মঞ্চ ও পর্দা
ব্যক্তিত্ব ও ব্যক্তিগত
পরিশিষ্ট ১
পরিশিষ্ট ২

চ্যাপলিন

চ্যাপলিন

চার্লি চ্যাপলিন আমার খুব প্রিয় কৌতুক অভিনেতা। আমি নিজে কৌতুক অভিনয় করি। চার্লি আমাকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছেন। চার্লি চ্যাপলিনের বহু ছবি একদা আমি দেখেছি। এখনও ওঁর ‘লাইম লাইট’ ‘গোল্ড রাশ’ ‘দি গ্রেট ডিকটেটর’ ‘মঁশিয়ে ভার্দু’ এইসব ছবি এলে দেখতে ইচ্ছে হয়। তবে আজ অনেক ব্যস্ততার জন্যে সেই সময় কখনই করে উঠতে পারি না। চার্লির কিছু ছবির ক্যাসেট তাই আমার সংগ্রহে আছে। মাঝে মধ্যে অবসরে সেগুলো বাড়িতে বসে দেখি।

তাছাড়া চার্লি চ্যাপলিনকে কেবল একজন কৌতুক অভিনেতা বলব কেন। তিনি ছিলেন একজন স্রষ্টা। বহু প্রতিভার অধিকারী ছিলেন চার্লি চ্যাপলিন।

চার্লি চ্যাপলিন যদি চলচ্চিত্রে না এসে কেবল লিখতেন তাহলে তাঁর পক্ষে লিও টলস্টয় হওয়াও অসম্ভব ছিল না এমন ধারণা অনেকেরই। গানের জগতে এলে বিশ্বের একজন শ্রেষ্ঠ গাইয়ে হতে পারতেন। তাঁর জীবনদর্শন ছিল গভীর। তাই তিনি এমন সব ছবি করতে পেরেছেন যার জনপ্রিয়তা থাকবে বহু কাল ধরে।

আমরা আমাদের তরুণ বয়সে তাঁর যা জনপ্রিয়তা দেখেছি, এই প্রজন্মের কাছে তা সামান্য মলিন হয়নি বলে আমার বিশ্বাস। আর আগামী প্রজন্মের কাছেও চার্লি একইরকম জনপ্রিয় থাকবেন একথা হলফ করে বলতে পারি।

চার্লি চ্যাপলিন চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে মিশেছেন। তাই হয়তো তাঁর সৃষ্টি হয়েছে এত সুন্দর ও সার্থক।

আমরা জানি অনেক দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়ে তিনি বড়ো হয়েছেন। সামান্য দু’মুঠো খাবারের জন্যে তাকে বাল্যকাল থেকে কত না পেশায় জড়িয়ে পড়তে হয়েছে। আমাদের এক কবি তাই বলেন : ‘দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান।’ ঠিক এই অর্থে না হলেও চার্লি এক জায়গায় বলেছেন, ‘God brings misery to the people and I make them love.’ সত্যিই তাই। দারিদ্র্যকে তিনি গ্রহণ করতে পেরেছিলেন বলেই হয়তো তিনি আজকের চার্লি চ্যাপলিন।

সব শেষে একটা কথা বলছি, কৌতুক অভিনেতারা তাঁদের অভিনয়ের মধ্য দিয়ে দর্শকদের আনন্দ দেন, হাসান। কিন্তু এঁদের নেপথ্য জীবনে থাকে হয়তো অনেক বেদনা। আর চার্লি চ্যাপলিনের জীবনে এটা সত্য ছিল।

অন্নপূর্ণা প্রকাশনীর অমিতাভ বসু প্রণীত ‘হাসির রাজা চার্লি-চ্যাপলিন’

 গ্রন্থের রবি ঘোষ লিখিত ভূমিকা (৭.১১.৯৫)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *