প্রথম অংশ : অন্তর্ধান
দ্বিতীয় অংশ : অন্ধকারের অবতার
1 of 2

ব্ল্যাক বুদ্ধা – ৩

অধ্যায় তিন – বর্তমান সময়
মার্শল্যান্ড এরিয়া, স্কটল্যান্ড

জলাভূমির ওপরে ভারী পর্দার মতো ঝুলে থাকা কুয়াশার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তানভীর। শক্তিশালী পলিমারে তৈরি হালকা গ্লাভস পরা বাঁ হাতের একটা আঙুল তুলে কুয়াশার ভেতরে সামান্য নাড়া দিল ও। ঘোলা পানির ভেতরে হাত নাড়লে যে-ধরনের অনুভূতি হয় অনেকটা সেরকম একটা অনুভূতি হলো।

‘শালারা কী জিনিস বানিয়েছে দেখেছো?’ ওর পাশ থেকে এক সহযোদ্ধা বলে উঠল। তানভীর তাকিয়ে দেখল ওরই মতো একইরকম গ্লাভস পরা হাতের তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে সে ঝিঁঝি পোকার মতো দেখতে একটা পোকা চেপে ধরে রেখেছে।

‘অবস্থা দেখেছো, তানবীর?’ লোকটা আইরিশ উচ্চারণে ‘ব’ আর ‘ভ’কে আলাদা করতে পারে না, যে কারণে নামের এই বিকৃত উচ্চারণই মেনে নিতে হচ্ছে তানভীরকে। লোকটার অবশ্য অন্য কোনোদিকে খেয়াল নেই। সে হাতে ধরা কৃত্রিম পোকাটা নিয়ে ব্যস্ত।

‘ইটস, সো রিইয়ে…ল,’ বলে সে দুই আঙুল ফাঁক করতেই উড়ে চলে গেল পোকাটা। ‘হ্যাভ ইউ সিন ইট?’ তার বিস্মিত প্রতিক্রিয়া তানভীরের চোখে ধরা পড়ল না মুখের মাস্ক আর চোখের নাইট ভিশনের কারণে।

সহযোদ্ধার বিস্ময়ের জবাব না দিয়ে বরং তার দিকে একটা আঙুল তুলে সামনের দিকে ইশারা করল তানভীর। ‘উইলিয়াম, এসব আজেবাজে জিনিসে মনোযোগ না দিয়ে তোমার বরং সামনের দিকে নজর দেয়া উচিত,’ এটুকু বলে ও কুয়াশার ভেতর দিয়ে ভেসে আসা আবছা আলোর দিকে দেখাল। শীতকালে রাতের বেলা মাঝনদীতে টর্চ জ্বাললে যেমন দেখায় অনেকটা সেরকম দেখতে ঘোলাটে একটা আলো ভেসে আসছে সামনে থেকে। জলাভূমির ওপরে ভেসে থাকা কুয়াশার ঘন স্তরের ভেতর দিয়ে ভেসে আসা আলো একটু প্রাণের আভাস দিচ্ছে ওদেরকে।

বাংলাদেশি তানভীর আর আইরিশ উইলিয়াম এই মুহূর্তে বসে আছে স্কটল্যান্ডের কুখ্যাত এক জলাভূমির ভেতরে। এরকম অদ্ভুত জলাভূমি অদ্ভুত কাদা আর এমন পর্দার মতো ঘন কুয়াশা এর আগে কখনো দেখেনি বাংলাদেশের ছেলে তানভীর মালিক। ওর পাশে বসা উইলিয়ামের অবস্থাও অনেকটা একইরকম। এই গভীর রাতে ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ জলাভূমিতে ওদের অবস্থান নিতে হয়েছে বিশেষ একটা অপারেশনের কারণে। ওদের কাছে খবর আছে কুখ্যাত এক সন্ত্রাসী এই বাড়িতেই আত্মগোপন করে আছে। যাকে ধরার জন্যে জার্মান পুলিশ আর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের এই যৌথ অপারেশান।

উইলিয়ামকে সাবধান করে দেবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কানে লাগানো এয়ার পিসের ভেতর থেকে ভেসে এলো অপারেশন কমান্ডারের ভারী গলা। ‘উইলি, এখানে ফালতু আলাপ করার জন্যে তোমাদের ডেকে পাঠানো হয়নি। নিজের কাজে মনোযোগ দাও। যেকোনো সময়ে এয়ার সাপোর্ট ব্যাকআপ কনফার্ম করা মাত্রই অপারেশন শুরু করা হবে। কাজেই প্রস্তুত থাকো।

কমান্ডারের সাবধানবাণী শেষ হতেই উইলির দিকে তাকিয়ে সামান্য মাথা নাড়ল তানভীর। ভাবটা এমন, যেন বলছে আমি আগেই সাবধান করে দিয়েছিলাম। ওর মাথা নাড়ার জবাবে উইলিও চোখ মটকাল, যদি দুজনার কেউই কারো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখতে পেল না তবে দুজনেই একে-অপরের টিটকিরি অনুভব করে নিল। পরনের পলিমারের বুলেট প্রুফ জ্যাকেটের গায়ে একবার হাত ঘষে নিয়ে হাতের স্টান-সাবমেশিনগানের হাতলটা শক্ত করে ধরল তানভীর।

পা থেকে মাথা পর্যন্ত অত্যাধুনিক সব কমান্ডো আউটফিট আর অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আছে ও। কাপড়ের চেয়েও হালকা স্পেশাল পলিমারের বুলেটপ্রুফ ভেস্ট, কার্বনের লাইট-ওয়েট ছুরি, লেজার বিমের কাটার, ফগ স্টিমুলেটেড নাইট ভিশন এসবের লেটেস্ট ভার্সন তো আছেই সেইসঙ্গে অবাক করার মতো একটা অস্ত্র আছে ওদের সঙ্গে।

অস্ত্রটা দেখতে হুবহু সাবমেশিনগানের মতো, কিন্তু সাবমেশিনগানের সঙ্গে এটার একটা পার্থক্য হলো, এটাতে সাবমেশিনগানের মতো গুলি বের হবার জন্যে কোনো ব্যারেল নেই বরং এটার সামনের অংশ দেখতে অনেকটা সাধারণ টিভি রিমোটের সামনের অংশের মতো। ট্রিগারে চাপ দিলে ওটার সামনের অংশ দিয়ে খুব হালকা স্ফুলিঙ্গের মতো দেখতে একটা জিনিস বেরিয়ে যায়। ওটা আসলে বিদ্যুৎ। বিশেষ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎকে ছোটো ছোটো ইউনিটে বন্দি করে ছুড়ে দেয়া হয় প্রতিপক্ষের গায়ে।

সাধারণ সাবমেশিনগানের যে জায়গাটাতে সেফটি লক থাকে সেখানে এটাতে সেফটি লকের পরিবর্তে ছোটো একটা মেজারমেন্ট ইউনিট দেয়া আছে। ওটা দিয়েই নির্ধারণ করা যায় কতটুক শক্তির বিদ্যুৎ ছুড়ে দেয়া যাবে প্রতিপক্ষের গায়ে। মোটামুটি দশ থেকে পঞ্চাশ ইউনিটের যেকোনোটা ছুড়ে দিলেই তাৎক্ষণিক জ্ঞান হারানো থেকে শুরু করে শরীরের নির্দিষ্ট অংশ অচল হয়ে যাওয়া, এমনকি সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো সম্ভব। অস্ত্রের দুনিয়ায় একেবারে আধুনিক সংযোজন এই জিনিসটা তুলে দেয়া হয়েছে ওদের হাতে। কারণ অপারেশনটার গুরুত্বও অপরিসীম।

তানভীর বাঁ হাতের কবজির কাছে লাগানো ঘড়ির মতো দেখতে একটা জিনিসে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। ঘড়ির মতো দেখতে জিনিসটা আসলে একটা ছোটো একটা অবজার্ভেশন ইউনিট। এটাতে প্রত্যেকের অবস্থানসহ পুরো অপারেশনের আউটলেটের ইনপুট দেয়া আছে। শেষবারের মতো আরেকবার দেখে নিল ও আউটলেটটা।

চারপাশে বিস্তৃত জলাভূমির ঠিক মাঝখানে একেবারেই নির্জন জায়গায় এই বাড়ি। তথ্য অনুযায়ী এতেই বর্তমানে অবস্থান করছে অবসরপ্রাপ্ত কুখ্যাত ফরাসি খুনি ও বর্তমান ড্রাগ লর্ড সারভান্সে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড আর এফবিআইয়ের যৌথ অপারেশনটা সাজানো হয়েছে খুব সংক্ষেপে ও সাবধানে। বাড়িতে প্রবেশের ও বেরোবার দুটো রাস্তা আছে। সে দুটোকে এই মুহূর্তে কভার করে একদিকে তানভীর আর উইলিয়াম অন্যদিকে কমান্ডার ও তার সঙ্গে আরেকজন। এর পাশাপাশি বাড়িটার দেয়ালের কাছে এই মুহূর্তে অবস্থান করছে আরো দুজন। মোট ছয়জন মিলে অপারেশটা চালানো হবে। এই মুহূর্তে ওরা অপেক্ষা করছে ওপর থেকে এয়ার সাপোর্টের।

এয়ার সাপোর্ট বলতে ড্রোন। ওদের অস্থায়ী অপারেশন সেন্টার থেকে দুটো ড্রোন ফ্লাই করার কথা, ওদেরকে ভিজুয়্যাল দেয়ার জন্যে। তানভীর ওপরে দেখার জন্যে মাথা তুলতেই বিল্ট-ইন এয়ারফোনে কমান্ডারের গলা ভেসে এলো।

‘এয়ার সাপোর্ট ইজ হেয়ার,’ কমান্ডারের গলা শোনা মাত্রই উইলি আর তানভীর দুজনেই নিজেদের কবজির ঘড়ির মতো ইউনিটটা ওপেন করল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একটা ঘোলাটে ছবি ভেসে উঠল ইউনিটে।

‘কিছুই তো বোঝা যাচ্ছে না,’ কুয়াশার কারণে ড্রোন থেকে পাঠানো ইমেজ একেবারেই ঘোলাটে দেখাচ্ছে। তবে ধীরে ধীরে ঘোলাটে ভাবটা কেটে গিয়ে সম্পূর্ণ বাড়িটার একটা ছবি ফুটে উঠল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আবারো ভেসে এলো কমান্ডারের গলা।

‘স্কট আর ম্যাথিউ পশ্চিম দিক থেকে বাড়িতে প্রবেশের পথ প্রায় পরিষ্কার করে ফেলেছে। ওরা ক্লিন সিগন্যাল দিতেই তানভীর আর উইলি ওদের সঙ্গে বাড়িতে প্রবেশ করবে। একই সময়ে আমি আর জেরি পূর্ব দিকের ছোটো গেটটা টপকে ভেতরে ঢোকার পর প্রথমে গ্রাউন্ড ফ্লোর ক্লিয়ার করবে তোমরা তিনজন, আর বাকি দুজনকে নিয়ে আমি ওপরে যাব। রিমেমবার, বি কেয়ারফুল অব বডি সেন্সর। আমরা কাউকে মারবোও না আবার পালিয়েও যেতে দেব না। আমি আবারো বলছি…’ কমান্ডারের কথা শেষ হবার আগেই কারো চিৎকার শোনা গেল সেইসঙ্গে ধুপ করে একটা শব্দ। ওদের সবুজে স্ক্রিন ঘোলাটে হয়ে গেল।

হলি শিট… হচ্ছেটা কি?’ উইলির প্রশ্ন শেষ হবার আগেই কমান্ডারের গলা ভেসে এলো আবারো।

‘ওরা আমাদের দুটো ড্রোনের একটাকে শুট করেছে। তারমানে ওরা টের পেয়ে গেছে আমাদের উপস্থিতি। গো গো গো…’

‘ছাতার মাথা,’ রাগের চোটে দেশি ভাষায় চেঁচিয়ে উঠল তানভীর। সেইসঙ্গে একলাফে কাঁদাটে পানি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়াতে শুরু করল। ওকে অনুসরণ করল উইলি। দেয়ালের প্রায় কাছাকাছি পৌছে দেখল স্কট আর ম্যাথিউ দেয়ালের ওপরে কাঁটাতারের বেড়া অনেকখানি সরিয়ে চড়ে বসেছে ওপরে। ওরা কাছাকাছি পৌঁছাতেই একজন লাফিয়ে পড়ল অন্যপাশে। দ্বিতীয়জনও ঠিক একইভাবে অনুসরণ করল প্রথমজনকে!

‘উইলি, তুমি আগে,’ বলেই দুই হাত জড়ো করে ধরল ও। ওর দিকে একবার মাথা নেড়ে একটা পা তানভীরের জড়ো করা দুই হাতের ওপরে তুলে দিল। তানভীর জোরে একটা ঠেলা দিল ওপরের দিকে। এক লাফে উইলি উঠে গেল দেয়ালের ওপরে। উইলি ওপরে উঠতেই. দ্রুত বেগে কয়েক পা পিছিয়ে এলো তানভীর। বিদ্যুৎবেগে দৌড় দিয়ে লাফিয়ে উঠল দেয়ালের দিকে। ওর একটা হাত ধরে ফেলল উইলি। তানভীর উঠে বসতেই দুজনেই প্রায় একসঙ্গে লাফিয়ে নেমে এলো দেয়ালের অন্যদিকে।

ওরা নামার সঙ্গে সঙ্গেই কয়েক রাউন্ড গুলি এসে লাগল আশপাশে। ছোটো একটা ঘরের পেছনে আড়াল নিল দুজন। ওটার অন্যপাশে দেখতে পেল স্কট আর ম্যাথিউ বসে আছে। ওরা আড়াল নিতেই আঙুল দিয়ে বিশেষ একটা ইশারা করল স্কট। মাথা নাড়ল তানভীর।

স্কট মাথা বের করে নিজের পিস্তল বের করে কয়েক রাউন্ড আলগা গুলি করল। অন্যপাশ থেকে নিজের স্টান-সাবমেশিন দিয়ে দোতলার একটা ছায়াকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দিল তানভীর। স্কটের গুলিগুলো ছিল কভার। তানভীর গুলি করতেই ও দেখল ছোটো একটা স্পার্কের মতো বেরিয়ে গেল সাবমেশিনটা থেকে। আর অন্যপাশে গুলি করতে থাকা ছায়াটা চিৎকার করে পড়ে গেল মাটিতে।

‘বাহ, দারণ তো,’ আনমনেই বলে উঠল তানভীর I

‘আসলেই দারুণ, কিন্তু কিভাবে সম্ভব?’ উইলি আবারো বলে উঠল। সে ছোটো ঘরটার ততোধিক ছোটো দরজা দিয়ে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখছে। জায়গাটা একটা ছোটো খোঁয়ার। ভেতরে এক দঙ্গল মুরগি কল-কল করছে। ‘শালারা মুরগিও বানিয়েছে!’

‘উইলি, চলো,’ বলে ওকে নিজের কনুই দিয়ে মৃদু একটা গুঁতো দিয়ে ঘরের আড়াল থেকে উঠে দাঁড়াল তানভীর। একবার চেক করে নিল স্টান সাবমেশিনের পাওয়ার রেঞ্জ। ঠিকই আছে, মনে হলো। দুই পাশে তাকিয়ে দেখল ওর সঙ্গে আছে বাকি তিনজন। আঙুলের ইশারায় আরেকটু ছড়িয়ে পড়ে এগোতে বলল ওদেরকে। একে অপরের থেকে চার ফিট দূরত্ব রেখে ওরা বাড়িটার দিকে এগোতে লাগল। বাড়ির এখানে-ওখানে লোকজনের নড়া চড়া আর হাঁক-ডাক শোনা যাচ্ছে। তবে তানভীর অনুমান করল বাড়ির ভেতরে লোক সংখ্যা খুব বেশি হবে না।

ভেতর থেকে দৌড়ে বের হয়ে এলো আরেকজন। সঙ্গে সঙ্গে উইলি গুলি করল তাকে। গুলির শব্দের সঙ্গে সঙ্গে উইলির উচ্ছ্বাস ধ্বনি বেরিয়ে এলো গলা দিয়ে। মৃদু হেসে উঠল তানভীর। বাড়ির ভেতরে কয়জন থাকতে পারে একটা অনুমান করে কমান্ডারকে বলতে যাবে তার আগেই কমান্ডারের অস্পষ্ট গলা ভেসে এলো, সে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে যাচ্ছে পেছন দিয়ে।

নিজের সঙ্গীদেরকে দ্রুত এগোতে বলল তানভীর। এরমধ্যে ও আরো দুজনকে ওরা ঘায়েল করেছে স্টান-সাবমেশিন দিয়ে। বাড়িটার দরজার কাছে এসে থেমে গেল তানভীর। খোলা দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে মন সায় দিচ্ছে না ওর। এসব মিশনে খুব সহজে কিছু হওয়া ওর ঠিক পছন্দ নয়। তবে ও মানা করার আগেই উইলি ভেতরে ঢুকেই গুলি খেয়ে পড়ে গেল। ধুপ-ধাপ আরো কয়েকটা গুলি ভেসে এলো খোলা দরজা দিয়ে। একবার পিছিয়ে গিয়েও থেমে গেল তানভীর

সময় নেই, ভেতরে যেকোনো সময় কমান্ডারের সাহায্য দরকার হতে পারে। ও স্কটের দিকে একবার ইশারা করেই মাটিতে ডাইভ দিয়ে ঢুকে পড়ল দরজার ভেতরে। সোজা হয়ে দেখল দুজন ওত পেতে বসে আছে সিঁড়ির কাছে। সোজা একজনের কপালে গুলি করল ও। অন্যজনকে সরাসরি শরীরে গুলি না করে গুলি করল সিঁড়ির রেলিংয়ে। লোকটা সিঁড়ির স্টিলের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে বসে ছিল, তীব্র কারেন্টের ধাক্কায় সঙ্গে সঙ্গে জিভ বেরিয়ে এলো তার।

দুজনকেই নিকেশ করে মাটিতে পড়ে থাকা উইলির দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দিল ও। গুলি খেয়ে পড়ে গেলেও পলিমারের বুলেট প্রুফ জ্যাকেটের কারণে তেমন কিছু হয়নি তার। স্কট আর ম্যাথিউও প্রবেশ করল ভেতরে। এমন সময় ওপর থেকে ভেসে এলো তীব্র চিৎকার। চারজনেই দৌড় দিল ওপরের দিকে। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে ওরা ছুটে গেল চিৎকার লক্ষ্য করে। ওপরে উঠতেই বড়ো একটা কামরার বাইরে একজনকে অস্ত্র তুলতে দেখে তাকে ফেলে দিল ম্যাথিউ। তিনজনকে তিনদিকে ছড়িয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়ে ও নিজে প্রবেশ করল বড়ো কামরাটায়।

উত্তেজনায় শরীরের প্রত্যেকটা লোম দাঁড়িয়ে গেছে ওর। ভেতর থেকে ভেসে আসছে হুটোপুটির শব্দ। সাবধানে কামরায় প্রবেশ করল ও। ভেতরে ঢুকে দেখতে পেল কমান্ডারের সঙ্গী পড়ে আছে মাটিতে। তাকে টপকে আরেকটু এগোতে বেডরুমের লাগোয়া বারান্দায় দেখতে পেল কমান্ডার আর অন্য এক লোক হাতাহাতি লড়াই করছে। লোকটাকে দেখে চিনতে না পারার কোনো কারণ নেই।

সারভান্সে।

তানভীর ঝেড়ে দৌড় দিল বারান্দার দিকে কিন্তু জায়গামতো পৌঁছানোর আগেই কমান্ডার আর সারভান্সে জড়াজড়ি করে পড়ে গেল বারান্দার রেলিং টপকে।

তানভীর দৌড়ে গিয়ে দেখল দুজনেই ছিটকে পড়েছে নিচের টালি করা বারান্দার চালের ওপরে, সেখান থেকে ছিটকে পড়ল আঙিনাতে।

‘শিট,’ আনমনেই বলে উঠল ও। নিজের সঙ্গীদের নিচে নামতে বলে খানিকটা পিছিয়ে এসে দৌড় দিল ও। রেলিং টপকে শূন্যে লাফ দিল ও। শরীরটাকে যথাসম্ভব গুটিয়ে বিশেষ একটা কায়দায় নিয়ে এলো। এতে করে পতনের ধাক্কা কম লাগবে। তবে কায়দায় খুব একটা কাজ হলো না। বারান্দার টালি করা ছাদের ওপর পড়ে মনে হলো হাড় সব গুঁড়িয়ে গেছে। একটা গড়ান দিয়ে টালি থেকে লাফিয়ে নামল ফিট আটেক নিচের আঙিনাতে।

মাটিতে পড়েই অস্ত্র তুলল ও। একগাদা ভাঙা টালি আর রক্তের ছিটে দেখা গেল মাটিতে।

কারো চিহ্নমাত্র নেই। অস্ত্র তুলে সাবধানে আরেকটু এগোল ও। একদিকে বাড়ির দরজা, অন্যদিকে একটা গ্যারাজের দরজা হাট করে খোলা। কোনটার দিকে এগোবে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই গ্যারেজের খোলা দরজা দিয়ে ছিটকে বেরিয়ে এলো একটা পিকআপ। আরেকটু হলেই মাড়িয়ে দিতে যাচ্ছিল ওকে। একেপাশে লাফিয়ে সরে গিয়ে অস্ত্র তুলল ও।

পিকআপটা বাড়িটার মূল গেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ওটার দোদুল্যমান অবস্থা দেখে বুঝল, ওটার সামনের অংশে সম্ভবত কমান্ডার আর সারভান্সে দুজনেই এখনো লড়াইয়ে ব্যস্ত।

স্টান সাবমেশিনটা খাপে রেখে কোমর থেকে আসল পিস্তল বের করে আনল তানভীর। মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল ও। পিস্তল তুলে টানা কয়েকটা গুলি করল পিকআপের নির্দিষ্ট একটা পয়েন্ট লক্ষ করে। ওটা এমনিতেই টাল-মাতাল অবস্থায় ছিল, গুলি খেয়ে সোজা ধেয়ে গেল দেয়ালের দিকে। বাড়ি খেয়ে থেমে গেল ওখানেই। পিস্তল রেখে স্টান সাব তুলে নিয়ে রেডিওতে বাকি সঙ্গীদেরকে সাবধান করতে-করতে দৌড় দিল ও। পিকআপটা ঘিরে ধোঁয়ার আস্তরণ, সেটা পরিষ্কার হতেই আঁতকে উঠল তানভীর।

পিকআপের খোলা দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসেছে দুজন মানুষ। এই মহূর্তে রক্তাক্ত সারভান্সের হাতে একটা পিস্তল। সেটা সে চেপে ধরে রেখেছে আহত কমান্ডারের মাথার পাশে।

তানভীর এগিয়ে যেতেই ওর দিকে তাকিয়ে বিভৎস ভঙ্গিতে হেসে উঠে রক্তাক্ত থুতু ফেলল সে। ‘কিছু বলব, ছোকরা? সিনেমার কোনো ডায়লগ?’ বলে সে আবারো হেসে উঠল সে।

‘দরকার নেই, এরকম ডায়লগ আমি বহু শুনেছি,’ বলেই গুলি করল তানভীর। সারভান্সেকে নয় বরং কমান্ডারকে।

নির্দিষ্ট পরিমাণ ভোল্টেজের গুলি কমান্ডারের গায়ে লাগতেই কমান্ডারের চোখ উল্টে গেল। সেইসঙ্গে তাকে ধরে থাকা সারভান্সেও একই পরিমাণ ভোল্টেজের শক খেয়ে ছেড়ে দিল কমান্ডারকে। স্টান-সাবটা ছেড়ে দিয়ে একটানে কোমর থেকে আসল পিস্তল বের করে সারভান্সের পায়ে গুলি করল তানভীর।

গুলি খেয়ে মাটিতে পড়ে কাতরাতে থাকা সারভান্সের কাছে কাছে এসে তার পায়ের ক্ষততে পা দিয়ে চাপ দিল তানভীর। মুখে বলে উঠল, ‘এবার আমি কিছু বলব, গডফা-দা-র…’

ওর কথা শেষ হবার আগেই চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হতে শুরু করল। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো দুলতে লাগল সব। সেইসঙ্গে ধাতব একটা শব্দ। ওর কান ঝাঁ-ঝাঁ করে উঠল তালির শব্দে। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আপনাতেই তানভীরের হাত চলে গেল মাথার দুই পাশে লাগানো ভার্চুয়াল স্টিমুলেটরটাতে। হাতে ধরে ওটাকে টান দিতে যাবে, কেউ ওর হাত চেপে ধরল। ‘ধীরে ধীরে…’ বলেই কপালের পাশ থেকে আলতোভাবে টান দিয়ে স্টিমুলেটরটা খুলে নিতেই অ্যান্টিসেপ্টিকের গন্ধ নাকে এসে লাগল। ‘ধীরে ধীরে চোখ খুলুন, ‘ শেষ কথাটা না বললেও চলত। কারণ এরই মধ্যে চোখ খুলে ফেলেছে ও। আলো খুব অল্প তাই চোখে আলোর ধাক্কা লাগল না কিন্তু গা গুলানো একটা ভাবের সঙ্গে ওর মনে হলো পেটের সবকিছু উগড়ে দেবে। দাঁতে দাঁত চেপে ধরল ও।

এখনো বাস্তব জগৎ আর ভার্চুয়াল জগতের ভেতরে পরিভ্রমণের ভেতরে রয়েছে ওর মস্তিষ্ক। শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেও বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে মস্তিষ্কের কিছুটা সময় প্রয়োজন। ওরা এইমাত্র যে অপারেশনটা সম্পন্ন করল সেটা পুরোটাই কৃত্রিম ভার্চুয়াল সেটিংয়ে বানানো।

বর্তমান উন্নত বিশ্বে যেকোনো পুলিশ কিংবা মিলিটারি ট্রেনিংয়ে সত্যিকারের অপারেশনে যাবার আগে এই ধরনের ভার্চুয়াল ট্রেনিং দেয়া হয়ে থাকে। পুরো অপারেশরটাই সাজানো হয় কৃত্রিমভাবে। সমস্ত ইনপুট দেয়ার পরে অপারেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের মাথার পাশে লাগানো হয় ভার্চুয়াল স্টিমুলেশন সেন্সর। এরপর তাদেরকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় একেবারেই বাস্তবের মতো অপারেশন সম্পন্ন করতে হয়। তানভীরদের অপারেশনটাও ছিল সেরকমই একটি ভার্চুয়াল স্টিমুলেশন প্রোগ্রাম।

চোখের সামনেই ডাক্তারি কোট পরা সোনালি চুলের একজন মানুষকে দেখতে পেল ও; গোল গোল চশমার ভেতর দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তার পাশেই দাঁড়িয়ে আরেকজন নোট নিচ্ছে একটা ছোট্ট প্যাডে। ‘রিল্যাক্স মাই বয়, বড়ো বড়ো নিশ্বাস নাও। ঠিক হয়ে যাবে। তোমার মস্তিষ্ক এখনো ভার্চুয়াল জগৎ থেকে বাস্তব জগতে ফিরে আসার ভ্রমণটা সম্পন্ন করে উঠতে পারেনি। কাজেই…’ ডাক্তারের কথা পুরোপুরি শুনতে পাচ্ছে না তানভীর ও দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বমি সামলাতে ব্যস্ত। একটু ধাতস্থ হতেই কেউ একজন পানির বোতল ধরিয়ে দিল ওর হাতে। পানি খেয়ে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এলো।

আশপাশে তাকিয়ে দেখল ওর দুই পাশে অনেকগুলো চেয়ারে একটু আগের ভার্চুয়াল অপারেশনের সবাই আধশোয়া হয়ে আছে। দুয়েকজনকে দেখতে পেল সামনে রাখা পটে বমি করছে। খক খক করে কাশছে কয়েকজন। নিজে স্বাভাবিক হয়ে হেলান দিল চেয়ারে। মুখে ফুটে উঠল মৃদু হাসি।

‘ওয়েলকাম মাই বয়, হায়েস্ট ডিগ্রি ভার্চুয়াল স্টিমুলেশন অপারেশন সাকসেসফুল করে ফিরে আসার জন্যে,’ ওর সামনে দাঁড়ানো সোনালি চুলের সেই ডাক্তার হাসিমুখে বলে উঠল।

‘ইট ওয়াজ ফাকিং রিয়েল, সো ফাকিং রিয়েল…’ ওর পাশ থেকে উইলি বলে উঠল। ‘আমি কুয়াশা পর্যন্ত ফিল করতে পারছিলাম। ঝিঁঝি পোকা, এমনকি খোঁয়ারের ভেতরে শালার ফাকিং মুরগিগুলো পর্যন্ত সত্যিকারের লাগছিল…’ উইলি কথা শেষ করার আগেই তার পাশ থেকে বিদ্যুৎবেগে এগিয়ে এসে সপাটে তানভীরের কাঁধে একটা চড় মারল অপারেশন কমান্ডার।

ব্লাডি সোয়াইন, ইউ শট মি,’ দুই হাতে ধরে শক্ত করে ওকে চেয়ার থেকে তুলে দাঁড় করিয়ে দিল ওদের কমান্ডার। ‘সাহস কত বড়ো! আমাকে গুলি করেছে সে,’ সত্যিই কমান্ডারের বিস্ময় বাঁধ মানছে না। দলের অন্যদের দিকে তাকিয়ে অভিযোগের স্বরে বলে উঠল সে, ‘তিন মাস ধরে ট্রেনিং দিলাম আমি, আর সে কি না…’ কমান্ডারের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছে তানভীর।

‘তুমি এই কথা বলছো কমান্ডার, এই কালুয়া আমার পায়ে গুলি করেছে, তারপর আবার জুতো দিয়ে চেপে ধরেছে… অন্যপাশ থেকে পায়ের পাজামা তুলে হাঁটুর নিচের লাল দাগ দেখাচ্ছে সরকারের বিশেষ ক্ষমাপ্রাপ্ত সাবেক ড্রাগ লর্ড ও বর্তমান স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের ট্রেনিং প্রোগ্রামের অফিসার সারভান্সে।

‘ও মাই গড, ইটস রিয়েল,’ তানভীরসহ সবাই অবাক হয়ে সারভান্সের লালচে হয়ে ওঠা জায়গাটা দেখতে দেখতে বলে উঠল। আরো দুয়েকজন নিজেদের এরকম আঘাতের চিহ্ন দেখাতে লাগল।

‘ব্যথা ও আঘাতগুলো আমাদের মস্তিষ্কে বাস করে আর এ ধরনের ভার্চুয়াল স্টিমুলেশন তো সম্পূর্ণ মস্তিষ্কেরই ব্যাপার। এ কারণেই…’ ডাক্তার ব্যাখ্যার সুরে আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল তার আগেই একাধিক মানুষের পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল। সর্বোচ্চ হাই কমান্ডের লোকজন ল্যাবে প্রবেশ করতেই ওরা সবাই সটান দাঁড়িয়ে গেল। ইংল্যান্ডসহ আরো বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মোট এগারোজন ট্রেইনি অফিসার। গত তিনমাস ধরে ওরা সবাই এই বিশেষ ট্রেনিং প্রোগ্রামে ট্রেনিং নিচ্ছে।

‘কনগ্রাচুলেসন্স বয়েজ, প্রথমবারের মতো রিয়াল ভার্চুয়াল স্টিমুলেশন অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্যে,’ বলেই চিফ ট্রেইনিং প্রোগ্রাম অফিসার তানভীরের দিকে ফিরে বলে উঠল। ‘অফিসার তানভীর মালিক, ইউ রিয়েলি ডিড আ গুড জব দেয়ার,’ বলে সে একটা ট্যাব থেকে পড়তে লাগল। ‘ইন্সট্যান্ট ডিসিশন মেকিং, সাহসিকতা ও দক্ষতার জন্যে সর্বোচ্চ মার্ক পেয়েছো তুমি,’ চিফ এই পর্যন্ত বলতেই সবাই তালি দিয়ে উঠল। ‘তবে, অপারেশনের নিয়ম ভাঙার জন্যে অনেক মার্কস কেটে নেয়া হয়েছে তোমার। এ কারণেই আজকের অপারেশনে কমান্ডো টিমে সর্বোচ্চ মার্কস পেয়ে প্রথম হয়েছে…’ চিফ অফিসার একে একে সবার নাম ঘোষণা করে গেল। ব্রিফিং শেষে সে জানাল ট্রেনিংয়ের এই শেষ পর্যায়ে এরকম আরো দুটো ভার্চুয়াল প্রোগ্রামে অংশ নিতে হবে ওদেরকে। সবশেষে একটা সত্যিকারের অপারেশনের পর সম্পন্ন হবে ওদের ট্রেনিং প্রোগ্রাম

ওরা ল্যাব থেকে বেরিয়ে আসার সময় ওর কানের কাছে মুখ এনে ফরাসি টানে সারভান্সে বলে উঠল, ‘তুমি একটা সত্যিকারের হারামি,’ দাঁত বের করে তার দিকে নিজের মধ্যাঙ্গুলি প্রদর্শন করতে যাচ্ছিল তার আগেই চিফ কমান্ডার ডাক দিল ওকে।

দলের বাকিদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ও চলে এলো চিফের রুমে। গত কয়েক মাসের ট্রেনিংয়ে দলের সদস্যদের সঙ্গে তো বটেই চিফের সঙ্গেও বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ও।

‘হ্যালো, চিফ, তার রুমে প্রবেশ করে একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে উঠল ও।

‘হ্যালো, তানভীর… আজকের অপারেশনে তোমার পারফরমেন্স সত্যি অতুলনীয় ছিল। ট্রেনিংয়ের শুরুর তুমি আর এখনকার তোমার ভেতরে অনেক পার্থক্য। ব্যাপারটা নিয়ে আমি সত্যি অনেক খুশি।’

তানভীর কিছু না বলে হাসল শুধু। কেন জানি খুব ক্লান্ত লাগছে ওর। ‘হ্যাঁ চিফ, আপনি তো জানেন আমি একেবারেই ভিন্ন এক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছি। তাই শুরুতে ব্যাপারগুলো বুঝে উঠতে বেশ সময় লাগছিল। তবে আশা করছি, শেষ পর্যন্ত সবকিছু ভালোভাবেই শেষ করতে পারব।’

তানভীরের শেষ কথাটা শুনে চিফের মুখের হাসি একটু ম্লান হয়ে গেল। ‘সেটা আর হচ্ছে না,’ বলে সে ড্রয়ার খুলে একটা খাম বের করে টেবিলের ওপর দিয়ে ওর দিকে ঠেলে দিল। ‘তোমার নামে বিশেষ বার্তা এসেছে। তোমার সংস্থার প্রধান জরুরি তলব পাঠিয়েছে তোমাকে দেশে ফিরে যাবার জন্যে। তবে তুমি চিন্তা করোনা, তোমার ট্রেনিং যেহেতু প্রায় নব্বই ভাগ সম্পন্ন হয়েছে কাজেই ট্রেনিং সম্পন্নকরণের সার্টিফিকেট তুমি পাবে। তবে গ্র্যাজুয়েশন প্রোগামে হয়তো জয়েন করা হচ্ছে না তোমার। তোমার সার্টিফিকেট প্রস্তুত হয়ে গেলে আমি দেশে পাঠিয়ে দেব তোমার নামে,’ বলে কমান্ডার একটু থেমে যোগ করল। ‘আমি তোমাকে মিস করব, মাই বয়।’

তানভীর কোনো জবাব না দিয়ে খামটা হাতে নিয়ে খুলল।

বাংলাদেশের পিবিআইয়ে হেড অফিস থেকে এসেছে চিঠিটা। ওর উইংয়ের প্রধান হাবিব আনোয়ার পাশা জরুরি ভিত্তিতে দেশে ফেরত যাবার নির্দেশ দিয়েছে ওকে।

চিঠিটা পড়ে খামে ঢুকিয়ে চিফের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিল ও। ‘আমিও আপনাদের সবাইকে মিস করব চিফ।’

মুখে কথাটা বললেও ওর মনের ভেতরে বাজছে অন্য সুর। দেশে ফিরে যেতে হবে ওকে, মাতৃভূমির ডাক এসেছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *