তিন
জেটি থেকে দু’মাইল দূরে নোঙর ফেলেছে রানা।
আশেপাশে মাইল খানেকের মধ্যে দেশী-বিদেশী বেশ কয়েকটা ভারী জাহাজ, কিছু গাধা-বোট আর বার্জ রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। সন্ধ্যার আগে আগে আরও তিনটে জাহাজ নোঙর ফেলল কাছাকাছি।
সন্ধে থেকেই শুরু হয়ে গেছে ছপাৎ ছপাৎ দাঁড়ের শব্দ। ছোট ছোট অসংখ্য ডিঙি নৌকো। লোভনীয় পণ্য তাতে। এক আধটা ভিড়ছে এসে ইয়টের গায়ে, দমাদম পিটাচ্ছে খোলের গায়ে বৈঠা দিয়ে-বিউটিফুল গার্ল সাহিব… বার্মিজ কুইন সাহিব…ভেরি ইয়াং সাহিব…স্পেশাল বিউটি সাহিব…ওনলি টেন রুপি সাহিব…ভেরি নাইস গার্ল সাহিব…
জামাকাপড় ভাঁজ করে একটা প্যাকেট তৈরি করে নিল রানা। আগামীকাল সন্ধের আগে ইয়ট ছেড়ে কোথাও যাওয়া নিষেধ, কিন্তু আজকের মধ্যেই মিস্টার অ্যান্ড মিসেস সরোজ গুপ্তের সাথে কন্ট্যাক্ট না করতে পারলে সমস্ত প্ল্যান ওলট-পালট হয়ে যাবে। অবশ্য আজকে ডাঙায় উঠে ধরা পড়লে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে। তবু এটুকু ঝুঁকি না নিয়ে উপায় নেই। সাড়ে সাত লক্ষ লোকের মধ্যে কি আর মিশে যেতে পারবে না সে?
ম্লান একটা রাইডিং লাইট জ্বেলে রেখে সব বাতি নিবিয়ে দিল রানা, হ্যাচের তালাটা ভাল করে পরীক্ষা করল, তারপর ডাকল একটা টেন রুপি বার্মিজ বিউটি কুইনকে। অ্যাংকর চেনের সাথে ডিঙিটা বেঁধে রেখে উঠে এল মেয়েটা ডেকের উপর!
তিনশো গজ দূরে বিনকিউলার হাতে একটা মাঝারি সাইজের জাহাজের ডেকে এইদিকে চেয়ে বসে আছে একজন মোটাসোটা লোক। দাঁতের ফাঁক থেকে চুরুটটা সরিয়ে হাসল নিঃশব্দ হাসি। ভাঁজ হয়ে গেল গালদুটো। আব্বাস মির্জার ইয়টে উঠছে একটা মেয়ে।
কেবিনে ঢুকেই ঝটপট কাপড় ছেড়ে ফেলল রঙচঙ মাখা ভূতের মত বিউটি কুইন। সস্তা স্লো-পাউডারের গন্ধ ভুরভুর করছে। এমন কড়া সেন্ট মেখেছে যে হাঁচি এসে যাবার জোগাড়। পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর বয়স হবে, এরই মধ্যে চর্বি জমে গেছে কোমরে। তলপেটে কয়েকটা গর্ভপাতের দাগ। রানার দিকে ফিরে মধুর হাসি হাসল। রানার ইঙ্গিতে বসল বিছানার উপর। দ্রুত কাপড় ছাড়ছে রানা। বিস্মিত দৃষ্টিতে রানার শরীরের পেশীগুলোর দৃঢ়তা লক্ষ করছিল সে-সামান্য নড়াচড়াতেই কিলবিল করে উঠছে অসংখ্য লৌহ-দৃঢ় পেশী, একবিন্দু বাড়তি চর্বি নেই শরীরের কোথাও, ইস্পাত দিয়ে তৈরি। মনে মনে প্রশংসা না করে পারল না মেয়েটা দারুণ ফিগার লোকটার।
শুধু জাঙ্গিয়াটা অবশিষ্ট থাকতে মেয়েটার দিকে ফিরল রানা। মেয়েটা হাসল আবার। বলল, ‘ফার্স্ট গিভ টেন রুপি, সাহিব।’
ড্রয়ার থেকে পঞ্চাশ টাকার একটা নোট বের করল রানা। বলল, ‘নো টেন রুপি-টেক ফিফটি রুপি, অ্যান্ড রেস্ট।‘
অবাক হয়ে গেল বিউটি কুইন, কিন্তু হাত বাড়িয়ে টাকাটা নিয়ে রেখে দিল ভ্যানিটি ব্যাগে। সহৃদয় ব্যক্তি পেয়ে খুশি হয়ে উঠেছে সে, প্রকাশ পেল হাসিতে। রানাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ডাকল, ‘কাম। মেক লাভ। ইউ এঞ্জয় সাহিব, প্রমিজ।’
হাসল রানা। ‘নো মেক লাভ। ইউ স্লীপ মাই বেড। আই গো টাউন, কাম ব্যাক…টু আওয়ার্স।’
এই ভাঙা ভাঙা তোতাপাখির বোল ভালমত বুঝতে পারেনি বিউটি কুইন, শুয়ে পড়েছিল বিছানায়, কিন্তু রানাকে ওর ব্লাউজ আর সিল্কের বিচিত্র বর্ণ সারং পরতে দেখে তড়াক করে উঠে বসল। ‘হেই! হোয়াট ইজ ডুইং!’
‘আই টেক ইয়োর বোট, ইউ টেক মাই বোট।’ দুই আঙুল দেখাল রানা। ‘টু আওয়ার্স। আই কাম ব্যাক, অ্যান্ড গিভ ইউ অ্যানাদার ফিফটি রুপি। অল রাইট? নো মেক লাভ, ইউ স্লীপ, রেস্ট টু আওয়ার্স, দেন গো। অল রাইট?’
অজ্জব বনে গেছে মেয়েটা মক্কেলের কাণ্ড দেখে। কিন্তু মোটামুটি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে সে। লোকটা কারও চোখে ধুলো দিয়ে কোথাও যাচ্ছে দুই ঘণ্টার জন্যে, ফিরে এসে আরও পঞ্চাশ টাকা দিয়ে বিদায় করবে-ততক্ষণ থাকতে হবে ওকে এই কেবিনে শুয়ে। বেশি আপত্তি করল না সে। একটু আঁইগুঁই করে রাজি হয়ে গেল। বলল, ‘ইউ কাম ব্যাক, দেন লাভ মি। নো ডিজিজ। ইউ এঞ্জয় সাহিব, প্রমিজ। আই নো বেগার, ইউ লাভ মি আফটার কাম ব্যাক।’
রানার সাজগোজ দেখে হাসল মেয়েটা। বলল, ‘হ্যালো, বিউটি কিং। ইউ নো গেট কাস্টোমার।’
হাসল রানাও। ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে একটা প্রকাণ্ড চুরুট বের করে ধরাল মেয়েটা। আরামদায়ক বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে আড়মোড়া ভাঙল।
ঠিক পাঁচ মিনিট পর কেবিনের দরজায় চাবি মেরে কাপড়ের প্যাকেটটা ভ্যানিটি ব্যাগের মত করে ধরে নেমে গেল রানা বোটে।
.
তিনশো গজ দূরে জাহাজের ডেকে বসা মোটা লোকটা চমকে উঠল। বিনকিউলারের নব ঘুরিয়ে আরেকটু পরিষ্কার করে নিল ছবিটা। বিস্ফারিত হয়ে গেল দুই চোখ। বোটে নেমে যাচ্ছে ব্লাউজ আর সারং পরা আব্বাস মির্জা!
একলাফে উঠে দাঁড়াল মোটা লোকটা। ছুটে গিয়ে ঢুকল একটা কেবিনে। পরমুহূর্তে বেরিয়ে এল আবার। পিছু পিছু হন্তদন্ত হয়ে আসছে আরেকজন বার্মিজ লোক। লোহার মই বেয়ে নেমে একটা রাবারের ডিঙিতে উঠে পড়ল মোটা লোকটা। ছোট্ট একটা কাশি দিয়ে স্টার্ট হয়ে গেল ডিঙির আউটবোর্ড ইঞ্জিন। রেলিং ধরে ঝুঁকে ডিঙিটাকে দেখল দ্বিতীয় ব্যক্তি। কি যেন বলল চিৎকার করে। তারপর বিনকিউলার হাতে গিয়ে বসল মোটা লোকটার পরিত্যক্ত ডেক-চেয়ারে।
আধমাইল দূরে নদী-তীরের অন্ধকারাচ্ছন্ন বাড়ির চিলেকোঠায় অত্যন্ত শক্তিশালী একটা দূরবীনে চোখ লাগিয়ে বসেছিল একটা অ্যাংলো-বার্মিজ তরুণী। সবই দেখতে পেল সে পরিষ্কার
একটা নোঙর ফেলা জাহাজকে খামোকাই একপাক ঘুরে সোজা চলল রানা তীরের সবচেয়ে অন্ধকার অঞ্চলটা লক্ষ্য করে। নদীর ধারে সারি সারি অনেকগুলো টিম্বার মিল। একটা টিম্বার মিলের বিরাট কাঠের গুদামের পাশে বটগাছের গুঁড়িতে বাঁধল রানা নৌকোটা। কাপড় পাল্টে ফেলেছে সে ইতোমধ্যেই।
সারি সারি কাঠের ভেলা শুয়ে রয়েছে নদীর তীরে। সুদূর উত্তর-বার্মার পাহাড়ী জঙ্গল থেকে সেগুন গাছ কেটে হাতি দিয়ে বয়ে এনে ভাসিয়ে দেয়া হয় ইরাবতী নদীতে ভেলা বেঁধে। সাত আটশো মাইল স্রোতে ভেসে পৌঁছে ওগুলো রেঙ্গনের এইসব টিম্বার মিলে। এখান থেকে সেগুলোকে ফালি বানিয়ে, বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সিযন্ড করে রপ্তানি করা হয় বিদেশে বার্মা টিক হিসেবে।
কয়েকটা ভেলার উপর দিয়ে সোজা হেঁটে এগিয়ে বামদিকে একটা রাস্তা পেল রানা। পুরো এলাকা দামী কাঠের গন্ধে ভরপুর। সিকি মাইল হেঁটেই বড় রাস্তায় পড়ল রানা। হাতের ইশারায় ট্যাক্সি ডাকল। ণ্ড ড্যাগন প্যাগোডায় যেতে বলে উঠে বসল সে পেছনের সীটে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই টের পেল রানা, পেছনে আরেকটা ট্যাক্সি অনুসরণ করছে। মুচকি হাসল সে। একে খসিয়ে দিতে এমন কিছু অসুবিধে হবার কথা নয়।
রানা বা তার অনুসরণকারী টেরও পেল না, আরও পেছনে আরও একটা ট্যাক্সি অনুসরণ করছে ওদের দু’জনকে।
এককালের ছোট্ট একটা জেলে গ্রাম আজ ৭৭ বর্গমাইল জোড়া এক মহানগরী। সারি সারি প্রাসাদোপম অট্টালিকা, অপূর্ব সব সৌধ, চমৎকার বাগান, পার্ক, লেক। রাস্তাগুলো সমান্তরাল-শহরটাকে সমান কয়েকটা ভাগে ভাগ করেছে।
শহরতলির একটা পাহাড়ের মাথায় পৃথিবী বিখ্যাত শ্য ড্যাগন স্বর্ণ প্যাগোডা। আড়াই হাজার বছরের পুরানো এই পবিত্র বুদ্ধ-স্মৃতিস্তম্ভ। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ দর্শকের ভিড় হয় এখানে। সামনাসামনি না দেখলে এর মাহাত্ম্য ও গাম্ভীর্য উপলব্ধি করা যায় না। তিনশো ছিয়াশি ফুট উঁচু প্ৰকাণ্ড প্যাগোডাটা আগাগোড়া সোনার পাত দিয়ে মোড়া। চুড়োটা নিরেট পাকা সোনা দিয়ে তৈরি, তার গায়ে বসানো আছে অসংখ্য মণি-মাণিক্য। খাঁটি হীরেই রয়েছে পাঁচ হাজার, অন্যান্য দামী পাথরও আছে প্রচুর। সব মিলিয়ে কত টাকার মণিমুক্তা আছে হিসেব করে বের করতে পারেনি কেউ আজ পর্যন্ত। ভগবান বুদ্ধের পবিত্র চুল এবং আরও কিছু স্মৃতি-চিহ্ন সংরক্ষিত আছে এখানে।
প্যাগোডাকে গোল করে ঘিরে রয়েছে পাশাপাশি অনেকগুলো মন্দির মন্দিরগুলোও দেখার মত-কাচের টুকরো আর কাঠের উপর সূক্ষ্ম কারুকাজ করে অলংকৃত করা হয়েছে মন্দিরগুলোকে। দেয়ালের গায়ে জায়গায় জায়গায় বুদ্ধমূর্তি। অপূর্ব।
জাঁক-জমক আর জৌলুসের কথা বলে এই প্যাগোডার সঠিক বর্ণনা হয় না। একটা স্তম্ভিত, গুরুগম্ভীর, প্রাচীন ভাব রয়েছে এই ঐতিহাসিক প্যাগোডাকে ঘিরে
এঁকেবেঁকে পাহাড়ের গা বেয়ে উঠে এল রানার ট্যাক্সি। রাত পৌনে আটটা, কিন্তু যথেষ্ট ভিড় রয়েছে দর্শকের। তবে ছড়ানো ছিটানো। পাঁচ ফুট উঁচু লোহার শিক দিয়ে বেড়া দেয়া হয়েছে প্যাগোডার সীমানা। গেট দিয়ে ঢুকে পড়ল রানা। আড়চোখে দেখল পেছনের ট্যাক্সি থেকে নামছে একজন মোটা লোক।
মিনিট পনেরো ঘুরে ঘুরে দেখল রানা মন্দির আর প্যাগোডা। আসলে অন্ধকারমত নির্জন জায়গা খুঁজছে সে। কিছুদূর অন্তর অন্তর আট ফুট উঁচু ল্যাম্পপোস্টের মাথায় চমৎকার ডিজাইন করা কাচের শেডের ভেতর উজ্জ্বল বৈদ্যুতিক বাতি। কিন্তু প্রচুর ছায়া ছায়া অন্ধকার জায়গা চোখে পড়ল রানার। বারকয়েক ঘড়ি দেখল সে। ঠিক আটটা বাজতেই একটা সিগারেট ধরিয়ে ঘনমত একটা ছায়ার কাছাকাছি পরিষ্কার আলোয় দাঁড়িয়ে পড়ল রানা। এদিক ওদিক চাইছে, যেন খুঁজছে কাউকে, অপেক্ষা করছে কারও জন্যে, অস্থির হয়ে উঠেছে রানা প্রত্যাশিত ব্যক্তি আসছে না বলে। সবদিকেই চাইছে সে পেছন দিকটা ছাড়া। স্পষ্ট অনুভব করল সে, অন্ধকার ছায়ায় ছায়ায় অতি সন্তর্পণে এগিয়ে আসছে মোটা লোকটা। অনেকটা কাছে এসে পড়েছে।
একজন অ্যাংলো বার্মিজ তরুণী এগিয়ে আসছে এইদিকে। পথ ছেড়ে একটু অন্ধকারের দিকে সরে গেল রানা। তরুণী চাইল একবার রানার দিকে, পাশ কাটিয়ে চলে গেল বাঁক ঘুরে। পেছনে খসখস আওয়াজ। ভারী একটা গদগদে কণ্ঠস্বর শুনতে পেল রানা ঠিক দু’হাত পেছনে।
‘এই যে, মিস্টার…’
কথা শেষ করতে পারল না লোকটা। ঝট করে ঘুরেই বিদ্যুদ্বেগে ঝাঁপিয়ে পড়ল রানা মোটা লোকটার উপর।
মোটেই প্রস্তুত ছিল না মোটা। নাকের উপর প্রচণ্ড এক ঘুসি খেয়ে ‘হুঁক্’ করে উঠল। সামলে ওঠার আগেই দড়াম করে এক রদ্দা মারল রানা ওর গণ্ডারের মত মোটা ঘাড়ে। পরমুহূর্তে হাঁটু দিয়ে মারল তলপেটে। ধড়াস করে পড়ল কলাগাছ। এদিক ওদিক চাইল রানা। টেনে নিয়ে এল জ্ঞানহীন দেহটা আলোয়। মন্দিরের গায়ে প্রকাণ্ড একটা পাথরের বুদ্ধমূর্তি-সেটার পায়ের কাছে প্রণামের ভঙ্গিতে উপুড় করে বসিয়ে দিল সে মোটাকে। বসে রইল মোটা, ভক্তি গদগদ ভঙ্গিতে ঘোঁৎ ঘোঁৎ নাক ডাকছে ওর।
লম্বা পা ফেলে এগোল রানা। বাঁকটা ঘুরতেই ধাক্কা খেলো সে নরম কিছুর সাথে। শ্যাম্পুর মিষ্টি গন্ধ। সরে দাঁড়াল অ্যাংলো-বার্মিজ মেয়েটা। পরনে দামী স্কার্ট, হাইহিল জুতো, হাতে গুই সাপের চামড়ার দামী ভ্যানিটি ব্যাগ, ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙ, লম্বা সুগঠিত শরীর, পাঁচ ফুট চার, চেহারায় এদেশীর চেয়ে বিদেশী ভাবটাই বেশি—এক কথায় সুন্দরী।
‘এক্সকিউজ মি, ম্যাডাম। ব্যথা পেয়েছেন?‘
‘নো, ইট্স অল রাইট।’ ভদ্রতা রক্ষা করল মেয়েটা বামহাতে ডান কাঁধটা ডলতে ডলতে। মোটা লোকটাকে দেখল একবার ঘাড় ফিরিয়ে।
চলে যাচ্ছিল রানা, পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করল মেয়েটা।
‘বেড়াতে এসেছেন বুঝি? রেঙ্গুনে এই প্রথম?’
‘হ্যাঁ।’
‘আমার নাম সোফিয়া। রেঙ্গুন ইউনিভার্সিটিতে পড়ি।’
‘আমি আব্বাস মির্জা। বাংলাদেশ থেকে এসেছি।’
‘কবে এসেছেন?’
‘আজই।’
‘শ্যু ড্যাগন প্যাগোডা দিয়েই শুরু করলেন বুঝি? চলুন আপনাকে আরও কয়েকটা দর্শনীয় জিনিস দেখিয়ে আনি।’
অবাক হলো রানা। থেমে দাঁড়াল। ‘আপনি কষ্ট করতে যাবেন কেন? ‘কষ্ট কিসের? ইট্স প্লেয়ার। ভয় নেই, প্রফেশনাল গাইড নই, টাকা চাইব না।’
রানার বাহুতে হাত রেখে মিষ্টি করে হাসল মেয়েটা।
ভড়কে গেল রানা।
‘অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু আজকে আমার একটু ব্যস্ততা আছে। আর কোনদিন…’ এগোল রানা।
‘ঠিক আছে, চলুন, ফিরবার পথে লেক ভিক্টোরিয়াটা দেখিয়ে দিই। ওই লেকের ধারেই আমাদের ইউনিভার্সিটি, লেডিজ হোস্টেলও। একটা লিফ্ট দিতে আপত্তি নেই তো?’
‘যদি কিছু মনে না করেন…
বাধা দিল মেয়েটা রানার কথায়। ‘প্লীজ! আপনার সাথে কথা আছে।‘
ডেসপারেটলি আর্জেন্ট, অ্যান্ড ইম্পর্ট্যান্ট।’ খামচে ধরল মেয়েটা রানার কোটের হাতা।
‘কি কথা, বলুন।’ ক্রমেই সজাগ হয়ে যাচ্ছে রানা ভেতরে ভেতরে।
‘নিরালা জায়গা ছাড়া বলা যাবে না।’ কাছ ঘেঁষে এল মেয়েটা। ‘এত লোকের মধ্যে বলা যায় না সেকথা।
আঙুল তুলে দামী স্যুট পরা স্মার্ট চেহারার একজন যুবককে দেখাল রানা। ‘ওই ভদ্রলোককে যেখানে খুশি নিয়ে গিয়ে বলুন আপনার গোপন কথা। আমি দুঃখিত।’
এতটা কড়া কথা বলতে চায়নি রানা আসলে, হঠাৎ মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। ছিটকে সরে গেল মেয়েটা। প্রথমে ফ্যাকাসে হয়ে গেল, তারপর লাল হয়ে উঠল গালদুটো অপমানে। ওর ক্ষুব্ধ, আহত দৃষ্টি ভর্ৎসনা করল রানাকে। তারপর একটা কথাও না বলে চলে গেল পেছন ফিরে
ট্যাক্সিতে উঠে বসল রানা। বলল, ‘নানকিং হোটেল।’