বৈদিক আর্য ও আফ্রিকার পশুপালনজীবী ট্রাইব
অধ্যাপক উইন্টারনিংস্(১) অনুমান করছেন, বৈদিক আর্যদের অর্থনৈতিক অবস্থা মোটের উপর দক্ষিণ আফ্রিকার দিন্ক এবং কাফির ট্রাইবদের মতোই ছিলো, আর তাই বৈদিক আর্যরাও এদের মতোই গোসম্পদকে চরম মূল্যবান মনে করতেন।
দিনক এবং কাফিরেরা প্রধানতই পশুপালক। কিন্তু সেই সঙ্গেই তারা চাষবাসও শুরু করেছে এবং ধাতুর ব্যবহার খানিকটা আয়ত্তে এনেছে। অর্থনৈতিক উন্নতির দিক থেকে আধুনিক ট্রাইবদের যে-স্তরবিভাগ করা হয় (পৃ. ৩০০) সে-বিভাগ অনুসারে আফ্রিকার এই ট্রাইবগুলি পশুপালনের দ্বিতীয় স্তরে পড়ে(২)। সমাজ-বিবর্তনের সাধারণ নিয়ম অনুসারে এইখান থেকেই অকৃত্রিম ট্রাইব্যাল-সংগঠনে ভাঙনের সূচনা দেখা যায়(৩)। অর্থাৎ একে প্রাক্বিভক্ত সমাজ ও শ্রেণীবিভক্ত সমাজের মধ্যবর্তী সীমানা মনে করা যায়— পিছনে প্রাক্-বিভক্ত সমাজের স্মৃতি, সামনে শ্রেণীবিভক্ত সমাজের আভাস। দক্ষিণ আফ্রিকার এই ট্রাইবগুলির মধ্যে ক্লান-সংগঠন বা জ্ঞাতিভিত্তিক সংগঠন অনেকাংশেই অক্ষুণ্ণ থাকলেও এবং এমন কি এদের মধ্যে টোটেমবিশ্বাসের স্মারক অত্যন্ত প্রবল হলেও—ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও রাজশক্তির আভাস দেখা দিয়েছে। তারই প্রতিবিম্ব হিসেবে দেবলোকের কল্পনাও কিছু অংশে আধুনিক হয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি বা স্পষ্টভাবে নয়।
ভাষাতত্ত্বের সাক্ষ্য বিচার করে অধ্যাপক গর্ডন চাইল্ড(৪) অনুমান করছেন, প্রাচীন ইন্দো-ইয়োরোপীয়েরাও বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়বার সময়ে অর্থনৈতিক উন্নতির এই স্তরটিতেই পৌঁছেছিলেন। অর্থাৎ, তথাকথিত আর্যরাও সে সময়ে মূলতই পশুপালক, যদিও তারা তখন কিছুটা কৃষিকাজ ও ধাতুর ব্যবহার শিখেছেন। তাদের সমাজ-সংগঠনও জ্ঞাতিভিত্তিক বা ক্লান-সংগঠন। তাই তাদের অর্থনৈতিক জীবনকেও পশুপালনের দ্বিতীয় স্তর বলা হয়েছে।
এদিক থেকে, ভারতে আর্যোদয়-সংক্রান্ত মতবিরোধের মধ্যে প্রবেশ না করেও বলা যায় অধ্যাপক উইণ্টারনিৎস-এর উপরোক্ত অনুমান নিশ্চয়ই নির্ভুল। এবং এ-অনুমানের তাৎপর্যগুলি সত্যিই দুর্মূল্য। কেননা, বৈদিক আর্যদের সঙ্গে আফ্রিকার এই ট্রাইবগুলির অর্থনৈতিক উন্নতির সাদৃশ্য যদি মৌলিক হয় তাহলে আমাদের পদ্ধতি অনুসারে অনুমান করবার সুযোগ থাকে যে, প্রাচীনকালে বৈদিক আর্যরা মোটের উপর কী ভাবে জীবনযাপন করতেন তার অন্তত কিছুটা পরিচয় আজকের দিনেও আমাদের পক্ষে স্বচক্ষে দেখতে পাবার সুযোগ আছে। শুধু তাই নয়; অর্থনৈতিক অবস্থাই যদি ৷ সাংস্কৃতিক জীবনের প্রধান ভিত্তি হয় তাহলে আফ্রিকার ওই ট্রাইবগুলির সাংস্কৃতিক জীবন সংক্রান্ত জ্ঞান বৈদিক সংস্কৃতির উপরেও আলোকপাত করতে পারে।
আফ্রিকার দিনকদের সম্বন্ধে অধ্যাপক সেলিগ্ম্যান(৫) বলছেন, গোসম্পদই ওদের সমাজের অর্থনৈতিক ভিত্তি; ফলে,
the desire to acquire a neighbour’s herds is the common cause of these inter-tribal raids which constitute Dinka warfare.
অধ্যাপক উইণ্টারনিৎস্(৬) বলছেন, ঠিক এই কারণেই বৈদিক সাহিত্যে
the old word for ‘war’ or ‘battle’ is originally ‘desire for cattle’ (gavisti).
বৈদিক আর্যদের মতোই আফ্রিকার এই ট্রাইবগুলির সমাজ-ব্যবস্থা পুরুষ-প্রধান। পশুপালনমূলক অর্থনীতির তাগিদেই যে এরা মাতৃপ্রাধান্যের পরিবর্তে পিতৃপ্রাধান্যের প্রচলন করেছে, সে-বিষয়ে আধুনিক বিদ্বানের আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন—অনেক ক্ষেত্রে পিতৃপ্রাধান্যের নিচে মাতৃপ্রাধান্যের ধ্বংসাবশেষ স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে এবং উত্তরাধিকারসূত্রের মধ্যে মাতৃপ্রাধান্যের স্পষ্ট স্মারক টিকে থেকেছে(৭)। বৈদিক মানুষদের জীবনে পশুপালন-নির্ভরতা কী ভাবে আদিম মাতৃপ্রাধান্য বদলে পিতৃপ্রাধান্যের প্রবর্তন করেছিলো এ-বিষয়ে বিদ্বানেরা এখনো গবেষণা করেননি; আদিম মাতৃপ্রাধান্যের স্মারক হিসেবে অদিতির সাক্ষ্যকে গ্রহণ করা যায় কিনা তা ভেবে দেখবার অবকাশ আছে। কিন্তু এ-বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই যে, যে-অবস্থায় বৈদিক সাহিত্য রচিত হয়েছিলো তা পুরোপুরি পুরুষপ্রধান— পশুপালন-নির্ভর বলেই পুরুষপ্রধান।
বৈদিক আর্যদের মতোই আফ্রিকার এই ট্রাইবদের মধ্যেও যজ্ঞ ও স্তোত্রের বহুল প্রচলন চোখে পড়ে; আধুনিক নৃতত্ত্ববিদেরা এই যজ্ঞ ও স্তোত্রকে sacrifices ও hymns আখ্যাই দেন। এদের যজ্ঞ প্রধানতই পশুযাগ এবং বৈদিক আর্যদের মতোই এদের পশুযাগেও মেধ্য পশুটির পেটের অংশই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বলে স্বীকৃত হয়। আফ্রিকার ট্রাইবদের পশুযাগ প্রসঙ্গে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে বলা হয়েছে, the contents of the large intestine of the victim are scattered about and over this mound(৮); কিংবা, at the yearly sacrifice, one man, in whom the ancestral spirit is immanent, kills a sheep or a bull, and smears its blood and the contents of the large intestine upon the grave(৯), ইত্যাদি। বৈদিক পশুযাগের বেলায় পশুটিকে বধ করবার পর “অধ্বর্যু পেট চিরিয়া বপা বাহির করিয়া লন। তাঁহার সহকারী প্রতিপ্রস্থাতা দুইখানা কাঠে সেই বপা লইয়া শামিত্র অগ্নিতে তপ্ত করেন; পরে উত্তরবেদির নাভিস্থিত আহবনীয় অগ্নির উপরে ধরিয়া থাকেন। অগ্নির উত্তাপে বপ৷ গলিয়া বিন্দুবিন্দু আগুনে পড়িতে থাকে। অধ্বর্যু সঙ্গে সঙ্গে বপার উপর ঘি ঢালেন। সেই বপার কিয়দংশ যথাবিধি আগ্ৰীমন্ত্র পাঠের পর আগুনে ফেলিয়া অন্তিম প্রযাগ যাগ সম্পন্ন হয়। বপার অবশিষ্ট প্রধান যাগের জন্য রাখিয়া দেওয়া হয়”(১০)। ঐতরেয় ব্রাহ্মণে(১১) বলা হয়েছে যজ্ঞে এই পশুর বপাটিই প্রধানতম অঙ্গ বলে বিবেচিত : “অনন্তর মনুষ্যগণ ও ঋষিগণ যজ্ঞ জানিবার উদ্দেশে যজ্ঞের কোন চিহ্ন দেখিব বলিয়া দেবগণের যজ্ঞভূমিতে আসিয়াছিলেন। তাঁহারা (যজ্ঞভূমির) নিকটে বিচরণ করিতে করিতে অঙ্গহীন (বপাহীন) পশুকে শয়ান (যজ্ঞভূমিতে পতিত) অবস্থায় প্রাপ্ত হইলেন এবং বুঝিলেন, এই যে বপাটুকু তাহাই পশু। সেইজন্য এই যে বপাটুকু তাহাই পশু”।
অবশ্যই যজুর্বেদ এবং ব্রাহ্মণগ্রন্থগুলিতে যে-ভাবে যজ্ঞকে জটিল ও পল্লবিত অবস্থায় দেখতে পাই আফ্রিকার ট্রাইবদের যজ্ঞ নিশ্চয়ই সে-রূপ ধারণ করেনি। কিন্তু ঋগ্বেদেও যজ্ঞের এ-জাতীয় জটিল পরিণতি দেখা যায় না—যদিও উত্তরকালে বৈদিক যজ্ঞ ওই রকম জটিল অনুষ্ঠানে পরিণত হবার পর তার মধ্যে ঋগ্বেদের মন্ত্রগুলিরই বিনিয়োগ-ব্যবস্থা হয়েছিলো।
বৈদিক আর্যদের কাছে স্বর্গের এক দেবতার নাম বরুণ এবং অধ্যাপক রথ(১২) অনুমান করছেন, আদিপর্বে এই বরুণই ছিলেন বৈদিক দেবলোকের মধ্যে প্রধান; কালক্রমে তাঁর গৌরব ইন্দ্রের গৌরবের নিচে চাপা পড়েছিলো। আফ্রিকার দিনকরা তাদের এই বরুণেরই নাম দেয় দেনগ্ডিৎ (Dengdit)।
They worship a high god, Dengdit, lit. ‘Great Rain’, sometimes called Nyalich and a host of ancestral spirits called yok. The Nyalich is the locative of a word meaning ‘above’, and, literally translated, signifies in the above’.(১৩)
এবং নিকদের বিশ্বাস অনুসারে তিনিই দ্যাবা-পৃথিবীকে পরস্পর থেকে পৃথক ও বিচ্ছিন্ন করেছিলেন। ঋগ্বেদে বরুণ সম্বন্ধেও ঠিক সেই কথা।
দ্যাবাপৃথিবী বরুণস্ত ধর্মণ বিষ্কভিতে অজরে ভূরিরেতলা।
অর্থাৎ,
ত,দ্যৌ ও পৃথিবী বরুণের ধর্মদ্বারা এবং প্রভূত বলের দ্বারা চিরকাল পৃথক হইয়া আছে॥ ঋগ্বেদ : ৬.৭০.১ ॥
বীর ত্বস্য মহিনা জনূংষি বি যস্তস্তম্ভ রোদসী চিদুর্বী।
অর্থাৎ,
—ইহার (বরুণের) জন্ম মহান এবং ধীর, ইনি পৃথিবী ও স্বৰ্গকে নিজ নিজ স্থানে স্থাপিত করিয়াছিলেন। ঋগ্বেদ : ৭.।৮৬.১ ॥
য: স্কম্ভেন বি রোদসী আজো ন দ্যামধারয়ৎ।
অর্থাৎ, —যিনি (বরুণ), অন্তরীক্ষে যেমন আদিত্য দ্যৌকে ধারণ করেন, সেইরূপ দ্যৌ ও পৃথিবীকে পৃথকরূপে ধারণ করিয়াছিলেন। ঋগ্বেদ : ৮.৪১.১০ ॥
এইখানে বলে রাখা যায় যে, বৈদিক দেবতাদেরও কিন্তু আফ্রিকার ট্রাইবদের দেবতাদের মতোই আধুনিক আধ্যাত্মিক অর্থে পরিপূর্ণ দেবত্বপ্রাপ্তি হয়নি। দিন্কদের বরুণদেব দেনগ্ডিং সম্বন্ধে বলা হয়েছে,
among the Niel Dinkas he appears as a less remote being who at one time ruled his tribe in human guise.(১৫)
ঋগ্বেদেও দেখি ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে,
এভির্নৃভির্নৃতমো অস্য শাকৈ রায়ো বিভক্তা সংভরশ্চ বস্বঃ॥
অর্থাৎ, —সামর্থ্যের সহিত যিনি (ইন্দ্র) এই নরদিগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নর, তিনি ধনের বিভাগকর্তা এবং ধনের পরিবর্ধক। ঋগ্বেদ : ৪.১৭.১১ ৷
ঋগ্বেদে (৬.৩৬.১) ইন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, “তুমি প্রকৃতই অন্ন”। এর সঙ্গে নবাভিষিক্ত রাজার প্রতি নাইজেরিয়ার জুকুনদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলনা করা যায় : they bow down before him and cry : “Our rains, our crops, our health, our wealth.” “(১৬)
বরুণের সঙ্গে বৈদিক মানুষদের সম্পর্কট যে সখার মতোই সে-বিষয়ে অধ্যাপক ম্যাক্ডোন্যাল(১৭) ইতিপূর্বেই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন,
Varuna is on a footing of friendship with his worshipper, who communes with him in his celestial abode and sometimes sees him with the mental eye.
এখানে ওই worshipper শব্দ কতোখানি প্রাসঙ্গিক সে-প্রশ্ন অবশ্যই অবাস্তর নয়, কেননা, অনেক সময় বৈদিক দেবতারা যেন মানুষদেরই একজন। অগ্নিকে বলা হচ্ছে “নৃবৎসখা সভাবান” (ঋগ্বেদ : ৪.২.৫)—অর্থাৎ, মানুষদের মতোই আমাদের সখা এবং সভায় স্থিত। অতএব, ঋগ্বেদে শুধুমাত্র বরুণের সঙ্গেই বৈদিক মানুষদের এ-রকম সখার সম্বন্ধ নয়। অর্যমা সম্বন্ধে অধ্যাপক ম্যাক্ডোন্যাল(১৮) বলছেন, “In less than a dozen passages the word has only the appellative senses of ‘comrade’ and ‘groomsman’ এবং অর্যময় কথার অর্থ হলো relating to a comrade. ইন্দ্র ও অগ্নির প্রতিও একই সখাভাব ব্যক্ত হতে দেখা যায়।
ইন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে,
যোগেযোগে তবস্তরং বাজেবাজে হবামহে সখায় ইন্দ্ৰমূৰ্তয়ে॥
অর্থাৎ, —প্রত্যেক কর্মের প্রারম্ভে ইন্দ্রের মূৰ্তিযুক্ত সখাকে আমরা আহ্বান করি, প্রত্যেক যজ্ঞে॥ ঋগ্বেদ : ১.৩০.৭॥
অগ্নির উদ্দেশে বলা হয়েছে,
আ হি ষ্মা সুনবে পিতাপির্যজত্যাপয়ে সখা সখ্যে বরেণ্যঃ ॥
অর্থাৎ —হে (অগ্নি) তুমি শ্রেষ্ঠ; পিতা পুত্রের প্রতি, বন্ধু বন্ধুর প্রতি এবং সখা সখার প্রতি যেরূপ আচরণ করে, তুমি আমাদিগের প্রতি সেইরূপ অভীষ্ট দান কর। ঋগ্বেদ : ১.২৬.৩॥
কিন্তু আফ্রিকার দিন্করা কি বৈদিক মানুষদের মতো এরকম কবিতা রচনা করে? করে। তাদের রচনা প্রসঙ্গে অধ্যাপক সেলিগ্মানের(১৯) মন্তব্য অত্যন্ত মূল্যবান, বৈদিক সাহিত্যের—বিশেষত ঋগ্বেদের–উপর তা আলোকপাত করতে পারে :
The Southern Dinka (to whom the following specially refers) do not appear to use set forms of prayer, but seem to ask in ordinary simple sentences that their immediate want may be granted. They also have a number of hymns which are sung when an ox is slaughtered to avert drought or sickness; but as Mr. Shaw informed the writer, men sang them when doing light work, and lately during a severe thunderstorm every one joined in lustily to appease the elements. They also burst into one of those songs when bidding farewell to the Sirder who visited them recently. The following songs collected and translated by Mr. Shaw were composed by the tiet Wal of Bang village, who asserts that his spirit is Deng, that is Dengdit….
ওদের স্তোত্রর একটি নমুনা :
Father Rain falls into a solitary place.
Father Rain falls into a solitary place.
The Lord was in untrodden ground.
Hold the Father well, He holds our few souls.
Hold the Rain well, He holds our few souls.(২০)
পৃথিবীতে আজো যারা পশুপালন-জীবিকার দ্বিতীয় স্তরে আটকে রয়েছে এই হলো তাদের সাহিত্যের নমুনা। বৈদিক আর্যরাও এক সময়ে ওই পর্যায়েই জীবন-যাপন করতেন এবং আজকের ওই আফ্রিকার ট্রাইবদের মতোই সাহিত্য-রচনাও করতেন। অধ্যাপক সেলিগ্মানের মন্তব্য অনুসারে দিনকদের সাহিত্যে আধুনিক আধ্যাত্মিক অর্থে প্রার্থনা-উপাসনার পরিচয় নেই; তার পরিবর্তে সহজ-সরল ভাষায় মনের কামনাগুলির সফলতা চাওয়া : to ask in ordinary simple sentences that their immediate want may be granted। ঋগ্বেদেও তাই; অন্তত ঋগ্বেদের প্রাচীনতর অংশগুলিতে নিশ্চয়ই তাই। সে-আলোচনায় আমরা একটু পরেই প্রত্যাবর্তন করবো। তার আগে, বৈদিক সংস্কৃতির বিচারে নৃতত্ত্বমূলক জ্ঞানের উপযোগিতা সংক্রান্ত কয়েকটি সাধারণ কথা আলোচনা করে নেওয়া বাঞ্ছনীয় হবে। কেননা, বহু শতাব্দী ধরে আমাদের দেশে বৈদিক সাহিত্যকে চরম শ্রদ্ধাভক্তির দৃষ্টিতে দেখা হয়েছে বলেই এ-সম্বন্ধে আমাদের মনে সাধারণভাবে একটা রহস্যঘন আবহাওয়া সৃষ্টি হয়েছে। তার দরুন, বৈদিক সাহিত্যের সবচেয়ে সহজ ও স্পষ্ট অর্থও আমাদের চোখে পড়তে চায় না—কার্ল মার্কস্ যাকে বলেছেন, a certain judicial blindness (পৃ. 549) I নৃতত্ত্বের দিক থেকে বোঝবার চেষ্টার করলে আমাদের কাছে অন্তত একটি কথা স্পষ্ট হয়ে থাকবে : যাঁরা এ-সাহিত্য রচনা করেছিলেন তাঁরা ঠিক কোন স্তরের জীবন-যাপন করতেন। এ-বিষয়ে চেতনা, আমাদের মনের ওই রহস্যঘন আবহাওয়াকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে এবং বৈদিক সাহিত্যের সহজ-সরল ইংগিতগুলিকে গ্রহণ করবার জন্য আমাদের মনকে প্রস্তুত করা যাবে।
——————
১. M.. W।internitz HIL 65n.
২. ERE 4:704ff.
৩. F. Engels OFPPS 259ff. G. Thomson SAGS 33.
৪. G. Childe A 78-93.
৫. ERE 4:705.
৬. M. Winternitz op, cit. 64.
৭. ERE 2:351.
৮. ERE 4:708.
৯. ERE 4:709.
১০. রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী : রচনাবলী ৩:৫২৮।
১১. ঐতরেয় ব্রাহ্মণ (ত্রিবেদী) ১২১-২।
১২. A. A. Macdonell VM 65.
১৩. ERE 4:707.
১৪. Ibid.
১৫. Ibid.
১৬. G. Thomson SAGS 158.
১৭. A. A. Macdonell op. cit. 27.
১৮. Ibid. 45.
১৯. ERE 4707.
২০. Ibid.