সুসার উৎসব

খৃষ্টপূর্ব ৩২৪ অব্দের ফেব্রুয়ারিতে আলেকজান্ডার ফিরে এলেন রাজধানী সুসায়। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর। সুসায় এসে রাজকার্যে মন দিলেন এবার। সুবিশাল এক সাম্রাজ্যের অধিকারী তিনি এখন। গ্রিসের সেই আইওনিয়ান সাগর থেকে দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত তার রাজত্ব। তিনি পরিকল্পনা করলেন এশিয়া এবং ইউরোপকে একক দেশে রূপান্তর করবেন। মিলন ঘটাবেন পূর্ব এবং পশ্চিম অংশের। এবং ব্যাবিলনকে বেছে নিলেন সে দেশের রাজধানী হিসেবে। পূর্ব পশ্চিমের এই বন্ধন দৃঢ় করতে মেসিডোনের শাসকগোষ্ঠীদের উৎসাহ দিলেন পারসিয়ান মেয়েদের বিয়ে করার জন্য। তিনি ভেবেছিলেন, এতে পূর্ব পশ্চিমের মধ্যে ভাতৃত্ববন্ধন প্রতিষ্ঠিত হবে। এখান থেকেই বিখ্যাত প্রবাদ দ্য ইন্টারমিংলিং অব পিপল—এর জন্ম নেয়। একটি গণবিয়ের আয়োজন করেন আলেকজান্ডার। তিনি নিজে বিয়ে করেন পারস্যের রাজকন্যা রাজা দারিয়ুসের কন্যা স্ট্যাটেরিয়াকে। এই গণবিয়েতে অংশ নেন আশিজন অভিজাত মেসিডোনিয়ান। সম্রান্ত পারসিয়ান নারীদের সাথে বিয়ে হয় তাদের।

আলেকজান্ডার সুসায় এসে আবারও পারস্য ঐতিহ্যের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। যদিও তিনি তার সকল প্রদেশের সৈন্যদের নিয়ে একটি সমন্বিত বাহিনী তৈরি করেছিলেন। তিনি তার সাম্রাজ্যের জন্য একক মূদ্রা প্রচলনের কথাও ভাবছিলেন। যাতে তার সাম্রাজ্যে ব্যবসাবাণিজ্যে সমন্বয় হয়। তিনি এশিয়ায় গ্রিক আদর্শ, পোশাক এবং আইন ছড়িয়ে দেয়ার ব্যপারে খুবই উৎসাহী ছিলেন। যখনই শুনতেন তার কোনো প্রাদেশিক শাসক অনাচার করছে, তখনই তাকে সরিয়ে দিতেন। এবং নিজেকে একজন শাসকের চেয়েও বেশি ভাবতে শুরু করে দিলেন। তবু তার পারস্যপ্রীতির কারণে অনেক মেসিডোনিয়ান ও গ্রিক তাকে অপছন্দ করা শুরু করল। কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন আলেকজান্ডার নিজেকে পারসিয়ান খেতাব শাহেনশাহ হিসেবে অভিহিত করতেন। শাহেনশাহ অর্থ হচ্ছে রাজাদের রাজা। তার বাহিনীতে যখন ৩০ হাজার পারসিয়ান সৈন্য অন্তর্ভুক্ত করলেন, তখনই বেঁকে বসলেন মেসিডোনিয়ানরা। তারা প্রতিনিয়ত পারসিয়ানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে লাগল। এ সময় আলেকজান্ডারের আরেকটি সিদ্ধান্ত তাদের বিদ্রোহ প্রকাশ করার রসদ জুগিয়ে দিল। যুদ্ধে অক্ষম ও প্রবীণ মেসিডোনিয়ান যোদ্ধাদের ক্রিটারাসের নেতৃত্বে মেসিডোনিয়ায় পাঠানোর ঘোষণা দিলেন তিনি। কিন্তু তার সৈন্যরা তাকে ভুল বুঝল এবং অপিস নগরে সরাসরি বিদ্রোহ করে বসল। আলেকজান্ডার ১৩ জন বিদ্রোহীকে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দিলেন। তারপরই তিনি মেসিডোনিয়ানদের বীরত্বের প্রশংসা করলেন এবং তাদের সম্মান জানাতে চাইলেন। তিনি তার আচরণের জন্য অনুশােচনা করলেন এবং তিনদিন পর একটি ভোজের আয়োজন করলেন। এই ভোজউৎসব ছিল পারসিয়ান এবং মেসিডোনিয়ানদের মধ্যে মিলন ঘটানাের জন্য। এই উৎসবে মেসিডোনিয়ানরা যোগ দিতে চাননি। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা উৎসবে যোগ দিয়েছিল। তবে ভাতৃত্ববন্ধনের জন্য নয়, আলেকজান্ডার তাদের বাধ্য করেছিলেন।