মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বয়স চল্লিশ বছরের কাছাকাছি হলো। তাঁর পরিচ্ছন্ন অনমনীয় ব্যক্তিত্বের কারণে স্বজাতীয়দের সাথে তাঁর মানসিক ও চিন্তার দূরত্ব অনেক বেড়ে গেলো। এ অবস্থায় রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিঃসঙ্গপ্রিয় হয়ে উঠলেন। ছাত এবং পানি নিয়ে তিনি মক্কা থেকে দুই মাইল দূরে অবস্থিত হেরা পাহাড়ের গুহায় গিয়ে সময় কাটাতে লাগলেন। এটি একটি ছোট গুহা, এর দৈর্ঘ চার গজ এবং প্রস্ত পৌনে দুই গজ। নীচ দিকে গভীর নয়। ছোট একটি পথের পাশে ওপরের প্রান্তরের সঙ্গমস্থলে এ গুহা অবস্থিত। রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই গুহায় যাওয়ার পর বিবি খাদিজাও সঙ্গে যেতেন এবং নিকটবর্তী কোন জায়গায় অবস্থান করতেন। রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরো রমযান মাস এই গুহায় কাটাতেন। পথচারী মিসকিনদের খাবার খাওয়াতেন এবং বাকি সময় আল্লাহর এবাদাতে কাটাতেন। জগতের দৃশ্যমান এবং এর পেছনে কার্যকর কুদরতের কারিশমা সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতেন। স্বজাতির লোকদের মূর্তি পূজা এবং নোংরা জীবন যাপন দেখে তিনি শান্তি পেতেন না। কিন্তু তাঁর সামনে সুস্পষ্ট কোন পথ, পদ্ধতি অথবা প্রচলিত অবস্থায় বিপরীত কোন কর্মচারীও ছিলো না, যার ওপর জীবন কাটিয়ে তিনি মানসিক স্বস্তি ও শান্তি পেতে পারেন।
রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ নিৎসঙ্গপ্রিয়তা ছিলো প্রকৃতপক্ষো আল্লাহর হেকমতের একটি অংশবিশেষ। এমনি করে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ভবিষ্যতের গুরুদায়িত্বের জন্য তৈরী করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে মানব জীবনের বাস্তব সমস্যার সমাধান দিয়ে যিরা জীবনধারায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট হবেন, তিনি পারিপার্শ্বিক হৈ চৈ হট্টগোল দূরে নির্জনতায় কোলাহলমুক্ত পরিবেশ কিছুকাল থাকবেন এটাইতো স্বাভাবিক।
এই নিয়ম অনুযায়ী আল্লাহ তায়ালা ধীরে ধীরে তাঁর প্রিয় রসূলকে আমানতের বিরাট বোঝা বহন এবং বিশ্ব মানবের জীবনধারায় পরিবর্তনের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জন্যে তৈরী করছিলেন। তাঁকে আমানতের জিম্মাদারী অর্পণের তিন বছর আগে নির্জনে ধ্যান করার জন্য তাঁর জন্যে আগেই নিধারণ করে রেখেছিলেন। এই নির্জনতায় কখনো কখনো একমাস পর্যন্ত তিনি ধ্যানমগ্ন থাকতেন। আধ্যাত্নিক রূহানী সফরে তিনি সৃষ্টরহস্য সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা ও গবেষণা করতেন যাতে, প্রয়োজনীয় নির্দেশ পেলে যথাযথভাবে সেই দায়িত্ব পালনে সক্ষম হন।