ধর্মের সাংগঠনিক রূপ

ধর্মের সাংগঠনিক রূপ

মানুষের কল্পনার সঙ্গে মানসিক ও সামাজিক চাহিদা মিলে পৃথিবীর বিভিন্ন মনুষ্যগোষ্ঠীর মধ্যে ধীরে ধীরে সংগঠিত নানা ধর্ম বিকাশ লাভ করতে থাকে—যেগুলি পরবর্তীকালে বিশেষ বিশেষ নামে পরিচিত হয়েছে। এ সমস্ত ধর্মেরই আদি উৎস ছিল ঐ সর্বশক্তিমান অতি-প্রাকৃতিক শক্তি তথা ঈশ্বরের কল্পনা, প্রকৃতির রহস্যময়তা ও নিজেদের অসম্পূর্ণ জ্ঞানের থেকে আসা অলৌকিক শক্তির কল্পনা। মানুষের জ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক চিন্তার বিকাশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই ধর্মচিন্তা, ছিল ও আছে সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও সম্পর্কের সঙ্গেও। পরবর্তীকালে এই জ্ঞান ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার রূপান্তর পৃথিবীর সর্বত্র সমানভাবে হয় নি। একইভাবে হয় নি ধর্মীয় চিন্তার বিকাশও। তাই আফ্রিকার জঙ্গলের অধিবাসীরা যখন গাছ, সাপ, বা কোনো পাথরের টুকরোকে পূজো করছে, তখন ভারতের কিছু মানুষ নিরাকার ব্রহ্মের মতো জটিল একটি চিন্তাপদ্ধতিতে নিজেদের লিপ্ত করেছে, কিংবা আরব অঞ্চলে মহম্মদ ঈশ্বরের নির্দেশ হিসেবে ‘কোরআন’ প্রচার করে ছিন্নবিচ্ছিন্ন আরব জাতিকে সুশৃঙ্খল ও মনুষ্যত্ববোধে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

আজ এতদিন পরে নতুন পুরনো মিলিয়ে, নানা নামের এত অজস্র ধর্মমত সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে যে, তাদের প্রতিটির জন্মকথা বলা স্বল্প পরিসরে সাধ্যাতীত। কীভাবে মানুষ এবং একমাত্র সংঘবদ্ধ মানুষই নানা ধর্মের বিকাশ ঘটিয়েছে তার প্রাথমিক আভাস দেওয়ার চেষ্টা করা যায় মাত্র। প্রথমে এক্ষেত্রে ‘হিন্দুধর্ম’ দিয়ে শুরু করা যেতে পারে, কারণ ভারত নামের যে ভূখণ্ডে আমরা বসবাস করি তাতে এই ধর্মাবলম্বী বলে পরিচিত লোকেরাই সংখ্যাগুরু এবং পৃথিবীতে অন্তত শতকরা ৫ ভাগের বেশি মানুষ যে-সব ধর্মে বিশ্বাস করেন ঐ ধরনের মাত্র চারটি ধর্ম রয়েছে (খ্রীস্ট, ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ)—এদের মধ্যে উৎসমূলের প্রাচীনত্ব বিচারে হিন্দুধর্ম প্রাচীনতম।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *