প্ৰথম পৰ্ব
দ্বিতীয় পৰ্ব

ক্ষণিকের জীবন

ক্ষণিকের জীবন

যেসব জিনিস জীবনকে অর্থহীন করে তোলে, তা শুধু কষ্টই দেয় না, মৃত্যুরও কারণ হয়ে ওঠে। তবে একটি কথা আমি সব সময়ই বলে যাবো, জীবনের সম্ভাবনাগুলোই ক্ষণস্থায়ী। তবে সম্ভাবনাগুলো যখনই বাস্তবে রূপ নেয়, তখন তা আর ক্ষণস্থায়ী থাকে না। চিরদিনের জন্য হয়ে যায়।

তাই আমাদের এই ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বকে কখনোই অর্থহীন বলা যায় না। বরং এটি আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। আর এসবই নির্ভর করে ক্ষণস্থায়ী ব্যাপারটিকে আমরা কতটা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে তার উপর। মানুষ সবসময় বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেয়, সে কোনটি বাস্তবায়ন করবে, কোনটি করবে না। মূলত মানুষের এই চয়েজ, সিদ্ধান্তই ঠিক করে দেয় সে কতদূর যাবে। তার কোন কাজটি হারিয়ে যাবে, কোন কাজটি কালের পাতায় অক্ষয় হয়ে রইবে। প্রতি মুহূর্তেই মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেটা হতে পারে ভালো, হতে পারে খারাপ। তবে এই সিদ্ধান্তই তার অস্তিত্বের সৌধ গড়ে তুলে।

সাধারণত মানুষ বর্তমানের ফসলশূন্য মাঠকে নিয়েই পড়ে থাকে। অতীতের শস্যপূর্ণ মাঠকে অবহেলা করে। অথচ সেখানে পড়ে আছে তার সব সুখ-দুঃখ। যা সে একদিন আঁকড়ে ধরেছিল। অতীতের কোনো কিছুই আর এখন ধ্বংস করে ফেলা যাবে না। যেমনই আছে, তেমনই থাকবে। সেখানে নতুন করে কিছু সংযোজনও করা যাবে না। আমি শুধু বলতে চাই, যা হয়ে গেছে, তা চিরদিনের জন্যই হয়ে গেছে।

মানব অস্তিত্বের প্রয়োজনীয় ক্ষণস্থায়ীত্ব বিষয়টি মাথায় রেখেই বলতে চাই, লোগোথেরাপি হতাশাবাদী নয়, আশাবাদী। সে আশাকে নিয়েই কাজ করে। বিষয়টি বোঝানোর জন্য বলা যেতে পারে, হতাশাবাদী সে-ই, যে কি না দুঃখ এবং ভয়ের সাথে ঘরে ঝুলানো ক্যালেন্ডারের দিকে তাকায়। একেকটি দিন চলে যাওয়ার কারণে অশ্রুবিসর্জন করে। কিছু হলো না, হবে না ভেবে দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে আশাবাদী তাকেই বলবো, যে সাহসের সাথে প্রতিটি সমস্যা মোকাবিলা করে। তিনি ক্যালেন্ডারের পাতাগুলো খুলে যত্ন করে সংরক্ষণ করেন। প্রয়োজনীয় কিছু নোটও তিনি সেখানে লিখে রাখেন। তার সেই নোটে বা লেখায় তার গর্বের, আনন্দের ছবি ফুটে ওঠে। তার গর্বিত যাপিত জীবনের ছবি এখানে ফুটে ওঠে। প্রশ্ন হতে পারে, যখন তিনি খেয়াল করবেন, দিনে দিনে বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছেন, তখন এসব দিয়ে কী লাভ হবে? তিনি কি তখন তরুণদের দেখে হিংসে করবেন, নাকি তার অতীত স্মৃতি রোমন্থন করে পুলক অনুভব করবেন? কী কারণে তিনি অল্প বয়স্ক ছেলেমেয়েদের ঈর্ষা করবেন? যুবকদের জন্য যে সম্ভাবনা অপেক্ষা করছে, ভবিষ্যতে কি তার জন্যেও অপেক্ষা করছে?

‘না, ধন্যবাদ।’ সে ভাববে, ‘যুবকরা এখন যা করছে, করবে, আমি আগেই তা করে এসেছি। আমার যা যা দরকার, তা করেছি। শুধু ভালোবাসার কাজকে ভালোই বাসিনি, বরং তার জন্য অনেক কষ্ট, ত্যাগ- তিতিক্ষা করতে হয়েছে। এই কষ্ট, যন্ত্রণা ভোগ করার জন্য আমি গর্বিত। আমি গর্বিত, কারণ সব কিছু মাথা উঁচু করে মোকাবিলা করেছি। তাই এখন আর কাউকে ঈর্ষা করার প্রয়োজন নেই।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *