রক্তের রঙ ২.১০

দশ

‘উঠে পড়ো। জলদি!’

প্যাপন মং লাই উঠে গেছে আগেই। কো-পাইলটের সীটে ঠেলে সোফিয়াকে তুলে দিয়ে ড্রাইভিং সীটে উঠে বসল রানা। চালু হয়ে গেল ইঞ্জিন।

বৃষ্টি থেমে গেছে বেশ অনেকক্ষণ হলো। মিট মিট করছে অসংখ্য তারা। উত্তর দিগন্তে বিলীয়মান মেঘের গায়ে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে থেকে থেকে। পরিষ্কার আকাশ পেয়ে খুশি হলো রানা।

রোটর ব্রেক ছেড়ে দিয়ে পিচ কন্ট্রোলের থ্রটল ঘোরাতেই ঘুরতে শুরু করল মাথার উপর প্রকাণ্ড ফ্যানটা। এবার হুইল ব্রেক ছেড়ে পিচ লিভারটা উপরে টেনে আরও খানিক থ্রটল ঘুরাল রানা। রোটর স্পীড ইন্ডিকেটরে এখন লাল কাঁটাটা টু হানড্রেড আর.পি.এম. শো করছে।

দড়াম করে খুলে গেল ছাতের দরজা। স্টেনগান হাতে চারজন প্রহরী এসে দাঁড়িয়েছে ছাতে। শূন্যে উঠে গেছে হেলিকপ্টার। এখন গুলি করলে ওদেরই ঘাড়ের উপর এসে পড়বে কিনা ভেবে একটু ইতস্তত করল ওরা। কয়েক সেকেন্ড দেরি হয়ে গেল সিদ্ধান্ত নিতে।

থ্রটল ঘুরাল রানা আরও খানিকটা, সেই সাথে জয়স্টিকটা সামনে ঠেলে দিয়েই রাডার পেডালে রাখল ডান পা। কোনাকুনি ভাবে পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে উঠে গেল হেলিকপ্টার। প্রহরী চারজন যখন গুলি করল তখন গুলি করা না করা সমান কথা। হাঁ করে চেয়ে রইল ওরা পশ্চিম আকাশে অপসৃয়মাণ লাল বাতির দিকে।

.

ঝাড়া তিনশো মাইল পশ্চিমে যেতে হবে। দুই ঘণ্টার ব্যাপার। ফুল-স্পীডে প্রকাণ্ড গংগা-ফড়িংটা উড়িয়ে দিয়ে পাশ ফিরে হাসল রানা সোফিয়ার দিকে চেয়ে।

‘কয়টা মারলে?’

‘দুটো। তুমি?’

‘আমি একটা।’

‘আমি ফার্স্ট!’ পিছন থেকে বলে উঠল প্যাপন মং লাই। ‘আমি মেরেছি তিনটে। প্রকাণ্ড এক চুরুট বের করে এগিয়ে দিল রানার দিকে। নিজেও দাঁতের ফাঁকে কামড়ে ধরল একটা। ‘অবশ্য লীডার না থাকলে এতক্ষণে স্বর্গের দুয়ারে পৌছে যেতাম। সমস্ত ক্রেডিট পাইলট সাহেবের। এখানে ধরানো যাবে তো?’

‘খুব যাবে।’

চুরুট ধরিয়ে আরাম করে বসল রানা। ক্লান্তিতে ভেঙে আসতে চাইছে শরীরটা। চোখ দুটো বুজে আসতে চাইছে। হঠাৎ রানার হাতের দিকে চেয়েই আঁতকে উঠল সোফিয়া। কোটের হাতা বেয়ে টপ টপ করে রক্ত ঝরছে। কোট খুলে দেখা গেল ক্ষতটা অগভীর, কিন্তু রক্ত বন্ধ হয়নি এখনও। রুমাল দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিল সোফিয়া, তারপর বলল, ‘এখন চলেছি কোথায়?’

‘তোমাদের নামিয়ে দিয়ে ইয়ট নিয়ে দেশে চলে যাব।’

‘সে কি! কদিন থাকবে না আমাদের ওখানে?’ চোখ কপালে তুলল প্যাপন মং লাই। ‘আমি কোন কথা শুনব না, অন্তত দুটো মাস বেড়িয়ে যেতে হবে তোমাকে আমার ওখানে। এই দুই মাস উৎসব ঘোষণা করব আমি। নাচ-গান, হৈ-হুল্লোড়, খেলা-ধুলা, নৌকা বাইচ, খাওয়া-দাওয়া—বান ডেকে যাবে পুরো এলাকা জুড়ে। চলো না আগে, বারো হাজার লোকের অনুরোধ কি করে ফেল তুমি দেখি। আমার সব কথা শোনার পর ওরা তোমাকে ছেড়ে দেবে মনে করেছ?’

হাসল রানা।

.

‘এমন কোন জায়গা আছে, যেখানে ল্যান্ড করলে শত্রুর চোখে পড়ব না?’ জিজ্ঞেস করল রানা।

‘আছে,’ বলল প্যাপন মং লাই। ‘আমার বাড়ির উঠানেই নামতে পারবে।‘

‘উঁহু,’ মাথা নাড়ল সোফিয়া। ভূতের মন্দিরের ওপারেই ওদের আস্তানা। টের পেয়ে যেতে পারে। চিনতে পারবে ওরা এই হেলি…’

‘আরে রাখ, টের পেয়ে যাবে! এখন ভূতের কারবার চলছে ওখানে। ওদের সাধ্য আছে ওখানে উঠে দেখবে আমাদের? প্রাণে ভয় নেই?

‘ভূতের মন্দিরটা কি জিনিস?’ প্রশ্ন করল রানা।

আমাদের ওখানে খুবই প্রাচীন একটা মন্দির আছে,’ বলল সোফিয়া। ‘সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের মাথায়। ভেঙে-চুরে গেছে এখন। কেউ ওর ধার কাছ দিয়েও যায় না। অসংখ্য বিষধর সাপ আছে ওই মন্দিরের আশপাশের জঙ্গলে। পাহাড়টায় ওঠাও খুব বিপজ্জনক—বিরাট সব ফাটল সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ের গায়ে। লোকে বলে ভূত আছে ওই মন্দিরে, ছোটকাল থেকে শুনছি…’

সোফিয়ার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে জোরের সাথে বলল প্যাপন মং লাই, ‘আছেই তো। মাঝে বহু বছর ছিল না, ইদানীং আবার ফিরে এসেছে। রাতের বেলায় নানান রঙের আলো দেখা যায়!’

মৃদু হাসল রানা। বলল, ‘ওরেব্বাবা! ওই পাহাড় থেকে অন্তত তিন মাইল দূরে নামতে চাই আমি। সাঙ্ঘাতিক ভূতের ভয় আমার। দূরে কোথাও নামার ব্যবস্থা আছে?’

রানার ভয় দেখে হো হো করে হাসল সর্দার। বলল, ‘পাহাড় থেকে নামে না ওই ভূত।’

‘তবু।‘

‘ঠিক আছে, দূরেই নামা যাবে। কিন্তু হাঁটতে হবে বাবা। আমার জঙ্গলে মোটর গাড়ি চলে না।’

‘হাঁটব। প্রথমেই সোজা যাব আমরা অস্ত্রগুলো যেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেখানে।

‘অস্ত্র দিয়ে কি হবে?’ প্রশ্ন করল সর্দার।

‘প্রয়োজন হলে আত্মরক্ষা করতে হবে।’

.

‘আচ্ছা, লাইটিক ককটেল কোন কাজ করল না কেন আমাদের উপর?’ হঠাৎ প্রশ্ন করল সোফিয়া।

‘বুঝতে পারোনি?’ পাল্টা প্রশ্ন করল রানা।

‘একদম না।’

‘তাহলে ঢলে পড়ার ভান করলে কেন?’

‘তোমার দেখাদেখি।’

হো হো করে হাসল রানা। বলল, ‘ভাগ্যিস করেছিলে! নইলে গ্যাসেই মরণ হত।

‘ধরল না কেন ওষুধ?’

তুমি যখন আমাকে উল্টো ওষুধটা দিয়েছিলে, আমি আশা করেছিলাম দুই মিনিটে কেটে যাবে লাইটিকের প্রভাব। কিন্তু কাটেনি। বরং আরও বেড়েছিল প্রভাবটা। পরের বার যখন ইঞ্জেকশন দেয়ার জন্যে ওষুধ নিচ্ছিল মিসেস গুপ্ত শিশি থেকে, লক্ষ করলাম, লেবেল ছাড়া শিশি থেকে নিচ্ছে সে ওষুধ।’

‘তার মানে ওইটেই লাইটিক? আর যেটাতে লাইটিক লেখা ছিল সেটা?’

‘সেটা ছিল লাইটিকের প্রভাব কাটাবার ওষুধ। উল্টোপাল্টা শিশিতে রেখেছিল সে ওষুধ ধোঁকা দেয়ার জন্যে। সেই ধোঁকায় তোমার মতই বোকা বনেছে ডক্টর হুয়াংও।’

কত অল্পের উপর দিয়ে বেঁচে গেছে বুঝতে পেরে চোখ বড় বড় করে চেয়ে রইল সোফিয়া রানার দিকে। কত সামান্য একটা ভুলের সুযোগে উ-সেনের খপ্পর থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছে ওদের এই দুর্ধর্ষ লোকটা ভাবতেও শিউরে উঠল সোফিয়া। আশ্চর্য মানুষ! যেমন সাহসী, তেমনি ধূর্ত কম্পিউটারের গতি এর চিন্তায়। নিশ্চিন্তে নির্ভর করা যায় এর ওপর।

.

‘তোমার মাকে কোথায় পেয়েছেন তোমার বাবা?’ সময় কাটাবার জন্যে প্রশ্ন করল রানা।

পেয়েছেন নয়, পেয়েছিলেন। মা মারা গেছে সাত বছর আগে। খ্ৰীষ্টান ধর্ম প্রচার করতে এসেছিলেন উনি। প্রোমের মিশনারী চার্চের নান্ ছিলেন। কোন্ ফাঁকে বাবার চোখে পড়ে গিয়েছিলেন টের পাননি। মনে ধরে গিয়েছিল বাবার, তাই একদিন কথা নেই বার্তা নেই জোর করে তুলে নিয়ে এলেন মাকে। হুলস্থুল বেধে গেল। থানা-পুলিস, সাহেব-সুবো ছুটে এল, কিন্তু মাকে ছুটিয়ে নিয়ে যেতে পারল না। বেঁকে বসলেন উনি—যাবেন না। বাবার কাছে নারী-ধর্ম শিখে ফেলেছেন উনি তিনদিনেই, খ্রীষ্ট-ধর্মের কথা ভুলেই গেছেন বেমালুম।’

পিছনের একটা সীটে শুয়ে চোখ বন্ধ করে একমনে চুরুট টানছিল প্যাপন মং লাই, হঠাৎ তড়াক করে লাফিয়ে উঠে এগিয়ে এল।

আত্মরক্ষার প্রয়োজন হবে ভাবছ কেন?’ ভুরু কুঁচকে গেছে সর্দারের। ‘প্রয়োজন হবেই তা বলিনি। তবে হতে পারে। সম্ভাবনা আছে। হয়তো এতক্ষণে ওয়্যারলেসে আমাদের পলায়নের খবর পেয়ে গেছে ওরা। হঠাৎ আক্রমণ করে বসা বিচিত্র নয়। কারণ ওরা জানে আপনি নিজ এলাকায় পৌঁছে গেলে ভয়ানক বিপদের সম্মুখীন হবে ওরা। এখন আপনারা সশস্ত্র।

চিন্তিত মুখে মাথা নাড়তে থাকল বৃদ্ধ। গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেছে। সোফিয়ার দিকে ফিরল রানা।

‘সোফিয়া, তোমার একশো লোককে ঠিক কি নির্দেশ দিয়েছিলে তুমি বলো তো? ট্রেনিং-এর কথা বলে দিয়েছিলে?’

‘বলেছি। পৌঁছোনোর সাথে সাথে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে বলেছি অস্ত্রগুলো, কোটা টিপলে কি হয়, সবাইকে শিখিয়ে দিতে বলেছি যতদূর সম্ভব এবং যত দ্রুত সম্ভব। এতক্ষণে মোটামুটি সবাই শিখে গেছে কিভাবে চালাতে হয় ওগুলো। তাছাড়া কিছু ট্রেনিং পাওয়া সোলজারও আছে আমাদের মধ্যে।’

‘ভেরি গুড। ঘণ্টা দুয়েক ঠেকিয়ে রাখতে পারলেই যথেষ্ট।

‘একটা যুদ্ধ যে হবেই সে ব্যাপারে তোমাকে নিঃসন্দেহ মনে হচ্ছে, মাসুদ রানা?’ সোজা রানার চোখের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল প্যাপন মং লাই।

সেজন্যেই তো চলেছি আমি,’ বলল রানা। ‘আমার কাজ শেষ হয়ে গেছে মান্দালয়েই। ওখানকার আর্মি হেড-কোয়ার্টার থেকে ঢাকায় খবর পাঠিয়ে দিলেই চলত, গেরিলা ক্যাম্পে আমার যাওয়ার কোন প্রয়োজনই ছিল না। কিন্তু যে কাজের জন্যে এত কষ্ট করলাম, এত বিপদের ঝুঁকি নিলাম, বার কয়েক মরতে মরতে বেঁচে গেলাম, সেটার শেষ পর্বটা নিজের চোখে দেখার আগ্রহে চলেছি আমি আসলে। হেড অফিসে একটা খবর পাঠানো ছাড়া আর কোন কাজ নেই আমার।’

‘বাবার প্রশ্নটা কিন্তু এড়িয়ে গেলে তুমি, রানা।’ বলল সোফিয়া। ‘বাবা জিজ্ঞেস করছিল, আমাদের উপজাতির ওপর আক্রমণ আসছে, এ ব্যাপারে তুমি নিশ্চিত কিনা।

‘প্রায় নিশ্চিত।’

‘কেন?’

‘কারণ সর্দার পৌছবার আগেই যদি আক্রমণ করে, তাহলে বিনা বাধায় অস্ত্র দখল করতে পারবে ওরা। কিন্তু এর চেয়েও বড় কারণ হচ্ছে, স্থানীয় অধিবাসীদের কাবু করে ওরা ওঁৎ পেতে থাকবে আমার জন্যে। আমাকে যদি কোন ভাবে ঠেকাতে পারে, তাহলে কোন খবর পৌঁছবে না ঢাকায়, ওরাও নিরাপদে ট্রেনিং ক্যাম্প চালু রাখতে পারবে—সব খবর আমার সাথে সাথে মাটি চাপা পড়ে যাবে। কি মনে হয়? চেষ্টার ত্রুটি করবে ওরা?’

.

শিঙা বাজছে।

একটা দুটো নয়, সারাটা জঙ্গল জুড়ে বাজছে শিঙা। জংলীদের বিপদ- সঙ্কেত। প্রতি দুইশো গজ অন্তর অন্তর শিঙা ফুঁকছে একজন করে। গোটা অঞ্চলকে সাবধান করে দেয়া হচ্ছে।

একলাফে হেলিকপ্টার থেকে নেমেই চিৎকার করে উঠল প্যাপন মং লাই বিচিত্র স্বরে। গজ বিশেক দূরের একটা গাছ থেকে নেমে ছুটে এল একজন আদিবাসী। দশ হাত তফাতে দাঁড়িয়ে কুর্নিশ করল, তারপর ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল প্রিয় সর্দারকে।

ওর হাত থেকে শিঙাটা নিয়েই অন্য এক ভঙ্গিতে ফুঁ দিল সর্দার। সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের তিন চারটে শিঙা থেমে গেল। নিশ্চিত হওয়ার জন্যে কান পেতেছে ওরা। সর্দার ছাড়া আর কারও যুদ্ধের আদেশ ঘোষণার অধিকার নেই। কে বাজাল যুদ্ধের শিঙা? তবে কি উপজাতির মহা সঙ্কটের সময় ফিরে এসেছে সর্দার? নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে ভরসা হচ্ছে না ওদের।

আবার ফুঁ দিল সর্দার শিঙায়।

এবার সেই একই সুরে বেজে উঠল আশপাশের চার পাঁচটা শিঙা। দুই মিনিটের মধ্যে পাল্টে গেল সবার সুর। যুদ্ধের শিঙা বাজছে এখন সারাটা অঞ্চল জুড়ে। সবাই বেরিয়ে পড়বে এখন যে যার অস্ত্র নিয়ে।

‘এখন কি করবে?’ প্রশ্ন করল প্যাপন মং লাই রানাকে। ‘আমি তো যুদ্ধ করব। তুমি?’

আমি চেষ্টা করব যাতে আপনাদের যুদ্ধ না করতে হয়।’

‘সেটা কি রকম?’

ইতোমধ্যেই ষাট সত্তর জন সশস্ত্র যুবক ঘিরে ফেলেছে ওদের। সবার হাতেই চাইনিজ স্টেন বা এস.এল. আর.

‘বলছি,’ বলল রানা। ‘তার আগে এদের জিজ্ঞেস করে আমাকে জানান কেন শিঙা ফুঁকছে, ঠিক কোন পজিশনে আছে শত্রুপক্ষ।’

জানা গেল, উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে শত্রুর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। দুই দিক থেকে এগোচ্ছে হাজার ছয়েক সৈন্য। পুরো দুই ব্রিগেড। যতদূর মনে হয় ঘিরে ফেলবার চেষ্টা করবে ওরা। তাই দেখে ওরা সবাইকে সাবধান করে দিয়ে যতদূর সম্ভব পুবে সরে যাওয়ার কথা ভাবছিল। কিন্তু সর্দারের শিঙা শুনে গ্যাট হয়ে বসে গেছে সবাই পজিশন নিয়ে।

রানা বুঝল, ট্রেইন্‌ড্ আর্মির হাতে অনর্থক মারা পড়বে লোকগুলো। সবাইকে থামিয়ে দিয়ে এক মিনিট চুপচাপ ভাবল সে। তারপর ফিরল সর্দারের দিকে।

‘পুবদিকে কি আছে?’

‘জঙ্গল। মাইল তিনেক পর ছোট্ট একটা নদী, তারপর আবার পাহাড় আর জঙ্গল।’

‘আপনার সব লোককে পুবে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিন। ওরা যতই এগোবে, এরা ততই পিছিয়ে যাবে। সেইসাথে আসমানের দিকে অনর্গল গুলি চালাতে বলবেন। ‘

‘যুদ্ধ করব না?’ বিস্মিত দৃষ্টিতে চাইল সর্দার রানার দিকে।

‘না। একেবারে সামনা সামনি পড়ে না গেলে যুদ্ধ করবার দরকার নেই। ‘তাহলে তো আমাদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে শেষ করে দেবে ওরা,’ বলল সোফিয়া।

‘অত সময় পাবে না। ইয়টে ছিল, এমন কেউ আছে এখানে?’

একজন যুবকের দিকে চেয়ে সোফিয়া বলল, ‘আছে। কেন?’

‘ওকে জিজ্ঞেস করো, এগারো নম্বর বাক্সে একটা ওয়্যারলেস সেট ছিল, সেটা কোথায়।’

খানিকক্ষণ কথা বলল সোফিয়া যুবকটির সাথে। ছেলেটির উত্তর দেয়ার ভাব ভঙ্গি পছন্দ হলো না রানার। এত লজ্জার কি আছে? হঠাৎ একটা আশঙ্কার কথা মনে আসতেই ছ্যাঁৎ করে উঠল বুকের ভিতরটা। নষ্ট করে ফেলেনি তো যন্ত্রটা? সোফিয়া ফিরল রানার দিকে।

‘ওটা কি ধরনের অস্ত্র পরীক্ষা করতে গিয়ে…’

‘বুঝেছি,’ বলল রানা। সর্দারের দিকে ফিরল। আমি চললাম, আপনাকে যা বলেছি তাই করবেন।’ আঙুল তুলে পাতার ফাঁক দিয়ে পশ্চিম দিকে দেখাল,

ওই যে আলো দেখা যাচ্ছে, ওটা ভূতের মন্দির না?’

‘হ্যাঁ,’ বলেই চমকে উঠল সর্দার। বিস্মিত দৃষ্টিতে ওদিকে চেয়ে বলল, ‘আজকে রীতিমত পাগলামি শুরু করেছে প্রেতাত্মাগুলো। ভয়ানক কিছু ঘটবে আজ।’

‘ঘটাতে চাইছে। কিন্তু ঘটবে না।’

রওনা হতে যাচ্ছিল রানা, খপ করে ওর হাত চেপে ধরল সর্দার।

‘কোথায় যাচ্ছ?’

‘ভূতের মন্দিরে।’ জবাব দিল রানা। ‘দেরি হয়ে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।‘

তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, মাসুদ রানা!’ আরও শক্ত করে ধরল সে রানার হাতটা।

হাসল রানা। ‘দুটো আলো দুই দিকে ঘুরছে না?’

‘হ্যাঁ।’ উত্তর দিল সর্দার।

‘বাম দিকের আলোটা দক্ষিণ দিকের সৈন্যদের এগোতে বলছে, ডানদিকের আলো এগোতে বলছে উত্তর দিকের সৈন্যদের।’ সর্দারের হাতটা ছাড়িয়ে দিল রানা। ‘ভূত নেই ওখানে, আছে জনাকয়েক শয়তানের বাচ্চা।’ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে হাঁ হয়ে গেল প্যাপন মং লাইয়ের মুখটা। তুমি উল্টো সিগন্যাল দিয়ে ওদের ফিরিয়ে নিতে চাও?

‘হ্যা। বেশি কথা বলার সময় নেই এখন। জায়গাটা ঘিরে ফেলবার আগেই পৌঁছতে হবে আমাকে পাহাড়ের কাছে। বড় জোর পনেরো মিনিট হাতে আছে আমাদের। আপনার নির্দেশ দিয়ে দিন জলদি, আমি চললাম।’

দৌড়াতে শুরু করল রানা। পিছনে পায়ের শব্দ শুনে চেয়ে দেখল সোফিয়া আসছে পিছন পিছন। একজনের হাত থেকে একটা স্টেনগান ছিনিয়ে নিয়ে ছুটতে শুরু করেছে সেও।

.

মাঝ পথে পৌঁছতেই ফায়ারিং শুরু হলো। উত্তর দিকের দলটা শুরু করল আগে, পরক্ষণেই শুরু করল দক্ষিণের দল। মন্দিরের আলোয় ফায়ারিং-এর সিগন্যাল।

টপ টপ ঘাম ঝরছে রানার কপাল থেকে দেড় মাইল দৌড়েই। আরও দেড় মাইল যেতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। প্রাণপণে ছুটল সে। পিছনে ফোঁস ফোঁস নিঃশ্বাসের শব্দ পাচ্ছে সোফিয়ার। ঝোপ ঝাড় বাঁচিয়ে দৌড়াতে হচ্ছে ওদের এঁকেবেঁকে। পশ্চিম আকাশে একটুকরো ম্লান চাঁদের আবছা আলোই ওদের একমাত্র সম্বল। ফায়ারিং শুরু হবার পনেরো মিনিটের মধ্যে পৌছল ওরা পাহাড়ের পায়ের কাছে। কার্বোলিক অ্যাসিডের গন্ধ পেল রানা। বুঝতে পারল সাপ তাড়াবার জন্যে এই উৎকট গন্ধের আশ্রয় নিয়েছে ভূতেরা। একটা গাছের গায়ে হেলান দিয়ে জিরিয়ে নিল রানা খানিকক্ষণ, সেই সাথে জরিপ করে নিল এলাকাটা।

‘তুমি এলে কেন, সোফিয়া?’ প্রশ্ন করল রানা চাপা কণ্ঠে। ‘বিপদ হতে পারে।

‘তুমি তো ইচ্ছে করলেই আমাদের বিপদের মুখে ফেলে হেলিকপ্টারে করে চলে যেতে পারতে তোমার ইয়টে—তুমি এলে কেন?’

‘এসব কষ্টের কাজ করে অভ্যেস আছে আমার। তোমার তা নেই। এই মন্দির দখল করতে খুনোখুনির প্রয়োজন পড়তে পারে। আমাদের প্রাণ যাবে না এমন কোন গ্যারান্টি নেই। তুমি বরং এখানেই অপেক্ষা করো…’

‘বাজে কথা রাখো। আমি যাচ্ছি তোমার সঙ্গে।’ ঘাড় বাঁকিয়ে উত্তর দিল সোফিয়া। ‘তুমি যদি হাজার কয়েক নিরপরাধ জংলী মানুষের জন্যে নিজের জীবন বিপন্ন করতে পারো, আমি পারব না কেন। ওরা তো আমার লোক।’

পাহাড় ফেটে গিয়ে মাঝে মাঝে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এছাড়া কিছু মানুষের তৈরি গর্তও রয়েছে পাহাড়ের গায়ে। সয়ত্বে সে সব গর্ত পরিহার করে উঠছে ওরা উপর দিকে ধীরে ধীরে; অতি সাবধানে। মানুষের অস্তিত্ব টের পেয়েছে রানা কয়েকটা গর্তে, গোটা কয়েক অ্যান্টি এয়ার ক্রাফ্ট গানের মুখও দেখতে পেয়েছে।

নিচে থেকে তুমুল গুলিবর্ষণের শব্দ আসছে। উভয় পক্ষ থেকেই গুলি হচ্ছে। উপর থেকে জঙ্গলের ভিতর কি হচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না! শুধু দু’একটা আকাশের দিকে ছোঁড়া গুলি টুপটাপ পড়ছে ওদের আশপাশে।

মাথাটা একটু তুলেই আবার নামিয়ে ফেলল রানা। দুজন সেন্ট্রি দাঁড়িয়ে আছে মন্দিরের দরজায়। চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি বুলাচ্ছে। ছটফট করছে ওরা জঙ্গলের ভিতর কি হচ্ছে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না বলে। কনুই দিয়ে গুঁতো দিল রানা সোফিয়ার পাঁজরে। ওপাশ দিয়ে ঘুরে মন্দিরের পিছনে উঠতে হবে।

দু’পাশ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ল ওরা দুজন দুই সেন্ট্রির ঘাড়ের উপর।

কোন রকম ঝুঁকি নেয়ার উপায় নেই, দ্রুততাই এখন ওদের একমাত্র অস্ত্র, কাজেই প্রথম সুযোগেই মারণাঘাত হানল রানা। কড়াৎ করে ভেঙে গেল প্রহরীর ঘাড়ের পিছনে সেভথ্ ভার্টেব্রা। সোফিয়া মেরেছিল স্টেনগানের বাট দিয়ে। বাম পাশে নড়াচড়া টের পেয়েই ঝট করে পাশ ফিরেছিল প্রহরীটা আঘাতটা মাথার একপাশে লেগে পিছলে গিয়ে কাঁধের উপর পড়ল। ‘ইয়াল্লা’ বলেই খপ করে ধরে ফেলল সে স্টেনগানটা। একলাফে পৌছে গেল রানা। বাম হাতের আঙুলগুলো সোজা রেখে কব্জি ও কনিষ্ঠ আঙুলের মাঝের মাংসল জায়গাটা দিয়ে মারল রানা লোকটার শ্বাস নালীর উপর। দরজার চৌকাঠে ঠুকে গেল লোকটার মাথা, স্টেনগান ছেড়ে হাতটা উঠে এল গলার কাছে, শ্বাস নিতে পারছে না, বিস্ফারিত হয়ে গেছে দুই চোখ, চৌকাঠের গায়ে ছেঁচড়ে বসে পড়ল সে পা ভাঁজ হয়ে যেতেই।

‘ক্যয়া হুয়া, আলাউদ্দিন?’ হাঁক ছাড়ল কেউ মন্দিরের ভিতর থেকে

কণ্ঠস্বর চিনতে পারল রানা। মেজর উলফাতের কণ্ঠ। সেন্ট্রির কোমর থেকে রিভলভারটা বের করে নিয়ে ঢুকে পড়ল রানা মন্দিরের ভিতর। পাশে সোফিয়া।

‘মাসুদ রানা! তুম কাঁহাঁসে আ গিয়া?’ চোখ কপালে উঠল মেজর উলফাতের। সেই ভাবেই ঢলে পড়ল সে দুই চোখের মাঝখানে আরেকটা চোখ তৈরি হয়ে যাওয়ায়।

.

আলোর সিগন্যাল উল্টো করে দিয়ে সোফিয়াকে বাইরে পাহারায় থাকতে বলে ওয়্যারলেস সেটের সামনে গিয়ে বসল রানা। ঢাকা পাওয়া গেল এক মিনিটের মধ্যেই। প্রথমেই অবস্থানটা দিল রানা—অক্ষাংশ বাইশ ডিগ্রি সাত মিনিট, দ্রাঘিমাংশ বিরানব্বই ডিগ্রি পঁয়ত্রিশ মিনিট। বার কয়েক রিপিট করল যাতে কারও কোন ভুল না হয়। তারপর দিল সংক্ষিপ্ত মেসেজ। তিন হাত দূরে বোমা ফাটলেও ততটা চমকাবে না মেজর জেনারেল রাহাত খান, যতটা চমকে উঠবে এই সংক্ষিপ্ত মেসেজ পেয়ে। হুলস্থুল পড়ে যাবে, দৌড়াদৌড়ি হুড়োহুড়ি পড়ে যাবে আগামী পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঢাকার একটি বিশেষ মহলে। মুচকি হেসে অফ করে দিল রানা ওয়্যারলেস সেট।

.

সিগন্যাল দিয়ে বার কয়েক সামনে এবং বার কয়েক পিছনে নিল রানা উত্তর দক্ষিণ উভয় দলের সৈন্যদের। ঘণ্টা খানেক পার করল এই ভাবেই। মাঝে মাঝে ফায়ারিং-এর নির্দেশ দেয়, মাঝে মাঝে থেমে যেতে বলে। কেন কি ঘটছে বুঝতে পারল না ওরা বেশ কিছুক্ষণ। এইবার দুই দলকে একত্রিত হওয়ার সঙ্কেত দিল রানা। একত্র হওয়ার পর বেশ খানিকটা হৈ-চৈ শোনা গেল নিচে থেকে।

বিশ মিনিট আগে টেলিফোন এসেছিল ক্যাম্প থেকে। কর্নেল আদিবের। রাগান্বিত কণ্ঠস্বর শোনা গিয়েছিল: ‘ইয়ে কিয়া শুরু কার দিয়া তুম, উলফাত?’ জবাব না দিয়ে রেখে দিয়েছিল রানা রিসিভার। কিছু একটা গোলমাল হয়েছে টের পেয়ে নিশ্চয়ই স্পেশাল মেসেঞ্জার পাঠিয়েছে কর্নেল আদিব দুই দলের কম্যান্ডিং অফিসারদের কাছে—এইজন্যেই এই গোলমাল।

বিপদ সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন রানা। ছোট হোক বড় হোক একটা দল যে ভূতের মন্দিরে ওঠার চেষ্টা করবে তাতে কোন সন্দেহই নেই। রানা আশা করছে আর পাঁচ দশ মিনিটের মধ্যে সাহায্য এসে হাজির হবে। যদি না আসে? যদি দেরি হয়?

.

দেরি হলো না।

ভোর হয়ে আসছে। তিনটে কোম্পানী তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে উঠতে শুরু করল পাহাড় বেয়ে।

মাঝামাঝি আসতেই গুলি করল রানা। ছয়শো সৈন্যের বিরুদ্ধে ওদের আছে মোট পঁচাত্তরটা গুলি, আর টেবিলের ড্রয়ারে খুঁজে পাওয়া গোটা চারেক হ্যান্ড গ্রেনেড। এছাড়া আছে তিনটে রিভলভারে সতেরোটা গুলি।

তিন কোম্পানীর উপর স্টেনগানের তিনটে ম্যাগাজিন খালি করল রানা।

শুয়ে পড়ল সবাই। চোখের সামনে জনা তিরিশেক সঙ্গীকে গুলি খেতে দেখে দমে গেছে ওরা। কিন্তু উপরে ওঠা বন্ধ হলো না এতে, গতি শ্লথ হলো মাত্র। খানিক বাদে তিনটে গ্রেনেড ফেলল রানা। পুব দিকের সৈন্যরা অনেক বেশি উঠে পড়েছে দেখে চতুর্থ গ্রেনেডটা ওদের উপরই ফেলে রিভলভার নিয়ে তৈরি হলো এবার।

একটা মর্টার শেল পড়ল মন্দিরের পাশে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হলো। কানে আঙুল দিয়ে শুয়ে রইল ওরা।

হঠাৎ পুবের জঙ্গল থেকে গুলি শুরু হলো আবার। মাঝে আধঘণ্টা চুপ হয়ে গিয়েছিল আরাকানী দল, এবার একেবারে কাছে থেকে গুলি শুরু করল। সৈন্যরা পিছিয়ে আসায় এগিয়ে এসেছে ওরা। শুধু যে এগিয়ে এসেছে তাই নয়, বেপরোয়া হয়ে আক্রমণ চালিয়েছে হঠাৎ। খুব সম্ভব রানা ও সোফিয়ার বিপর্দ টের পেয়েই। এক এক করে তিনটে রিভলভারের গুলি শেষ করল রানা। ঘায়েল হলো আরও দশ জন।

এমনি সময় প্লেন আসতে শুরু করল। মিনিট পাঁচেক শেলিং এবং মেশিনগানিং হাতেই ছত্রভঙ্গ হতে শুরু করল ‘মুসলিম বাংলা’ গেরিলা ফৌজ। সড়সড় করে নামতে শুরু করল ওরা পাহাড়ের গা বেয়ে। নিচে জমায়েত হওয়া সৈন্যরা ব্যারাকের দিকে ভাগছে এখন। আন্দাজের উপর নির্ভর করে ট্রেনিং ক্যাম্পের উপর ফেলা হলো দুটো হাজার পাউন্ডের বোমা।

গোলাগুলি বন্ধ করে হাঁ করে প্লেনের তামাশা দেখছে জংলীরা। ছত্রীসেনা নামা শুরু হতেই খুশিতে লাফালাফি আরম্ভ করল। আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছে ওরা। প্যারাস্যুটের সাহায্যে নেমে আসছে হাজার হাজার ছত্রীসেনা।

উঠে দাঁড়াল রানা। খুশির চোটে রানার বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল সোফিয়া। দুই হাতে জড়িয়ে ধরে চুমো খাচ্ছে পাগলের মত।

ঢাকার সাথে কন্ট্যাক্ট করল আবার রানা।

পরিষ্কার ভেসে এল মেজর জেনারেল রাহাত খানের কন্ঠস্বর।

‘আর ইউ অল রাইট, রানা?’

‘ইয়েস, স্যার।‘

‘এখন কি অবস্থা ওখানকার? সারেন্ডার করেছে?’

‘সাদা ফ্ল্যাগ তুলেছে দেখতে পাচ্ছি, স্যার। প্যারাট্রুপার নেমে পড়েছে। আধঘণ্টার মধ্যেই ঢুকে যাবে সব কিছু।

‘গুড।’ পাঁচ সেকেন্ড বিরতি। ‘তুমি ইয়ট নিয়ে আসবে, না প্লেনে আসবে?’

সোফিয়ার চোখে মিনতি দেখতে পেল রানা।

‘ইয়টে আসব। দিন দশেক দেরি হবে, স্যার।’

‘কেন?’

বিশ্রাম দরকার, স্যার। সর্দার অনেক করে ধরেছে…’

‘অলরাইট, ছুটি গ্র্যান্টেড—রাখলাম,’ খানিক ইতস্তত করে আবার বললেন বৃদ্ধ, কংগ্র্যাচুলেশন্স। ‘

‘থ্যাঙ্ক ইউ, স্যার।’

অফ করে দিল রানা ট্রান্সমিটারটা। ফিরল সোফিয়ার দিকে ।

‘এত কিছু করার পর শুধু একটা কংগ্র্যাচুলেশন?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করল সোফিয়া।

‘সাংঘাতিক কট্টর বুড়ো। ওর মুখে এইটুকু শুনতে পাওয়াই সাত কপালের ভাগ্যি।’

কাছে এগিয়ে এল সোফিয়া। হাসল দুজন চোখে চোখে। রক্ত সরে যাচ্ছে সোফিয়ার মুখ থেকে আসন্ন আনন্দের সুখ কল্পনায়। ঠোঁটে মদির হাসি।

ধীরে ধীরে নেমে এল রানার তৃষিত ঠোঁট।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *