে? প্রথম আলাপেই ‘তুই’ সম্বোধন আগে কারও কাছ থেকে পাইনি। শুনেই বেশ চমকে গিয়েছিলাম। বললেন-

বোল, কিতনা চাহিয়ে?

আমি তো আরও চমকে গেলাম। বললাম- মেরে কো কেয়া মালুম!

-বহত চালাক হো না? মেরে কো কেয়া মালুম!

বলেই আমার হাতে একটা চেক তুলে দিলেন। তখনকার সময়ে কলকাতায় কাজ করলে যা টাকা পাওয়া যেত, পরিমাণটা তার থেকে অনেকটাই বেশি। সে সব তো তুচ্ছ ব্যাপার। প্রাপ্তি হল সিপ্পিজির ভালোবাসা। প্রথম দেখাতেই আমি যেন ওঁর ঘরের মেয়ে হয়ে উঠলাম। সিপ্পিজি খুব খেতে ভালোবাসতেন। ওঁর স্ত্রীও তাই। আমার কাছে নানারকম বাঙালি খাবার আবদার জুড়ে বসতেন। বললেন, একদিন বাড়িতে ইলিশ মাছ রেঁধে খাওয়াতে হবে। ”হাম ডাড্ডুকে ভেজ দেঙ্গে। ডাড্ডু তেরেকো লে আয়েগি”। ডাড্ডু মানে রাজ সিপ্পি। রাজ সিপ্পি তখন গুলজারের ফোর্থ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করত। একদিন সত্যিই দেখি ডাড্ডু এসেছে আমাকে নিয়ে যেতে। সেই শুরু। তারপর সময়ে-অসময়ে কতবার যে ওঁর কাছে গিয়ে হাজির হয়েছি তার ঠিকানা নেই। গেলে কিছু না খেয়ে আসার উপায় ছিল না। শিশুর মত বায়না ধরতেন সিপ্পিজি। রোজ নতুন নতুন বাঙালি পদ রেঁধে খাওয়াতে হবে তাকে। কোনদিন ফেলতে পারিনি। নিজেই বলে বেড়াতেন সবাইকে- মেরে দো বেটি হে। বর্ষা মেরি ছোটি বেটি। অর মেরি বড়ি বেটি হো লিলি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *