4 of 8

কাণ্ডজ্ঞান

কাণ্ডজ্ঞান

না।

না। কাণ্ডজ্ঞান নয়।

খুব ভাল করে ভেবে বলছি আমি। ‘কাণ্ডজ্ঞান’ নামে কোনও রচনা কখনও লিখিনি। পাগলের কাণ্ডজ্ঞান লিখেছি, মাতালের কাণ্ডজ্ঞান লিখেছি, কিন্তু নির্ভেজাল কাণ্ডজ্ঞান, নৈব নৈব চ। কখনও নয়, কখনও নয়। কখনও ‘কাণ্ডজ্ঞান’ শিরোনামে কোনও লেখা আমি লিখিনি।

সারা জীবন ধরে কাগজ-কলম-কালি এবং সময় অপব্যয় করে রাশি রাশি কবিতা, গল্প, নিবন্ধ রচনা করেছি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। ক’জনাই বা আমার লেখা পড়ে দেখেছে। আমার যা কিছু খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা সে ওই ‘কাণ্ডজ্ঞান’ থেকে, যা ধারাবাহিক ভাবে দেশ পত্রিকায় প্রায় বিশ বছর আগে বেরিয়েছিল এবং পরে বই হয়ে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে বেরয়।

কিন্তু মজার কথা এই যে কাণ্ডজ্ঞান নামে আমার কোনও নির্দিষ্ট রচনা নেই, ধারাবাহিক রচনামালার নাম ছিল ‘কাণ্ডজ্ঞান’, পরে বইয়ের নামও হয় ‘কাণ্ডজ্ঞান’।

তা এতদিন পরে পাপস্খালনের চেষ্টা করছি, অবশেষে কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে এই ছোট আলোচনা।

কাণ্ডজ্ঞানের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল, মহামতি নিউটনের সেই খরগোশের খাঁচায় দুটো দরজা করা। একটা খরগোশ বড়, একটা ছোট খরগোশ। নিউটন মিস্ত্রিকে বললেন, দুটো দরজা করতে, একটা বড় দরজা, বড় খরগোশের জন্যে, অন্যটা ছোট দরজা, ছোট খরগোশ যাতায়াত করবে। ছোট খরগোশ যে বড় দরজাতেও অবাধে যেতে পারবে, আসতে পারবে, তার জন্যে আলাদা দরজার প্রয়োজন নেই, সেই যৎসামান্য কাণ্ডজ্ঞানটুকু না থাকার জন্যেই জ্ঞানতপস্বী নিউটন হলেন মহামতি।

কাণ্ডজ্ঞান সম্বল আমাদের মতো সাধারণ মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শনের সীমায় গিয়ে আটকিয়ে যাই। আমাদের সমস্ত খরগোশের একটা দরজাতেই কাজ মিটে যায়।

পরশুরাম জ্ঞানমার্গের কথা বলেছিলেন। জ্ঞানমার্গে বিচরণের ক্ষমতা আমাদের মতো তুচ্ছ মানুষের নেই। আমাদের নিতান্ত কাণ্ডজ্ঞান। কাণ্ডজ্ঞানের সীমানাতেই ফিরে যাচ্ছি।

সীমানা পশ্চিম গোলার্ধ। ইউরোপের কিংবা আমেরিকার কোনও বড় শহরের একটি পাঁচতারা হোটেল। অধিকাংশ পাঁচতারা হোটেলের অন্যতম তারা হল একটি সুইমিং পুল। এই পাঁচতারা হোটেলটিতে একটি দুটি নয়, পরপর তিনটি সুইমিং পুল। হোটেলের ম্যানেজার সাহেব সবাইকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখান, ‘এই প্রথমটা হল গরম জলের সুইমিং পুল, এটাই সবচেয়ে পপুলার।’ এরপর আরেকটু এগিয়ে দ্বিতীয়টি দেখান, ‘এটি হল ঠান্ডা জলের পুল, অনেকে এটাও পছন্দ করেন।’ অবশেষে তৃতীয় একটি পুলের কাছে এসে থামেন। এই পুলটি শূন্য, ঠান্ডা বা গরম জল-টল কিছু নেই। ম্যানেজার বুঝিয়ে বলেন, ‘আবার অনেক গেস্ট এমন থাকে, যে তাঁরা সুইমিং পুল চান কিন্তু জল পছন্দ করেন না। তাঁদের জন্যে এই শুকনো পুল।’

কাণ্ডজ্ঞানের নমুনা হিসেবে এই কাহিনীটি চমৎকার। তবে শুধু পাঁচতারা হোটেলের দুঁদে ম্যানেজারেরাই নয়, কাণ্ডজ্ঞান শিশুদেরও থাকতে পারে, নিরক্ষরদেরও থাকতে পারে।

মাস্টারমশায় শিশু ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘যদি আমার বাঁ হাতে পাঁচটা আর ডান হাতে ছয়টা কমলালেবু থাকে তবে আমার হাতে’…, মাস্টারমশায় প্রশ্ন শেষ করার আগেই ছাত্র বলল, ‘তবে আপনার হাত খুব বড় বড় স্যার। পাঁচটা-ছয়টা করে কমলালেবু একেক হাতে কম কথা নাকি।’

অবশেষে একটি পাড়াগাঁয়ে কাণ্ডজ্ঞানের গল্প বলার আছে। হরিরাম আর রামহরি গাছ থেকে নারকেল পাড়ছিল। হরিরাম গাছে উঠেছিল আর রামহরি নীচে নারকেল কুড়িয়ে গুছিয়ে রাখছিল। হঠাৎ এক কাঁদি নারকেল রামহরির মাথায় পতিত হয়ে তাকে ধরাশায়ী করে ফেলে। ব্যাপার দেখে গাছের ওপর থেকে হরিরাম প্রশ্ন করে, ‘রামহরি বেঁচে আছিস না মরে গেছিস?’ ভূমিশয্যা থেকে রামহরি বলল, ‘বেঁচে আছি।’ হরিরাম বলল, ‘তুই যা মিথ্যেবাদী হয়তো মরে গেছিস, বলছিস বেঁচে আছি।’ রামহরি বলল, ‘আমারও মনে হচ্ছে আমি মরে গেছি, না হলে তুই আমাকে মিথ্যেবাদী বলার সাহস পাস কী করে?’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *