প্ৰথম পৰ্ব
দ্বিতীয় পৰ্ব

কালেক্টিভ নিউরোসিস

কালেক্টিভ নিউরোসিস

প্রতিটি বয়সেরই নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা আছে। তাদের সমস্যা কাটিয়ে উঠার জন্য প্রয়োজন তাদের বয়সের উপযোগী সাইকোথেরাপি। বর্তমানে অস্তিত্বশূন্যতায় ভোগা প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। এটাকে নিহিলিজমের সাথে তুলনা করায় যায়। অর্থাৎ তারা মনে করে কিছুই নেই। নিহিলিজম মনে করে যুক্তিতর্কের কোনো মানে নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত নিহিলিজমের ঘোর থেকে বেরুতে না পারলে সাইকোথেরাপি কোনো কাজে আসবে না। তখন উল্টোফল দেখা দিতে পারে। ভালো হবার চেয়ে আরও বেশি খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তখন সাইকোথেরাপিতে যে নিহিলিজম দর্শনই প্রতিফলিত হবে, তা নয়, রোগীর অনিচ্ছায়, অজান্তেই বদলে যেতে থাকবে।

সবার আগে মানুষ ‘কিছুই না’ তত্ত্বে যদি দীক্ষা নেয় তাহলে খুবই বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এতে বলা হয়, মানুষ প্রকৃতপক্ষে কিছুই নয়।

অর্থাৎ মানুষ জৈবিক, মানসিক এবং সামাজিক অবস্থার ফলাফল ছাড়া আর কিছুই নয়। কিংবা সে বংশগতি অথবা প্রকৃতির ধারক মাত্র। এ দৃষ্টিভঙ্গির ফলে মানুষের মধ্যে তার পাগলামির উপরই এক ধরনের বিশ্বাস জন্মায়। তিনি বাহ্যিকভাবে বা আভ্যন্তরীণভাবে পরিস্থির শিকার হোন। তখন স্নায়বিক সমস্যা আরও গুরুতর হয় সাইকোথেরাপির কারণে। এবং দুঃখের বিষয় তখন এই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া মানুষের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়, মানুষ সীমাবদ্ধ প্রাণী। তার স্বাধীনতাও সীমিত। এর ফলে সে পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে পারে না। বরং পরিস্থিতির দিকে আরও বেশি এগিয়ে যায়। এক আলোচনায় বলেছিলাম, ‘আমি একজন অধ্যাপক। স্নায়ুবিজ্ঞান এবং মনোরোগ— এই দুটো বিষয় নিয়েই আমার কাজ। তাই মানুষ কতটুকু জৈবিক, মানসিক এবং সামাজিক অবস্থার সমষ্টি— এ বিষয়ে আমি বেশ ভালো ভাবেই জানি। এছাড়াও আমি আরেকটু বিষয় যোগ করতে চাই। এই দুটো বিষয়ে অধ্যাপনা করা ছাড়াও আমি চারটি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে বেঁচে ফিরে এসেছি। তাই বেশ ভালোভাবেই জানি, পৃথিবীর বাস্তবতা কত অবাস্তব। কত অসম্ভব ঘটনা যে ঘটতে পারে তা আমি নিজেই প্রত্যক্ষ করেছি। তাই জানি, কত বাজে পরিস্থিতিও মানুষ সাহসের সাথে মোকাবিলা করতে পারে।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *