রঙ্গমঞ্চ ও কমলদা
পঞ্চাশ দশকে, ঠিক ঠিক তারিখটা মনে নেই—কমলদাকে প্রথম দেখি সাউথ পয়েন্ট স্কুলে। আমাদের সম্পাদক শ্রী রবি সেনগুপ্ত কমলদার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। অতীব সাধারণ এমনিতে—কিন্তু ক্রমশ কথা বলার ধরনে বুঝলাম ভদ্রলোক সাধারণ নন। আমার বয়স তখন বেশ কম এবং সবে অভিনয় শেখবার জন্য এলটিজি-তে ঢুকেছি—উৎপল দত্তের পরিচালনায়। জানলাম কমলদা সাউথ পয়েন্ট স্কুলেরই একজন শিক্ষক। এই হচ্ছে প্রথম কমলদাকে দেখা এবং আলাপের সূত্রপাত। উৎপল দত্তও তখন সাউথ পয়েন্টের শিক্ষক। আমাদের মহড়া হত ম্যানডেভিল গার্ডেনস-এর একটি ঘরে (বর্তমানে সেখানে বিরাট বাড়ি)। শ্রী সতীকান্ত গুহ১ ছিলেন আমাদের সভাপতি এবং সে কারণেই আমাদের এমন একটি সুন্দর জায়গা পাওয়া। হয়তো এমন একটা মহড়ার জায়গা না হলে কমলদার সাথে দেখাই হত না। তখন মহড়ার আগে এবং পরে একটা খুব ভালো আড্ডা জমত গড়িয়াহাটের ‘পানীয়ন’ বলে একটা রেস্টুরেন্টে। বিকেলে যে আড্ডা হত সেটা বেশিরভাগই সাউথ পয়েন্টের শিক্ষকদের। এবং এই আড্ডায় কমলদা ছিলেন মধ্যমণি। উৎপল দত্ত—এন. বিশ্বনাথন২—শেখর চ্যাটার্জি৩ এবং বাইরের মধ্যে আমি এবং সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝে মাঝে রবিদাও এসে পড়তেন। দেখতাম সবাই কথা বলে—কিন্তু কমলদা বলতে শুরু করলে সবাই থেমে যেতেন। কমলদার এক বিশেষ বাচনভঙ্গি ছিল এবং সেটা প্রচণ্ডভাবে আকর্ষণ করত সবাইকে। ধরুন এমন একটা বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে যেটা আমাদের বোঝার বাইরে—তবুও শুনতে বড়োই ভালো লাগত। বোধহয় এটা এক ধরনের আকর্ষণী শক্তি। কমলদা স্বভাবতই বলতেন—শিল্প-সাহিত্য-ইতিহাস-ভূগোল এবং আরও কত কী। কিন্তু রাজনীতি সম্পর্কে কখনই কোনও কথা বলতে শুনিনি। বরং রাজনীতি ব্যাপারটাকে খুব একটা দাম দিতেন না। এইভাবেই দেখতে দেখতে—শুনতে শুনতে কবে একদিন কমলদার গভীর ভক্ত হয়ে গেলাম জানি না। আমাদের থিয়েটার-নাটক করাটাকে কমলদা খুব স্নেহের চোখে দেখতেন। নাটক এবং নাট্যরস ব্যাপারে কমলদা যে গভীরে বিচরণ করতেন সেখানে পৌঁছোনো আমাদের একটু মুশকিল ছিল। কমলদার মাত্র তিনটে নাট্য প্রযোজনা দেখেছিলাম সেই সময়ে। সবটাই বাচ্চাদের নিয়ে। ‘দানসাফকির’৪, ‘লক্ষ্মণের শক্তিশেল’৫ এবং ‘আলমগীর’৬-এর কিছু অংশ। ঠিক আমার বিদ্যেতে কুলোবে না তার পর্যালোচনা করার। কখনও মনে হয়েছে এটা একটা পেইন্টিং দেখছি—কখনও মনে হয়েছে এমন উচ্চারণ তো আমরা করতে পারি না—কখনও মনে হয়েছে একি অসাধারণ কোরিওগ্রাফি। কিন্তু সবটার মধ্যে একটা আদি দেশজ ভাব রয়েছে। পোশাকের এবং রঙের এমন ব্যবহার হয়তো সমস্ত নাট্য আন্দোলনের কর্তাদের মাথাতেই আসত না। ‘লক্ষ্মণের শক্তিশেল’ দেখতে দেখতে ভোলা দত্ত বলেছিল, ‘বল না কমলদাকে আমাদের নিয়ে একটা নাটক করতে।’ কমলদাকে বলেছিলাম। কমলদা বেশ মিষ্টি করে বললেন—’তোমাদের হাড় পেকে গেছে, দোমড়ানো মোচড়ানো যাবে না।’ কথাটা সত্যি। ফ্লেক্সিবিলিটি বাচ্চাদের নিয়ে যতখানি হবে ততখানি আমাদের দিয়ে কখনই হবে না। বিশেষ করে তখনকার আমাদের অভিনয়কে কমলদা আখ্যা দিয়েছিলেন—’চিৎকৃত অভিনয়’। উপায় নেই আমাদের পরিচালক ছিলেন উৎপল দত্ত—এবং তাঁর ধরনই ছিল এটা। মহড়া শুরু হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত হয়তো কমলদার সঙ্গে গল্পগুজব হচ্ছে—কিন্তু মহড়া শুরু হলেই কমলদা সরে পড়তেন। বোধহয় আমাদের মহড়ার ধরন দেখলে কমলদার কষ্ট হত। আমি বহুবার কমলদার মহড়া দেখবার সুযোগ পেয়েছিলাম। সে এক সত্যিই অভিজ্ঞতা। প্রতিটি কথাকে ভেঙে চুরমার করে আবার সেটাকে সুন্দর করে বলার যে পদ্ধতি বোধহয় সেটা অনেকেরই জানা ছিল না আমাদের গোষ্ঠীর মধ্যে। বায়োস্কোপে নিয়মিত অভিনয় করাকালীন একবার মানিকদাকে (সত্যজিৎ রায়) জিজ্ঞাসা করেছিলাম থিয়েটার প্রসঙ্গে। অর্থাৎ বর্তমান বাংলা রঙ্গমঞ্চে কাদেরকে খুব ক্ষমতাশালী বলে মনে হয়? মানিকদা সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলেন,—’কমলবাবু কিছু করলে তাঁর ধারে কাছে কেউ আসবে না।’ বহু বহু এমন ঘটনা কমলদা সম্পর্কে জানি—যেগুলোর স্মৃতি চর্বন করে আজও আনন্দ পাই প্রচুর। একবার জোর করে কমলদাকে আমরা আমাদের এল.টি.জি.-র প্রাোডাকশন—’নীচের মহল’ দেখাই। ‘নীচের মহল’ হল গোর্কির Lower Depth-এর ভাবানুবাদ। রচনা ছিল উমানাথ ভট্টাচার্যের। অভিনয় হচ্ছিল বালিগঞ্জের সিংহী পার্কে। পুরো অভিনয়টা কমলদা দেখলেন। অভিনয় শেষে উৎপলদা খুব বিনয় করে কমলদার মতামত জানতে চাইলেন। কমলদা সেই বিচিত্র মুখে হাসি নিয়ে বললেন—’বাবু, ভদকা না খেলে এমন নাটক লেখা যায় না।’ ব্যাস। আমরাও বুঝে নিলাম কমলদার কতখানি ভালো লেগেছে। কি জানি তবুও আমার একমাত্র নড়া-চড়া ভাব-ভঙ্গি বোধহয় কমলদার একটু ভালো লাগত এবং তাই আমিই একমাত্র কমলদার খুব স্নেহের পাত্র হয়ে গিয়েছিলাম।
একজন বিরাট মানুষকে খুব কাছাকাছি থেকে দেখলেও সবটা বোঝা সম্ভব নয় আমাদের মতো লোকের পক্ষে। কমলদা এমনই একজন বিরাট মানুষ ছিলেন। বুঝতে সবটা না পারলেও অনুভব করতে পারতাম। কমলদাকে নিয়ে আজ বিদগ্ধ মহলে দারুণভাবে মূল্যায়ন শুরু হয়েছে। ‘কমলপুরাণ’-এ (রফিক ক্যায়সার) এক জায়গায় মানিকদার উক্তি আছে, ‘একমাত্র আমরা কয়েকজনাইতো কমলবাবুকে বুঝতাম।’ সত্যি কথা, কমলদাকে বুঝতে হলে প্রচুর গভীরে যেতে হবে। কিন্তু প্রচুর গভীরে না গিয়েও কমলদাকে বোঝা সম্ভব, কেবলমাত্র তাঁর ভক্ত হয়ে যাওয়া যায় যদি। আমি ছিলাম কেবলই ভক্ত। গভীরে গিয়ে অভিনয় ছাড়া অন্যভাবে ফাঁকি দিয়ে কিছু করাকে কমলদা বরদাস্তই করতেন না। কমলদা ছিলেন শিক্ষক—গুরু। একবার সৌমিত্র এবং আমি কমলদার শরণাপন্ন হয়েছিলাম ‘আলিবাবা’৭ নাটকটি করবার বাসনায়। নাটকটি হয়নি, কিন্তু তার সামান্য Preliminary কাজের ধাঁচ দেখে আমরা দু’জনেই মুগ্ধ। Custume design— Set design তো ছেড়েই দিলাম। (Gordon Craig-এর চাইতে কোনও অংশে কম নয়), শুধু অভিনয় অনুশীলনের যে একটা তালিকা করেছিলেন তাতে আমরা দু’জনাই কাত। নীচে একটা ফিগার দিচ্ছি যেটা কমলদার তৈরি ফুটওয়ার্ক প্র্যাকটিশ করার জন্য।
অর্থাৎ দাঁড়াতে হবে ডান পা-টা R-এর জায়গায় এবং বাঁ পা-টা L-এর জায়গায় রেখো তারপর টো-এর উপর ভর দিয়ে, ১—২—৩—৪—৫ বিপরীতভাবে আবার ১—২—৩—৪—৫ ভাবে হাঁটতে বা movement করতে হবে। এটা সম্পূর্ণ রপ্ত হলে দেখা যাবে upper part of the body স্থির থাকবে, কিন্তু lower part-এর movement চলতেই থাকবে। এটা খানিকটা নাচের পদ্ধতির মতন। কমলদা বলতেন, অভিনেতার ফুটওয়ার্কই আসল। নাটক—’আলিবাবা’ অবশেষে হয়নি আমার এবং সৌমিত্রর সময়াভাবে। কারণ মাঝে মধ্যে rehearsal দিয়ে কমলদার কাছাকাছিও পৌঁছোনো সম্ভব হয়নি।
বহুকাল আগে, বোধহয় ১৯৬২ কি ৬৩ হবে রিঙ্কু (শর্মিলা ঠাকুর) খুব আড্ডা দিতে আসত আমার বাড়িতে। আমার বাড়িটা একটা ছোটোখাটো আড্ডার বাজার ছিল। সর্বস্তরের লোকই আসত আড্ডা দিতে—শুধু অরসিকরা ছাড়া। স্বভাবতই—অভিনয় ইত্যাদি নিয়েই বেশি আলোচনা হত। সেখানে অনবরতই কমলদার reference আসত। একদিন রিঙ্কু বলল যে সে অভিনয় শিখতে চায়। আমি বা আমরা খুব আড্ডা দিতে পারি—কিন্তু শেখাবার ক্ষমতা কোথায় আমাদের। নিয়ে গেলাম রিঙ্কুকে সোজা কমলদার কাছে। গোড়ায় কমলদা একটু গররাজি হলেও অবশেষে আমাদের বিশেষ অনুরোধে রাজি হলেন। শুরু হল রিঙ্কুর অনুশীলন—’আলমগীরে’ উদিপুরির ভূমিকায়। প্রতিদিন rehearsal শুরু হত বেলা তিনটে নাগাদ, এবং শেষ হত রাত আটটায়। Rehearsal হত শুধু হাঁটার। সম্রাজ্ঞী কীভাবে হাঁটবেন এটা দেখাতে গিয়ে কমলদা সর্বস্তরের নারী জাতির হাঁটার অনুশীলন করাতে শুরু করলেন রিঙ্কুকে নিয়ে। এক একদিন রিঙ্কু rehearsal-এর পর আমার বাড়িতে আসত—কিন্তু তখন সে অত্যন্ত ক্লান্ত ওই প্রচণ্ড rehearsal-এর দরুন। কমলদা অবশ্য একদিন বলেছিলেন যে, ‘না:—মেয়েটির নিষ্ঠা আছে।’ সে নাটকটি মঞ্চস্থ হল না—কিন্তু রিঙ্কুর লাভ হল অনেক। আজও দেখা হলে রিঙ্কু কমলদার কথা বলে। এই ছিলেন কমলদা থিয়েটার এবং অভিনয়ের ব্যাপারে।
একটা কথা কমলদার মুখে প্রায়ই শুনতাম—’বাবু ধর্মের কী হবে গো।’ সত্যিই ধর্মের প্রতি এমন নিষ্ঠা খুব কম দেখেছি। সবকিছুর মধ্যেই যে একটা ধর্ম আছে সেটা কমলদার সংস্পর্শে এসে বুঝতে পেরেছি। ইদানীংকালের বহু লেখক-শিল্পী-গুণীজনদের গুরুস্থানীয় ছিলেন কমলদা। যেদিন কমলদা চলে গেলেন সেদিন মানিকদার কাছে খবরটা পৌঁছাই আমি। শ্মশানে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেদিন, মানিকদা, আর পি গুপ্ত (সাঁটুলদা৮)—নীরদ মজুমদার৯ এবং আরও বহু গুণীজন। কিন্তু কমলদার খাটটিকে ঘিরে বসেছিল তার ছেলেরা—ভক্তরা। কেমন যেন লাগছিল সেদিন।
শেষ এক-দু’বছর ধরে কমলদার সঙ্গে দেখা হলেই বলতেন—’রবি তুমি আমাকে টানা দুটো মাস সময় দেবে। তোমাকে নিয়ে ‘তারতুফ’১০ করাব।’ সব সময়ই আমি বলতাম, ‘কমলদা আপনি বললেই আমি সময় বের করে নেব।’ সেই সুযোগটা আর হল না। হঠাৎই কমলদা বিদায় নিলেন। এটা আমার জীবনে একটা বিরাট আঘাত। শ্মশান থেকে বাড়ি ফেরার সময় এইসব নানা ঘটনা মনে পড়ছিল আর যেন শুনতে পাচ্ছিলাম কমলদার সেই কথা, ‘বাবু ধর্মের কী হবে গো।’
‘শব্দপত্র’ পত্রিকা, সেপ্টেম্বর ১৯৮৪
টীকা
১) সতীকান্ত গুহ—শিল্প-সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক। নিজেও লেখালেখি করেছেন। একসময় উৎপল দত্ত-র ‘লিটল থিয়েটার গ্রুপ’-এর সভাপতি ছিলেন। কমলকুমার মজুমদারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ম্যান্ডেভিলা গার্ডেন্সে নিজের প্রতিষ্ঠিত ‘সাউথ পয়েন্ট স্কুল’-এ কমলবাবুকে ‘আর্ট’-এর শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেন। জীবনের শেষদিকে পুত্রবধূ সুরূপা গুহ হত্যা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
২) এন. বিশ্বনাথন (১৯২৯-২০১০)—জন্মসূত্রে তামিল এই অভিনেতা। অক্সফোর্ডের স্নাতক। ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক। বাংলা-ইংরেজি-তামিল নাটকে অভিনয় করেছেন। তামিল ভাষায় অনুবাদ করে মঞ্চস্থ করেছেন ‘ওথেলো’, ‘ম্যাকবেথ’, ‘ব্যাপিকা বিদায়’ ইত্যাদি নাটক। এছাড়া, উৎপল দত্ত-র দলে ও বোর্ড থিয়েটারে বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করেছেন। প্রথম ছবিতে অভিনয় মৃণাল সেনের ‘পুনশ্চ’ (১৯৬১)। এরপর ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’, ‘শ্রেয়সী’, ‘দোলনা’, ‘জীবন মৃত্যু’, ‘রোদন ভরা বসন্ত’, ‘সাহেব’, ‘শূন্য থেকে শুরু’ ইত্যাদি বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন। চিত্রপরিচালক অশোক বিশ্বনাথন এনারই পুত্র।
৩) শেখর চ্যাটাজ্যঁ (১৯২৪-১৯৯০)—প্রখ্যাত অভিনেতা। নদিয়ার ধর্মদহে জন্ম। নানারকম পেশায় যুক্ত ছিলেন প্রথম জীবনে। কলেজে নাটক করেছেন। ‘গীতবিতান’-এ কিছুদিন গানও শিখেছেন। উৎপল দত্ত-র ‘এল.টি.জি’-র হয়ে অনেক বিখ্যাত প্রযোজনায় অভিনয় করেছেন। যার মধ্যে ‘কল্লোল’ (১৯৬৫) নাটকে ‘শার্দুল সিং’-এর চরিত্রে অসামান্য অভিনয় করেছেন। নিজের নাট্যদল হিসেবে প্রথমে ‘থিয়েটার ইউনিট’ (১৯৫৮) ও পরে ‘ইউনিট থিয়েটার’ (১৯৮৩) তৈরি করেন। দ্বিতীয় দলের প্রযোজনায় ‘পন্তু লাহা’ নাটক আলোড়ন ফেলে দেয়। গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গে নিয়মিত অভিনয় করেছেন পেশাদারি রঙ্গমঞ্চে। প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় ‘সহসা’ (১৯৫২) ছবিতে। এরপর ‘সবার উপরে’, ‘অভিযান’, ‘অভিশপ্ত চম্বল’, ‘ইন্টারভিউ’, ‘মর্জিনা আবদুল্লা’, ‘সাধু যুধিষ্ঠিরের কড়চা’, ‘মৌচাক’, ‘অমরগীতি’ ইত্যাদি প্রায় ১০০-র কাছাকাছি ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। নিজে অভিনয়-সহ পরিচালনা করেছেন ‘বসুন্ধরা’ (১৯৮৬) ছবি। ‘সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি’ পুরস্কার পেয়েছেন। বিশিষ্ট অভিনেত্রী সাধনা রায়চৌধুরী এনারই সহধর্মিণী।
৪) ‘দানসা ফকির’—কমলকুমার মজুমদার রচিত নাটক। তাঁর ‘হরবোলা’ নাট্যদলে কয়েকবার মঞ্চস্থ হয়েছে নাটকটি। যার নির্দেশক ছিলেন কমলবাবু নিজেই।
৫) ‘লক্ষ্মণের শক্তিশেল’—সুকুমার রায় রচিত অসামান্য নাটক। কলেজে পড়া শেষ করার কিছুদিন পরেই সুকুমার রায় প্রতিষ্ঠিত করেন ‘ননসেন্স ক্লাব’। এই সময়ই লেখেন দু’টি নাটক—’ঝালাপালা’ ও ‘লক্ষ্মণের শক্তিশেল’। রামায়ণের চরিত্র নিয়ে এবং অসাধারণ মজাদার গান-সহ এক জমজমাট নাটক ‘লক্ষ্মণের শক্তিশেল’। গানগুলির সুর লেখক নিজেই করেছিলেন। যার স্বরলিপি করেছিলেন অনাদিকুমার দস্তিদার ও বিজয়া রায়।
৬) ‘আলমগীর’—ক্ষিরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের লেখা একটি বিখ্যাত নাটক। ‘বেঙ্গল থিয়েট্রিক্যাল কোং’ দ্বারা ‘কর্নওয়ালিশ থিয়েটার’ (পরবর্তীকালে ‘শ্রী’ সিনেমা)-এ অপেশাদার থিয়েটার হিসেবে এই নাটকটি ১৯২১-এর ১০ ডিসেম্বর নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ির নির্দেশনা ও অভিনয়ে প্রথম মঞ্চস্থ হয়। তখনও নাট্যাচার্য পেশাদার রঙ্গমঞ্চে যোগ দেননি।
৭) ‘আলিবাবা’—ক্ষিরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ রচিত সর্বাধিক জনপ্রিয় নাটক। এটি প্রথম মঞ্চস্থ হয় ১৮৯৭-এর ২০ নভেম্বর ‘ক্লাসিক থিয়েটার’-এ (৬৮, বিডন স্ট্রিট)। নির্দেশনা ও ‘হোসেন’-এর চরিত্রে অমরেন্দ্রনাথ দত্ত। সংগীত পরিচালনা ও নৃত্য নির্দেশনার দায়িত্বে ছিলেন যথাক্রমে পূর্ণচন্দ্র ঘোষ এবং নৃপেন্দ্রচন্দ্র বসু (‘আবদাল্লা’ চরিত্রে অভিনয়ও করেন)। প্রসঙ্গত, ‘মর্জিনা’-র অভিনয়ে ছিলেন কুসুমকুমারী।
৮) আর. পি. গুপ্ত (সাঁটুলদা) (১৯০২-২০০০)—পুরো নাম রাধাপ্রসাদ গুপ্ত। ‘সাঁটুল’ নামে বেশি পরিচিত। হুগলির হালিশহরে জন্ম। কটকের র্যাভেনস কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ঠাকুরদা। সেখানে গিয়ে পড়াশোনা। বিজ্ঞাপন সংস্থার উচ্চপদে কাজ করেছেন। টাটা কোম্পানিতে দীর্ঘদিন জনসংযোগ বিভাগের আধিকারিক ছিলেন। কমলকুমার-সত্যজিৎ রায়দের সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ কফি হাউসের আড্ডায় নিয়মিত যেতেন। ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তি। শিল্পকলার একজন সমঝদার ও সংগ্রাহক। বাংলায় লেখা বইয়ের মধ্যে ‘কলকাতার ফেরিওয়ালার ডাক ও রাস্তার আওয়াজ’ এবং ‘মাছ আর বাঙালি’ উল্লেখযোগ্য।
৯) নীরদ মজুমদার (১৯১৬-১৯৮২)—প্রখ্যাত চিত্রকর। কমলকুমার মজুমদারের আপন ছোটোভাই। আঁকা শেখেন ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের কাছে। ১৯৪৩-এ প্রদোষ দাশগুপ্ত, রথীন মৈত্র, পরিতোষ সেন প্রমুখ শিল্পীদের সঙ্গে গড়ে তোলেন ‘ক্যালকাটা গ্রুপ’। এই সংগঠনেরই ব্যবস্থাপনায় ১৯৪৪-এ প্রথম একক প্রদর্শনী। ১৯৫১ সালে ফ্রান্সে গিয়ে আন্দ্রে হল্যান্ডের কাছে শিল্পশিক্ষা। ১৯৫৭-য় ফ্রান্সে প্রথম একক প্রদর্শনী হয়। দীর্ঘদিন ওদেশে থাকেন। বাংলায় ‘পুনশ্চ পারী’ নামে এনার একটি দীর্ঘ স্মৃতিকথাধর্মী গ্রন্থ আছে।
১০) ‘তারত্যুফ’—ফরাসি নাট্যকার মলিয়ের রচিত বিখ্যাত নাটক। বহুবার নানাজনের অনুবাদে অজস্রবার বাংলায় অভিনীত হয়েছে এই নাটক।