বিভিন্ন সংস্কৃতিতে আলেকজান্ডার

বিশ্বজয়ী বীর আলেকজান্ডার। জয় করেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন রাজ্য। বিভিন্ন জাতিকে করেছেন তার অনুগত। এ কারণেই বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন সংস্কৃতিতে আলেকজান্ডার বেঁচে আছেন আজো । যেমন মধ্য যুগে পারস্যে আলেকজান্ডার পরিচিত ছিলেন জয়রাস্ট্রিয়ান নামে। আর উইরাজ নামাগ নামে আলেকজান্ডারকে নিয়ে একটি গ্রন্থ লেখা হয়। আরডা উইরাজ নামাগ অর্থ হচ্ছে অভিশপ্ত আলেকজান্ডার। পারসিয়ান ভাষায় আলেকজান্ডার পরিচিত গুজুস্টাগ নামে। পারস্য সাম্রাজ্য জয় করার কারণে এবং রাজধানী পারসেপলিস ধ্বংস করার কারণে তাকে এভাবে অভিহিত করেছিল পারসিয়ানরা। পারস্যের সকল এলাকায় অবশ্য আলেকজান্ডার পরিচিত ইস্কান্দার নামে। পারস্যে এখনও তাকে ডাকা হয় ইস্কান্দার—ই মাকদুনি বলে। ইস্কান্দার—ই মাকদুনির অর্থ হচ্ছে মেসিডোনিয়ার আলেকজান্ডার। আরবীতে তাকে বলা হয় আল—ইস্কান্দার আল—মাকদুনি আল—ইয়ানানি বলে। এর অর্থ হচ্ছে গ্রিসের মেসিডোনের আলেকজান্ডার। হিব্রুতে তিনি পরিচিত আলেকজান্ডার মকডন নামে। অ্যারামিক ভাষায় তাকে বলা হয় ত্রিকরনাইয়া। আরবিতে তাকে আল—ইস্কান্দার আল—আকবরও বলে অভিহিত করা হয়। এর অর্থ হচ্ছে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। উর্দুতে তিনি পরিচিত সিকান্দার—ই আজম নামে। পশতু ভাষায় তিনি ইস্কান্দার। উর্দু এবং হিন্দিতে তিনি সিকান্দার। এমনকি বাংলা ভাষাতে যে সিকান্দার বীরের কথা আমরা জানি, তা উর্দু কিংবা হিন্দি থেকে এসেছে। কাজেই বাংলা ভাষার সিকান্দারও আলেকজান্ডার।

মহাকবি ফেরদৌসীর শ্রেষ্ঠ কীর্তি তার শাহনামা। আধুনিক পারস্যের একটি প্রাচীনতম মহাকাব্য এই শাহনামা। শাহনামার একটা অধ্যায় তিনি লিখেছেন আলেকজান্ডারকে নিয়ে। ১০০০ সালে লেখা ফেরদৌসীর এই মহাকাব্যকে বলা হয় আরবী ভাষার আধিপত্যের বিপরীতে পারস্য ভাষার কীর্তি। এই মহাকাব্যে ফেরদৌসী ইরানের ক্রম ইতিহাস রচনা করেছেন। এই ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি আলেকজান্ডারকে নিয়েও লিখেছেন। তার মহাকাব্যে অবশ্য আলেকজান্ডারকে তিনি বলেছেন আরসাসিডস বলে। তিনি আলেকজান্ডারের পরিচয় জানিয়েছেন অন্যভাবে। শাহনামায় আলেকজান্ডার হচ্ছেন পারস্যসম্রাট দরিয়া দরাব—এর সন্তান। শাহনামার দরিয়া দুরাবের কোনো পরিচয় অবশ্য ইতিহাসবিদরা দিতে পারেননি। তারা কোনো ঐতিহাসিক রাজার নামের সাথেও তার নামের মিল খুঁজে পাননি। যাই হোক, কবি ফেরদৌসী আলেকজান্ডারকে পরিচয় করিয়েছেন দরিয়া দরাব এবং রোমান রাজা ফিলিপের মেয়ের সন্তান হিসেবে। যদিও পারস্য সম্রাট এবং ফিলিপের মেয়ের মধ্যে কেমন করে সম্পর্ক হলে সেটা বের করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সমস্যা। এমন কোনো সম্পর্কের খবর ইতিহাসবিদেরা দিতে পারেননি। তবে রোমান রাজকুমারী আবার রোমে ফিরে গিয়েছিলেন বলে লিখেছেন ফেরদৌসী। কিন্তু রাজা ফিলিপ তাকে নিজের ছেলে বলেই উল্লেখ করেছিলেন এবং তার পরিচয় গোপন রেখেছিলেন খুব সতর্কভাবে।