প্ৰথম পৰ্ব
দ্বিতীয় পৰ্ব

নুজেনিক নিউরোসেস

নুজেনিক নিউরোসেস

নুজেনিক নিউরোসেস চালক এবং প্রবৃত্তির দ্বন্দ্ব থেকে জন্ম হয় না। বরং অস্তিত্বের সমস্যা থেকেই এর জন্ম।

জীবনের অর্থ খোঁজা- থেকে উদ্ভুত হতাশা এ ধরনের সমস্যায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, নুজেনিক ক্ষেত্রে সাধারণত সাইকোথেরাপি যথেষ্ট ভূমিকা পালন করতে পারে না। এর চেয়ে লোগোথেরাপি বেশ কার্যকরী। লোগোথেরাপি এমন এক থেরাপি যা হিউম্যান ডাইমেনশনের মধ্যে প্রবেশের সাহস রাখে।

একটি উদাহরণ দিচ্ছি। মনোচিকিৎসার জন্য একজন উচ্চপদস্থ আমেরিকান কূটনৈতিক ভিয়েনায় আমার অফিসে এসেছিল। যদিও তিনি পাঁচ বছর আগেই নিউ ইয়র্কের একজন বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। তখনই তার চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু উল্লেখযোগ্য উন্নতি হচ্ছিল না। তাই তিনি আমার কাছে আসেন। প্রথমেই তাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে কেন একজন মনোবিশ্লেষকের শরণাপন্ন হয়েছিল? কেন তার মনে হয়েছিল, এমনটা করা উচিত। তিনি যা বললেন, তাতে বুঝতে পারলাম, তিনি তার চাকরি নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। শুধু তাই নয়, আমেরিকান পররাষ্ট্র নীতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে তার বেশ ঝামেলা হচ্ছিল। তার চিকিৎসক তাকে বারবার বলেছিলেন, তার বাবার সাথে সব ঝামেলা মিটিয়ে ফেলার জন্য। কারণ বাবার প্রতি তার মনে ঘৃণা জন্মেছিল। আর সেই ঘৃণা বা রাগ গিয়ে পড়েছিল আমেরিকান পররাষ্ট্রনীতির উপর। তার মনোচিকিৎসক তাকে এভাবে বুঝিয়েছেন, কিন্তু কাজ হয়নি। আসলে বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। বেশ কয়েকবার আলোচনার পর বোঝা গিয়েছিল, তার মন পড়ে আছে অন্য কোনো চাকরির উপর। অবশেষে দেখা গেল, তার বর্তমান চাকরি না ছাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। তিনি চাকরি ছেড়ে দিলেন। যথাসম্ভব পছন্দের একটি চাকরি নিলেন। এতে তিনি খুশিই ছিলেন। তিনি সম্প্রতি আমার সাথে দেখা করেছিলেন। জানালেন নতুন চাকরি বেশ আনন্দের সাথেই করছেন। ইতোমধ্যে পাঁচ বছর চলে গেছে। এখন তার মধ্যে কোনো হতাশা নেই। আমার সন্দেহ আছে, আমি তার স্নায়বিক অবস্থা নিয়ে কাজ করেছিলাম কি না? কারণ আমার মনে হয়েছিল তার কোনো সাইকোথেরাপি বা লোগোথেরাপির প্রয়োজন নেই। এরকম মনে হবার কারণ খুব সহজ। তাকে আমার ঠিক রোগী বলে মনে হয়নি। সব সংঘাতই মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় না। বরং কিছু কিছু সংকট, সংঘাত স্বাভাবিক এবং খুবই উপকারী। ঠিক একই ভাবে বলা যায়, সব দুর্ভোগ রোগের কারণে হয় না। বরং এই স্নায়বিক সমস্যার লক্ষণ মানুষের বিশেষ কোনো অর্জনও হতে পারে। বিশেষ করে যখন সে অস্তিত্বরক্ষার জন্য লড়াই করে। কেউ যখন তার অস্তিত্বের অর্থ অনুসন্ধান করে অথবা সেটার প্রতি সন্দেহ পোষণ করে, যার ফলে সে হতাশ হয়ে যায় এবং নানান রোগ তার শরীরে বাসা বাঁধে- আমি এইসব বিষয়কে কড়াকড়ি ভাবেই অবজ্ঞা করি। অস্তিত্বজনিত হতাশা নিজেই নিজের জন্য দায়ী। এটি কোনো মানসিক সমস্যার কারণে হয় না। একজন মানুষের উদ্বেগ, হতাশা এমনকি তার সার্থকতা অস্তিত্বের যন্ত্রণার উপর নির্ভর করে। তবে আবারও বলি এটি কোনো মানসিক সমস্যা নয়। কোনো ডাক্তার যদি তার রোগীকে প্রাথমিক অবস্থাতেই মোটিভেট করতে পারে, অনুপ্রাণিত করতে পারে, তাহলে এটা ভালো হয়ে যেতে পারে। এরজন্য কোনো ওষুধের প্রয়োজন নেই। রোগীকে ঠিক মতো পথ দেখিয়ে সুস্থ করে তোলা, তার অস্তিত্বের সংকট দূর করাই একজন ডাক্তারের কাজ।

লোগোথেরাপির মূল কাজই হলো রোগীকে তার জীবনের মানে খুঁজে বের করতে সাহায্য করা। লোগোথেরাপি একটি বিশ্লেষণাত্মক প্রক্রিয়া। এটি ধীরে ধীরে রোগীর অস্তিত্বে লুকিয়ে থাকা শক্তিকে জাগ্ৰত করে। এক্ষেত্রে লোগোথেরাপির সাথে মনোবিজ্ঞানের মিল আছে। তবে লোগোথেরাপি চেষ্টা করে সচেতন ভাবে তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে। ব্যক্তির অবচেতন মনের প্রবৃত্তি সীমাবদ্ধতাকে কাজে না লাগিয়ে বাস্তব অস্তিত্বের যত্ন নেয়া, জীবনের অর্থ খুঁজে বের করতে সাহায্য করা। লোগোথেরাপি রোগীর অস্তিত্বে কোনো কোনো শক্তি লুকায়িত আছে, তা তাকে উপলব্ধি করানোর চেষ্টা করে। সবশেষে বলা যায়, মনোবিজ্ঞানের সাথে লোগোথেরাপির মূল পার্থক্য হলো লোগোথেরাপি মানুষের জীবনকে অর্থবহ করে তুলতে সাহায্য করে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *