৬. ইভ নিউইয়র্কে ফিরে এসেছে

২৬.

ইভ নিউইয়র্কে ফিরে এসেছে। সে একটা হোটেলে উঠল। তাকে যেমনটি বলা হয়েছিল। এক ঘণ্টা বাদে ব্রাড রজারসের টেলিফোন তোমার ঠাকুরমা প্যারিস থেকে ফোন করেছেন। ইভ, মনে হচ্ছে কোনো সমস্যা।

না, এটা আমাদের পারিবারিক ব্যাপার।

 উনি ওনার উইলটা নতুন করে লিখবেন।

–হ্যাঁ, এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

–সোমবারে দেখা হবে।

ব্রাড, হা, সোমবারে।

–আমার অফিসে, ঠিক আছে।

***

ইভ ক্রুগার ব্রেন্ট লিমিটেডের অফিসে পৌঁছে গেছে। সিকিউরিটি গার্ড তাকে দেখে অভিবাদন জানাল। হ্যাঁ, আমি এই সামাজ্যের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী।

ব্রাড অবাক হয়ে গেলেন। কেটি টেলিফোন করেছেন কেটি বলেছেন, তিনি ইভকে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন। কিন্তু কেন? ইভকে ওর ঠাকুরমা খুবই ভালোর্বাসেন। এর মধ্যে কী ঘটনা ঘটেছে? কিন্তু ব্রাডের কাজই হল কেটির সমস্ত আদেশ পালন করা। তিনি তো আর বাধা দিতে পারেন না।

তিনি বললেন ইভকে কয়েকটা কাগজে সই করতে হবে। তুমি সেগুলো পড়ো আর সই করো।

–তার কোনো দরকার দেখছি না।

ইভ, তুমি বুঝতে পারছ না, তোমার ঠাকুরমার উইল অনুসারে তুমি আজ থেকে প্রতি সপ্তাহে ২৫০ ডলার করে পারে। তোমার ঠাকুরমা তোমার নামে একটা মস্ত বড়ো ফান্ড রেখে যাচ্ছেন। তার পরিমাণটা খুব একটা কম হবে না। সেটা হল ৫০ লক্ষ ডলার। কিন্তু সেই টাকাটা তুমি পাবে পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে।

–অসম্ভব। আজ একটা ভালো পোশাক কিনতে গেলে অনেক খরচ হয়ে যায়। এইভাবে কেন আমাকে অপমানিত করা হচ্ছে? ইভের মনে হল, সামনে ব্রোঞ্জের যে পেপার ওয়েটটা আছে, সেটা দিয়ে ব্রাডের মাথাটা থেঁতলে দেবে। কিন্তু পারল না।

ব্রাড অবাক হয়ে গেছে- তুমি ব্ল্যাকওয়েলদের নাম আর ব্যবহার করতে পারবে না। তোমাকে সম্পূর্ণ আলাদা থাকতে হবে।

..হ্যাঁ, তোমার নামের সাথে যদি কোনো গুজব ছড়িয়ে যায়, পত্রিকাতে কিংবা অন্য কোথাও তোমার ছবি ছাপা হয়, তাহলে তোমার সাপ্তাহিক টাকাটা বন্ধ করে দেওয়া হবে। সবকিছু বুঝতে পারছ তো?

. …তোমার এবং তোমার বোন আলেকজান্দ্রার নামে বীমার পত্র আছে। তোমার ঠাকুরমা এটাকে পরিবর্তন করতে চাইছেন। এই পলিসিটাকে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এই বছরের শেষে যদি তোমার ব্যবহারে ঠাকুরমা খুশি থাকেন, তাহলে তোমার সাপ্তাহিক মাসোহারার পরিমাণ দ্বিগুণ করে দেওয়া হবে। আর একটা কথা বলার আছে।

বলুন।

 –তুমি কোনোদিন ঠাকুরমার সঙ্গে দেখা করবে না।

বুড়ি কুত্তি শয়তানি, তোর মুখ আমি দেখব না। তুই পচে মর, তাতে আমার কী এসে গেল?

ব্রাডের কণ্ঠস্বরে তীক্ষ্ণতা–যদি তোমার কোনো সমস্যা থাকে, তুমি আমাকে টেলিফোন করো। তুমি ওই বাড়িতে আর কখনও যেও না, কেমন?

এভাবেই আলোচনা শেষ হয়ে গেল।

ব্রাড জানতে চাইল কোনো প্রশ্ন আছে কি?

-না।

–তাহলে এখানে সই করো।

 দশ মিনিট কেটে গেছে। ইভ এখন রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে। তার পকেটে ২৫০ ডলার!

পরের দিন সকালবেলা ইভ একজন রিয়েল স্টেট এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করল। তাকে একটা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিতে হবে। মনে মনে অনেক কিছুই সে ভাবছে। কিন্তু এইটুকু অর্থে চলবে কী করে? শেষ অব্দি একটা ছোটো অ্যাপার্টমেন্ট নিতেই হবে। ঠাকুরমাকে গালাগালি দিল মন খুলে। কিন্তু কোনো উপায় নেই।

ইভের কাছে এটা একটা বন্দিশালা। না, সে আলেকজান্দ্রার কথা চিন্তা করল। আলেকজান্দ্রা ওই বিরাট প্রাসাদে থাকবে, আর আমি এইভাবে জীবন কাটাব। কিন্তু সমস্যার সমাধান কোথায় হবে!

***

–মিস ব্ল্যাকওয়েল, বলল, তোমার জন্য আমি কী করতে পারি? আলভিন সিগ্রাম জানতে চাইলেন। তিনি ন্যাশনাল ইউনিয়ান ব্যাঙ্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তার হাতে অনেকের ভাগ্য জড়িয়ে আছে। জুগার ব্রেন্টের প্রধান অ্যাকাউন্ট এই ব্যাঙ্কে অবস্থিত।

ইভ বোঝাবার চেষ্টা করল– আমার নামে কিছু টাকা জমা আছে। পঞ্চাশ লক্ষ ডলার। এই ট্রাস্টের নিয়মানুসারে পঁয়ত্রিশ বছরের আগে আমি টাকাটা পাব না। অনেক দিন সময় লাগবে।

-হ্যাঁ, তোমার এখন কত বয়স হবে, উনিশ বোধহয়।

একুশ।

–তোমাকে তো আর তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা যায় না।

 ইভ ভালোভাবে হাসার চেষ্টা করল- ধন্যবাদ, মিঃ সিগ্রাম।

লোকটা বোকা হাঁদা। একে ফাঁদে ফেলতে হবে।

–আমার কাছ থেকে তুমি কী সাহায্য চাইছ?

–আমি কি ট্রাস্ট ফান্ড থেকে কিছু টাকা ধার পেতে পারি? পরে আমি শোধ করে দেব। আমার বিয়ের সম্বন্ধ চলছে। আমার প্রেমিক একজন কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার। ইজরায়েলে কাজ করে। আগামী তিনবছর তাকে ইজরায়েলে থাকতে হবে।

আলভিন সিগ্রাম সহানুভূতির কণ্ঠস্বরে বললেন আমি বুঝতে পারছি। তার মন এখন আনন্দে নাচছে। আহা, এই মেয়েটির তো আবেদন রাখতেই হবে। সবসময় ট্রাস্ট ফান্ড থেকে টাকা অগ্রিম দেওয়া যায়। মেয়েটি যদি আমাকে খুশি করতে পারে, তাহলে আরও –আরও বেশি দেওয়া হবে।

আলভিন বললেন কোনো সমস্যা নেই। অতি সহজেই এর সমাধান হয়ে যাবে। আমরা তোমাকে পুরো টাকাটা ঋণ হিসেবে দিতে পারব না, কিন্তু অনেকটাই দেব। মনে করো তোমাকে যদি ১০ লক্ষ ডলার দেওয়া হয়, তাহলে চলবে?

ইভের মন আনন্দে আত্মহারা হ্যাঁ, চলবে।

-তুমি আমাকে ওই ট্রাস্টের পুরো হিসাবটা দিয়ে যেও।

–আপনি ব্রাড রজারসের সঙ্গে কথা বলুন, উনি আপনাকে সব খবর দেবেন। ইভ আবার বলল, কতদিন সময় লাগবে?

একদিন-দুদিনের মধ্যে হয়ে যাবে।

ইভ অফিস থেকে বেরিয়ে এসেছে। আলভিন সিগ্রাম টেলিফোন নিয়ে ব্রাড রজারসের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলেন।

দুদিন বাদে ইভ ব্যাঙ্কে ফিরে এল। আলভিন সিগ্রামের অফিসে পৌঁছে গেল। ভদ্রলোক বললেন মিস ব্ল্যাকওয়েল, আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারছি না।

-কেন? আপনি যে বললেন ব্যাপারটা খুবই সহজ।

–না, আমি সব তথ্য জানতাম না। ব্রাডের সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, ভদ্রলোকের মনে পড়ে গেল। হ্যাঁ, পঞ্চাশ লক্ষ ডলারের একটা ফান্ড আছে ইভ ব্ল্যাকওয়েলের নামে। কিন্তু টাকাটার কোনো অংশই ইভকে। দেওয়া উচিত নয়। ইভের চরিত্র ভালো নয়। সে উল্টোপাল্টা খরচ করে।

ব্রাড রজারস এসব কথা কেন বলতে গেল। শেষ পর্যন্ত এই ভদ্রলোকের মন বিগড়ে গেছে।

উনি আবার বললেন আমি কিছুই করতে পারব না।

ইভ খুবই হতাশ হয়েছে, সে বলল- ধন্যবাদ। আপনাকে কষ্ট দিলাম, এজন্য আমাকে ক্ষমা করবেন। দেখি, অন্য কোনো ব্যাঙ্কে সম্ভব কিনা।

আলভিন সিগ্রাম বললেন– না, পৃথিবীর কোনো ব্যাঙ্ক তোমাকে ওই ট্রাস্টের বিনিময়ে এক পেনিও ধার দেবে না।

***

আলেকজান্দ্রা অবাক হয়ে গেছে। আগে নানাভাবে ঠাম্মা ইভকে ভালোবেসেছে। সে সবসময় পেছনের সারিতেই থেকে গেছে। এখন ব্যাপারটা কী করে পাল্টে গেল। সে কীভাবে ইভকে হারিয়ে দিতে পারল।

কেটি ব্ল্যাকওয়েল আলেকজান্দ্রার সঙ্গে বেশি সময় কাটাচ্ছেন। আলেকজান্দ্রা এই অবস্থাটা মানতে পারছে না। এই জীবনটা সে কেমনভাবে কাটাবে।

এই প্রথম কেটি আলেকজান্দ্রার দিকে ভালো করে তাকালেন। হ্যাঁ, আলেকজান্দ্রার মধ্যে সম্ভাবনা আছে।

তার মধ্যে একটা অন্তর্মুখী অবস্থা আছে। সে ইভের থেকে আরও বেশি সংযমী। তার মধ্যে বুদ্ধির দীপ্তি আছে। আছে শৈশবী অনুসঙ্গী। আছে অসাধারণ সৌন্দের্যের ছটা। সে সব সময় বিভিন্ন পার্টিতে লোকেদের ভালোভাবে অভ্যর্থনা জানাতে পারে। কেটি শেষ পর্যন্ত চিন্তা করল। আলেকজান্দ্রকে বাইরে জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।

***

ইভের দিন ভালোভাবেই কেটে চলেছে। ঠাকুরমার কথা মাঝে মধ্যে মনে পড়ে। একটা পার্টিতে সে ছ-জনের সাথে যোগাযোগ করল। এই পাটিটা শেষ হবার পর বাড়িতে ফিরে এসেছে। ছ-জনের মধ্যে চারজন বিবাহিত। দুজনের কাছ থেকেই একের পর এক খবর আসতে শুরু হল। ইভ বুঝতে পারল, টাকার জন্য আর চিন্তা করতে হবে না। তাকে অনেকে উপহার দিল, নানা ধরনের জুয়েলারী, ছবির সম্ভার, এমন কী নগদ টাকা।

তারা সকলেই ইভের সঙ্গ উপভোগ করতে চাইছে। ইভকে সব সময় বাইরে দেখা গেল। বিবাহিত লোকেরা তার অ্যাপার্টমেন্টে আসতে শুরু করল। ইভ সকলের সাথেই সুন্দর ব্যবহার করে চলেছে। কিন্তু যাতে সাংবাদিকের চোখে না পড়ে তার ব্যবস্থা করেছে। সে কারোর সাথে বেশি দিন সম্পর্ক রাখছে না। যে করেই হোক ওই অপমানের প্রতিশোধ তাকে নিতেই হবে।

একদিন টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি নামে একটা খবরের কাগজের পাতায় আলেকজান্দ্রার ছবি ছাপা হল। সুন্দর চেহারার এক যুবকের সঙ্গে আলেকজান্দ্রা নাচছে। ইভ আলেকজান্দ্রার দিকে দেখছে না। লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। হ্যাঁ, যদি আলোকজান্দ্রা এই লোকটিকে বিয়ে করে এবং তার একটা পুত্রসন্তান হয়, তাহলে কী হবে?

ইভ অনেকক্ষণ ওই ছবিটার দিকে তাকিয়ে ছিল।

এক বছর ধরে আলেকজান্দ্রা নিয়ম করে ইভকে টেলিফোন করেছে। লাঞ্চ এবং ডিনারের জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। কোনো না কোনো অজুহাত দেখিয়ে ইভ সেই আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি। এখন ইভ ঠিক করল আলেকজান্দ্রার সঙ্গে কথা বলতে হবে। সে আলেকজান্দ্রাকে তার অ্যাপার্টমেন্টে ডেকে পাঠাল।

***

আলেকজান্দ্রা ওই অ্যাপার্টমেন্টে এসে ঢুকল ইভ তাকে জড়িয়ে ধরল।

আলেকজান্দ্রা বলল- এটা খুব সুন্দর, তাই না?

-হ্যাঁ, এটা আমার ভালোই লাগে।

 দেওয়ালে কতগুলো পেন্টিং ঝোলানো আছে। আলেকজান্দ্রা ঘুরে সবকিছু দেখল।

ঠাকুরমা কেমন আছে, ইভ জানতে চাইল।

ঠাকুরমা ভালোই আছে। ইভ, আমি জানি না, তোদের মধ্যে কী হল? আমি কি সাহায্য করব?

ইভ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল না। ঠাকুরমা তোকে কিছু বলেনি?

না, ঠাকুরমা এ ব্যাপারে আলোচনা করেনি।

আমি দোষ দিতে পারছি না, আমার সঙ্গে এক ডাক্তারের আলাপ হয়েছিল। আমরা বিয়ে করতে চলেছি। আমরা নিয়মিতভাবে বিছানাতে যাই। ঠাকুরমা এই খবরটা জানতে পেরেছে। সে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। সে আমার মুখ দেখবে না। অ্যালেক্স, ঠাকুরমা আগেকার দিনের মনোভাব পোষণ করে, তাই না?

আলেকজান্দ্রার মুখে কেমন একটা ছাপ- হ্যাঁ, ঘটনাটা সত্যি সাংঘাতিক। তোরা দুজন ঠাকুরমার কাছে চলে যা, আমার মনে হয় ঠাকুরমা তোদের ক্ষমা করবে।

না, এরোপ্লেন আ্যাকসিডেন্টে ছেলেটি মারা গেছে।

ইভ, তুই তো একথা আমাকে বলিসনি।

–একথা তোকে বলতে আমার লজ্জা করছিল। তবে তোকে আমি সব কথা বলতে পারি।

ঠাকুরমাকে বলব?

না, আমার কথা আর বলতে হবে না। তুই কখনও এই ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করবি না প্রতিজ্ঞা কর।

আলেকজান্দ্রা বলল- ঠিক আছে। আমাকে বিশ্বাস কর।

–ভালোই আছি, ইচ্ছে মতো ঘোরাফেরা করতে পারছি।

আলেকজান্দ্রা তার বোনের দিকে তাকাল–ইভকে সে আর পাশে পাচ্ছে না, ব্যাপারটা তাকে দুঃখ দিচ্ছে। ইভ আলেকজান্দ্রার হাতে হাত রাখল। বলল- তোর জীবন কেমন চলছে বল? কারোর সঙ্গে যোগাযোগ হল? নিশ্চয়ই কোনো প্রেমিকের সন্ধান পেয়েছিস?

না।

ইভ আলেকজান্দ্রার দিকে তাকিয়ে বলল- সত্যি বলছিস?

-হ্যাঁ, সময় তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না। ঠাকুরমার সঙ্গে কথা বলতে হবে। আসছে সপ্তাহে আমি একটা চাকরির জন্য আবেদন করব।

ইভ অবাক হয়ে গেছে। কিন্তু সে চাকরি করবে কেন?

আলেকজান্দ্রা বলল- ইভ তোর কি টাকা লাগবে?

–না, অনেক টাকা আমার হাতে আছে।

আলেকজান্দ্রা বলল, ঠিক আছে তুই আমাকে ফোন করিস কিন্তু।

 ইভ আলেকজান্দ্রার দিকে তাকাল দরকার হলে অবশ্যই করব অ্যালেক্স।

***

সপ্তাহের শেষে নাসাউতে একটা পার্টি ছিল। ইভের সব বন্ধুরা সেখানে এসেছে। নিকা নামে একটা মেয়ের সাথে ইভের আলাপ হয়েছে। নিকাকে সে সুইজারল্যান্ড থেকেই চেনে।

এখন আবার তার জীবনে সে এসেছে। সেই সন্ধ্যাতে ইভ একটা সুন্দর মরকতের ব্রেসলেট পরে ছিল। এক সপ্তাহ আগে একজন ইনসিওরেন্স এগজিকিউটিভ তাকে ওই ব্রেসলেটটা উপহার দিয়েছে। তাকে বেশ কয়েকটা পোশাক দেওয়া হয়েছে।

***

বিরাট ম্যানসন সমুদ্রের ধারে। প্রধান বাড়িতে তিরিশটা ঘর আছে। সব থেকে ছোটো ঘরটা ইভের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে অনেক বড়ো। ইভকে এক পরিচারিকা তার ঘরে নিয়ে গেল।

ড্রয়িংরুমে ষোলো জন মানুষ বসে আছে। তারা সকলেই যথেষ্ট অর্থবান। নিকা ইভের মতো মতবাদে বিশ্বাস করে। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় উড়ে বেড়াতে ভালোবাসে।

ইভ সকলকে অধিকার করার চেষ্টা করছে। বেশির ভাগ লোকদের বিয়ে হয়ে গেছে। তাই ফাঁদে ফেলাটা অত্যন্ত সহজ।

টাক মাথার একটা লোক হাওয়াইয়ান স্পোর্টস শার্ট পরেছিল। সে বলল– বলো তোমার নাম কী? তুমি কি আমাকে সুখ দিতে পারবে? তোমার তো হলিউডের স্টার হওয়া উচিত।

–আমি কি অতখানি প্রতিভাশালী? ইভ জানতে চাইল।

–হ্যাঁ, তুমি এখানে একা আছো?

হা।

 –আমার প্রমোদ তরণী সমুদ্রে আছে। তুমি আর আমি কি কাল সেখানে যেতে পারি?

–হ্যাঁ।

–ঠিক আছে, ওখানে অনেক কথা হবে কেমন? তোমার ঠাকুরমাকে আমি চিনি অনেক বছর ধরে। ইভের ঠোঁটে হাসি। সে বলল-ঠাকুরমার কোনো তুলনা নেই। আমি এখন একটু ওদিকে যাচ্ছি, কেমন?

ভদ্রলোক বলল- মনে আছে তো কাল?

***

ইভ এখন আর একা নয়। তখন থেকে অনেক বন্ধু জুটে গেছে তার। একটার পর একটা তরঙ্গ আসছে, সমুদ্রটা শান্ত, মনে হচ্ছে, আকাশে নক্ষত্ররা হিরের মতো জ্বলছে। ইভ প্যারাডাইস আইল্যান্ড বিচকে দেখতে পেল। একটা মোটরবোট এগিয়ে চলেছে। হ্যাঁ, এই তো জীবন, এই তো আসল আনন্দ!

***

নিকার ড্রয়িংরুম, পাঁচ ঘণ্টা বাদে। ইভের মনে হল, সে বোধহয় এত আনন্দ কোনো দিন পায়নি। সে চোখ খুলল। হ্যাঁ, ছফুট লম্বা মানুষটি, অসাধারণ দেহ সুষমা। কালো চোখ, অ্যাথলেটের মতো শরীর। সে হাসছে, অন্ধকারে ঝিকিয়ে উঠছে তার সাদা দাঁত।

–আমি জর্জ মেলিস, তুমি তো ইভ ব্ল্যাকওয়েল? তুমি এখানে?

–হ্যাঁ, কণ্ঠস্বর কেমন যেন।

–এসো ডার্লিং, নিকা বলল, তোমাদের সাথে আর সকলের আলাপ করিয়ে দিই।

না, সকলের সঙ্গে কথা হয়েছে। জর্জ বলল।

নিকা দুজনের দিকে তাকাল- ঠিক আছে। দরকার হলে আমাকে ডেকো।

 ইভ হাসছে, আরও একজন-আরও একজন তার জীবনে প্রবেশ করছে।

ইভ এখন একে গ্রাস করবে। সব কিছু।

ইভ জানতে চাইল তোমার পরিচয়?

–আমি গ্রিক, আমার পরিবার চাষ করে থাকে। বিরাট খামার আছে আমাদের। হা, মেলিসের নাম সবাই জানে। আমেরিকাতে ওদের সুপার মার্কেট আছে।

–তোমার বিয়ে হয়েছে?

না।

এই উত্তরটা আনন্দ দিয়েছে ইভের মনে।

–এসো, আমরা কিছু ব্যক্তিগত কথা বলি।

 ইভের সাথে সমস্ত সন্ধ্যেটা কেটে গেছে। তারা একসাথে সিগারেট খেয়েছে। ড্রিক করেছে। মধ্যরাত। গেস্টরা একে একে বিদায় নিতে শুরু করেছেন।

জর্জ বলল- তোমার বেডরুম কোনটা?

–উত্তরে, হলের একেবারে শেষের দিকে।

জর্জের চোখে আনন্দের হাসি।

***

ইভ পোশাক খুলল, চান করল। ছোট্ট একটা রাত পোশাক পরল। কালো রঙের নেগিলি, কোনোরকমে তার শরীরকে আটকে রেখেছে। রাত একটা। দরজাতে হাতের শব্দ। সে খুলে দিল। জর্জ ঢুকে পড়েছে।

জর্জের চোখে বিস্ময়- হায়, তুমি তো ভেনাসের মতো সুন্দরী।

-হ্যাঁ, এটাই আমার সম্পদ। এসো, তোমাকে একটু আদর করব।

সে জর্জকে জড়িয়ে ধরল। একটা ঠোঁটের খেলা। জিভে জিভে ঠোকাঠুকি।

 ইভের চিৎকার- হায় ঈশ্বর!

জর্জ তার জ্যকেট খুলল, ইভ তাকে সাহায্য করল। এক মুহূর্তের মধ্যে জর্জ সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে গেল। অসাধারণ শরীর আছে তার। সেটা শক্ত হয়ে উঠেছে।

ইভ বলল– তাড়াতাড়ি, আমার ভেতরে ঢুকিয়ে দাও। আমি আর থাকতে পারছি না।

জর্জ বলল- হ্যাঁ, তুমি উল্টে শোও, আমি অন্যভাবে তোমাকে আদর দেব।

 ইভ অবাক হয়ে গেছে সে কী? সত্যি? না-না।

জর্জ বারবার বলছে। তাকে এভাবে করতেই হবে।

-প্লিজ, ওভাবে করো না।

 জর্জ আবার আঘাত করার চেষ্টা করল। সে ইভকে ঘুরিয়ে শুইয়ে দিল।

না, আমি মরে যাব!

 হ্যাঁ, শেষ অব্দি কাজটা হয়েছে, ইভ তার চেতনা হারিয়ে ফেলেছে। মনে হচ্ছে সে বোধহয় বাতাসে ভেসে চলেছে। জর্জ সেটা ঢুকিয়ে দিয়েছে। একেবারে ভেতরের দিকে। ইভ চিৎকার করার চেষ্টা করছে।

শেষকালে ইভ বলল- আমাকে এভাবে আঘাত দিও না।

সে জর্জকে ঠেলে দেবার চেষ্টা করল। কিন্তু জর্জ তার নিতম্বকে শক্তভাবে ধরে রেখেছে। বারবার সেখানে ঢোকাচ্ছে, হা, তার বিশাল আকারের লিঙ্গটি। অসম্ভব যন্ত্রণা।

ইভ বলছে– বন্ধ করো।

জর্জ আরও ভেতরে ঢুকিয়ে দিল। ইভের মনে হল একটা তীব্র যন্ত্রণা ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসছে।

 শেষ পর্যন্ত সে তার চেতনা ফিরে পেয়েছে। চোখ খুলল। জর্জ চেয়ারে বসে আছে। পোশাক পরে নিয়েছে। সিগারেট খাচ্ছে। সে ইভের মাথায় হাত রাখল। ইভ তখনও চিৎকার করছে।

-কেমন লাগল?

 ইভ কথা বলার চেষ্টা করছে, ভীষণ যন্ত্রণা, তুমি একটা শূয়োর। তার কণ্ঠস্বরে তীক্ষ্ণতা।

-হ্যাঁ, আমি তোমাকে ব্যথা দিতে চেয়েছিলাম।

–কেন?

সে হাসল। মাঝে মধ্যে আমি এমন আচরণ করি। কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি। প্রতি রাতে আমি তোমাকে এভাবেই আদর দেব।

ইভের মনে হল কিছু একটা বলবে। সে বলল- তুমি একটা উন্মাদ।

সে জর্জের চোখের দিকে তাকাল, চোখের মধ্যে একটা আগ্রহ। ইভ তাড়াতাড়ি বলল, না আমি এভাবে বলতে চাইনি। এসো, তুমি আমার পাশে শোবে এসো।

জর্জ মেলিস অনেকক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকল। সে পাশে এসে বসল। হ্যাঁ, তার জুয়েলারীর দিকে তাকিয়ে থাকল, প্লাটিনামের ব্রেসলেট। দামী হিরের নেকলেস, জর্জ নেকলেসটার দিকে তাকাল। বলল– এটাকে আমি স্মৃতি হিসেবে রেখে দেব।

ইভ কিছু বলতে পারল না।

-শুভরাত ডার্লিং। সে বাইরে বেরিয়ে গেল। যাবার আগে ইভকে আদর দিল ঠোঁটের ওপর।

ইভ অনেকক্ষণ একা বসে ছিল। একটা যন্ত্রণা তখন তাকে গ্রাস করেছে। হ্যাঁ, যৌনতা কী মারাত্মক।

ইভ বাথরুমে চলে গেল। আয়নায় তাকাল। চোখ মুখ বসে গেছে। বুঝতে পারল, একটা চোখে বেশ আঘাত লেগেছে। সে হটবাথ নিল। এক বন্য কুকুরীর মতো হেঁটে গেল।

তারপর? ঘুম–শুধু ঘুম!

***

সকালবেলা ইভের ঘুম ভেঙে গেছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে বিছানা। হ্যাঁ, এজন্য লোকটাকে শাস্তি দিতেই হবে। সে আবার স্নান করল। জায়গায় জায়গায় ফুলে গেছে। জর্জের কথা মনে হচ্ছে। জর্জের আচরণের মধ্যে একটা অদ্ভুত নির্মমতা লুকিয়ে আছে।

দু-ঘন্টা কেটে গেছে। ইভ নীচে নেমে এসেছে। অন্য গেস্টদের সঙ্গে আসরে এসেছে। নিকাকে দেখা গেল– এ কী অবস্থা হয়েছে তোর মুখের?

ইভ হাসল- হ্যাঁ, রাতে আমি পড়ে গিয়েছিলাম, আলো জ্বালাতে ভুলে গিয়েছিলাম।

ডাক্তার ডাকতে হবে?

 না-না, ডাক্তারের দরকার নেই। জর্জ কোথায়?

–ও টেনিস খেলছে। ও দারুণ টেনিস খেলে। লাঞ্চে দেখা হবে বলেছে। ওকে কেমন লাগল?

-হ্যাঁ, ও কী করেরে?

-ও ভীষণ পয়সাওয়ালা গ্রিক। ও হল সবথেকে বড় ছেলে কিন্তু ব্যবসাতে মন নেই। আসলে এত বেশি টাকা আছে ওর, পায়ের ওপর পা রেখে জীবন কাটাতে পারবে।

***

ইভের মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। জর্জের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে। কিন্তু কোথা থেকে এবং কেমন করে? হঠাৎ এক পুরোনো বান্ধবীর কথা তার মনে পড়ে গেল। সেই মেয়েটি একটি ফ্যাশান পত্রিকা চালায়। এই পত্রিকার প্রধান কাজ হল বিখ্যাত মানুষদের জীবনী প্রকাশ করা। সেই মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করে ইভ জর্জের পুরোনো ইতিহাস জেনে নিল। হ্যাঁ, তাদের টাকার কোনো অভাব নেই। কিন্তু জর্জের এই বেপরোয়া মনোভাব তাকে পথের ভিখারি করে দিয়েছে। একটার পর একটা কলঙ্কের সাথে সে জড়িয়ে পড়েছে। তাই তাকে গ্রিস থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার ইভ বুঝতে পারল, কেন স্মারক হিসেবে জর্জ ওই নেকলেসটা নিয়ে গেছে। এমন লোককেই আমার দরকার- ইভ মনে মনে ভাবল, আমাকেও অন্যায়ভাবে আমার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। জর্জের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একইরকম। আমরা দুজনে হাত মেলাব। শেষ পর্যন্ত আমরা একটা বিরাট সাম্রাজ্য গড়ে তুলব।

পরদিন সকালে ইভ জর্জকে ফোন করে ডেকে পাঠাল। তার অ্যাপার্টমেন্টে জর্জকে আমন্ত্রণ জানাল।

জর্জ তিরিশ মিনিট বাদে এসেছে। জর্জের এটাই হল স্বভাব। কখনও সময় রাখতে পারে না।

জর্জ এই ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টের চারিদিকে তাকাল। তারপর বলল– ভারী সুন্দর।

সে ইভের কাছে এগিয়ে এল। বলল তোমার কথাই সব সময় ভেবেছি।

ইভ তার আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে বলল- শোনো, তোমার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আছে।

জর্জ বলল- একটু পরে কথা বললে কেমন হয়।

-না, এখনই কথা বলতে হবে। তুমি যদি আর কখনও আমাকে ওইভাবে আদর দাও, আমি কিন্তু তোমাকে মেরেই ফেলব।

জর্জ ইভের দিকে তাকাল এবং বলল- সত্যি?

না, এটাকে ঠাট্টা মনে করো না। তোমার জন্য একটা ব্যবসায়িক প্রস্তাব আছে।

 –তুমি আমাকে এখানে ডেকেছ ব্যবসা সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য?

–হ্যাঁ, এই ব্যবসা ভোমার ভালোই লাগবে।

কী বলবে বলো?

–তোমার পরিবার খুবই ধনী, তাই তো? আমার পরিবারও তাই। কিন্তু আমি ধনী নই। আমাদের দুজনকেই প্রতারিত করা হয়েছে।

-হ্যাঁ, তুমি কী করতে বলছ?

-তুমি আমার বোন আলেকজান্দ্রার সাথে পরিচিত হও। তুমি তাকে বিয়ে করবে। তারপর এই বিরাট সম্পত্তিটা আমরা ভাগ করে নেব।

কী করে? জর্জের চোখে বিস্ময়।

–একটা দুর্ঘটনা ঘটবে। ছোট্ট একটা দুর্ঘটনা, সকলেই জানে আলেকজান্দ্রা বারে বারে দুর্ঘটনায় পড়ে।

.

২৭.

নতুন একটা জীবন হাতছানি দিয়ে ডাকছে আলেকজান্দ্রাকে। বার্কলে অ্যান্ড ম্যাথুজ অ্যাডভার্টাইজমেন্ট এজেন্সি। ম্যাডসন এভিনিউতে বিরাট অফিস। বছরে কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা করে। পরের সোমবার সেখানে আলেকজান্দ্রা গিয়ে পৌঁছোল।

কর্মব্যস্ততার ছাপ সব জায়গায় রয়েছে। বিরাট বাড়িতে এলে মনে হয়, প্রতিটি মুহূর্ত কত উল্লেখযোগ্য। আলেকজান্দ্রাকে তার বিরাট অফিসে নিয়ে যাওয়া হল। বার্কলে এবং ম্যাথুজ উঠে এসে আলেকজান্দ্রার হাতে হাত রাখলেন। দুজন অংশীদারকে মোটেই এক রকম দেখতে নয়। বার্কলে লম্বা এবং রোগা, মাথায় সাদা চুল। ম্যাথুজ খর্বাকৃতি, চেহারাটা ফোলা ফোলা।

এই অপিসে আরও অনেককে দেখা গেল। ফার্মের ভাইস প্রেসিডেন্ট লুকাস পিন্টারসনও পর্যন্ত এসে গেছেন।

আলেকজান্দ্রার দিকে তাকিয়ে সকলে শুভ কামনা করলেন। বলা হল এখন থেকেই কাজে যোগ দিতে হবে।

আলেকজান্দ্রার দিনটা নতুনভাবে শুরু হয়েছে।

***

কাজের চাপে আলেকজান্দ্রা মাথা তুলতে পারেনি। মাঝে মধ্যে সহকর্মীরা এসে সাহায্য করেছে।

***

এই ব্যাপারে আলেকজান্দ্রা জানতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সব জিনিসটা তাকে বুঝে নিতে হবে। কীভাবে লেআউট করতে হয়, কপি লিখতে হয়– সবকিছু।

***

পরবর্তী সোমবার কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেগুলো সমাধান করতে হবে। রোজ সকাল এবং সন্ধ্যেবেলা তাকে বিভিন্ন অধিবেশনে যোগ দিতে হচ্ছে। কেউ কেউ ন্যাশনাল মিডিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করছে। কেউবা নিউইয়র্ক টাইমসের পাতায় প্রকাশিত ফিনানসিয়াল রিপোর্টটা দেখাচ্ছে।

একটির পর একটি কাজের বোঝা। সবকিছু আলেকজান্দ্রাকে ঠাণ্ডা মাথায় সামাল দিতে হবে।

একদিন দুপুরবেলা আলেকজান্দ্রা তার সহকর্মী অ্যালিস কোপবেলকে বলেছিল– তুমি কি লাঞ্চের জন্য সময় দিতে পারবে?

-না, আমি ব্যস্ত আছি।

তারপর সে আর এক সহকর্মী ভিনসে বারনেসকে বলল- তুমি সময় দেবে?

কেউ তাকে সময় দিচ্ছে না কেন?

লাঞ্চের আসরে বসে আলেকজান্দ্রার মনে হচ্ছে, এরা সকলে বোধহয় তার কাজে বিরক্ত হয়েছে। কিন্তু সে তো আপ্রাণ চেষ্টা করছে।

আলেকজান্দ্রা আরও তিনদিন অপেক্ষা করল। তারপর বলল- অ্যালিস, তুমি কি একটা ছোট্ট ইতালিয়ান রেস্টুরেন্টে যাবে?

না, আমি ইতালিয়ান খাবার খেতে ভালোবাসি না।

 ভিনসে বারনাসও তার প্রস্তাব প্রত্যাখান করল।

আলেকজান্দ্রার মুখে লজ্জার আভা–হ্যাঁ, যে কোনো কারণেই তোক এরা আমার সংসর্গ এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছে। কিন্তু কেন সে বুঝতে পারছে না। সে এইভাবে কী করে একা একা জীবন কাটাবে।

বৃহস্পতিবার দুপুর একটা, আলেকজান্দ্রা বসে আছে, সে চারপাশে তাকিয়ে দেখছে, সকলেই লাঞ্চ খেতে বেরিয়ে গেছে। নিঃসঙ্গতা এসে তাকে গ্রাস করেছে। এক মুহূর্ত বাদে নরম্যান ম্যাথুজের কণ্ঠস্বর শোনা গেল কিছু বলার আছে?

প্রিন্টক্রাফটার মেশিন ধরে বললেন মি. ম্যাথুজ–একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।

-কী হয়েছে? এভাবে কেউ কপি রাইট করে?

এভাবেই একটা অশুভ সংকেত বেজে উঠল। চার ঘণ্টা সময় লেগেছে এই ব্যাপারটা পরিষ্কার করতে। আলেকজান্দ্রা কিছুই করতে পারছে না। না, এভাবে কাজ করলে তাকে এই কোম্পানিতে রাখা যাবে না।

আলেকজান্দ্রার মনে হচ্ছে, এই অফিসের সবাই বুঝি তাকে এখানে চাইছে না।

কিন্তু কেন সে বুঝতে পারছে না।

পরের দিন সকালে আলেকজান্দ্রা তার অফিসে গেছে, সকলেই তার জন্য অপেক্ষা করছে।

আলেকজান্দ্রা বলল–কিছু ভুল হয়েছে কী?

অ্যালিস কোপবেল বলল –আমরা সবাই চাইছি, আজ দুপুরে লাঞ্চে তুমি আমাদের সঙ্গে যাবে। এখানে একটা সুন্দর ইতালিয় রেস্তোরাঁ হয়েছে।

.

২৮.

ছোটো থেকেই ইভ ব্ল্যাকওয়েল এভাবে জীবন কাটাতে অভ্যস্ত। সে মানুষকে নানাভাবে বিমুগ্ধ করার চেষ্টা করে। আগে নেহাতই কিশোরী সুলভ কৌতুকের সঙ্গে এটা করত। এখন তার আচরণের মধ্যে একটা শয়তানি প্রবৃত্তি এসে গেছে। সে চাইছে, এইভাবে বেশ কিছু টাকা আয় করতে, কিন্তু এখন তার লক্ষ্য জর্জ মেলিস। যে করেই হোক জর্জের সাথে আলেকজান্দ্রার আলাপ করাতেই হবে।

***

তারা বিছানাতে শুয়ে আছে একেবারে নগ্ন হয়ে। হ্যাঁ, জর্জ হল পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর জন্তু। বুনো উন্মাদনা দিতে পারে, কিন্তু এ-জন্তুকে এখন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ইভ ধীরে ধীরে জর্জের দেহের নানা জায়গাতে তার জিভের পরশ দিল। হ্যাঁ, ওটা শক্ত হয়ে উঠেছে।

সে আবেগ ঝরানো কণ্ঠস্বরে বলল –জর্জ, এখনই আমাকে আনন্দ দিতে শুরু করো। আমি দু-পা ফাঁক করে শুয়ে আছি।

জর্জ বলল–না, তুমি ঘুরে শোও। আমি পেছন দিকে করব।

-না, এটাই আমার উপায়। এটাই আমাকে সুখী করতে পারে।–

-এটা আমার ভালো লাগে না।

-আমি জানি, তুমি বোধ হয় সমকামী? ছোটো থেকে এটা অভ্যাস করেছ? কিন্তু আমি তো একটা ছেলে নই, আমি একটা মেয়ে। এসো, আমার ওপর চড়ে বসো।

জর্জ ইভের ওপর চড়ে বসল। তার উদ্ধত দণ্ডটা ঢুকিয়ে দিল। এভাবে আমার আনন্দ হয় না, ইভ।

-আমি জানি, কিন্তু আমাকে তো এভাবেই আনন্দ দিতে হবে।

এবার ইভের আসল খেলা শুরু হল। সে শরীরটাকে একবার সামনের দিকে এগিয়ে দিচ্ছে, পরক্ষণেই পেছনের দিকে নামিয়ে আনছে। হ্যাঁ, ঘর্ষণ শুরু হয়ে গেছে। জর্জ কিন্তু প্রচণ্ড হতাশ। সে ইভকে আঘাত করার চেষ্টা করল। ইভ কোনো দিকে তাকাচ্ছে না।

ইভ বলল –আবার। আবার করো। শেষ অব্দি রতি তৃপ্ত হয়ে গেল সে। একটা শব্দ বেরিয়ে এল তার মুখ থেকে।

জর্জ নিজেকে বিযুক্ত করল। বলল, এবার আমার কথা মতো কাজ করতে হবে। প্লীজ উল্টে শোও।

ইভ কণ্ঠস্বরে কাঠিন্য এনে বলল–পোশাক পরে নাও।

-হ্যাঁ।

 জর্জ উঠে দাঁড়াল। রাগ এবং হতাশায় থরথর করে কাঁপছে। ইভ তাকিয়ে থাকল। তার ঠোঁটে শয়তানি হাসি।

-এই তো ভালো ছেলের মতো কাজ করেছ, জর্জ। তোমাকে একটা পুরস্কার দেব, তোমার হাতে আমি এমন একটা রত্ন তুলে দেব, তুমি ভাবতেই পারছ না। সেই রত্নটার নাম হল আলেকজান্দ্রা!

***

রাতারাতি জীবনটা পালটে গেছে আলেকজান্দ্রার কাছে। এর অন্তরালে কী আছে সে জানে না। এত বড়ো বিজয় যে কোনোদিন হবে সে ভাবতেই পারছে না।

লাঞ্চ খেতে খেতে তারা অনেক গল্প করছিল। এখন কাজটা আরও বেশি ভালো লাগছে আলেকজান্দ্রার।

শুক্রবার সকালবেলা,ইভ টেলিফোন করেছে আলেকজান্দ্রাকে। লাঞ্চের আসরে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সে বলল –একটা ফরাসি রেস্টুরেন্ট খুলেছে। সেখানকার খাবার দারুণ।

বোনের কাছ থেকে ফোন পেয়ে আলেকজান্দ্রা খুব খুশি। আলেকজান্দ্রা প্রতি সপ্তাহে বোনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু ইভ, তার এই আমন্ত্রণে সাড়া দেয় না।

সে বলল–তোর সাথে লাঞ্চ খেতে আমার ভালোই লাগবে।

***

রেস্টুরেন্টটা ছোটো। খাবারদাবার খুবই দামী, দেখা গেল অনেকেই টেবিলের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। ইভ তার ঠাকুরমার নাম করে টেবিল অর্ডার দেয়। হ্যাঁ, এবার একটা নতুন গল্প শুরু হতে চলেছে। ইভ আর মেলিস বসেছিল, আলোকজান্দ্রা পৌঁছে গেল।

ইভ তার বোনকে আদর করল। বলল –তোকে দারুণ দেখাচ্ছে। কাজটা তোর নিশ্চয়ই ভালো লাগছে তাই তো?

ইভ জানতে চাইল।

আলেকজান্দ্রা ইভকে সব ঘটনা খুলে বলল। ইভ তার জীবনকথা শোনাল, অবশ্যই রেখে ঢেকে। কথাবার্তার মাঝে ইভ জর্জ মেলিসের দিকে তাকাল। জর্জ এই দুই কন্যার দিকে তাকিয়ে আছে। হ্যাঁ, সে বুঝতে পারছে না, কাকে গিয়ে এখন সম্ভাষণ জানানো উচিত।

শেষ পর্যন্ত ইভ বলল –জর্জ।

জর্জ বলল –ইভ।

ইভ বলল–কী সুন্দর সন্ধ্যেটা বলো তো? আমার বোনের সঙ্গে আলাপ করো খুশী হবে। আলেক্স, এই হল আমার উপহার জর্জ মেলিস।

জর্জ আলেকজান্দ্রার হাতে হাত রেখে বলল তোমাকে দেখে আমি খুবই খুশী হয়েছি।

 আলেকজান্দ্রা জর্জের পাশে বসে আছে। খুবই উৎসাহী হয়ে উঠেছে সে।

ইভ বলল তুমি কি আমাদের সঙ্গে বসবে?

-না, একটা জরুরি কাজ আছে, পরে আবার দেখা হবে।

জর্জ চলে গেল, আলোকজান্দ্রা বলল—এই ছেলেটি কে?

–নিকার বন্ধু, তার বাড়ির পার্টিতে দেখা হয়েছে।

–ওকে তো দেখতে দারুণ।

ইভ বলল –ও কিন্তু আমার মতো নয়, মেয়েদের চোখে এক আকর্ষণীয় পুরুষ।

–আমারও তাই মনে হচ্ছে। ও কি বিবাহিত?

-না, অনেকে চেষ্টা করছে। জর্জের প্রচুর পয়সা। ওর কাছে সবকিছু আছে, সুন্দর চেহারা, অঢেল অর্থ, সামাজিক প্রতিপত্তি।

বুদ্ধি করে ইভ অন্য বিষয়ে চলে গেল।

খাবারের দাম দেবার সময় ইভ জানতে পারল, মেলিস দাম মিটিয়ে দিয়ে চলে গেছে।

***

আলেকজান্দ্রা শুধু জর্জ মেলিসের কথা চিন্তা করছে।

সোমবার বিকেলবেলা ইভ তাকে ফোন করে বলল –ডার্লিং, জর্জ তোর ফোন নাম্বার জানতে চাইছে, আমি কি দেব?

আলেকজান্দ্রা অবাক হয়ে গেছে–হ্যাঁ, তুই দিতে পারিস।

-আলেক্স আমি বলেছি না, ও একেবারে অন্যরকম।

–ঠিক আছে, আমার নাম্বার দিয়ে দে।

তারা দু-চারটে কথা বলল। ইভ টেলিফোন রিসিভার রেখে দিল। সে জর্জের দিকে তাকাল। জর্জ নগ্ন হয়ে বিছানাতে শুয়ে আছে। সে বলল আমার আশা কি পূরণ হয়েছে?

-হ্যাঁ।

কবে থেকে খেলাটা শুরু হবে?

***

আলেকজান্দ্রা জর্জ মেলিসকে ভুলে যাবার চেষ্টা করছে। কিন্তু ভুলতে পারছে কই? সবসময় জর্জের কথাই মনে পড়ছে। জর্জকে একেবারে অন্য জগতের বাসিন্দা বলে মনে হচ্ছে। জর্জের মধ্যে একটা আলাদা আকর্ষণ আছে। হ্যাঁ, তার হাতের স্পর্শ সমস্ত শরীরে শিহরণ জাগিয়েছিল।

এক সপ্তাহ কেটে গেল। আলেকজান্দ্রা আর থাকতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত হতাশা রাগে পরিণত হল। সে ভাবল, অন্য কাউকে নির্বাচন করতে হবে।

ফোনটা বেজে উঠল–পরবর্তী সপ্তাহে আলেকজান্দ্রা একটা সুন্দর গলার স্বর শুনতে পেল। তার সমস্ত রাগ এক লহমায় কোথায় হারিয়ে গেল।

-আমি জর্জ মেলিস বলছি, তোমার সাথে দেখা হয়েছিল, মনে আছে, আমি ফোন করলে তুমি রাগ করবে না। ইভ আমায় তাই বলেছে।

-হ্যাঁ, আমি রাগ করছি না। লাঞ্চের জন্য ধন্যবাদ।

–আর একটা খাওয়া কিন্তু পাওনা আছে। খাওয়া অথবা অন্য কিছু?

আলেকজান্দ্রা অবাক হয়ে গেছে।

-আমার সাথে একদিন ডিনার খাবে?

–হা, কবে?

–যেদিন তুমি বলবে?

আলেকজান্দ্রা বুঝতে পারল, একটা সুন্দর নিমন্ত্রণ আসতে চলেছে।

জর্জ বলল –একটা ছোট্ট রেস্টুরেন্ট আছে। মালবেরি স্ট্রিটে, ভারী সুন্দর, খাবারটাও দারুণ।

-হ্যাঁ, আমি ভালোবাসি। আলেকজান্দ্রা বলল, আমার প্রিয় খাবার।

–তুমি কি জানো?

–হ্যাঁ।

জর্জ ইভের দিকে তাকাল।–হ্যাঁ, একটা সুন্দর ষড়যন্ত্র। আলেকজান্দ্রা কী ভালোবাসে এবং কী ভালোবাসে না, সব কিছুই ইতিমধ্যে জর্জ জেনে গেছে।

জর্জ রিসিভারটা নামিয়ে রাখল। ইভ বুঝতে পারল, নাটকটা জমে উঠতে আর বেশি দেরী নেই।

***

এমন সুন্দর সন্ধ্যা আলেকজান্দ্রার জীবনে আর কখনও আসবে কিনা সন্দেহ। এক ঘণ্টা আগে জর্জ মেলিস সেখানে ঢুকে পড়েছে। ভারী সুন্দর গোলাপী বেলুন দিয়ে ঘরটা সাজিয়েছে। অর্কিড ফুলের সমারোহ। আলেকজান্দ্রার মনে ভয় ছিল, এই প্রথম সে কোনো এক ছেলের সাথে একলা খেতে যাচ্ছে। শেষ অব্দি তারা সেখানে গিয়ে বসল।

জর্জ বলল তুমি কী খাবে বলো?

আলেকজান্দ্রা বলল–তুমি যা খাওয়াবে।

আলেকজান্দ্রার প্রিয় পদগুলি একে একে বেছে নিল জর্জ মেলিস। আহা, জর্জ কি আমার মনের খবর জানে?

কথায় কথায় জর্জ বলল–রান্না করা আমার জীবনের অন্যতম হবি। আমার মায়ের কাছ থেকে আমি রান্না শিখেছি।

পরিবারের সকলের সাথে তুমি খুব যুক্ত। তাই না জর্জ?

জর্জ হাসল। আলেকজান্দ্রা বুঝতে পারল, এমন সুন্দর হাসি সে জীবনে কখনও দেখেনি।  –আমি গ্রিস দেশের বাসিন্দা। আমরা সবাই একসঙ্গে থাকতে ভালোবাসি।

চোখের ভেতর বিষণ্ণতা ওদের ছেড়ে থাকতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। আমাদের মস্ত বড়ো একটা ব্যবসা আছে। আমি খুব তাড়াতাড়ি সেখানে ফিরে যাব।

কথায় কথায় জর্জ তার ফেলে আসা দিনযাপনের অনেক গল্প শুনিয়ে দিল। জর্জের এই সরল স্বীকারোক্তি আলেকজান্দ্রাকে অবাক করে দিয়েছে। জর্জ জানতে চাইল তোমার সাথে ইভ থাকে না? ঠাকুরমার সাথে?

-না, ইভ একটা অ্যাপার্টমেন্টে একা থাকে।

আলেকজান্দ্রার ভালো লাগল না, আমার বোন সম্পর্কে এই যুবক একেবারেই উৎসাহী নয়। আলেকজান্দ্রার মনে হল স্বর্গ যেন তার হাতে চলে এসেছে।

কফির আসর–জর্জ বলল, তুমি কি জাজ শুনতে ভালোবাসো? সেন্ট মার্ক প্লেসে একটা ক্লাব আছে। ফাইভ বার্ড।

–যেখানে সিসিল টেলার বাজনা বাজান?

 আলেকজান্দ্রার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জর্জ বলল–তুমি সেখানে গেছো?

আলেকজান্দ্রা হাসছে আমার খুবই ভালো লাগে জায়গাটা। টেলার আমার খুবই প্রিয়।

-কী আশ্চর্য আমাদের সব পছন্দ এক হল কী করে?

 তারা সিসিল টেলারের পিয়ানো শুনল। অসাধারণ বাজনা, মনে হল তারা বোধহয় অন্য কোথাও ভেসে গেছে।

রাত দুটো বেজেছে। বার থেকে তারা বাইরে এল। আলেকজান্দ্রা তখনও চাইছে, সুন্দর মুহূর্তটা যেন হারিয়ে না যায়।

রোলস বয়েস এগিয়ে চলেছে। জর্জ এটা ভাড়া করেছে। সে কোনো কথা বলছে না। সে শুধু আলেকজান্দ্রার দিকে তাকিয়ে আছে। দুই বোনের মধ্যে এক অসাধারণ সাদৃশ্য আছে। আহা, দুজন কি একইরকমভাবে শরীরের আরাম দিতে পারবে? আলেকজান্দ্রাকে বিছানাতে প্রত্যক্ষ করতে চাইছে জর্জ, কিন্তু কবে? কবে আলেকজান্দ্রা আবার তার বোনের মতো শিকারের আর্তনাদে বাতাস ভরিয়ে দেবে?

আলেকজান্দ্রা জানতে চাইল–তুমি কী ভাবছ?

–তোমাকে দেখছি দুচোখ ভরে।

তারপর? তারপর চোখে চোখে মিলন, শেষ পর্যন্ত জর্জ মেলিস আলেকজান্দ্রার হাতে হাত রাখল। ব্ল্যাকওয়েল ম্যানসানের কাছে গাড়িটা থেমে গেছে। জর্জ এগিয়ে এল। বলল -এই সন্ধ্যেটা তোমার ভালো লেগেছে?

-শুভরাত জর্জ, আলেকজান্দ্রা বলল।

পনেরো মিনিট কেটে গেছে। আলেকজান্দ্রার ফোন বেজে উঠেছে।

–তুমি কী জানো, এইমাত্র আমি মা-বাবাকে ফোন করে একটা দারুণ সুসংবাদ শুনিয়ে দিয়েছি। আমি বলেছি, জীবনসঙ্গিনী খুঁজে পেয়েছি। সে হল সুন্দরী আলেকজান্দ্রা। আমি আমার পরিবারের সকলকে ডেকে পাঠাব। উড়নচণ্ডী ছেলেটা যে একটা দারুণ কাজ করতে পারে, সেটা ভেবে ওরা অবাক হয়ে যাবে।

.

২৯.

জর্জ মেলিসের ফোনের জন্য আলেকজান্দ্রা অপেক্ষা করছে। কিন্তু ফোন এল না কেন? এক সপ্তাহ কেটে গেল। যখনই ফোন সশব্দে আর্তনাদ করেছে, আলেকজান্দ্রা ছুটে গেছে। সেই সন্ধ্যের কথা সে তুলতে পারেনি।

কিন্তু কেন? কী হতে পারে? হয়তো ওই ছেলেটি এখন আর আমার প্রতি আকর্ষিত নয়। হয়তো কোনো অ্যাকসিডেন্টে তার মৃত্যু হয়েছে, কিংবা সে হাসপাতালে শুয়ে আছে।

আলেকজান্দ্রা আর অপেক্ষা করতে পারছে না। সে ইভকে ফোন করল। অনেকক্ষণ ধরে কথা বলার চেষ্টা করল। তারপর বলল –ইভ, জর্জ মেলিসের কী হল? তোর সঙ্গে দেখা হয়েছে?

-না, তোর সঙ্গে কথা হয়নি?

–না, গত সপ্তাহে আমরা ডিনার খেয়েছিলাম।

 –তারপর দেখা হয়নি?

–না।

–তাহলে হয়তো ব্যস্ত আছে।

আলেকজান্দ্রা বলল –সম্ভবত।

জর্জের কথা ভুলে যা। একটা কানাডিয়ান ছেলের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। তার একটা নিজস্ব এয়ারলাইন আছে।

না, আলেকজান্দ্রা এসব খবর শুনতে রাজী নয়।

***

অ্যালিস কোপবেল প্রশ্ন করল–কাজ কেমন হচ্ছে?

-কোনো কিছু আর ভালো লাগছে না। কাজে বসলেই শুধু জর্জের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।

***

পরের দিন বিকেলবেলা ফোনটা এল।

–অ্যালেক্স, আমি জর্জ মেলিস বলছি।

–তুমি কোথায়?

–আমি এখানে এসে গেছি। 

আলেকজান্দ্রা বুঝতে পারছে না, সে কাঁদবে, না হাসবে।

-তোমাকে আবার ফোন করব। এথেন্স থেকে কয়েক মিনিট আগে এসেছি।

—তুমি এথেন্স গিয়েছিলে?

–হ্যাঁ, যে রাতে আমরা একসঙ্গে ডিনার খেয়েছিলাম, সেই রাতেই।

আলেকজান্দ্রার মনে পড়ল।

–স্টিভ, আমার ভাই ফোন করেছিল। বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।

–জর্জ, খুব খারাপ লাগছে এ খবর শুনে। তিনি এখন কেমন আছেন?

–তিনি ভালো হয়ে গেছেন। তিনি আমাকে গ্রিসে ফেরার জন্য বলেছিলেন। ব্যবসার দায়িত্ব নিতে হবে।

-তুমি কি চলে যাচ্ছো?

–না।

–অন্য কেউ দায়িত্ব নেবে?

–হ্যাঁ। আজ সন্ধ্যেবেলা ডিনার খাবে?

–হ্যাঁ।

তারপর? কেটির সঙ্গে কথা বলতে হবে, জর্জ ভাবল।

আলেকজান্দ্রা ফোনটা রেখে দিল। বলল সমস্ত সহকর্মীকে আজ সন্ধ্যেবেলা আমি একটা নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে চলেছি।

সহকর্মীরা অবাক হয়ে গেছে।

***

ম্যাকসেল ক্লামে একটা সুন্দর ডিনার। আবার কথাবার্তা শুরু হয়ে গেছে। ইভকে পুরো নম্বর দিতেই হবে। ইভ না থাকলে এই সুন্দর ছেলেটার সঙ্গে আমার কখনও আলাপ হত না। মনে মনে ইভকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়ে দিল আলেকজান্দ্রা।

তারপর? ভবিষ্যৎ প্রতিশ্রুতি, চোখে চোখ, একে অন্যকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। এত সুন্দর এক মহিলা, অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে জর্জ। এই জীবনে অনেক মেয়ের সংস্পর্শে সে এসেছে। কেউ সুন্দরী, কেউ কুৎসিত, কেউ ধনী, কেউ দরিদ্র। তাদের সে যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে। কোনো না কোনো ভাবে। কিন্তু এই মেয়েটির মতো আর কেউ কি এমন অপলক চোখে তাকিয়েছে তার দিকে?

***

একটা সুন্দর অ্যাপার্টমেন্ট, সাজানো হয়েছে ভারী সুন্দর ফার্নিচার দিয়ে।

–অসাধারণ, আলেকজান্দ্রা বলছে, হ্যাঁ, আলেকজান্দ্রা সদ্য পাওয়া উপহারটা পেয়ে অবাক হয়ে গেছে। হিরের তৈরি নেকলেস।

জর্জ এগিয়ে এসে তাকে শান্ত ভাবে চুমু দিল। তারপর বুকে টেনে নিল। আলেকজান্দ্রা হয়তো এই মুহূর্তটার জন্য প্রতীক্ষা করছিল।

না, কেন এমন একটা অবস্থা হচ্ছে।

জর্জ বলল –এসো, আমি এবার আসল কাজটা শুরু করি।

সে নিজেকে উন্মুক্ত করতে শুরু করল। ইভের কথা মনে পড়ে গেল। আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রেখো, যদি আলেকজান্দ্রার মনে দুঃখ দাও, তাহলে সে তোমাকে পরিত্যাগ করবে। তুমি আর কখনও তার মুখ দেখতে পাবে না। তুমি কি তা বুঝতে পারছ? তুমি ওকে যেন বাজারের বেশ্যা বলে ভেবো না!

জর্জ আলেকজান্দ্রার শরীর থেকে পোশাক সরিয়ে দিল। তার অসাধারণ উলঙ্গতা ভালোভাবে দেখল : হ্যাঁ, ইভের মতো সুন্দর তার শরীর। পরিপূর্ণ যুবতীর সাজে সে সেজে উঠেছে। এখনই ওই শরীরটাকে লন্ডভন্ড করতে ইচ্ছে হল তার। তাকে আঘাত করতে, তার মুখ দিয়ে যেন আর্তনাদের শব্দ বেরিয়ে আসে। মনে পড়ে গেল ইভের সাবধান বাণী -আলেকজান্দ্রাকে দুঃখ দিও না। দুঃখ ও সহ্য করতে পারে না।

দুটো নগ্ন শরীর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। তারা একে অন্যকে আলিঙ্গন করল। জর্জ ধীরে ধীরে আলেকজান্দ্রাকে বিছানাতে নিয়ে গেল। দেহের সর্বত্র সাবধানে চুমুর চিহ্ন আঁকতে শুরু করল। তার জিভ এখন এক বাঘবন্দী খেলা খেলছে। হাতের আঙুলগুলো আঁকছে কামনার কারুকাজ। হা, আলেকজান্দ্রার শরীরের প্রত্যেকটা রোমকূপ খাড়া হয়ে উঠেছে। সে বুঝি আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করতে চাইছে না।

আলেকজান্দ্রা বলল–আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমাকে গ্রহণ করো।

 জর্জ তার ওপর চড়ে বসল। তারপর অসাধারণ আনন্দ। সুখ দুঃখ বেদনা মেশানেনা অনুভূতি। আলেকজান্দ্রা শুয়ে আছে। সে বলছে –ডার্লিং, আমি কি তোমার উপযুক্ত হতে পারব?

আলেকজান্দ্রা হঠাৎ কেঁদে ফেলেছে। কেন সে কাঁদছে জানে না। এটা হয়তো আনন্দের অশ্রু।

জর্জ বলল–তুমি এক অসাধারণ কন্যা এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

 ইভ জানতে পারলে কত না সুখী হবে।

***

প্রেমের ঘটনা শেষ হয়ে গেছে। তারপর কী থাকে? ছোটোখাটো অনুভূতি। কিন্তু জর্জ এবং আলেকজান্দ্রার বেলায় এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। ইভের প্রশিক্ষণে জর্জ অনেক প্রাজ্ঞ হয়ে উঠেছে। সে আলেকজান্দ্রার প্রত্যেকটা আবেগ নিয়ে সুন্দর খেলা খেলছে। এমন কিছু করছে না যাতে আলেকজান্দ্রা কষ্ট পেতে পারে। সে জানে, কীসে আলেকজান্দ্রার মনে আনন্দ হয়, কোন ঘটনা তাকে দুঃখ দেয়। আলেকজান্দ্রা তার ভালোবাসার ধরন দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, এই পৃথিবীতে বুঝি একমাত্র জর্জই তার জীবনসঙ্গী হতে পারে।

জর্জ কথা বলছে সুন্দর ভাবে। কথার মধ্যে কোনো আহাম্মকি নেই।

 জর্জ তার ধর্ষকামী মনোভাবকে পরিত্যাগ করেছে। হ্যাঁ, এই মেয়েটিকে সে যন্ত্রণা দেবে না।

 জর্জ বুনো স্বভাবটাকেও দূরে সরিয়ে রেখে এসেছে। এভাবেই মেয়েটিকে জয় করতে হবে। তারপর?

***

জর্জের ব্যবহারে আলেকজান্দ্রা সত্যি অবাক হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত আলেকজান্দ্রা ঠিক করল, জর্জকেই বিয়ে করতে হবে। জর্জকে না পেলে সে বেঁচে থাকবে না।

***

 ইভের সাথে একরাতে কথা হচ্ছে। ইভ বলল–বিয়ের প্রস্তাবটা ভালো কিন্তু দেখো, তুমি আবার গলে যেও না যেন।

জর্জ জানতে চাইল–আলেকজান্দ্রাকে সত্যি আমাদের দরকার।

-হ্যাঁ, আলেকজান্দ্রা না এলে কোটি টাকার সম্পত্তিটা হাতছাড়া হয়ে যাবে।

***

আলেকজান্দ্রাকে দেখে মনে হচ্ছে সে যেন আর কথা বলতে পারছে না। এই প্রথম তারা এক সঙ্গে ডিনার খেতে বেরিয়েছে। জর্জ, কেটি এবং আলেকজান্দ্রা। আলেকজান্দ্রা ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছে ঠাম্মার চোখে যেন কোনো ভুল ধরা না পড়ে।

কেটি কখনও তার নাতনিকে এত খুশিয়াল দেখেননি। আলেকজান্দ্রা এর আগে বেশ কয়েক জন যুবকের সংস্পর্শে এসেছিল, কিন্তু কেউ তাকে এতটা অধিকার করতে পারেনি।

জর্জ মেলিসের সাথে দেখা হবার পর কেটির ভালোই লেগেছে। কেটির মনে হচ্ছে, ছেলেটি খুব একটা খারাপ নয়।

তারপর? এক সুন্দর সন্ধ্যা, সকলেই গল্প করছে।

শেষ পর্যন্ত জর্জ মেলিস বলল –মিসেস ব্ল্যাকওয়েল, আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনের কথা বলতে চাইছি না। আমি এক স্বাধীনচেতা মানুষ। আমি কারোর সাহায্য গ্রহণ করি না। আমি মেলিস অ্যান্ড কোম্পানির অন্যতম স্বত্তাধিকারী। কিন্তু সেই কোম্পানিটা আমার ভালো লাগে না। যেহেতু এটা আমার ঠাকুরদাদা তৈরি করেছিলেন, বাবা এটাকে বাড়িয়েছেন, তাই আমি এটাকে স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করতে চাইছি। আমি একটা চাকরি পেলেই সন্তুষ্ট।

কেটি মাথা নাড়লেন –হ্যাঁ, এই লোকটা খুব একটা খারাপ নয়। কিন্তু এ কি আমার নাতনির উপযুক্ত বর হতে পারবে?

কেটি শেষ পর্যন্ত বললেন বুঝতে পারছি তোমার পরিবার খুবই ধনী।

মিসেস ব্ল্যাকওয়েল, টাকাটা অবশ্যই দরকার লাগে, কিন্তু এছাড়া আরও অনেক কিছু আছে, যা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

কেটি নেটওয়ার্কে মেলিস অ্যান্ড কোম্পানির অবস্থান জেনে নিয়েছেন। সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে এই কোম্পানির ব্যবসা তিনকোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

–মি. মেলিস, পরিবারের সাথে তোমার সম্পর্ক কেমন?

 জর্জের মুখে আলোকছটা হয়তো খুবই গভীর। আমরা একই পরিবারভুক্ত হয়ে বাস করতে ভালোবাসি।

কেটি বললেন–হ্যাঁ, এটাই তো হওয়া উচিত।

কেটি তার নাতনির দিকে তাকালেন। আলেকজান্দ্রার চোখে মুখে একটা অদ্ভুত প্রত্যাশা। তার মানে? এই ছেলেটিকে পেলে সে হয়তো সুখী হবে।

ডিনারে আরও কিছু কথা হল। কেটি একের পর এক প্রশ্ন করেই চলেছেন। একবার তিনি জানতে চাইলেন, মেলিস, ছেলেমেয়ে তোমার কেমন লাগে?

ইভের কথা মনে পড়ে গেল বুড়ি শয়তানিটা চাইছে তার নাতনির যেন ছেলে পুলে হয়।

জর্জ কেটির দিকে তাকিয়ে বলল–ছোট্ট ছেলে? ছেলেমেয়ে ছাড়া জীবন তো পরিপূর্ণ হয় না। আমি যখন বিয়ে করব, আমার বউটা শুধু ছেলেমেয়ের জন্ম দিতে ব্যস্ত থাকবে।

হ্যাঁ, কেটির মনে হল, এই ছেলেটাকে উপযুক্ত জামাই করা যেতে পারে।

***

আলেকজান্দ্রা বিছানায় শোবার আগে ইভকে ফোন করল। ইভকে জানাল–জর্জ মেলিসকে ডিনারে ডাকা হয়েছে।

ইভ সব কিছু শুনে বলল –ভারী ভালো লাগছে, সব খবর আমাকে জানাবি কিন্তু?

-ঠাকুরমা বোধহয় ছেলেটিকে ভালোবেসেছে।

 ইভের মনে আনন্দ–কী করে বুঝলি?

-ঠাকুরমা অনেক প্রশ্ন করছিল।

ইভ শুনে অবাক হল –জর্জ ব্যাপারটা ভালোভাবে সামলে দিয়েছে।

***

পরের দিন সকালবেলা কেটি অফিসে এসেছেন। বললেন ব্রাড রজারসকে ডেকে পাঠাও। জর্জ মেলিস সম্পর্কে একটা রিপোর্ট তৈরি করতে হবে।

–মি. রজারস কালকে আসবেন, মিসেস ব্ল্যাকওয়েল, একটু অপেক্ষা করা যেতে পারে।

–হা, ঠিক আছে।

***

ওয়াল স্ট্রিটের ম্যানহাট্রান, জর্জ মেলিস তার ডেস্কে বসে আছে। হ্যাঁনসান অ্যান্ড হ্যাঁনসান কোম্পানিতে স্টক এক্সচেঞ্জ খুলে গেছে। বিরাট অফিসে মানুষের কণ্ঠস্বর। ২২৫ জন সদস্য কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আছেন।

একটা ফোন বেজে উঠেছে। জর্জ মেলিস ফোনটা ধরলেন, চেনা স্বর। কিছু কথা বলা হল।

খুব এখন ব্যস্ত হয়ে গেছে সে। হেলেন থ্যাচারের সঙ্গে দেখা হল। বছর চল্লিশ বয়সের এক বিধবা। চেহারাটা আকর্ষণীয়। রান্নার হাত চমৎকার। তেইশ বছর ধরে বিবাহিত জীবন যাপন করেছেন। স্বামীর মৃত্যু তার জীবনে একটা শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। কোনো এক পুরুষের সাহচর্য চাইছেন। কিন্তু হ্যাঁনসান অ্যান্ড হ্যাঁনসানে যারা কাজু করে, তাদের কাউকেই মনে ধরছে না।

উনি জর্জ মেলিসের ওপরতলায় অ্যাকাউন্ট বিভাগে কাজ করেন। হেলেন জর্জকে দেখেছেন। তখন থেকেই মনে হয়েছে, এই ছেলেটি তার উপযুক্ত স্বামী হতে পারে। একদিন সকালবেলা দুজনের মধ্যে কথা হল। জর্জ মেলিসের কণ্ঠস্বরে এক অদ্ভুত মাদকতা। হ্যাঁ, দুজনে দুজনকে আকর্ষণ করতে চাইলেন। বারবার ফোন বেজে উঠেছে। শেষ অব্দি দুজনের দেখা হল।

জর্জ আবার কাজ করতে শুরু করল। তাকে এখন অনেক কিছুর ভান করতে হবে। তার হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয়েছে। কাকে সে জীবনে গ্রহণ করবে, সেটা ঠিক হয়ে গেছে।

জর্জ একটা ঘরে গিয়ে বসল। ঘরটা তিরিশ ফুট লম্বা, পনেরো ফুট চওড়া। স্টক সার্টিফিকেট আছে, প্রত্যেকটা কোম্পানির শেয়ার রয়েছে।

প্রহরী বলল –আপনি কতক্ষণ থাকবেন?

জর্জ মাথা নেড়ে বলল –কমপিউটারগুলো খারাপ হয়ে গেছে। সেগুলো ঠিক করতে হবে।

প্রহরী দাঁত কিড়মিড় করে বলল–কমপিউটারগুলোর হয়েছে এই অবস্থা।

জর্জ তার ডেস্কে ফিরে গেল। হ্যাঁ, তার সমস্ত শরীরে ঘাম। সে টেলিফোন তুলে । আলেকজান্দ্রার সাথে কথা বলল।

-ডার্লিং, তোমাকে আর তোমার ঠাকুরমাকে দেখতে চাইছি।

-তোমার ব্যবসার কাজ আছে কি?

–হ্যাঁ, কিন্তু সেটা আমি বাতিল করেছি। একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর দেব।

***

দুপুর একটা, জর্জ হেলেন থ্যাচারের অফিসে পৌঁছে গেছে। হেলেন তার জন্য রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করছিল। জর্জ দেখা করার চেষ্টা করল। শেষ পর্যন্ত দেখা হয়ে গেল। জর্জ বলল -কালকে লাঞ্চ খাবার সময় হবে?

হেলেনের মুখে হাসি–হ্যাঁ, কাল আমি আসব।

***

বিকেলবেলা জর্জ মেলিস অফিস থেকে বেরিয়ে এসেছে। তার সঙ্গে স্টক সার্টিফিকেট আছে। অন্তত দশ লক্ষ ডলারের। সবটাই চুরি করা।

সে ব্ল্যাকওয়েল হাউসে সাতটার সময় পৌঁছে গেল। লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখল, কেটি এবং আলেকজান্দ্রা বসে আছে।

জর্জ বলল আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে এসেছি। মিসেস ব্ল্যাকওয়েল, আপনার অনুমতি পেলে আমি আপনার নাতনিকে বিয়ে করতে পারব। আমি আলেকজান্দ্রাকে ভালোবাসি এবং আমি বিশ্বাস করি, ও আমাকে ভালোবাসে। যদি আপনি আশীর্বাদ করেন, তা হলে আমাদের বিবাহিত জীবনটা ভালোই কাটবে।

সে পকেটে হাত ঢোকাল। একটা স্টক সার্টিফিকেট বের করে টেবিলে রাখল। তারপর বলল আমি তাকে দশ লক্ষ ডলার উপহার দিতে চাইছি। সে যাতে কোনোদিন আপনার টাকার জন্য বসে না থাকে, তাই এই ব্যবস্থা। কিন্তু আমরা আপনার আর্শীবাদ চাইছি।

কেটি অবাক হয়ে তাকালেন, হ্যাঁ, এই সার্টিফিকেটগুলোর দিকে। তিনি প্রত্যেকটা কোম্পানির নাম জানেন।

আলেকজান্দ্রা অবাক হয়ে গেছে –ডার্লিং! সে ঠাকুরমার দিকে তাকাল।

কেটি দুজনের দিকে তাকালেন। না, এই প্রস্তাবটা তিনি কী করে প্রত্যাখ্যান করবেন। তিনি বললেন আমি আশীর্বাদ করছি।

জর্জ কেটির কাছে এগিয়ে গেল। সে কেটির চিবুকে একটা চুমু এঁকে দিল।

পরবর্তী দু ঘণ্টা ধরে তারা উত্তেজিতভাবে নানা বিষয় নিয়ে গল্প করছিল। বিশেষ করে আসন্ন বিয়ের উৎসব।

আলেকজান্দ্রা বলল –ঠাম্মা, হৈ-চৈ হবে তো।

জর্জ বলেছিল–হ্যাঁ, আমি কিন্তু খুব একটা হৈ-হুঁল্লোড় করতে চাইছি না। বিয়েটা গোপনে হওয়াই উচিত।

সপ্তাহের শেষে তারা ঠিক করল, একটা ছোট্ট অনুষ্ঠান করা হবে।

-তোমার বাবা কি আসবেন? কেটি জানতে চেয়েছিলেন। জর্জ হেসেছিল। বাবাকে আপনি বাদ রাখতে পারবেন না। আমার বাবা, আমার তিনজন ভাই এবং দুজন বোন, সকলেই আসবে।

-ওদের সঙ্গে দেখা হবার জন্য আমি উদগ্রীব হয়ে আছি।

–হ্যাঁ, আমি জানি।

কেটি সমস্ত সন্ধ্যে ধরে দারুণ আপ্লুত ছিলেন। হ্যাঁ, নাতনির জন্য গর্ববোধ হতেই পারে। জর্জ চলে গেল। আলেকজান্দ্রা এখন একেবারে একা। তবে একটুখানি সময় জর্জের সঙ্গে কাটিয়েছিল। বলেছিল তুমি এই শেয়ার সার্টিফিকেটগুলো এখানে রেখো না। আমাকে দাও, আমি সেফ ডিপোজিট বক্সে রেখে দেব।

জর্জ সার্টিফিকেটগুলো নিয়ে আবার জ্যাকেটের পকেটে ঢুকিয়ে রাখল।

***

পরের দিন সকালবেলা। জর্জ হেলেন থ্যাচারের কাছে পৌঁছে গেল। এই মেয়েটির সাহায্যে সে ওই সার্টিফিকেটগুলো বের করেছিল। এখন আবার হেলেনের কাছ থেকে অ্যাডড্রেস কার্ড নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় সার্টিফিকেটগুলো রেখে এল। হেলেন উন্মুখ হয়েছিল লাঞ্চে যাবে বলে।

জর্জ বলল আমি দুঃখিত হেলেন। আমি বিয়ে করতে চলেছি।

***

তিনদিন বাদে বিয়ের অনুষ্ঠান। জর্জ ব্ল্যাকওয়েল হাউসে এসে নেমেছে। তার মুখে বিষণ্ণতার ছাপ। একটা ভীষণ খারাপ খবর আছে। বাবার আবার আর্ট অ্যাটাক হয়েছে।

কেটি জানতে চাইলেন –আমি খুব দুঃখিত। উনি ঠিক আছেন তো?

-হ্যাঁ, আমি সমস্ত রাত ফোনে কথা বলেছি। তাঁরা বোধহয় বিয়েতে আসতে পারবেন না।

-ঠিক আছে। আমরা হনিমুনে এথেন্সে যাব। আলেকজান্দ্রা বলেছিল।

জর্জ মাথা নাড়ল আমার অন্য পরিকল্পনা আছে। কোনো পারিবারিক উৎসব নয়। শুধু তুমি আর আমি।

***

বিয়ের অনুষ্ঠানটা ড্রয়িংরুমে হল। জনা দশেক অতিথিকে বলা হয়েছিল। আলেকজান্দ্রার বান্ধবীরাও ছিল। হ্যাঁ, আলেকজান্দ্রা চেয়েছিল, ইভ যেন এই বিয়ের অনুষ্ঠানে আসে।

কেটি বলেছেন –না, এই বাড়িতে তোমার বোনের পদার্পণ কখনও ঘটবে না।

আলেকজান্দ্রার চোখে জল ঠাম্মা, তুমি এত নিষ্ঠুর কেন? আমি তোমাদের দুজনকে ভালোবাসি। তুমি কি তাকে ক্ষমা করতে পারো না?

এক মুহূর্তের জন্য কেটি ভেবেছিলেন, পুরো গল্পটা শুনিয়ে দিতে, কিন্তু তিনি নিজেকে সংবরণ করে বললেন–না, আমি যা করছি ভালোর জন্যই।

একজন ফটোগ্রাফার ছবি তুলে নিল। কেটি শুনলেন জর্জ কতগুলো অতিরিক্ত প্রিন্টের জন্য বলেছে। পরিবারে পাঠাতে হবে।

কেক কাটার অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেল। জর্জ আলেকজান্দ্রার কানে কানে বলল –ডার্লিং, কী যে ভালো লাগছে? কিন্তু আমাকে দু-এক ঘণ্টার জন্য অদৃশ্য হতে হবে।

-কোনো গোলমাল?

–না, কিছু দরকারী কাজ আছে। বেশীক্ষণ লাগবে না। আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসব। আলেকজান্দ্রার মুখে হাসি–তাড়াতাড়ি এসো। হনিমুনের পরিকল্পনা করতে হবে।

***

জর্জ ইভের অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছে গেছে। ইভ একটা পাতলা রাত পোশাক পরে তারই অপেক্ষায় বসে আছে।

সে বলল –ডার্লিং, বিয়েটা কেমন হল?

–সুন্দর ছিমছাম অনুষ্ঠান।

জর্জ, সব কিছু আমার জন্য, কাউকে বলবে না তো?

 জর্জ ইভের দিকে তাকিয়ে বলল কোনো দিন না।

–আমরা কিন্তু এই ব্যবসার অংশীদার।

–অবশ্যই।

ইভ বলল –এসো, তুমি তাহলে আমার ছোটোবোনকে বিয়ে করলে।

জর্জ তার দিকে তাকিয়ে বলল–আমি এখনই ফিরে যাচ্ছি।

-এখন যেও না।

–কেন?

–আগে আমাকে আদর করো। তারপর আমার বোনের কাছে যাবে। তোমার কী ভাগ্য বলো তো? একসঙ্গে দুই যমজ মেয়ের সাথে সঙ্গম করতে পারছ।

.

৩০.

ইভ হনিমুনের পরিকল্পনা করে রেখেছিল। ব্যাপারটা খরচের। কিন্তু করতেই হবে। সে জর্জকে বলল, সব কিছু তোমার ওপর নির্ভর করছে। পরিকল্পনাটা কিন্তু অসাধারণ হয়েছে।

***

সত্যি কোথাও কোনো খুঁত নেই। জর্জ এবং আলেকজান্দ্রা মন্টেগো বে রাউন্ড হিলে পৌঁছে গেছে। জামাইকার উত্তরে অবস্থিত। হোটেলটা সুন্দর। বাংলোতে দাঁড়ালে দূরের আকাশ স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। দেখতে পাওয়া যায় সমুদ্রের অনন্ত জলরাশিকে। নীচে একটা সুন্দর বাংলো আছে।

পঞ্চম দিন। জর্জ বলল –অ্যালেক্স, আমি একটু কিংসটনে যাব। আমার ফার্ম এখানে একটা ব্রাঞ্চ অফিস খুলতে চলেছে।

আলেকজান্দ্রা বলল–আমি কি তোমার সঙ্গে যাব?

-না, তোমার যাওয়া হয়তো উচিত হবে না। তুমি এখানে থাকো। একটা ফোন আসবে। তোমায় সেটা ধরতে হবে।

-কেন? ডেস্কে বললেই তো হয়?

–না, ফোনটা খুবই দরকারী। আমি কাউকে বিশ্বাস করি না।

–ঠিক আছে, আমি থাকব।

জর্জ একটা গাড়ি ভাড়া করে কিংসটনের দিকে চলে গেল। সন্ধ্যে হয়েছে যখন সে কিংসটনে পৌঁছে গেছে। রাজধানী শহরে অনেক মানুষের ভিড়। কিংসটন হল ব্যবসার শহর। এখানে তৈল শোধনাগার আছে। ওয়্যার হাউস আছে। মৎস্যকেন্দ্র আছে।

জর্জ কিছুই দেখবে না। তাকে এখন একটা অন্য কাজ করতে হবে। সে একটা বারে ঢুকে পড়ল। বারটেনডারের সঙ্গে কথা বলল। বছর পনেরোর এক কালো বেশ্যার সাথে গল্প জুড়ে দিল। তারপর চলে গেল সস্তার হোটেলে। সেখানে ওই বেশ্যাটার সঙ্গে দুঘণ্টা কাটাল। জর্জ ঘর থেকে বেরিয়ে এল। এবার তাকে মন্টেগো বে-তে ফিরে আসতে হবে। হ্যাঁ, আলেকজান্দ্রা হয়তো ওই ফোনটা পেয়ে গেছে।

পরের দিন সকালবেলা কিংসটনের খবরের কাগজে একটা খবর বেরিয়েছে। চারজন ট্যুরিস্ট এসে এক বারাঙ্গনার ওপর অত্যাচার করেছে। মেয়েটি প্রায় মরতে বসেছিল।

***

হ্যানসান অ্যান্ড হ্যানসানের অফিস। সিনিয়ার পার্টনাররা বসে জর্জ মেলিস সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। একজন সদস্যের কাছ থেকে একটা অভিযোগ এসেছে। তার অ্যাকাউন্টে কিছু গোলমাল দেখা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ঠিক করা হল জর্জকে আর চাকরিতে রাখা হবে না। কিন্তু এখন আর একটা চিন্তা এসে গেছে।

একজন বললেন জর্জ কেটি ব্ল্যাকওয়েলের নাতনিকে বিয়ে করেছে। ব্যাপারটা এখন নতুন ভাবে ভাবতে হবে।

আর একজন পার্টনার বললেন–হ্যাঁ, ব্ল্যাকওয়েলের অ্যাকাউন্টটা আমাদের এখানে আসতে পারে।

তার মানে? জর্জ মেলিসকে আর একটা সুযোগ দেওয়া হোক।

***

আলেকজান্দ্রা এবং জর্জ তাদের হনিমুন সেরে ফিরে এসেছে।

কেটি বললেন এই বাড়িতে তোমরা থাকে। তাহলেই ভালো হবে।

জর্জ বাধা দেবার চেষ্টা করেছিল কিন্তু আমার মনে হয়, আমি আর অ্যালেক্স যদি অন্য জায়গায় থাকি তাহলেই ভালো হয়।

জর্জ এই বুড়ি শয়তানির সঙ্গে এক বাড়িতে থাকতে চাইছে না। তাহলে তার গতিবিধির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখা হবে।

কেটি বললেন আমি বুঝতে পারছি, তাহলে আমি তোমাদের জন্য একটা বাড়ি কিনে দেব। সেটাই হবে আমার বিয়ের উপহার।

জর্জ কেটির হাতে হাত রেখে বলল ঠিক আছে, এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি এবং অ্যালেক্স আপনার উপহার মাথায় পেতে নেব।

আলেকজান্দ্রা বলল –ঠাম্মা, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। দেখো, জায়গাটা যেন বেশি দূরে না হয়।

***

এক সপ্তাহের মধ্যে, তারা একটা পুরোনো বাড়ি পেয়ে গেল। পার্কের পাশে, খুব একটা দূরে নয়। ভারী সুন্দর বাড়িটা।

জর্জ আলেকজান্দ্রাকে বলল –এসো, তুমি এই বাড়িটা মনের মতো করে সাজাও।

জর্জ এখন বেশির ভাগ সময় তার অফিসে কাটায়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে সে ব্যস্ত থাকে। ইতিমধ্যে পুলিশের কাছে বেশ কয়েকটা খবর এসে পৌঁছে গেছে। এই শহরে যেসব বারবনিতারা একা একা বার কিংবা হোটেলে যায়, তাদের বারে বারে অপমানিত হতে হচ্ছে। তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে। যে আক্রমণ করে সে সুভদ্র চেহারার এক পুরুষ, সংস্কৃতি সম্পন্ন মানুষ। কোনো বিদেশী রাষ্ট্র থেকে এসেছে। এই লোকটিকে এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

***

ইভ এবং জর্জ একটা ছোটো টাউন রেস্টুরেন্টে বসে লাঞ্চ খাচ্ছে। এখানে কেউ তাদের চিনতে পারবে না।

–অ্যালেক্সের সাথে তুমি কেমন ব্যবহার করছ? ঠাকুরমা কিছু বুঝতে পারছে না তো?

–না, এ বিষয়ে তোমার কোনো চিন্তা নেই।

–ডার্লিং এবার পরবর্তী পদক্ষেপটা ভাবতে হবে।

***

পরের দিন সন্ধ্যেবেলা জর্জ এবং আলেকজান্দ্রা একটা হোটেলে খেতে বসেছে। নিউইয়র্কের অন্যতম সেরা ফরাসি রেস্টুরেন্ট। মাত্র তিরিশ মিনিট দেরী হয়েছে জর্জের আসতে।

এই হোটেলের মালিকের নাম পিয়েরে জর্ডন। তিনি আলেকজান্দ্রার দিকে এগিয়ে গেলেন। জর্জও সেখানে পৌঁছে গেল।

জর্জ বলল–আমি অ্যার্টনির কাজে ব্যস্ত ছিলাম। সব ব্যাপারটা গোলমাল হয়ে গেছে।

-কোন গোলমাল জর্জ?

-না, আমার ইচ্ছে পত্রটা তৈরি করতে হবে। আমার যা কিছু আছে, আমি সব তোমাকে দিতে চাইছি।

-না, আমি কিছু চাইছি না।

–তোমাদের সম্পত্তির সাথে তুলনাই হয় না। কিন্তু আমার টাকাটা পেলে তোমার জীবন ভালো ভাবেই কেটে যাবে।

অ্যালেক্স অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তারপর বলল–তুমি এখন থেকে চিন্তা করছ কেন?

-হ্যাঁ, এখন থেকে ভাবতে হবে বৈকি।

অ্যালেক্স বলল–আমিও আমার সব কিছু তোমার হাতে তুলে দেব।  

জর্জ বলল –অ্যালেক্স, আমি তোমার সম্পত্তি চাই না। তুমি শুধু সারা জীবন আমাকে ভালোবেসো, কেমন?

***

এক সপ্তাহ কেটে গেছে। জর্জ ইভের সাথে দেখা করেছে তার অ্যাপার্টমেন্টে। ইভ জানতে চাইল অ্যালেক্স কি নতুন উইলে সই করেছে?

-আজ সকালে, সে তার সমস্ত সম্পত্তি আমাকে দিয়ে দেবে।

***

পরের সপ্তাহ, ক্রুগার ব্রেন্ট লিমিটেডের ৪৯ শতাংশ শেয়ার আলেকজান্দ্রার হাতে সমর্পণ করা হয়েছে। জর্জ ফোনে ইভকে এই খবরটা জানিয়ে দিল।

ইভ বলল–আজ রাতে এসো। আমরা একসঙ্গে পালন করব।

-না, আজ কেটি একটা জন্মদিনের পার্টির আয়োজন করেছেন। অ্যালেক্সের জন্য। এক মুহূর্তের নীরবতা। কোথায় খাওয়া দাওয়া হবে?

–আমি জানি না, হয়তো নরকে। ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করো।

 লাইনটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল।

***

জর্জ পঁয়তাল্লিশ মিনিট পরে ইভকে ফোন করল–তুমি কেন মেনুর ব্যাপারে চিন্তা করছ? তোমাকে তো এই পার্টিতে বলা হয়নি। হ্যাঁ, অনেক মেনুই হচ্ছে।

-জর্জ, তোমার সাথে রাতে দেখা হবে?

–না, ইভ। আজ আমি খুব ব্যস্ত থাকব।

–তুমি অন্য কিছু ভাবছ কি?

জর্জ বোধহয় অন্য কিছু চিন্তা করছে। জর্জ ফোনটা নামিয়ে রাখল। আজ রাতে তার সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ ক্লায়েন্টের কথা হবে, কিন্তু ইভকে এইভাবে প্রতারণা করা হয়তো উচিত হয়নি।

***

বাবাকে সে বিয়ের নেমন্তন্ন পাঠিয়েছিল। ওই বৃদ্ধ ভদ্রলোক উত্তর দেবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। হ্যাঁ, সারা পৃথিবী আমাকে সম্মান জানাচ্ছে। সেখানে পরিবার যদি না জানায়, তাহলে কী বা হবে?

***

আলেকজান্দ্রার তেইশতম জন্মদিন। পার্টিটা খুবই জমে গেল। চল্লিশ জন অতিথিকে বলা হয়েছিল। আলেকজান্দ্রা চেয়েছিল, জর্জ যেন তার কয়েকজন অন্তরঙ্গ বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু জর্জ বন্ধু পাবে কোথায়? সে তো একা থাকতেই এই শহরে এসেছে।

আলেকজান্দ্রা মোমবাতি নিভিয়ে দিল। কেক কাটল। একটা শুভ চিন্তা-কেটি তাকিয়ে আছেন। ভাবছেন, প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর কথা মনে পড়ছে। ডেভিড আমাকে একটা নেকলেস দিয়েছিল। বলেছিল সে আমাকে কত ভালোবাসে।

জর্জ ভাবছে নেকলেসটার দাম অনেক হবে। এই সুন্দর নেকলেস, আহা কবে আমার হস্তগত হবে।

কেটির উপহার। কতদিন আর আলেকজান্দ্রা গলায় ঝুলিয়ে রাখবে।

আলেকজান্দ্রার কয়েকজন বান্ধবী তার দিকে তাকিয়ে আছে। হাসছে। জর্জ এটা ভালোভাবেই বুঝতে পারছে, ওরা হল শয়তানির মতো। জর্জ ভাবল, কিন্তু ওদের কাউকে দখল করতেই হবে। আলেকজান্দ্রার সাথে এদের তুলনা হয় না একথা সত্যি। তাহলে? তাদের কেউ যদি পুলিশে খবর দেয়? তাহলে কী হবে?

দশটা বাজতে চলেছে। জর্জ টেলিফোনের কাছে চলে গেল। সে ফোন করার চেষ্টা করল।

না, ফোনটা বেজে উঠেছে।

–হ্যালো?

মি. মেলিস? 

 –এটা হল আপনার আনসারিং সার্ভিস। আপনি বলেছিলেন দশটার সময় ফোন করতে।

আলেকজান্দ্রা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। জর্জ আলেকজান্দ্রার মুখের দিকে তাকিয়ে ফোনে বলল–আমি এখনই বেরিয়ে পড়ব। ওনার সাথে প্যান অ্যামি ক্রিপারস ক্লাবে দেখা হবে।

জর্জ রিসিভারটা নামিয়ে রাখল।

–কী হয়েছে, ডার্লিং?

জর্জ আলেকজান্দ্রার দিকে তাকাল আমার এক পার্টনার সিঙ্গাপুরে যাবে। সে অফিসে গুরুত্বপূর্ণ কনট্র্যাক্ট কাগজ ফেলে এসেছে। সেগুলো নিতে হবে। আমাকে যেতে হচ্ছে। তার সাথে দেখা করব, এয়ারপোর্টে গিয়ে।

-এখন? আলেকজান্দ্রার মুখ ভার। অন্য কাউকে পাঠালে হয় না?

-না, গুরুত্বপূর্ণ কাগজ। আমাকে যেতেই হবে। জর্জ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তুমি পার্টিতে চলে যাও। আমি এখুনি ফিরে আসছি।

আলেকজান্দ্রা হাসি এনে বলার চেষ্টা করল –ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি এসো কিন্তু।

জর্জ এখন ইভের সঙ্গে দেখা করবে। জন্মদিনের সন্ধ্যেটা কেমন করে কাটাচ্ছে?

ইভ দরজা খুলে দিল। জর্জের দিকে তাকিয়ে বলল শেষ পর্যন্ত আসতে পারলে? তুমি তো খুব চালাক দেখছি।

-হ্যাঁ, আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারব না। অ্যালেক্স কিন্তু অপেক্ষা করছে।

–ভেতরে এসো ডার্লিং। তোমার জন্য একটা বিস্ময় অপেক্ষা করছে।

ইভ ছোট্ট ডাইনিং রুমে পৌঁছে গেল। টেবিলে দুজনের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা। হয়েছে। ভারী সুন্দর সাজানো হয়েছে।

-কী জন্য? আমার জন্মদিন জর্জ।

 –আমি জানি, জর্জ বলল, আমি কিন্তু কোনো উপহার আনতে পারিনি।

ইভ বলল তোমার উপহার হল ভালোবাসা। সেটা আমি পরে নেব, এখন চুপটি করে বসো।

জর্জ বলল–আমি খেয়ে এসেছি। এখন কিছু খেতে পারব না।

–বসো তো।

ইভের কণ্ঠস্বরে কর্তৃত্ব।

জর্জ তাকিয়ে দেখল ডিনারের সব পদ সাজানো হয়েছে। যেমনটি করা হয়েছে আলেকজান্দ্রার আসরে।

ইভ বলল –অ্যালেক্স আর আমি সব কিছু ভাগাভাগি করতেই ভালোবাসি। আজ রাতে আমি তার জন্মদিনের ডিনারটা ভাগ করে খাচ্ছি। আগামী বছর থেকে একটাই পার্টি হবে। সেই সময়টা এসে গেছে ডার্লিং। আমার বোনের একটা অ্যাকসিডেন্ট হবে। সেই খবর পেয়ে বুড়ি ঠাকুরমার মৃত্যু হবে। সব কিছু আমরা হাতে পাব, জর্জ, এবার বেডরুমে এসো। আমাকে জন্মদিনের উপহার দেবে না?

জর্জ এখন এখান থেকে বেরোতে পারলে বাঁচে। সে যথেষ্ট শক্ত সমর্থ মানুষ। কিন্তু ইভ তার ওপর অধিকার বিস্তার করার চেষ্টা করছে। তাকে নপুংসক অবস্থায় পরিণত করেছে। ইভ ধীরে ধীরে নিজের পোশাক খুলে ফেলল। তাকে উলঙ্গ করে সামনে দাঁড় করিয়ে রাখল। যাতে তার লিঙ্গটি উখিত হতে পারে এমন ব্যবস্থা করল।

ইভ বলল–তা হলে ডার্লিং কেমন লাগছে তোমার? তোমার রতি তৃপ্তি হয় না কেন বলো তো? তুমি জানো কেন? তুমি মেয়েদের ভালোবাসো না। সত্যি ভালোবাসো জর্জ? তুমি তাদের আঘাত করে আনন্দ পাও। তুমি আমাকেও আঘাত করতে চাও। বলো সত্যি কিনা?

–আমি তোমাকে মেরে ফেলতে চাই।

 ইভ হাসল তোমার এই ইচ্ছেটা কখনও পূর্ণ হবে না। কারণ তুমি কোম্পানিটাকে মুঠোবন্দী করতে চাইছ। তুমি কখনও আমাকে আঘাত করতে পারবে না জর্জ। যদি আমার কিছু ঘটে যায়, তাহলে আমার এক বন্ধু সব কথা জানিয়ে পুলিশকে চিঠি দেবে।

জর্জ বিশ্বাস করতে পারছে না।–তুমি মিথ্যে বলছ।

অনেকক্ষণের নীরবতা।

-না, এভাবে তোমাকে জব্দ করতে হবে।

 সত্যিটা কি বলবে? আমি ওকে আঘাত করে আনন্দ পাব। হ্যাঁ, আমি ধর্ষকামী, এবার শুরু হল জর্জের অকথ্য অত্যাচার। সে বারবার ইভকে আঘাত করতে শুরু করল। মারের চোটে তার হাতে পায়ে দাগ পড়ে গেল। হ্যাঁ, কনুই ভেঙে গেছে, যন্ত্রণাতে ইভ কাতরাচ্ছে। চিৎকার করে বলছে আর আমাকে মেরো না, তোমার পায়ে পড়ি।

জর্জ শুনছে না। ইভের সমস্ত শরীরে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাকা লাগিয়ে দিল। ইভের মনে ভয় ঢুকেছে। সে নিজেকে বাঁচাবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। শেষ পর্যন্ত সে বলল এখনই ডাক্তারকে ফোন করো। ডঃ হার্টলে, জন হার্টলে।

***

জর্জ মেলিস বলল –আপনি কি এখুনি আসতে পারবেন? ইভ ব্ল্যাকওয়েলের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।

জন হার্টলে ঘরের ভেতর প্রবেশ করলেন। ইভের দিকে তাকালেন। সমস্ত শরীরে রক্ত। বিছানাতে রক্তের দাগ। হায় ঈশ্বর, তিনি ইভের নাড়ির স্পন্দন অনুভব করে জর্জকে বললেন -এখনই পুলিশকে ডাকতে হবে। অ্যাম্বুলেন্স আনতে হবে।

ইভ বিড়বিড় করে বলছে –জন, দোহাই পুলিশকে কিছু জানাবেন না। তাহলে আমি মুখ দেখাতে পারব না।

ডাক্তার হার্টলে ফোনের কাছে গিয়ে বললেন আমি ডঃ হার্টলে বলছি। এখুনি এখানে একটা অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে হবে। দেখুন তো ডঃ কেট ওয়েস্টার আছেন কিনা? উনি যেন এখুনি হাসপাতালে চলে আসেন। একটা এমারজেন্সি অপারেশন হবে।

তারপর একটুখানি কী যেন শুনে উনি বললেন –হ্যাঁ, রাস্তাতে একটা ট্রাক ধাক্কা দিয়ে চলে গেছে।

–অনেক ধন্যবাদ ডক্টর, জর্জ বলল।

ডঃ হার্টলে আলেকজান্দ্রার স্বামীর দিকে তাকালেন। তার চোখে জিজ্ঞাসা। জর্জের সমস্ত জামাকাপড়ে রক্তের দাগ। বুঝতে পারা যাচ্ছে, রক্তটা টাটকা। মুখে এবং হাতেও রক্তের ছিটে চিহ্ন।

–পুলিশকে তো বলতেই হবে। এই গল্পটা কেউ বিশ্বাস করবে না। ডঃ হার্টলে আবার টেলিফোনের দিকে এগিয়ে গেলেন।

জর্জ বলল–না, অনুগ্রহ করে এটা জানাবেন না যেন, হা, যদি আপনি বলেন, আমি এক মানসিক ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করব।

সাইরেনের শব্দ শোনা গেল।

***

মনে হল সে যেন একটা অন্ধকার সুড়ঙ্গ পথে পা রেখেছিল। এখন উজ্জ্বল আলোর দিশা। হ্যাঁ, শরীরটা হালকা হয়েছে। তাকে অপারেশন টেবিলে শুইয়ে রাখা হল।

এক ভদ্রলোক এগিয়ে এসে বললেন আমার নাম কেট ওয়েস্টার, আমি এখন অপারেশন করব।

-হ্যাঁ, আমাকে কুৎসিত করে বাঁচিয়ে রাখবেন না। বলুন, তা হলে আমাকে মেরে ফেলবেন।

ডাঃ ওয়েস্টার বললেন –কেন চিন্তা করছেন? আপনার শরীরের কোথাও একটুকরো দাগ থাকবে না।

***

জর্জ রক্তের ছিটে মুছে ফেলেছে ইভের বাথরুমে গিয়ে। সে তার রিস্ট ওয়াচের দিকে তাকাল। গভীর রাত, তিনটে বেজে গেছে। আলেকজান্দ্রা নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছে। লিভিং রুমে পৌঁছে সে অবাক হয়ে গেল আলেকজান্দ্রা জেগে আছে।

-ডালিং, এত রাত? তোমার কিছু হয়নি তো?

–আমি ভালো আছি, অ্যালেক্স।

সে এগিয়ে এসে স্বামীকে আদর করে বলল। আমি তো এখনই পুলিশকে ফোন করতে যাচ্ছিলাম। ভয়ংকর কিছু হয়েছে ভাবছিলাম। এত দেরী হল কেন? কীসে ব্যস্ত ছিলে?

ব্যস্ত? হঠাৎ বাস্তবে ফিরে এল জর্জ। হ্যাঁ, দেখো না, প্লেনটা ছাড়তে দেরী করল। আমার পার্টনার আমাকে ছাড়তে চাইছিল না।

-ঠিক আছে, তুমি ফিরে এসেছ, সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।

 জর্জ দুচোখের পাতা এক করতে পারল না। চোখ বন্ধ করলেই ইভের যন্ত্রণা কাতর মুখটা মনে পড়ে গেল, ইভের কাতর ধ্বনি তাকে আরও উতলা করে তুলল।

***

জন হার্টলে কেট ওয়েস্টারের সাহায্য পেয়েছেন। কেট ওয়েস্টার হলেন পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে সেরা প্ল্যাস্টিক সার্জেন্ট। পার্ক এভিনিউতে তিনি প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। তিনি কথা দিয়েছেন, ইভকে আবার আগের মতো করে তুলবেন। কিন্তু তিনি ওই গল্পটা বিশ্বাস করছেন না। তিনি বারবার বলছেন, উলঙ্গ হয়ে কোনো মহিলা রাজপথ দিয়ে হেঁটে যায় না। ড্রাইভার তাকে আঘাত করেছে, এই পর্যন্ত গল্পটা ঠিক আছে। কিন্তু ড্রাইভার হঠাৎ তার সমস্ত শরীরে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাকা দেবে কেন?

না, পুলিশকে জানাতেই হবে। এটাই হল তার শেষতম সিদ্ধান্ত।

দুপুরবেলা ডঃ ওয়েস্টার তার সহকর্মীদের বললেন কাজ শেষ হয়ে গেছে। মেয়েটাকে ইনটেনসিভ কেয়ারে দিয়ে আসুন। সামান্য গোলমাল দেখা দিলেই আমাকে ফোন করতে ভুলবেন না।

***

ইভকে ইনটেনসিভ কেয়ারে রাখা হল। আটচল্লিশ ঘণ্টা কেটে গেছে। জর্জ হসপিটালে গিয়ে নিজেকে অ্যাটর্নি বলে পরিচয় দিল। ইভের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পাওয়া গেল।

-হ্যালো ইভ।

–জর্জ। কণ্ঠস্বর ফিসফিসানি পর্যায়ে নেমে গেছে।

–অ্যালেক্সকে কিছু বলেনি তো?

–না, তা কখনও বলতে পারি।

 –আমি জানি, তুমি কেন এসেছ? এখন কিছু পরিকল্পনা করতে হবে?

–ইভ, আমি দুঃখিত।

–অ্যালেক্সকে কোনোদিন বলল না, তুমি বলবে আমি বেড়াতে গেছি। কয়েক সপ্তাহ বাদে ফিরে আসব।

-ঠিক আছে তাই বলব।

 দুটো রক্তরঞ্জিত চোখ তাকিয়ে আছে।

–জর্জ, একটা সাহায্য করবে?

–কী সাহায্য?

মৃত্যুটা যেন যন্ত্রণা কাতর হয়।

***

সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। যখন তার ঘুম ভাঙল, তখন কেট ওয়েস্টার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।

-কেমন লাগছে?

–আমি একটা আয়না পেতে পারি?

ডঃ ওয়েস্টার বললেন না, এখন নয়, আর কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। তারপর আপনি আয়নাতে মুখ দেখবেন।

তিনি গল্পটা শুনতে চাইলেন, সেই একই পুরোনো মিথ্যে গল্প। ওয়েস্টার বুঝতে পারলেন। এর মধ্যে কোনো একটা রহস্য আছে।

শেষ পর্যন্ত তিনি ভাবলেন, না, এই গল্পটা পুলিশ বিশ্বাস করবে না। আমি বরং বলি আপনি মাথা ঘুরে সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছেন। কেমন?

***

প্রত্যেকদিন ডঃ কেট ওয়েস্টার ইভের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। শেষ পর্যন্ত ইভ একেবারে সেরে উঠল। আয়নাতে নিজেকে দেখে অবাক হয়ে গেল। শরীরের কোথাও এতটুকু কাটা চিহ্ন নেই।

পনেরো দিন কেটে গেছে। সে একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে এসে ভর্তি হল। সেখানে তাকে আরও বেশ কিছুদিন থাকতে হবে।

পাঁচ সপ্তাহ কেটে গেছে। ইভের মনে হল শরীরটা আগের মতোই ঝরঝরে হয়ে গেছে। হ্যাঁ, ডাক্তারকে অশেষ ধন্যবাদ।