বার্তাশস্ত্রোপজীবী পর্যায়ে গণপতির নবরূপ
তাহলে, কৃষিকেন্দ্রিক এই ব্রতটির বিশ্লেষণ থেকে দেখতে পাওয়া যায় যে, ব্রতটির মূল অনুষ্ঠানটুকুর মধ্যে পুরুষপ্রাধান্যের বদলে নারীপ্রাধান্যেরই বিকাশ ঘটছে। অথচ, ব্রতটির অন্তত নামের মধ্যে থেকে গণপতি সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হননি। অন্যান্য দৃষ্টান্তের বেলায় দেখা যায়, বার্তাশস্ত্রোপজীবী পর্যায়ে পৌঁছেও গণেশের পুরুষাকৃতিটি বিলুপ্ত বা নিশ্চিহ্ন হচ্ছে না—পুরোনো পর্যায়ের রেশটুকু নবপর্যায়ে পৌঁছাবার পর সব সময়েই যে সম্পূর্ণভাবে মুছে যাবে তা মনে করা ঠিক নয়। তার বদলে প্রায়ই দেখা যায়, নতুন পর্যায়েও পুরোনো পর্যায়ের রেশট থেকে গিয়েছে। তবু সেইটুকুই বড়ো কথা নয়। আসলে বড়ো কথা হলো, নবপর্যায়ে উপনীত হবার পর এ-পর্যায়ের বৈশিষ্ট্য অনিবাৰ্যভাবেই ফুটে উঠতে বাধ্য। বার্তাশস্ত্রোপজীবী পর্যায়ে গণপতির পুরোনো পুরুষরূপটা অনেক ক্ষেত্রে টিকে থাকলেও, দেখা যায় নবপর্যায়ের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য এই রূপটির সঙ্গে অনিবাৰ্যভাবেই সংযোজিত হচ্ছে। এখানে তারই কয়েকটি দৃষ্টান্ত আলোচনা করা যাক।
পাশ এবং অঙ্কুশকে আয়ুধজীবী পর্যায়েরই স্বাভাবিক আয়ুধ মনে করা দরকার; শিকার ছাড়া এই জিনিস দুটি আর কোনো কাজে লাগে না। স্বভাবতই, কৃষিবৃত্তির পটভূমিতে এই আয়ুধ ভুটির গুরুত্ব গৌণ। তার বদলে এ-পর্যায়ে গণেশের হাতে এমনতরো বস্তুই প্রাসঙ্গিক হবে যা কিনা উর্বরাশক্তির প্রতীক। গণেশের পরিকল্পনায় সত্যিই সে-রকম বস্তু সংযোজিত হতে দেখা যায় কি?
বালগণপতি(৩৭৮)হিসেবে গণেশের যে-পরিকল্পনা তার বেলায় দেখা যায় গণেশের হাতে পাশ বা অঙ্কুশ কিছুই নেই। তার বদলে রয়েছে, আম, কলা, আখ, কাঁঠাল। ভক্তিবিঘ্নেশ্বর(৩৭৯) হিসেবে গণেশকে কল্পনা করবার সময় তাঁর হাতে নারকেল, আম, গুড় এবং পায়েস দেবার নির্দেশ। এখানেও তাহলে গণেশ শিকারজীবীদের অস্ত্র ফেলে কৃষিজাত সামগ্রীই গ্রহণ করছেন। আধুনিক পণ্ডিতদের(৩৮০) মতে, গণেশের এই নবলব্ধ সম্পদগুলির মধ্যে নারকেল ইত্যাদি অত্যন্ত স্পষ্টভাবেই উর্বরা-শক্তির প্রতীক। আবার অন্যত্ৰ—যেমন লক্ষ্মীগণপতি ও মহাগণপতির পরিকল্পনায়(৩৮০)–দেখা যায় পাশ আর অঙ্কুশ একেবারে বর্জন না করলেও গণেশের হাতে এসেছে পদ্ম, পূর্ণকুম্ভ, কল্পকলতা, ধানের শিষ আর ডালিম ফল। এগুলি সবই উর্বরা-শক্তির প্রতীক(৩৮২) অতএব বার্তাশস্ত্রোপজীবী পর্যায়ের পক্ষেই প্রাসঙ্গিক—সে-পর্যায়েরই অবদান।
এগুলির মধ্যে বিশেষ করে একটি প্রতীক নিয়ে আলোচনা তুলবো। ডালিম-ফল। গণেশের হাতে এ-ভাবে ডালিম-ফল দেখা দেবার তাৎপর্যটা কী?
এই ডালিম-ফল যদি শুধুমাত্র গণেশের হাতেই দেখা যেতো তাহলে এর তাৎপর্যকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে না করলেও হয়তো চলতো। কিন্তু আসলে তা নয়। এই ফলটিকেই আমাদের দেশের নানান দেবদেবীর(৩৮৩) হাতে দেখতে পাওয়া যায়। আর শুধু আমাদের দেশেই বা কেন? দেশান্তরের দেবদেবীদের সঙ্গেও এই রক্তবর্ণ-বহুবীজ ফলটির সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। প্রাচীন গ্রীসের ডিমিটর-দেবীর(৩৮৪) প্রায় সমস্ত মূর্তিতেই দেখতে পাওয়া যায় তার হাতে ডালিম ফল রয়েছে। একই বৈশিষ্ট্য দেবী এথেনার—রোমানরা যাঁকে দেবী মিনার্ভ বলে কল্পনা করেছিলো। এথেন্স-এ পাওয়া মূর্তিতে দেখা যায় তাঁর হাতে এই ফলটিই রয়েছে(৩৮০)। অলিম্পিয়ায় পাওয়া মিলন্-এর(৩৮৬) মূর্তিতেও একই চিহ্ন; মিলন্ ছিলেন দেবী হেরা-র পুরোহিত। আগস্-এ পাওয়া হেরার মূর্তিতেও দেখা যায় তাঁর হাতে রয়েছে ডালিম-ফল(৩৮৭)।
এখানে বিশেষ করে গ্রীক ইতিহাস থেকেই কয়েকটি দৃষ্টান্ত উদ্ধৃত করা হলো। কেননা, প্রাচীন গ্ৰীক সমাজ-এর আলোচনা প্রসঙ্গেই অধ্যাপক জর্জ টম্সন এই ডালিম ফলের তাৎপর্যটি নির্ণয় করেছেন। আমাদের যুক্তি হলো, প্রাচীন গ্ৰীক সংস্কৃতির আলোচনা-প্রসঙ্গে এই ডালিম-রহস্য যদি স্পষ্টভাবে জানতে পারা গিয়ে থাকে তাহলে তারই সাহায্যে প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আজো যা অস্পষ্ট হয়ে রয়েছে তার তাৎপর্য অনুসন্ধান করা অসম্ভব নাও হতে পারে। অতএব এই ডালিম-ফলের তাৎপর্য প্রসঙ্গে অধ্যাপক জর্জ টম্সন(৩৮৮) কী বলছেন তাই দেখা যাক।
প্রাচীন পরিব্রাজক পৌসানিয়াস্-এর কাছ থেকে প্রাচীন গ্ৰীক সমাজ সংক্রান্ত নানা খবর পাওয়া যায়। কিন্তু ডালিম-ফলের রহস্য উদঘাটন করতে তিনি দ্বিধাগ্রস্ত : ‘ডালিমের কথা আমি বিশেষ কিছু বলবে না, কেননা তার রহস্য অত্যন্ত গোপন। অধ্যাপক জর্জ টম্সন প্রশ্ন তুলছেন, গোপন রহস্যটা কী রকম?
ডালিম-ফলের ভিতরটা টুকটুকে লাল। ডালিমের দানা থেকেই গ্ৰীক ভাষায় রক্তবর্ণসূচক শব্দটি এসেছে। ডালিম তাই রক্তের প্রতীক। এ-কথা অনেকেই স্বীকার করেছেন। কিন্তু রক্তের তাৎপর্য এখানে ঠিক কী?— এ-প্রশ্নের সমাধান ঠিকমতো করা হয়নি। কেউ কেউ মনে করেন, খুন বা অপঘাত-মৃত্যুর সঙ্গেই এ-রক্তের সম্পর্ক। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে টাইটানরা ডাইওনিসাসকে হত্যা করলে পর তাঁরই রক্ত থেকে ডালিম গাছের জন্ম হয়। এ-ছাড়াও মৃত্যু ও অপঘাতের সঙ্গে ডালিম-এর সম্পর্ক আরো কোনো কোনো দিক থেকে পাওয়া যায় : প্রাচীনদের বিশ্বাস অনুসারে ডালিমের স্বপ্ন অপঘাতের সূচনা করে। কিন্তু অধ্যাপক জর্জ টম্সন দেখাচ্ছেন, রক্ত ও রক্তবর্ণের প্রতীক ডালিমের এই অনুষঙ্গগুলি মুখ্য নয়,—গৌণ। অর্থাৎ এগুলির পিছনে একটি মুখ্য তাৎপর্য আছে—সেই তাৎপর্যেরই আলোচনা তুলতে পৌসানিয়াসের সংকোচ হয়েছে।
ডালিম হলো রক্তের প্রতীক। কিন্তু কোন ধরনের রক্ত? প্রাচীন গ্ৰীক বৈদ্যশাস্ত্র থেকে তা আন্দাজ করা যেতে পারে। গ্ৰীক বৈদ্যর ঋতু ও গর্ভ ব্যাপারেই ডালিম ব্যবহার করবার নির্দেশ দিয়েছেন। এই কারণেই, কোনো কোনো গুহ্য-সম্প্রদায়ের কাছে ডালিম ছিলো ‘টাবু’ : ঋতু-রজকে প্রাচীন কালের মানুষেরা ‘টাবু’ মনে করতেন। থেস্মোফোরিয়া-উৎসবের সময় মেয়েদের পক্ষে শুধুই যে মৈথুন নিষিদ্ধ ছিলো তাই নয়; সেই সঙ্গে ডালিমও ছিলো নিষিদ্ধ। আর সেই সঙ্গে নির্দেশ ছিলো, তাদের শ্বেত-শয্যায় শুতে হবে, কেননা এই শ্বেত-শয্যার দরুন তাদের কামভাব সংহত থাকবে এবং তাছাড়াও শয্যার কাছে সাপ আসতে পারবে না। (প্রাচীনদের কল্পনা অনুসারে সাপের সঙ্গেও মেয়েদের যৌন-জীবনের যোগাযোগ আছে। c.f. ‘সাপের স্বপ্ন দেখলে ছেলে হয়’।) অধ্যাপক জর্জ টম্সন তাই সিদ্ধান্ত করছেন, শ্বেত-শয্যা যদি মেয়েদের রতিবাসনার প্রতিষেধক বলে বিবেচিত হয় তাহলে সেইসঙ্গেই ডালিম-পরিহারের নির্দেশ থেকে অনুমান করা অসঙ্গত নয় যে, এই ডালিম রতিবাসনার উদ্দীপক বলেই বিবেচিত হয়েছিলো। আর তাই, ডালিম যে-রক্তের প্রতীক সে-রক্তের আদি-তাৎপর্য আঘাত-জাত রক্ত নয়; নারীর যৌন-জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত রক্ত—ঋতু-রজ। প্রাচীনদের কল্পনা অনুসারে, নারীর উৎপাদিকা-শক্তির মূলে রয়েছে এই ঋতুরজই। এবং এই ঋতুরজের সঙ্গে সাদৃশ্যের দিক থেকেই ডালিম তাদের কাছে উর্বরতার প্রতীক। পৌসানিয়াস যে কেন ডালিমের রহস্য ব্যাখ্যা করতে সংকোচ বোধ করেছিলেন তা বুঝতে পারাও তাই কঠিন নয়।
এদিক থেকে মনে হয় কৃষিকেন্দ্রিক ওই ব্রতটিকে ষোলো আনা মেয়েলি ব্যাপার হবার সুযোগ দিয়ে অনুষ্ঠানের কেন্দ্র থেকে সরে দাঁড়িয়ে আমাদের গণপতি শোভন কাজই করেছিলেন। অন্যত্র, বার্তাশস্ত্রোপজীবী পর্যায়ের আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে তিনি পুরুষ হয়েও যখন সংশ্রব ছাড়তে রাজি হন না তখন তার আচরণ সত্যিই অশোভন এবং অসংলগ্ন হয়ে দাঁড়ায়। যেমন, গণেশের হাতে ঋতুরজের ওই প্রতীকটি। কিংবা, ওই ডালিমের রহস্যের সূত্র ধরেই আরো অগ্রসর হলে আরো অশোভনতার এবং অসংলগ্নতার পরিচয় পাওয়া যায়। সে-অসংলগ্নতার প্রকৃত কারণ বুঝতেও তেমন অসুবিধে হবার কথা নয়। কৃষিকাজ মেয়েদের আবিষ্কার, কৃষিকেন্দ্রিক প্রাচীন অনুষ্ঠান তাই নারীজীবনের নানারকম গোপন ও গভীর রহস্যের সঙ্গে জড়িত।
ইতিপূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি, রক্ত বর্ণের সঙ্গে নানাদিক থেকে গণেশের নানারকম সম্পর্ক রয়েছে। সিদুঁরের নাম নাম গণেশ-ভূষণ। অথচ, এই ঘটনাটি আপাতদৃষ্টিতেই অশোভন এবং অসংলগ্ন। কেননা এই সিদুঁর সধবাদেরই সিঁথির ভূষণ। সিঁদুরের তাৎপর্যটা কী? এই প্রশ্নের উত্তরেও অধ্যাপক জর্জ টম্সন বহু তথ্য পর্যালোচনা করে যে সাধারণ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তারই উল্লেখ করা যাক। অধ্যাপক টম্সনের মন্তব্য প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির নানা মৌলিক বিষয়ের উপর আলোকপাত করবে। তাই সুদীর্ঘ উদ্ধৃতি অবান্তর হবে না(৩৮৯) :
It is important to observe that the magic of human fecundity attaches to the process, not to the result—to the lochial discharge, not to the child itself; and consequently all fluxes of blood, menstrual as well as lochial, are treated alike as manifestations of the life-giving power inherent in the female sex. In primitive thought menstruation is regarded, quite correctly, as a process of the same nature as childbirth.
This magic is ambivalent. Its potency makes it something to be dreaded……From one aspect the woman who may not be approached is inviolable, holy; from another aspect she is polluted, unclean. She is what the Romans called sacra, sacred and accursed. And hence in patriarchal society, after woman has lost her control of religion, it is the negative aspect that prevails……
These ideas are universal. There is no sphere of human life in which a greater uniformity can be observed than in the treatment of menstrual and puerperal women. The subject is discussed at length by Briffault, who has collected examples from every branch of human race and every stage of culture…….
Aristotle, Pliny, and other naturalists, ancient and medieval, believed that the embryo is formed from the blood retained in the uterus after the stoppage of menstruation. This is the blood of life. Hence the commonest method of placing persons or things under a taboo-menstrual, lochial, or any other interdict formed on this original pattern—is to mark them with blood or the colour of blood. And in keeping with the ambivalent nature of the taboo itself, this sign of blood has the double effect of forbidding contact and imparting vital energy. It is a worldwide custom for menstruating or pregnant women to daub their bodies with red ochre, which serves at once to warn the men away and to enhance their fertility. In many marriage ceremonies the bride’s forhead is painted red—a sign that she is forbidden to all men save her husband and a guarantee that she will bear him children. This is the origin of cosmetics. Among the Valenge, a Bantu tribe, every woman keeps a pot of red ochre, which is sacred to her sex and used to paint her face and body for ceremonial purposes. Of the many occassions for which she needs it, the following may be noted. At the end of her confinement both mother and child are anointed with it: in this way the child will live and the mother is restored to life. At initiation the girl is painted red from head to foot; so she is born again and will be fruitful. At the conclusion of mourning, after stepping over a fire, the widow is painted the same colour; so she returns from the contamination of death.
Red is renewal of life. That is why the bones from upper palaeolithic and neolithic interments are painted red. The symbolism becomes quite clear when we find, as we commonly do, that the skeleton has been laid in the contracted or uterine posture. Smeared with the colour of life, curled up like a babe in the womb-what more could the primitive man do to ensure that the soul of the departed would be born again?
অর্থাৎ, (স্বাধীন-তর্জমা) : মামুষের সন্তান-উৎপাদন সংক্রান্ত জাদুবিশ্বাস, ফলাফলের বদলে ফলপ্রসূ পদ্ধতিটির সঙ্গে—সন্তানের বদলে ঋতু ও লোকিয়া-স্রাবের সঙ্গে—সংযুক্ত। ফলে ঋতু ও লোকিয়া সমস্ত স্রাবকেই কল্পনা করা হয় নারীর মধ্যে অন্তর্নিহিত প্রাণদায়িনী শক্তির বিকাশ হিসেবে। আদিম ধ্যানধারণা অনুসারে ঋতুস্রাব সন্তানের জন্মদানের সমতুল্য পদ্ধতি বলেই বিবেচিত। এই জাদুবিশ্বাসের মধ্যে আত্মবিরোধ আছে : রক্তের ওই শক্তিই আবার তাকে ভয়াবহ করে তোলে। একদিক থেকে ঋতুমতী নারী এতো পবিত্র যে, তাকে স্পর্শ করা চলে না। অপর দিক থেকে সে কলুষিত, অস্পৃশ্য। তার অবস্থা হলো, রোমানরা যাকে বলতে sacra–পবিত্র আর ঘৃণিত দুই-ই। ফলে পুরুষপ্রধান সমাজে ধর্মাচরণের উপর মেয়েদের অধিকার লুপ্ত হবার পর এই জাদুবিশ্বাসের নেতিমূলক দিকটিরই জয় হয় : ঋতুমতী নারী শুধুমাত্র কলুষিত বলেই বিবেচিত হয়।
এই ধারণাগুলি সার্বভৌম। ঋতুমতী ও প্ৰসবিনীদের প্রতি মনোভাব-সংক্রান্ত ধারণায় সবদেশের সবমানুষের মধ্যে যতোখানি মিল আছে আর কোনো বিষয়ে তা নেই। ব্রিফন্ট এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং মানবজাতির সমস্ত শাখা ও মানব সংস্কৃতির সমস্ত পর্যায় থেকে দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করেছেন…
এ্যারিস্টটল্, প্লিনি প্রভৃতি প্রাচীন ও মধ্যযুগের বিজ্ঞানীদের ধারণায়, ঋতুস্রাব বন্ধ হবার পর গর্ভের মধ্যে ওই ঋতুরজ জমেই সন্তানের দেহগঠন করে। এই রক্তই হলো প্রাণদায়িনী রক্ত। তাই, কোনো মানুষ বা কোনো বস্তুর উপর টাবু ধার্য করবার সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি হলো, তার উপর রক্ত-চিহ্ন বা রক্ত-বর্ণ চিহ্ন দেওয়া—ঋতুস্রাব বা লোকিয়া-শ্রাব বা তারই কোনো অনুকরণ থেকে এই ব্যবস্থার উৎপত্তি। টাবুটির অন্তর্নিহিত অন্তর্দ্বন্দ্ব অনুসারেই এই রক্তচিহ্নের দু’রকম তাৎপর্য : চিহ্নিত বস্তুর সঙ্গে সম্পর্ক-নিষেধ এবং প্রাণশক্তির সঞ্চার। সারা পৃথিবীতেই দেখা যায়, ঋতুমতীর অঙ্গে লালমাটির প্রলেপ লাগাবার ব্যবস্থা আছে—তার দরুন পুরুষদের দূরে রাখা ও উর্বর-শক্তির বৃদ্ধি দুটো কাজই হবে। অনেক জায়গায় বিবাহানুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবে স্ত্রীর কপালে রক্ত-বর্ণ চিহ্ন দেবার ব্যবস্থা আছে—এ-চিহ্নের অর্থ, স্বামী ছাড়া অন্যান্য সমস্ত পুরুষের কাছেই মেয়েটি নিষিদ্ধ হলো এবং স্বামীর কাছে সে সন্তানদানের জন্য প্রতিশ্রত হলো। অঙ্গরাগের উৎস এই থেকেই। বাণ্টুদের একটি জাতির মধ্যে দেখা যায়, প্রতিটি মেয়েই একটি করে লালমাটির পাত্র রাখে; পাত্রগুলি মেয়েদের কাছে পবিত্র, অনুষ্ঠানের সময় এর থেকেই তারা মুখ ও অঙ্গ রঞ্জিত করে। নানা রকম অনুষ্ঠানেই তাদের কাছে এই পাত্রগুলির প্রয়োজন হয়। তার মধ্যে নিম্নোক্ত অনুষ্ঠানগুলি উল্লেখযোগ্য : আঁতুড়ঘরের পর্ব শেষ হবার সময় প্রস্থতা ও সন্তান উভয়কেই এই লালরঙে রঞ্জিত করা হয়–এরই দরুন সন্তানটি বেঁচে থাকবে এবং মা ফিরে আসবে জীবিতদের মধ্যে। ‘দীক্ষ’র (initiation) সময় মেয়েটির মাথা থেকে পা পর্যন্ত রক্তবর্ণে রঞ্জিত করা হয় : এইভাবেই মেয়েটি যেন নতুন জন্ম পেলে এবং এবার থেকে সে ফলবতী হবে। অশৌচাবস্থা শেষ হবার পর বিধবার অগ্নি স্পর্শ করে এবং তাদের লাল রঙে রঞ্জিত করা হয় : এইভাবেই সে মৃত্যুর ছোঁয়াচ থেকে ফিরে আসে।
রক্তবর্ণ হলো নবজীবন। তাইজন্যেই দেখা যায়, প্রাচীন প্রস্তর যুগের উচ্চাবস্থার এবং নব্যগ্রস্তর যুগের কবরখানা থেকে পাওয়া হাড়গুলিতে লাল রঙ মাখানো রয়েছে। প্রতীকটির অর্থ আরো স্পষ্ট হয় যখন দেখি,—এবং প্রায়ই তা দেখতে পাওয়া যায়,—কঙ্কালগুলি গুটোনো ভ্রূণাবস্থার ভঙ্গিতে রয়েছে। মৃতের নবজন্ম সুনিশ্চিত করবার আশায় আদিম মানুষেরা এইভাবে তাকে গর্ভস্থ শিশুর মতো কুঁকড়ে এবং জীবনের রঙে রঞ্জিত করে রাখবার চেয়ে বেশি আর কীই বা করতে পারতো?
অধ্যাপক টমসনের রচনা থেকে এই উদ্ধৃতিটুকু আমাদের কাছে বিশেষ মূল্যবান। কেননা আমাদের দেশের নানান রকম আচার-অনুষ্ঠান এবং ধ্যানধারণাকে এইদিক থেকে বোঝবার সুযোগ হতে পারে। আমাদের দেশের সধবারা সিঁথিতে সিঁদুর দেয়, গাণপত্যেরা কপালে রক্ততিলক আঁকে। তান্ত্রিকেরা কাষায় বস্ত্র পরে। ভিল-র জমিতে চাষ করবার আগে একটুকরো পাথরের উপর সিঁন্দুর মাখায়, গণেশচতুর্থী ব্ৰত অনুষ্ঠানটিতেও দেখা যায় সধবা মেয়েরা পরস্পরকে সিঁদুর পরিয়ে দিচ্ছে। বস্তুত, আমাদের দেশে সধবাদের অনুষ্ঠানে সিঁদুরের ব্যবহার ভূয়ঃপ্রচলিত। এর পিছনে একটি আদিম বিশ্বাস লুকোনো আছে; ওই রক্তবর্ণ ঋতুরজের, অতএব নবজন্মের, প্রতীক। ফলে এরই স্পর্শে সধবারা সন্তানবতী হবার কামনাকে সফল করতে চায়। রক্ত ও রক্তবর্ণের এই প্রতীক-তাৎপর্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা আগেই বলেছি, আনন্দগিরি উচ্ছিষ্ট-গণপতির অনুচরদের বর্ণনায় “রুধিরবাহুল্য” বলে যে-শব্দ ব্যবহার করেছেন তার আদি-তাৎপর্য নিছক বীভৎসতা না হতেও পারে। তান্ত্রিক ধ্যানধারণার আদি-তাৎপর্য বিশ্লেষণের প্রসঙ্গে এই ঋতুরজের আলোচনায় প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
বলাই বাহুল্য, আধুনিক-রুচিসম্পন্ন হিন্দুদের কাছে ঋতু-রজের এই জাতীয় আলোচনা কদৰ্য এবং রুচি-গৰ্হিত বলে বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু তাঁরা এই প্রসঙ্গেই কামরূপ-কামাখ্যার কথা মনে রাখতে পারেন। কামাখ্যা যোনি-পীঠ। কালিকাপুরাণ মতে, “কুঞ্জিকা নামক পীঠস্থানে দেবীর যোনিমণ্ডল পতিত হইল। সেই যোনিমণ্ডল পতিত হইয়াই প্রস্তর হইয়াছিল, তাহাই কামাখ্যা দেবী নামে বিখ্যাত হইয়াছে।…এই যোনিমণ্ডলের পরিমাণ দৈর্ঘ্যে ২১ অঙ্গুলি এবং প্রস্থে এক বিতস্তি (১/২ হাত), উহা সিঁদুর ও কুম্কুমাদি লেপিত”(৩৯০)। এই সিঁদুর ও কুমকুমের রহস্যটা বুঝতে পারা যাবে যোগিনীতন্ত্র থেকে : “দেবী কামাখ্যা প্রতিমাসে এই স্থানে রজস্বলা হইয়া থাকেন”(৩৯১)।
অবশ্যই এই কামরূপ কামাখ্যার অঞ্চল থেকে মাতৃপ্রাধান্য আজো সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়নি(৩৯২)। তাছাড়া প্রবাদ আছে, ওদেশের মেয়েরা জাদু জানে—পুরুষদের ভেড়া করে রেখে দেয়। এ-প্রবাদ যে মাতৃপ্রাধান্য-সূচক সে-বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তাই ওই অঞ্চল প্রসঙ্গে এ-জাতীয় ঘটনা খাপছাড়াও নয়। কিন্তু পুরুষ হয়েও হাতে ডালিম-ফল ধরে রাখার মতোই সিঁদুরকে আপন অঙ্গরাগ (গণেশভূষণ) করবার চেষ্টাটা গণেশের পক্ষে নিশ্চয়ই বিসদৃশ ও অশোভন। অর্থাৎ কিনা, এ-কথা বুঝতে পারা যাচ্ছে যে, কৃষিকেন্দ্রিক এই পরিস্থিতিটিতে পুরুষ গণপতির পক্ষে টিকে থাকবার চেষ্টাটা নেহাতই কৃত্রিম। গ্রীকদেবীদের হাতে ওই ডালিম-ফল কৃত্রিম নয়। কেননা, কৃষিআবিষ্কার মেয়েদের কাজ,— প্রাচীনতর পর্যায়ের ধ্যানধারনা অনুসারে মেয়েদের উর্বর-শক্তির প্রভাবেই প্রকৃতির উর্বর-শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মেয়েদের এই উর্বর-শক্তির মূলে আছে ঋতুরজ। স্বভাবতই, কৃষিমূলক পরিস্থিতিতে মেয়ের প্রধান, প্রকৃতি প্রধান— পুরুষ অপ্রধান, উদাসীন।
আর ঠিক সেই কারণেই আমাদের গণপতি যেন এই পর্যায়ে পৌঁছে নিছক পুরুষ হিসেবে আর টিকতে পারছেন না। তার মূর্তির সঙ্গে একটি করে নারীমূর্তিও সংযুক্ত হচ্ছে। তারই নাম শক্তি। গণপতি আর এখন থেকে শুধু গণপতি নন, শক্তি-গণপতি।
এইভাবে আমরা স্বভাবতই ওই পুরুষ দেবতাটিকে ছেড়ে দেবীমাহাত্মের আওতায় এসে পড়তে বাধ্য হলাম। এবং আমরা যে এইভাবে গণপতির সঙ্গ ছাড়তে বাধ্য হলাম তার কারণ আমরা পুরুষ-প্রাধান্যের আওতা থেকে নারী-প্রাধান্যের আওতায় এসে পড়েছি। তাই আলোচনাটা দেবদেবীকে উপলক্ষ্য করে হলেও নারী-প্রাধান্যের আওতায় আমরা যে এসে পড়লাম তার কারণটা আসলে আধ্যাত্মিক নয়—আধিভৌতিকই। অর্থাৎ কিনা, কৃষি-আবিষ্কার। এ-আবিষ্কার মেয়েদের। এ-আবিষ্কারের পর্যায়ে তাই মাতৃ-প্রাধান্য এবং ওই মাতৃ-প্রাধান্যের প্রতিবিম্ব হিসেবেই দেবী-প্রাধান্য।
আমাদের মূল আলোচনার দিক থেকে দেবী রহস্য অনুসন্ধান করবার প্রয়োজন আছে। কেননা তা না হলে তান্ত্রিক ধ্যানধারণার উৎস আমাদের কাছে অস্পষ্ট থাকবে। আমরা দেখাবার চেষ্টা করবো, কৃষি-আবিষ্কারের প্রাকৃত পর্যায়ের মধ্যেই দেবীরহস্য,—তথা তান্ত্রিকাদি ধ্যানধারণাগুলিকেও,–বোঝবার মূলসূত্র পাওয়া যাবে। এবং আজকের দিনে এ-জাতীয় ধ্যানধারণা যতোখানিই বিকৃত বীভৎসতা বলে প্রতীয়মান হোক না কেন, কৃষি-আবিষ্কারের পটভূমিতে বিচার করলে এগুলিকে উদ্দেশ্যমূলক ও জীবন-সংগ্রামের সহায়ক বলেই চিনতে পারা যায়। উৎপাদন-পদ্ধতির উন্নততর পর্যায়ে পৌঁছে মানুষ আজ প্রকৃতিকে ও প্রাকৃতিক নিয়মকানুনকে অনেক বাস্তব আর নির্ভুলভাবে জানতে শিখেছে। সেই উন্নততর জ্ঞানের মানদণ্ডে বিচার করলে নিশ্চয়ই বোঝা যায়, পিছিয়ে-পড়া পর্যায়ের ধ্যানধারণাগুলি কতোখানি ভুল ও কাল্পনিক; কিন্তু ওই পিছিয়ে-পড়া পর্যায়ের ধ্যানধারণা সম্বন্ধে শুধুমাত্র এইটুকু জ্ঞানই পর্যাপ্ত নয়। কেননা, এই প্রসঙ্গেই আরো একটি প্রশ্ন বাকি থাকে : অতোখানি ভুল আর কাল্পনিক ধ্যানধারণাকেই এককালে আমাদের পূর্বপুরুষের অমন শ্রদ্ধা আর অটল বিশ্বাস নিয়ে আঁকড়ে ধরবার চেষ্টা কেন করেছিলেন। এ-প্রশ্নের জবাব পাওয়া যেতে পারে, আজকের দিনেও যে-সব মানবদল আমাদের সেই পূর্বপুরুষদের অবস্থায় আটকে পড়ে আছে তাদের বাস্তব অবস্থাটা বিচার করতে পারলে। এই পদ্ধতি অনুসারে অগ্রসর হলে আমরা দেখতে পাই, সে-পর্যায়ের মানুষদের দৈন্য কী রকম ভয়াবহ এবং অনিবাৰ্যভাবেই ভয়াবহ : দৈন্যটা শুধুই জীবনযাপনের উপকরণ সংগ্রহের দিক থেকে নয়, প্রাকৃতিক রহস্যকে অনুমান করবার দিক থেকেও। সে-পর্যায়ের আধা-অসহায় মানুষগুলি প্রকৃতিকে যেটুকু আয়ত্তে এনেছে তার উপর নির্ভর করে এর চেয়ে সচ্ছল জীবন গড়ে তোলা সম্ভবই ছিলো না; এবং প্রকৃতির রহস্য সংক্রান্ত তাদের যেটুকু অন্তদৃষ্টি তাও ওইভাবে প্রকৃতিকে বশে আনবার অনুপাতেই সংকীর্ণ হতে বাধ্য। কিন্তু মানব-উন্নতির কাহিনী সরলরেখার মতো একমুখে একটানা এগিয়ে-যাওয়া নয়; পিছনের পর্যায়কে পিছনে ফেলে আসবার জন্য মানুষকে যে-মূল্য চোকাতে হয়েছে তার গুরুত্বটাও উপেক্ষা করবার নয়। সেই যৌথ-জীবনের পটভূমিতে মানুষের ধ্যানধারণা আর জীবন সংগ্রাম, —জ্ঞান আর কর্ম—দু’-এর মধ্যে প্রভেদ দেখা দেয়নি। এবং জীবন-সংগ্রামের অঙ্গ হিসেবে মানুষের চেতনায় উদিত হয়েছিলো বলেই এই পর্যায়ের ধ্যানধারণা যতোই মূঢ় আর মূক হোক না কেন,–আজকের জ্ঞানের মাপকাঠিতে এই ধ্যানধারণাগুলিকে অসম্ভব আর আজগুবি বলে সনাক্ত করা যতোই সহজসাধ্য হোক না কেন,—এগুলি শেষ পর্যন্ত মাটির পৃথিবীটাকেই আঁকড়ে ধরবার চেষ্টা করেছে, লোকোত্তরবাদের আলেয়ায় ভুলিয়ে মানুষকে পথভ্রান্ত করেনি, মুখর হয়ে ওঠেনি দেহবিহীন আত্মার এক অলীক কাহিনী নিয়ে। তাই ঈশ্বর নয়, স্বৰ্গ-নরক নয়, পরলোক-পরকাল নয়, চেতন-কারণবাদ নয়। এককথায় অধ্যত্মবাদ নয়, ভাববাদ নয়—কেননা, সমাজ-বাস্তবে কর্মজীবন থেকে চেতনা যতোদিন না বিচ্ছিন্ন হচ্ছে ততোদিন সে-চেতনার স্বাধিকার-প্ৰমত্ততার কাহিনী প্রচারিত হবার মতো বাস্তব পরিবেশই সম্ভব হয় না। এবং এই স্বাধিকারপ্রমত্ততার কাহিনীই হলো অধ্যাত্মবাদ আর ভাববাদের সবচেয়ে মৌলিক, সবচেয়ে প্রাথমিক ভিত্তি। সেই প্রাকৃত-পর্যায়ের ধ্যানধারণাগুলি অব্যক্ত, অচেতন ও জ্ঞানের দৈন্যের দিক থেকে ভয়াবহ হলেও মূলতই প্রধানকারণবাদী, বস্তুবাদী এবং দেহাত্মবাদীই। এককথায়, সে-চেতনা লোকায়তিক,—যদিও এই লোকায়তিক চেতনা আমাদের দেশের ইতিহাসে চিরকালই ওই অব্যক্ত, অচেতন ও ভয়াবহ দৈন্যের স্তরে আটকে থাকেনি।
সেইসঙ্গেই আমরা দেখাবার চেষ্টা করবো, জীবন-সংগ্রামের সেই মূর্ত পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই ধ্যানধারণাগুলিই যখন উত্তরকালের বিরুদ্ধ পরিবেশে, বিপরীত আবহাওয়ায়, টিকে থাকবার চেষ্টা করেছে তখন এগুলির আদি-তাৎপর্যটুকু অনিবাৰ্যভাবেই বিপরীতে পর্যবসিত হতে বাধ্য হয়েছে। তারই নমুনা পাওয়া যায় আধুনিক যুগের তান্ত্রিক গ্রন্থাবলী ও অনুষ্ঠানাদির মধ্যে। এই কারণেই, তান্ত্রিকাদি ধ্যানধারণার আদি-তাৎপর্য শুধুমাত্র তান্ত্রিক সাহিত্যের মধ্যে অন্বেষণ করবার চেষ্টা নিষ্ফল হতে বাধ্য। এ-জাতীয় সাহিত্যে সেই আদি-তাৎপর্যের অনেক স্মারক নিশ্চয়ই টিকে আছে; কিন্তু এই স্মারকগুলিকে ঠিকমতো বুঝতে হলে কৃষি-আবিষ্কারের প্রাথমিক পর্যায় সংক্রান্ত সাধারণভাবে জানতে পারা তথ্যের উপর নির্ভর করা প্রয়োজন। জামরা তাই আমাদের মূল পদ্ধতি অনুসারে এ-আলোচনার জন্যে বারবার পৃথিবীর পিছিয়ে-পড়া মানুষদের আচার-অনুষ্ঠান ও ধ্যানধারণার উল্লেখ করতে বাধ্য হবো। সেখানে যে-কথা স্পষ্ট ও প্রকটভাবে দেখতে পাওয়া যায় তারই সাহায্যে তান্ত্রিক সাহিত্যের অস্পষ্ট, জটিল, আপাত-অর্থহীন, একান্ত উৎকট ও বীভৎস বিষয়গুলির উপর আলোকপাত হওয়া অসম্ভব না হতেও পারে।
—————-
৩৭৮. T. A. G. Rao EHI 1:52.
৩৭৯. Ibid.
৩৮০. W. Crooke RFNI 56, 61, 176 ইত্যাদি |
৩৮১. T. A. G. Rao op. cit. 1:52.
৩৮২. A. Getty G. 18.
৩৮৩. রাও-এর হিন্দু আইকনোগ্রাফি এবং বৃহংতন্ত্রসার বর্ণিত বিভিন্ন দেবীর তান্ত্রিক ধ্যান দ্রষ্টব্য।
৩৮৪. G. Thomson SAGS 219.
৩৮৫. Ibid.
৩৮৬. Ibid.
৩৮৭. Ibid.
৩৮৮. Ibid. 219s.
৩৮৯. Ibid. 205 & 209-10.
৩৯০ বিশ্বকোষ ৩:৫৪৭ ।
৩৯১. ঐ ৩:৫৪৮
৩৯২ এরেনফেস্ (MRI) মাতৃপ্রাধান্যের স্মারকের দিক থেকে ভারতের মানচিত্র দিয়েছেন।