মায়ের স্নেহ ও দাদার আদরে
এ ঘটনার পর বিবি হালিমা ভীত হয়ে পড়লেন। তিনি শিশুকে তাঁর মায়ের কাছে ফিরেয়ে দিয়ে এলেন। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত তিনি মায়ের স্নেহছায়ায় কাটালেন।
এদিকে হযরত আমেনার ইচ্ছা ছিলো যে, তিনি পরলোকগত স্বামীর কবর যেয়ারত করবেন। পুত্র মোহাম্মদ, দাসী উম্মে আয়মন এবং শ্বশুর আবদুল মোত্তালেবকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রায় পাঁচ শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মদীনায় পৌছুলেন। একমাস সেখানে অবস্থানের পর মক্কার পথে রওয়ানা হলেন। মক্কা ও মদীনার মাঝামাঝি আবওয়া নামক জায়গায় এসে বিবি আসেনা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ক্রমে এই অসুখ বেড়ে চললো। অবশেষে তিনি আবওয়ায় ইন্তিকাল করেন।
বৃদ্ধ আবদুল মোত্তালেব পৌত্রকে সঙ্গে নিয়ে মক্কায় পৌছুলেন। পিতৃমাতৃহীন পৌত্রের জন্যে তাঁর মনে ছিলো ভালোবাসার উত্তাপ। অতীতের স্মৃতিতে তার মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো। পিতৃমাতৃহীন পৌত্রকে তিনি যতোটা ভালোবাসতেন, এতো ভালোবাসা তাঁর নিজ পুত্র কন্যা কারো জন্যেই ছিলো না। ভাগ্যের লিখন, বালক মোহাম্মদ সে অবস্থায় ছিলেন একান্ত নিঃসঙ্গ; কিন্তু আবদুল মোত্তালেব তাঁকে নিঃসঙ্গ থাকতে দিতেন না, তিনি পৌত্রকে অন্য সকলের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন এবং স্নেহ করতেন। ইবনে হিশাব লিখেছেন আবদুল মোত্তালেবের জন্যে কাবাঘরের ছায়ায় বিছানা পেতে দেয়া হতো। তাঁর সব সন্তান সেই বিছানার চারিদিকে বসতো। কিন্তু মোহাম্মদ গেলে বিছানায়ই বসতেন। তিনি ছিলেন অল্প বয়ষ্ক শিশু। তাঁর চাচারা তাঁকে বিছানা থেকে সরিয়ে দিতেন। কিন্তু আবদুল মোত্তালেব বলতেন, ওকে সরিয়ে দিয়ো না। ওর মর্যাদা অসাধারণ। বরং তাঁকে নিজের পাশে বসাতেন। শুধু বসানোই নয়, তিনি প্রিয় দৌহিত্রকে সব সময় নিজের পাশে রাখতেন। বালক মোহাম্মদের কাজকর্ম তাঁকে আনন্দ দিতো।
বয়স আট বছর দুই মাস দশদিন হওয়ার পর তাঁর দাদার স্নেহের ছায়াও উঠে গেলো। তিনি ইন্তিকাল করলেন। মৃত্যুর আগে তিনি তার পুত্র আবু তালেবকে ওসিয়ত করে গেলেন, তিনি যেন ভ্রাতুষ্পুত্রের বিশেষভাবে যত্ন নেন। উল্লেখ্য আবু তালেব এবং আবদুল্লাহ ছিলেন একই মায়ের সন্তান।
চাচার স্নেহবাৎসল্যে
আবু তালেব ভ্রাতুষ্পুত্রকে গভীর স্নেহ-মমতার সাথে প্রতিপালন করেন। তাঁকে নিজ সন্তানদেন অন্তর্ভুক্ত করে নেন। বরং নিজ সন্তানদের চেয়ে বেশি স্নেহ করতেন, চল্লিশ বছরের বেশি সময় পর্যন্ত প্রিয় ভ্রাতুষ্পুত্রকে সহায়তা দেন। আবু তালেব ভ্রাতুষ্পুত্রের স্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রেখেই মানুষের সাথে শক্রতা মিত্রতার বন্ধনও স্থাপন করতেন।