প্রযুক্তি হিসেবে লোগোথেরাপি
কিছু ভয় আছে, যেমন মৃত্যুর ভয়, সাইকোডায়নামিক ব্যাখ্যা দিয়ে শান্ত করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে মানসিক ভয় যেমন এ্যাগ্রোফোবিয়া দার্শনিক চিন্তা দ্বারা দূর করা সম্ভব নয়। যাইহোক, এ সমস্যাগুলো দূর করার জন্য লোগোথেরাপির বিশেষ কৌশল বা প্রযুক্তি তৈরি করেছে। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে রোগীর অবস্থা কী দাঁড়ায় তা বোঝার জন্য আমরা গভীর ভাবে তাকে পর্যবেক্ষণ করি। এটি মূলত রোগী যা ভয় পায়, রোগীকে সে ভয়ের মুখোমুখি করিয়ে দেয়। একটি উদাহরণ দেয়া যাক। মনে করুন, কোনো একজন ব্যক্তি যখন বড় কোনো হলরুমে প্রবেশ করে এবং অনেক মানুষের মুখোমুখি হয়, তখন তার চেহারা লাল হয়ে যায়। এই লাল হয়ে যাওয়াটা প্রকাশ করতে তিনি লজ্জা পান। কিন্তু দেখা যায়, তিনি যখন এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হোন, তখন তিনি আরও লাল হয়ে যান। এ ঘটনা শুনে হয়তো কেউ কেউ বলবেন, ‘ইচ্ছা হলো চিন্তার বাবা’ আর ‘এই ঘটনা হলো ভয়ের মা।’
অপ্রিয় হলেও সত্য, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা নামে। জোর করে দুর্বলতা কাটানো যায় না। অনেক সময় জোর-জবরদস্তি করতে গিয়ে সেই কাজটা আরও অসম্ভব করে তোলে। যৌনবিকারগ্রস্ত মানুষের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি আরও বেশি ঘটে থাকে। একজন পুরুষ যখন খুব বেশি যৌনসক্ষমতা দেখাতে যায় কিংবা একজন নারী যখন অর্গ্যাজমে তার অভিজ্ঞতা, সামর্থ্য প্রকাশ করতে চায়, স্বভাবতই তারা ব্যর্থ হয়। আনন্দ আছে। থাকবে। তবে সে যখন নিজে নিজেই কোনো অবাস্তব লক্ষ্যমাত্ৰা তৈরি করে নেয়,তখন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে নিজেই ধ্বংস হয়, বিনষ্ট হয়।
উপরে বর্ণিত মাত্রাতিরিক্ত ইচ্ছা ছাড়াও অতিরিক্তি মনোযোগ অথবা ‘হাইপার-রিফ্লেকশন’ লোগোথেরাপিতে আলোচিত হয়। হতে পারে এটা কোনো রোগজীবাণু (যা অসুস্থতা বাড়ায়)। নিচের ক্লিনিক্যাল রিপোর্টি শুনলেই বুঝতে পারবেন, আমি আসলে কী বোঝাতে চাচ্ছি। এক অল্প বয়স্ক তরুণী একবার আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল। তার সমস্যা ছিল কামশীতলতা। অর্থাৎ যৌনচাহিদা জাগতো না, বা সে অল্পতেই নিস্তেজ হয়ে পড়তো। আমি তার অতীতের কথা শুনতে চাই। সে আমাকে সব কিছুই খুলে বলে। তার কথা শুনে বুঝতে পারলাম, শৈশবে তার বাবা তাকে যৌননির্যাতন করতো। এটি তার জন্য কোনো সুখকর অভিজ্ঞতা ছিল না।. তার মনের উপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। এখন যৌনতা মানেই তার কাছে ভয়ঙ্কর কোনো কিছু। ফলে খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে তার অভিজ্ঞতাই তার যৌন-স্নায়বিক সমস্যার কারণ। আবার দেখা যায়, অনেকেরই জনপ্রিয় মনোবিশ্লেষণধর্মী সাহিত্য পড়ার কারণে মনে এক ধরনের আতঙ্ক জন্মে। তাদের মনে হয়, আমাকেও একদিন এই অভিজ্ঞতার মধ্য যেতে হবে? যখন তাদের সেই অভিজ্ঞতা অর্জনের সময় আসে, দেখা গেলো, তার মনের ভয় তাকে পুরোপুরি ঝেঁকে ধরে। এছাড়াও নারীত্ব প্রমাণের অতিরিক্ত ইচ্ছা এবং সঙ্গীর চেয়ে নিজের উপর বেশি মনোযোগ দেবার কারণে অনেক সময় এই প্রাথমিক উদ্বেগ দেখা যায়। রোগীকে যৌনতৃপ্তির চূড়ায় যাওয়ার পথে বাধা দেবার জন্য এই মানসিকতাই যথেষ্ট। কারণ পার্টনারের প্রতি মনোযোগ, তার প্রতি আত্মসমর্পনই অর্গ্যাজমের আনন্দ দিতে পারে। লোগোথেরাপি স্বল্প মেয়াদি থেরাপির মাধ্যমে রোগীর অর্গ্যাজমের প্রতি এই অতিরিক্ত মনোযোগ এবং ইচ্ছাকে প্রতিহত করে। যা লোগোথেরাপির ভাষায় বলা হয় ‘ডিরিফ্লেকটেড’। এর ফলে যখন তার সম্পূর্ণ মনোযোগ পুরুষ সঙ্গীর উপর পড়ে, তখন স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সে যৌনানন্দ লাভ করে।
লোগোথেরাপি যে পদ্ধতিটি অনুসরণ করে তাকে বলে ‘প্যারডক্সিকেল ইনটেনশন’ বা বিপরীত ইচ্ছা। দুটো বিষয় মনে রাখতে হবে, মানুষ যা ভয় পায়, তা-ই বারবার তার ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং কেউ যখন কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত মনোযোগ দেয় বা কোনো বিষয়ে বাড়াবাড়ি রকম ইচ্ছা করে থাকে তখন তার সেই ইচ্ছাটা পূরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ১৯৩৯ সালের শুরুর দিকে আমি জার্মান ভাষায় ‘প্যারাডক্সিক্যাল ইনটেনশন’ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই পদ্ধতিতে ভয় পাওয়া রোগীকে সে যা ভয় পায়, সেটার মুখোমুখি করা হয়। অন্তত কিছুক্ষণের জন্যে হলেও করা হয়।
একটি পুরোনো ঘটনা মনে পড়ছে। এক তরুণ চিকিৎসক আমার সাথে পরামর্শ করার জন্য আসে। কারণ তার ঘামের ভয়। ঘামের কারণে তিনি অস্বস্থিতে ভুগতেন। যখনই তিনি ঘামের চিন্তা করতেন, তখনই আরও ঘামতে থাকতেন। এই সমস্যার বৃত্ত ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার জন্য তাকে আমি একটি পরমার্শ দেই। বলি, যখনই আপনার ঘাম হতে শুরু করবে, তখন ভয় পাবেন না। চেষ্টার করবেন, আরও বেশি ঘেমে দেখানোর।
আমার সাথে কথা বলে চলে যাবার এক সপ্তাহ পর তিনি আবার আমার কাছে আসেন। তিনি জানান, কারো সাথে দেখা হবার পর যখন তার মনে ঘেমে যাওয়ার আশঙ্কা জাগতো, তখন তিনি নিজেকে বলতেন, ‘আগে আমি এক কোয়ার্টার ঘামতাম। এখন আমি চাই দশ কোয়ার্টার ঘাম হোক।’
এই চর্চার ফলে চার বছর ধরে তিনি যে ফোবিয়ায় ভুগছিলেন, তা এক সপ্তাহের মধ্যে স্থায়ী ভাবেই ভালো হয়ে গেছে।
পাঠক, একটি জিনিস ভালোভাবে খেয়াল করুন, এই রোগী যা চাইতেন অর্থাৎ ঘাম না হোক, এই ইচ্ছার বিপরীতে সে কামনা করতে লাগলো, তার যেন আরও ঘাম হয়। অর্থাৎ যাকে ভয় পেতো ওই বিষয়টিকেই সে আরও পাবার ইচ্ছা প্রকাশ করলো। এভাবে চিকিৎসার ফলে তার পাল থেকে উদ্বেগ, দুশ্চিন্তার বাতাস কিন্তু একেবারেই পড়ে গেল।
মানুষের মধ্যে যে সেন্স অব হিউমার আছে অর্থাৎ যে রসবোধ আছে, এই পদ্ধতিতে তা অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত। লোগোথেরাপির এই পদ্ধতিতে মানুষ নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করেই এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত হয়। লোগোথেরাপির ভাষায় একে ‘প্যারাডক্সিক্যাল ইনটেনশন’ বলা হয়। একই সাথে রোগী তার মানসিক সমস্যাও কাটিয়ে উঠতে পারে। গর্ডন অলপোর্টের বই থেকে এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরছি। সেখানে বলা হয়েছে, ‘যে মানসিক রোগী নিজের সমস্যা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতে পারে, সে নিজে নিজেই রোগ থেকে সেরে উঠার সামর্থ রাখে।’ অলপোর্টের বক্তব্য-অনুসারে, ‘প্যারডক্সিক্যাল ইনটেনশন’ বা আপাতবিরোধী ইচ্ছা হলো অভিজ্ঞতাজনিত বৈধতা এবং ক্লিনিক্যাল প্রয়োগ।
এই পদ্ধতি কীভাবে কাজ করে আরও কিছু ঘটনার উল্লেখ করে তা পরিষ্কার করা যেতে পারে। এখন যে রোগীর কথা বলবো, তিনি একজন হিসাব রক্ষক। তিনি তার সমস্যার জন্য বিভিন্ন ক্লিনিকে বিভিন্ন ডাক্তারের সাথে কথা বলেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তিনি যখন আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হোন, তখন তিনি চরম হতাশায় ভুগছেন। আত্মহত্যার জন্য মনস্থির করে ফেলেছেন। অতিরিক্ত লেখার কারণে তার হাতের মাংসপেশীতে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে হাতের লেখা খারাপ হয়ে যায়। কয়েক বছর ধরেই এই সমস্যা। বর্তমানে এই সমস্যা এমনই প্রকট আকার ধারণ করে যে, তার চাকরি চলে যাবার অবস্থা হয়েছে। স্বল্প মেয়াদী থেরাপির ফলেই তিনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। চিকিৎসার শুরুতে ডা. ইভা কোজডেরা তাকে বলে, সে যা করতে চাচ্ছে, তার বিপরীত কাজ যেন করে। অর্থাৎ সে সুন্দর করে লিখতে চায় কিন্তু এখন সে চেষ্টা করবে, হাতের লেখা কত খারাপ করা যায়। তাকে উপদেশ দেয়া হলো নিজেকে বলার জন্য, ‘এখন লোকজনদের দেখাবো, আমি কত বাজে ভাবে লিখতে পারি।’
আর যখনই সে বাজে ভাবে লেখার সিদ্ধান্ত নিল, দেখা গেল, সে তত বাজে ভাবে লিখতে পারছে না।
একদিন পর এসে সে জানালো, ‘আমি অনেক চেষ্টা করেছি বাজে ভাবে লেখার জন্য। কিন্তু পারিনি।
মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টার চেষ্টায় তিনি এই সমস্যা থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময় তাকে আর চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়নি। এখন সে একজন সুখী মানুষ। নিজেকে পুরোপুরি কাজে মধ্যে সমর্পণ করেছেন।
এরকম আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল। তবে সেটি ছিল কথা বলা নিয়ে। লেখা নিয়ে নয়। ঘটনাটি ঘটেছিল আমার এক কলিগের ক্ষেত্রে। সে ভিয়েনা পলিক্লিনিকের ল্যারিংজোলোজিক্যাল ডিপার্টমেন্টে চাকরি করতো। অনেক বছর ধরে তিনি চাকরি করছেন। তার কোনো সমস্যা ছিল না। হঠাৎ করেই তার মাঝে তোতলামি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। সারা জীবনেও তার কথা বলার কোনো সমস্যা ছিল না, শুধু একবারের ঘটনা ছাড়া। অন্তত তিনি মনে করতে পারেন না কথা বলা নিয়ে তার কোনো সমস্যা ছিল কি না। একবার যে সমস্যাটি হয়েছিল, সেটি ঘটেছিল তার বারো বছর বয়সে। সে লুকিয়ে ট্রামগাড়িতে উঠেছিল। কন্ডাক্টর যখন তাকে ধরে ফেলল, সে দ্রুত চিন্তা করতে লাগলো, কী করলে কন্ডাক্টরের সমবেদনা পাওয়া যাবে? তখন সে একজন গরীব তোতলা ছেলের অভিনয় করার চেষ্টা করেছিল। যখন সে তোতলানোর চেষ্টা করলো, তখন কিন্তু সে তোতলাতে পারেনি। সে কিন্তু কিছু না বুঝেই, কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই প্যারাডক্সিক্যাল ইনটেনশনের চর্চা করেছিল।
তবে প্যারাডক্সিক্যাল ইনটেনশন শুধু মোনো-সিম্পটোম্যাটিক ঘটনার ক্ষেত্রেই কাজ করে তা নয়। ভিয়েনা পলিক্লিনিক হসপিটালের আমরা সহকর্মীরা অনেক দিন ধরে মারাত্মক স্নায়বিক রোগে ভোগা রোগীর উপর প্রয়োগ করেও সাফল্য পেয়েছেন। এই মুহূর্তে পঁয়ষট্টি বছর বয়সী মহিলা রোগীর কথা মনে পড়ছে। যিনি ষাট বছর ধরে শুচিবায় রোগে ভুগছেন। ডা. ইভা খোজদেরা লোগোথেরাপি চিকিৎসা অর্থাৎ প্যারাডক্সিক্যাল ইনটেনশন পদ্ধতিতে চিকিৎসা শুরু করেন। দুই মাসের চেষ্টায় তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। ভিয়েনা পলিক্লিনিক হাসপাতালের নিউরোলোজিক্যাল বিভাগে ভর্তি হবার আগে তার কাছে মনে হতো, ‘জীবনটা আমার কাছে জাহান্নাম’। ব্যাকটেরিয়াফোবিয়া বা নানা ধরনের বাধ্যবাধকতা তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলে ছিল। ফলে সারাদিন সে বিছানায় শুয়ে থাকতো। ঘরের কোনো কাজকামই করতে পারতো না। এটা বলা ঠিক হবে না যে, তিনি চিকিৎসার ফলে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছেন। এই বদ্ধসংস্কার তার মনে আবার ফিরে আসতে পারে। তবে তার কথা মতো, তিনি এই বিষয়টিকে নিয়ে এখন মজা করতে পারেন। সহজ কথায় একেই প্যারাডক্সিক্যাল ইনটেনশন বলে।
ঘুমের সমস্যা দূর করার জন্যেও প্যারাডক্সিক্যাল ইনটেনশন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। ঘুম হবে না, ঘুম হবে না এই চিন্তা আরও ঘুম না হবার কারণ। এই সমস্যা দূর করার জন্য আমি রোগীদের বলি, ঘুমানোর চেষ্টা করবেন না। বরং উল্টোটা করবেন। অর্থাৎ চেষ্টা করবেন, যতক্ষণ সম্ভব জেগে থাকার। জেগে থাকার জন্য এই অতিরিক্ত ইচ্ছাই আপনাকে ঘুমের দেশে নিয়ে যাবে। ঘুমানোর জন্য উদ্বেগ আপনাকে ঘুম এনে দিতে পারবে না। ঘুমানোর জন্য এই উদ্বেগের জায়গায় না ঘুমানোর প্যারাডক্সিক্যাল ইনটেনশন স্থাপন করুন। দেখবেন, খুব সহজেই ঘুম এসে যাবে।
প্যারাডক্সিক্যাল ইনটেনশন সব ধরনের রোগ দূর করার ওষুধ নয়। তবে অতিরিক্ত মানসিক পীড়া, নানান ধরনের ফোবিয়া বিশেষ করে যেসব দুশ্চিন্তা আগেই মনকে কাবু করে ফেলে, এইসব ক্ষেত্রে প্যারাডক্সিক্যাল ইনটেনশন খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। সর্বোপরি, এটি খুব অল্প সময়েই কাজ করে। তবে আবার এটি মনে করার কারণ নেই যে, স্বল্প সময়ের মধ্যেই সে যেহেতু কাজ করে, তার কাজের প্রভাবও স্বল্প সময়ের জন্য হবে। অর্থাৎ তার স্থায়ীত্ব ক্ষণিকের জন্য। এমিল এ. গোথেইলের ‘দ্য মোর কমন ইলুশন অফ ফ্রোডিয়ান অর্থোডক্সি’ বইয়ে বলেছেন, ‘থেরাপির দৈর্ঘ্যের সাথে কি ফলাফলের কোনো সম্পর্ক আছে?’
এক্ষেত্রে একজন রোগীর কেস হিস্ট্রি উল্লেখ করা যেতে পারে। এই রোগীর উপর বিশ বছর আগে প্যারাডক্সিক্যাল ইনটেনশ পদ্ধতি প্ৰয়োগ করা হয়েছিল। এবং সে থেরাপির রেজাল্টও পাওয়া গিয়েছিল। স্থায়ী ভাবেই পাওয়া গিয়েছিল।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়, তাহলো উদ্বেগের কারণ যাই হোক না কেন, প্যারাডক্সিক্যাল ইনটেনশন সবক্ষেত্রেই কাজ করে। এই বক্তব্যের স্বপক্ষে এডিথ উইস্কফ জোয়েলসনের একটি মন্তব্য স্মরণ করা যেতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘প্রথাগত মনোচিকিৎসা রোগের কারণ খুঁজে বের করে তার চিকিৎসা করে। এটি সম্ভব। ছোটবেলা কোনো কারণে স্নায়বিক সমস্যা দেখা দিলে, বড় হবার পরও সে সমস্যা দূর করা যায়।’
স্নায়বিক সমস্যার যে প্রকৃত কারণ, সেটা দৈহিক বা মানসিক যে কারণেই হোক না কেন, আগাম উদ্বেগই এক্ষেত্রে মূল কলকাঠি নাড়ে। ফোবিয়া আক্রান্ত হলে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। মনের মধ্যে যতবার ফোবিয়া জেগে উঠে ততবার এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে রোগীকে বারবার একই চিন্তাগুলো আসতে থাকে। ফলে রোগী যতই মানসিক চাপকে ভুলে থাকতে চেষ্টা করে, মানসিক চাপ তাকে ততবেশি ঘিরে ধরে। অন্যদিকে রোগী যখন এসব বিষয়ের সাথে যুদ্ধ করার পরিবর্ততে প্যারাডক্সিক্যাল ইনটেশনের মাধ্যমে এসব নিয়ে হাসি ঠাট্টা
করতে শুরু করে, তখন তার মধ্যে অসুখের যে বৃত্ত আছে, তা ভাঙতে শুরু করে। এক পর্যায়ে তা সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যায়। রোগী শুধু সাময়িক ভাবেই তখন স্নায়বিক সমস্যা থেকে মুক্ত হয় না, ভয় থেকে চিরদিনের জন্যই মুক্ত হয়ে যায়।
তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, আগাম যেসব দুশ্চিন্তা আমাদের মনে বাসা বাঁধে, প্যারাডক্সিক্যাল ইনটেনশনের মাধ্যমে তা দূর করা যায়। হাইপার-ইনটেনশন অর্থাৎ অতিরিক্ত মনোযোগ, অতিরিক্ত চিন্তা অবনমন দ্বারা প্রতিহত করতে হবে। তবে এই অবনমন বা ডিরিফ্লেকশন করা সম্ভব হবে না যদি রোগীর জীবন এবং জীবিকা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য থাকে।
মানসিক রোগীর আত্মসচেতনতা এই অসুখের বৃত্তকে ভাঙে না। কিংবা এটি কোনো করুণার কারণেও হয় না। আত্ম-উৎকর্ষতা অর্জন করতে পারলেই রোগী সুস্থ হয়।