4 of 8

সরল শৈশব

সরল শৈশব

বালক-বালিকার পর এবার আমরা সরল শৈশবে যেতে পারি। প্রথমে একটা মহিলা শিশুর কাহিনী।

একটি ছয়-সাত বছরের বালিকার জন্মদিন। বিকেলবেলায় তার এক বন্ধুর বাড়ি থেকে ফোন এল। বন্ধুর মা ফোন করেছেন, জন্মদিনের বালিকাটিই সেই ফোন ধরেছে।

বন্ধুর মা বললেন, ‘অহনা, তোমার বন্ধু হীরকের জ্বর হয়েছে। বাবা, সে তো আজ তোমার জন্মদিনের নিমন্ত্রণে যেতে পারছে না।’

পাকা বুড়ির মতো অহনা বলল, ‘জ্বর হলে আর কী করে আসবে হীরক?’ তারপর একটু বিরতি দিয়ে বলল, ‘হীরককে বলবেন, আমার উপহারটা যেন ঠিক করে রেখে দেয়, ভাল হলেই নিয়ে আসবে। না হলে আমি তবে নিজে গিয়ে নিয়ে আসব।’ এই হল সরল শৈশব।

অনুরূপ আর-একটি জন্মদিনের গল্প আমি একদা লিখেছিলাম। প্রাসঙ্গিকতার প্রয়োজনে সেই গল্পটিও আর-একবার বলছি। একটু ঘুরিয়ে বলছি।

এ ঘটনা অনেকদিন আগেকার। তা প্রায় কুড়ি-পঁচিশ বছর হবে।

একটি বছর আটেকের বালকের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল রাজপথে।

আমরা দু’জনে প্রতিদিন সকালে একই সময় মোড়ের মাথায় রাস্তার একটা জায়গায় এসে দাঁড়াতাম। বালকটির স্কুলের বাস আসত। আমার অফিসের গাড়ি। দৈনিকই রাস্তায় অল্পস্বল্প দাঁড়িয়ে থাকতে হত গাড়ির অপেক্ষায়। এইভাবেই পথে দাঁড়িয়ে শিশুটির সঙ্গে আলাপ হয়। সেই আলাপ ক্রমশ একটি অসম বন্ধুত্বে পরিণত হয়।

সে তার স্কুলের কথা, বাড়ির কথা, পোষা বেড়ালের কথা আমাকে বলত। আমি তাকে দু’-একটা মজার গল্প কখনও কখনও বলতাম।

এর মধ্যে একদিন সে আমাকে বলল, ‘সামনের রবিবার আমার জন্মদিন। তুমি সন্ধেবেলা আমাদের বাসায় এসো।’

আমি বললাম, ‘কিন্তু আমি যে তোমাদের বাড়ি চিনি না।’

ছেলেটি বলল, ‘সে খুব সোজা। এই সামনের গলিটা দিয়ে ঢুকে বাঁয়ের দিকে তিনটে বাড়ি ছেড়ে, লাল দোতলা বাড়ির আমরা দোতলায় থাকি। সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে দেখবে, দরজায় বাবার নেমপ্লেট লাগানো আছে, সিতাংশু চৌধুরী। নেমপ্লেটের পাশে কলিংবেল। তুমি তোমার কনুই দিয়ে বেলটা টিপলেই, আমি দরজা খুলে দেব।’

আমি অবাক হয়ে বলেছিলাম, ‘কনুই দিয়ে কলিংবেল টিপতে যাব কেন?’

ছেলেটি গম্ভীর মুখে বলল, ‘বারে, তুমি আমার জন্মদিনে উপহার নিয়ে আসবে না?’

আমি বললাম, ‘তাতে কী হয়েছে?’

‘উপহারের প্যাকেটে যে তোমার দু’হাত জোড়া থাকবে, তাই তোমাকে বলছি কনুই দিয়ে কলিংবেলটা টিপতে।’

এরপরে সেই সরল শিশুটিকেও একবার স্মরণ করতে হয়।

শিশুটি একটি তিন বছরের বালিকা। আমি তাদের বাড়িতে বেড়াতে গেছি। যাঁর কাছে গেছি তিনি বাড়িতে নেই। বাইরের ঘরে অপেক্ষা করছি।

এমন সময় তিন বছরের মেয়েটি এল। সে বেশ কিছুক্ষণ আমাকে স্থির দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করল।

তারপর ওই বাইরের ঘরের সোফার নীচ থেকে একটা ঝাঁটা, ঘর ঝাড় দেওয়ার ফুলঝাড়ু, বার করল। সেটা আমাকে দেখিয়ে সে প্রশ্ন করল, ‘এটা কী?’

আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, ‘ঝাঁটা।’

সঙ্গে সঙ্গে সে বলল , ‘তুই একটা পাঁঠা।’

এই বলে সে চলে গেল। আমিও আশ্বস্ত হলাম এই ভেবে যে সে আমাকে ঝাঁটাপেটা করেনি।

পুনশ্চ:

আমার প্রতিবেশীর চার বছরের নাতনি সেদিন নার্সারি স্কুল থেকে ফিরে এসে বাড়িতে ঢোকার মুখে আমার সদর দরজায় উঁকি দিয়ে বলল, ‘জানিস, আমি আজ লিখতে শিখেছি।’

স্কুলের ব্যাগ খুলে, একটা খাতা খুলে সে তার লেখা শেখার নমুনা দেখাল। রীতিমতো হিজিবিজি।।

আমি সেটা দেখে বললাম, ‘কী লিখেছ, পড়ো দেখি।’

সে বলল, ‘পড়তে তো শিখিনি। আমি শুধু লিখতে শিখেছি।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *