4 of 8

চপলতা

চপলতা

আসুন এবার একটু চপলতা করা যাক।

কেউ হয়তো বলতে পারেন, সারা বছর ধরে চপলতাই তো করে থাকেন, এ আর নতুন কথা কী?

অভিযোগ নতমস্তকে মেনে নিচ্ছি। কিন্তু একে বৈশাখের দাবদাহ, দগ্ধ তাম্র দিন চারদিক জ্বলেপুড়ে ছারখার তার সঙ্গে নির্বাচনী মহারণ, চাপান-উতোর, উতোর-চাপান, ঝগড়াঝাঁটি, মারামারি, হাতাহাতি এমনকী রক্তপাত, মৃত্যু। সাধারণ, নির্বিবাদী মানুষের পক্ষে অসহ্য, অসহ্য, অসহ্য। কিন্তু বলার কেউ নেই, ‘থামুন। এই রক্তরঙ্গ থামান। এই উত্তেজনা থামান। আমরা আপনাদেরই লোক। আমরা আপনাদেরই ভোট দেব। আমরা আপনাদেরই ভোট দিয়েছি। আমাদের জন্যে এত হানাহানি করবেন না।’

চপলতা করতে গিয়ে রীতিমতো রাজনৈতিক আলোচনায় চলে এলাম। এ বাজারে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় ভোটের রাজনীতি থেকে অব্যাহতি নেই।

এবং সেই জন্যেই একটু হালকা হওয়ার জন্য এবারে একটু অতি তরল চপলতায় যাই। আপনাদের উত্তেজিত স্নায়ু ও শিরাগুলি হালকা থেকে হয়তো একটু আরাম পাবে।

চাপল্যের কোনও দিনক্ষণ, বাঁধা মুহূর্ত নেই। স্থানকাল, বয়েস নেই।

প্রবীণ বয়েসে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ কোনও এক নিরুপমাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন,

চপলতা যদি আজ কিছু ঘটে,

করিয়ো ক্ষমা

হে নিরুপমা।

না। আমার তেমন কোনও নিরুপমা নেই যার সঙ্গে চপলতা করতে পারি।

শিবরাম চক্রবর্তীর অনুকরণে বলতে পারি আমার যে নিরুপমা ছিলেন তিনি ঝরিয়া চলে গেছেন। ওই রবীন্দ্রনাথই তো বলেছিলেন, ‘ফাগুনের ফুল গেছে ঝরিয়া।’

এই ভৈরব, রুদ্র, বৈশাখে গত বসন্তের ফাগুনের ফুলের কথা থাক বরং দুয়েকটা লোকায়ত গল্প বলি।

প্রথম গল্পটা পিতা-পুত্রের।

ছেলে এসে বাবাকে বলেছে, ‘বাবা আমাকে পাঁচটা টাকা দেবে?’

বাবা বললেন, ‘জানো তোমার বয়েসে আমরা টাকার কথা ভাবতেই পারতাম না, আমরা বাবার কাছে টাকা চাইতাম না, পয়সা চাইতাম।’

কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে ছেলে বলল, ‘ঠিক আছে। তোমার কথাই থাক। তুমি আমাকে পাঁচশো পয়সা দাও।’

দ্বিতীয় গল্প প্রেমিক-প্রেমিকার।

বিকেলে প্রেমিক এসে তার প্রেমিকাকে বলল, ‘আজ সন্ধ্যাবেলা দারুণ জমবে।’

প্রেমিকা বলল, ‘কী করে জমবে? আমাকে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে বাড়ি ফিরতে হবে।’

প্রেমিক বলল, ‘আরে এই দেখো না, আজ সন্ধ্যা ছটা-নটার শোয়ে ‘ঘর জামাই এম এল এ চাই’ সিনেমার তিনটে টিকিট কিনে এনেছি।’

বিভ্রান্ত প্রেমিকা জিজ্ঞাসা করল, ‘আমাদের দুজনের জন্যে তিনটে টিকিট কেন?’

প্রেমিক বলল, ‘আরে ওই টিকিটগুলো কি আমাদের জন্যে নাকি। ওগুলো তোমার বাবা, মা, ছোটভাইয়ের জন্যে।’

অবশেষে রাজনীতি দিয়ে শেষ করি।

এক বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতাকে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘আপনি এমন কী করতে পারেন, যা অন্যে পারে না।’

প্রবীণ রাজনীতিবিদ মধুর হেসে আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি আমার নিজের হাতের লেখা পড়তে পারি, যা অন্য কেউ পারে না। হাজার চেষ্টা করেও পারে না।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *