রক্তের রঙ ২.৬

ছয়

‘শোনো, ফ্যান সু।’ পিছু ডাকল উ-সেন।

তিন পা এগিয়েই থেমে দাঁড়াল মিসেস গুপ্ত। ঘুরল।

‘এত তাড়াহুড়ো করছ কেন? যেতে চাও যাও, আমি জানি এখন বাধা দিতে গেলে সত্যিই তুমি ফাটিয়ে দেবে ওটা, আমাদের হাতে ধরা পড়ার চেয়ে আত্মহত্যা করাটা তুমি শ্রেয় বিবেচনা করবে, এটাই স্বাভাবিক; এবং এ-ও ঠিক, মরতে আমরা কেউই চাই না; কাজেই আমি তোমার যাত্রাটা আরও নির্বিঘ্ন করে দিতে চাই।’ হাসল উ-সেন। ‘ডিনারের সময় হয়েছে, এই সময় তোমাকে শুধু মুখে চলে যেতে দিতে আমার খারাপই লাগছে, কিন্তু…’

‘বাজে কথা বলে দেরি করাবার চেষ্টা করে কি লাভ হবে তোমার, উ-সেন?’ কঠোর কণ্ঠে প্রশ্ন করল মিসেস গুপ্ত।

‘লাভটা আমার নয়, লাভ তোমার। আমি চাই না তুমি আত্মহত্যা করো। সেজন্যে গাড়ির চাবিটা দিয়ে দিতে চাই তোমাকে। স্যুই থির দিকে ফিরল উ-সেন। ‘স্যুই, গাড়ির চাবি দিয়ে দাও ওকে।

ব্যাগ থেকে চাবি বের করতে করতে স্যুই থি বলল, ‘দিচ্ছি।’ তিনটে চাবি সমেত একটা রিং বাড়িয়ে ধরল সে মিসেস গুপ্তের দিকে।

চতুর একটুকরো হাসি দেখা দিল মিসেস গুপ্তের ঠোটে। ‘আমি কচি খুকি নই, উ-সেন। তোমার গাড়ির দরকার নেই আমার। ধন্যবাদ। ট্যাক্সি ডেকে চলে যাব আমি।’

‘এই বৃষ্টির মধ্যে ট্যাক্সি পাওয়া মুশকিল হবে। কিন্তু সেটা আসল নয়। তোমাকে এভাবে বেরিয়ে যেতে দেখলে বাধা দেবে কার পার্কের দুজন প্রহরী। শুধু শুধু মারা পড়বে বেচারারা, সেই সাথে মারা পড়বে তুমিও। যদি ভাগ্য গুণে বেঁচে যাও, দালানের বাইরে ধরা পড়বে চারজন প্রহরীর হাতে। তার চাইতে আমি ওদের ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি, তুমি আমার গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাও, কেউ কিছু বলার সুযোগও পাবে না, প্রাণ নাশও হবে না কারও। গলার স্বর পরিবর্তন করে বলল, ‘গাড়িতে টাইম বম্ব বা ওই ধরনের কিছু ফিট করা আছে, এরকম অবাস্তব কিছু ভাবছ না তো আবার?’ হাসল’উ-সেন। বিদায়ের সময় বন্ধু হিসেবে ছাড়াছাড়ি হওয়াই ভাল, কি বলো?’

কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করল মিসেস গুপ্ত। তারপর বলল, ‘ঠিক আছে, ফোন করে দাও। চাবিটা নিয়ে যাচ্ছি আমি। তোমার গাড়িতে যাই, আর ট্যাক্সিই নিই, সিদ্ধান্ত নেব নিচে নেমে।’

‘গুড। চাবির গোছাটা দিয়ে দাও, স্যুই।’

দুই পা এগিয়ে চাবিটা দিচ্ছে স্যুই থি। পাশের টেবিল থেকে টেলিফোনের রিসিভারটা তুলে নিল উ-সেন। রানা লক্ষ করল রিসিভার তুলল বটে, কিন্তু উ-সেনের মুখটা ফিরানো আছে মিসেস গুপ্তের দিকে, সারা শরীর টান হয়ে আছে ওর প্রকাণ্ড একটা লাফ দেয়ার পূর্ব মুহূর্তে যেমন হয়, তেমনি।

চোখের নিমেষে ঘটে গেল কয়েকটা ঘটনা।

মিসেস গুপ্তের আঙুল স্পর্শ করার সাথে সাথে হঠাৎ শক্ত হয়ে গেল স্যুই থির হাতটা। হ্যাঁচকা টান দিল স্যুই খি। অস্ফুট একটুকরো অদ্ভুত আওয়াজ বেরোল মিসেস গুপ্তের মুখ থেকে। আঁতকে উঠেই মুহূর্তে পিছন দিকে বাঁকা হয়ে গেল মিসেস গুপ্তের শরীরটা। সেই সাথে হাত থেকে ছুটে কয়েক হাত শূন্যে উঠে গেল কাচের বলটা। থমকে গেল সময়। রানার মনে হলো অনন্তকাল ধরে ঝুলছে ওটা শূন্যে। ককিয়ে উঠল কর্নেল শেখ, বিদঘুটে একটা আওয়াজ বেরোল ওর কণ্ঠ থেকে নিশ্চিত মৃত্যু টের পেয়ে। রিসিভার কানে লাগিয়ে কথা বলতে শুরু করেছিল উ-সেন—হ্যালো, শোনো, ফ্যান সু যাচ্ছে নিচে…,’ বলটা শূন্যে উঠতেই রিসিভারটা ফেলে দিয়ে বিদ্যুৎবেগে লাফ দিল। নিজের অজান্তেই বড় করে দম নিল রানা। সেকেন্ডের দশ ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে চিন্তা করল, কতক্ষণ পর্যন্ত থাকবে বিষাক্ত গ্যাসের হত্যা করবার ক্ষমতা? প্রায় আড়াই মিনিট দম আটকে রাখতে পারবে সে, টেনে টুনে আরও আধ মিনিট হয়তো থাকতে পারা যাবে, তারপর? তিন মিনিটে কমে যাবে না এর কার্যকারিতা? তখনও কি মারা যাবে সে?

হুড়মুড় করে পড়ল উ-সেন মেঝেতে। হাঁটু গেড়ে বসে আছে সে। এক হাতে দেখতে পেল রানা কাচের বলটা। নির্ভুল ক্যাচ ধরেছে সে। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। লম্বা ঋজু শরীরটা আরও লম্বা দেখাচ্ছে। মুখে হাসি।

আশ্চর্য কৌশলে জ্যুজুৎসুর প্যাচ মেরে ঠেসে ধরেছে স্যুই থি মিসেস গুপ্তকে। উপুড় হয়ে পড়ে আছে মিসেস গুপ্ত, পিঠের উপর বসে বব ছাঁটা চুল টেনে শরীরটা বাঁকা করে ফেলেছে স্যুই থি। ব্যথায় কুঁচকে গেছে ওর মুখ, দাঁত বেরিয়ে এসেছে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে।

রুমাল দিয়ে ঘাম মুছল জেনারেল এহতেশাম। আতঙ্ক কাটেনি এখনও চোখের দৃষ্টি থেকে। বলল, ‘বড় বেশি ঝুঁকি নেন আপনি, মিস্টার উ-সেন।’

হা হা করে হেসে উঠল উ-সেন। বলল, ‘ঝুঁকি আমি নিইনি, নিয়েছে ফ্যান সু।’ কাচের বলটা হুয়াং-এর হাতে দিয়ে আবার বসল সে সোফায়। ‘কসমেটিক কেসটা সরিয়ে ফেলো এখান থেকে, ডাক্তার। আর একজোড়া হ্যান্ডকাফের কথা বলেছিলাম, ও দুটো পরিয়ে দাও মিস্টার মাসুদ রানার হাতে।

‘শিরদাঁড়াটা ভেঙে দেব, উ-সেন?’ প্রশ্ন করল স্যুই থি।

‘না না, স্যুই। ছেড়ে দাও ওকে। দুএকটা কথা জানবার আছে।’

উঠে পড়ল স্যুই থি। ছাড়া পেয়ে পরাজিত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়াল মিসেস গুপ্ত। অভ্যস্ত হাতে একগুচ্ছ চুল সরাল কপাল থেকে। ভীত, সন্ত্রস্ত, দিশেহারা একটা বাচ্চা মেয়ের মত দেখাচ্ছে ওকে এখন। রানার উপর একবার উদ্‌ভ্রান্ত দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে উ-সেনের দিকে ফিরল।

‘এসো,’ যথেষ্ট নম্র ভাবেই ডাকল ওকে উ-সেন। ‘এই সোফাটায় এসে বসো, আমার পাশে।’ রানার হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দিল একজন প্রহরী। ক্লিক শব্দটা পেয়ে রানার উদ্দেশে বলল, ‘ফ্যান সুর কথা যদি সত্য হয়, আপনার শরীর থেকে লাইটিকের প্রভাব এতক্ষণে প্রায় দূর হয়ে যাওয়ার কথা। বলুন তো, মিস্টার মাসুদ রানা, সত্যিই কি তাই?’

প্রায় ত্রিশ ঘণ্টা পর প্রথম কথা বলবার সুযোগ পেল রানা। বলল, ‘প্রায় দূর হয়ে এসেছে।’ নিজের কণ্ঠস্বর নিজের কাছেই অপরিচিত মনে হলো রানার

‘বেশ। ভাল কথা। শুনে সুখী হলাম। এখন বলুন দেখি সরোজ গুপ্তকে কি করেছেন আপনারা?’

‘ইয়েন ফ্যাঙ খুন করেছে ওকে। কেন করেছে তা আপনারাই বলতে পারবেন।’ বলল রানা।

‘খুবই সহজ ব্যাপার,’’বলল ডক্টর হুয়াং। ‘যখন টের পেলাম যে আগের রাতে আপনি ডিনার খেয়েছেন ফ্যান সুর সাথে, আমাদের বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধে হলো না যে ওদের মাধ্যমেই আপনার রেঙ্গুন ছেড়ে পালাবার ব্যবস্থা হয়েছে। কাজেই ওদের দুজনকেও খতম করে দেয়ার হুকুম দিয়েছিলাম আমি ফ্যাঙকে।’

‘ঠিকই করেছিল হুয়াং,’ বলল উ-সেন। ‘কিন্তু দেখা যাচ্ছে ওর প্ল্যান অনুযায়ী হয়নি সবকিছু। ইয়েন ফ্যাঙের কি হয়েছে?’

‘আমি মেরে ফেলেছি ওকে।’ মিন মিন করে বলল মিসেস গুপ্ত।

‘আহ্-হা!’ ক্ষোভ প্রকাশ পেল উ-সেনের কণ্ঠে। ‘লোকটাকে পছন্দ করতাম আমি।’ দুই সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, ‘আর ফাইলটা? ওটা কোথায়?’

‘ওটা সরোজের চীফের ব্যাংককের ঠিকানায় পোস্ট করে দিয়েছি।’

মুচকে হাসল উ-সেন। তা তুমি করবে না। তবু নিশ্চিত হওয়া দরকার। ডাক্তার, তোমার লাই ডিটেকটরটা লাগবে একটু।

একটা ছোট যন্ত্র বের করল হুয়াং। দুটো সরু তারের একদিকে দুটো ক্লিপ, অন্যদিকে কাঠের হ্যান্ডেলওয়ালা ধাতু নির্মিত’ একটুকরো গোল রড। রডের গায়ে ছোট একটা বোতাম। ক্লিপ দুটো মিসেস গুপ্তের দুই হাতের কব্জিতে আটকে দেয়া হলো, হ্যান্ডেল ধরল উ-সেন। রানার দাড়ি গোঁফের পিছনে লাগল এবার হুয়াং।

‘আবার বলো, ফাইলটা কোথায়?’

‘পোস্ট করে দিয়েছি।

‘মিথ্যে কথা, আবার বলো।’

‘পোস্ট করতে দিয়েছি।’ একটু ইতস্তত করে বলল, ‘এতক্ষণে পোস্ট করা হয়ে গেছে।’

শেষেরটুকু মিথ্যে। কাকে দিয়েছ পোস্ট করতে?’

‘আমার এক বান্ধবীকে।

‘মিথ্যে কথা।’

‘ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ‘

‘মিথ্যে কথা।’

‘স্টেশনের কুলিকে। উ…উ…উ!’

চমকে উঠল রানা মিসেস গুপ্তের তীক্ষ্ণ আর্তনাদ শুনে। মুখটা বীভৎস, আকার ধারণ করেছে কুঁচকে গিয়ে। পাঁচ সেকেন্ড পর চিৎকার বন্ধ হলো। দাড়ি গোঁফ উধাও হয়ে গেছে রানার ততক্ষণে।

‘মিথ্যে কথা। এবার আশা করি সত্যি কথা বলবে। নইলে আবার দেব শক।‘

‘নানকিং হোটেলের রিসেপশনিস্টকে।’

‘সত্যি কথা। কবে পোস্ট করবার কথা?’

‘সাত দিন পর।’

‘ফাইলের কথা তুমি আর কাউকে বলেছ?’

‘না।’

‘বেশ।’ রানার দিকে ফিরল উ-সেন। ‘মিস্টার মাসুদ রানা, আপনি খুব ধীরে ধীরে নেমে আসুন হুইল চেয়ার থেকে। খানিক হাঁটাহাঁটি করে শরীরের রক্ত চলাচলটা ঠিক করে নিন। কিন্তু সাবধান, কোন রকম কুমতলব থাকলে সেটা ত্যাগ করাই ভাল। এক পা এদিক ওদিক ফেলে যদি ওদের সন্দেহের উদ্রেক করেন, গুলি খাবেন। গুলি করার সময় আমার পরামর্শ নেবে না ওরা।’ মিসেস গুপ্তের দিকে ফিরল সে আবার। ‘মাসুদ রানার সাথে যুক্তি করে এখানে এসেছ তুমি?’

‘না।’

‘তাহলে কেন এসেছ?’

‘আমার উদ্দেশ্য আগেই বলেছি আমি।’

‘আবার বলো।’

‘নিজের সুখ, সমৃদ্ধি আর নিরাপত্তার জন্যে।’ এদিক ওদিক চাইল মিসেস গুপ্ত। ‘তাছাড়া তোমার মৃত্যু সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হওয়াও উদ্দেশ্য ছিল।’

‘শেষেরটুকু মিথ্যে। আমার মৃত্যু সম্পর্কে কোন সন্দেহ ছিল না তোমার মনে। থাকলে এখানে আসবার সাহস হত না।’ হাসল উ-সেন। ‘মাসুদ রানার কাছে কোন অস্ত্র আছে?’

‘না।’

‘যে মেয়েটি গাড়ি আটকাবার চেষ্টা করেছিল আজ রেল স্টেশন থেকে আসবার সময়, সে কে?’

‘জানি না।’

‘সঠিক উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছ, ফ্যান সু। ওকে চেনো তুমি।’

‘নানকিং হোটেলে দেখেছিলাম গত পরশু রাতে এবং আজ সকালে।’ তোমাদের সাথে ট্রেনে করে এসেছে সে মান্দালয়ে?’

‘হ্যাঁ।’

‘তোমার দলের লোক নয় সে?’

‘না।’

মাসুদ রানার দলের লোক?’

হতে পারে।’

‘এড়িয়ে যাচ্ছ।’

‘খুব সম্ভব ও মাসুদ রানার লোক।’

‘কি করে বুঝলে?’

‘ওকেই উদ্ধার করবার জন্যে গাড়ি থামাবার চেষ্টা করেছিল মেয়েটি।’

‘মাসুদ রানার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তোমার বা সরোজের কতদূর জানা ছিল?’

‘আমাদের শুধু জানানো হয়েছিল যে একজন লোককে রেঙ্গুন থেকে ব্যাংকক পাচার করবার প্রয়োজন হতে পারে, যেন তৈরি থাকি।

‘ওর উদ্দেশ্য সম্পর্কে যদি কিছুই না জানবে, তাহলে চিনেও ওকে চেনো না বলেছিলে কেন?’

‘সেজন্যে তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি আমি, উ-সেন।’

‘ফাইলের কাগজ পত্র পড়েছ তুমি?’

‘না।’

‘মিথ্যে কথা।’

‘সবটা পড়িনি, কোন কোন অংশ দেখেছি আমি।’

‘ডাক্তার, এর হাত থেকে ক্লিপগুলো খুলে দাও।’ রানার দিকে চেয়ে খানিকক্ষণ রানার হাঁটা লক্ষ্য করল উ-সেন। তারপর বলল, ‘বেশ জোর পাচ্ছেন এখন পায়ে বোঝা যাচ্ছে। এবার আপনি এসে বসুন ফ্যান সুর সোফায়, ফ্যান সু সরে যাবে পাশেরটায়।’

এগোতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়ল রানা। সোফিয়াকে ছেঁচড়ে টেনে নিয়ে আসছে কার পার্কের দুই সশস্ত্র প্রহরী। সাদা ব্লাউজে গাঢ় রক্তের ছোপ, কপালের একধার কেটে গেছে—গাল বেয়ে রক্ত নামছে এখনও। কনুইয়ের কাছেও কেটে গেছে এক জায়গায়। পায়ের শব্দ শুনে দরজার দিকে ফিরল উ-সেন।

‘গাড়িতেই পেয়েছ, নাকি ধাওয়া করতে হয়েছিল বাড়ি পর্যন্ত?’ প্রশ্ন করল উ-সেন গার্ডদের।

ভয়ানক জখম হয়ে গাড়িতেই পড়ে ছিল অজ্ঞান অবস্থায়।’ জবাব দিল একজন।

‘এখন জ্ঞান ফিরেছে?’

‘না।’

‘ঠিক আছে। শুইয়ে দাও হুইল চেয়ারটায়। ডাক্তার, তোমার ব্যাগ নিয়ে এসো—দেখো দেখি কদ্দূর কি করতে পারা যায়। যত শিগগিরি সম্ভব জ্ঞান ফিরে আসা দরকার।‘

হুইল চেয়ারে শুইয়ে দেয়া হলো সোফিয়াকে। দরজায় গিয়ে দাঁড়াল প্রহরী দুজন পরবর্তী আদেশের প্রতীক্ষায়। এগিয়ে গেল হুয়াং। সামান্য একটু পরীক্ষা করে বলল, ‘জখম তো খুবই সামান্য দেখতে পাচ্ছি, উ-সেন! এই জখমেই জ্ঞান হারাল?’ একটু ইতস্তত করে বলল, ‘অবশ্য শরীরের ভিতর কোন গুরুতর জখম হতে পারে। সোজা হয়ে দাঁড়াল সে, রওনা হলো দরজার দিকে, ‘পরীক্ষা না করে কিছুই বলা যায় না।’

‘আসুন মিস্টার রানা, ততক্ষণে কাজ কিছুটা এগিয়ে রাখি। স্যুই ক্লিপ দুটো লাগিয়ে দাও ওর কব্জিতে। জেনারেল এহতেশাম, আপনি বেশ অস্থির হয়ে উঠেছেন বুঝতে পারছি। আপনার ভয়ের কিছুই নেই। মাসুদ রানা অত্যন্ত হুঁশিয়ার লোক, বোকার মত কিছু করে বসে মারা যাবেন না বলেই আমার বিশ্বাস। যদি এখন এখানে কেউ আহত বা নিহত হয়, সে হবে হয় মাসুদ রানা নয় ফ্যান সু, কিংবা দুজনই—আমাদের তরফের কেউ নয়। এই বিরক্তিকর প্রশ্নোত্তরেরও সমাপ্তি টানব আমরা যত দ্রুত সম্ভব। অবস্থা সম্পর্কে পরিষ্কার একটা ধারণা করে নিতে চাই আমি বিচারের রায় দেয়ার আগে।’ রানার দিকে ফিরল উ-সেন। ‘মিথ্যে বলে লাভ নেই, মিস্টার রানা, মিছেমিছি শক খেয়ে কষ্ট পাবেন। প্রথমেই বলুন, ফাইলটা দেখেছেন আপনি?’

‘দেখেছি।’

‘ফাইলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কাউকে কিছু বলেছেন?’

‘না।’

‘ওটা দেখার পর আপনার মতামত কি? ‘মুসলিম বাংলা’ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব?’

‘অসম্ভব।’

‘কেন অসম্ভব?’

‘আপনারা নিজেদের স্বার্থে কাজ করছেন, বাংলাদেশের স্বার্থে নয়। ‘ভারত-বিদ্বেষ সংক্রান্ত আপনার মতামত যা প্রকাশ করেছিলেন রেঙ্গুনে, সেসব আপনার সত্যিকার মতামত নয়?’

‘না।’

‘আমার ধারণা, বাংলাদেশের পক্ষে স্বীয় মর্যাদা বজায় রেখে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকা অসম্ভব। ভারতের পায়ের তলেই থাকতে হবে আপনাদের চিরদিন। আপনার মতামত কি?’

‘সম্পূর্ণ উল্টো।’

‘কি দিয়ে টিকবেন আপনারা? রিসোর্স কি আছে আপনাদের?’

‘আমার দেশ সত্যিই সোনার বাংলা। রিসোর্সের লিস্ট দিয়ে লাভ নেই, সেসব সারা পৃথিবীর জানা আছে। আসল কথা এইসব রিসোর্স আমরা ঠিক মত ব্যবহার করতে পারব কিনা। আমার বিশ্বাস, পারব। প্রথম দিকে কষ্ট হবে, নুন আনতে পান্তা ফুরোবে, কিন্তু নিজের পায়ে দাঁড়াতে বাঙালী জাতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা নিজেদেরকে ছোট মনে করি না।’

‘জনসংখ্যার দিক দিয়ে আপনারা খুবই বড় মানি, কিন্তু আর কোন্ দিক থেকে বড় শুনি?’

‘সবদিক থেকে বড়। ভারতের জনসংখ্যা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি ছিল, আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সমস্যায় পীড়িত ছিল ভারত সাতচল্লিশ সালে—আজকে দেখুন তার দিকে চেয়ে।’

‘সেই একই দারিদ্র, একই দুর্দশা, একই ভিক্ষার থলি দেখতে পাচ্ছি।’

‘দেখবার চোখ নেই বলে।

‘চোখ সত্যিই নেই, কিন্তু যুক্ত পাকিস্তানের জি.এন.পি. ভারতের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। ভারতের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান, উন্নতিশীল দেশগুলোর প্রথম সারিতে লেখা হত পাকিস্তানের নাম, ভারতের নয়।

‘কারা লিখত? যারা এইডের ছুতোয় দাসত্বের শৃঙ্খলে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে নিয়েছিল পাকিস্তানকে, তারা। কয়টা বেসিক ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হয়েছে পাকিস্তানে গত পঁচিশ বছরে? বেসিক ইন্ডাস্ট্রির কথা বললেই কর্জ দেয়ার উৎসাহে ভাটা আসত কেন? এখানে বেসিক ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হলে এইড দাতাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে, সেজন্যে। এমন সব ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হয়েছিল পাকিস্তানে, যার মেশিন-পত্র থেকে শুরু করে কাঁচা মাল পর্যন্ত আমদানী করতে হত বিদেশ থেকে। ফলে ফাঁপা অর্থনীতির সৃষ্টি হয়েছিল পাকিস্তানে। জি.এন.পি. আর সত্যিকার স্ট্যাবিলিটি আলাদা জিনিস। যখন ঝড় উঠল, ভেঙে গেল তাসের ঘর। কিন্তু ভারতকে দেখুন, এখনও ওরা গরীব, স্বীকার করি, তবে কিছুদিন পর আর গরীব থাকবে না। সলিড ইকনমি তৈরি করে নিয়েছে ওরা। ওরা কষ্ট করেছে পঁচিশ বছর, আমাদের মত আলাদা ডাঁটের পোশাক পরিচ্ছদ পরেনি, ডাটসান মাযদা মার্সিডিস শেভইম্পালা চালায়নি, এইডের টাকা চুরি করে সুইস ব্যাংক ভরে ফেলেনি—গোটা দেশকে একসাথে টেনে তোলার জন্যে প্রস্তুতি নিয়েছে, পরিশ্রম করেছে। আজকে আলপিন থেকে নিয়ে অ্যারোপ্লেন পর্যন্ত ওরা নিজেরা তৈরি করছে। নিজের তৈরি গাড়িতে চড়ে হাওয়া খাচ্ছে ওরা। এককোটি শরণার্থীকে খাইয়েছে নয় মাস, যুদ্ধ চালিয়েছে, তবু খাড়া আছে মেরুদণ্ড, ভাঙেনি। নতুন নতুন ইন্ডাস্ট্রির, নতুন নতুন ফ্যাক্টরির সম্পূর্ণ মেশিন এবং সমস্ত পার্টস ওরা নিজেরা তৈরি করছে—ফিজিবিলিটি পরীক্ষার জন্যে এইড দাতাদের কাছে ধরনা দিতে হচ্ছে না ওদের। আসলে বেসিক ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করেছে ওরা। জনসংখ্যার চাপ আমাদের চেয়ে ওদের অনেক বেশি ছিল। ওরা যদি পারে, আমরা পারব না কেন?’

‘বাহ্, চমৎকার বক্তৃতা,’ টিটকারির ভঙ্গিতে বলে উঠল জেনারেল এহতেশাম।

‘বক্তৃতা দিচ্ছে ভুট্টো সাহেব—কাজ করে দেখাব আমরা।’

‘ভারতের মার্কেট হয়ে টিকে থাকবে তোমরা।’

‘এটা আপনাদের উইশফুল থিংকিং। আপনারা আসলে তাই চান। কিন্তু একটা জাগ্রত জাতিকে কেউ কোনদিন দাবিয়ে রাখতে পারে না।’

‘দ্রব্যমূল্য ঠেকাবেন কি করে?’ প্রশ্ন করল উ-সেন।

‘প্রোডাকশন দিয়ে। পরিশ্রম করতে পিছ পা হবে না বাঙালী। আমরা উঠবই।’

‘বেশ বেশ, যখন উঠবেন তখন দেখা যাবে,’ বলল উ-সেন। এখন আপাতত একটু সুস্থির হয়ে বসে আমার প্রশ্নের জবাব দিন। আপনার ইয়ট নিয়ে কোথায় গেছে একশো আরাকানী?’

‘আকিয়াব।’

‘ওই অস্ত্র আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্যেই নিয়ে এসেছিলেন?’

‘হ্যাঁ।’

‘ফ্যান সুর হাতে কি ইচ্ছে করেই ধরা দিয়েছিলেন?’

‘না।’

‘মিথ্যে কথা। ঠিক জবাব দিন।’

‘কিছুটা অন্যমনস্কতা ছিল।’

‘বাকিটা ইচ্ছাকৃত?’

চুপ করে থাকল রানা। ‘জবাব দিন।’

‘হ্যাঁ। কিন্তু ও আমাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে কাবু করে ফেলুক, সেটা চাইনি।‘

‘আপনি জানতেন, ও আপনাকে এখানে নিয়ে আসবে?’

‘জানতাম।’

‘সেকথা ও জানত? ‘

‘না। ওর ধারণা ছিল আমাকে বন্দী করে নিয়ে আসছে।

‘আপনাকে দেখা মাত্র গুলি করা হবে না, এ নিশ্চয়তা কোথায় পেলেন?’

‘কর্নেল শেখ আমাকে জ্যান্ত ধরতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক।’

‘তাহলে ট্রেনের মধ্যে আক্রমণ করেছিলেন কেন?’ প্রশ্ন না করে থাকতে পারল না মিসেস গুপ্ত।

‘স্বেচ্ছায় আসতে চাইছিলাম, সরোজ হয়েই—কিন্তু লাইটিকের প্রভাবে অসহায় অবস্থায় নয়।’

‘এই মেয়েটা কে?’ সোফিয়ার দিকে ইঙ্গিত করল উ-সেন। ওইদিকে চেয়েই চমকে উঠল রানা। সবার অলক্ষ্যে হুইল চেয়ারের গদির নিচে হাত চলে গেছে সোফিয়ার।

চট করে প্রহরী দুজনের দিকে চোখ পড়ল রানার। দমে গেল মনটা প্রহরীর লক্ষ্য এড়াতে পারেনি সোফিয়া। একজন গুঁতো দিল অপরজনের পাঁজরে, ইশারা করল সোফিয়ার দিকে, হালকা অনিশ্চিত পায়ে হুইল চেয়ারের দিকে এগোল প্রহরীটা। অপরজন রানার দিকে পিস্তল তাক করে ধরে আছে। স্থির, নিষ্কম্প হাতে। ডক্টর হুয়াং-এর পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।

‘চিনি না। উত্তর দিল রানা উ-সেনের প্রশ্নের

‘মিথ্যে কথা। এই মেয়েটাই কি ছুরি মেরেছিল আমার লোকের পিঠে?’

‘জানি না।’

‘মিথ্যে কথা।’

তীব্র শক খেল রানা পর পর চারবার। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করল সে।

‘আপনার সহ্য ক্ষমতা অতুলনীয়,’ বলল উ-সেন। ‘কিন্তু আপনাকে সত্যি কথা বলতেই হবে, মিস্টার মাসুদ রানা। সত্যি কথাটা জানতেই হবে আমার। ‘বলুন, কে এই মেয়েটা?’

চুপ করে থাকল রানা। আবার কয়েক সেকেন্ড বয়ে গেল বিদ্যুৎ প্রবাহ শব্দ বেরোল না রানার মুখ থেকে।

কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল উ-সেন, থমকে গেল একটা তীক্ষ্ণ নারী কণ্ঠ শুনে।

‘সরে যাও, নইলে গুলি করব আমি।’ প্রহরী বাধা দেয়ার আগেই ঝট করে উঠে বসেছে সোফিয়া।

‘কি ব্যাপার?’ প্রশ্ন করল উ-সেন। ‘কি ব্যাপার, স্যুই?’

হঠাৎ উঠে বসে তোমার বুকের দিকে একটা পিস্তল তাক করে ধরেছে মেয়েটা।’

‘পিস্তল পেল কোথায়? সার্চ করা হয়নি ওকে?’

‘হুইল চেয়ারের গদির নিচে থেকে বের করেছে পিস্তল। মিথ্যে কথা বলেছে ফ্যান সু, অস্ত্র লুকানো ছিল ওখানে।

স্তব্ধ হয়ে গেছে ঘরের সবাই। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রহরী দুজন। একজন এগোতে গিয়েছিল, হাত তুলে থামিয়ে দিয়েছে ডক্টর হুয়াং। সবাই প্রতীক্ষা করছে উ-সেনের আদেশের জন্যে। হাসি দেখা দিল উ-সেনের মুখে।

‘হাসাহাসি পরে হবে,’ বার্মিজ ভাষায় বলল সোফিয়া। ‘অস্ত্র ফেলে দিতে বলো তোমার লোকদের। নইলে গুলি করব আমি।’

বিস্তৃততর হলো উ-সেনের হাসি। বলল, ‘প্লেন ক্র্যাশে একবার মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছি তো, তাই মরতে আর আমার ভয় হয় না। আমাকে ভয় দেখিয়ো না খুকি। ইচ্ছে হয় মারো। কিন্তু মনে রেখো, দু’দুটো পিস্তল ধরা আছে মাসুদ রানার দিকে—আমার সাথে সাথেই লুটিয়ে পড়বে মেঝেতে মাসুদ রানার লাশ। তোমার কি হবে বলতে পারি না, হয়তো বেঁচে যাবে, হয়তো মারা পড়বে আমার লোকের হাতে—কিন্তু যাকে সাহায্য করার জন্যে এত কষ্ট স্বীকার করে রেঙ্গুন থেকে এ পর্যন্ত এসেছ, তাকে জ্যান্ত পাবে না। বুঝতে পেরেছ কথাটা?’ খানিকক্ষণ নিঃশব্দে হাসল উ-সেন। ‘কই, গুলি করছ না যে? পারছ না? দশ পর্যন্ত গুনব আমি। এর মধ্যে যদি পিস্তলটা হাত থেকে ফেলে না দাও মাসুদ রানার লাশ দেখতে পাবে তুমি চোখের সামনে। পরমুহূর্তে পিস্তল দুটো ফিরবে তোমার দিকে। এক…দুই…’

‘বাজে কথায় কান দিয়ো না সোফিয়া, গুলি করো!’ চিৎকার করে উঠল রানা।

কিন্তু গুলি করতে পারল না সোফিয়া। গুনে চলেছে উ-সেন। আট পর্যন্ত আসতেই ফেলে দিল সে পিস্তল। নিচু হয়ে কুড়িয়ে নিল সেটা হুয়াং। এতক্ষণে ফোঁস করে একসাথে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল ঘরের সব ক’টা লোক।

অপরাধী দৃষ্টিতে একবার রানার দিকে চেয়ে চোখ নামিয়ে নিল সোফিয়া। হা হা করে হাসল উ-সেন। বলল, ‘লাই ডিটেকটর ছাড়াই আমি বলে দিতে পারি মাসুদ রানার প্রতি কেবল প্রবল আসক্তি নয়, রীতিমত সত্যিকার দুর্বলতা রয়েছে সোফিয়া নামে একটা মেয়ের। আপনাকে ভাগ্যবানই বলব- মিস্টার মাসুদ রানা।’ চিন্তান্বিত কণ্ঠে বলল, ‘প্যাপনের মুখে শুনেছি নামটা। কে হতে পারে? সরাসরি সোফিয়ার দিকে চাইল উ-সেন। ‘এতক্ষণ জ্ঞান হারাবার ভান করে আমাদের কথা শুনেছ নিশ্চয়ই। তোমার পরিচয় জানতে চাইছিলাম আমি মাসুদ রানার কাছে। ও জানাতে চাইছিল না বলে ভয়ঙ্কর ইলেকট্রিক শক দিচ্ছিলাম। এবার বলো, তোমার পরিচয় জানাবে, না মাসুদ রানাকে শক দেব?’

‘আমার নাম সোফিয়া মং লাই।’

বিস্ময় দেখা দিল উ-সেনের মুখে। কিন্তু সামলে নিল।

‘গুড। ধন্যবাদ।’ উঠে দাঁড়াল উ-সেন। ‘বুঝলাম। আমাদের এখানকার অধিবেশন এইখানেই সমাপ্ত হচ্ছে। আর আমার কিছু জানবার নেই। আর কেউ কোন প্রশ্ন করবেন?’

‘এদের ব্যাপারে কি বুঝলেন?’ প্রশ্ন করল কর্নেল শেখ।

বুঝলাম এরা তিনজন তিন উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে আরও বুঝলাম, ভয়ের কিছুই নেই, আমাদের সম্পর্কে এরা যা জানতে পেরেছে, সেটা আর কাউকে জানাবার সুযোগ পায়নি। এখন শুধু ফাইলটা উদ্ধার করে আনলেই সমস্ত ব্যাপার আবার আমাদের সম্পূর্ণ আয়ত্তে চলে আসছে।’ হুয়াং-এর দিকে ফিরল উ-সেন। ডাক্তার, ফাইলটা উদ্ধারের ব্যবস্থা করে ফেলো। স্যুই, ডিনারের সময় পেরিয়ে গেছে অনেকক্ষণ, টেবিল সাজিয়ে ফেলো। তোমরা চারজন এদেরকে প্যাপনের সেলে ভরে দাও। ওদের খাওয়ারও ব্যবস্থা করবে—খালি পেটে হত্যা করা পাপ।’ দরজার দিকে এগোল উ-সেন।

’মাসুদ রানাকে আমাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন তো?’ আবার প্রশ্ন করল কর্নেল শেখ।

‘না। ওকে পাকিস্তান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আপনাদের আছে বলে আমি মনে করি না।’

‘তাহলে? কি করবেন আপনি ওদের নিয়ে?’

‘মেরে ফেলব।’

ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল উ-সেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *