তাহলে লোকায়ত দর্শন নিয়ে আলোচনা করতে হলে নানান রকমের প্রশ্ন না তুলে উপায় নেই। প্রথমত, বিপক্ষের লেখায় লোকায়তিকদের সম্বন্ধে যে সব ছোটো ছোটো বিচ্ছিন্ন সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে শুধুমাত্র সেগুলি থেকেই লোকায়ত দর্শনের বিলুপ্ত রূপটিকে খুঁজে পাবার আশা নেই। পুঁথিত গণ্ডি পেরিয়ে দেশের মানুষদের দিকেও চেয়ে দেখতে হবে—বিশেষ করে সেই সব মানুষদের, যারা চাষ করে। কেননা, তাদের মধ্যে লোকায়ত দর্শন আজো বেঁচে রয়েছে,–যদিও সমাজের সদরমহলের বিদগ্ধ পুঁথিপত্রের আসরে কোনো এককালে তার যে-স্থান ছিলো সে-স্থান আজ আর নেই!
এইভাবে লোকায়ত-দর্শনের উৎস সন্ধানে বেরুলে দেখা যায় বামাচারী মতামত ও আচার-আচরণের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। আর ঠিক এইখানটিতে এসেই যেন ঠেকে যেতে হয়। কেননা, আমাদের আজকালকার শিক্ষিত ও মার্জিত রুচিবোধের কাছে ওই সব মতবাদ ও আচরণের মতো কদর্য ও বিকৃত ব্যাপার আর কিছুই হতে পারে না!
তাহলে উপায়? আমাদের আধুনিক রুচিবোধের খাতিরে লোকায়তের উৎস অনুসন্ধানটাকে কি ছেড়ে দিতে হবে?
অবশ্য, আর একটা সম্ভাবনাও বাকি থাকে। এমন তো হতেই পারে যে আমাদের রুচিবোধ, নীতিবোধ নেহাতই একালের ব্যাপার। অর্থাৎ কিনা, সমাজ-বিকাশের উন্নততর পর্যায়ের অবদান। অপরপক্ষে, বামাচারী মতাদর্শ সেকালের ব্যাপার। যদিও আজকের দিনেও তা টেকে রয়েছে তবুও তা অনেকাংশেই আজকের পৃথিবীরই আনাচে-কানাচে আদিম মানুষদের পক্ষে টেকে থাকবার মতোই। তার মানে এ-ধরনের ধ্যানধারণার উৎস সমাজ-বিকাশের অনেক পিছিয়ে-পড়া পর্যায়ের মধ্যে। একালের রুচিবোধ ও নীতিবোধকে সেকালের পক্ষেও সত্য বলে মনে করবার কোনো কারণ নেই। আর যদি তাই হয় তাহলে এমনটা হওয়া সত্যিই অসম্ভব নয় যে, যে-উদ্দেশ্য থেকে সমাজের ওই পিছিয়ে-পড়া পর্যায়ে বামাচারী ধ্যানধারণার জন্ম হয়েছিল তা বুঝতে পারা যাবে না শুধুমাত্র আধুনিক কালের লাম্পট্য-ব্যবহারকে মনে রাখলে।
কিন্তু এই বামাচারী ধ্যানধারণাগুলির উৎস সন্ধান করা যাবে কী ভাবে? কোন সূত্রে এগিয়ে?