আদিবাসী ধর্ম

আদিবাসী ধর্ম

অন্যদিকে শামানতন্ত্রের মতো আরো নানা ধরনের আদিম ধর্মবিশ্বাস পৃথিবীর নানা দেশের মূলত আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত রয়েছে। এদের এক কথায় আদিবাসী ধর্ম (Tribal religion) বলা হলেও বিভিন্ন এলাকায় তার বিভিন্ন রূপ, আধুনিক ইসলাম-বৌদ্ধ-হিন্দু ইত্যাদির মতো এতটা সুসংবদ্ধ নয়। আর এদের অধিকাংশের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্নভাবে শামানতন্ত্রেরও মিশ্রণ রয়েছে। তবু কিছু কিছু স্বাতন্ত্রের জন্য শামানতন্ত্রকে এই ‘আদিবাসী ধর্ম’ থেকে আলাদা করা হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই আদিম ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির সংখ্যা বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যার শতকরা ১.৭ ভাগ এবং তারা ৯৮টি দেশে ছড়িয়ে আছে।

প্রকৃতপক্ষে আদিবাসী ধর্মকে শামানতন্ত্রের থেকেও আদিম চিন্তা হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রস্তরযুগীয় ধ্যানধারণা, চূড়ান্ত অজ্ঞতা ও প্রকৃতির কাছে অসহায়তার ছাপ এর মধ্যে স্পষ্ট। টোটেম জাতীয় ধারণা, স্থুল যাদুবিদ্যার সাহায্যে জীবনকে নিরাপদ করার ও কিছু পাওয়ার চেষ্টা করা, ইত্যাদি ছাড়া জটিল দার্শনিক চিন্তা কিংবা আত্মা-ঈশ্বর দেবদেবী সম্পর্কিত সুষ্পষ্ট মতবাদ আদিবাসী ধর্মে প্রায় অনুপস্থিত।

আফ্রিকার বুশম্যান, পিগমি, বাম্বুটি (Bambuti) ইত্যাদি ও ইতুরি নদী সংলগ্ন আদিবাসীরা; আমেরিকার বোরোবোয়ান, ওনা, ইযায়ান, আলিকালুফ; এশিয়ার সাঁওতাল, ওঁরাও, মুণ্ডা, কুবু (সুমাত্রা), সেমাং (মালয়েশিয়া), ভেদ্দা (শ্রীলংকা), আইনু (হোক্কাইডো, জাপান), ইত্যাদি ইত্যাদি নানা গোষ্ঠীর মধ্যে বহু বিচিত্রভাবে আদিবাসী ধর্মের উদাহরণ ছড়িয়ে আছে।

বাম্বুটিদের মধ্যে আত্মা সম্পর্কে একটি অতি প্রাথমিক স্তরের কল্পনা রয়েছে। তারা মনে করে মৃত্যুর পর সেটি টোটেম প্রাণীতে পরিণত হয়। পিগমিরা এখনও আদিম কমিউন গড়ে বসবাস করে। বুশম্যানদের মধ্যে রয়েছে শিকার করার জন্য নানা মন্ত্রতন্ত্র। ইয়াযানদের মধ্যে রয়েছে শামানচিন্তা, শামানদের আধিপত্যও সামান্য রয়েছে। আইনুরা আগুনের রক্ষাকর্ত্রী হিসেবে এক দেবীর কল্পনা করে, উনুনকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানাদি করে এবং মাতৃতন্ত্রের অবশেষ থাকলেও নারীদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে দেয় না। কারোর মৃত্যুর সময় কোন আওয়াজ না শুনলে তবেই কুবু-রা ভাবে যে সে ব্যক্তি প্রকৃতই মারা গেল; কিন্তু কোন ধরনের শব্দ কানে এলে তার ব্যাখ্যা করে ও ‘মৃত’ ব্যক্তির ভবিতব্য নির্ধারণ করে। গোষ্ঠীর মধ্যে রোগ-অকালমৃত্যু ইত্যাদির জন্য সাঁওতালরা তাদের নিজেদের মধ্যেকার কাউকে ডাইনি বলে ভাবে ও তাকে শাস্তি দেয়। এবং এধরনের একটি ক্ষতিকর, বদ্ শক্তির অস্তিত্ব সম্পর্কে কল্পনা প্রায় সব আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যেই নানা ভাবে রয়েছে।

আর এভাবেই বহু বিচিত্র খুঁটিনাটি নিয়ে পৃথিবীতে এখনো টিকে থাকা শতশত তথাকথিত আদিবাসী গোষ্ঠী তাঁদের নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস অনুসরণ করে চলেছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *