১৮. গণ-সমাজের অসম্পূর্ণ বিলোপ : ভারতবর্ষের মানুষ
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই জাতীয় নীতিগর্হিত নানান উপায়ে গণ বা সংঘের একতা ভাঙবার পর সে-সমাজের মানুষগুলিকে নিয়ে ঠিক কী ব্যবস্থা করা হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে কৌটিল্য যা বলছেন তা শুধুই চিত্তাকর্ষক নয়, ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য বোঝবার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।
প্রথমত, কৌটিল্য বলছেন, রাজা এই মানুষগুলিকে নিজের সৈন্যদলে ভর্তি করবার চেষ্টা করবেন। ‘সর্বপ্রথম কলহ-বিষয়েই রাজা হীনপক্ষকে কোষ ও দণ্ডদ্বারা স্বপক্ষে আনিয়া তাহাকে নিজ-প্রতিপক্ষ বা শত্রুর বধে নিযুক্ত করিবেন’(১৮০)। আমরা ব্রিটিশ আমলে যে-রকম দেখেছি—কোষ ও দণ্ড দ্বারাই ট্রাইব্যাল সমাজ থেকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের জন্যে কামানের খোরাক সংগ্রহ করবার ব্যবস্থা—অনেকটা সেই রকমই নয় কি? ব্রিটিশ আমনের কথা না-হয় আলাদা। কিন্তু কৌটিল্যের বহুদিন পরেও তাঁর এই নীতিটি যে ভারতীয় রাষ্ট্রশক্তির অধিনায়কেরা বাস্তবে প্রয়োগ করতেন তা অনুমান করবার মতো একটি তথ্যের উল্লেখ করা যায়। অষ্টম ও নবম শতাব্দীর ধর্মপাল ও দেবপালের শিলালিপিতে তাঁদের সৈন্যবাহিনীর যে-বর্ণনা পাওয়া(১৮১) যায় তা থেকে স্পষ্টই অনুমান করা সম্ভব যে, নানা রকম ট্রাইব্যাল মানুষ নিয়েই এই সৈন্যদল গঠিত হয়েছিলো। কেননা, এই সৈন্যদলের বর্ণনায় যে-সব মানুষদের নাম পাওয়া যায় সেই নামগুলি প্রায়ই সরাসরি ট্রাইব্যাল নাম। তার মানে, রাজার সৈন্যবাহিনীতে নিযুক্ত হবার পরও ওই ট্রাইব্যাল মানুষেরা নিজেদের ট্রাইব্যাল নামগুলিকে ছেড়ে দেননি।
দ্বিতীয়য়, কৌটিল্য(১৮২) বলছেন, গণ-সমাজ থেকে উৎপাটিত ওই মানুষগুলিকে পাঁচ-ঘর বা দশ-ঘর ওই রকম ছোটো-ছোটো দলে বিভক্ত করে আলাদা-আলাদা ছোটো-ছোটো গ্রামে বসিয়ে কৃষিকার্যে নিযুক্ত করতে হবে : দশকুলিং পঞ্চকুলিং বা কৃষ্যাং নিবেশয়েৎ–‘ভূমিতে কৃষিকর্ম করিতে যোগ্য ইহাদের কুলপঞ্চক বা কুলদশক লইয়া (ভিন্নভিন্ন) গ্রামনিবেশ করাইবেন’। মনে রাখতে হবে, কৌটিল্য বিশেষ করে উপদেশ দিচ্ছেন, এই গ্রামগুলি যেন স্বতন্ত্র ও পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কহীন হয়। কেননা, গণসমাজের প্রধান শক্তি—এবং, অতএব, রাষ্ট্রশক্তির পক্ষে গণসমাজ সম্বন্ধে আতঙ্কের প্রধান কারণ হলো—গণবান্ধব বা মানুষগুলির মধ্যে একতা। ইংরেজীতে, group-bond। তাই কৌটিল্যের কাছে গণসমাজকে ভাঙবার প্রধানতম কৌশল হলো এর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা। অতএব, গণসমাজকে ভাঙবার পর যে-সতর্কতা অবলম্বন করবার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো ওই মানুষগুলি যাতে আবার না এক হতে পারে। ওরা আবার এক হতে পারলেই রাজার বিরুদ্ধে আয়ুধ ধারণ করবে। তাই, এরা আবার এক হবার উপক্রম করছে দেখলে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। কৌটিল্য(১৮৩) বলছেন, ‘ইহাদিগকে একত্র হইয়া থাকিতে দিলে, ইহারা (বিজিগীষু রাজার বিরুদ্ধে) শস্ত্রগ্রহণে সমর্থ হইয়া উঠিতে পারে। এবং ইহারা সমবেত হইয়া অবস্থান করিলে, (তিনি) ইহাদের উপর দণ্ড বিধান করিবেন’।
কৌটিল্যের এই দ্বিতীয় নির্দেশটির মূল্যই সবচেয়ে বেশি। কেননা, ভারতীয় সমাজ-ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য বোঝবার ব্যাপারে এখন থেকেই একটি মূল্যবান সূত্র পাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
কৌটিল্য ঠিক কে ছিলেন,–এমনকি তিনি একান্তই কোনো ঐতিহাসিক ব্যক্তি ছিলেন কিনা—এই জাতীয় সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান আমাদের পণ্ডিতমহলে হয়তো আজো হয়নি। তবে, সাধারণত ধরে নেওয়া হয় তাঁর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মন্ত্রণার উপরই মৌর্যসাম্রাজ্যের ভিত্তি ছিলো। যদি তাই হয় তাহলে তাঁকে যীশুখ্রীষ্টের অন্তত সওয়া তিন শ’ বছর আগেকার মানুষ মনে করতে হবে। কিন্তু এ-কথাতেও কোনো সন্দেহ নেই যে, যীশুখ্রীষ্টের বহু শতাব্দী পর পর্যন্ত ভারতবর্ষে রাষ্ট্রশক্তির অধিনায়কেরা এই অর্থশাস্ত্রকেই নিজেদের মূলমন্ত্র করবার চেষ্টা করেছেন। তার মানে, কৌটিল্যের ওই নীতিটি—ট্রাইব্যাল সমাজ ভেঙে সে-সমাজের মানুষগুলিকে নিয়ে ছোটো ছোটো স্বয়ংসম্পূর্ণ কৃষিমূলক গ্রাম নিবেশ করতে হবে—আমাদের দেশে বহুদিন পর্যন্ত অনুসরণ করা হয়েছে।
আমাদের এই অনুমানের পক্ষে এখানে একটি তথ্যের উল্লেখ করা যায়। তথ্যটি হলো ভারতবর্ষের মানুষদের প্রকৃতি-বিশ্লেষণ।
অবশ্যই, নির্ভরযোগ্য সেন্সাস রিপোর্ট বলতে খুব পুরোনোকালের বিশেষ কোনো দলিল পাওয়া যায় না। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষাশেষিই সর্বপ্রথম দেশের মানুষগুলিকে ভালো করে গুনে দেখবার ও তাদের প্রকৃতি-বিশ্লেষণ করবার চেষ্টা করা হয়েছিলো(১৮৪)। এতো সাম্প্রতিক কালের হলেও এই রিপোর্টের থেকে কয়েকটি বড়ো চিত্তাকর্ষক তথ্য পাওয়া যায়। প্রথমত, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষাশেষি পর্যন্ত (এবং আধুনিকতম রিপোর্ট অনুসারে নিশ্চয়ই আজও, অর্থাৎ, বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত(১৮৫)) আমাদের দেশ থেকে ট্রাইব্যাল-সমাজ বিলুপ্ত হয়নি—১৮৭১-৭২ সালের রিপোর্ট অনুসারে ১৮৬০ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১৮০ লক্ষ মানুষ তখনো ট্রাইব্যাল সমাজেই জীবন-যাপন করছে(১৮৬)। ব্রিটিশ কলোনিয়াল অফিস থেকে এদের নাম দেওয়া হয়েছে জংলী লোক বা এ্যবরিজিন্। এবং জনৈক সুদক্ষ ইংরেজ আমলা(১৮৭) এদের প্রসঙ্গে বলছেন :
Thurst back by the Aryans from the plains, they have lain hidden away in the recesses of the mountains, like the remains of extinct animals which paleontologists find in the hill-caves. India this forms a great museum of races, in which we can study man from his lowest to his highest stages of culture.
অর্থাৎ, আর্য-আক্রমণের দরুন সমতল দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে এরা পর্বতে গিয়ে আত্মগোপন করে রয়েছে—বিলুপ্ত জীবজন্তুবিষয়ক বৈজ্ঞানিকরা পাহাড়ের গুহায় যেরকম বিপুপ্ত জানোয়ারের অস্থি আবিষ্কার করেন এদের অবস্থাও খানিকটা তার মতন। তাই ভারতবর্ষের অবস্থানটা যেন জাতিতত্ত্বের এক বিরাট যাদুঘরের মতো—এখানে আমরা মানুষকে তার সংস্কৃতির সবচেয়ে নিচুস্তর থেকে শুরু করে সবচেয়ে উঁচুস্তর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে পারি।
লেখক অন্যত্র এই ট্রাইব্যাল-সমাজের মানুষগুলির বর্ণনায় বলেছেন, the fragments of a pre-historic world,–প্রাগৈতিহাসিক পৃথিবীর টুকরোর মতো(১৮৮)। ইংরেজ-আমলের ভারতবর্ষের চেহারাটাই যদি এই হয় তাহলে হিন্দু-আমলের ভারতবর্ষের ছবিটা নিশ্চয়ই অনুমান করা কঠিন নয়। কিন্তু ১৮৭১-৭২ সালের ওই রিপোর্টটির আরো বিস্ময়কর তথ্য হলো, বাকি ১৬৪০ লক্ষ মানুষের মধ্যে প্রায় ১৫২০ লক্ষ মানুষ যে কোথা থেকে এলো তার সঠিক হদিস দিতে পারা যাচ্ছে না(১৮৯)। কেননা, এই রিপোর্টে দেশের মাত্র ১৬০ লক্ষ মানুষকে উঁচু-জাতের বলে—অর্থাৎ, বর্ণনাদাতাদের ভাষায়, বিশুদ্ধ আর্যসন্তান হিসেবে—সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে, এই ১৫২০ লক্ষ মানুষদের ব্যাখ্যা হিসেবে শুধু এইটুকুই বলা হচ্ছে যে এরা আদিতে ছিলো স্থানীয় অসভ্য ও অনার্য মানুষ—আর্যরা এ-দেশে এসে সভ্যতা বিস্তার করবার পর এরা ক্রমেক্রমে আর্যসভ্যতার অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছে এবং সভ্য হয়ে উঠেছে। (১৮৭১-৭২-এর সেন্সাস অনুসারে অবশ্য পরে এই ১৫২০ লক্ষের মধ্যে ৪১০ লক্ষ মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে।
অবশ্যই, ইংরেজ আমলারা প্রাচীন-ভারত আবিষ্কার করবার যে-চেষ্টা করেছেন তার মূল প্রেরণা হলো পুরোনোকালের ভারতবর্ষেও ইংরেজ-শাসনের অনুরূপ কিছু খুঁজে বের করা—ভারতবাসীরা যাতে কল্পনা করতে শেখে যে, এদেশের জমিতে বরাবরই এই রকম ঘটনা ঘটে এসেছে—অর্থাৎ, এটাই হলো স্বাভাবিক। অতএব তাঁরা প্রাচীনকালেও একরকম ‘হোয়াইট্ ম্যানস্ বার্ডেন’ আবিষ্কার করতে অতো উৎসাহী—বিদেশ থেকে এসে আর্যরা এদেশের অসভ্য মানুষদের সভ্য করেছিলো বা নিজেদের উন্নততর সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত করেছিলো। তাই সেকালের ইতিহাস বর্ণনায় ‘আর্য-সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত-করা’ বলে শব্দসমষ্টি অমন জোর দিয়ে চালু করবার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এই সভ্য-করণ বলে ঘটনাটি বোঝবার চেষ্টা করা যেতে পারে। ধূর্ততর আমলাদের ভাষায় এ-হলো স্থানীয় জংলি মানুষদের সামনে তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনার নতুন বিকাশের পথ খুলে দেওয়া; কিন্তু এই পদ্ধতিরই আরো বাস্তব বর্ণনা হলো : রিক্রুট্মেণ্ট। চাবাগান আর কয়লাখনির জন্যে কুলি-সংগ্রহ করা, কিংবা সাম্রাজ্যবাদি যুদ্ধের জন্যে কামানের খোরাক সংগ্রহ করা। এবং ইংরেজ-আমলেও এই রিক্রুট্মেণ্ট-ব্যবস্থা সব সময়ই সরাসরি ইংরেজ প্রভুদের জন্যই করা হয়নি; অনেক সময় তা ইংরেজশাসনের খুঁটি স্থানীয় জমিদার-শ্রেণীর খাতিরেও করবার ব্যবস্থা হয়েছিলো। হাণ্টার সাহেবের একটি বর্ণনা(১৯০) দেখা যাক :
Until nearly the end of the last century, the Santals were the pests of the neighbouring plains……But in 1789, the British Government granted a proprietary right in the soil to the land-holders of Bengal under the arrangements which four years later became the Permanent Settlement. Forthwith, every landholder tried to increase the cultivated area on his estate, now become his own property. The Santals and other wild tribes were tempted to issue from their fastness by high wages and rent-free farms. “Every proprietor”, said a London newspaper, the Morning Chronicle, in 1792, “is collecting husbandmen from the hills to improve his lowlands.” The English officers found they had a new race to deal with, and gradually own them to peaceful habits by grants of land and ‘exemption from all taxes.’
অর্থাৎ, গত শতাব্দীর প্রায় শেষাশেষি পর্যন্ত সাঁওতালেরা ছিলো প্রতিবেশীদের কাছে দুষমনের মতো।…কিন্তু ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিস সরকার জমিদারদের উপর জমির মালিকানা অর্পন করলো—এই ব্যবস্থাই চার বছর পরে পার্মানেণ্ট সেট্ল্মেণ্ট-এ পরিণত হয়। সঙ্গে সঙ্গে, প্রত্যেক জমিদার তার জমিদারিতে আবাদী জমির পরিমাণ বাড়াবার চেষ্টা করতে লাগলো—এখন থেকে ভূসম্পত্তি তাদের নিজেদের হয়েছে। সাঁওতাল এবং অন্যান্য বুনো মানুষেরা চড়া মজুরী ও খাজনাহীন ক্ষেতের টানে নির্জন বনবাস থেকে বেরিয়ে আসতে প্রলুব্ধ হতে লাগলো। মর্নিং ক্রনিক্ল্ বলে লণ্ডনের খবরের কাগজ ১৭৯২-এ লিখছে : ‘প্রত্যেক জমিদার নিজেদের খারাপ জমিকে উন্নত করবার জন্যে পাহাড় অঞ্চল থেকে কৃষক সংগ্রহ করছে’। ইংরেজ আমলারা দেখলেন, এবার থেকে নতুন একজাতের মানুষের দায়িত্বও তাঁদের উপরে পড়ছে; জমি দিয়ে এবং সমস্ত রকম খাজনা থেকে মুক্তি দিয়ে তাঁরা এদের বিশ্বাস অর্জন করলেন।
বিনে খাজনার জমি, চড়া হারে মজুরী, বিশ্বাস-অর্জন—ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে এখানে যে রূপকথা রচনা করা হয়েছে তার উপর কোনো মন্তব্য করবার প্রয়োজন নেই; কেননা এগুলির উপর ঐতিহাসিক ভাষ্য হিসেবে ১৮৫৫ সালের সাঁওতাল-বিদ্রোহের বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু হাণ্টার সাহেবের এই বর্ণনা, এবং বিশেষ করে মর্নিং-ক্রনিক্ল্ পত্রিকার উদ্ধৃতিটি, নজর করবার মতো। ইংরেজ আমলেও ট্রাইব্যাল সমাজের মানুষগুলির মধ্যে সভ্যতা-বিস্তারের এই হলো নমুনা। এবং এরই চলতি নাম রিক্রুট্মেণ্ট : ট্রাইব্যাল সমাজ থেকে শ্রমিক সংগ্রহ করবার পদ্ধতি। এবং কৌটিল্যের রচনা থেকে বোঝা যায়, এই জাতীয় রিক্রুট্মেণ্ট শুধুমাত্র যীশুখ্রীষ্টের ভক্তদের আমলেই নয়—যীশুখ্রীষ্ট জন্মাবার বেশ কয়েক শ’ বছর আগে থাকতেই আমাদের দেশে চালু ছিলো। কেবল, কৌটিল্যের চক্ষুলজ্জাটা ছিলো কম। যীশুখ্রীষ্টের অনুগামীদের মতো কপট রূপকথা রচনা করে তিনি নোংরা বাস্তবকে ঢাকা দেবার চেষ্টা করেননি। এবং ১৮৭১ সালের আদম-সুমারীর হিসেবে যদি দেখা যায়, ১৮৬০ লক্ষ লোকের মধ্যে ১৫২০ লক্ষ লোক এইভাবেই ‘সভ্য’ হয়েছে বা আর্যসভ্যতার আওতায় এসেছে, তাহলে অনুমান করা অসঙ্গত হবে না যে, আমাদের দেশের শাসক-সম্প্রদায় অনেক শতাব্দী ধরেই কৌটিল্যের ওই নীতিটি অনুসরণ করবার চেষ্টা করেছেন।
এই প্রসঙ্গেই বাংলা দেশের কৃষকদের সম্বন্ধে শ্রীযুক্ত রমেশচন্দ্র দত্তের(১৯১) বিশ্লেষণটিও উল্লেখযোগ্য :
… …ever since the Aryans come to Bengal, it has been the main object with them to proselytize the aborigines, and large number of the latter have now entered into the ranks of Hinduism but forming separate castes of their own… Dr. Hunter starts a very interesting question, namely what proportion of the total population of Bengal are Hinduised aborigines. To this he gives a very imperfect answer…… Out of a total population of thirty seven million of Bengal proper Mr. Beverley recons the aborigines (Santals, Garos etc.) at nearly 4,00,000 and the Hinduised aborigines at a little over 5 million. Under this last head he includes such people as the Bagdi, the Buna, the Camar, the Muchi, the Candal, the Dome and the Hari, the Kaora, the Mal, the Mathor and many other tribes. Though all these are recorded as Hindus now, any onw who has carefully observed their peculiar modes of living in our villages, would have no difficulty in setting them down as descended from the aboriginal stock. শ্রীযুক্ত রমেশচন্দ্র দত্তের নিজের হিসেব অনুসারে উঁচু জাতের খাঁটি হিন্দুদের সংখ্যা মোটের উপর প্রায় পঁচিশ লক্ষ। তাই তিনি বলছেন, Deducting them half a million of aborigines, five million of Hinduised aborigines, two and half a million of high caste Hindus and half a million of high-caste Mohammedans from the total of nearly 37 million, we have about 28 million still to account for. The question arises, then, have these 28 million descended from the aboriginal stock? অবশ্যই, শ্রীযুক্ত রমেশচন্দ্র দত্তের বক্তব্য ঠিক তাই এবং তিনি বলছেন : The Aryan conquerors of Bengal, after causing their religion to be wildly spread through the land, did not and could not exterminate the aboriginal tillers of the soil. It stands to reason to suppose that, while the brave and fierce aborigines retired to the wilds and fastness of Bengal, the weaker population accepted the religion of their conquerors and remained, as they were before, the tillers of the soil.
মোদ্দা কথায়, বাংলা দেশের কৃষকদের কথা বিচার করতে গিয়ে শ্রীযুক্ত রমেশচন্দ্র দত্ত বলছেন, ৩৭০ লক্ষ মানুষের মধ্যে পাঁচ লক্ষ ট্রাইব্যাল মানুষ এবং পঞ্চাশ লক্ষ হিন্দুধর্মভুক্ত ট্রাইব্যাল মানুষ, পঁচিশ লক্ষ জাত-হিন্দু এবং পাঁচ লক্ষ জাত-মুসলমানদের কথা বাদ দিলেও আমাদের পক্ষে আরো ২৮০ লক্ষের কিছু বেশি মানুষের হিসেব দেওয়া দরকার। এই ২৮০ লক্ষ মানুষকেও তাই স্থানীয় ট্রাইব্যাল মানুষদের বংশধরই মনে করা স্বাভাবিক। আর্যরা বাংলা দেশ আক্রমণ করবার পরে এদেশে তাঁদের ধর্ম ব্যাপকভাবে প্রচার করেছিলেন। কিন্তু দেশের সমস্ত আদিবাসী কৃষকদের তাঁরা নিঃশেষে ধ্বংস করতে পারেনও নি, করেনও নি। তাই একথা মনে করা যেতে পারে যে, এই আদিবাসীদের মধ্যে যারা অপেক্ষাকৃত সাহসী ও দুর্ধর্ষ তারা আত্মসমর্পণ না করে বাংলা দেশের বনজঙ্গলের দিকে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলো, কিন্তু অপেক্ষাকৃত দুর্বল মানুষগুলি তাদের আক্রমণকারীদের ধর্ম গ্রহণ করলো এবং আগের মতোই কৃষিকর্ম নিয়ে রইলো।
বলাই বাহুল্য, জাতিগত বা ধর্মগত তাৎপর্যের জন্যে শ্রীযুক্ত রমেশচন্দ্র দত্তের এই উক্তি উদ্ধৃত করিনি। আমাদের যুক্তির দিক থেকে যে-কথাটা প্রাসঙ্গিক তা হলো, শ্রীযুক্ত রমেশচন্দ্র দত্তের হিসেবেও বাংলা দেশের কৃষকেরা প্রধানতই ট্রাইব্যাল মানুষদের বংশধর। আর যদি তাই হয় তাহলে নিশ্চয়ই এ-কথা মনে করবার অবকাশ থাকে যে, অনেক শ’ বছর ধরে কৌটিল্যের ওই নীতি শাসক-সম্প্রদায় সত্যিই অনুসরণ করেছিলো : ট্রাইব্যাল সমাজ ভেঙে সে সমাজের মানুষগুলিকে নিয়ে ছোটোছোটো স্বয়ংসম্পূর্ণ কৃষিমূলক গ্রামনিবেশ করতে হবে।
অবশ্যই, বাংলা দেশে যা ঘটেছে পুরো ভারতবর্ষ জুড়েও যে তাই ঘটেছে এ-কথা মনে করবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু পুরো ভারতবর্ষের জনসংখ্যার যে-বিশ্লেষণ আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি তা থেকেও মোটের উপর একই ধরণের কথা অনুমান করবার সুযোগ থাকে না কি?
ভারতীয় সংস্কৃতির দিক থেকে ভারতীয় জনসংখ্যার এই বিশ্লেষণটির তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে বাধ্য। কিন্তু, দুঃখের বিষয়, সেই তাৎপর্যের প্রতি সব সময় আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় না।
শ্রীযুক্ত রমেশচন্দ্র দত্তের রচনা থেকে উদ্ধৃত ওই অংশের শেষ-পংক্তিটির দিকেই নজর রাখা যাক। তিনি বলছেন, আদিবাসীদের যে-বিরাট দলটি আর্যদের শাসনে এলো তারা আগের মতো কৃষক হয়েই রইলো। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে মানতেই হবে তাদের উৎপাদন-কৌশলে কোনো মৌলিক পরবর্তন দেখা যায়নি। অথচ, অপরপক্ষে, তাদের ওই ট্রাইব্যাল-সংগঠন নিশ্চয়ই আর আগেকার মতো রইলো না—বাংলাদেশে কৃষকদের গ্রামগুলি ট্রাইব্যাল-সমাজ নয়। কিন্তু ট্রাইব্যাল সমাজ না থাকলেও এই গ্রাম-জীবন থেকে ট্রাইব্যাল-সমাজের সমস্ত চিহ্নই নিঃশেষে বিলুপ্ত হতে পারেনি। কেননা, উৎপাদন কৌশলে কোনো মৌলিক পরিবর্তন দেখা দেয়নি। ট্রাইব্যাল সমাজ ভেঙে সে-সমাজের মানুষগুলিকে নিয়ে পুরোনো উৎপাদন-কৌশলের ভিত্তিতেই যদি ছোটো ছোটো আর নতুন গ্রাম-নিবেশ হয়ে তাহলে এই গ্রামগুলির মধ্যে থেকে ট্রাইব্যাল সমাজের সমস্ত চিহ্ন নিঃশেষে মুছে যাবার কথা নয়। সেই সঙ্গেই মনে রাখা দরকার, ট্রাইব্যাল সমাজের একটি প্রধান লক্ষণ এই গ্রামগুলির মধ্যে অনিবার্যভাবেই অনুপস্থিত। ফলে, ট্রাইব্যাল সমাজের যে-চিহ্নগুলি এই গ্রাম-সমাজে টিকে রইলো সেগুলি আর আর ওই মূল লক্ষণটি দ্বারা লালিত হতে পায়নি। অতএব, সেগুলির আমূল রূপান্তর ঘটতে বাধ্য। ট্রাইব্যাল সমাজের স্বাভাবিক পরিবেশে এই চিহ্নগুলির যে-তাৎপর্য ছিলো ট্রাইব্যাল সমাজ থেকে উৎপাদিত হয়ে চিহ্নগুলি যখন ওই খণ্ড কৃষিনিবেশের মধ্যে এসে পড়লো তখন আর সে-তাৎপর্য বেঁচে থাকবার কথা নয়।
প্রথমে দেখা যাক, ট্রাইব্যাল সমাজ ভেঙে যাবার সাধারণ ও স্বাভাবিক কারণটি কী? মার্কস ও এঙ্গেলস দেখাচ্ছেন, এর কারণ হলো মানুষের উৎপাদন-কৌশলের উন্নতি। পশুপালন বা কৃষিকাজ ভালো করে শেখবার পরই মানুষের সমাজে উদ্বৃত্তজীবী শ্রেণীর আবির্ভাব হওয়া সম্ভব—এই অবস্থায় পৌঁছবার পর তাই মানব-সমাজ শ্রমজীবী ও উদ্বৃত্তজীবী শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে যায়। ফলে, প্রাগ্-বিভক্ত ট্রাইব্যাল সমাজ ভেঙে দেখা দেয় নতুন শ্রেণীবিভক্ত সমাজ। কিন্তু এই রকম স্বাভাবিক ও সাধারণভাবে ট্রাইব্যাল সমাজ ভেঙে যাবার পরও নতুন শ্রেণীবিভক্ত সমাজ থেকে সঙ্গে সঙ্গে ট্রাইব্যাল-সমাজের সমস্ত লক্ষণ একেবারে নিঃশেষে মুছে যায় না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, রোমানদের মধ্যে ট্রাইব্যাল সমাজ ভেঙে রাষ্ট্রের আবির্ভাব হবার পরও ওই ট্রাইব্যাল-সংগঠনের নানা চিহ্ন টিকে থেকেছিলো। কিন্তু এই চিহ্নগুলির আদি-তাৎপর্য তখন বিলুপ্ত হয়েছে; কিংবা এঙ্গেল্স্(১৯২) যেমন বলছেন, চিহ্নগুলির আদিতাৎপর্য পর্যবসিত হয়েছে তার বিপরীতে :
In this manner the organs of the gentile constitution were gradually torn away from their roots in the people, in gens, phartry and tribe, and the whole gentile order was transformed into its opposite : from an organization of tribes for the free administration of their own affaires it became an organization for plundering and oppressing their own neighbors; and correspondingly, its organs were transformed from instruments of the will of the people. This could not have happened had not the greed for wealth divided the members of the gents into rich and poor; had not “property difference in a gens changed the community of interest into antagonism between members of a gens” (Marx); and had not the growth of slavery already begun to brand working for or living as slavish and more ignominious then engaging then engaging in plunder.
অর্থাৎ, এইভাবে জ্ঞাতিভিত্তিক সংগঠনের অঙ্গগুলি ক্রমেক্রমে জনসাধারণের মধ্যে—গেন্, ফ্রাত্রি ও ট্রাইবের মধ্যে,–তাদের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হলো এবং জ্ঞাতিভিত্তিক পুরো ব্যবস্থাটি পরিণত হলো নিজের বিপরীতে : স্বাধীনভাবে নিজেদের কাজ পরিচালনা করবার জন্যে ট্রাইবদের একটি সংগঠন থেকে এটা হয়ে দাঁড়ালো নিজেদের প্রতিবেশীদের উপর উৎপীড়ন ও লুঠতরাজ চালাবার একটি সংগঠন; এবং তারই অনুপাতে এই ট্রাইব্যাল সংগঠনের বিভিন্ন অঙ্গ জনসাধারণের ইচ্ছার যন্ত্র থেকে বদলে হয়ে দাঁড়ালো নিজেদের দলের মানুষগুলিকেই শাসন ও পীড়ন করবার যন্ত্র বিশেষ। যদি না ধনসম্পত্তির প্রতি লোভ গেন্-এর সম্পত্তির তারতম্য একই উদ্দেশ্যমূলক একটি সমবায়কে বদলে গেন্-এর সভ্যদের মধ্যে বিভেদ-বিরোধীতার পরিণত করতো” (মার্ক্স্), যদি না ইতিমধ্যেই যে-দাসপ্রথার জন্ম হয়েছে সেই-দাস্প্রথার দরুন খেটে খাওয়াকে দাসবৃত্তি এবং লুঠতরাজের তুলনায় ঘৃণাকর বলে সাব্যস্ত করা হতো—তাহলে এ-রকম ঘটনা ঘটতেই পারতো না।
কিন্তু পরে, স্বতন্ত্র পরিচ্ছেদে, আমরা দেখাবার চেষ্টা করবো, বৈদিক মানুষদের মধ্যে গণ-সমাজ ভেঙে যাবার পরেও সে-সমাজের যে-চিহ্নগুলি টিকে থেকেছিলো সেগুলি সম্বন্ধে এঙ্গেল্স্-এর এই মন্তব্য কতো স্পষ্টভাবে প্রযোজ্য।
কিন্তু এ-হলো উৎপাদন কৌশলে উন্নতি দেখা দেবার দরুন স্বাভাবিক ও সাধারণভাবে ট্রাইব্যাল সমাজ ভিতর থেকে ভেঙে যাবার কথা। তার বদলে, রাষ্ট্রশক্তি যদি বাইরের থেকে আক্রমণ চালিয়ে ট্রাইব্যাল সমাজকে ভেঙে দেয় এবং সে-সমাজের মানুষগুলিকে নিয়ে খণ্ড বিক্ষিপ্ত গ্রামনিবেশ করে তাহলে নিশ্চয়ই ওই গ্রামগুলির মধ্যে গণসমাজের চিহ্ন অনেক বেশি টিকে থাকবে কথা। কিন্তু ট্রাইব্যাল সমাজের প্রাণ বলতে ছিলো গণ-বন্ধন বা group-bond, মার্ক্স্-এর ভাষায় community of interest। গণবন্ধন দ্বারা লালিত বলেই ট্রাইব্যাল-সমাজের ওই চিহ্নগুলি ট্রাইব্যাল-সমাজের বুকে প্রাণবন্ত ও এমনকি উদ্দেশ্যমূলক : এগুলি মানুষকে বাঁচতে সাহায্য করেছে। ফলে, ওই গণবন্ধন ভেঙে যাবার পরও ট্রাইব্যাল মানুষদেরই নিয়ে গড়া বিক্ষিপ্ত গ্রামগুলির মধ্যে ট্রাইব্যাল সমাজের চিহ্নাবলী নিজেদের বিপরীতে পর্যবসিত হতে বাধ্য : যা ছিলো উদ্দেশ্যমূলক তাই হয়ে দাঁড়ালো উদ্দেশ্য-বিরোধী, যা-ছিলো জীবনের জীবনের সহায় তাই হয়ে দাঁড়ালো জীবনের প্রতিবন্ধ।
আমাদের দেশে উৎপাদন কৌশলের উন্নতির উপর নির্ভর করে যদি ট্রাইব্যাল সমাজ ভিতর থেকে ভেঙে নতুন সমাজের পথ করে দিতো তাহলে হয়তো আমাদের দেশের সমাজ-ইতিহাসও ইয়োরোপীয় সমাজ-ইতিহাসের অনুরূপ হতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি। আমাদের দেশে স্থানে-স্থানে রাষ্ট্রশক্তি দেখা দিয়েছে, কিন্তু তখনো তাকে ঘিরে রয়েছে পুরোনো ট্রাইব্যাল সমাজ। এই ট্রাইব্যাল সমাজগুলির উপর আক্রমণ চালিয়ে রাষ্ট্রশক্তির অধিনায়কেরা এগুলিকে ধ্বংস করবার চেষ্টা করছেন এবং এই সমাজের মানুষগুলিকে নিয়ে গ্রাম-নিবেশ করবার চেষ্টা করেছেন। স্বভাবতই ওই গ্রামগুলির মধ্যে ট্রাইব্যাল সমাজের চিহ্ন অনেক স্পষ্টভাবে টিকে থেকেছে,–উৎপাদন কৌশলের স্বাভাবিক উন্নতি হলে এই চিহ্নগুলিও হয় তো স্বাভাবিকভাবে মিলিয়ে যেতো। কিন্তু তা যায়নি। কেননা, উৎপাদন কৌশলের স্বাভাবিক উন্নতি এ-দেশে ঘটেনি। ফলে, গ্রামগুলি অনেকাংশেই ট্রাইব্যাল গ্রামের মতোই হয়ে রইলো; কেবল গণবন্ধন থেকে ছিন্ন হলো বলেই এই গ্রাম্য-জীবনে ট্রাইব্যাল সমাজের চিহ্নগুলি পর্যবসিত হলো নিজেদের বিপরীতে।
ট্রাইব্যাল সমাজের অসম্পূর্ণ বিলোপ বলতে আমরা মোটের উপর এই কথাটিই বোঝাতে চেয়েছি। এবং আমাদের ধারণায় ভারতীয় সংস্কৃতির নানান বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করবার ব্যাপারে এই হাইপথেসিস্ বা প্রকল্প থেকেই সাহায্য পাবার সম্ভাবনা আছে। ধ্যানধারণার আলোচনায় পরে আসা যাবে; তার আগে দেখা যাক ভারতীয় সমাজব্যবস্থার কয়েকটি মূল বৈশিষ্ট্যকে বোঝবার চেষ্টায় আমাদের এই প্রকল্পটি কী ভাবে কাজে লাগতে পারে।
——————————–
১৮০. অর্থশাস্ত্র (রাধাগোবিন্দ বসাক) ২:২১০।
১৮১. Epigraphia Indica 1:243; 18:304.
১৮২. অর্থশাস্ত্র (রাধাগোবিন্দ বসাক) ২:২০৯।
১৮৩. ঐ ২:২১০।
১৮৪. W. W. Hunter IGI 4:165.
১৮৫. অবশ্যই ব্যবসাদার, ধর্মপ্রচারক, আড়কাঠি প্রভৃতির কৃপায় বর্তমান ভারতের ট্রাইব্যাল সংগঠনগুলির মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রি অনেক কৃত্রিমতা প্রবেশ করেছে।
১৮৬. W. W. Hunter op.cit. 4:171.
১৮৭. Ibid 4:174.
১৮৮. Ibid 4:183.
১৮৯. Ibid 4:172.
১৯০. Ibid 4:179.
১৯১. R. C. Dutta PB 11.
১৯২. F. Engels OFPPS 268.