২৪. শা’বে আবু তালেবে তিন বছর

এ বয়কটে পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে উঠলো। খাদ্য সামগ্রীর সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেল। যাও বা মক্কায় আসতো, পৌত্তলিকরা তাড়াতাড়ি সেগুলো কিনে নিতো। ফলে অবরুদ্ধ মুসলিম অমুসলিম কারো কাছে কোন কিছু স্বাভাবিক উপায়ে পৌঁছতো না। তারা গাছের পাতা ও চামড়া খেয়ে জীবন ধারণ করতেন। ক্ষুধার কষ্ট এত মারাত্মক ছিলো যে, ক্ষুধার্থ নারী ও শিশুর কাতর কান্না শা’বে আবু তালেব বা আবু তালেব ঘাটির বাইরে থেকে শুনা যেতো। তাদের কাছে কোন খাদ্য সামগ্রী পৌছার সম্ভাবনা ছিল ক্ষীন। যা কিছু পৌঁছাতো তা গোপনভাবেই পৌঁছাতো। নিষিদ্ধ মাস সূহ ছাড়া প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য তারা ঘাটির বাইরে বেরও হতোনা বাইরে থেকে মক্কায় আসা জিনিস কেনার চেষ্টা করেও অনেক সময় তারা সক্ষম হতেন না। কারণ পৌত্তলিকরা সেসব জিনিসের দাম অনেক বাড়িয়ে দিতো।
হাকিম ইবনে হাজাম ছিলেন হযরত খাদিজাতুল কোবরা (রা) ভাতিজা। মাঝে মাঝে তিনি ফুফুর জন্য গম পাঠাতেন। একবার গম পাঠানোর উদ্যোগ নিতেই আবু জেহেল তাতে বাধা দিলো। কিন্ত আবুল বাখতারী হাকিম ইবনে হাজামের পক্ষালম্বন করে গম পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিলেন।
এদিকে আবু তালেব সব সময় রসুলুল্লাহ (সা)’কে নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। রাতে সবাই শুয়ে পরার পর তিনি ভাতিজাকে বলতেন, যাও, তুমি এবার তোমার বিছানায় শুয়ে পরো। তিনি এ কথা এজন্যই বলতেন যাতে, কোন গোপন আততায়ী থাকলে বুঝতে পারে যে তিনি কোথায় শয়ন করেছেন। এরপর সবাই ঘুমিয়ে পরলে আবু তালেব তাঁর প্রিয় ভাতিজার শোয়ার স্থান বদলে দিতেন। ভাতিজার বিছানায় নিজের পুত্র বা অন্য কাউকে শয়ন করাতেন। রাত্রিকালে প্রিয় ভাতিজা আল্লাহর রসুল (সা) কে নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে কাটাতেন।
এ ধরণের কঠিন অবরোধের সত্ত্বেও রসুলুল্লাহ (সা) এবং অন্যান্য মুসলমান হজ্জের সময় বাইরে বের হতেন এবং হজ্জে আসা লোকজনের মাঝে দাওয়াত দিতেন। এ সময় আবু লাহাব রসুলুল্লাহ (সা) এবং মুসলমানদের সাথে যেরুপ আচরণ করতো তা ইতিপুর্বে আলোচনা করা হয়েছে।