4 of 8

কেনাবেচা

কেনাবেচা

কেনারাম এবং বেচারাম শিশুসাহিত্যের এবং আধা রূপকথার পরিচিত এবং প্রিয় চরিত্র। এক ধরনের কিশোর কাহিনীতে এদের প্রবেশ একদা ছিল অনিবার্য।

কেনারাম কেনে, বেচারাম বেচে। এই দুই ব্যক্তিকে আমরা ভালভাবেই চিনি। প্রথম ব্যক্তিটি, ওই কেনারাম হয়তো আমি নিজেই এবং আপনিও যদি না আপনি ব্যবসায়ী বা দোকানদার হন। তা হলে আপনি বেচারাম।

ধ্বনিসাদৃশ্য থাকলেও বেচারাম কিন্তু মোটেই বেচারা নয়। কেনাবেচায় বেচারামেরই নাম।

তবে এমন লোকও আছেন, যিনি একসঙ্গে একই জিনিস কেনাবেচা করেন, কেনেন এবং তারপরেই বেচেন। পরের দিন হয়তো বা কাল বেচেছেন তাই আবার কেনেন।

এঁদের বলা হয় দালাল, যেমন শেয়ারের দালাল, পাটের দালাল ইত্যাদি। পুরনো বোম্বাই এখনকার মুম্বাইয়ের ব্যবসাবাণিজ্যের প্রধান এলাকাই হল দেশের আর্থিক প্রাণকেন্দ্র দালাল স্ট্রিট।

দালাল শব্দটি অসম্মানজনক নয়। রাজনৈতিক প্রসঙ্গে দালাল শব্দটির অর্থের অধঃপতন হয়েছে।

একদা অন্য দশটা জীবিকার মতোই দালালি একটি জীবিকা বলে পরিগণিত হত। আমার মাতামহ পাট ব্যবসায়ী ছিলেন। হাট থেকে পাট কিনে পাটকলের সাহেবদের কাছে বেচতেন। খুব ছোটবেলায় রেলগাড়িতে দিদিমার সঙ্গে কোথায় যেন যাচ্ছি, এক সহযাত্রিণী দিদিমাকে কথায় কথায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনার স্বামী কী করেন?’

নির্বিকারভাবে, সসম্মানে মাতামহী তাঁকে বলেছিলেন, ‘আমার কর্তা দালাল। পাটের দালালি করেন।’

আজকাল কেউ চট করে স্বীকার করবেন না যে তিনি দালাল, কিংবা তাঁর কেউ দালালি করেন।

দালালকে ইংরেজিতে বলে ব্রোকার (Broker)। শেয়ারের দালাল হলেন স্টক ব্রোকার। দুটি অভিধানে দালল শব্দটির দু’ রকম অর্থ দেয়া আছে। ‘চলন্তিকা’ বলছে দালাল মানে হল যে ব্যক্তি ক্রেতার সহিত বিক্রেতার যোগ ঘটায়। অতি সাম্প্রতিক ‘আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধান’ বলছে দালাল মানে হল যে পারিশ্রমিক নিয়ে কেনাবেচায় সাহায্য করে।

আর কেনাবেচা বা দালালি নিয়ে শাব্দিক কচকচি নয়, এবার একটি গল্পে আসি।

কেনাবেচার ব্যাপারে এই গল্পটা আমি শুনেছিলাম টাঙ্গাইল বাজারে। সম্প্রতি একটা বিলিত জোক বুকেও একটা গল্প পেলাম। যত দূর মনে পড়ছে, ইতিমধ্যে বসানো অন্য চেহারায় এই একই গল্প আমি নিজেও কোথায় যেন বলেছি।

কিস্টো (কৃষ্ণ) ঘোষ নামে জনৈক গ্রাম্য গোয়ালা শহরে এসেছেন কেনাকাটা করতে। এ দোকান সে দোকান ঘুরে তিনি গোরুর দড়ি কিনেছেন, দুধ দোয়ার গামলা কিনেছেন। অবশেষে একটা সাইকেলের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে জর্দা পান চিবোতে চিবোতে একটা কাঁচি সিগারেট মনের সুখে টানছেন।

এমন সময় সাইকেলের দোকানদার কৃষ্ণ ঘোষকে বললেন, ‘ও কিস্টোবাবু, এত গোরু দিয়ে কী করেন? একটা সাইকেল কিনুন।’

কৃষ্ণ ঘোষ বললেন, ‘সাইকেল দিয়ে কী করব?’

দোকানদার বললেন, ‘সাইকেল চড়বেন। আর পায়ে হাঁটতে হবে না। গোরুর পিঠে চড়ে তো আর যাতায়াত করতে পারবেন না। সাইকেলে আরামে চলাফেরা করতে পারবেন।’

কৃষ্ণ ঘোষ নাকি কিছুক্ষণ চিন্তা করে দোকানদারকে বললেন, ‘তা তো পারব। কিন্তু আপনার সাইকেল দুইলে কি দুধ পাওয়া যাবে?’

এর পরে সেই সাইকেল বিক্রি হয়েছিল কি না গল্পের শেষে সেটা ছিল না।

অবশেষে নাটিকাকারে শেষ গল্প।

ক্রেতা ও দোকানি

ক্রেতা: মুগের ডাল আছে?

দোকানদার: না।

ক্রেতা: ঘি আছে?

দোকানদার: না তো।

ক্রেতা: গোবিন্দভোগ চাল আছে?

দোকানদার: না, ওটাও নেই।

ক্রেতা: গরমমশলা?

দোকানদার: সেও ফুরিয়ে গেছে।

ক্রেতা: তালা আছে?

দোকানদার: হ্যাঁ, তালা আছে। ভাল তালা আছে।

ক্রেতা: তা হলে এবার দোকানের ঝাঁপ ফেলে দিয়ে, তালা লাগিয়ে দিন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *