আলেকজান্ডারের সৎকার

মৃত্যুর পর আলেকজান্ডারের লাশ রাখা হয় মানুষ আকৃতির সোনার তৈরি একটি বাক্সে। এই বাক্সটা ঢাকা ছিল রক্তবর্ণের একটি টিলা ও লম্বা গাউন দিয়ে। এরপর এই বাক্সটাকে রাখা হয় আরেকটি সোনার তৈরি বাক্সে। সোনার এই শবাধারটি নকশা করা ছিল। আলেকজান্ডারের কফিনে তার দুটো বর্মও রাখা হয়। তারপর সবকিছু একটা সোনার তৈরি গাড়িতে তোলা হয়। গাড়ির ছাদটি ছিল মন্দিরের মতো। আলেকজান্ডারের কফিনবাহী সোনার গাড়িতে প্রচুর নকশা করা হয়েছিল। নকশা করেছিলেন তখনকার বিখ্যাত নকশাবিদ ডিওডরস।

অন্য একটি কিংবদন্তী থেকে জানা যায়, আলেকজান্ডারের শরীর ডুবিয়ে রাখা হয় একটি মধুভরা মাটির পাত্রে। মধুভরা পাত্রে রাখার কারণ হলো, যাতে তার শরীরে পচন ধরতে না পারে। এরপর মাটির পাত্রটাকে রাখা হয় একটি কাচের কফিনে। আলেকজান্ডারের ইতিহাসবিদ এইলিয়ানের মতে রাজা টলেমি আলেকজান্ডারের মৃতদেহ চুরি করে নিয়ে যান আলেকজান্দ্রিয়ায়। সেখানেই প্রাচীন যুগ পর্যন্ত সাজিয়ে রাখা হয় তাকে। টলেমি বংশেরই এক রাজা রাজা নবম টলেমি আলেকজান্ডারের কফিন থেকে স্বর্ণ সরিয়ে ফেলেন। স্বর্ণের বদলে কাচ দিয়ে কফিন বানিয়ে দেন। রাজা নবম টলেমির তখন স্বর্ণের খুব প্রয়োজন ছিল। ওই স্বর্ণ দিয়ে তিনি স্বর্ণ মুদ্রা প্রচলন করেন। কিন্তু আলেকজান্দ্রিয়ার জনসাধারন জগতশ্রেষ্ঠ বীরের প্রতি এমন ধৃষ্টতা মেনে নিতে পারেনি। তারা এর ঘোর বিরোধী ছিল। এই কারণেই রাজা নবম টলেমি খুন হন।

রোমান সম্রাট ক্যালিগুলা আলেকজান্ডারের বুকে পরার বর্ম লুট করে পরিধান করেছিলেন বলেও শোনা যায়। ২০০ খৃষ্টাব্দে ম্রাট সেন্টিমিয়াস সেভারাস আলেকজান্ডারের কবর জনসাধারনের দেখার জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন। তবে তার ছেলে রাজা ক্যারাকাল্লা আলেকজান্ডারকে বেশ শ্রদ্ধা করতেন। তিনি আলেকজান্ডারের কবর পরিদর্শন করেন এবং কবরের গায়ে নকশা করে লিখে রাখেন কবরের ভাগ্যলিপি।

বলা হয় সিডনের কাছে আলেকজান্ডারের শবাধার আবিস্কৃত হয়। এবং ওই শবাধারটিই এখন রাখা আছে ইস্তাম্বুলের প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘরে। ধারণা করা হয় রাজা আবডিলোনিমাস আলেকজান্ডারের শবাধার নিয়ে সিডনে রাখেন। আলেকজান্ডারের নির্দেশে হেফাস্টিয়ন এই আবডিলোনিমাসকে সিডনের রাজা বানিয়েছিলেন। আলেকজান্ডারের এই শবাধারে নকশা হিসেবে খোদাই করা আছে আলেকজান্ডার ও তার অনুসারীদের শিকার এবং পারসিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের চিত্র।