অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়
ষাটের দশকের শেষের দিকে কলকাতা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে একটা বিপুল আন্দোলন হয়েছিল। সেই সময়ে সিনেমা হলের শ্রমিকরা একটা স্ট্রাইক করেছিলেন তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে। ১০০ দিন চলেছিল এই স্ট্রাইক। আমি তখন অভিনেতৃ সঙ্ঘের সম্পাদক। আমরা ওই স্ট্রাইক সমর্থন করেছিলাম। তার জন্য মালিকদের সংগঠন ই আই এম পি এ গোপনে আমাদের কয়েকজনকে ব্ল্যাক লিস্ট করে। অভিনেতাদের ওপর ওই আন্দোলন থেকে সরে আসার জন্য প্রচুর চাপ সৃষ্টি করে ই আই এম পি এ এবং তার কাছে নতিস্বীকার করে বহু অভিনেতাই সরে দাঁড়ান। সেই সরে যাওয়ার সময় দুজন অভিনেতা যাঁরা আগে অভিনেতৃ সঙ্ঘের সদস্য ছিলেন না, স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে আমাদের সদস্য হন। একজন ছিলেন নির্মল ঘোষ আর একজন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেই থেকে আমার এই দুজনের সঙ্গে বন্ধুত্বের শুরু এবং এঁদের প্রয়াত হওয়ার দিন পর্যন্ত সেই বন্ধুত্ব ছিন্ন হয়নি। এঁরা দুজন যে শুধুমাত্র সাংগঠনিক কাজেই আমার হাত শক্ত করেছিলেন তা নয়, অভিনেতৃ সঙ্ঘ থেকে ভাল নাটক করার প্রয়াসকেও এঁরা পুষ্ট করেছিলেন।
আমি অজিতেশকে অনুরোধ করি সঙ্ঘের জন্যে একটি নাটক করতে, তিনি তা স্বীকার করে ধরমবীর ভারতীর ‘অন্ধ যুগ’ নাটকটি করেন। এর পরে পরেই বোম্বাইতে অভিনয়ের জন্যে দুটি নাটকের আমন্ত্রণ এলে অজিতেশ আমাকে ইবসেনের গোস্ট নাটকটি করবার পরামর্শ দেন এবং থিয়েটারে নির্দেশনার কাজে আমার একটা নতুন অধ্যায় শুরু হয়।
‘অন্ধ যুগের’ ৪০ দিন মহলা হয়েছিল। সেই ৪০ দিনই উপস্থিত ছিল ৩ জন— জগৎ মিত্র, আমি এবং পরিচালক অজিতেশ। সেই মহলার সময় থেকেই দেখেছি তাঁর নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষমতা। তার আগে ও পরে তাঁর অনেক নাটকের অভিনয় দেখেই মুগ্ধ হয়েছি এবং সেই সব কাজের মধ্যেও যত্ন ও পরিশ্রমের প্রকাশ দেখতে পেয়েছি। তাঁর মঞ্চের অভিনয়ে যে প্যাশন ও এনার্জির উদ্ভাস দেখেছি তার তুলনায় খুব বড় দু-একজন অভিনেতা ছাড়া কারও মধ্যেই দেখিনি।
যে সময় তাঁর ক্ষমতা চূড়ান্ত পরিপক্কতায় এসে পৌঁছল, সেই সময়েই অকালে তাঁকে মৃত্যু টেনে নিল। এই ক্ষোভ কার কাছে জানাব?