প্রিয় নবীর ওপর ওহী নাযিল হওয়ার পর অর্থাৎ তিনি নবুয়ত পাওয়ার পর তাঁর যে জীবন শুরু হয়, সে আলোচনায় যাওয়ার আগে ওহীর প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোকপাত করা দরকার। এতে রেসালাত এবং নবুয়ত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। আল্লামা ইবনে কাইয়েম নিম্নোক্ত কয়েক প্রকারে ওহীর কথা উল্লেখ করেছেন:
(এক) সত্য স্বপ্ন-স্বপ্নের মাধ্যমে রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর ওহী নাযিল।
(দুই) ফেরেশতা তাঁকে দেখা না দিয়ে তাঁর মনে কথা বসিয়ে দিত। যেমন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, রহুল কুদুস আমার মনে একথা বসিয়ে দিলেন যে, কোন মানুষ তার জন্যে নিধারিত রেযেক পাওয়ার আগে মৃত্যুবরণ করে না। কাজেই আল্লাহকে ভয় করো এবং ভালো জিনিস তালাশ করো। রেযেক পেতে বিলম্ব হলে আল্লাহর নাফরমানী মাধ্যমে রেযেক তালাশ করে না। কেননা আল্লাহর কাছে যা কিছু রয়েছে, সেটা তাঁর আনুগত্য ছাড়া পাওয়া যায় না।
(তিন) ফেরেশতা মানুষের আকৃতি ধরে তাকে সম্বোধন করতেন। তিনি যা কিছু বলতেন, প্রিয় নবী রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা মূখস্ত করে নিতেন। এ সময় কখনো কখনো সাহাবারাও ফেরেশতাদের দেখতে পেতেন।
(চার) রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ওহী ঘন্টাধ্বনির মতো টন টন শব্দে আসতো। এটি ছিলো ওহী সবচেয়ে কঠোর অবস্থা। এ অবস্থায় ফেরেশতায় তাঁর সাথে দেখা করতেন প্রচন্ড শীতের মওসুম হলেও প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘেমে যেতেন। তাঁর কপাল থেকে ঘাম ঝরে পড়তো। তিনি উটের ওপর সওয়ার থাকলে মাটিতে বসে পড়তেন। একবার হযরত যায়েদ ইবনে যায়েদ ইবনে সাবেতের উরুর ওপর তাঁর উরু থাকা অবস্থায় ওহী এলো, হযরত যায়েত এতো ভারি বোধ করলেন যে, তাঁর উরু থেতলে যাওয়ার অবস্থা হলো।
(পাঁচ) তিনি ফেরেশতাকে তাঁর প্রকৃত চেহারায় দেখাতেন। সেই অবস্থায়ই আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর ওপর ওহী নাযিল হতো। দু’বার এরূপ হয়েছিলো। পাক কোরআনে সূরা নাজম-এ আল্লাহ তায়ালা সে কথা উল্লেখ করেছেন।
(ছয়) মেরাজের রাতে নামায ফরজ হওয়া এবং অন্যান্য বিষয়ক ওহী আকাশে নাযিল হয়েছিলো। প্রিয় নবী তখন আকাশে ছিলেন।
(সাত) ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়া আল্লাহর সরাসরি কথা বলা। হযরত মূসা (আ) এর সাথে আল্লাহর তায়ালা যেমন কথা বলেছিলেন। হযরত মূসা (আ) এর সাথে আল্লাহর কথা বলার প্রমাণ কোরআনে রয়েছে। প্রিয় নবীর সাথে আল্লাহর কথা বলার প্রমাণ মে’রাজের হাদীসে রয়েছে।
(আট) আর এক প্রকার কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন। এটি হচ্ছে আল্লাহর মুখোমুখি পর্দা বিহীন অবস্থায় কথা বলা। কিন্তু এ ব্যাপারে মতপার্থক্যের অবকাশ রয়েছে।