টোটেম বিশ্বাস
জন্তু-জানোয়ারের নাম থেকে মানবদলের নামকরণ করবার এই প্রথাটি আমাদের দেশে টিকে রয়েছে শুধুমাত্র প্রাচীন পুঁথিপত্রগুলির মধ্যে নয়, দেশের পিছিয়ে-পড়ে অঞ্চলের বাস্তব সমাজ-ব্যবস্থার মধ্যেও। আপনি যদি থার্স্টন, রিসলী, রাসেল, কুক, আয়ার ইত্যাদির বই থেকে এ-বিষয়ে একটি তালিকা প্রস্তুত করতে রাজী হন তাহলে হয়তো দেখবেন কোনো রকম পরিচিত পোকামাকড়, গাছগাছড়া বা জন্তু-জানোয়ারের নামই বাদ পড়ছে না!
কিন্তু প্রশ্ন হলো, ব্যাপারটা কী? এই ভাবে পোকামাকড়, গাছগাছড়া আর জন্তু-জানোয়ারের নাম থেকে মানবদলের নামকরণ করবার ব্যবস্থা কেন? এ কি শুধুই আমাদের দেশের মানুষদের একটা বৈশিষ্ট্য নাকি? আসল তা নয়। এ হলো মানবজাতিরই সমাজ-সংগঠনের এক আদিম পর্যায়ের বৈশিষ্ট্য। মর্গান(৮১) লক্ষ্য করেছিলেন যে, আমেরিকার আদিবাসীদের মধ্যে সর্বত্র প্রথা হলো জন্তু-জানোয়ারের নাম থেকে গোষ্ঠীর নামকরণ করা। কিন্তু এই প্রথাটিকে যদি আদি ও অকৃত্রিম অবস্থায় দেখতে চান তাহলে আপনাকে অস্ট্রেলিয়া যেতে হবে। কেননা, সে-দেশের আদিবাসীদের মধ্যেই কোনো কোনো দল আজো খুবই আদিম পর্যায়ে পড়ে রয়েছে এবং তাদের মধ্যে থেকে এই প্রথার একেবারে আদিম রূপটি আজো লুপ্ত হয়নি।
ওজিবওয়া নামের একদল আমেরিকান আদিবাসীদের ভাষা-ব্যবহার থেকে আধুনিক বৈজ্ঞানিকেরা এই প্রথাটির নাম গ্রহণ করেছেন। নামটা হলো টোটেম-বিশ্বাস(৮২)।
কী রকমের বিশ্বাস? পুরো একদল মানুষ মনে করছে কোনো এক জন্তু বা কোনো এক গাছ থেকে তাদের সকলের জন্ম : তারা সকলেই ওই জন্তুর বা গাছের বংশধর। আর তাই জন্যেই, তাদের কাঙারু-দলের সকলে ভাবছে, কাঙারু থেকেই তাদের দলের সবাইকার জন্ম, তাই তারা সবাই-ই কাঙারু। সূর্যমুখী-দলের সবাই ভাবছে, সূর্যমুখী থেকেই তাদের দলের সবাইকার জন্ম, তাই তারা সবাই সূর্যমুখী। ওজিবওয়াদের ভাষায়, কাঙারুদলের কাছে কাঙারুই হলো দলের টোটেম্, সূর্যমুখী দলের কাছে সূর্যমুখীই হলো দলের টোটেম্। আধুনিক বৈজ্ঞানিকরা তাই পুরো ব্যাপারটারই নাম দিচ্ছেন টোটেম-বিশ্বাস।
ছান্দোগ্য-উপনিষদের ওই সামগানরত কুকুরগুলির পরিচয়-প্রসঙ্গে এখানে বিশেষ করে দুটি প্রশ্ন আলোচনা করা দরকার।
প্রথমত, ভারতীয় প্রাচীন পুঁথিপত্রে সত্যিই এই টোটেম-বিশ্বাসের চিহ্ন পড়ে রয়েছে কিনা?
দ্বিতীয়ত, টোটেম-বিশ্বাসের চিহ্ন থেকে ঠিক কোন ধরনের সমাজ-সংগঠন অনুমান করা দরকার।
—————-
৮১. H. L. Morgan AS 86.
৮২. Ibid 170.