নবুয়তের দশম বর্ষের শুরুর দিকে ৬১৯ ঈসায়ী সালের মে মাসের শেষ দিকে অথবা জুন মাসের প্রথম দিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাওয়া-আসার পথ একশত বিশ মাইল দূরত্ব পায়ে হেঁটে অতিক্রম করেছিলেন। আল্লাহর রাসূলের সাথে তার মুক্ত করা ক্রীতদাস যায়েদ ইবনে হারেসা (রা) ছিলেন। তায়েফ যাওয়ার পথে পথে তিনি ইসলামের দাওয়াত দিতেন। কিন্তু কেউ তাঁর দাওয়াত গ্রহণ করলো না। তায়েফে পৌছার পর রসুলুল্লাহ (সা) ছাকিফ গোত্রের তিনজন সর্দারের কাছে যান। এরা পরস্পর ভাই ভাই। এদের নাম ছিল আবদে ইয়ালিল, মাসউদ এবং হাবিব। এদের পিতার নাম ছিল আমর ইবনে ওমায়ের ছাকাফি। রসুলুল্লাহ (সা) তাদের কাছে পৌঁছে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং ইসলামের সাহায্য করার আহবান জানান। জবাবে একজন টিপ্পনির সুরে বললো, কাবার পর্দা সে ফেঁড়ে দেখাক যদি আল্লাহ তাকে রাসুল করে থাকেন। অন্য একজন বললো, আল্লাহ তাআলা কি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে পেলেন না ? তৃতীয়জন বললো, আমি তোমার সাথে কোন কথাই বলতে চাই না। কেননা তুমি যদি নবী হয়ে থাকো, তাহলে তোমার কথা রদ করা আমার জন্য বিপজ্জনক হবে। আর তুমি যদি আল্লাহর নামে মিথ্যা রটাও, তবেতো তোমার সাথে আমার কথা বলাই উচিত নয়। এসব শুনে রসুলুল্লাহ (সা) উঠে দাড়ালেন এবং বললেন, তোমরা যা করেছো করেছো, তবে বিষয়টা গোপন রেখ।
রসুলুল্লাহ (সা) তায়েফে দশদিন অবস্থান করেন। এ সময়ে তিনি তায়েফের সকল নেতৃস্থানীয় লোক অর্থ্যাৎ গোত্রীয় সর্দারদের কাছে যান এবং প্রত্যেককে দ্বীনের দাওয়াত দেন। কিন্ত সবাই এক কথা বললো যে, তুমি আমাদের শহর থেকে বেড়িয়ে যাও। শুধু এ কথা বলেই তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি বরং উছ্শৃন্খল বালকদের উস্কানি দিয়েছিলো। তিনি ফেরার সময় ওসব দুর্বৃত্ত বালক তাঁর পেছনে লেগে গেল। তারা রসুলুল্লাহ (সা)কে গালাগাল করছিলো, হাততালি দিচ্ছিলো এবং হৈচৈ করছিলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই এত বালক এবং দুর্বৃত্ত লোক জড়ো হলো যে, পথের দু’ধারে লাইন লেগে গেল। এরপর গালাগাল দিতে এবং ঢিল ছুঁড়তে লাগলো, এতে তাঁর দু’পা রক্তাক্ত হয়ে তাঁর জুতা রক্তে ভরে গেল। এদিকে হযরত যায়েদ ইবনে হারেস(রা) ঢাল হিসেবে নবী (সা) আগলে রাখছিলেন। ফলে নিক্ষিপ্ত ঢিল তাঁর গায়ে পরছিলো। তাঁর মাথায় কয়েক জায়গা কেটে গেল। হৈচৈ করতে করতে দুর্বৃত্তরা আল্লাহর রসুলের পিছু নিয়েছিল। এক সময় তিনি মক্কার ওতবা, শায়বা ও রবিয়াদের একটি বাগানে আশ্রয় নিলেন। এ বাগান ছিল তায়েফ থেকে তিন মাইল দুরে। রসুলুল্লাহ (সা) এ বাগানে আশ্রয় নেয়ার পর দুর্বৃত্তরা ফিরে গেল।
রসুলুল্লাহ (সা) একটি দেয়ালে হেলান দিয়ে আঙ্গুর গাছের ছায়ায় বসে পরলেন। কিছুটা শান্ত হওয়ার পর এ দোআ করলেন যা “দোআয়ে মোসতাদয়েফিন” নামে বিখ্যাত। এ দোআর প্রতিটা শব্দ দ্বারা বোঝা যায় যে, তায়েফবাসীদের খারাপ ব্যবহার এবং একজন লোকেরও ঈমান না আনার কারণে রসুলুল্লাহ (সা) কতটা মনোকষ্ট পেয়েছিলেন। তাঁর দুঃখ ও মনোবেদনা ছিল কত গভীর। এই দোআয় রসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, হে আল্লাহ রহমানুর রহিম, আমি তোমার কাছে আমার দুর্বলতা, অসহায়তা এবং মানুষের কাছে আমার মুল্যহীনতা সম্পর্কে অভিযোগ করছি। দয়ালু দাতা, তুমি দুর্বলদের প্রভু, তুমি আমার ও প্রভু, তুমি আমাকে কার কাছে ন্যস্ত করছো ? আমাকে কি এমন অচেনা কারো হাতে ন্যস্ত করছো ? যে আমার সাথে রুক্ষ ব্যবহার করবে। নাকি কোন শত্রুর হাতে ন্যস্ত করছো যাকে তুমি আমার বিষয়ের মালিক করে দিয়েছো ? যদি তুমি আমার উপর অসন্তুষ্ট না হও তবে আমার কোন দুঃখ নেই, আফসোস ও নেই। তোমার ক্ষমাশীলতা আমার জন্য প্রশস্ত ও প্রসারিত করে দাও। আমি তোমার সত্বর সে আলোর ছায়া চাই, যা দ্বারা অন্ধকার দুর হয়ে আলোয় চারিদিক ভরে যায়। দুনিয়া ও ।আখেরাতের সকল বিষয় তোমার হাতে ন্যস্ত। তুমি আমার উপর অভিশাপ নাযিল করবে বা ধমকাবে, যে অবস্থা তোমার সন্তুষ্টি কামনা করি। সকল ক্ষমতা ও শক্তি শুধু তোমারই। তোমার শক্তি ছাড়া কারো কোন শক্তি নেই।
রবিয়ার পুত্ররা পুত্ররা আল্লাহর রসুল (সাঃ) এর অবস্থা দেখে তাঁর উপর দয়াপরবশ হলো। নিকটাত্মীয়তার কথা ভেবে তাদের মন নরম হয়ে গেল। নিজেদের খ্রীষ্টান ক্রীতদাস আদাসের হাতে এক থোকা আঙ্গুর দিয়ে বললো, লোকটিকে দিয়ে এসো। ক্রীতদাস আদাস আঙ্গুরের থোকা রসুলুল্লাহ (সাঃ) কে দেয়ার পর তিনি বিসমিল্লাহ বলে খেতে শুরু করলেন।
আদাস বললো, খাওয়ার সময় এ ধরণের কথাতো এখানের লোকজনেরা বলে না। রসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তুমি কোথাকার অধিবাসী ? তোমার ধর্ম কি ? সে বললো আমার বাড়ি নিনোভায়, আমার ধর্ম ঈসায়ী। রসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তুমি পুণ্যশীল বান্দা হযরত ইউসুফ এর এলাকার অধিবাসি। আদাস বললো, আপনি ইউসুফকে কিভাবে চিনলেন ? রসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তিনি ছিলেন আমার ভাই। তিনি ছিলেন নবী, আমিও নবী। এ কথা শুনে আদাস রসুলুল্লাহ (সাঃ)’র উপর ঝুকে পরলো এবং তাঁর মাথা ও হাত পায়ে চুম্বন করলো।
এ অবস্থা দেখে রবিয়ার দুই পুত্র নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলো, এই লোক এবার আমাদের ক্রীতাদসের মাথা বিগড়ে দিয়েছে । মনিবদের কাছে ফিরে গেলে তারা আদাসকে জিজ্ঞেস করলো, কিরে, কি ব্যাপার ? আদাস বললো, আমার বিবেচনায় পৃথীবিতে এই লোকের চেয়ে ভাল কোন লোক নেই। তিনি আমাকে এমন একটি কথা বলেছেন, যে কথা নভী ছাড়া অন্য কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়। রবিয়ার পুত্ররা বললো, দেখ আদাস, এই লোক যেন তোমাকে তোমার ধর্ম বিশ্বাস থেকে সরাতে না পারে। তোমার ধর্ম এ লোকের ধর্মের চেয়ে ভাল।
কিছুক্ষন অবস্থানের পর রসুলুল্লাহ (সাঃ) বাগান থেকে বেরিয়ে মক্কার পথে রওয়ানা হলেন। মানসিকভাবে তিনি ছিলেন বির্পযস্ত। কারণে মানায়েল নামক জায়গায় পৌঁছার পর আল্লাহর নির্দেশে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এলেন, তাঁর সাথে পাহাড়ের ফেরেশতাও ছিলেন। তারা আল্লাহর রসুলের কাছে অনুমতি নিতে এসেছিলেন যে, যদি তিনি বলেন, তাহলে এর অধিবাসীদের দু’টি পাহাড়ের মধ্যে পিষে দিবেন।
এ ঘটনার বিবরণ বোখারী শরীফে হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসুলকে একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ওহুদের যুদ্ধের থেকে মারাত্মক কোনদিন আপনার জীবনে এসেছিলো কি ? রসুলুল্লাহ (সাঃ)’বললেন, তোমার কওম থেকে আমি যে বিপদের সম্মুখিন হয়েছি, তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দিন ছিল তায়েফের দিন। আমি আবদে ইয়ালিল ইবনে আবদে কুলাল সন্তানদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলাম। কিন্ত তারা আমার দাওয়াত গ্রহণ করেনি। আমি দুঃখ-কষ্ট ও মানসিক বির্পযস্ত অবস্থায় “কারোন ছাআলাবে” পৌঁছে স্বস্তির নিঃশ্বাষ ফেললাম। সেখানে মাথা তুলে দেখি মাথার ওপরে এক টুকরা মেঘ। ভালোভাবে তাকিয়ে দেখি সেখানে হযরত জিব্রাঈল (আঃ)। তিনি আমাকে বললেন, আপনার কওম আপনাকে যা যা বলেছে, আল্লাহ তাআলা সবই শুনেছেন। আপনার কাছে পাহাড়ের ফেরেশতাদের পাঠানো হয়েছে। এরপর পাহাড়ের ফেরেশতারা আমাকে আওয়াজ দিলেন, সালাম জানালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসুল, হ্যাঁ এ কথা সত্যই। আপনি যদি চান তাহলে আমরা ওদেরকে দুই পাহাড়ের মাঝে পিষে দিব। নবী করিম (সাঃ) বললেন, না, আমি আশাকরি আল্লাহ তাআলা ওদের বংশধরদের মধ্যে এমন মানুষ সৃষ্টি করবেন, যারা শুধু আল্লাহর এবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরিক করবে না।
রসুলুল্লাহ (সাঃ)’র এই জবাবে তাঁর দূরদর্শিতা বিচক্ষনতা, অনুপম ব্যক্তিত্য ও উত্তম মানবিক চেতনার প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। মোট কথা, আসমানের উপর থেকে আসা গায়েবী সাহায্যে তাঁর মন শান্ত হয়ে গেল। রসুলুল্লাহ (সাঃ)’মক্কার পথে পা বাড়ালেন। ওয়াদিয়া নাখালা নামক জায়গায় এসে তিনি থামলেন। এখানে তাঁর অবস্থানের মত জায়গা ছিল দুইটি। এক জায়গার নাম “ আসসাইলুল কাবির” অন্য জায়গা হলো জায়মা। উভয় জায়গায় পানি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সজীবতা বিদ্যমান ছিল। এ দু;টি জায়গার মধ্যে তিনি কোথায় অবস্থান করেছিলেন, সে সম্পর্ক সঠিক তথ্য জানা যায়নি।
নাখালায় রসুলুল্লাহ (সাঃ)’ কয়েকদিন কাটান। সেখানে আল্লাহ রব্বুল আলামিন, জীনদের দুইটি দল তাঁর কাছে প্রেরণ করেন। পবিত্র কোরআনের দুই জায়গায় “সূরা আহক্বাফ ও সূরা জীনে” এদের কথা উল্লেখ রয়েছে।
সূরা আহকাফে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “স্মরন করো, আমি তোমার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম একদল জীনকে, যারা কোরআন পাঠ শুনছিলো। যখন ওরা তার কাছে উপস্থিত হলো, ওরা একে অপরকে বলতে লাগলো, চুপ করে শ্রবন করো। যখন কোরআন পাঠ সমাপ্ত হলো, তখন ওরা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেল এক একজন সতর্ককারীরুপে। এমন এক কিতাবের পাঠ শ্রবন করেছি যা, অবতীর্ণ হয়েছে মুসা(আ) এর উপর। এটি পুর্ববর্তী কিতাবকে সমর্থন করে এবং সত্য ও সরল পথের দিকে পরিচালিত করে। হে আমাদের সম্প্রদায়, আমাদের দিকে আহবানকারীর প্রতি সাড়া দাও এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো। আল্লাহ তাআলা তোমাদের পাপ মাফ করে দিবেন এবং মর্মন্তুদ শাস্তি থেকে তোমাদের রক্ষা করবেন।” {২৯-৩১,৪৬}
সূরা জীনে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ বল আমার প্রতি ওহী প্রেরিত হয়েছে যে, জীনদের একটি দল মনযোগ সহকারে শ্রবণ করেছে এবং বলেছে, আমরাতো এক বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি, যা সঠিক পথ নির্দেশ করে, ফলে আমরা এতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের কোন শরীক স্থাপন করবো না।“ সূরা জীন এর পনেরটি আয়াত পর্যন্ত এর বর্ণনা রয়েছে।
উল্লেখিত আয়াত সমূহের বর্ণনা ভঙ্গি থেকে বুঝা যায় যে, নবী করিম (সাঃ) জিনদের আসার কথা প্রথম দিকে জানতেন না। কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে তাঁকে জানানোর পর আল্লাহর রসুল (সাঃ) এ সম্পর্কে অবহিত হন। কোরআনের আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, এটা ছিল জীনদের প্রথম আগমণ। বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায় যে, পরবর্তী সময়ে তাদের যাতায়াত চলতে থাকে।
জীনদের আগমণ এবং ইসলাম গ্রহণ প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর পক্ষ থেকে ছিল দ্বিতীয় সাহায্য। আল্লাহর অদৃশ্য ভান্ডার থেকে তিনি এ সাহায্য লাভ করেন। এ ঘটনার বর্ণনা সম্পর্কিত অন্যান্য আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় রাসুলকে দ্বীনি দাওয়াতের সাফল্যের ব্যাপারে সুসংবাদ দিয়েছেন এবং এ কথা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, পৃথিবীর কোন শক্তিই দ্বীন ইসলামের দাওয়াতের সাফল্য ও অগ্রগতির পথে অন্তরায় হয়ে টিকতে পারবে না। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, “কেউ যদি আল্লাহ তাআলার দিকে আহবানকারীর ডাকে সাড়া না দেয়, তবে সে পৃথিবীতে আল্লাহর অভিপ্রায় ব্যর্থ করিতে পারিবে না এবং আল্লাহ ছাড়া তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। ওরাই সু-স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে।” {৩২,৪৬}
আল্লাহ তাআলা কাফেরদের উক্তির কথা বলেনঃ “ আমরা বুঝতে পেরেছি যে, আমরা আল্লাহকে জমিনে অসহায় করতে পারবো না এবং আমরা পালিয়ে গিয়েও তাকে অসহায় করতে পারব না।” {১২,৭২}
এই সাহায্য ও সু-সংবাদের সামনে তায়েফের খারাপ ব্যবহারজনিত দুঃখ-কষ্ট, মনের কালো মেঘ দুর হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহর রসুল (সা) দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হলেন যে, মক্কায় তাঁকে ফিরে যেতে হবে এবং নতুন উৎমাহ উদ্দীপনার সাথে দ্বীনের দাওয়াত দিতে হবে। এ সময় হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা (রা) বলেন, হে আল্লাহর রসুল (সাঃ) আপনি কি করে মক্কায় যাবেন ? মক্কার অধিবাসীরাতো আপনাকে মক্কা হতে বের করে দিয়েছে। তিনি বললেন, হে যায়েদ, তুমি যে অবস্থা দেখেছো, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন উপায় আল্লাহ রহমানুর রহিম বের করে দিবেন। আল্লাহ সুবহানু তাআলা তাঁর দ্বীনকে সাহায্য এবং তাঁর নবীকে জয়যুক্তর করবেন।
রসুলুল্লাহ (সা) নাখলা থেকে রওনা হয়ে মক্কার অদুরে হেরা গুহায় অবস্থান করলেন। সেখান থেকে খাজায়া গোত্রের একজন লোকের মাধ্যমে আখনাস ইবনে শোরাইককে এ পয়গাম পাঠালেন যে, আখনাস যেন তাঁকে আশ্রয় দেয়। আখনাস এ কথা বলে অক্ষমতা প্রকাশ করলো যে, আমিতো মিত্র পক্ষ, মিত্র পক্ষতো কাউকে আশ্রয় দেয়ার মত দায়িত্ব নিতে পারে না। রসুলুল্লাহ (সা) এরপর সোহায়েল ইনে আমরের কাছেও একই পয়গাম পাঠালেন। কিন্ত সেই লোকও এই বলে অক্ষমতা প্রকাশ করলো যে, বনু আমরের দেয়া আশ্রয় বনু কা’ব এর উপর প্রযোজ্য নয়। এরপর রসুলুল্লাহ (সা) মোতআ’ম ইবনে আদির কাছে পয়গাম পাঠালেন। মোতআ’ম বললেন, হ্যাঁ আমি রাজি আছি। এরপর তিনি অস্ত্র সজ্জিত হয়ে নিজের সন্তান এবং গোত্রের লোকদের ডেকে একত্রিত করলেন। সবাই একত্রিত হওয়ার পর বললেন, তোমরা অস্ত্র সজ্জিত হয়ে কা’বা ঘরের সামনে যাও। কারণ আমি রসুলুল্লাহ (সা)কে আশ্রয় দিয়েছি। এরপর মোতআ’ম রসুলুল্লাহ (সা) কে খবর পাঠালেন যে, আপনি মক্কার ভিতরে আসুন। রসুলুল্লাহ (সা) খবর পাওয়ার পর যায়েদকে সঙ্গে নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করলেন। মোতআ’ম ইবনে আদি তাঁর সওয়ারীর উপর দাড়িয়ে ঘোষনা করলো যে, কোরাইশের লোকেরা শুনো, আমি মোহাম্মদ (সা) কে আশ্রয় দিয়েছি। কেউ যেন এরপর তাঁকে বিরক্ত না করে। রসুলুল্লাহ (সা) হাজরে আসওয়াদ চুম্বন এবং দু’রাকাত নামাজ আদায় করলেন। নামাজ আদায়ের পর তিনি নিজের ঘরে ফিরে গেলেন। এসময় মোতআ’ম ইবনে আদি এবং তাঁর সন্তানেরা অস্ত্র সজ্জিত হয়ে রসুলুল্লাহ (সা) কে ঘীরে রাখলেন। আল্লাহর রসুল (সা) ঘরে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত তারা তাঁর সঙ্গে ছিলো।
বলা হয়ে থাকে যে, এ সময় আবু জেহেল মোতআ’মকে জিজ্ঞাসা করেছিলো, তুমি শুধু তাঁকে আশ্রয় দিয়েছো, না তাঁর অনুসারী অর্থ্যাৎ মুসলমানও হয়ে গিয়েছো ? মোতআ’ম বললেন, আমি শুধু আশ্রয় দিয়েছি। এতে আবু জেহেল বললো, তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছো, আমরাও তাকে দিলাম।
রসুলুল্লাহ (সা) মোতআ’ম ইবনে আদীর এ উপকারের কথা কখনো ভুলেননি। বদরের যুদ্ধের পর মক্কার কাফেররা বহু সংখ্যক বন্দি হয়ে আসার পর কয়েকজন বন্দী মুক্তির সুপারিশ নিয়ে মোতআ’মের পুত্র হযরত হোবায়ের (রা) রসুলুল্লাহ (সা) এর কাছে হাজির হলে তিনি বলেছিলেন, মোতআ’ম ইবনে আদী যদি আজ বেঁচে থাকতো এবং আমার কাছে এসব দুর্গন্ধময় লোকদের ব্যাপারে সুপারিশ করতো, তবে তার খাতিরে আমি এদের সবাইকে মুক্ত করে দিতাম।