আরো শোক

এত বিশাল এক সাম্রাজ্যের অধিপতি হয়েও আলেকজান্ডার সুস্থির হয়ে রাজ্য শাসনের পক্ষে ছিলেন না। সুসায় কিছুদিন কাটানোর পরই নতুন দেশ জয়ের নেশা জাগে তার। আবার অভিযানের নেশায় ছটফট করতে থাকেন আলেকজান্ডার। এরপর কোন দেশ জয় করতে যাবেন তিনি? কোথায় যেতে চান, কেউ জানে না। রাশিয়া? আফ্রিকা? আরব? কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে আলেকজান্ডার সুসায় থাকতেই নতুন দেশ জয়ের পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেন। অখণ্ড আরব উপদ্বীপ জয় করার আগ্রহ দেখালেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই পশ্চিমাঞ্চল এবং কার্থেজ ও ইতালি আক্রমণ করতে চাইলেন।

খৃষ্টপূর্ব ৩২৪ অব্দের শরৎকাল। একবাতানা থেকে ভ্রমণ শেষে ফেরার পথে ইরানে বন্ধু হেফাস্টিয়ন অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন। আলেকজান্ডারের সবচেয়ে প্রিয় এবং কাছের বন্ধু ছিলেন হেফাস্টিয়ন। একই শুরু অ্যারিস্টটলের শিষ্য তারা। সেই ১৩ বছর বয়স থেকে তাদের বন্ধুত্ব। একদিনের জন্যও সে বন্ধুত্বে এতটুকু মরচে ধরেনি। মেসিডোনিয়ান বাহিনীর দ্বিতীয় নেতৃত্বের দায়িত্ব তিনি দিয়েছিলেন হেফাস্টিয়নকে। সেই হেফাস্টিয়ন তাকে ছেড়ে চলে গেলেন চিরতরের জন্য। কেউ কেউ বলে থাকেন, বিষাক্রান্ত হয়েই মারা গিয়েছিলেন হেফাস্টিয়ন। যেভাবেই মারা যান, হেফাস্টিয়নের মৃত্যুতে প্রচণ্ড আঘাত পেলেন আলেকজান্ডার। পৃথিবীটা তার কাছে নিঃসঙ্গ মনে হতে লাগল । যদিও বিশাল রাজ্যের অধিপতি তিনি। তবু নিজেকে মনে হলো নিঃস্ব এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন আলেকজান্ডার। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় হেফাস্টিয়নের শেষকৃত্ব অনুষ্ঠান পালন করলেন। শুধু তাই নয়, একটানা ছয়মাস তিনি হেফাস্টিয়নের জন্য শোক করলেন। সময় পেলেই হেফাস্টিয়নের সমাধির পাশে গিয়ে বিলাপ করতেন। তখন হেফাস্টিয়নের সমাধির পাশে কেউ গেলেই শুনতে পেতেন আলেকজান্ডারের করুণ বিলাপধ্বনি, হায় হেফাস্টিয়ন! আমাকে একা রেখেই চলে গেলে! কেমন স্বার্থপর তুমি। দ্যাখো কেমন নিষ্ঠুর তুমি! হেফাস্টিয়ন তুমি জানো না, তোমার জন্য আমার শোক আমার এই বিশাল সাম্রাজ্য থেকেও বড়। এতই বড় যে এই শোক সামাল দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয় বন্ধু।