প্রথম খণ্ড
দ্বিতীয় খণ্ড
তৃতীয় খণ্ড

০৫. বৈদিক সাহিত্যে বামাচার

বৈদিক সাহিত্যে বামাচার 

…all understanding of primitive conditions remains impossible so long as we regard them through brothel spectacles(২১) : Engels
অর্থাৎ গণিকালয়ের ঠুলি পরে আদিম অবস্থায় তাৎপর্য বোঝা অসম্ভব।

আধুনিক যুগের রুচিবোধের কাছে বামাচার যে কী সাংঘাতিক বিদ্বেষ-বিতৃষ্ণার উদ্রেক করে তার নিদর্শন হিসেবে রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্রের একটি মন্তব্য উদ্বৃত করা যায়। গুহ্যসমাজ বা তথাগত গুহ্যক নামে একটি বৌদ্ধ বামাচারী পুঁথি সম্বন্ধে তিনি বলছেন, এই পুঁথিতে এমন সব মতবাদ ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং এমন সব ক্রিয়াকর্মের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে মানুষের জঘন্যতম প্রবৃত্তিও এর চেয়ে ঘৃণিত ও ভয়াবহ কিছুই কল্পনা করতে পারে না এবং তার পাশে গত শতাব্দীর বিলিতি বটতলা বা হলিওয়েল স্ট্রিটের অশ্লীল সাহিত্যেও একান্ত পবিত্র মনে হবে।

…theories are indulged in, and practices enjoined which are at once the most revolting and horrible that human depravity could think of, and compared to which the words and specimens of Holiwell Street literature of the last century would appear absolutely pure.(২২)

কথাগুলি নিশ্চয়ই মিথ্যে নয়। তবুও কিন্তু এ-জাতীয় মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হলে প্রাচীন সাহিত্যের প্রকৃত তাৎপর্য উদ্ধার করা অসম্ভব। তার কারণ, যে-নীতিবোধ ও রুচিবোধের মধ্যে এ-জাতীয় মন্তব্যের উৎস সেটা একান্তই আধুনিক কালের, আধুনিক যুগের অবদান। প্রাচীনেরা ছিলেন প্রাচীন, তাই আমাদের নীতিবোধ বা রুচিবোধের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় ছিলো না। তাঁরা যে-সাহিত্য রচনা করে গিয়েছেন তা তাঁদের রুচিবোধের অনুপাতেই। তাই আমরা যদি একালের নীতিবোধ নিয়ে তাঁদের সাহিত্যের দিকে চেয়ে দেখি এবং বিদ্বেষ-বিতৃষ্ণায় একেবারে বিরক্ত হয়ে উঠি তাহলে তাঁদের কথার প্রকৃত তাৎপর্য কিছুতেই খুঁজে পাবো না। তাঁরা ঠিক কী ভেবে এ-জাতীয় কথাবার্তা লিখেছিলেন তা জানতে হবে, এবং সে-কথা জানতে হলে অন্তত সাময়িক ভাবে আমাদের রুচিবোধকে মূলতবী রেখে ভেবে দেখতে হবে তাঁদের উদ্দেশ্যটা কী হওয়া সম্ভব।

বৈদিক সাহিত্যে বামাচারের নিদর্শন নিয়ে আলোচনা তোলবার আগে কথাগুলি বিশেষ করে তুলছি; কেননা, একালের ধ্যানধারণাগুলিকে সম্বল করে এগোলে বৈদিক সাহিত্যে বামাচারের নিদর্শনগুলিকে অত্যন্ত বীভৎস কামবিকার ও কুৎসিৎ লাম্পট্যের নমুনা বলে মনে হওয়াই স্বাভাবিক। অথচ বৈদিক ঋষিদের কাছে কথাগুলি ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উদ্দেশ্যমূলক। তাই একালের লাম্পট্য-ব্যবহারটার পটভূমিতে সেকালের ঋষিদের এই সব কথাবার্তার প্রকৃত তাৎপর্য অনুমান করা সমম্ভব।

বেদ-ব্রাহ্মণ-উপনিষদের তাৎপর্য খুঁজতে হলে আজকালকার বটতলাসাহিত্য থেকে কোনোরকম মূলসূত্র পাওয়া সম্ভব নয়—এক কথাটি স্পষ্টভাবে মনে রেখেই বৈদিক সাহিত্যে বামাচার ও কামাচারের নিদর্শনগুলিকে বোঝবার চেষ্টা করা যাক।

একটি নিদর্শন : শুক্ল-যজুর্বেদ (বাজসনেয়ী সংহিতার) ২৩।।২২ থেকে ২৩।।৩১। এই দশটি বেদমন্ত্রেরই আক্ষরিক অনুবাদ দেবার দরকার নেই। আমরা শুধুমাত্র দুটি মন্ত্রের তর্জমা উদ্বৃত করবো, কেননা, ওই দুটির মধ্যেই খুব প্রয়োজনীয় একটি ইঙ্গিত লুকিয়ে রয়েছে—বাকি আটটি মন্ত্রে বারবার একঘেঁয়ে ভাবে, একই কথাবার্তা পাওয়া যাচ্ছে। কিসের কথাবার্তা? মৈথুনের। কেবল মনে রাখবেন, এই মৈথুন-দৃশ্যে ও মৈথুন-সংলাপে যাঁরা অংশগ্রহণ করছেন তাঁরা কেউই আজকালকার লম্পটের মতো লোক নন। তার বদলে পাঁচজন যজ্ঞীয় ঋত্বিক : অধ্বর্য্যু, ব্রহ্মা, উদ্গাতা, ইত্যাদি। ২৩।।২২ এবং ২৩।।২৩ : অধ্বর্য্যু কুমারীকে অভিমেথন করছেন—দুটি মন্ত্রে অধ্বয্যু ও কুমারীর মধ্যে মৈথুন-সংলাপ। ২৩।।২৪ এবং ২৩।।২৫ : ব্রহ্মা মহিষীকে অভিমেথন করছেন—মন্ত্র দুটিতে ব্রহ্মা ও মহিষীর মধ্যে মৈথুন-সংলাপ। ইত্যাদি, ইত্যাদি।

আমাদের আলোচনার পক্ষে ২৩।।২৬ এবং ২৩।।২৭ সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক হবে। তাই শুধু এই দুটি বেদমন্ত্রই উদ্বৃত করলাম।

উর্ধ্বামেনামুচ্ছ্রাপয় গিরৌ ভারং হরন্নিব।
অথাস্যৈ মধ্যমেধতাং শীতে বাতে পুনান্নিব।।২৩।২৬।।
উবটভাষ্য :–উদ্গাতা বাবাতাম্‌ অভিমেথয়তি উর্ধ্বাম্‌ এনাম্‌ কম্‌ চিৎ পুরুষম্‌ আহ। উর্ধ্বাম্‌ এনাম্‌ বাবাতাম্‌ উচ্ছ্রিতাম্‌কুরু। কথম্‌ ইব। গিরৌ ভারম্‌ মধ্যে নিগৃহ্য হরেৎ এবম্‌ মধ্যে নিগৃহ্য উর্ধ্বাম্‌ উচ্ছ্রাপয়। অথ যথা ইতি এতস্য স্থানে। অথাচ উচ্ছ্রাপয় যথা অস্যা বাবাতায়া মধ্যম্‌ যোনিপ্রদেশঃ এধতাম্‌। ‘এধ্‌ বৃদ্ধৌ’ বৃদ্ধিম্‌ যায়াৎ অথ এনাম্‌ গৃহ্নীয়াঃ। শীতে বাতে পুনন্‌ ইব। যথা কৃষীবলঃ ধান্যম্‌ বাতে শুদ্ধম্‌ কুর্বন্‌ গ্রহণমোক্ষৌ ঝটিতি করোতি।
উর্ধ্বামেনমুচ্ছ্রয়োতাদিগিরৌ ভারং হরন্নিব।
অথাস্য মধ্যমেজতু শীতে বাতে পুনন্নিব।।২৩.২৭।।
উবটভাষ্য :–বাবাতা প্রত্যাহ উদ্‌গাতারম্‌। ভবতঃ অপি এতৎ এবম্‌। উর্ধ্বম্‌ এনম্‌। উদ্‌গাতারম্‌ উচ্ছ্রয়তাম্‌ উচ্ছ্রাপয়। অত্র স্ত্রী পুরুষায়তে। গিরৌ ভাবম্‌ হরন্‌ ইব। অথ এবম্‌ ক্রিয়মাণস্য অস্য মধ্যম প্রজননম্‌ এজতু চলতু। অথ এনম্‌ নিগৃহীব শীতে বাতে পুনন্‌ ইব যবান্‌।
২৩।।২৬ : এই স্ত্রীকে উর্ধ্বে তুলিয়া ধরো। পর্বতে যেমন করিয়া তার উত্তোলন করে। অনন্তর ইহার মধ্যদেশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হউক। বায়ুকে শুদ্ধ করিতে করিতে…
উবট : উদ্গাতা বাবাতাকে অভিমেথন করিলেন। কোনো পুরুষকে বলিলেন, এই বাবাতাকে উর্ধ্বে তুলিয়া উষ্প্রিত করো। কেমন করিয়া? পর্বতে ভারবস্তুকে মধ্যস্থানে ধরিয়া যেমন ভাবে উত্তোলন করা হয় তেমনি ইহাকে মধ্যে ধরিয়া উত্তোলন করো। যেমন কৃষক বায়ুতে ধান্য শুদ্ধ করিতে করিতে ঝটিতে গ্রহণ করে ও বপন করে…
২৩।।২৭ : উর্ধ্বে এই পুরুষকে তুলিয়া ধরো। যেমন করিয়া পর্বতে ভারবস্তুকে উত্তোলন করা হয়। অনন্তর ইহার মধ্যপ্রদেশ চলিতে থাকুক। শীতল বায়ুতে যব শস্য শুদ্ধ করিতে করিতে…
উবট : প্রত্যুত্তরে বাবাতা উদ্গাতাকে বলিল, তোমা কর্তৃকও এই রকমই করা হউক। এই পুরুষকে, অর্থাৎ উদ্গাতাকে, উর্ধ্বে তুলিয়া ধরো। এইখানে স্ত্রীলোক পুরুষের ন্যায় আচরণ করিতেছে। পর্বতে যেমন করিয়া ভার তোলে। অনন্তর এইরূপ ক্রিয়মান ইহার মধ্যেপ্রদেশ চলিতে থাকুক, অর্থাৎ মৈথুন চলিতে থাকুক। অনন্তর ইহাকে চালিয়া ধরো। যেমন কৃষক শীতল বায়ুতে যব শুদ্ধ করিতে করিতে ঝাটিতে গ্রহণ এবং বপন করে…

উদ্ধৃত অংশের বিশেষ করে একটি বিষয়ের দিকে নজর রাখা দরকার : মৈথুন-সংলাপের মধ্যে কী ভাবে ক্ষেত্রে বীজ বপনের কথাটা এলো! তাহলে বামাচারের সঙ্গে বার্ত্তা-বিদ্যার সংযোগটা মনে হচ্ছে শুধুমাত্র কাপালিক-লোকায়তিক সম্প্রদায়ের মধ্যেই নয়, খোদ বৈদিক ঐতিহ্যের যেন একই ইঙ্গিত দেখতে পাওয়া যাচ্ছে!

এ-আলোচনায় পরে ফেরা যাবে।

আপাতত, বড়ো সমস্যাটাই দেখা যাক। সমস্যা হলো : যজুর্বেদে পরের পর দশ দশটি এই রকম  মন্ত্র আছে, এবং আধুনিক কোনো পণ্ডিতই বলতে পারছেন না যে উত্তরযুগের লম্পটেরা এগুলি রচনা করে বেদের মধ্যে গুঁজে দিয়েছে। অর্থাৎ, রচনাটি খোদ বৈদিক ঋষিদেরই।

অবশ্যই, পরের যুগের বেদপন্থীরা এই মন্ত্রগুলি নিয়ে খুবই বিপদে পড়েছেন। তার কারণ, তাঁদের উত্তরযুগের রুচির সঙ্গে এগুলি কিছুতেই খাপ খায় না। তাই পরের যুগে এমনকি বিধান দেওয়া হয়েছে, এই বৈদিক মন্ত্রগুলি উচ্চারণ করবার জন্যই প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে(২৩)। প্রায়শ্চিত্তবিধানের মূলে নিশ্চয়ই পাপ-বোধ। অথচ, পুরাকালের বৈদিক ঋষিরা যদি সত্যিই একে পাপাচরণ মনে করতেন তাহলে নিশ্চয়ই তার জন্য পাঁচ-পাঁচজন যজ্ঞীয় ঋত্বিককে নিয়োগ করতে চাইতেন না। তাই তাঁদের কাছে পুরো ব্যাপারটাই যে একটি বৈদিক যজ্ঞ-বিশেষ সে-বিষয়ে কোনো রকম সন্দেহের অবকাশ নেই। বস্তুত, বেদের ছাত্রমাত্রই জানেন এই মন্ত্রগুলির সঙ্গে অশ্বমেধ যজ্ঞের কী রকম ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

কিন্তু মৈথুনের সঙ্গে বৈদিক যজ্ঞের সম্বন্ধ আবার কী? ঠিক কী সম্পর্ক এ-কথার জবাব এখুনি দেওয়া যাবে না। কেননা, যজ্ঞ বলে ব্যাপারটির আসল তাৎপর্য নিয়েই প্রচুর আলোচনার অবকাশ রয়েছে। আপাতত, আমরা শুধু এইটুকুই বলতে চাইছি যে যজ্ঞ মানে যাই হোক না কেন, অনেক জায়গায় দেখা যায় প্রাচীনেরা মৈথুনকেও সরাসরি যজ্ঞের মতোই মনে করেছিলেন।

এ-কথার প্রমাণ রয়েছে বৃহদারণ্যক উপনিষদে একেবারে শেষের দিকে:

স হ প্রজাপতিরীক্ষাংচক্রে হস্তাস্মৈ প্রতিষ্ঠাং কল্পযানীতি স স্ত্রিয়ং সসৃজে তাং সৃষ্ট্বাহধ উপাস্ত তস্মাৎ স্ত্রিয়মধ উপাসীত স এতং প্রাঞ্চং গ্রাবাণমাত্মন এব সমুদপারয়ত্তে নৈনামভ্যসৃজৎ।।৬।৪।২।।
তস্যা বেদিরুপস্থো লোমানি বর্হিশ্চর্মাধিষবণে সমিদ্ধো মধ্যতস্তৌ মুষ্কৌ স যাচান্‌ হ বৈ বাজপেয়েন যজমানস্য লোকো ভবতি তাবানস্য লোকো ভবতি য এবং বিদ্বানধোপহাসংচরত্যাসাং স্ত্রীণাং সুকৃতং বৃঙক্তেহথ য ইদমবিদ্যানধোপহাসংচরত্যস্য স্ত্রিয়ঃ সুকৃতং বৃঞ্জতে।।৬।৪।৩।।
প্রজাপতি মনে-মনে চিন্তা করলেন, ‘এসো আমি এর জন্যে একটি প্রতিষ্ঠা সৃষ্টি করি। তিনি স্ত্রী সৃষ্টি করলেন। তাকে সৃষ্টি করে তিনি তার অধোদেশে মিলিত হলেন (উপাস্ত=মিলিত হলেন। মনিয়ার উইলিয়ম্‌স-এর অভিধান দ্রষ্টব্য)। সেই কারণে স্ত্রীর অধোদেশে মিলিয়ে হওয়া উচিত (উপাসীত)। তিনি নিজের উর্ধ্বোত্থিত গ্রাবাণকে (আক্ষরিক অর্থে গ্রাবাণ যদিও সোমরস নিষ্কাশনের শিলাখণ্ড, তবুও এখানে শব্দটি স্পষ্টই শিশ্ন-ব্যঞ্জক) প্রসারিত করে দিলেন। তার দ্বারা তিনি তাকে গর্ভবতী করলেন।।৬।৪।২।।
তার (অর্থাৎ স্ত্রীলকটির) উপস্থ (=নিম্নাঙ্গ) বেদি (যজ্ঞবেদী); তার লোম (=চুল) যজ্ঞতৃণ; তার চর্ম অধিযবন (=সোমরস নিষ্কাশনের যন্ত্র); তার মুষ্কদ্বয় (=the two labia of the vulva : রাধাকৃষ্ণণ ও হিউমের তর্জমা দ্রষ্টব্য) মধ্যস্থ অগ্নি। বাজপেয়-যজ্ঞকারীর কাছে জগৎ যতো বৃহৎ, এই (তত্ত্ব) জেনে যে মৈথুন করে তার কাছেও জগৎ ততো বৃহৎ। যে স্ত্রী দ্বারা নিজে শক্তিমান হয়। যে এ (তত্ত্ব) না জেনে মৈথুন করে স্ত্রী তার সুকৃতকে…।।৬।৪।৩।। ইত্যাদি, ইত্যাদি।

এরকম প্রকট বামাচারী চিন্তা যদি উপনিষদের মধ্যে মাত্র একবারই উঁকি দিতো তাহলে না হয় আধুনিক পণ্ডিতদের পক্ষে একে দেখেও না দেখার ভাবটা অতোখানি দোষাবহ হতো না। কিন্তু উদ্বৃত অংশের মূল কথাটি শুধুমাত্র উদ্বৃত অংশটুকুর মধ্যেই আবদ্ধ নয়, অন্যত্রও তার স্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়।

ছান্দোগ্যের ঋষি বলছেন :

যোযা বাব গৌতমাগ্নিস্তস্যা উপস্থ এব সমিধ্‌ যদুপমন্ত্রয়তে স ধূমো যোনিরর্চির্ষদন্তঃ করোতি তেহঙ্গারা অভিনন্দা বিস্ফুলিঙ্গাঃ।।৫।৮।১।।
তস্মিন্নেতস্মিন্নগ্নৌ দেবা রেতো জুহ্বতি তস্যা আহুতের্গর্ভঃ সম্ভবতি।।৫।৮।২।।
অর্থাৎ, হে গৌতম, স্ত্রীলোকই হলো যজ্ঞীয় অগ্নি। তার উপস্থই হলো সমিধ। ওই আহ্বানই হলো ধূম। যোনিই হলো অগ্নিশিখা। প্রবেশ-ক্রিয়াই হলো অঙ্গার। রতিসম্ভোগই হলো বিস্ফুলিঙ্গ।।৫।৮।১।।
এই অগ্নিতে দেবতারা রেতর আহুতি দেন। সেই আহুতি থেকেই গর্ভ সম্ভব হয়।।৫।৮।২।।

আবার বৃহদারণ্যকেও হুবহু এই কথাই দেখতে পাওয়া যায় :

যোযা বা অগ্নির্গৌতম তস্যা উপস্থ এব সমিল্লোমানি ধূমো যোনিরর্চির্ষদন্তঃ করোতি করোতি তেহঙ্গারা অভিনন্দা বিস্ফুলিঙ্গাস্তস্মিন্নেতস্মিন্নগৌ দেবা রেতো জুহ্বতি তস্যা আহুত্যৈঃ পুরুষঃ সংভবতি…।।৬।২।১৩।।

তর্জমা আগের উদ্বৃতিটির অনুরূপ হবে।

তাহলে, উপনিষদের ঋষি মৈথুন-ক্রিয়াকে খোলাখুলি ভাবেই যজ্ঞ বলে উল্লেখ করছেন। কথায় কথায় সোমযাগ থেকে উপমা নেবার চেষ্টাটাও লক্ষ্য করবার মতো। আমাদের আধুনিক রুচিতে এ-সব কথাবার্তা যতোই কদর্য লাগুক না কেন, উপনিষদের ঋষিরা এই তত্ত্বটির প্রতিই যে কতোখানি গুরুত্ব দিতে চান তার পরিচয় পাওয়া যায় নানান দিক থেকে। বৃহদারণ্যকে উক্ত তত্ত্ব বলবার পরই ঋষি তিনজন প্রাচীন জ্ঞানীর নজির দেখাচ্ছেন : বিদ্বান উদ্দালক আরুনি, বিদ্বান নাক মৌদ্গল্য, বিদ্বান কুমারহারিত—তিনজন বিদ্বানই নাকি এই তত্ত্ব জানতেন এবং সেই মর্মে উপদেশ দিয়েছেন এবং এই প্রসঙ্গেই এগিয়ে বৃহদারণ্যকের ঋষি বলছেন :

…বদ্যুদক আত্মানং পশ্যেত্তদতিমন্ত্রয়েত ময়ি তেজ ইন্দ্রিয়ং যশো দ্রবিনং সুকৃতমিতি শ্রীর্হ বা এবাং স্ত্রীপাং যন্মলোদ্বাসাস্তস্মান্নলোদ্বাসসং যশস্বিনীমভিক্রম্যোপমন্ত্রয়েত।।৬।৪।৬।।
সা চেদস্মৈ ন দন্তাৎ কামমেনামবক্রীণীয়াৎ সা চেদস্মৈ নৈব দস্যাৎ কামমেনাং যষ্ট্যা বা পাণিনা বোপহত্যাতিক্রামেদিন্দ্রিয়েণ তে যশসা যশ আদদ ইত্যযশা এব ভবতি।।৬।৪।৭।।
…কেউ যদি নিজেকে জলে দেখে তাহলে জপ করবে, ‘আমাতে তেজ, ইন্দ্রিয়সামর্থ্য, যশ, ধন, সুকৃত (আসুক)’।
এই হলো স্ত্রীলোকের মধ্যে শ্রী, যখন সে মলোদ্বাসা হয় (মল+উৎবাসাঃ, খুব সম্ভব, ঋতুর পর মলবস্ত্র ত্যাগ করবার উল্লেখ করা হচ্ছে)। অতএব মলোস্বাসা যশস্বিনী স্ত্রীলোকের নিকট গমন করে তাকে আহ্বান করবে।।৬।৪।৬।।
সে (স্ত্রীলোকটি) যদি তাকে কাম দিতে রাজী না হয় তাহলে তাকে (স্ত্রীলোকটিকে) নিজ বসে আনয়ন করবে। সে (স্ত্রীলোকটি) যদি তাকে (পুরুষকে) কাম দিতে রাজী না হয় তাহলে তাকে (স্ত্রীলোকটিকে) লাঠি দিয়ে বা হাত দিয়ে প্রহার করে অভিভূত করে বলবে, ‘আমার ইন্দ্রিয়শক্তি দ্বারা, আমার যশদ্বারা তোমার যশকে কেড়ে নিচ্ছি’। এই ভাবে সে (স্ত্রীলোকটি) যশহীনা হয়।।৬।৪।৭।। ইত্যাদি ইত্যাদি।

বলাই বাহুল্য, আজকের দিনে এ-ধরনের উপদেশ দিতে গেলে আমরা ঋষির গৌরব পাবার বদলে নিজেরাই লাঠিপেটা বা কিলচড় খাবো। কিন্তু বৃহদারণ্যক উপনিষদের লেখক মেয়েদের লাঠি-পিটে, কিলচড় লাগিয়ে কামভাব চরিতার্থ করিতে দিতে বাধ্য করবার উপদেশ দিয়েও মারধোর খেয়েছিলেন বলে কোথাও লেখা নেই। বরং তাঁর বইকে প্রাচীনেরা জ্ঞানের আকর বলেই মনে করছেন।

আর, এই থেকে কি প্রমাণ হয় যে মৈথুন ও কাম সম্বন্ধে আমাদের আজকের দিনের যা-ধারণা তার সঙ্গে সেকালের মানুষদের ধারণার একেবারে আকাশ-পাতাল তফাত?

তফাত যে হয়েছিলো এ-বিষয়ে সন্দেহের কোনো রকম অবকাশই নেই। কেননা, মহাভারতের যুগে দেখা যায় এ-বিষয়ে পুরোনো কালের ধ্যান-ধারণার সঙ্গে নতুন কালের ধ্যানধারণাগুলো আর মিল খাচ্ছে না। আদিপর্বের ১২২ অধ্যায় দেখুন(২৪) :

পূর্বকালে উদ্দালক নামে এক মহর্ষি ছিলেন। তাঁহার পুত্রের নাম শ্বেতকেতু। একদা তিনি পিতামাতার নিকট বসিয়া আছেন, এমন সময় এক ব্রাহ্মণ আসিয়া তাঁহার জননীর হস্ত ধারণপূর্বক কহিলেন, আইস আমরা যাই! ঋষিপুত্র পিতার সমক্ষেই মাতাকে বলপূর্বক (‘বলাৎ ইব’) লইয়া যাইতে দেখিয়া সাতিশয় ক্রুদ্ধ হইলেন। মহর্ষি উদ্দালক পুত্রকে তদবস্থ দেখিয়া কহিলেন, বৎস ক্রোধ করিও না, ইহা নিত্যধর্ম। (এষঃ ধর্ম্মঃ সনাতনঃ ।।১।১২২।১৪।।)। গাভীগণের ন্যায় স্ত্রীগণ শত সহস্র পুরুষে আসক্ত হইলেও উহারা অধর্মলিপ্ত হয় না। ঋষিপুত্র পিতার বাক্য শ্রবণ করিয়াও ক্ষান্ত হইলেন না, প্রত্যূত পূর্বাপেক্ষা ক্রুদ্ধ হইয়া মনুষ্যমধ্যে বলপূর্বক এই নিয়ম স্থাপন করিয়া দিলেন যে, অদ্যাবধি যে স্ত্রী পতিভিন্ন পুরুষান্তর সংসর্গ করিবে এবং যে পুরুষ কৌমারব্রহ্মচারিনী বা পতিব্রতা স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া অন্য স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, ইহাদের উভয়কেই ভ্রুণহত্যা সদৃশ ঘোরতর পাপপঙ্কে লিপ্ত হইতে হইবে। (কালিপ্রসন্ন সিংহের তর্জমা)

যৌনজীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিটা যে একটি বিশেষ যুগেই বদলেছে—আগে একরকম ছিলো, পরে অন্যরকম হলো—এ-কথার এর চেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ আর কী হবে? সেই যুগ বলতে ঠিক কোন যুগ,—কোন যুগ থেকে কামজীবন সম্বন্ধে আধুনিক ধ্যানধারণার শুরু,—এ-প্রশ্ন অবশ্যই স্বতন্ত্র।

আমাদের কাছে এখানে প্রধান সমস্যা হলো, সেকালের ধারণাটা ঠিক কী রকম? কোন রকম ধারণার বশবর্তী হলে পরে বৈদিক ঋষিদের পক্ষে কামজীবনকে অতোখানি গুরুত্বপূর্ণ, অতোখানি উদ্দেশ্যমূলক, মনে করা সম্ভবপর? এ-প্রশ্নের পুরো জবাবটা অবশ্যই শুধুমাত্র বৈদিক সাহিত্যের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না। অন্য কোন দিক থেকে জবাবটা পাবার সম্ভাবনা সে-কথায় একটু পরে ফেরা যাবে। কিন্তু, যেটা খুবই বিস্ময়ের কথা, এ-বিষয়ে বৈদিক সাহিত্য আমাদের সম্পূর্ণ নিরাশ করে না। উপনিষদ এবং বিশেষ করে ব্রাহ্মণ গ্রন্থগুলির কাছ থেকেই প্রশ্নটার অন্তত আংশিক উত্তর পাওয়া যাচ্ছে।

উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা যায় ছান্দোগ্য-উপনিষদের বামদেব্য ব্রতের কথা। ‘বামদেব্য’ নামটার দিকে নজর রাখবেন। বৈদিক সাহিত্যেও বামাচারের স্মারক রয়েছে তার একটি স্পষ্ট নিদর্শন ওই নামের মধ্যেই।

ছান্দোগ্য-উপনিষদে লেখা আছে :

উপমন্ত্রয়তে স হিংকারো জ্ঞপয়তে স প্রস্তাবঃ স্ত্রিয়া সহ শেতে স উদ্গীথঃ প্রতি স্ত্রীং সহ শেতে স প্রতিহারঃ কালং গচ্ছতি তন্নিধনং পারং গচ্ছতি তন্নিধনমেতদ্বামদেব্যং মিথুনে প্রোতম্‌।।২।১৩।১।।
স য এবমেতদ্বামদেব্যং মিথুনে প্রোতং বেদ মিথুনীভবতি মিথুনান্মিথুনাৎ প্রজায়তে সর্ব্বমায়ুরেতি জ্যোগ্‌ জীবতি মহান্‌ প্রজয়া পশুভির্ভবতি মহান্‌ কীর্ত্ত্যা ন কাঞ্চন পরিহরেৎ তদ্‌ ব্রতম্‌।।২।১৩।২।।
আহ্বান করে, সেই হলো হিঙ্কার। প্রস্তাব করে, সেই হলো প্রস্তাব। স্ত্রী সঙ্গে সে শয়ন করে, সেই হলো উদ্‌গীথ। স্ত্রীর অভিমুখ হয়ে শয়ন করে, সেই হলো প্রতিহার। সময় অতিবাহিত হয়, তাই নিধন। এই বামদেব্য নামক সাম মিথুনে প্রতিষ্ঠিত। ।।২।১৩।১।।
যে এইভাবে বামদেব্য সামকে মিথুনে প্রতিষ্ঠিত বলে যে জানে সে মিথুনে মিলিত হয়। (তার) প্রত্যেক মিথুন থেকেই সন্তান উৎপন্ন হয়। সে পূর্ণজীবী হয়। সন্তান, পশু ও কীর্তিতে মহান হয়। কোনো স্ত্রীলোককেই পরিহার করবে না—এই-ই ব্রত।।২।১৩।২।।

“মিথুনাৎ মিথুনাৎ প্রজায়তে সর্ব্বম্‌ আয়ুঃ এতি জ্যোক্‌ জীবতি মহান্‌ প্রজয়া পশুভির্ভবতি মহান্‌ কীর্ত্ত্যা”—এই হলো আসল কথা।

মিথুন থেকে কী কী পাওয়া যাবে তার ফর্দ দেখুন :
সন্তান পাওয়া যাবে।
পূর্ণ জীবন পাওয়া যাবে।
পশু পাওয়া যাবে।
মহান্‌ কীর্তির নামডাক পাওয়া যাবে।

এখানে বিশেষ করে দে-দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি তা হলো, উপনিষদের ঋষি মৈথুনকে শুধুমাত্র সন্তান উৎপাদনেরই উপায় মনে করছেন না, সেই সঙ্গেই ধনউৎপাদনের উপায় বলেও বর্ণনা করছেন। উপনিষদের যুগেও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিটা অনেকখানিই পশুপালনমূলক; তাই ধনউৎপাদন বলতে প্রধানতই পশুবৃদ্ধি।

আর এই ধারণার দরুনই মিথুনকে এতোখানি জরুরী বলে মনে করা হচ্ছে যে ঋষি মিথুনের বিভিন্ন স্তরকে হিঙ্কার, প্রস্তাব, উদ্‌গীথ, প্রতিহার প্রভৃতি পঞ্চবিধ সামগানের সঙ্গে এক বলে বর্ণনা করছেন। শুধু তাই নয়, উপদেশ দেওয়া হচ্ছে, “ন কাঞ্চন (=কাম্‌+চন=কোনো স্ত্রীলোককে) পরিহরেৎ তদ্‌ ব্রতম”—কোনো স্ত্রীলোককেই পরিহার করবে না, তাহা-ই ব্রত।

তাহলে প্রাচীনদের মনে মিথুন সম্বন্ধে ধারণাটা ঠিক আমাদের মতো নয়।

আমাদের ধারণায় মিথুন থেকে কী পাওয়া যায়? সন্তান।

ঋষিদের ধারণায় মিথুন থেকে কী পাওয়া যায়? শুধু সন্তান নয়, ধনসম্পদও।

আমাদের ধারণায় সন্তান উৎপাদনের সঙ্গে ধনসম্পদ উৎপাদনের কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁদের ধারণায়, ধনসম্পদ উৎপাদন ও সন্তান উৎপাদন—দু’-এর মধ্যে সম্পর্ক বড়ো গভীর।

এখন, আমাদের ধারণাটা ঠিক না তাঁদের ধারণাটা ঠিক, এ-নিয়ে তর্ক তোলবার দরকার নেই। অবশ্যই, এ-বিষয়ে আমাদের ধারণা তাঁদের চেয়ে অনেক স্পষ্ট, অনেক নির্ভুল। তার তুলনায়, তাঁদের ধারণাটার প্রায় পনেরো আনাই কল্পনা। কিন্তু যেটা আসলে ঢের বড়ো কথা, তাঁদের যুগে তাঁদের মনে এই রকমের একটা কল্পনা সত্যিই ছিলো, ছিলো ওই রকমের একটা ভুল ধারণা। তাই তাঁদের লেখা পুঁথিপত্র আমরা যদি বুঝতে চাই তাহলে আমাদের একালের ধ্যান-ধারণাগুলিকে তাঁদের লেখার উপর আরোপ করে বসলে প্রকাণ্ড ভুল হবে—ঠিক কী ভেবে তাঁরা কী লিখেছিলেন সে-কথা আমরা বুঝতেই পারবো না।

তাঁদের মনে যে সত্যিই ওই রকমের একটা ধারণা ছিলো এ-কথার প্রমাণ শুধুই উপনিষদ নয়, ব্রাহ্মণগ্রন্থগুলিও। বরং ব্রাহ্মণগ্রন্থগুলিতে এই কথা এতোবার এবং এতো স্পষ্টভাবে তাঁরা লিখে রেখেছেন যে সেদিকে চোখ না পড়াটাই বিস্ময়কর। স্থানসংকুলানের খাতিরে আমরা এখানে মাত্র একটি নমুনার উল্লেখ করতে পারবো; উৎসাহী পাঠক পাদটীকায় অন্যান্য বহু দৃষ্টান্তের উল্লেখ পাবেন(২৫)। আমাদের এই দৃষ্টান্তটি ঐতরেয় ব্রাহ্মণের প্রথম পঞ্চিকা প্রথম অধ্যায় থেকে সংগৃহীত, তর্জমা শ্রদ্ধেয় রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর(২৬) :

যে যজমান আপনাকে অপ্রতিষ্ঠিত মনে করে সে ঘৃতপক্ক চরু নির্বাপন করিবে। (অপ্রতিষ্ঠিত অর্থ, পুত্রাদিরহিত ও গবাদিরহিত)।
হে বৎস, যে এইরূপ প্রতিষ্ঠারহিত সে ইহজগতে প্রতিষ্ঠিত (শ্লাঘ্য) হয় না। (ঘৃতচরুর দ্বারা সেই অপ্রতিষ্ঠার পরিহার হয়।)
তাহাতে (সেই ঘৃতপক্ক চরুতে) যে ঘৃত আছে তাহা স্ত্রীর পয়ঃ (শোনিতস্বরূপ) আর যে তণ্ডুল আছে তাহা পুরুষের (রেতঃ স্বরূপ); সেই ঘৃততণ্ডুল মিথুন সদৃশ; সেই জন্য এই মিথুনদ্বারাই (ঘৃততণ্ডুলময় চরুপ্রদানদ্বারা) ইহাকে (যজমানকে) সন্ততিদ্বারা ও পশুদ্বারা বর্ধিত করা হয়। (সেই হেতু এই চরু) প্রতিষ্ঠারই হেতু।

এখানেও সেই একই ধারণা : মিথুন থেকে শুধুই যে সন্তান পাওয়া যাবে তাই নয়, ধনসম্পদও। মনে রাখবেন, সে-যুগে  ধনসম্পদ বলতে প্রধানত পশুই। তাহলে সে-যুগের যাঁরা জ্ঞানী তাঁদের ধারণায় ধনউৎপাদন আর প্রজনন এমন কিছু আলাদা ব্যাপার নয়। মিথুন থেকে শুধু সন্তান পাবার আশা নয়, পশুদ্বারা বর্ধিত হবার আশাও। আর এই কথায় যদি বিশ্বাস অটুট হয় তাহলে তাঁরা স্বভাবতই উপদেশ দেবেন : ‘ন কাঞ্চন পরিহরেৎ তদ্‌ ব্রতম্‌’, কোনো স্ত্রীলোককেই পরিত্যাগ করবে না—তাই-ই ব্রত।

আধুনিক কালের পণ্ডিতেরা বেদ-উপনিষদে এ-ধরনের কথা লেখা আছে দেখে বিলক্ষণ বিরক্তিবোধ করতে পারেন। তার কারণ, এ-ধরনের কথা বলবার পিছনে যেটা হলো নিছক আধুনিক যুগের উদ্দেশ্য সেটাকেই তাঁরা একমাত্র উৎসাহ মনে করেন। আর যদি তাই হয় তাহলে বেদ-উপনিষদের লেখকদের মধ্যে অত্যন্ত স্থূল আর কদর্য মনোবৃত্তি কল্পনা না করে উপায় থাকে না। কিন্তু তাই বা কী করে বলা যায়? হাজার হোক, তাঁরা ছিলেন সত্যদ্রষ্টা ঋষি! ক্রমে আধুনিক পণ্ডিতদের পক্ষে একমাত্র উপায় হলো ঋষিদের এই জাতীয় কথাবার্তাগুলিকে চেপে যাওয়া। আমরা বলতে চাই, ওই পদ্ধতিটাই ভুল। কেননা, প্রাচীনেরা কী ভেবে কী লিখেছেন তা ঠিকমতো বুঝতে হলে সর্বপ্রথম মনে রাখা দরকার যে প্রাচীনেরা ছিলেন প্রাচীন—তাই একালের ধ্যানধারণাগুলি তাঁদের মধ্যে কল্পনা করাটাই অসঙ্গত ও যুক্তিহীন।

——————
২১. F. Engels OFPPS 61.
২২. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী : বৌদ্ধধর্ম ৮২।
২৩. M. N. Dutta RVS 801n.
২৪. মহাভারত (কালীপ্রসন্ন সিংহ) ১০৯।
২৫. SBE 12:194, 257sq.,…
২৬. ঐতরেয় ব্রাহ্মণ (রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী) ৬-৭।