৩১. প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবাদের ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা

সেই নিদারুন দুঃসময়েও মুসলমানরা কিভাবে অটল অবিচল থাকতে সক্ষম হলেন ? এ কথা ভেবে শক্ত মনের মানুষও অবাক হয়ে যান। কি নির্মম নির্যাতনের মুখেও মুসলমানরা ধৈর্য্ ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছিলেন। অত্যাচার নির্যাতনের বিবরণ পাঠ করে দেহ-মন শিউরে উঠে। কি সেই সম্মোহনি শক্তি, যার কারনে মুসলমানরা এতোটা অবিচলিত ছিলেন ? এ সম্পর্কে পরবর্তী নীচে সংক্ষেপে আলোকপাত করা যাচ্ছে।

এক. ঈমানের সৌন্দর্য

সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ কারণ হচ্ছে আল্লাহর ওপর ঈমান এবং তাঁর সঠিক পরিচয় জানা। ঈমানের সৌন্দর্য ও মাধুর্য পাহাড়ের সাথে ধাক্বা খেয়েও অটল থাকে। যার ঈমান এ ধরণের মযবুত এবং শক্তিশালী, তিনি যে কোন অত্যাচার নির্যাতনকে সমুদ্রের ওপরে ভাসমান ফেনার চেয়ে বেশী গুরুত্ব দেন না। এ কারণেই মোমেন বান্দা ঈমানের মিষ্টতা এবং মাধুর্যের সামনে কোন বিপদ বাধাকেই পরোয়া করেন না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, যা আর্বজনা, তা ফেলে দেয়া হয় এবং যা মানুষের উপকার আসে, তা জমিতে থেকে যায়।

দুই. আকর্ষনীয় নেতৃত্ব

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন উম্মতে ইসলামিয়া বরং সমগ্র মানব জাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা। তাঁর শারীরিক সৌন্দর্য, মানসিক পূর্ণতা, প্রশংসনীয় চরিত্র, চমৎকার ব্যক্তিত্ব, পরিশীলিত অভ্যাস ও কর্মতৎপরতা দেখে আপনা থেকেই তাঁকে ভালোবাসার ইচ্ছা জাগতো। তার জন্যে মন উজাড় করে দিতে ইচ্ছা হতো। মানুষ যেমন গুণ বৈশিষ্ট মনে প্রাণে পছন্দ করে, সেসব তার মধ্যে এতো বেশী ছিলো যে, এতোগুলো গুণবৈশিষ্ট একত্রে অন্য কাউকেই দেয়া হয়নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব, আভিজাত্য ও চারিত্রিক সৌন্দর্যে সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ক্ষমাশীলতা, আমানতদারি, সততা সত্যবাদিতা,সহিষ্ণুতা ইত্যাদি গুণ এতো বেশী ছিলো যে, তাঁর স্বাতন্ত্র্য ও শ্রেষ্ঠত্ব সর্ম্পকে শত্রুরাও কখনো সন্দেহ পোষণ করেনি। তিনি যে কথা মুখে একবার উচ্চারণ করতেন তাঁর শত্রুরাও জানতো যে, সে কথা সত্য এবং তা বাস্তবায়িত হবেই হবে। বিভিন্ন ঘটনা থেকে এ কথার প্রমাণও পাওয়া যায়।
একবার কোরায়ইশদের তিনজন লোক একত্রিত হয়েছিলো, তারা প্রত্যেকেই গোপনে কোরআন তেলাওয়াত শুনেছিলো কিন্তু কারো কাছে সে কথা প্রকাশ করেনি। এদের মধ্যে আবু জেহেলও ছিল একজন। অন্য দুজনের একজন আবুজেহেলকে প্রশ্ন করলো যে, মোহাম্মদের কাছে যা কি শুনেছো, বলতো, সে সম্পর্কে তোমার মতামত কি ? আবু জেহেল বললো, আমি কি শুনেছি ? আসলে কথা হচ্ছে যে, আমরা এবং বনু আবদে মন্নাফ আভিজাত্য ও মর্যাদার ব্যাপারে একে অন্যের সাথে মোকাবিলা করতাম। তারা গরীবদের পানাহার করালে আমরাও তা করতাম, তারা দার খয়রাত করলে আমরাও দান খয়রাত করতাম। ওরা এবং আমরা ছিলাম পরস্পরের প্রতিদন্ধ্বী। আমরা ছিলাম রেসের ঘোড়ার দুই প্রতিযোগির মত। এমনি অবস্থায় আবদে মন্নাফ বলতে শুরু করলো যে, আমাদের মধ্যে একজন নবী আছেন, তাঁর কাছে আকাশ থেকে ওহী আসে। বলতো আমরা কিভাবে ওরকম ওহী পেতে পারি ? খোদার কসম. আমি ঐ ব্যক্তির উপর কখনো বিশ্বাস স্থাপন করবো না এবং কখনো তাকে সত্যবাদী হিসেবে স্বীকৃতি দিব না। আবু জেহেল বলতো, হে মোহাম্মদ আমি তোমাকে মিথ্যাবাদী বলি না, কিন্ত তুমি যা কিছু নিয়ে এসেছো তাকে মিথ্যা বলি। এ কথার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ওরা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলে না। কিন্ত ওইসব জালেম আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করে।
ইতিপুর্বে এ ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে যে, পৌত্তলিকরা রসুল (সাঃ) কে এতদিন গালাগাল করছিলো। পরপর তিনবার এরুপ করলো। তৃতীয়বার রসুলে করিম (সাঃ) থমকে দাড়িয়ে বললেন, হে কোরাইশদল, আমি তোমাদের কাছে যবাইয়ের পশু নিয়ে এসেছি। একথা শুনার সাথে সাথে কাফেররা আল্লাহর রসুলকে ভালো ভালো কথা বলে খুশি করার চেষ্টা করতে লাগলো। ইতুপুর্বে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, রসুল (সাঃ) সেজদা দেওয়ার সময় কয়েকজন কাফের তাঁর ঘাড়ের উপর উটের নাড়িভুড়ি চাপিয়ে দিয়েছিলো। নামাজ শেষে রসুলে করিম (সাঃ) এরপু কাজ যারা করেছিলো তাদেরকে বদ-দোআ দিয়েছিলেন। সেই বদ-দোআ শুনে কাফেরদের মুখের হাসি মিলিয়ে গেল, তারা গভীর চিন্তা পরে গেল। কেননা তারা নিশ্চিতভাবে জানতো যে, এবার আর তারা রেহাই পাবে না।
এ ঘটনাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু লাহাবের পুত্র ওতাইবাকে বদদোয়া করার পর সে বুঝেছিলো যে, এর পরিনাম থেকে সে রক্ষা পাবে না। সিরিয়া সফরের সময় বাঘ দেখেই সে বলেছিলো, আল্লাহর কসম, মোহাম্মদ মক্কায় থেকেই আমাকে হত্যা করেছেন।
উবাই ইবনে খালফের ঘটনায় রয়েছে যে, এই লোকটি বারবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যা করার হুমকি দিতো। এ ধরণের হুমকির জবাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার বলেছিলেন, তুমি নও বরং আমিই তোমাকে হত্যা করবো ইনশাল্লাহ। এরপর ওহুদের যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য একজন সাহাবী হাত থেকে একটি বর্শা নিয়ে উবাইয়ের প্রতি নিক্ষেপ করেন। এতে তার ঘাড়ের কাছের কাছে সামান্য যখম হয়েছিলো। পরে উবাই বারবার বলেছিলো, মোহাম্মদ মক্কায়ই বলেছিলেন, আমি তোমাকে হত্যা করবো। তিনি যদি আমাকে থুথুও নিক্ষেপ করতেন, তবুও আমার প্রাণ বেরিয়ে যেতো। এর বিস্তারিত বিবরণ পরে উল্লেখ করা যায়।
একবার হযরত সা’দ ইবনে মায়ায মক্কার উমাইয়া ইবনে খালফকে বলেছিলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমি বলকে শুনছি যে, মুসলমানরা তোমাকে হত্যা করবে। একথা শুনে উমাইয়া ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো। এ ভয় সব সময়েই তার ছিলো। সে প্রতিজ্ঞা করেছিলো যে, মক্কার বাইরে কখনো যাবে না। বদরের যুদ্ধের সময় আবু জেহেলের পীড়াপীড়িতে উমাইয়া যুদ্ধে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর সবচেয়ে দ্রুতগামী উট ক্রয় করলো, যাতে বিপদের আশস্কার সময় দ্রুত পালিয়ে আসতে পারে। যুদ্ধে রওয়ানা হওয়ার সময় তার স্ত্রী তাকে বলেছিলো, আবু সফওয়ান, আপনার ইয়াসরেবী ভাই যে কথা বলেছিলেন, আপনি কি সে কথা ভুলে গেছেন? উমাইয়া বললো, না ভুলিনি, আমি তো ওদের সাথে অল্প কিছু দূরে যাবো।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শত্রুদের অবস্থা ছিলো এ রকম। তাঁর সঙ্গী এবং সাহাবাদের অবস্থাতো এমন ছিলো যে, তারা মনে প্রাণে প্রিয় নবীর প্রতি নিবেদিত ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সাহাবাদের ভালোবাসা এতো তীব্র ছিলো যেন তা পাহাড়ী ঝর্ণার পানির ধারা। লোহা যেমন চুম্বকের প্রতি আকৃষ্ট হয়, সাহাবারাও তেমনি আল্লাহর রাসূল (স) এর প্রতি আকৃষ্ট হতেন।
কবি বলেন, তাঁর চেহারা সব মানব দেহের জন্যে অস্তিত্ব স্বরূপ, তাঁর অস্তিত্ব ছিলো প্রতিটি অন্তরের জন্যে চুম্বকের মতো।
এ ধরণের ভালোবাসা এবং নিবেদিত চিত্ততার কারণেই সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর রসূলের ওপর কারো আঁচর এবং তাঁর পায়ে কাঁটা বিদ্ধ হওয়াও সহ্য করতে পারতেন না। এর বিনিময়ে তারা নিজেদের মাথা কাটিয়ে দিতেও প্রস্তত থাকতেন।
দুর্বৃত্ত ওতবা ইবনে রবিয়া একদা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা)-কে মারাত্মকভাবে প্রহার করলো। তাঁর চেহারা রক্তাক্ত করে দেয়া হলো। তীব্র প্রহারের এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। খবর পেয়ে তাঁর গোত্র বনু তাইমের লোকেরা তাঁকে কাপড়ে জড়িয়ে বাড়িতে পৌছে দিল। তাঁর বাঁচার আশা সবাই ছেড়ে দিয়েছিলো। দিনের শেষে তাঁর জ্ঞান ফিরে এলো। তিনি প্রথমেই জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেমন আছেন? একথা শুনে বনু তাঈম গোত্রের যারা সেখানে উপস্থিত ছিলো, তারা বিরক্তি প্রকাশ করলো। তারা উঠে যাওয়ার সময় হযরত আবু বকরের মাকে বললো, ওকে কিছু খাওয়াতে পারেন কিনা দেখুন।
আবু বকর (রা) তাঁর মা উম্মুল খায়েরের কাছে আল্লাহর রাসূলের খবর জানতে চাইছিলেন। তিনি বললেন, আমি তো জানি না বাবা। হযরত আবু বরক (রা) বললেন, মা, আপনি উম্মে জামিল বিনতে খাত্তাবের কাছে যান। তাঁর কাছ থেকে আমাকে আল্লাহর রাসূলের খবর এনে ‘দিন। উম্মুল খায়ের উম্মে জামিল বিনতে খাত্তাবের কাছে গেলেন, তাঁকে বললেন, আবু বকর তোমার কাছে মোহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ সম্পর্কে জানতে চাইছেন। উম্মে জামিল বললেন , আমি আবু বকরকেও জানি না, মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহকেও জানি না। তবে আপনি যদি চান, তাহলে আমি আবু বকরের কাছে যেতে পারি। উম্মুল খায়ের উম্মে জামিলকে তাঁর পুত্রের কাছে নিয়ে এলেন। হযরত আবু বকরের অবস্থা দেখে উম্মে জামিল চিৎকার দিয়ে উঠলেন। বললেন, যে কওমের লোকেরা আপনার এ দুরবস্থা করেছে,নিসন্দেহ তারা দুর্বৃত্ত এবং কাফের। আমি আশা করি, আল্লাহ তায়ালা আপনার পক্ষে ওদের ওপর প্রতিশোধ নেবেন। হযরত আবু বকর(রা) আল্লাহর রাসূলের খবর জানতে চাইলেন। উম্মে জামিল উম্মুল খায়েরর প্রতি ইশারা করলেন। হযরত আবু বকর (রা) বললেন, অসুবিধা নেই। উম্মে জামিল বললেন, তিনি ভালো আছেন এবং ইবনে আরকামের ঘরে আছেন। হযরত আবু বকর বললেন, আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমাদকে আল্লাহর রাসূলের কাছে না নেয়া পর্যন্ত আমি কোন কিছুই পানাহার করবো না। উম্মুল খায়ের এবং উম্মে জামিল অপেক্ষা করতে লাগলেন। সন্ধার পর লোক চলাচল কমে গেল এবং অন্ধকার গাঢ় হয়ে এলে হযরত আবু ব্কর সিদ্দিক (রা) তাঁর মা উম্মুল খায়ের এবং উম্মে জামিলের কাঁধে ভর দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হাযির হলেন।
ভালোবাসা এবং নিবেদিতচিত্ততার আরো কিছু বিস্ময়কর ঘটনা এ বইয়ের বিভিন্ন স্থান,বিশেষত ওহুদের যুদ্ধের ঘটনার এবং হযরত যোবায়ের (রা) এর ঘটনায় উল্লেখ করা হয়েছে।

তিন. দায়িত্ব সচেতনতা

সাহাবায়ে কেরাম ভালোভাবেই জানতেন যে, মাটির মানিষের ওপর যেসব দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সে দায়িত্ব যতো কঠিনই হোক না কেন, উপেক্ষা করার কোন উপায় নেই। কেননা সে দায়িত্ব উপেক্ষার পরিণাম হবে আরো বেশী ভয়াবহ। এতে সমগ্র মানব জাতি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সেই ক্ষতির তুলনায় এ যুলুম অত্যাচার বিপদ মুসিবতের কোন গুরুত্বই নেই।

চার. পরকালের ওপর বিশ্বাস

আখেরাত বা পরকালের জীবনের ওপর বিশ্বাস উল্লিখিত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাঁদের কঠোর সংযমী ও সহিষ্ণু হতে অনুপ্রাণিত করেছে। সাহাবায়ে কেরাম এ ব্যাপারে সুদৃঢ় ও অবিচল আস্থা পোষণ করতেন যে, তাদেরকে একদিন রব্বুল আলামিন আল্লাহর দরবারে দাঁড়াতে হবে। সেখানে জীবনের ছোট বড় সকল কাজের হিসাব দিতে হবে। এরপর হয়তো নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত অথবা ভয়াবহ শাস্তিভরা জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। এ বিশ্বাসের বলে সাহাবায়ে কেরাম আশা ও আশষ্কায় পরিপূর্ণ জীবন যাপন করতেন। প্রিয় প্রভু আল্লাহর রহমতের আশা পোষণ করতেন এবং তার আযাবকে ভয় করতেন। তাঁদের অবস্থার কথা পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এভাবে উল্লেখ করেন তারা যা কিছু সম্পাদন করে সেটা করে অন্তরে ভয়ভীতির সঙ্গে। এ কারণে করে যে, তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের কাছে ফিরে যেতে হবে।
তাঁরা একথাও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, এ পৃথিবীর সকল আরাম-আয়েশ সুখ-স্বাচ্ছন্দ এবং দুঃখষ্টসহ্য পরকালের তুলনায় একটি মশার একটি পাখার সামান মূল্যও রাখে না। এ বিশ্বাস তাঁদের এতো অবিচল এবং অটুট ছিলো যে, এর মোকাবেলায় দুনিয়ার সব বিপদ-আপদ তিক্ততা দুঃখকষ্ট ছিলো তুচ্ছ ।

পাঁচ. কঠিন থেকে কঠিনতর সে অবস্থা

কোরআনের যেসব আয়াত পর্যায়ক্রমে নাযিল হচ্ছিল, তাতে ইসলামি বুনিয়াদি শিক্ষা ও আদর্শ আকর্ষনীয়ভাবে তুলে ধরা হচ্ছিল। কোরআনের সেসব আয়াত মানব জাতির সামনে সবচেয়ে সম্মানজনক ও বৈশিষ্টমন্ডিত ইসলামী সমাজের ঈমানের সজিবতা এবং দৃঢ়তাকে আরো শক্তিমান করে তোলা হচ্ছিল। আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন উদাহরণ পেশ করছিলেন এবং হেকমত বা কৌশল মুসলমানদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে যদিও এখনো তোমাদের কাছে তোমাদের পুর্ববর্তীদের অবস্থা আসেনি এবং তারা ভীত ও কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসুল ও তার সাথে ঈমান আনয়নকারীরা বলে উঠেছিলো, আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে ? হাঁ আল্লাহর সাহায্য কাছেই”। {সুরা বাক্বারা আয়াত ২১৪}
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, “আলিফ-লাম-মীম। মানুষ কি মনে করে, আমলা ঈমান এনেছি, একথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে অব্যহতি দেয়া হবে ? আমিতো তাদের পুর্ববর্তীদেরও পরীক্ষা করেছিলাম। আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী। {সুরা-২৯ আয়াত ১-৩}
পাশাপাশি এমন সব আয়াত নাযিল হচ্ছিল যেসব আয়াতে কাফের মুশরিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়া হচ্ছিল। তাদের কোন অজুহাতই ধোপে টেকার মত ছিল না। সুস্পষ্ট ভাষায় তাদের বলে দেয়া হচ্ছিল যে, যদি তারা তাদের পথভ্রষ্টতা এবং হটকারীতার উপর অঠল থাকে তবে পরিণাম হবে মারাত্মক। উদাহরণ হিসেবে পুর্ববর্তী জাতি সমূহের এমন সব ঘটনা ও ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে যে, ওতে আল্লাহর রসুল ও কাফেরদের সম্পর্কে আল্লাহর নীতি ব্যক্ত করা হয়েছে। একই সাথে দয়া ও ক্ষমার কথাও বলা হয়েছে। এবং পথ নির্দেশ ব্যক্ত করা হয়েছে। এসব বলা হয়েছে এ জন্য যে অবিশ্বাসীরা যেন নিজেদের পথ ভ্রষ্টতা ও গোমরাহী থেকে বিরত থাকে।
প্রকৃত পক্ষে কোরআন মুসলামনদেরকে এক ভিন্ন পৃথীবি ভ্রমন করিয়ে এনেছে। তাদ;এর সামনে বিস্ময়কর সব উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে। যাতে তারা হত্যোদম হয়ে না পরে কোন বাধা বা প্রতিকুলতাই যেন তাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ থেকে ফিরিয়ে রাখতে না পারে।
এসকল আয়াতে মুসলমানদেরকে এমন সব কথাও বলা হয়েছে, যার দ্বারা মুসলমানরা আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও নেয়ামত পুর্ণ জান্নাতের সুসংবাদ পেতে পারে। আর অবিশ্বাসীদের চিত্র এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে , যাতে তারা আল্লাহর দরবারে ফয়সালার জন্য হাযির করার কথা জানতে পারে। তাদের পার্থিব জীবনের পুণ্যের কোন স্থান পাবে না বরং তাদেরকে টেনে হিচরে দোজখে নিক্ষেপ করা হবে এবং বলা হবে, এবার দোজখের স্বাদ গ্রহণ করো চিরদিন ধরে।

ছয়. কঠোর ধের্য্য

এসব কথা ছাড়াও মুসলমানরা অত্যাচারিত হওয়ার কেবল শুরু থেকেই নয়, বরং তার আগে থেকেই এটা জানতো যে, ইসলাম গ্রহণের অর্থ এই নয় যে, চিরস্থায়ী দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে হবে। বরং ইসলামি দাওয়াতের মুল কথাই ছিল জাহেলী যুগের অবসান, সকল প্রকার অত্যাচার নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার মুল উৎপাটন। ইসলামী দাওয়াতের একটা লক্ষ্য এটাও ছিল যে, মুসলমানরা পৃথীবিতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করবে এবং রাজনৈতিকভাবে এমন বিজয় অর্জণ করবে, যাতে সকল মানুষকে আল্লাহর ইচ্ছা ও সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করা যায়। মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আল্লাহর দাসত্বে প্রবেশ করানো যায়।
কোরআনুল করিমের এসব সু-সংবাদ কখনো ঈশারা এবং কখনো খোলাখুলি ভাবে নাযিল হচ্ছিল। একদিকে এমন অবস্থা ছিল যে, প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও পৃথীবি মুসলমানদের জন্য সংকির্ণ হয়ে যাচ্ছিলো, তাদের টিকে থাকাই ছিলো কঠিন। তাদেরকে উচ্ছেদ করতে একদল লোক ছিল সদা সক্রিয়। অন্যদিকে মুসলমানদের শক্তি সাহস ও মনোবল বাড়াতে এমন সব আয়াত নাযিল হচ্ছিলো যাতে পুর্বকালের ঘটনাবলী বর্ণনা করা হয়েছে,। পুর্ববর্তী সময়ের নবীদের অভিশ্বাস করা হয়েছে এবং তাদের উপরও অত্যাচার নিপীড়ন চালানো হয়েছে। সেসব আয়াতে যে চিত্র অন্কন করা হচ্ছিল তার সঙ্গে মক্কার মুসলমান ও কাফেরদের অবস্থা হুবহু সাদৃশ্য ছিল। পরিশেষে একথা উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইতিপুর্বে অবিশ্বাসীরা কিভাবে ধ্বংস এবং আল্লাহর পুন্যশীল বান্দাদের তাঁর জমীনের উত্তারাধিকারী করা হয়েছে। পরিণামে মক্কার অবিশ্বাসীরাই ব্যর্থ ও পরাজিত ও মুসলমান এবং ইসলামের দাওয়াতের সাফল্যই অর্জিত হবে। সেই সময় এমন সব আয়াতও হয়েছে, যেসব আয়াতে ঈমানদারদের বিজয়ের সু-সংবাদ সুপষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন-আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, আমার প্রেরিত বান্দাদের সম্পর্কে আমার এ বাক্য পূর্বেই স্থির হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্য প্রাপ্ত হবে এবং আমার বাহিনীই হবে বিজয়ী। অতএব কিছুকালের জন্যে তুমি ওদেরকে উপেক্ষা কর। তুমি ওদের পর্যবেক্ষণ কর, শীঘ্রই ওরা প্রত্যক্ষ করবে।
ওরা কি আমার শাস্তি ত্বরাণ্বিত করতে চায়? তাদের আঙ্গিনায় যখন শাস্তি নেমে আসবে তখন সতর্কীকৃতদের প্রতিফল ভয়াবহ ও জঘন্য হবে। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, এই দলতো শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে।
বহু দলের এই বাহিনীও সে ক্ষেত্রে অবশ্যই পরাজিত হবে।
হাবশায় হিজরতকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “যারা অত্যাচারিত হওয়ার পরও আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, আমি অবশ্যই দুনিয়ায় তাদের আবাস দেবো এবং আখেরাতের পুরস্কার তো শ্রেষ্ঠ। হায় ওরা যদি সেটা জানতো।“ (৪২,১৬)
অবিশ্বাসীরা আল্লাহর রসুলকে হযরত ইউসুফ (আঃ) এর ঘটনা জিজ্ঞাসা করার পর আল্লাহ তাআলা বলেন, “জিজ্ঞাসুদের জন্য নির্দশন রয়েছে” (৭,১২) অর্থ্যাৎ মক্কাবাসীরা আজ হযরত ইউসুফ (আঃ) এর কথা জিজ্ঞাসা করছে এবং ঠিক সেরকমই ব্যর্থ হবে. যেমন ব্যর্থ হয়েছিল হযরত ইউসুফের ভাইয়েরা। এদের পরিণাম হবে হযরত ইউসুফ (আঃ) এর ভাইদের পরিণামের মতই। কাজেই হযরত ইউসুফ এবং তাঁর ভাইদের ঘটনা থেকে মক্কাবাসরি শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। তাদের বোঝা উচিত যে, অত্যাচারিদের পরিণাম কি ধরনের হয়ে থাকে। এক জায়গায় পয়গম্বরদের প্রসঙ্গ আলোচনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, কাফেররা তাদের রসুলদের বলেছিলো, আমরা তোমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে অবশ্যই বিহস্কার করবো। অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতেই হবে। অতঃপর রসুলদের প্রতি তাদের প্রতিপালক ওহী প্রেরণ করলেন। যালেমদেরকে আমি অবশ্যই বিনাশ করবো। (১৩-১৪,১৪)
পারস্য ও রোমে যখন যুদ্ধের দাবানল জ্বলছিলো, কাফেররা চাচ্ছিলো পারস্যবাসী যেন জয়লাভ করে। কেননা রোমকরা আল্লাহ তাআলা, পয়গম্বর, ওহী, আসমানী কিতাবে বিশ্বাসী বলে দাবী করতো। পারস্যবাসীরা জয়যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে আল্লাহ এ সু—সংবাদ প্রদান করেন যে, “ কয়েক বছর পর রোমকরা জয়লাভ করবে। শুধু এ সু-সংবাদই দেয়া হয়নি, বরং আল্লাহ তাআলা এই সু-সংবাদও দিয়েছিলেন যে, রোমকদের বিজয়ের সময় আল্লাহ তাআলা মোমেনদেরও বিশেষভাবে সাহায্য করবেন। এই সাহায্য পেয়ে তারা খুশি হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর সেদিন মোমেনরা হর্ষোৎ্ফুল্ল হবে আল্লাহর সাহায্যে। (৪৫,৩০) পরবর্তী সময়ে বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় ও সাফল্যের দ্বারা আল্লাহর বাণীর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছিলো।
কোরআনের ঘোষণা ছাড়াও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও বিভিন্ন সময়ের মুসলমানদেরকে এ ধরণের সু-সংবাদ শোনাতেন। হজ্জের সময় ওকায, মাযন এবং যুলমাজাযের বাজারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের কাছে তাঁর নবুয়তের কথা প্রচার করতেন। সে সময় তিনি শুধু বেহেশতের সু-সংবাদই দিতেন না, বরং সুস্পষ্টভাবে একথাও ঘোষনা করতেন, হে লোক সকল, তোমরা বলো যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, এতে আমরা সফলকাম হবে। এর বদৌলতে তোমরা হবে আরবের বাদশাহ এবং অন্যরাও তোমাদের পদানত হবে। আর মরণের পরও তোমরা জান্নাতের ভেতর বাদশাহ হয়ে থাকবে।
ইতিপূর্বে ও ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে যে, ওতবা ইবনে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পার্থিব ভোগ বিলাস এবং ঐশ্বর্যের লোভ দেখাচ্ছিলো এবং জবাবে তিনি হা-মীম সেজদা সূরার কয়েকটি আয়াত পাঠ করে শুনেছিলেন, তখন ওতবা ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে, শেষ পর্যন্ত মুসলমানরাই জয় লাভ করবে।
আবু তালেবের কাছে কোরাইযশদের সর্বশেষ প্রতিনিধি দল দেখা করতে এলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে জবাব দিয়েছিলেন, ইতিপূর্বে সেই জবাব উল্লেখ করা হয়েছে।সেখানেও পূর্ণ দৃঢ়তার সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, তোমরা আল্লাহর তওহীদ বিশ্বাস স্থাপন করো, এর ফলে সমগ্র আরব তোমাদের অধীনস্থ হবে এবং অনারবের ওপরও তোমাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
হযরত খাব্বার ইবনে আরত (রা) বলেন, একবার আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হাযির হলাম। তিনি কাবাঘরের ছায়ায় একটি চাদরকে বালিশ বানিয়ে শায়িত ছিলেন। সে সময় আমরা পৌত্তলিকদের হাতে অত্যাচারিত ও লাঞ্জিত হচ্ছিলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেই পারেন। এ কথা শুনে তিনি উঠে বসলেন, তাঁর চেহরা রক্তিম হয়ে উঠলো। তিনি বললেন, তোমাদের পরবর্তী সময়ে ঈমানদারদের অবস্থা এমনও হয়েছিলো যে, লোহার চিরুনি দিয়ে তাদের গোশত খুলে নেয়া হতো, দেহে থাকতো শুরু হাড়। এরূপ বললেন, আল্লাহ তায়ালা দ্বীণের ওপর বিশ্বাস থেকে সরিয়ে নিতে পারেনি। এরপর বললেন, আল্লাহ তায়ালা দ্বীণকে পূর্ণতা প্রদান করবে। একজন ঘোড় সওয়ার সানয়া থেকে হাদরামাউত পর্যন্ত সফর করবে, এ সময়ে আল্লাহর ভয় ছাড়া তার অন্য কোন ভয় থাকবে না। তবে হাঁ বকরিদের ওপর বাঘের ভয় তখনো থাকবে।
একটি বর্ণনায় একথাও উল্লেখ রয়েছে যে, কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়ো করছো।
স্মরণ রাখা দরকার যে, এসব সু-সংবাদ কোনো গোপনীয় বিষয় ছিলো না। এসব কথা ছিলো সর্বজনবিদিত। মুসলমানদের মতোই কাফের অবিশ্বাসীরাও এসব কথা জানতো। আসওয়াদ ইবনে মোত্তালেব এবং তার বন্ধুরা সাহাবায়ে কেরামকে দেখলেই নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতো তোমাদের কাছে সারা দুনিয়ায় বাদশাহ এসে পড়েছে। ওরা খুব শীঘ্রই কেসরা কায়সারকে পরাজিত করবে। এসব কথা বলে তারা শিশ মারতো এবং হাততালি দিতো।
মোটকথা সাহাবায়ে কেরামের ওপর সে সময় যেসব যুলুম অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়ন চালানো হতো সেসব কিছু বেহেশত পাওয়ার নিশ্চিত বিশ্বাস এবং সুসংবাদের মোকাবেলায় ছিলো তুচ্ছ। এসব অত্যাচারকে সাহাবায়ে কেরাম মনে করতেন এক খন্ড মেঘের মতো, যে মেঘ বাতাসের এক ঝাপটায় দূর হয়ে যাবে।
এছাড়া ঈমাণদারদের ঈমানের পরিপক্কতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিয়ে নিয়মিতভাবে সাহাবায়ে রূহানী খাবার সরবরাহ করতেন। কোরআন শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে তাদের মানসিক পরিশুদ্ধতার ব্যবস্থা করতেন। ইসলাম সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ, রূহানী শক্তির ব্যবস্থা, মানসিক পরিচ্ছন্নতা চারিত্রিক সৌন্দর্যের শিক্ষা সাহাবাদের মনোবল বাড়িয়ে দিচ্ছিলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের ঈমানের নিভু নিভু স্ফুলিঙ্গকে উজ্জল শিখায় পরিণত করতেন। অন্ধকার থেকে বের করে তাদেরকে হেদায়াতের আলোকে পৌঁছে দিতেন। এর ফলে সাহাবাদের দ্বীনী শিক্ষা ও বিশ্বাস বহুগুণ উন্নত হয়ে গিয়েছিলো। প্রবৃত্তির দাসত্ব ছেড়ে তারা আল্লার সন্তুষ্টি লাভের পথে অগ্রসর হতেন। জান্নাতের অধিবাসী হওয়ার আগ্রহ, জ্ঞান লাভের আকাঙ্খা এবং আত্মা সমালোচনায় তাঁরা উদ্যোগী হয়েছিলেন। এসব কারনে বিধর্মী পৌত্তলিকদের অত্যাচার নির্যাতন তাঁদেরকে লক্ষ্য পথ থেকে দূরে সরাতে পারেনি, ধৈর্য সহিষ্ণুতা তাঁরা ছিলেন অটল অবিচল। বিশ্ব মানবের জন্য তাঁরা প্রত্যেকেই হয়ে উঠেছিলেন এক একজন উজ্জল আর্দশ।