প্রসঙ্গকথা
চার-ইয়ারি কথা প্রসঙ্গে প্রমথ চৌধুরী
আমি বিলেত থেকে এ দেশে ফিরে আসবার বছর-দশেক পরে ‘চার-ইয়ারি কথা’ বলে একখানা গল্পের বই লিখি। সে গল্প ক’টি পড়ে সেকালে যুবক-সম্প্রদায়ের চটক লাগে। এবং সমালোচক-দলের কাছে নতুন বলে গ্রাহ্য হয়। দু-চার জন সমালোচক লেখেন যে, গল্প ক’টি ফরাসি থেকে চুরি। যদিচ তাঁরা ফরাসি ভাষা ও ফরাসি সাহিত্য সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ। কেউ কেউ লেখেন যে, আনাটোল ফ্রান্সের গল্প থেকে চুরি। যদি আনাটোল ফ্রান্সের গল্পের সঙ্গে তাঁদের কিছুমাত্র পরিচয় থাকত তা হলে তাঁরা আমাকে এই চুরির দায়ে দোষী করতেন না। অনেকে মুখে আমাকে বলেছেন যে, এই গল্প-চারটির নায়িকাদের সঙ্গে বিলেতে আমার পরিচয় ছিল। প্রথম নায়িকা হচ্ছে পাগল, দ্বিতীয়টি চোর, তৃতীয়টি জুয়াচ্চোর, আর চতুর্থটি ভূত। বলা বাহুল্য, একরকম চারটি সম্পূর্ণ বিভিন্ন চরিত্রের নায়িকার একটির পর একটির সঙ্গে পরিচয় হওয়া অসম্ভব। এই চারটিই আমার মনগড়া। তবে, এর ভিতর তৃতীয় গল্পের নায়িকার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল, যাকে আমি রিণী নামে গড়ে তুলেছি।
এ গল্পের ঘটনা ও কথোপকথন সবই আমার স্বকপোলকল্পিত। কিন্তু আমি এমন- একটি যুবতীকে জানতুম, যাকে রিণীর রূপ দেওয়া যায়। তার যথার্থ নাম ছিল কাতি, ইংরেজি Katieর ফরাসি উচ্চারণ। এই নাম থেকেই বুঝতে পারছেন, সে আধা-ফরাসি আধা-ইংরেজ। তার মুখে শুনেছি যে, সে অল্পবয়সে ব্রাসেসে থাকত, সেখানকার conservatorie -এ ভালো করে গানবাজনা শেখবার জন্যে। আমি তাকে কখনো গান গাইতে কিম্বা বাজাতে শুনি নি; কিন্তু সে যে ফরাসি বলতে পারত, তার পরিচয় আমি পেয়েছি। সে ছিল অভিজাতবংশীয়া। যদি তার কথা বিশ্বাস করতে হয়, তা হলে তার ঠাকুরদা ছিলেন ভারতবর্ষে একটি জেনারেল। তার বাবাও ছিলেন একটি মিলিটারি অফিসার। তার পর তিনি কোনো দুষ্কর্ম করায় দেশত্যাগী হয়েছিলেন। কাতির মা দিদি ও কাতিকে একেবারে নিঃস্ব অবস্থায় ফেলে তিনি পলাতক হন। এবং তখন পর্যন্ত তাঁর কোনো খবর পাওয়া যায় নি। এই সময়ে জেনারেল ফ্রেঞ্চ কাতিদের কিছু কিছু মাসহারা দিয়ে ভরণপোষণ করতেন। এবং সম্ভবত তিনিই তাদের ব্রাসেসে থাকতে পাঠান। আমি এই ব্রাসেসের কথা তাকে কখনো জিজ্ঞাসা করি নি। আমি কাতির মাকে কখনো দেখি নি। তার দিদিকে দেখেছিলুম; সে দেখতে মোটেই সুন্দরী নয়, এবং অত্যন্ত ভালোমানুষ। সে যে কাতির দিদি, তা বিশ্বাস করা কঠিন। কাতি ছিল অতিশয় সুন্দরী এবং অতিশয় চালাক-চতুর। কাতির মুখ ছিল লম্বা ধরনের, নাক লম্বা, চোখও লম্বার দিকে বড়ো; এবং সমস্ত মুখ চোখে একটা তীক্ষ্ণ ভাব ছিল। আমার আর্টিস্ট বন্ধু রোলান্ড্ হল্ তার ফোটো দেখে চমকে ওঠেন, এবং তিনি বলেন যে, এই মেয়েটির চোখের তারার রঙ নীল নয়, ভায়লেট। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, তুমি ফোটো থেকে কি করে চোখের তারার রঙ বুঝলে?—তিনি উত্তরে বললেন যে, এর পরে তুমি লক্ষ্য করে দেখো তোমার এই বন্ধুটির চোখ ভায়লেট কি না। আমি পরে লক্ষ্য করে দেখি যে, রোলান্ড হল্ এর কথাই ঠিক।
আমি সম্প্রতি একখানি বই পড়ছি, যার নাম Bernard Shaw, His life and Personality। তাতে উইলিয়ম মরিস্ নামক একটি প্রসিদ্ধ আর্টিস্ট এবং সাহিত্যিকের কনিষ্ঠা কন্যা মে মরিস্ত্রে একখানি ছবি আছে। আমি ছবিখানি যখনই দেখি, তখনই আমার কাতির কথা মনে পড়ে। এমন-কি, সময়ে সময়ে ভুল হয় যে ওটা তারই ছবি। আমি এই একটি সত্যিকারের মেয়েকে ভেঙে ‘চার-ইয়ারি কথা’র চারটি নায়িকাকে তৈরি করেছি। আমি তার নাম-ধাম কিছুই জানতুম না, যা তার মুখে শুনেছি তা ছাড়া। এবং বেশি জানবার কোনো কৌতূহলও আমার ছিল না। প্রথম থেকেই আমার মনে হয়েছিল যে, সে একটি mystery girl। এবং তার জীবনরহস্য উদ্ঘাটন করবার চেষ্টা আমি সংগত মনে করতুম না, পাছে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়ে। উপরন্তু তার ব্যবহার এত অব্যবস্থিতচিত্ততার পরিচয় দিত যে, তার থেকে আমার মনে হত তার ভিতর একটু পাগলামির ছিট আছে। দ্বিতীয় গল্পের নায়িকাকে আমি বইয়ের দোকানে প্রথম দেখি, কাতিকেও তাই। তারপর যা- সব লিখেছি, সে-সব হচ্ছে সীতেশকে ফোটাবার জন্যে। আর শেষটা সে নায়িকা যে সীতেশের পাঁচ পাউণ্ড চুরি করে নিয়ে গেল, এ ঘটনা আমার সম্পূর্ণ বানানো। কাতি ক্রিমিনালের মেয়ে, তার পরিবারের অবস্থা সচ্ছল ছিল না; তাই আমি তাকে শেষ কাণ্ডে চোর বানিয়েছি। এ কাতি কিন্তু যথার্থ কাতি ছিল না।
‘চার-ইয়ারি’র তৃতীয় গল্পে আমি যাকে রিণী বানিয়েছি, তার সঙ্গে যথার্থ কাতির কিছু সাদৃশ্য আছে। যখন “চার-ইয়ারি’ প্রথম প্রকাশিত হয়, তখন আমাকে বহুলোক জিজ্ঞেস করেছিল যে, এ গল্পটি real কি না। উত্তরে আমি বলি, তা হলে গল্পটি উরেছে। কেননা, যা আগাগোড়া কল্পনার জিনিস, অনেক পাঠকের কাছে তা সত্য বলে মনে হয়েছে। কাতির সঙ্গে আমি ভালোবাসায় পড়ি আর না-পড়ি, সেকালে যুবক-পাঠকের দল অনেকে রিণীর প্রেমে পড়েছিল। আমার একটি ভক্ত বন্ধু কোনো মাসিক পত্রিকায় ‘চার-ইয়ারি’র দীর্ঘ সমালোচনা লেখেন। তাতে তিনি মুখ ফুটে বলেন যে, রিণীর মতো মেয়ের হাতে পড়ে নাকানি-চোবানি খাওয়াতেও সুখ আছে। আমি তাঁকে বলি, এটা কি লক্ষ্য কর নি যে, রিণীর পিরিতি বালির বাঁধ, ক্ষণে হাতে দড়ি ক্ষণেক চাঁদ? আমার বন্ধু উত্তরে বলেন, রিণী যে ক্ষণে রুষ্ট ক্ষণে তুষ্ট, রুষ্টতুষ্ট ক্ষণে ক্ষণে—এ কার চোখ এড়িয়ে যায়? কিন্তু সে জীবন্ত মানুষ, জড় পদার্থ নয়, এইখানেই তার বিশেষত্ব। কাতির সঙ্গে রিণীর প্রধান তফাত এই যে, আমি কাতিকে অনেক রঙ চড়িয়ে রিণী বানিয়েছি। রিণী ও তৃতীয় গল্পের নায়ক সোমনাথের কথাবার্তা প্রায় সবই আমার স্বকপোলকল্পিত। তবে লোকের কৌতূহল চরিতার্থ করবার জন্য তাদের রক্তমাংসের মানুষ তৈরি করতে চেষ্টা করেছি। ফলে, এটি গল্প হয়েছে, অথচ পাঠকের কাছে সত্য ঘটনা বলে ভ্রম হয়।
“চার-ইয়ারি কথা’র চতুর্থ গল্পের নায়িকা হচ্ছে প্রেতাত্মা। সে দেশি কি বিলেতি, এ প্রশ্ন যে কোনো পাঠক জিজ্ঞাসা করতে পারেন না, সে কথা বলাই বাহুল্য।
বৈশাখী’ ১৩৫২
প্রমথ চৌধুরীর গল্প সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ
মৌলিক গল্প রচনার পূর্বে প্রমথ চৌধুরী কোনো কোনো বিদেশী গল্প অনুবাদ করেছিলেন। সাধনা পত্রে ‘সাময়িক সাহিত্য সমালোচনায়’ [সাধনা, অগ্রহায়ণ ১২৯৮] রবীন্দ্রনাথ তার একটির প্রসঙ্গে অনুকূল মন্তব্য করেন নি; নিম্নে তা মুদ্রিত হল—
সাহিত্য। দ্বিতীয় ভাগ। আশ্বিন [১২৯৮]। এই সংখ্যায় “ফুলদানী” নামক একটি ছোট উপন্যাস ফরাসীস্ হইতে অনুবাদিত হইয়াছে। প্রসিদ্ধ লেখক প্রস্পর মেরিমে প্রণীত এই গল্পটি যদিও সুন্দর কিন্তু ইহা বাঙ্গলা অনুবাদের যোগ্য নহে। বর্ণিত ঘটনা এবং পাত্রগণ বড় বেশি য়ুরোপীয়—ইহতে বাঙ্গালী পাঠকদের রসাস্বাদনের বড়ই ব্যাঘাত করিবে। এমন কি সামাজিক প্রথার পার্থক্যহেতু মূল ঘটনাটি আমাদের কাছে সম্পূর্ণ মন্দই বোধ হইতে পারে। বিশেষত: মূল গ্রন্থের ভাষামাধুর্য্য অনুবাদে কখনই রক্ষিত হইতে পারে না, সুতরাং রচনার আব্রুটুকু চলিয়া যায়।
প্রমথ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে তাঁর ‘আত্মকথা’য় (১৩৫৩) লিখেছেন—
সুরেশচন্দ্র সমাজপতি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘সাহিত্য’ পত্রিকায় Prosper Merimeeর ‘Etruscan Vase’ নামক একটি গল্প তর্জ্জমা করে’ ‘ফুলদানি’ নাম দিয়ে প্রকাশ করি। সেটি পড়ে রবীন্দ্রনাথ ‘সাধনা’য় আমাকে আক্রমণ করেন। দুটি কারণে, প্রথমত, ‘ফুলদানি’র মত গল্প বঙ্গসাহিত্যের অন্তর্ভূত করা অনুচিত বলে; দ্বিতীয়ত, পাকা ফরাসী লেখকের লেখা কাঁচা বাঙ্গলা লেখকের অনুবাদে শ্রীভ্রষ্ট করা হয়েছে বলে’। আমি শেষোক্ত আপত্তি গ্রাহ্য করি। কিন্তু এ জাতীয় গল্প যে বঙ্গসাহিত্যে চলতে পারে না, সে কথা মানি নি। আমি অবশ্য সে সমালোচনা পড়ে’ একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলুম। কারণ রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে এরকম সমালোচনা আশা করি নি। তার পরেই আমি মেরিমে’র ‘কার্মেন’ তর্জ্জমা করি। কিন্তু সেটি শেষ করতে পারি নি বলে প্রকাশ করি নি। কার্মেন অনুবাদ করবার কারণ, তার বিষয়বস্তু ‘ফুলদানি’র চেয়ে ঢের বেশি অসামাজিক।
প্রধানত, সবুজ পত্র প্রকাশ হবার পর থেকেই প্রমথ চৌধুরীর মৌলিক গল্প রচনার সূচনা। সবুজ পত্রের প্রথম গল্পটি [চার-ইয়ারির কথা] লিখিত হবার পর রবীন্দ্রনাথ প্রমথ চৌধুরীকে লেখেন—তুমি যখন প্রথম গণ্ডী পেরিয়েছ তখন আর গল্প লেখায় তোমাকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না—এখন থেকে তোমার এই এক বহু হবার পথে চল্ল। [ফেব্রুয়ারি ১৯১৬]
এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়েছিল প্রমথ চৌধুরীর জীবনে। অতঃপর জীবনের প্রত্যন্ত ভাগ পর্যন্ত তিনি গল্প রচনায় নিরত ছিলেন। সেগুলির কোনো-কোনোটি সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ প্রমথ চৌধুরীকে লিখিত চিঠিপত্রে যে মন্তব্য করেছেন নিম্নে তা সংকলিত হল।—
চার-ইয়ারি কথা
এখন মনে হচ্চে তোমার গল্পগুলো উল্টো দিক দিয়ে সুরু হলে ভালো হত। তোমার শেষ গল্পটা সব চেয়ে human। গল্পের প্রথম পরিচয়ে সেইটে সহজে লোকের হৃদয়কে টান্ত—তার পরে অন্য গল্পে মনস্তত্ত্ব এবং আর্টের বৈচিত্র্য তারা মেনে নিত। এবারকার দুটি নায়িকাই ফাঁকি—একটি পাগল, আর একটি চোর। কিন্তু নায়িকার প্রতি, অন্তত পুরুষ পাঠকের যে একটা স্বাভাবিক মনের টান আছে, সেটাকে এমনতর বিদ্রূপ করলে নিষ্ঠুরতা করা হয়। সব পাঠকের সঙ্গেই ত তোমার ঠাট্টার সম্পর্ক নয়—এই জন্যে তারা চটে ওঠে। তাদের পেট ভরাবার মত কিঞ্চিৎ মিষ্টান্ন দিলেও ইতরে জনাঃ খুসি থাকত। তুমি করালে কি না “ঘ্রাণেন অর্দ্ধভোজনং”–কিন্তু কথাটা একেবারেই সত্য নয়—বস্তুত, ঘ্রাণে দ্বিগুণ উপবাস। মানুষ যখন ঠকে তখন সহজে এ কথা বলতে পারে না যে, ঠকেচি বটে কিন্তু চমৎকার! [মার্চ ১৯১৬]
ছোটো গল্প
গল্পটি কিন্তু তুমি সম্পূর্ণ আমার জীবনবৃত্তান্ত থেকে চুরি করেচ—ঠিক গল্পটি নয় কিন্তু তার বৃত্তান্তটি। কিন্তু খুব উপাদেয় হয়েচে। এ’কে মারাত্মক গল্প বলা যেতে পারে কারণ, বুদ্ধকে মার যে-রকম প্রলুব্ধ করেছিল, তোমার গল্পের উপসংহারে সেই রকম একটি মারের প্রলোভন উদ্যত আছে—সুকুমারমতি পাঠকেরা নিশ্চয় নিঃশ্বাস ছেড়ে বলবে, আহা ঐ বিধবার সঙ্গে বিবাহ হলেই ত চুকে যায়—কিন্তু তাহলে গল্পের তপস্যা ঐখানেই মাটি। [১ ভাদ্র ১৩২৫]
রাম ও শ্যাম
তোমার শেষ গল্পটি সুতীক্ষ্ণ—ওটা দেশোচিত, কালোচিত এবং পুরুষোচিত। এরকম খরধার এবং সুগঠিত লেখা আর কারো হাত দিয়ে বের হবার জো নেই। [২১ ডিসেম্বর, ১৯১৮]
নীল-লোহিতের আদিপ্রেম গ্রন্থের গল্প
তোমার গল্পগুলি আর একবার পড়লুম। ইতিপূর্ব্বেও পড়েচি। ঠিক যেন তোমার সনেটেরই মত—পালিশ করা, ঝক্ঝকে, তীক্ষ্ণ। উজ্জ্বলতার বাতায়ন মগজের তিনতলা মহলে মধ্যাহ্নের আলো সেখানে অনাবৃত। রসাক্ত সুমিষ্টতা দোতলায়, সেখানে রসনার লোলুপতা। তোমার লেখনী সে পাড়া মাড়াতে চায় না। [২৫ আগস্ট, ১৯৩৪]
ঘোষালের হেঁয়ালি
আজকাল যেন আলো কমে এসেছে তাই পড়াশোনা একেবারে ছেড়ে দিয়েছি, হঠাৎ বিচিত্রায় তোমার নাম দেখে তোমার লেখা গল্পটি পড়লেম। পড়ে তোমাকে চিঠি লিখতে যাচ্ছিলুম। এ লেখায় তোমার সবুজপত্রী যুগের উজ্জ্বলতা দেখে খুব খুসি হয়েছি। আজকাল যে সব লেখা বেরোয় তার মাঝখানে এই আকস্মিক আগন্তুকটির চেহারা দেখে চমক লাগে, এর জাতই আলাদা। অনেকদিন চুপচাপ ছিলে, ভয় হয়েছিল তোমার আলো-ওয়ালা কলমের দীপ্তি পাছে কমে গিয়ে থাকে, দেখচি তার আশঙ্কা নেই। [১৩ ভাদ্র, ১৩৪২]
বীণাবাই
পেয়েছি ভারতবর্ষ। সাবাস্। খুব ভালো হয়েছে। অর্থাৎ তোমার শিলমোহরের ছাপ পড়েছে অতএব এর দাম কম নয়। এ ধরনের লেখা আর কারো কলমে ফুটতে পারে না। সাহিত্যে যারা জালিয়াতি করে দিন চালায় তারা হতাশ হবে। [৩ শ্রাবণ ১৩৪৪]
অণুকথা সপ্তক গ্রন্থের গল্প
তোমার ছোটো গল্প পড়ে চেকভের ছোট গল্প মনে পড়ল। যা মুখে এসেছে তাই বলে গেছ হাল্কা চালে। এতে আলবোলার ধোঁয়ার গন্ধ পাওয়া যায়। এ রকম কিছুই না লিখতে সাহসের দরকার করে। দেশের লোক সাহিত্যে ভুরিভোজন ভালোবাসে—তারা ভাববে ফাঁকি দিয়েছ—কিম্বা ভাববে ঠাট্টা। [১১ জুন, ১৯৩৯]
জুড়ি দৃশ্য
এবার পরিচয়ে তোমার গল্পটি পড়ে আশ্চর্য হয়ে গেছি, না লিখে থাকতে পারলুম না। বয়স হলে কলমকে বাতে ধরে, কিন্তু তোমার কলম এখনো যে রকম খাড়া চলতে পারে এমন তো আর কারো দেখিনি। এ একেবারে তোমার খাষ দখলের লেখা, আর কারো হাত দিয়ে বেরবার জো নেই।…খাঁটি জিনিস একটা আধটাই যথেষ্ট, সেই কথাটা আমাদের দেশের বদরসিকদের বোঝানো শক্ত,—কালকেতুর ব্যাধের মতো তাদের গ্রাস—মাসে মাসে মুঠো মুঠো অপথ্যর জোগান দিতে না পারলে তাদের বাহবা মিইয়ে আসবে। [৬ শ্রাবণ ১৩৪৭]
এই পত্রগুলি রবীন্দ্রনাথের ‘চিঠিপত্র’ পঞ্চম খণ্ডের অন্তর্গত।