প্রথম অংশ : অন্তর্ধান
দ্বিতীয় অংশ : অন্ধকারের অবতার
1 of 2

ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৪৮

অধ্যায় আটচল্লিশ – সময় : ১৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
বিধোরী দুর্গ, কন্নোর, ভারতবর্ষ

উরগ প্রহরীদের কাজটা খুবই কঠিন, যতক্ষণ তাদের ওপরে প্রহরার দায়িত্ব থাকবে ততক্ষণ তাদেরকে স্রেফ মূর্তির মতো স্থির থেকে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। কোনোরকম নড়াচড়া কিংবা অন্যকিছু করার নিয়ম নেই, এমনকি তাদের নিজেদের প্রহরার জন্যে নির্দিষ্ট এলাকা থেকে চোখ পর্যন্ত সরানো যাবে না। ব্যাপারটা শুনতে খুব ভয়ংকর শোনায়, কিন্তু সত্যি কথা হলো উরগদের জন্যে ব্যাপারটা অতটা কঠিন নয়।

কারণ ছোটোবেলা থেকে তাদের সমাজে যার যে কাজ সেটা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় গোত্র প্রধানের পরিবার থেকে, আর সেভাবেই ছোটোবেলা থেকেই গড়ে তোলা হয় তাদের। কাজেই প্রহরী, যোদ্ধা, পূজারি যে পেশাতেই থাকুক ছোটোবেলা থেকেই তাদের ওভাবে গড়ে তোলা হয়ে থাকে। তার ওপরে আরো দুটো ব্যাপার কাজ করে। একে তো সর্প মাতার ওপরে তাদের ভক্তির সীমা-পরিসীমা নেই। দ্বিতীয়ত, তারা কাজে নামার আগে বিশেষ করে যেসব কাজে অতিরিক্ত শারীরিক শ্রমের দরকার হয় সেসব কাজে তারা সর্প মাতার লেহনী থেকে প্রস্তুতকৃত বিশেষ তরল গ্রহণ করে শরীরে। যেটা তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে অন্যদের থেকে অনেক বেশ সহনশীল আর একাগ্র করে তোলে।

চারজন উরগ প্রহরী জলগুহার দ্বারপ্রান্তে একেবারে স্থির দাঁড়িয়ে প্রহরারত। শুধু চোখের পলক ছাড়া আর কোনো নড়াচড়া নেই। এমন সময় একজন প্রহরী খানিকটা নড়ে উঠল, কারণ তার চোখে অদ্ভুত এক নড়াচড়া ধরা পড়েছে। সে নির্দিষ্ট দিকে তাকানোর আগেই ঘড়ঘড় শব্দ ভেসে এলো, সেইসঙ্গে বাকি প্রহরীদেরও প্রায় সবাই দেখতে পেল জলগুহার সামনের রাস্তাটার দু পাশে সাজিয়ে রাখা পিপেগুলোর একটা কোনোভাবে স্থানচ্যুত হয়ে গড়িয়ে আসছে গুহার দিকে। যদিও প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সবাই নিজেদের বিশেষভাবে প্রস্তুত বর্শা তাক করে ফেলেছিল সম্ভাব্য শব্দের উৎস লক্ষ্য করে কিন্তু পিপেটাকে গড়িয়ে আসতে দেখে সবার সতর্ক ভাবটা হালকা হয়ে গেল।

কারণ ব্যাপারটা একেবারে নতুন নয়। মাঝে মাঝে এরকমটা ঘটে। একটার ওপরে রাখা আরেকটা পিপে গড়িয়ে পড়ে, কিংবা জলগুহায় পানির উত্থান-পতনের কারণেও অনেক সময় পিপে গড়িয়ে পড়ে। পিপেটা গড়িয়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে, হালকা চালে একজন উরগ প্রহরী পা দিয়ে ঠেকিয়ে দিল ওটাকে। সে পাশের জনের দিকে ফিরে ওটাকে সোজা করে একপাশে সরিয়ে রাখার নির্দেশ দিল।

পাশের প্রহরী এগিয়ে এসে তাদের হাতে ধরা বিশেষ বর্শাটা দিয়ে পিপের গায়ে টোকা দিতেই ঠক ঠক শব্দ করে উঠল। অন্য আরেক প্রহরী পিপেটাকে সোজা করার জন্যে হাত বাড়াল কিন্তু বর্শার ডগা দিয়ে টোকা দেয়া প্রহরী হঠাৎ সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবারো বর্শা দিয়ে ঠক ঠক করে টোকা দিল। তার হিসেবে পিপেটা খালি হবার কথা কিন্তু খালি পিপের গায়ে টোকা দিয়ে যেরকম শব্দ হবার কথা এটাতে তেমন শব্দ হয়নি, সে প্রহরীদের নেতার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলার জন্যে মুখ খুলল কিন্তু তার আগেই দেখতে পেল আরো দুটো পিপে গড়িয়ে আসছে। সবাই সেদিকে ফিরে তাকাল, সঙ্গে সঙ্গে প্রথম পিপেটার একপাশ কড়াত করে আলগা হয়ে ওটার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো কাতানা ধরা একটা হাত।

তৃতীয় প্রহরী পিপেটাকে সোজা করার জন্যে খানিকটা ঝুঁকে হাত বাড়িয়েছিল কিন্তু তার আগেই শামানের কাতানা ধরা হাতটা বেরিয়ে এসে ওটার চোখা ডগা সোজা ঢুকে গেল প্রহরীর গলায়। তৃতীয় প্রহরীকে আহত হতে দেখে দ্বিতীয়জন ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজের বর্শা তাক করার আগেই তার গায়ের ওপরে এসে পড়ল আরেকটা পিপে। সেইসঙ্গে শামান পিপের আবরণ ভেঙে উঠে দাঁড়াল। প্রহরীদের নেতা তার সঙ্গীকে সামনের দিকে এগোতে বলে নিজে হাত রাখল কোমরে রাখা বিশেষ শিঙ্গার ওপরে, সবাইকে সাবধান করে দেবার জন্যে কিন্তু শামানের সঙ্গে আসা দক্ষ তিরন্দাজের তির হাতসহ শিঙ্গাটাকে ভেঙে ঢুকে গেল ভেতরে। আরেকটা তির এসে ঢুকল তার গলায়।

নেতার সঙ্গী ততক্ষণে এগিয়ে এসেছে, তার হাতে লম্বা বর্শা। সেটাকে বাগিয়ে ধরে দক্ষতার সঙ্গে ওটার ডগাটা সে চালিয়ে দিল শামানের পেট লক্ষ্য করে কিন্তু অবাক হয়ে দেখল বর্শাটার ডগা শামানের পেট স্পর্শ করার আগেই শামানের কাতানার এক কোপে ওটার কাঠের হাতলটা দু-টুকরো হয়ে মাটিতে পড়ে গেল ফলাটা। সেইসঙ্গে শামানের কাতানার ডগাটা বাতাস কেটে থেমে গেল একেবারে তার গলার কাছে।

কাতানাটাকে প্রহরীর গলায় চেপে ধরে তাকে চুপ থাকার ইশারা করে পেছন দিকে ফিরে হাত নাড়ল শামান। পেছন থেকে ছুটে এসে মাটিতে পড়ে থাকা একজন আর এই প্রহরীর মুখ চামড়ার ফালি দিয়ে বেঁধে ফেলল, যাতে ওরা কোনো শব্দ করতে না পারে। বাকি দুজন মৃত প্রহরীকে দ্রুত সরিয়ে ফেলে এই দুজনকেও হাত-পা বেঁধে পিপের ভেতরে ভরে ওগুলোকে একপাশে দাঁড় করিয়ে দিল ওরা কিছুক্ষণের ভেতরে।

কাজ শেষ করে হাফ ছাড়ল ওরা। যাক কেউ আসেনি এই সময়ের ভেতরে। এখন দ্রুত ভেতরে ঢুকতে হবে, নিজের লোকদের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলেই সে ঘোষিতের দিকে ফিরে বলল, ‘আগের পরিকল্পনা অনুযায়ীই জলগুহার ভেতরে ঢুকব আমরা। জলগুহার ভেতরে ঢুকে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব, ওর লোকেরা মাথা নাড়তেই শামান সবাইকে অস্ত্র প্রস্তুত করতে বলে নিজের হাতে ধরে রাখা কাতানাটা একবার শূন্যে ঘুরিয়ে মাথা নিচু করে ঢুকে পড়ল জলগুহার ভেতরে।

গুহার ভেতরে ঢুকেই মশালের আলো এড়িয়ে একপাশে রাখা কিছু বস্তার মতো দেখতে জিনিসের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল শামান। হাতের ইশারায় নিজের লোকদেরকেও আড়াল নিতে বলে সে বস্তার আড়ালের একপাশ থেকে উঁকি দিল মূল গুহার দিকে। জায়গাটাকে গুহা না বলে এটাকে বলা উচিত মাঠ। কারণ প্রায় একটা মাঠের সমানই বড়ো গুহাটা।

গুহাটা প্রাকৃতিক সৃষ্টি আর মানুষের হাতের এক অদ্ভুত সমন্বয়। জায়গায় জায়গায় জ্বলতে থাকা মশালের কারণে এটার প্রাকৃতিক ও মানুষ সৃষ্ট সৌন্দর্য দুটোই বেশ ভালোভাবে ধরা পড়ছে শামানের চোখে। গুহাটার একপাশে কোনোার দিকে ওপর থেকে পানি গড়িয়ে এসে বিরাট আকারের এক ঝরনার মতো সৃষ্টি করেছে, সেটার শব্দে প্রায় ঢাকা পড়ে গেছে ভেতরের অন্যান্য শব্দ। ঝরনা দিয়ে বিরাট বেগে আসা পানির স্রোতের প্রায় পুরোটাই বয়ে চলেছে গুহার অন্যদিকে। গুহামুখটা একেবারে খোলা সেদিকে। খোলা অংশের নিচ দিয়ে জলধারা গড়িয়ে পড়ে বিরাট একটা জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে।

প্রায় মোচাকৃতির গুহাটার বাকি সবকিছু মানুষ্য সৃষ্টি। প্রাকৃতিক ঝরনাটার দিকে তাকাতেই শামান দেখতে পেল ওটার সামনে হাতে বানানো একটা মূর্তি। ছোটোবেলা থেকেই নানা ধরনের মূর্তি দেখেই বড়ো হয়েছে শামান কিন্তু এরকম বহু মাথাওয়ালা মূর্তি এর আগে কখেনো দেখেনি ও।

‘সর্প দেবতার মূর্তি,’ শামানের পাশ থেকে ফিস ফিস করে বলে উঠল ঘোষিত। উরগদের সর্প মাতা,’ ঘোষিত একেবারে ফিসফিসে গলায় বললেও তার দরকার ছিল না। কারণ পাহাড়ি ঝরনা আর জলপ্রপাতের তীব্র শব্দে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে অনান্য সব শব্দ।

শামান চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিল আবারো সাবধানে উঁকি দিয়ে গুহার দিকে ফিরে তাকাল। ঝরনার সামনে অবস্থিত মূর্তিটার ঠিক সামনেই দেখতে পেল একজন মানুষ উবু হয়ে বসে আছে, তাই লোকটাকে ঠিক বোঝা গেল না। মূর্তিটার সামনে থেকে ওর দৃষ্টি সরে গেল গুহার অন্য প্রান্তে। অদ্ভুত দেখতে চামড়ার আকৃতির পর্দা জোড়া লাগানো একটা জিনিস চোঙের মতো সরু হতে হতে গিয়ে ঢুকেছে একটা মাটির গোলচে চুলার মতো জিনিসের ভেতরে। অনেকটা এই জিনিসের মতোই কিন্তু ছোটো আকৃতি শামান এর আগেও দেখেছে লোহার কাজ করার দোকানে। কিন্তু সেগুলো আকারে অনেক ছোটো হয়ে থাকে, এটা ওগুলোর চেয়ে আকারে ঠিক তিনগুণ।

চুলার মতো জিনিসটার ওখানে কিছু শিকলের মতো ঝুলছে। সেইসঙ্গে ভারী জিনিস টেনে তোলার জন্যে গোল চাকা। শামানের দৃষ্টি চলে গেল শিকল দিয়ে আটকে রাখা মাথাটার অন্যপ্রান্তে। ওখানে শিকলের শেষ মাথায় ঝুলছে আগাগোড়া ধূসর কাপড়ের পট্টি দিয়ে মোড়ানো একটা বিরাট মূর্তি। জিনিসটাকে শিকলের গোল চাকতির শেষ প্রান্তে বসিয়ে টেনে নামানো হচ্ছে একটা কাঠের বিরাট বাক্সের ভেতরে।

‘বুদ্ধের অন্ধকারের অবতার,’ শামান আনমনেই বলে উঠল। কিন্তু ওর জন্যে আরো বড়ো চমক অপেক্ষা করছিল, মূর্তিটা কাঠের বাক্সের ভেতরে নামিয়ে ওটাকে ঢেকে ডালা বসিয়ে দিল দুজন উরগ সৈনিক। তাদের ঠিক উলটো দিকে দাঁড়িয়ে আছে একজন বয়স্ক মানুষ। কাঠের বাক্সের ওপরে ডালা বসানো হতেই মানুষটা মুখ ফেরাল এদিকে।

সঙ্গে সঙ্গে শামানের মনে হলো দম বন্ধ হয়ে আসছে ওর। মানুষটা আর কেউ না, ডুকপা লামা। ডুকপা লামার পরনে ভেড়ার পশমের তৈরি পোশাক। একটা লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। শেষবার ডুকপা লামার সঙ্গে শামানের দেখা হয়েছিল তিন বছর আগে। এই মুহূর্তে তাকে দেখে মনে হচ্ছে তিন বছরের হিসেবে তার বয়স বেড়ে গেছে অনেকটাই। চোখ দুটো একেবারে লাল হয়ে গর্তে ঢুকে আছে, যদিও ভারী পোশাকে ঢাকা শরীর কিন্তু তাতেও বোঝা যাচ্ছে বেশ রোগা-পাতলা হয়ে গেছে সে।

ডুকপা লামা আর বাক্সটাকে ঘিরে ছিল বেশ কয়েকজন উরগ সৈনিক। হঠাৎ তারা দুই ভাগে ভাগ হয়ে দুদিকে সরে গেল। কারণটা কী দেখার জন্যে ফিরে তাকাল শামান, একজন মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে ওদের দিকে। মানুষটাকে সামনে থেকে দেখতে না পেলেও পেছন থেকে তার পরনের পোশাক দেখা মাত্রই অনুমান করতে পারল শামান। এই মানুষটাই এতক্ষণ উবু হয়ে বসেছিল সেই সর্প মূর্তিটার সামনে। মানুষটা মূর্তি রাখা কাঠের বাক্সটার সামনে গিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে দেখে নিল একবার, তারপর সে হাসিমুখে ফিরে তাকাল ডুকপা লামার দিকে। এতক্ষণে মানুষটাকে ভালোভাবে দেখতে পেল শামান। দেখার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারল এই লোকটা একজন উরগ ওঝা। তার কপালে লাল কাপালিক চিহ্ন আঁকা, গলায় মোটা মালা আর হাতে একটা পাতলা কাঠের লাঠির মতো জিনিস ধরা।

শামান ভালোভাবে দেখার আগেই চোখ ফিরিয়ে নিল। অনেক দেখেছে এবার কাজে নামতে হবে। ঘোষিতের দিকে ফিরে ও বলল, ‘আমরা দুই দলে ভাগ হয়ে দুদিক দিয়ে এগোব। গুহার ভেতরে প্রহরীদের সংখ্যা খুব বেশি না। আমার মনে হয় না আমরা যদি সংঘবদ্ধভাবে আক্রমণ করি তবে তাদের কাবু করাটা অত বেশি ঝামেলার হবে।’

‘বাকিদের জন্যে অপেক্ষা-’ ঘোষিত কথা শেষ করার আগেই শামান বলে উঠল, ‘কোনো দরকার নেই বরং আমরা বেশি অপেক্ষা করলেই সমস্যা বাড়বে। তারচেয়ে এক্ষুণি কাজে নামতে হবে,’ বলে সে বুঝিয়ে দিল সবাইকে কিভাবে কী করতে হবে। তারপর দলের দুজনকে ঘোষিতের সঙ্গে দিয়ে বাকি দুজনকে নিয়ে ও রওনা দিল নির্দিষ্ট দিকে।

পরিকল্পনা খুব সহজ, গুহার ভেতরে উরগ প্রহরী যারা আছে বেশির ভাগই গুহার মাঝামাঝি ওঝা আর ডুকপা লামার কাছাকাছিই আছে। ওরা দুই দলে ভাগ হয়ে দুদিক থেকে আক্রমণ চালাবে। একদলে শামান আর একজন সৈন্য তলোয়ার হাতে আক্রমণ করবে, অন্যদলে ঘোষিত আর অন্যজন প্রহরী একইভাবে তলোয়ার হাতে আক্রমণ চালাবে, দুই দলেই বাকি একজন তিরন্দাজ ওদেরকে পেছন থেকে সহায়তা করবে।

শামান নিজের দলের লোকদেরকে নিয়ে গুহার অন্ধকারের আড়াল নিয়ে চলে এলো সেই প্রাকৃতিক ঝরনার কাছাকাছি। ওটার পানির স্রোতের আড়ালে নিজেদেরকে লুকিয়ে ফেলল ওরা। ঝরনার রাশি রাশি পানির আড়াল থেকে আবছাভাবে দেখতে পেল সেই ওঝা লোকটা ডুকপা লামাকে নিয়ে বড়ো সর্প মূর্তিটার দিকে এগিয়ে আসছে। শামান নিজের লোকদেরকে ইশারায় সাবধান করে দিয়ে নিজের কাতানার হাতল শক্ত করে চেপে ধরল আঙুলগুলো। ওরা আরেকটু এগিয়ে এলেই আক্রমণ চালাবে ও।

সামনে এগোতে এগোতে হঠাৎ থেমে গেল তারা। অনেক লোকজনের পায়ের আওয়াজ ভেসে এলো জলগুহার প্রবেশ পথের কাছ থেকে। শামানও সেদিকে তাকিয়ে দেখতে পেল প্রায় আধ ডজন প্রহরীসহ কেউ একজন প্রবেশ করেছে গুহার ভেতরে। জলধারার আড়াল থেকে ঠিক পরিষ্কার দেখতে না পেলেও এটা বুঝতে পারল কিছু একটা হয়েছে।

রাজা হেমচন্দ্র এসময়ে গুহায় কেন?’ পাশ থেকে ওর দলের একজন কথা বলে উঠল। শামান চমকে উঠে তার কাছে জানতে চাইল, ‘তুমি নিশ্চিত ওটা রাজা হেমচন্দ্ৰ?’ সৈনিক মাথা নেড়ে হ্যাঁ-সূচক জবাব দিল। শামান অবাক হয়ে ফিরে তাকাল সেদিকে। ওর সমস্ত পরিকল্পনা উল্টে-পাল্টে গেছে রাজার আগমনে। রাজা হেমচন্দ্র নিজের প্রহরীদের নিয়ে সোজা চলে গেল সেই বাক্সটার কাছাকাছি। সেটাতে চোখ বুলিয়ে নিয়ে ডুকপা লামার কাঁধে একটা হাত রেখে হাসিমুখে কিছু একটা বলে উঠল। ডুকপা লামা কোনো জবাব দেয়ার আগেই জোরে চাপ দিয়ে তাকে বসিয়ে দিল হাঁটু গেড়ে। প্রহরীদের ভেতরে কেউ একজন একটা বিরাট তলোয়ার এগিয়ে দিল রাজার দিকে। শামান নিজের অজান্তেই এক পা এগিয়ে গেল সামনের দিকে।

‘আমাদেরকে এক্ষুণি আক্রমণ করতে হবে,’ শামানও বের করে এনেছে নিজের কাতানা। কিন্তু রাজা হেমচন্দ্র তলোয়ারটা বাগিয়ে ধরে চিৎকার করে ভাঙা গলায় কিছু একটা বলে উঠল।

‘হুজুর, ওরা জানে আমরা এখানে আছি,’ শামানের পাশ থেকে ওর সৈনিকদের একজন বলে উঠল। ‘এক্ষুণি আমরা আত্মসমর্পণ না করলে তবে ওরা বুড়ো মানুষটাকে মেরে ফেলবে।’ সৈনিকের কথা পুরোপুরি শেষ হবার আগেই পানির জলধারা ভেদ করে লাফিয়ে গুহার মেঝেতে নেমে গেল শামান।

‘আমি আত্মসমর্পণ করছি,’ বলে ও নিজের হাতের কাতানাটা বাড়িয়ে ধরে এগিয়ে গেল সামনের দিকে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *