পরিচালক সত্যজিৎ রায়
শিশু চলচ্চিত্র ভারতবর্ষে ভালো করে আজও তৈরি হয় না। সেদিক থেকে সত্যজিৎ রায় একটি উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। তাঁর প্রত্যেকটি শিশু চলচ্চিত্রই এক-একটি কিংবদন্তী হয়ে গেছে। মানিকদার বাড়িতে একটা ট্র্যাডিশনাল এডুকেশন বা কালচার আছে তো শিশুসাহিত্য সম্বন্ধে। সেটা মানিকদার মধ্যে রয়েছে। শিশুর মনস্তত্ব, বোধহয় মানিকদার স্পেশাল সাবজেক্ট। আমি নিজে একটা ছবি করেছিলাম বাহাত্তর সালে। ‘সাধু যুধিষ্ঠিরের কড়চা’। তাতে একটা বাচ্চা ছেলের চরিত্র ছিল। তখন আমাকে ডেকে বলেছিলেন, ‘তোমার ছবিতে একটা বাচ্চাছেলের চরিত্র আছে?’ আমি বলেছিলাম, ‘হ্যাঁ।’ তখন আমাকে বললেন, ‘দ্যাখো, তোমাকে একটা কথা বলে দিই। বাচ্চাদের যখন ট্রিট করবে কখনও বাচ্চাদের মতে করবে না। ওদের একেবারে অ্যাডাল্ট হিসেবে ট্রিট করবে। কারণ বাচ্চাদের মতো ট্রিট করতে গেলেই ওরা চটে যায়। যে মুহূর্তে দেখবে বাচ্চারা ইরিটেটেড হয়ে যাচ্ছে, তখনই শুটিং বন্ধ করে দেবে। কারণ ওদের দিয়ে সব সময় খেলাচ্ছলে হোল কাজটি করাতে হয়।’ পরবর্তীকালে, অথবা আগেও আমি দেখেছি—শুটিং করাকালীন সময়ে, মানিকদা ‘সোনার কেল্লা’, ‘আগন্তুক’ বা ‘পিকুর ডায়েরি’ যখন করেছেন, যে ট্রিটমেন্ট মানিকদা বাচ্চাদের নিয়ে করতেন, সেইরকম ট্রিটমেন্ট করতে এক বিশেষ ক্ষমতার দরকার। ‘শাখাপ্রশাখা’র সময় মানিকদা অজিত বাঁড়ুজ্জে১ বা সৌমিত্রর সঙ্গে যে টোনে কথা বলছেন বা ডিরেকশন দিচ্ছেন বাচ্চাটাকেও একই টোনে ডিরেকশন দিচ্ছেন। মানিকদাকে আমি কখনই দেখিনি যে, ফ্লোরের মধ্যে বাচ্চাটাকে বাচ্চার মতো ট্রিট করছেন। হয়তো বাচ্চাটা ফল্টার করল। কী সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতেন। ক্যামেরা চলছে তখন। বলতেন : ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওই জায়গাটা তোমার একটুখানি আটকে গেল, না? ঠিক আছে। একটু থামো। এইবার আবার বলতে শুরু করো।’ মুহূর্তের মধ্যে আমরা বুঝতে পারি, যে বাচ্চার নার্ভের ওপর কোনও স্ট্রেইন পড়ল না। হ্যাঁ, বাচ্চাটাকে বুঝতেও দিলেন না যে, ভুল করার জন্য তার লজ্জা পাওয়া উচিত; এবং টেকনিক্যালি মানিকদা কিন্তু ক্যামেরা চালিয়েই রাখলেন। বাচ্চাটা একটু থেমে আবার ডায়ালগগুলো বলতে শুরু করল। একবার ধরিয়ে দিলেই তো হয় বাচ্চাদের। একটা খেই হারিয়ে ফেলেছিল শুধু। যেই ধরিয়ে দিলেন, আবার বলতে আরম্ভ করল। কী করে বলবে সেটা কিন্তু কখন-ই মানিকদা ডিরেকশন দিতেন না। রিডিংটা ওর সামনে দিয়ে দিতেন। দিয়ে বলতেন ‘তুমি বলো তো কথাগুলো।’ স্বত:স্ফূর্ত যদি হয়, মানিকদা সেটাকেই তুলে নিতেন। বিশেষ চর্চা না করলে কিন্তু ওই ব্যাপারটা দাঁড়ায় না। তাঁর সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এই ব্যাপারটা দেখেছি। যে রেটে বাচ্চারা মানিকদার বই কেনে। আমরা যে অনেকের বাড়ি উপনয়ন বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে যাই, তা আমার গিন্নি বলেন যে, ‘মানিকদার সিরিজগুলো দেব?’ আমার পাশের বাড়িতেই একটা বাচ্চা ছেলের পৈতে হল। তার বাবা-মা এসে বলল, ‘বেস্ট প্রেজেন্টেশন আপনারটা হয়েছে।’ আমি মানিকদার এন্টায়ার সিরিজটা দিয়ে দিয়েছিলাম। নতুন যেটা বেরিয়েছে। ফেলুদার সিরিজ, অমুক-তমুক, এককালে যেমন মানিকদার বাবার ছিল। সুকুমার রায়ের সিরিজ প্রেজেন্টেশন দেওয়া হত। এই জিনিসটা কিন্তু একটা বিশেষ চর্চা, এখন আমি যেটা জানি, তুমি নিজেকে যখন বাচ্চার সঙ্গে ট্রিট করবে, তোমাকে একটু আনলার্ন করতে হবে। ওর থেকে আমি অ্যাডাল্ট, আমি ওর থেকে অনেক কিছু বেশি জানি, —এটা একদম ভুলে যেতে হবে। নামতে হবে কিন্তু বাচ্চার লেভেলে। বাচ্চা যে মুহূর্তে মনে করবে যে, তুমি তার ইকুয়াল, ওই বাচ্চা চটবে না। এবং তোমাকে ফ্রেন্ড হিসেবে গ্রহণ করবে। আমি বহু বাচ্চাকে শুটিং করার সময় দেখেছি, চটে যায়, রেগে যায়। বাচ্চাকে লজেন্স দিতে হয়। মানিকদাকে কিন্তু ফ্লোরে এসব কখনও কিছু করতে হয়নি। তাকে লজেন্সও দিতে হয়নি, আইসক্রিমও দিতে হয়নি বা তার মাকেও দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়নি। এমনকি এটা ইভন বাবুর ক্ষেত্রেও দেখেছি। মানিকদার ছেলে। এই ট্রেনিংটা মানিকদাই দিয়েছেন। আমাদের এই ‘গুপী বাঘা ফিরে এলো’তে একগাদা বাচ্চা ছিল তো। তাদের জন্য ফুটবল কিনে দেওয়া হল। তারা অবসর সময়ে খেলত। অর্থাৎ খেলার ছলে তুমি যদি তাদের দিয়ে কাজ করাতে পারো, তবে তাদের থেকে তুমি বেস্ট কাজটি বের করে আনতে পারবে। যে-ই কাজটা তুমি তাদের ঘাড়ে চাপাবে, বাচ্চা চটে যাবে। এইটে মানিকদার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল। বহু মনস্তত্ববিদকে ব্যাপারটা জিজ্ঞেসও করেছি। তাঁরা বলেছেন, ‘দ্যাখো, শিশু-মনস্তত্ব সম্বন্ধে যদি ভালোমতো জানা না থাকে, তবে বাচ্চাদের ওইভাবে ট্রিট করতে পারা যায় না।’ আমার মনে হয় মানিকদার সেটা বোধ হয় খুব ভালো করে জানা ছিল।
উইট এবং হিউমার মানিকদাদের পরিবারের ট্র্যাডিশনাল ব্যাপার। প্রথমত তো একটা বাড়ির ব্যাপার আছে। মানিকদা যে সার্কেলে ছোটোবেলা থেকে মানুষ, যে আড্ডাতে মানুষ তাদের মধ্যে অনেককেই আমি চিনতাম। উইট, হিউমার—যেটা মানিকদার প্রচুর সিরিয়াস ছবির মধ্যেও পাওয়া যায়, সেটা আসলে রসবোধ। যেমন মানিকদার ব্যক্তিগত জীবনেই এমন এমন এক একটা কমেন্ট করতেন—আমরা নিজেদের অনেক সময় মনে করি আমাদের কী বুদ্ধি! কিন্তু মানিকদার মতো অত সাটল বুদ্ধি কিন্তু আমাদের নেই। একটা গল্প বললেই বোঝা যাবে কত সাটল হিউমার ছিল মানিকদার। কমলকুমার মজুমদার, বিখ্যাত লেখক, মানিকদার খুবই বন্ধু ছিলেন। একদিন কমলদার সঙ্গে মানিকদার দেখা। আমি দাঁড়িয়েছিলাম সেখানে। মানিকদা বললেন, ‘আসুন না। বহুদিন আসেন না আমাদের বাড়িতে। একটু আড্ডা মারতে আসুন।’ কমলদা যেমন কস্টিক রিমার্ক করেন—কমলদা বললেন, ‘না, আপনার বাড়িতে বড্ড ভদ্রলোকেরা আসে আজকাল। ওখানে গিয়ে আমার ঠিক জমবে না।’ মানিকদা সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘আমি চাড্ডি ছোটোলোক আনিয়ে রাখব।’ এই যে মুহূর্তের মধ্যে এই যে সাটলটি, এগুলো এসেছে নাইনটিনথ সেঞ্চুরির রেনেসাঁস পিরিয়ডের থেকে—মানিকদা হচ্ছেন লাস্ট রিপ্রেসেনটেটিভ অব দ্য রেনেসাঁস। রেনেসাঁস পিরিয়ডের চরিত্রের মধ্যেই রসবোধ থাকবে।
মানিকদার ‘পরশ পাথর’ ছবিটিতে প্রতি মুহূর্তে ব্যঙ্গের মধ্যে রয়েছে উইট অ্যান্ড হিউমার। হি ইজ নেভার ক্রুড, ইভন ‘জন অরণ্যে’র মতো ছবিতে— যেখানে আমি অভিনয় করেছি। সেখানে আমি একটা পিম্প, —সেখানে একটা জায়গায় যে মেয়েদের কাছে নিয়ে গেছি তার মা বলেছে : ‘এবার আমার মেয়েরা বেশ বড়ো হয়ে গেছে’— এগুলো ব্ল্যাক হিউমার কিন্তু। —হ্যাঁ, ‘বড়ো হয়ে গেছে। তা আসুন না আপনি একদিন।’ এই সিনটা আমার এখনও মনে আছে। এই ‘আসুন না, আপনি একদিন’ বলতে গিয়ে আমার এমব্যারাসমেন্টটা কী হবে, মানিকদা সেটা দেখিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে শুধু ‘আমি’ ‘আমি’ ‘আমি’ বলে। ‘আমি মানে, আমি মানে, আ-আমি তো এসব ব্যাপারে নেই—আমি তো জোগাড় করি!’ এই তিন-চারটি ‘আমি’ বলা মানিকদা দেখিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে। এগুলো চর্চা, রসবোধ, ব্রিটিশ হিউমার, ফ্রেঞ্চ হিউমার, আমাদের রবীন্দ্রনাথের হিউমার, বা তার পরবর্তীকালের যে সব হিউমার বা মানিকদার বাবার হিউমার—এইসব মিলিয়ে মানিকদার হিউমার। তাছাড়া, রেনেসাঁস পিরিয়ডের লাস্ট লোক বলে এঁরা রসবিহীন হবেন না। এঁরা সবাই রসসিক্ত। এবং সর্বদাই রসের সন্ধান করে বেড়ান। সবসময়ে মজাদার মজাদার সব কথা বলেন। ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-তে আরেক ধরনের হিউমার : একটা ‘গে’ হিউমার। কতগুলো ছেলে বাইরে বেড়াতে গেছে। বেড়াতে গিয়ে সেখানে নানারকম পরিবেশের মধ্যে প্রতি মুহূর্তে কিন্তু টিনজ অফ হিউমার লুকিয়ে রয়েছে। ইভন ওই মেয়েটাকে—শমিত ভঞ্জ২ যে পার্টটা করেছিল—টাকা দিচ্ছে যখন, তখন যে ডায়ালগটা আমার মতো বেকার ছেলের মুখ দিয়ে বলানো হচ্ছে। ‘তিরিশ টাকা দিচ্ছে। হি ইজ গোয়িং টু পে হিম থার্টি চিপস।’ তার মধ্যেও কিন্তু হিউমার লুকিয়ে রয়েছে। তারপর যেমন; ‘না:! দাড়ি আর কামাবো না। নো পেপার, নো দাড়ি কামানো।’ দুটি গ্রাম্য ছেলে ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’—রাজপ্রাসাদে প্রথম ঢুকল। ঢুকে চারিদিকে দেখতে দেখতে, ময়ূর-টয়ূর দেখতে দেখতে এসে জলে হাত দিয়ে—এবার যে কোনও পরিচালক এখানে একগাদা কথা দিত। মানিকদা একটি ডায়ালগ দিলেন, বাঘার মুখ দিয়ে। গুপী জিজ্ঞেস করল, ‘বাঘাদা। কীরকম?’ বলল, ‘ব্যবস্থা ভালোই’। এই ‘ব্যবস্থা ভালোই’তে বোঝা গেল, দে আর হ্যাপি। আবার আর একটা দিকে মনে হবে, যেন এরা বহুদিনই এরকমভাবে থেকেছে-টেকেছে। তা তো নয়। এই প্রথম থাকছে। এগুলো কিন্তু সাঙ্ঘাতিক। এই হিউমার প্রথমত পারিবারিক ব্যাপার। তারপর নিজের চর্চা। তারপর যে সার্কল অফ আড্ডা মানিকদার ছিল, সে তো কলকাতার একেবারে অত্যন্ত বিদগ্ধ ক্লাস, যাঁরা প্রথম ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি তৈরি করেন।
আমাদের চিদানন্দবাবু৩ ছিলেন। আরও অনেকেই ছিলেন। এঁরা কিন্তু কেউই টিপিক্যাল ক্রুড মধ্যবিত্ত বাঙালি নন। এঁরা সবাই কিন্তু উন্নতশীল লোক। উন্নতশীল লোক রস খুঁজে বেড়ায় জীবনে। আমাদের মধ্যে একরকম ক্যারেকটারের মধ্যবিত্ত বাঙালি আছে, যারা শুধু মাছ খুঁজে বেড়ায়। কী করে সস্তায় মাছ কেনা যায় ওঁরা তা চিন্তাই করেন না। পৃথিবীর কোথায় কোন রসের সন্ধান পাওয়া যাবে। যেমন মানিকদা গল্প বলতেন আমাদের। কত রকমের গল্প বলতেন। সেই সময়ে, চ্যাপলিনের টাইমে, আর একজন ভদ্রলোক ছিলেন চ্যাপলিনের সমসাময়িক। বাস্টার কীটন। তারপর লরেল হার্ডি— এঁদের মোমেন্টসগুলো মানিকদা ডেসক্রাইব করতেন যখন বসে বসে, সে সাঙ্ঘাতিক লাগত শুনতে। তারপর বলতেন, ‘মুশকিল কি জানো। আমাদের এখানে এসব ক্রুড করে ফেলে।’ ক্রুড বলতে বোঝায় ওভারডুইং। আমি তো কমেডি রোল মানিকদার ছবিতেও করেছি। আবার অন্য ছবিতেও করি। সেখানে করতে চাই না যেটা, সেটা আমাকে দিয়ে ইনসিস্ট করিয়ে করানো হয়। মাঝে মাঝে পরিচালকের সন্তুষ্টির জন্য করতে হয়। কিন্তু আমি বলি তাঁদের : ‘দেখুন, ওভারডুইংটা ভালো জিনিস নয়।’ কলাপাতায় পা হড়কে একবার পড়ে গেলে লোকে হেসে ওঠে। একবার পড়ে গেলে লোকে হাসবে, দু’বার পড়ে গেলে কিন্তু হাসবে না। আমরা কিন্তু দু’বার পড়ে যাই। পরিমিতিবোধের অভাব। ব্রেভিটি বলুন, পরিমিতিবোধ বলুন, সেন্স অব প্রাোপোরশন বলুন, এসব মানিকদার ছিল। তিনি ওভারডুইং একদম বর্জন করতেন। বিশ্বাস করতেন না।
অনেক সময়ে প্রশ্ন করা হয় যে মানিকদা অভিনেতাদের থেকে কীভাবে মনোমতো অভিনয় বার করে আনতেন? এখানে জানতে হবে যে, ডেফিনিটলি প্রফেশনাল অ্যাক্টারদের ক্ষেত্রে একরকম নিয়ম, আর নন-প্রফেশনাল যাঁরা, যখন নতুন কেউ এল, নতুন ছেলে বা মেয়ে—মানিকদা অন্য টেকনিক অ্যাপ্লাই করতেন। সেটা কিন্তু আমরা স্তানিস্লাভস্কির মেথডে পড়েছিলাম। উইদাউট দ্য নলেজ অব দ্য অ্যাক্টর, তাঁর বেস্ট অব দ্য কোয়ালিটিজ কি আছে উনি তা বের করে আনতেন। সে টেকনিক কিন্তু উনিই জানেন। আর কেউ জানেন না। মানিকদা যে ধরনের অভিনয়ে বিশ্বাস করতেন তা হল ইনট্রোস্পেকটিভ অ্যাক্টিং। অন্তর্মুখী অভিনয়। উনি কিন্তু বহিরঙ্গের অভিনয় পছন্দ করতেন না। রিয়ালিস্টিক ছবির যে অভিনয় মানিকদাই তা প্রথম দেখান ফিল্মে, ‘পথের পাঁচালী’ থেকে শুরু করে এবং সেখানে মিনিমাম অব বিহেভিয়ারিজম, মিনিমাম অব মুভমেন্ট করে, ম্যাকসিমাম অব ইমপ্যাক্ট অন দ্য অডিয়েন্স কি করে আনতে হয় তা একমাত্র উনিই জানেন। আমি একজন প্রফেশনাল অ্যাক্টর, আমি জানি না কিন্তু। মানিকদা যে রিডিংটা দেন অভিনেতাদের কাছে, তা থেকে আমরা বুঝতে পারি, উনি চরিত্রের কালারটা কোন অ্যাঙ্গেল থেকে চাইছেন। একজন প্রফেশনাল অ্যাক্টর হলে সেটা টক করে তুলে নিতে পারে। আমাদের চেয়ে অনেক ভালো তুলতে পারতেন ছবিবাবু বা তুলসী চক্রবর্তী। ওঁদের সে ক্ষমতা ছিল। নতুন অভিনেতা যাঁকে মানিকদার পছন্দ হত, ওঁর ডায়াগ্রাম অনুযায়ী, ছবি অনুযায়ী, মানিকদা কিন্তু তাঁকে ডেসক্রাইব করে দিতেন। মূল ব্যাপারটায় বিহেভিয়ার সব ডেসক্রাইব করে বলতেন, ‘তুমি এই সময় চোখটা তুলবে, এই ডায়ালগের পর চোখটা নামাবে এই ডায়ালগটা বলবে, বলে একটু থামবে, থামার পর এই করবে এইবার।’ আমি নিজেই দেখেছি মানিকদা অন্য ছবিতে শুটিং করছেন, আমি পেছনে দাঁড়িয়ে, একজন নামকরা অভিনেতা, নাম বলব না, স্ক্রিনে তাঁর সাঙ্ঘাতিক ইমপ্যাক্ট। তাঁকে মানিকদা ঠিক এইভাবে ডেসক্রাইব করে গেছিলেন—বারেবারে বলছিলেন, ‘টোটাল ব্যাপারটা এই করো। এইগুলো বিজনেস করতে হবে।’ তিনি করতে পারছিলেন না। বিজনেস করা মানে মানিকদা বলতে চাইছিলেন, একটা হারমনিক ব্যাপার হবে। তার থেকে একটা ইমপ্যাক্ট আসবে অডিয়েন্সের মধ্যে। তাতে অডিয়েন্স কাঁদবে বা হাসবে, যা খুশি হবে। এখানে কান্নার ব্যাপার ছিল। দু:খের ব্যাপার। দেখলাম, মানিকদা দু’তিনবার বলার পর কী সুন্দর করলেন। তাঁকে পরপর বলে গেলেন, ‘আচ্ছা এবার নীচে তাকাও, এইবার রুমালটা হাতে ধরো, রুমালটা আস্তে আস্তে মুখে নাও। এবার চোখটা উপরে তাকাও, এবার রুমালটা মুখে চেপে, মুখটা চেপে ফেল। চেপে একটুখানি কাঁপাও।’ মানে ভিতরে কান্নাটা এসে গেছে। এরপর দর্শক যখন দেখল তারা ভাবল কী সাঙ্ঘাতিক অভিনয় করেছে। তাই ফিল্মকে বলা হয় ডিরেক্টরস মিডিয়াম। আমি কিন্তু ক্যামেরার পিছনে দাঁড়িয়েছিলাম। পুরো ব্যাপারটা দেখলাম। কেন ফিল্মকে ডিরেক্টরস মিডিয়াম বলে—অভিনেতা বারেবারেও করে পারছে না—কিন্তু ডিরেক্টর করাবেন-ই সেটা। আমরা ভাবছিলাম, কী করে করাবেন? কিন্তু মানিকদা ঠিক করিয়ে নিয়ে বেরিয়ে চলে গেলেন। আমরা তো স্তম্ভিত। এবং অন দ্য স্ক্রিন আমি যখন দেখলাম তখন আমার বুকটা কেমন করে উঠেছিল। দিজ আর অল টেকনিকস। এই যে টেকনিকগুলো, পৃথিবীতে যে কোনও মাস্টার ডিরেক্টর জানেন। মেইনলি তারা সবসময় উইদাউট স্ট্রেইনিং দ্য অ্যাক্টর, সে প্রফেশনাল হোক আর নন-প্রফেশনাল হোক, তাঁদের অজান্তে ভেতরকার বেস্ট অব দ্য কোয়ালিটিজ তাঁরা বের করে নিয়ে চলে আসেন। আমার বিহেভিয়ারিজম মানিকদার মোটামুটি পছন্দ। মানিকদা কখনও কিন্তু ইমপ্রাোভাইজ করতে বাধা দেননি। এমনও হয়েছে, মানিকদা দু’সেকেন্ড কাট করতে দেরি করেছেন, আমি তার মধ্যে কোনও একটা বিজনেস করে ফেলেছি। ‘জন অরণ্যের’ সময় কিন্তু স্পেসিফিকালি ডেকে আমায় বলে দিলেন যে ‘একটাও ইমপ্রাোভাইজেশন করবে না। এগজ্যাক্টলি যা ডায়ালগ, যা ফুলস্টপ, কমা, তাই বলবে কারণ তুমি কিন্তু একটা পিম্পের রোল করছ।’ তখন আমাকে ডেসক্রাইব করলেন রোলটা। পিম্প যে, সে কিন্তু দালাল। সে অপরের মেয়েমানুষ জোগাড় করে দেয়। তাই কিন্তু স্ট্যামারিং, স্টাটারিং, ফল্টারিং চলবে না, তা হলে ক্লায়েন্ট ভেগে যাবে। সে কিন্তু ইম্যাকুলেট। সুন্দর টাই তার, বিউটিফুল গোঁফ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ধোপদুরস্ত। সে নিজে পিম্প ব্যক্তিগত জীবনে। কিন্তু অপরের ক্ষেত্রে, তার ক্লায়েন্টের ক্ষেত্রে সে কখনও স্ট্যামারিং করবে না। কোনও ফল্টারিং হবে না। একবার বলতেই আমি বুঝতে পারলাম। এখানে আমি না হয়ে অন্য কোনও নতুন অ্যাক্টার হত, তাকে দিয়ে কিন্তু মানিকদা প্রায় আমার মতোই অভিনয় করিয়ে নিতেন। কিন্তু তাঁকে খাটতে হত। ডেসক্রাইব করতে হত। খাবার সিন যেখানে আমি করেছিলাম সেখানে হয়তো বলতে হত, ‘এবার ওমলেটটা খাও। হ্যাঁ এবার বলো ডায়ালগটা। আচ্ছা এবার একটু চিবিয়ে নাও। আবার ডায়ালগটা বল।’ এটুকু আমাদের ক্ষেত্রে বলতে হয় না।
এইসব আলোচনা করতে গিয়ে মানিকদার ছবিতে আমার প্রথম অভিনয়ের কথা মনে পড়ছে। ছবির নাম ‘অভিযান’। ফার্স্ট শট টেকনিশিয়ান স্টুডিয়োতে হচ্ছে। প্রথম দিনই কিন্তু কঠিন শট ছিল। রেস্টুরেন্টে খাওয়ার সিন। মানিকদা শুধু একবার বললেন, ‘খেতে খেতে কথা বলতে পারো?’ আমরা তো বেসিক কাইন্ড অব অ্যাক্টিংটা শিখেই এসেছিলাম। থিয়েটার থেকে। আমি একটা জিনিস বলে দিয়েছিলাম যে, আমি কিন্তু থিয়েটারের লোক। বললেন, ‘ঠিক আছে, ঠিক আছে, অভিনয়টা তো জানো? আমি বুঝবখন।’
তখন আমার ধারণা ছিল সিনেমার অ্যাক্টিংটা বোধহয় আলাদা। এটা মাথায় ছিল, বাড়াবাড়ি না করলে বোধহয় তেমন কিছু হবে না। খাওয়ার সিনটায় ওই ফলসলি খাওয়া দেখিয়ে তার টাইমিংগুলো করলাম। টেকের সময় কিন্তু ভাত, মাংসের ঝোল, মাংস সমস্ত নিয়ে খেতে খেতে টেক করলাম। আমার কনসাসলি মনে আছে, মানিকদা যে গ্যাপ পয়েন্টগুলো বলেছিলেন, ওটা কিন্তু মাথায় আছে। আমি কোন সময় মুখে ভাত কম রাখব, আর কোন সময় গিলব, সব আমি ক্যালকুলেট করে রেখেছি আগে থেকে, বিকজ আই অ্যাম এ প্রফেশনাল। আমি জানি এটা না হলে মানিকদা কাট বলে দেবেন। এবং আই ডিড ইট থরোলি। এক শট। ওকে। মানিকদা ‘ফাইন’ বললেন। তাতে আমার কনফিডেন্সটা বেড়ে গেল। ও:, ফিল্ম অ্যাক্টিং তা হলে আহামরি কিছু নয়। আমি যেমন মোটামুটি কথা বলি ঘরের মধ্যে বসে, এই লেভেলে যদি কথা বলতে পারি, বা এরকম একটু ইনার ব্যাপারটা প্রকাশ করতে পারি, প্রাোজেকশনটাও কম করে গলার, তাহলেই বোধহয় হয়ে যাবে।
আমি টোটাল সাতটা ছবি করেছি এবং শেষের ছবিটাতেও কাজ করেছি। তাঁর শেষ যে গোটা তিনেক ছবি—’গণশত্রু’, ‘শাখাপ্রশাখা’, ‘আগন্তুক’ করার সময় মানিকদা স্বাস্থ্যের দিক থেকে অনেক ভেঙে পড়েছেন। ডাক্তারের অনেক বাধানিষেধ ছিল। অনেকে বলেছেন যে, শেষের দিকে মানিকদা আগের মতো ছবি করতে পারছিলেন না, স্বাস্থ্যের কারণেই এবং ডাক্তারদের ওই নিষেধের জন্য। এ বিষয়ে আমার মতামত একটু অন্যরকম। সিক্সটিতে সত্যজিৎ রায় বা ‘গুপী গাইনে’ সত্যজিৎ রায় তখন তাঁর প্রচণ্ড একটা ইয়ুথফুল এনার্জি ছিল। ‘গুপী গাইনে’র সেই এনার্জি, আমি বলতে পারব না। কী অসাধারণ এনার্জি! ‘গণশত্রু’-র সময় থেকে অসুস্থতার জন্য সেই এনার্জি ছিল না। তবে আমার যেটা মনে হয়েছে, ডাক্তার তাঁকে অনেকগুলো নিয়মের মধ্যে বেঁধে দিল। আউটডোর কমিয়ে দিল, কিন্তু লোকটার চিন্তা তো কমেনি। অনেকে হয়তো ক্রিটিসিজম করেছে অমুক তমুক। এটা একটা প্রসেসের সঙ্গে জড়িত না থাকলে তো চিনতে পারবে না। একটা মানুষ, তাঁর ডেভেলপমেন্ট হয় গভীরতায়, ‘গণশত্রু’ থেকে ‘আগন্তুক’ পর্যন্ত মানিকদা অনেক গভীরতায় চলে গেছেন, কাহিনির ক্ষেত্রে, অভিনয়ের ক্ষেত্রে, সিনারিওর ক্ষেত্রে বা ডায়ালগের ক্ষেত্রে—মানিকদা তখন অনেক গভীরে চলে গেছেন। এ গভীরতা মানিকদার আগে ছিল না। মানিকদা তখন সাঙ্ঘাতিক। মানিকদা তখন ক্যামেরায় বাবুর ওপর ডিপেন্ড করতেন, তবে এটা বোঝা দরকার যে মানিকদা এগজ্যাক্টলি যে অ্যাঙ্গেলটা দেখতেন, বাবু সেটা দেখতে পেত। মানিকদা নিজের মুখেই একথা বলেছেন। সেইজন্য মানিকদা নিশ্চিন্তমনে ক্যামেরার পাশে দাঁড়িয়ে কাট বলতেন। আমার ব্যক্তিগত মত একটা ইন্টারভিউতে আমি বলেছিলাম : সত্যজিৎ রায়কে আপনারা ফিল্ম মেকার বলছেন কেন? ফিল্ম মেকার তো ভারতে অনেক আছে। উনি আর ‘ফিল্ম মেকার’ নন। উনি একজন ফিলজফার। একটা মিডিয়াম ধরে মানুষ যখন জীবন দর্শন বলে, তখন তাঁকে ফিলজফার বলব। কেউ কলম ধরে বলে, কেউ ক্যামেরা ধরে বলে, কেউ পেইন্টিংয়ের থ্রু দিয়ে বলে, আবার কেউ সংগীতের মাধ্যমে বলে। তা মানিকদার কাছে ক্যামেরাটা হয়ে গেছে এখন কলমের মতন। সেই কলম দিয়ে ‘আগন্তুক’-এর মধ্যে দিয়ে তিনি যে বক্তব্য প্লেস করেছেন, ভারতে আজ পর্যন্ত কোনও আধুনিক ছবিতে এরকম বক্তব্য প্লেস করতে দেখিনি। বার্ধক্যে তাঁর শারীরিক ক্ষমতা কমে গেছে, কিন্তু চিন্তাক্ষেত্রে তাঁকে কেউ বাধা দিতে পারেনি। তিনি ক্রমশ সেই রবীন্দ্রনাথের কথায় উত্তীর্ণের পর উত্তীর্ণ হয়েছেন। এটা আমার বিশ্বাস। রোগশয্যায় শুয়ে শুয়ে মৃত্যুর দু’মাস আগেও তিনি বাবুকে বলেছেন পরের ছবিটা তিনি কী করবেন। বলেছেন, ‘ভালো হয়ে গেলেই শীতকালেই কাজে হাত দেব।’ ওই অবস্থায় শুয়ে শুয়ে ডাক্তারদের ব্যাপার দেখতে দেখতে ওই নিয়ে গল্প এসে গেছে মাথায়। একটা লোক রোগশয্যায় শুয়ে শুয়ে ভেবেছেন, এই যে ক্রাইসিস—এইরকম রোগ যদি একটা সাধারণ মানুষের হয় তো কী হবে। তাহলে ভাবুন, কেউ কি তাঁর চিন্তা আটকাতে পেরেছে? ডাক্তাররাই বলেছেন, ‘অদ্ভুত! আমাদের অঙ্কে আসে না, লোকটির চিন্তাশক্তি কখনওই কমে যাচ্ছে না। বেড়ে যাচ্ছে ক্রমশ।’ ওই বয়সে! ওই রোগশয্যায়! আমেরিকা থেকে যাঁরা ‘অস্কার’ দিতে এসেছিলেন, তাঁরা তো চমকে গেছেন। তাঁরা বললেন, ‘কোথায় ক্যামেরা রাখব।’ তিনি বললেন, ‘হিয়ার আই অ্যাম নট দ্য ডিরেক্টর। ইউ আর দ্য ডিরেক্টর।’ ওঁরা ঘাবড়ে গেলেন। তাই যাঁরা এসব ক্রিটিসিজম করেছেন আমি তাঁদের সঙ্গে একমত নই। কারণ তাঁরা তো মানিকদার একটা কিছু দেখে বা একটা ছবি দেখে বিচার করছেন। আর আমি দীর্ঘ তিরিশ বছর কন্টিনিউয়াসলি তাঁকে দেখেছি। আমরাও রবীন্দ্রনাথের কথায় বিশ্বাস করব। যে মানুষ ক্রমশ উত্তীর্ণ হয়, তাঁকেই আমরা শ্রেষ্ঠ লোক বলি। উত্তীর্ণ না হতে পারলে জীবনে কিছু হবে না। যা রবীন্দ্রনাথ হয়েছিলেন।
অনুলিখন : ঘনশ্যাম চৌধুরী
সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত ‘সত্যজিৎ জীবন আর শিল্প’ (প্রতিভাস, বইমেলা, জানুয়ারি ১৯৯৬)
টীকা
১) অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯১০-২০০৪)—বিশিষ্ট নাট্য ও চিত্রাভিনেতা। সোদপুরের পানিহাটি অঞ্চলে জন্ম। ১৯৪৬ সালে চিত্রপরিচালক দিলীপ মুখোপাধ্যায় রাধা ফিল্মসের মাধব ঘোষালের কাছে নিয়ে যান। এখানেই চুক্তিবদ্ধ হন। প্রথম অভিনয় করেন ‘শান্তি’ (১৯৪৬) ছবিতে। এরপর প্রায় ৬-৭ দশক ধরে বহু ছবিতে অভিনয় করেছেন। যার মধ্যে ‘পূর্বরাগ’, ‘মাইকেল মধুসূদন’, ‘দস্যু মোহন’, ‘উত্তর ফাল্গুনী’, ‘হার মানা হার’, ‘গুপী বাঘা ফিরে এলো’, ‘আগন্তুক’, ‘শাখা প্রশাখা’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নাট্যজগতেও দীর্ঘদিন অভিনয় করেছেন। প্রথম নাটক ‘প্রফুল্ল’। এ নাটকে রিহার্সাল ছাড়াই অভিনয় করেছিলেন নাট্যাচার্য শিশিরকুমারের সঙ্গে। এরপর ‘চন্দ্রগুপ্ত’, ‘কেদার রায়’, ‘প্রতাপাদিত্য’, ‘শর্মিলা’, ‘প্রজাপতি’, ‘কী বিভ্রাট’—কয়েক দশক ধরে ইত্যাদি অজস্র নাটকে অভিনয় করেন।
২) শমিত ভঞ্জ (১৯৪৪-২০০৩)—চিত্রজগতের অভিনেতা। অল্পবিস্তর মঞ্চেও দেখা গেছে। জামশেদপুরে জন্ম। বলাই সেনের ‘সুরের আগুন’ (১৯৬৫) ছবির শুটিং দেখতে এসে এক ‘তবলচি’-র ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করে ফেলেন। এরপর ‘হাটে বাজারে’, ‘আপনজন’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘আজকের নায়ক’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘হারমোনিয়াম’, ‘সবুজদ্বীপের রাজা’, ‘নীলকণ্ঠ’, ‘শপথ’, ‘আবার অরণ্যে’ ইত্যাদি বহু ছবিতে অভিনয় করেন। হিন্দি ছবি ‘গুড্ডি’-তেও নায়ক চরিত্রে তাঁকে দেখা গেছে।
৩) চিদানন্দবাবু—পুরো নাম চিদানন্দ দাশগুপ্ত (১৯২১-২০১১)। চিত্রপরিচালক ও চিত্রসমালোচক। ‘ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। পরিচালনা করেন, ‘বিলেত ফেরত’ (১৯৭৩) ও ‘আমোদিনী’ (১৯৯৫) ছবি দু’টি। বইও লিখেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘বই নয় ছবি’। প্রসঙ্গত, ইনি অপর্ণা সেনের পিতা।