ইসাসের যুদ্ধ

পারস্যের সম্রাট তৃতীয় দারিয়ুস। তার সৈন্যবাহিনী যেমন শক্তিশালী তেমনি বিশাল। পারস্য আক্রমণের কথা কেউ ভাবত না তখন। কারণ দারিয়ুসের সৈন্যদের কথা কারো অজানা ছিল না। এরা অতর্কিতে হামলা চালাতে পারত। কেউ দারিয়ুসকে ঘাটাতো না। উল্টো দারিয়ুসই আশপাশের রাজ্য জয় করতেন তার এই বিশাল বাহিনী দিয়ে। কিন্তু এবার ব্যাপারটা উল্টো ঘটল। আলেকজান্ডার আক্রমণ করে বসলেন তার রাজ্য। একের পর এক তার প্রদেশগুলো চলে যাচ্ছিল আলেকজান্ডারের দখলে। আর চুপ করে বসে থাকা যায় না। 

খৃষ্টপূর্ব ৩৩৪ অব্দের বসন্তকাল। আলেকজান্ডার তখনও তুর্কির দক্ষিণাঞ্চলে । আর এদিকে পারস্যের সম্রাট দারিয়ুস তার বাহিনী নিয়ে রওনা হয়েছেন আলেকজান্ডারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য। খবর পেয়ে আলেকজান্ডারও দারিয়ুসের মোকাবেলা করার জন্য রওনা দিয়েছেন তার বাহিনী নিয়ে। তারা সমুদ্রে আসার জন্য একটা নিরাপদ রাস্তা খুঁজছিলেন। দারিয়ুস সেটা জেনে ফেলেন। এবং যুদ্ধ কৌশলও ঠিক করে ফেলেন। তিনি পথের মধ্যেই আলেজান্ডারের বাহিনীর উপর ঝাপিয়ে পড়বেন।

সম্রাট দারিয়ুসের বাহিনীতে তখন প্রায় এক লাখ যোদ্ধা। এই একলাখ যোদ্ধা নিয়ে তিনি প্রস্তুত হয়ে রইলেন পিনারাস নামের ছোট্ট একটা নদীর কিনারে। নদীর কাছাকাছি ইসাস নামের শহর। এই ইসাস হচ্ছে সিরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলে পাহাড়ের পাদদেশের শহর। কিন্তু তার আগে দরকার নদীর তীরের দখল। আলেকজান্ডারের বাহিনীও এসে হাজির হলো ওই নদীর পারে। পাহাড়ী নদীর সঙ্কীর্ণ কিনারে লড়াই হলো আলেকজান্ডার আর দারিয়ুসের মধ্যে। নদীর তীরে যুদ্ধ করা সবসময়ই কঠিন। এই যুদ্ধে আলেকজান্ডারের সাথে এসে যোগ দিলেন জেনারেল পারমেনিয়ন। যথারীতি পারমেনিয়নও বাম দিক থেকে আর আলেকজান্ডার ডান দিক থেকে নেতৃত্ব দিলেন যুদ্ধের। আলেকজান্ডার সবসময় যে বাহিনীর নেতৃত্ব দেন, সেই অশ্বারোহী বাহিনীর নেতৃত্বই দিলেন। সবাই যখন দারিয়ুসের সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ করছিল, আলেকজান্ডার তখন তার বাহিনী নিয়ে এগিয়ে গেলেন সোজা দারিয়ুসের দিকে। আলেকজান্ডারের সামনে টিকতে পারলেন না দারিয়ুস। হঠাৎ এই আক্রমণে তিনি বেশ ভয় পেয়ে গেলেন। কেবল ভয় পেয়েই থামলেন না, সোনার রথে চড়ে উত্তরদিকে পালিয়ে গেলেন। অসহায় সম্রাট দারিয়ুস যখন দেখলেন, আলেকজান্ডারের দুর্ধর্ষ বাহিনীর কাছে তার বিশাল বাহিনী আত্মসমর্পণ করছে, তখন তার পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর উপায় কী। নিজের স্ত্রী, মা আর সন্তানরা আলেকজান্ডারের কাছে আত্মসমর্পন করলেন। 

এই ইসাস থেকেই ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী পারস্য সাম্রাজ্যের পতনের শুরু হলো। ইসাসের যুদ্ধের পর আলেকজান্ডার ভাবলেন, দারিয়ুসের মতো সম্রাটকে যখন তিনি সহজেই হারাতে পেরেছেন, তখন আর কোনো রাজ্য জয়ই তার জন্য কঠিন হবে না। কাজেই নিজেকে রাজাদের রাজা ভাবতে শুরু করে দিলেন তিনি।