সান্টা, বান্টা
আমাদের যেমন গঙ্গারাম তেমনই সর্দার খুশবন্ত সিং-দের সান্টা-বান্টা, সান্টা সিং এবং বান্টা সিং।
সান্টা সিং ও বান্টা সিং মায়ের পেটের ভাই নয়। কখনও তারা বন্ধু বা প্রতিবেশী, সহযোগী কিংবা পরস্পরের পরিপূরক। কখনও বা আলাদা-আলাদা।
সান্টা-বান্টা খুশবন্ত সিং-এর কলমে প্রথম বিখ্যাত হয় সেই যখন ইংলিশ চ্যানেলের নীচে দিয়ে ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের মধ্যে ভূগর্ভ পথ তৈরি করা হয়।
সারা পৃথিবী থেকে গ্লোবাল টেন্ডার ডাকা হয়েছিল এই টানেল তৈরির জন্য। জাপান, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড সব দেশ থেকেই এই বিশাল কাজের জন্য বিশাল বিশাল সব প্রতিষ্ঠান টেন্ডার পেশ করেছিল।
সান্টা-বান্টাও টেন্ডার দেয়। দেখা গেল তাদের চাহিদা সবচেয়ে কম। জাপানিদের একশো ভাগের একভাগ, মার্কিনদের হাজার ভাগের এক ভাগ।
টেন্ডার দেখে টানেলের কর্মকর্তারা সান্টা-বান্টাকে ডেকে পাঠালেন। জানতে চাইলেন, ‘কী করে, এত কম খরচায় টানেল তৈরি হবে।’
সান্টা বলল, ‘খরচ তো একটু বাড়িয়েই ধরেছি।’
কর্তৃপক্ষ বললেন, ‘সে কী?’
বান্টা বলল, ‘চ্যানেলের এপাশ থেকে আমি খুঁড়তে খুঁড়তে এগোব। আর ওপাশ থেকে সান্টা খুঁড়তে খুঁড়তে আসবে। এইভাবে দু’জনে যখন মুখোমুখি হব চ্যানেল সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। খরচ অর্ধেক হয়ে যাবে।’
বিস্মিত কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করলেন, ‘কিন্তু দু’জনে যদি মুখোমুখি দেখা না হয়?’
সান্টা বলল, ‘তা হলেও কিন্তু কুছ পরোয়া নেই। দু’জনে যে যার মতো এগিয়ে যাবে। খরচ বেশি হবে কিন্তু আপনারা দুটো টানেল পেয়ে যাবেন।’
বলাবাহুল্য, এই টানেল তৈরির কাজ সান্টা-বান্টা পায়নি।
এরপর সান্টা-বান্টা রোবট যন্ত্রমানব তৈরির কারখানা করল।
সেই যন্ত্রমানব বিক্রি করার জন্যে তারা মার্কিন দেশে গেছে। আমেরিকানরা যাচাই না করে কোনও জিনিস কেনে না।
সান্টা-বান্টা যখন বলল, ‘আমাদের তৈরি এই রোবটের এমন বৈশিষ্ট্য আছে যা অন্য কোনও রোবটের মধ্যে নেই।’
মার্কিন ক্রেতা সংগতভাবেই জানতে চাইল, ‘সেই বৈশিষ্ট্যটি কী?’
সান্টা বলল, ‘মানুষের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য আছে তাই।’
ক্রেতা জানতে চাইল, ‘কী সেটা?’
বান্টা বলল, ‘আমাদের রোবট কখনও কোনও ভুল করলে অন্য রোবটের ঘাড়ে দোষ দেয়।’
সান্টা-বান্টার একবার ভগবানের সঙ্গে দেখা হয়েছিল।
কথায় কথায় সান্টা ভগবানকে বলল, ‘প্রভু শুনেছি যে আপনার দিন-রাত সব খুবই লম্বা লম্বা। আমাদের এক লক্ষ বছর আপনার কতটা সময়?’
ভগবান বললেন, ‘বৎসগণ, তোমাদের এক লক্ষ বছর আমার ঠিক এক মিনিট।’
তখন বান্টা ভগবানকে জিজ্ঞাসা করল, ‘প্রভু আমাদের এক কোটি টাকা আপনার কাছে কত?’
ভগবান বললেন, ‘তোমাদের এক কোটি টাকার মূল্য আমার কাছে এক টাকা মাত্র।’
চতুর সান্টা বলল, ‘প্রভু আমাদের দয়া করে একটা টাকা দিন না।’
ভগবান বললেন, ‘ঠিক আছে, এক মিনিট সবুর করো।’
অবশেষে সান্টার একটা সমস্যার কথা বলি।
সান্টা খুব মোটা হয়ে গেছে। দিল্লিতে পাড়ার ডাক্তারের কাছে সে গেছে। ডাক্তার সাহেব তাকে বললেন, ‘দৈনিক সকাল-বিকেল দশ মাইল করে দৌড়তে হবে। এইভাবে তিন মাস দৌড়লে অন্তত পনেরো কেজি ওজন কমবে।’
তিন মাস পরে ডাক্তার সান্টার ফোন পেলেন, ‘ডাক্তার সাহেব দৌড়ে দৌড়ে আমার কুড়ি কেজি ওজন কমে গেছে।’
ডাক্তার বললেন, ‘খুব ভাল।’
সান্টা বলল, ‘আর ভাল! দৌড়তে দৌড়তে আমি কলকাতা পর্যন্ত চলে এসেছি। এই ফোন তো আমি কলকাতা থেকেই করছি।’